স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বক্তব্যের প্রতিবাদে জাতীয় সংসদে হঠাৎ হট্টগোল সৃষ্টি হয়। স্বাস্থ্যখাতে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, নিয়োগ না হওয়ার অভিযোগ এবং তা অস্বীকার করার পরিপ্রেক্ষিতে এসব অবস্থার সৃষ্টি হয়।
বুধবার সংসদে বাজেট পাসের সময় বিরোধী সদস্যদের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী তাদের দায়িত্ব নিতে বলেন। এসময় ঢালাও অভিযোগ ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার সময় জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘কতবার ডিও লেটার দেব? আমার এলাকার হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স নেই, ডাক্তার কবে পাবো? এক্স-রে মেশিন কবে পাবো? রেডিওলজিস্ট কবে পাবো? স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে যতবার বলি উনি ডিও লেটার দিতে বলেন। কতবার দেবো?’
মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ দাবি সম্পর্কে পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘চলমান বরাদ্দের টাকাই খরচ করতে পারেননি। আবার বরাদ্দ চেয়েছেন।’
জাপার আরেক সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় টাকা খরচ করতে পারেনি। ফেরত দিয়েছিল। এটা আমরা চাই না। খরচ করতে না পারলে এখানে ৩৫০ জন এমপিকে ভাগ করে দেন। আমরা খরচ করি। স্বাস্থ্যসেবা আমরা দেখবো। আপনাদের দরকার নেই। ডাক্তার-নার্স নিয়োগ করতে পারছেন না। ৩৫০ এমপিকে দায়িত্ব দেন। আমরা নিয়োগের ব্যবস্থা করি।’
বিএনপির রুমিন ফারহানা স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরে বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ২৫ শতাংশ। এই যে বরাদ্দ দিচ্ছি সেটা কোথায় যাচ্ছে? বরাদ্দ খরচ করার সক্ষমতা মন্ত্রণালয়ের আছে কি-না সেই প্রশ্ন চলে আসছে।’
বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাত সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতি দূর করতে হলে ডালপালা কেটে লাভ নেই। গাছের শেকড় উপড়ে ফেলতে হবে। স্বাস্থ্যের কেনাকাটায় ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। দুর্নীতি নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই।’
তাদের জবাব দিতে উঠে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এক পর্যায়ে বিরোধী দলের সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা হাসপাতালের চেয়ার। আপনাদের দায়িত্ব আছে। আপনাদের দায়িত্ব নিতে হবে।’
তিনি দুর্নীতির অভিযোগেরও জবাব দেন। বলেন, ‘মাস্ক নিয়ে কথা বলছেন। মাস্ক তো কেনাই হয়নি। তার পেমেন্ট দেয়া হয়নি। ঢালাও অভিযোগ দিলে তো হবে না।’
এসময় বিরোধী দলের বেঞ্চ থেকে হইচই হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেন জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সদস্যরা। ‘আমরা পত্রিকা পড়ি না’ এমন শব্দও হাউস থেকে এ সময় শোনা যায়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী একটু থেমে গেলে সামনে বসা তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী তাকে বক্তব্য চালিয়ে যেতে ইশারা করেন।
মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট করে বলতে হবে। ঢালাওভাবে অনিয়মের কথা বললে গ্রহণযোগ্য হবে না। সুনির্দিষ্ট বলতে হবে, কোথায় দুর্নীতি হয়েছে?’
গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ৪৭ জন। এ নিয়ে করোনাভাইরাসে দেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১৩ হাজার ১১৮ জন।
এদিকে, গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে শনাক্ত হয়েছে ২৪৩৬ জন। এ নিয়ে দেশে মোট করোনাভাইরাসে শনাক্তের সংখ্যা ৮ লাখ ২৬ হাজার ৯২২ জন।
আজ রবিবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে আরও জানানো হয়, গত ১ দিনে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ২২৪২ জন করোনারোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৬৬ হাজার ২৬৬ জন।
আজ ৩ মে সকালে মাদারীপুরের শিবচরের পদ্মায় স্পিডবোট ডুবিতে পিতা-মাতা ও দুই বোনকে হারিয়ে অলৌকিকভাবে প্রানে বেঁচে গেল শিশু মিম। আজ সকালে দুর্ঘ’টনার পর নদীতে একটি ব্যাগ ধরে ভাসতে থাকা মিমকে উদ্ধার করে নৌপুলিশ।
সোমবার দুপুরে শিবচরের পাঁচ্চর রয়েল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শিশু মিম শিবচর ইউএনও অফিসের এক কর্মচারি ও বাংলাবাজার স্পিডবোট ঘাটের নৈশ প্রহরী দেলোয়ার ফকিরের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালের একটি কক্ষে দুপুরের ভাত খাচ্ছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিশু মিমের বাবা মনির হোসেন, মা হেনা বেগম, ছোট দুই বোন সুমি (৫) ও রুমি (৩) স্পিডবোট দুর্ঘটনায় মারা গেছে। তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
মিমকে উদ্ধারকারী নৌ পুলিশের কনস্টেবল মেহেদী বলেন, ‘শিশুটিকে নদীতে ব্যাগ ধরে ভাসতে দেখি, তার হাত ও চোখের কাছে কিছুটা আঘাতের চিহ্ন ছিল। দ্রুত তাকে পাঁচ্চর রয়েল হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে জানা যায় শিশুটির পরিবারের সকল সদস্যরাই মারা গেছে।’
শিশু মিম শুধু জানে তার মা, বাবা, বোনেরা কেউ বেঁচে নেই। মাঝে মাঝেই মা মা বলে কেঁদে উঠছে সে। কান্নারত অবস্থায় মিম বলে, আমরা দাদা মারা গেছে দাদাকে শেষবারের মত দেখতে আমরা বাড়ি যাচ্ছিলাম। এখন আমার আর কেউ রইলো না।
উল্লেখ্য, সোমবার সকালে শিমুলিয়া থেকে ছেড়ে আসা স্পিডবোটটি কাঁঠালবাড়ী ঘাটের কাছে এসে নোঙর করে রাখা একটি বালুবোঝাই বাল্কহেডের সাথে ধাক্কা লেগে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এ পর্যন্ত ২৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত ৫ জন চিকিৎসাধীন আছেন ৷