ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ মার্চ, ২০২১, ২ চৈত্র ১৪২৭

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
Janata Bank
Rupalibank

স্যার আমাদের বাঁচান, ডুবন্ত শ্রমিকদের গভীর রাতে উদ্ধার করলো নৌ পুলিশ


Ekushey Sangbad
জেলা প্রতিনিধি, ভোলা
১১:১৩ এএম, ১৫ মার্চ, ২০২১
স্যার আমাদের বাঁচান, ডুবন্ত শ্রমিকদের গভীর রাতে উদ্ধার করলো নৌ পুলিশ

স্যার আমাদেরকে বাঁচান, এখন ভাটা জোয়ার এসে আর এক হাত পানি উঠলেই আমরা মারা যাব এমন ফোন আসে ভোলা সদর নৌ পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) সুজন পালের ফোনে।

১৪ই মার্চ রাত তিনটায় এমন ফোন পেয়ে নৌ পুলিশের ওসি সুজন পাল এর নেতৃত্বে এস আই তৌহিদুর রহমান ও এ এস আই শরিফুল ইসলাম সর্গীয় ফোর্স নিয়ে নিজদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল মেঘনার রামদাসপুর সিমানাবর্তী এলাকা থেকে চার শ্রমিকদের উদ্ধার করেন।

নৌ পুলিশের ওসি সুজন পাল বলেন,গত দিবাগত রাত তিনটার দিকে আমার সরকারি নাম্বার ০১৩২০-১৬৭০৫০ -তে একজন অজ্ঞাতনামা ব্যাক্তি ফোনকলের মাধ্যমে কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান যে, ’স্যার আমাদেরকে বাচান, এখন ভাটা জোয়ার এসে আর এক হাত পানি উঠলে আমরা ডুবে মারা যাব’। এরই মধ্যে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ হইতে একটি ফোন আসে এবং জানান যে, ২৮০০ বস্তা শাহ সিমেন্ট বোঝাই  এবটি বাল্কহেড ৪ জন শ্রমিকসহ পানিতে ডুবে যাচ্ছে আপনারা তাহাদেরকে উদ্ধারে সাহায্য করুন। 

উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে আমি একটি জলযান (তড়িৎ উদ্ধারের জন্য) স্পিডবোট নিয়ে অত্র পূর্ব ইলিশা সদর নৌ থানায়  কর্মরত এস.আই মোঃ তৌহিদুর রহমান, এ.এস.আই মোঃ শরীফুল ইসলাম, এ.এস.আই চন্দন, মোঃ শহিদুল ইসলাম, মোঃ রেজাউল করিমদের প্রেরন করি এবং জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ এ.এস.আই  মোঃ শরীফুল ইসলামের মোবাইল নাম্বার ৯৯৯ কে দেই। 

পরবর্তীতে রাত্রিবেলা উপরোক্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ রেখে নদীতে সারারাত ডুবে যাওয়া জলযানের খোঁজাখুঁজি করে এক পর্যায়ে  আজ ভোর অনুমান পোনে ৬টায় নৌযান (বাল্কহেড-আল্লাহর দান প্লাস)  পুর্ব ইলিশা সদর নৌ থানা হতে আনুমানিক ৭/৮ কিঃ মিঃ অদূরে ভোলা সদর থানাধীন রামদাসপুর এলাকার ডুবোচর হতে নৌ পুলিশের উদ্ধারকারী টিম ০৪ (চার) জন শ্রমিককে প্রায় ডুবে যাওয়া অবস্থা হইতে জীবিত উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে তাদেরকে নৌ থানায় এনে জীবিত উদ্ধার ০৪ (চার) জন শ্রমিকদের সকালের নাস্তা দিয়ে তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করি। 

উদ্ধারপ্রাপ্ত শ্রমিকরা হলেন ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার বাউমহল গ্রামের মফিজ বেপারীর ছেলে আবুল কালাম, একই উপজেলার তেতুলবাড়ীয় গ্রামের আনসার আলীর ছেলে মোঃ গিয়াস উদ্দিন (৩৬), আবদুর রশিদের ছেলে মোঃ সোলাইমান (১৯), নাজেম আলী হাওলাদার এর ছেলে
মোঃ রফিকুল ইসলাম (৬০)।

ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে উদ্ধারপ্রাপ্ত শ্রমিকরা জানান, শনিবার ১৩ মার্চ, ২০২১ রাত সাড়ে নয়টায় তাহাদের পরিচিত  নিয়াজ (৪০) নামে একজনকে উক্ত বিপদের বিষয়টি জানাইলে সে ৯৯৯ এ ফোন করে জানান তারা চারজন শ্রমিক সিমেন্ট বোঝাই একটি নৌযান (বাল্কহেড) নিয়ে সকাল সাড়ে এগারোটায় মুন্সীগঞ্জ থেকে ঝালকাঠির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ছিলেন। দুপুর আড়াইটায় তারা চাঁদপুর পৌঁছান। চাঁদপুর থেকে রওনা দেয়ার প্রায় দুইঘন্টা পর তারা ঝড়ের কবলে পড়েন। এরপর শুরু হয় তাদের জীবন মরন যুদ্ধ।

তীব্র স্রোত আর ঝড়ো হাওয়ায় তারা নৌযানের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। তারা প্রাণপন চেষ্টা করেও নৌযান নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছিলেন না। ঝড় আর নদীর উত্তাল স্রোত তাদের কোন স্থান থেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিল তার কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। এক পর্যায়ে রাত নয়টার দিকে একটি ডুবো চরে আটকে তাদের নৌযানটি নিমজ্জিত হয়ে যায়। তবে নৌযানটির একটি অংশ, যেখান থেকে নৌযানটি পরিচালনা করা হয় তার কিছু অংশ তখনো পানির উপর ভেসে ছিল।
তারা চারজন শ্রমিক কোনোমতে সেখানে আশ্রয় নেন। এরপর তারা তাদের উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন স্থানে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতে থাকেন। 

তখন কেউ কেউ তাদেরকে ৯৯৯ এ ফোন করার পরামর্শ দিলে তারা ৯৯৯ কল করে সাহায্য চান। তবে ৯৯৯ এর জন্য অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় কলারের সঠিক অবস্থান চিহ্নিত করা ও তাদের উদ্বার করা। কারণ  কলার তার অবস্থান সঠিকভাবে জানাতে পারেননি। শুধু বলেছিলেন চাঁদপুর থেকে রওনা দেয়ার দুই আড়াইঘন্টা পর ঝড়ের কবলে পড়েছিলেন। সঠিক অবস্থান না জেনে বিশাল মেঘনা নদীতে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা ছিল অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার।

তারা কলারের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে নৌপথ পর্যবেক্ষণ করে আমরা পুর্ব ইলিশা সদর নৌ থানা পুলিশ সামনে এগোতে থাকি। অবশেষে ১৪ মার্চ রবিবার ভোর ছয়টার দিকে পূর্ব ইলিশা নৌ পুলিশ থানা পুলিশ উদ্ধারকারী দল কলার ও তার ৩ সঙ্গীকে খুঁজে পাই ও নিরাপদে উদ্বার করে ফাঁড়িতে নিয়ে  তাদের প্রাথমিক শুশ্রূষা ও খাবারের ব্যবস্থা করি।

৯৯৯ এর হার না মানাসহযোগীতা এবং পুর্ব ইলিশা সদর নৌ থানা পুলিশের  প্রচেষ্টায় জীবিত উদ্ধার হওয়া চার শ্রমিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে তাদের প্রতি।
নৌ ওসি সুজন পাল বলেন, আমাদের চেষ্টার কোন ঘাটতি ছিলো না, উত্তাল মেঘনায় ঝুঁকি নিয়ে নৌ পুলিশ ডুবন্ত চার শ্রমিকদের উদ্ধার করেছে।

একুশেসংবাদ/সুমন/অমৃ