a
ছবি সংগৃহীত
পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে হঠাৎ উত্তেজনা বাড়ার কারনে মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বে উদ্বেগ উৎকন্ঠা বেড়ে গেলেও আমেরিকা ও ইসরাইল ভেতরে ভেতরে পাকিস্তানকে উসকানি দিয়ে যাচ্ছিল এবং মজাই পাচ্ছিল। বিশ্বের কিছু প্রভাবশালী দেশগুলোর কূটনৈতিক কূটচালে দূ'দেশের সম্পর্ক প্রায় স্বাভাবিক পর্যায়ে।
কয়েক বছর সিরিয়ায় ইরান সমর্থিত লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েল হামলা চালিয়ে আসছে। বিশেষ করে ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হঠাৎ হামলার পর ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইরানের উপর ইসরায়েলসহ পশ্চিমারা বেজায় চটেছে। কারণ তাদের ধারণা, ইরানের বলেই হামাস ও ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা আজ এতো শক্তিশালী অবস্থায় পৌঁছেছে। তাই কোন শক্তিশালী দেশকে দিয়ে ইরানকে ব্যস্ত রাখতে পারলে ইসরায়েল বা পশ্চিমা শক্তিশালী দেশগুলো ইরানকে ধরাশায়ী করার সহজ হবে। তবে ইরান-পাকিস্তানের হঠাৎ স্বাভাবিক সম্পর্ক তৈরি হওয়ায় পশ্চিমাদের জন্য তাদের আশা গুড়েবালি হতে যাচ্ছে। এই মূহুর্তে ভঙ্গুর অর্থনীতি পাকিস্তান আর্থিক বা শামরিক সহযোগিতা ফিলিস্তিনীদের করতে না পারলেও তাদের লজিষ্টিক সাপোর্ট থাকলেই পশ্চিমাদের জন্য বড় মাথার ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
সর্বশেষ খবরে জানা যায়, টেলিফোনে কথা বলার পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জলিল আব্বাস জিলানি ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবুদল্লাহিন সন্ত্রাস দমনে নিবিড় সমন্বয় ও পারস্পরিক উদ্বেগের বিভিন্ন বিষয়ে শক্তিশালী অবস্থান নেওয়ার বিষয়ে একমত হন। ইসলামাবাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত উভয়ের কথোপকথন থেকে জানা গেছে, এ দু’জন পরিস্থিতি শান্ত করার বিষয়েও একমত হয়েছেন।
এদিকে সিরিয়ায় আবারও ইসরায়েল হামলার ফলে ইরানের বিপ্লবী গার্ডের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। খবর বিবিসি।
ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ডের মতে, এই হামলার জন্য দায়ী ইসরায়েল এবং তিনি দাবি করেন, এতে চারজন সামরিক উপদেষ্টার পাশাপাশি সিরিয়ার অনেক বাহিনী নিহত হয়েছেন। হামলার বিষয়ে ইসরায়েল চিরাচরিত নিয়মে কোনো মন্তব্য করেনি। কয়েক বছর ধরে ইসরায়েল সিরিয়ায় ইরান সমর্থিত লক্ষ্যবস্তুতে উপর্যপুরি হামলা চালিয়ে আসছে। বিশেষ করে, ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ ধরনের হামলা আরও তীব্রতর হয়েছে। ফলে এই মূহুর্তে ইরান-পাকিস্তানের উত্তেজনা নিরসনটাই বেশি দরকার ছিল বলে বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন।
লেখক: খোরশেদ আলম, সম্পাদক, মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
ছবি: সংগৃহীত
স্বাধিকার, স্বাধীনতা ও স্বকীয়তার চেতনায় মোড়ানো মাস ফেব্রুয়ারি। জাতীয় চেতনা স্ফুরণের মাস ফেব্রুয়ারি। ভাষা রাষ্ট্রের জন্ম দিতে পারে, এই উদাহরণ সৃষ্টির মহিমায় মোড়া এই মাস। এ মাসের আগমনী সুরে বদলে যায় জাতীয় মন ও মানস। গোটা জাতি বাঁধা পড়ে যায় এক সূত্রে। এক ভাষা, এক সুর, এক চেতনায় বিলীন হয়ে যায় ধর্মীয় ও জাতিগত ভেদাভেদ।
ছোট বড় সকলে এক সারিতে এসে দাঁড়ায় এই মাসে। জাতীয় ঐক্যতানের এক অপূর্ব রঙধনু দ্যুতি ছড়ায় এই মাসে। ভাষাকে কেন্দ্র করে রকমারি আয়োজনের মধ্যে হারিয়ে যায় বাংলা ভাষা আন্দোলনের গোড়ার কথা। হারিয়ে যায় ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রসঙ্গ, বাংলা ভাষার বর্তমান অবস্থানের স্বপ্নদ্রষ্টা যিনি। আমরা কুণ্ঠাবোধ করি অধ্যাপক আবুল কাসেম এবং তমদ্দুন মজলিসের কথা স্মরণ করতে। আমাদের স্মৃতির মোহনা থেকে হারিয়ে যায় কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের অবদানের কথা। অথচ এই টুকরো টুকরো অধ্যায়গুলো বাংলা ভাষার অবস্থানকে বর্তমান পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। ভাষার মাসে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি তাদের। তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় জীবনের এক অবিস্মরণীয় ঐতিহাসিক ঘটনা। এটি আমাদের জাতীয় স্বাতন্ত্র্য ও চেতনাবোধকে শাণিত করেছে। উদ্দীপ্ত করেছে, উজ্জীবিত করেছে। এক সূত্রে গেঁথেছিল তৎকালীন পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষীদের। পাকিস্তানের প্রভাব বলয়ের ভেতরে ধীরে ধীরে পল্লবিত হয়ে এক সময় বিরাট মহীরুহে রূপান্তরিত ভাষা আন্দোলন ভবিষ্যৎ স্বাধীনতার ভিত্তি রচনা করেছিল।
একই সাথে তৎকালীন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার বিচারপতি এস এম মোর্শেদকে সভাপতি করে কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ড গঠন করে। উদ্দেশ্য ছিল যথোপযুক্ত পরিভাষা তৈরি, প্রয়োজনীয় বই রচনা, শিক্ষক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জাতীয় ভাষায় পাঠদান প্রক্রিয়া চালুকরণ।
কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বাংলায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান, রসায়নশাস্ত্র, পদার্থবিদ্যা, প্রভৃতি বই রচনায় সাফল্য দেখায়। সাথে সাথে নজরুল রচনাবলী (চার খণ্ড), ইসমাইল হোসেন সিরাজী রচনাবলী, ড. জি সি দেবের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘তত্ত্ব বিদ্যাসার’ প্রকাশ করে। প্রকাশ করে পাকিস্তানের লোককাহিনী। কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ড একই সাথে মধ্যযুগের বাংলা পাণ্ডুলিপি ও প্রাচীন বইপত্র সংগ্রহ, মানসম্মত বাংলা মুদ্রণযন্ত্র উদ্ভাবন ও উন্নয়ন, সাহিত্য সাময়িকী প্রকাশ এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উন্নয়নের জন্য আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার মতো কিছু মৌলিক কার্যক্রম গ্রহণ করে। এ ক্ষেত্রে সমন্বিতভাবে কাজ করেছিলেন ড. মমতাজউদ্দীন আহমেদ (সাবেক ভিসি, রাবি), মো: শামসুল হক (ডিপিআই, ইপি), ড. কাজী মোতাহার হোসেন, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, অধ্যাপক মু. আ: হাই, কবি জসিম উদ্দীন, কবি গোলাম মোস্তফা, ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ, ড. মুহম্মদ এনামুল হক। বোর্ড পাঠ্যপুস্তক রচনা ও প্রকাশের সাথে সাথে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বাংলা পাঠ্যক্রম তৈরিতে অভ‚তপূর্ব সাফল্য দেখায় বোর্ড। পদার্থবিদ্যা, রসায়নশাস্ত্র, সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের বাংলা পরিভাষায় বই রচনায় তাদের অবদান আজো শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে হয়।
তালপাতায় লেখা পুঁথি ও অসংখ্য দুর্লভ বই সংগ্রহ করে এক সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা তৈরি করেছিল কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ড যা পরবর্তী সময়ে বাংলা একাডেমির সাথে একীভূত হয়ে যায়। বোর্ডের অর্থায়নে ও পৃষ্ঠপোষকতায় অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীর বাংলা কি-বোর্ডের (মুনীর অপটিমা) আধুনিকায়ন বোর্ডের একটি অনন্য অবদান। একই সাথে বাংলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়াটিক সোসাইটিকে বাংলা ভাষায় সাহিত্য সাময়িকী, বিজ্ঞানবিষয়ক পত্রিকা, ইতিহাস সম্পর্কিত গবেষণা ও প্রকাশনার জন্য আর্থিক সহযোগিতা প্রদান এক অভ‚তপূর্ব কর্মচাঞ্চল্য তৈরি করে। বোর্ডের পৃষ্ঠপোষকতায় পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘ভাষা সাহিত্য সপ্তাহ’ বাংলা ভাষা চর্চার ক্ষেত্রে অন্যরকম আরেকটি মাইলফলক। প্রদর্শনীতে বাংলা সাহিত্যের ক্রমবিবর্তন; চর্যাপদ থেকে শুরু করে ক্রমধারায় নজরুলকে ধারণ করে তালপাতার পুঁথি, তুলোট কাগজে লেখা দুর্লভ বইপত্র প্রদর্শন করা হয়। আয়োজন করা হয় কয়েক প্রস্থ সেমিনারের, প্রাচীন বাংলা সাহিত্য, মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য, আধুনিক বাংলা সাহিত্য প্রসঙ্গে আলোচনা উপস্থাপন করেছিলেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ড. এনামুল হক ও সৈয়দ আলী আহসান। আলোচকমণ্ডলীর ভেতর ছিলেন অধ্যাপক আহমদ শরীফ, ড. নীলিমা ইব্রাহিম, অজিত গুহ, মুনীর চৌধুরী ও সৈয়দ মুর্তজা আলী। বাংলা ভাষা উন্নয়ন ও চর্চার ক্ষেত্রে এ ধরনের আয়োজন আর হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। বোর্ডের আরেকটি মহতী উদ্যোগ ছিল ‘বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস’ রচনার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগকে আর্থিক মঞ্জুরি- যদিও কার্যত ইতিহাস রচনার কাজ সম্পাদিত হয়নি।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলা একাডেমি এবং বাংলা উন্নয়ন বোর্ডকে একীভূত করা হয় ড. মযহারুল ইসলামকে একই সাথে উভয় প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক নিয়োগের মাধ্যমে। উচ্চশিক্ষা, অফিস আদালতে বাংলা ভাষা প্রচলনের ক্ষেত্রে বোর্ডের কার্যক্রম আজো প্রশংসার দাবিদার। স্বল্প সময়ে ৩৫ হাজার ৮৭টি দুর্লভ বিভিন্ন ভাষার বই, পত্র-পত্রিকা, সাময়িকী ছাড়াও বিভিন্ন মানচিত্র এবং মুদ্রা সংগ্রহ করে এক বিশাল ভাণ্ডার গড়ে তোলা হয়েছিল ভবিষ্যতে বাংলা ভাষার বিস্তারের লক্ষ্যে। বাংলা একাডেমির লাইব্রেরিতে পুরোনো বইয়ের সংগ্রহ তালিকায় বোর্ডের সংগৃহীত বই তাদের ঐকান্তিক একনিষ্ঠ চেষ্টার কথা, সফলতার কথা সগৌরবে ঘোষণা করছে। সূত্র: নয়াদিগন্ত
ছবি সংগৃহীত: শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যাওয়া ও গণভবনে ছাত্র/জনতার আগমন
শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও গত কয়েকদিনের ঘটে যাওয়া ঘটনা একজন সেনা কর্মকর্তা পরিচয় গোপন রেখে তুলে ধরেছেন। তার অনুরোধেই পোস্টটি হুহহু নিচে তুলে ধরা হলো-
সমগ্র বাংলাদেশী মানুষদের বিজয়ের শুভেচ্ছা!
আমি একজন সেনাবাহিনীর বিশেষ ইউনিটের কর্মকর্তা। আমি আমার প্রকৃ্ত আইন্ডেন্টি হাইড করছি যাতে করে ভবিষ্যতে আমার বিরুদ্ধে কোনো সম্ভাব্য স্টেপ না গ্রহণ করা হয়।।
গত কয়েক সপ্তাহ যাবত আপনারা সেনাবাহিনীর কর্মকান্ডে ব্যাথিত হয়েছেন বলে আমি জানি। তবে আপনি কি জানেন শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে খোদ সেনাবাহিনীই বড় ভূমিকা রেখেছিলো। এখন বলি ভিতরে কিছু ঘটনা, গত কয়েকদিন যাবত আন্দোলন যখন বেগবান হয় তখন থেকেই সরকার মহলের উপরের কিছু মন্ত্রীর ভিতরে ভয় ঢুকে যায় এবং তারাও নড়েচড়ে বসে। এতে করে শেখ হাসিনা যখন কেউকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তখন তিনি সেনাবাহিনী নামিয়ে কারফিউ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। ভেবেছেন কারফিউ দিলে হয়তো আন্দোলন থামবে। কিন্তু থামেনি উলটো মানুষ প্রচন্ড রেগে গিয়েছিলো। সেনাবাহিনীর ভিতরের বিভিন্ন ব্রিগেডে ক্ষোভ বেড়ে যায় সরকারের প্রতি। দেশের মানুষের বিপক্ষে সেনাবাহিনীকে দাঁড় করানোই সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো শেখ হাসিনার। এটি তার কয়েকটি ভুলের একটি। সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ব্রিগেডে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ যখন বেড়ে যাচ্ছিলো তখনই সেনাপ্রধান সাহেব মতবিনিময় সভার ডাক দিয়েছিলেন। সেখানে সরকার পক্ষের গুটি কয়েকবাদে বাকি সবাই শেখ হাসিনার বিপক্ষে দাঁড়ান। সরকার পক্ষে দাঁড়ানো কয়েকজনের একজন হলো ব্রিগেডিয়ার ইমরান হামিদ। আগে আদমজী স্কুলের প্রিন্সিপাল ছিলেন। মতবিনিময় সভায় যখন সেনাপ্রধান সাহেব আঁচ করতে পেরেছেন যে সেনাবাহিনীকে যদি দেশের বিরুদ্ধে দাঁড় করার চেষ্টা আরো বেড়ে যায় তবে যেকোনো মুহূর্তে মিলিটারির ক্যুর সম্ভাবনা আছে। তাই তিনি ওইদিন থেকে আন্দলোনকারীদের উপর গুলি চালানো নিষেধ করেন পাশাপাশি আইজিপির সাথেও কথা বলেন কারন পুলিশেও প্রায় একই অবস্থা চলছিলো। তখন আইজিপি এবং সেনাপ্রধান সাহেব একমত হলেন যে শেখ হাসিনা ও তার সহযোগী অর্থাৎ আওয়ামীলীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্যদের দেশের সার্বিক অবস্থা বোঝানো হবে, যাতে করে তারা ক্ষমতা-ত্যাগ করে। এই নিয়ে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ এবং অতি গোপনীয় ইউনিট তৈরি করা হয় যার সাথে আমি জড়িত। ওই ইউনিটের অফিসাররা এবং আমি আওয়ামীলীগের বিভিন্ন সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও উপদেষ্টাদের সাথে বহুবার আলোচনা করি তাতে কয়েকজন সায় দিয়েছেন যে তারা শেখ হাসিনাকে বোঝাবেন পদত্যাগের জন্য। কয়েকজন সদস্য উলটো আতংকিত হয়ে দেশ ত্যাগ করে ফেলেন। তারা ভেবেছেন সেনাবাহিনী তাদের আটক করবে মার্শাল ল' জারি করবে। আসলে এমনটা আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো না।
আমরা চেয়েছি গণতান্ত্রিক উপায় সরকার পরিবর্তন হবে। প্রধান বিচারপতির রায়ের ভিত্তিতে। এরপর শেখ হাসিনাকে ওই সভাপতি মন্ডলীর বিভিন্ন সদস্য এবং উপদেষ্টা বোঝাতে চেষ্টা করেন পদত্যাগের জন্য। এর মধ্যে একজন হলেন সালমান এফ রহমান। মন্ত্রী পদমর্যাদা সম্পন্ন ব্যাক্তিও তাকে বুঝিয়েছেন। তবে এটা সত্য যে, যখন উনাকে সবাইকে পদত্যাগের জন্য বলেতেছিলো তিনি তখনই ভেঙ্গে পড়েছিলেন। কেননা তিনি কাউকে পাশে পাচ্ছেন না এবং বিশ্বাসও করতে পারছেন তখন আমরা শেখ হাসিনার কাছে যাই এবং তাকে বোঝানোর চেষ্টা করি। যখন তিনি শুনতেছিলেন না তখন আমরা উনার বোন শেখ রেহনার সাথে যোগাযোগ করি। উনাকে দেশে আসতে বলি। আমাদের বিশ্বাস ছিলো অন্তত একমাত্র বোনকে তিনি বিশ্বাস করবেন। উনার বোন আমাদের কথায় ৪ তারিখ সকালে বাংলাদেশে আসেন। শেখ রেহানা এবং শেখ হাসিনা ৪ তারিখ অর্থাৎ রবিবার থেকেই নিজেদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা করেন।
আমরা শেখ হাসিনার প্রোটোকল অফিসারদের (যারা সেনাবাহিনীতে কর্মরত) বলে দিয়েছিলাম, যেন তাদের গতিবিধির উপর ২৪ ঘন্টা নজর রাখে। আমাদের সূত্র জানিয়েছে যে, শেখ হাসিনা তখনও মানতে নারাজ ছিলেন। উনি ক্ষমতা সেনাবাহিনীকে দিতে চাচ্ছিলেন না। তিনি উলটো কারফিউ কড়াকড়ি করতে সেনাবাহিনীর উপর জোর দেন। যখন দেখছি কাজ হচ্ছে না তখন আমরা সেনাপ্রধান সাহেবকে জানাই। পরের দিন, আইজিপি ও তিন বাহিনীর প্রধান নিজেই অর্থাৎ সোমবার সকালে শেখ হাসিনার বাসা গণভবনে যান।সেখানে সালমান সাহেবও উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা তার বিভিন্ন ক্ষোভ ঝাড়েন সেনাবাহিনীর উপর। পুলিশদেরকে বাহবা দেন। কিন্তু আইজিপি সাহেব শেখ হাসিনাকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেন যে দেশের পরিস্থিতি একদম নিয়ন্ত্রণের বাহিরে। তিনি তখন দেশে জরুরী অবস্থা জারি করতে নির্দেশ দিলে সেনাপ্রধান তা মানতে নারাজ ছিলেন। ওই সভা ছিলো শেখ হাসিনার ইতিহাসের প্রথম সভা যেখানে কেউই তার হুকুম পালন করতে রাজি হোননি। শেখ হাসিনা তখন বুঝে যান যে, তার পক্ষে এখন আর কেউ নেই। তিনি তখন পাশের রুমে শেখ রেহানার কাছে যান , তার সাথে আলোচনা করেন এবং বিদেশ থেকে ভিডিও কলে পুত্রসন্তান জয়ের সাথে আলোচনা করেন। জয় নিজের মাকে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে নিরাপদ আশ্রয় নিতে বলেন যতদ্রুত সম্ভব।
বলে রাখা ভালো, আমরা শেখ রেহানার মাধ্যমে জয়ের সাথেও আলাপ করার চেষ্টা করেছিলাম। শেখ হাসিনা তখন ফের সভায় এসে সেনাপ্রধানের কাছে পদত্যাগের জন্য দুইদিন সময় চান যাতে করে তার সহযোগীরা দেশ ছাড়তে পারে এবং একটি জাতির উদ্দেশ্যে রেকর্ডেড ভাষণ দিতে চান পাশাপাশি নিরাপদ আশ্রয়ের শর্ত দেন। তখন সেনাপ্রধান নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়ে রাজি হোন কিন্তু বাকি দুইটিতে রাজি ছিলেন না। কেননা ততক্ষণে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে মানুষ জড় হয়ে গেছেন এবং তারা যেকোনো মুহূর্তে গণভবনে ঢুকে যাবেন। সেনাপ্রধানসহ তিনবাহিনীর প্রধান শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেন যে তারা ৪৫ মিনিটের মধ্যে নিরাপদে ভারতে পাঠিয়ে দিবেন। শেখ হাসিনা হতাশ হন কিন্তু রাজি হয়ে যান। তখন আমি এবং আমার ইউনিট আমাদের সবচেয়ে পরিশ্রমী একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে খুব কম সময়ে। তখন বাজে ১২.৩০ মিনিট। সময় ছিলো মাত্র ৪৫ মিনিট। এক ঘন্টাও না! আমরা প্রথমে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে শেখ হাসিনা, শেখ রেহনা এবং সালমান সাহেবকে বঙ্গভবনে নিয়ে যাই। সেখানে প্রেসিডেন্টের কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়ে উনাকে নিয়ে কুর্মিটোলা এয়ারব্যাসে চলে যাই। এর মাঝখানে ভারতের সেনাবাহিনীর সাথে যোগাযোগ করি যাতে করে তারা শেখ হাসিনাকে গ্রহন করে। ক্লিয়ারেন্স চাই। তারা সম্মতি জানায়। তখন তারা শেখ হাসিনাকে ভারতের আগরতলায় পাঠাতে বললে আমরা কুর্মিটোলা এয়ারব্যাস থেকে ২.৩০ মিনিটে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে অতি সতর্কতার শেখ হাসিনা, তার বোন, সালমান সাহেব এবং তার কিছু বিশস্ত অফিসারকে আগরতলা পাঠাই।
এর মাঝখানে সেনাপ্রধান রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে থাকেন। উনি রাজনীতিবিদ ও প্রেসিডেন্টের সাথে আলাপ করেন। এর জন্য আলাদা একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়। ভারতের আগরতলা থেকে থেকে বিকাল ৪.৩০ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী সি-১৩০জে উড়জাহাজ করে উনাকে নিয়ে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। বলে রাখা ভালো, এই পুরো সময়েই শেখ হাসিনা স্তব্দ, নিশ্চুপ, হতাশ এবং কাঁদো কাঁদো ভাব। মনে হচ্ছিলো তিনি এটা বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। বিমানবাহিনীর বিমানটি প্রথমে দিল্লিতে নামার কথা থাকলেও পরবর্তীতে দিল্লির কাছাকাছি গাজিয়াবাদের হিন্দোন এয়ারপোর্টে অবতরণ করে ৫.৩০ মিনিটের দিকে। তবে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সি-১৩০জে উড়জাহাজটি সেখানেই রাখা হয় সারাদিন। যদি পরবর্তীতে কোনো দেশে যেতে চান তবে। তখন থেকেই শেখ হাসিনার সাথে আমাদের বর্তমান যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। তিনি যেসব অফিসার সাথে করে নিয়েছেন তারা নিয়মিত বিমানবাহিনীকে আপডেট দিচ্ছেন। আজ সকালে বিমানবাহিনী থেকে জানা হলো সি-১৩০জে বিমানটি ফিরত চলে আসবে। ইতেমধ্যে হয়তো সেটি উড্ডয়ন করে ফেলেছে।
আমরা বারবার শেখ হাসিনার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছি কিন্ত তার অফিসাররা আর সায় দিচ্ছেন না। তবে আপাতত শুনেছি যে তিনি লন্ডনে যেতে পারেন। এর কারন শেখ হাসিনা আর দেশীয় কেউকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। ইতেমধ্যে ভারত থেকে আমাদের জানানো হচ্ছে যে সেখানের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলগুলোয় সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করছে।
আমার এই সব কিছু বলার কারন একটাই যে আপনারা বিভিন্ন মানুষ যারা অনলাইনে গুজব রটাচ্ছেন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তারা সত্যটা জানুন। সেনাবাহিনী সবসময় দেশের মানুষের জন্য কাজ করবে। সেটা আগামী যেই সরকারই আসুক। আমাদের নীতি একটাই থাকবে সেটা হলো দেশের মানুষদের সুরক্ষা। আপনাদের কেউ কেউ দাবি করছেন যে সেনাবাহিনী শেখ হাসিনাকে দেশ থেকে সরিয়ে দিয়েছে ইচ্ছা করে। আসলে ব্যাপারটা ইচ্ছাকৃত না, আমাদের প্ল্যানে শেখ হাসিনাকে দেশ ছাড়ার কথাও ছিলো না। উনি শর্ত দাবি করেছেন নিরাপত্তার জন্য। উনাকে নিরাপত্তা দিলে, উনি পদত্যাগ করবেন। তাই আমরাও সেটি মেনে নিয়েছি।
ইতেমধ্যে আমাদের বিভিন্ন ইউনিট তৈরি হচ্ছে বা হয়েছে দেশের বিভিন্ন জায়াগায় মোতায়েনের জন্য। আপনারা আবারও স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবেন বলে আশা করছি। কিন্তু সব অতি স্বল্প সময়ে হওয়ার কারনে সেনাবাহিনীর অরগানাইজড হতে একটু দেরি হচ্ছে। তবে ঠিক হয়ে যাবে আশা করি।
গতকালের রাতে সেনাবাহিনীর উপর গুলির যে আতংক সেই প্রসঙ্গে,
আমরা সেনাসদস্য আহত হওয়ার খবরটি পেয়েছি। পুলিশ গতকাল আতঙ্কিত হয়ে সেনাসদস্যদের উপর গুলি চালিয়েছেন। এই ব্যাপারটি তদন্ত করা হয়েছে। গতকাল হঠাত সরকার পতনের পর বিরোধীরা তাদের ১৫ বছরের ক্ষোভ একদিনেই নিয়ে ফেলছেন। আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। এতে করে আপনারা বিভিন্ন মানুষদের বাসাবাড়িতে বা কার্যালয়ে হামলা করছেন। এতে বহু পুলিশ আহত ও নিহত হয়েছে। এখন পুলিশরা এজন্য আতঙ্কিত। আরো একটি কথা, আপনারা সবাই জানেন দেশে এখনো কিছু এমপি বা রাজনীতিবিদরা আটকে আছেন এবং পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সেনা দফতর থেকে এয়ারপোর্ট বন্ধ করে দেওয়ার পর অনেকেই পালাতে পারেননি।তাতে পুলিশও রয়েছে। তারা সবাই আইজিপির কাছে নিরাপত্তা চান বিকালে। আইজিপি তখন সিদ্ধান্ত নেন যে গভীর রাতে পুলিশের বিশেষ কয়েকটি ইউনিটকে রাতে ফাঁকা আওয়াজ দিতে বলেন। তারা সারা ঢাকায় বিভিন্ন এলাকায় ফাঁকা আওয়াজ দেওয়ার জন্য নিজেদের বহর নিয়ে বের হয় যাতে করে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ঘর থেকে না বের হোন। তারা ফাঁকা আওয়াজ দিতে দিতে সেনানিবাসে নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় নেয় এবং আত্মসমর্পণ করেন। এই ফাকে এম্পি-মন্ত্রী-পুলিশ কর্মকর্তারা নিজেদের আস্তানা খুঁজে নেয়। তাই ওইসময় তারা পালাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু আফসোসেস বিষয় হচ্ছে তারা এয়ারপোর্টের দিকে রওনা হোন। এইদিকে আগে থেকেই সেনাবাহিনীর তুর্কী ড্রোন দিয়ে আমরা সারা ঢাকায় নজরদারি চালাচ্ছিলাম। তাদের গতিবিধি দেখে এয়ারপোর্টে সেনাবাহিনী পাঠানো হয় এবং কয়েকজন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার হয়। তাদের মধ্যে কেউ এমপি বা মন্ত্রী ছিলেন না। যদিও এই কথাটি সায়ের ভাই আগেই বলে দিছেন গতকাল।
পাশাপাশি আপনাদের অনেকেরই মনে খুব উদ্বেগ জেগেছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র’ নিয়ে। আপনাদের জানিয়ে রাখছি যে এটা নিয়ে একটুও বিচলিত হবেন না। হ্যাঁ এটা সত্য ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর কিছু সদস্য বাংলাদেশে আছেন। এটা প্রায় সবদেশেই হয় অন্যদেশের উপর নজরদারির জন্য। আমাদের সেনাবাহিনীর ডিজিএফআইও অনেক দেশে মোতায়েন রয়েছে। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে বাংলাদেশে যতজন র’এজেন্ট বা সংশ্লিষ্ট আছেন তারা সবাই সেনাবাহিনীর নজরদারিতে আছে। তাদের সেনাবাহিনী শেখ হাসিনা সরকার থাকার সময়ই আইডেন্টিফাই করে ফেলেছিলো এবং তখন থেকেই তাদের উপর নজরদারি করে আসছি অতএব এটা নিয়ে চিন্তিত হবেন না। সূত্র: ফেসবুক/ Mir Kamruzzaman Moni