a হোয়াটসঅ্যাপে যুক্ত হলো নতুন তিন ফিচার
ঢাকা বুধবার, ১৬ পৌষ ১৪৩২, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫
https://www.msprotidin.com website logo

হোয়াটসঅ্যাপে যুক্ত হলো নতুন তিন ফিচার


এম.এস প্রতিদিন ডেস্ক
বুধবার, ১৮ আগষ্ট, ২০২১, ০৪:৩৫
হোয়াটসঅ্যাপে যুক্ত হলো নতুন তিন ফিচার

ফাইল ছবি

বর্তমান সময়ে যোগাযোগের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপ। সম্প্রতি হোয়াটসঅ্যাপে তিনটি চমৎকার ফিচার যুক্ত করা হয়েছে। সেগুলো হলো ভিউ ওয়ান্স, জয়েনেবল কলস ও অ্যান্ড্রয়েড থেকে আইওএস এবং তার উল্টো পথে চ্যাট ট্রান্সফার। এই তিন ফিচার আপনার হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারের অভিজ্ঞতা আরও অসাধারণ করবে।
প্রযুক্তি বিশ্ব টিকে থাকতে প্রায় প্রতি মাসেই নতুন নতুন ফিচার যোগ করা হয়। বিগত কয়েক বছর ধরেই হোয়াটসঅ্যাপের আইওএস ও অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপে একের পর এক নতুন ফিচার যোগ হয়েছে। গ্রাহকরাও এমন সুবিধার জন্য মুখিয়ে ছিলেন এত দিন জেনে নেওয়া যাক কি কি ফিচার এবং তাদের কাজ কি। 
 
ভিউ ওয়ান্স:
স্ন্যাপচ্যাটের জনপ্রিয় একটি ফিচার সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে হোয়াটসঅ্যাপে। নতুন এই ফিচারের সাহায্যে গ্রাহক কোনও ছবি বা ভিডিও পাঠালে তা একবারই দেখা যাবে। আর একবার দেখার পরে তা অদৃশ্যও হয়ে যাবে। যদিও, অপর প্রান্তের মানুষটি স্ক্রিনশটের মাধ্যমে ছবি অথবা ভিডিও সেভ করে রাখতে পারবেন।
স্ন্যাপচ্যাটে স্ক্রিনশট ফিচার ব্লক থাকলেও হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের স্ক্রিনশট নিতে কোনও সমস্যা নেই। তাই, হোয়াটসঅ্যাপের এই নতুন ফিচারের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সুরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।

জয়েনেবল কল:
জুলাই মাসে হোয়াটসঅ্যাপে যুক্ত হয়েছে এই ফিচার। এই ফিচারের সাহায্যে কোনও কল থেকে বেরিয়ে গিয়ে ফের সেই কলে ফিরে আসা যাবে। যতক্ষণ সেই কল চলবে ততক্ষণ যুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকবে। এছাড়াও, কোনও কল মিস করলে এই ফিচারের মাধ্যমে পরে সেই কলে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে।
জুম ও গুগল মিটকে টেক্কা দিতেই এই চমৎকার ফিচার নিয়ে হাজির হয়েছে জনপ্রিয় ম্যাসেজিং কোম্পানিটি। এই ফিচার আসার আগে কোনও ব্যক্তি কল থেকে বেরিয়ে গেলে, সেই ব্যক্তিকে ফের কলে ঢোকানোর জন্য কল হ্যাং আপ করে নতুন করে কল করতে হতো।

অ্যান্ড্রয়েড থেকে আইওএস চ্যাট ব্যাকআপ ট্রান্সফার:
আগে অ্যান্ড্রয়েড থেকে আইওএস অথবা আইওএস থেকে অ্যান্ড্রয়েড প্ল্যাটফর্মে সুইচ করলে হোয়াটসঅ্যাপের সব তথ্য হারিয়ে যেত। যদিও, সময় বদলাচ্ছে। ব্যাক আপে স্মার্ট সুইচের মাধ্যমে চ্যাট হিস্ট্রি ও ব্যাক আপ নতুন ফোনে নেওয়া যাবে।

এই সব ফিচার ইতোমধ্যেই আইওএস ও অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে পৌঁছে গেছে। তাই, আপনারা চাইলে এখনই ব্যবহার করতে পারবেন এসব সুবিধা। এছাড়াও, ওয়েব প্ল্যাটফর্মের জন্য শীঘ্রই হোয়াটসঅ্যাপে যুক্ত হচ্ছে মাল্টি ডিভাইস সাপোর্ট।

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / khurshedalm@msprotidin.com

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের স্বায়ত্বশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা প্রয়োজন


সাইফুল আলম, বিশেষ প্রতিনিধি, মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫, ০৩:৪২
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের স্বায়ত্বশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা প্রয়োজন

ছবি: মুক্তসংবাদ প্রতিদিন

 

সাইফুল আলম, ঢাকা:  মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপ ও কর্তৃত্ববাদী আচরণের প্রতিবাদ এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের স্বায়ত্বশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সর্বস্তরের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

আজ ২২ এপ্রিল ২০২৫, রোজ মঙ্গলবার, দুপুর ১২:০০ টার দিকে ড. আনোয়ার হোসেন অডিটরিয়াম, পরমাণু ভবন, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, ই-১২/এ, আগারগাঁও, ঢাকায় এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সর্বস্তরের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পক্ষে প্রধান বক্তা বলেন, কমিশনের স্বায়ত্বশাসন বিনষ্ট করে মন্ত্রণালয়ের চলমান অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং কর্তৃত্ববাদী আচরণের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ জানাতেই আজকের এই আয়োজন।

কমিশনের বিজ্ঞানীরা গত ৫০ বছর ধরে দেশের পরমাণু বিজ্ঞান চর্চায় নিষ্ঠাভরে কাজ করে আসছে। তাঁদেরকে যথাযথভাবে সহায়তা করছে কমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। এই প্রতিষ্ঠানের স্বায়ত্বশাসন, ন্যায্য অধিকার ও সম্মান রক্ষা না হলে, দেশের পরমাণু বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশ গঠনে সংবাদ মাধ্যম তথা সাংবাদিকদের ভূমিকা অপরিসীম। দেশের পরমাণু বিজ্ঞান ও গবেষণার উন্নয়নে কমিশনের স্বায়ত্বশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা, অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ এবং একটি পেশাদার ও সম্মানজনক কর্মপরিবেশ সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে আপনাদের মাধ্যমে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমরা বিশ্বাস করি, সংবাদ মাধ্যমে আপনাদের সহযোগিতার মাধ্যমে এই সংকট উত্তরণের পথ সুগম হবে।

বিভিন্ন কার্যক্রম এবং প্রেক্ষাপটের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করে তারা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সবার সম্মুখে উপস্থাপন করেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো -

বিশেষ সুবিধাদি চালু না থাকা: বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানী হিসেবে যোগদান করে। যোগদানের পর তাঁরা বিদেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি/প্রশিক্ষন সম্পন্ন করে দেশে ফিরে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে নিজেদেরকে পরমাণু বিজ্ঞান চর্চায় নিয়োজিত রাখে। কমিশনে বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা- কর্মচারীদের জন্য বিশেষ কোন সুবিধাদি চালু না থাকায় এবং মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্ববাদী আচরণের কারণে মেধাবীদের এই পেশায় আকৃষ্ট করা এবং ধরে রাখা দুরূহ হয়ে পড়ছে। ইদানিং তরুণ বিজ্ঞানীদের অনেকেই কমিশনের চাকুরী ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে, যা দেশে পরমাণু বিজ্ঞান চর্চার অগ্রগতিকে ভীষনভাবে বাধাগ্রস্থ করছে। মেধাবীদের এই পেশায় আকৃষ্ট করতে উচ্চ শিক্ষা/প্রশিক্ষনের বাধা অপসারণ, বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বিশেষ ভাতা প্রদান, সরকারী চাকুরীজীবিদের ন্যায় কমিশনের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য গৃহ নির্মাণ/ফ্লাট ক্রয় ঋণ, সুদমুক্ত ঋণ এবং গাড়ী সেবা নগদায়ন, মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্ববাদী আচরণ কমিয়ে বিজ্ঞানীদের স্বাধীনভাবে গবেষণার সুযোগ দেওয়া, আধুনিক গবেষণাগার নির্মাণ, পর্যাপ্ত তহবিল সরবরাহ, এবং সহযোগিতামূলক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা বিশেষভাবে প্রয়োজন।

কমিশনের প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব:
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (IAEA) এর রীতিনীতি অনুসরণক্রমে বাংলাদেশে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার, উন্নয়ন, প্রসার, তদ্‌সংশ্লিষ্ট গবেষণা কর্ম, সেবা, শিক্ষা বিষয়ক কার্যক্রম পরিচালনা, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সংক্রান্ত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং এতদ্‌সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি সম্পাদনের জন্য বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন (বাপশক) ১৯৭৩ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডার নং: ১৫ তথা ২০১৭ সালের ২৩ নং আইন বলে প্রতিষ্ঠিত একটি বিশেষায়িত কমিশন।

কমিশনের আওতাধীন ৪০টি ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে দেশে পরমাণু বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট বিশেষায়িত গবেষণা, শিক্ষা, চিকিৎসা ও সেবামূলক কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। কমিশনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতি বছর প্রায় ৮ লক্ষাধিক ব্যক্তি ও শতাধিক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরণের সেবা গ্রহণ করে থাকে। এ ধরণের সেবা প্রদানের মাধ্যমে কমিশন উল্লেখযোগ্য পরিমান রাজস্ব আয় করে থাকে। কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত উল্লেখযোগ্য সেবাসমূহের মধ্যে রয়েছে স্বল্প মুল্যে ক্যানসার নির্ণয় ও পরমাণু চিকিৎসা সেবা, দেশে বিভিন্ন হাসপাতালে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার রেডিও আইসোটোপ সরবরাহ, টিস্যু ব্যংকিং সেবা, আমদানিকৃত সকল খাদ্য দ্রব্যে তেজস্ক্রিয়তার উপিস্থিতি নির্ণয়, জীবন রক্ষাকারী ঔষুধের কাচামাল জীবানুমুক্তকরণ, তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, প্রক্রিয়াজাত রপ্তানি পণ্যের বিকিরণ সেবা, বিভিন্ন ধরণের নমুনা বিশ্লেষণ, বিবিরণ যন্ত্রের মান নির্ণয়, তেজস্কক্রিয় খনিজ অনুসন্ধান, ৩ মেগাওয়াট রিসার্চ রিয়্যাক্টর এবং ৩ মেগাডোন্ট ট্যান্ডেম এক্সিলারেটর পরিচালনা ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও কমিশনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক ছাত্র/ছাত্রী বিনা খরচে মাস্টার্স ও পিএইচডি'র থিসিস সম্পন্ন করে থাকে। বিগত ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন পরমাণু বিজ্ঞান এবং এতদৃসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে ধারাবাহিকভাবে গবেষণা কর্মকান্ড পরিচালনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের সক্ষমতা ও দক্ষতা অর্জন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র কমিশনের বিজ্ঞানীদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পাবনা জেলার রূপপুরে নির্মিত হচ্ছে।

বর্তমান সংকট ও বৈষম্য:
স্বায়ত্তশাসনের সংকট: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন চেয়ারম্যান ও ৪ জন সদস্যের সমন্বয়ে কমিশন গঠিত হওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষ পদগুলো শূন্য থাকায় কমিশনের সার্বিক কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে। বর্তমানে চেয়ারম্যান পদে একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং মাত্র একজন সদস্য চলতি দায়িত্বে নিয়োজিত। পূর্ণ কমিশন না থাকায় এবং মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং কর্তৃত্ববাদী আচরণের কারণে কমিশনের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীবৃন্দ বাপশক আইন ২০১৭ এবং বাপশক চাকুরীবিধিমালা ১৯৮৫ তে প্রদত্ত সুবিধাদি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

বিজ্ঞানীদের উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণে বাধা:
বর্তমানে কমিশনে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার (ভৌত বিজ্ঞান, জীব বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান, প্রকৌশল এবং ভূতত্ত্ব বিজ্ঞান) প্রায় ৬০০ বিজ্ঞানীসহ ২৫০০ কর্মকর্তা, কর্মচারী কর্মরত রয়েছে। বিজ্ঞানীদের অধিকাংশই বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি (পিএইচডি) প্রাপ্ত। কমিশনে বিজ্ঞানী পদে চাকুরির আবেদনের নূন্যতম যোগ্যতা দেশের অন্য যে কোন প্রতিষ্ঠানের থেকে আলাদা। কমিশনে বিজ্ঞানী পদে আবেদন করতে কমপক্ষে ৩টি প্রথম বিভাগসহ স্নাতক/স্নাতকোত্তর ডিগ্রির প্রয়োজন হয়। দেশে অন্য কোন চাকরির ক্ষেত্রে নূন্যতম তিনটি প্রথম শ্রেনীর ডিগ্রি চাওয়া হয় না। প্রথম শ্রেণীর উচ্চতর ডিগ্রি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কমিশনে বিজ্ঞানী পদে নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে। বিশেষায়িত এ প্রতিষ্ঠানের চাকুরীবিধিমালাও ভিন্নতর। চাকুরীবিধিমালায় এ প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীদেরকে বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণকে উৎসাহিত করা হয়েছে। উচ্চ শিক্ষা ও বিশেষায়িত গবেষণার সুযোগ থাকায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা মেধাবী শিক্ষার্থীদের অন্যতম আকর্ষণ কমিশনে চাকুরী। কমিশন সৃষ্টির পর থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত কমিশনের বিজ্ঞানীদের উচ্চ শিক্ষা/প্রশিক্ষণের পূর্বানুমতি, মনোনয়ন এবং বিদেশ গমনের সরকারী আদেশ (জিও) কমিশন থেকেই প্রদান করা হতো। ২০১১ সালে তৎকালীন সরকার কমিশনের জিও প্রদানের ক্ষমতা রহিত করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপর ন্যস্ত করে। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয় বিজ্ঞানীদের উচ্চ শিক্ষার পূর্বানুমতি ও মনোনয়ন প্রদানের বিষয়টি নিজেদের আওতায় নিয়ে নেয়। তখন থেকে কমিশনের বিজ্ঞানীগণ উচ্চ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে বঞ্চিত হয়ে আসছে। দীর্ঘ ১৬ বছর পর ফ্যাসিস্ট সরকার বিতাড়িত হলেও এখনও মন্ত্রণালয়ে ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিস্টের দোসর আমলারা অন্যায়ভাবে পূর্ণ স্কলারশিপ থাকা সত্ত্বেও বিজ্ঞানীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা/প্রশিক্ষনের জিও প্রদান না করে এবং অপ্রয়োজনীয় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা তৈরী করে কমিশনের নবীন বিজ্ঞানীবৃন্দকে বঞ্চিত করছে। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু বিজ্ঞানীর বিদেশে উচ্চ শিক্ষার পূর্বানুমতি প্রদান না করে দেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পরামর্শ প্রদান করছে। কোন কোন ক্ষেত্রে যোগ্য বিজ্ঞানীদের বাদ দিয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নিজেরাই শুধুমাত্র বিদেশ ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বিদেশের বিভিন্ন বিশেয়ায়িত প্রশিক্ষনে অংশগ্রহণ করছেন। গত কয়েকমাসে মন্ত্রণালয়ের প্রায় ১২ জন কর্মকর্তা পরমাণু প্রযুক্তি বিষয়ক বৈদেশিক প্রশিক্ষণে মনোনয়ন নিয়েছেন, যা হতাশাজনক এবং অগ্রহণযোগ্য। এ ধরণের ঘটনা দিনদিন বৃদ্ধি পাওয়ায় কমিশনের নবীন বিজ্ঞানীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। বিজ্ঞানীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষন গ্রহণ উৎসাহিত না করে বাধাগ্রস্থ করার বিষয়টি দেশকে পরমাণু গবেষণায় পিছিয়ে রাখার কোন এক গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে হয়।

বেতন বৈষম্য ও পদ অবনমন:
বাপশক চাকুরীবিধিশালা ১৯৮৫ এর ১৮(২) অনুযায়ী কমিশনের বিজ্ঞানীদের পদসমূহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনুরূপ এবং একইরকম বেতনভাতা ও সুযোগ সুবিধা প্রাপ্য, যেমন কমিশনের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ঊধ্বর্তন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদসমূহ যথাক্রমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার, এ্যসিটেন্ট প্রফেসর, এ্যসোসিয়েট প্রফেসর এবং প্রফেসর সমতুল্য। কমিশনের বিজ্ঞানীবৃন্দ ২০১৫ সাল পর্যন্ত সে ভাবেই শিক্ষকদের অনুরূপ বেতন ভাতা পেয়ে আসছিলেন। গত সরকারের আমলে সিলেকশন গ্রেড প্রথা বাতিল হওয়ার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিশেষ প্রজ্ঞাপন জারীর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের গ্রেড-২, গ্রেড-১ প্রাপ্তি নিশ্চিত করে। চাকুরীবিধিমালায় বর্ণিত থাকা সত্ত্বেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে বর্তমানে কমিশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাবৃন্দ গ্রেড-২, গ্রেড-১ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তি বাধাগ্রস্থ করা ছাড়াও কমিশনের অনুকুলে সম্প্রতি যে সকল নতুন পদ সৃজন করা হয়েছে সে সকল পদসমূহ গ্রেড অবনমন করে সৃজন করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ কমিশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদটি গ্রেড-৩ পর্যায়ের হওয়া সত্ত্বেও সম্প্রতি সে পদ অবনমন করে গ্রেড-৪ এ অনুমোদন করা হয়েছে। অন্যান্য অনেক পদের ক্ষেত্রেও একই ভাবে গ্রেড অবনমন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের ৫৮টি, কর্মকর্তাদের ৬টি এবং কর্মচারীদের ৪৪টি পদ এক বা একাদিক গ্রেড অবনমন করে সৃজন করা হয়েছে। একই পদে ভিন্ন ভিন্ন গ্রেডে সৃজন করে প্রশাসনিক এবং আর্থিক জটিলতা সৃষ্টি করা হয়েছে।

নবীন বিজ্ঞানীদের অনুৎসাহিত করা:
উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা, পদোন্নতিতে বাধা সৃষ্টি এবং আর্থিক সুবিধা সংকোচনের মাধ্যমে তরুণ বিজ্ঞানীদের কমিশন থেকে বিমুখ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেকে পেশা পরিবর্তন করেছেন। দেশের পরমাণু বিজ্ঞানের ভবিষ্যৎ এর ফলে হুমকির মুখে পড়ছে।

রুপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পে কমিশনের অধিকার খর্বের চেষ্টা :
রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার JSC Atomstroyexport সাথে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চুক্তি হয় ২০১৫ সালে। চুক্তি অনুযায়ী Atomstroyexport রূপপুরে ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন দুই ইউনিট পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আইন ২০১৫ এর ধারা-৪(২) অনুযায়ী রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানী বাংলাদেশ লিমিটেড (NPCBL) নামক কোম্পানী রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ অন্যান্য পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিচালন সংস্থা (Operating Organization) হিসাবে, এবং ধারা-৪(৩) অনুযায়ী বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন মালিক সংস্থা (Owner Organization) হিসাবে কাজ করবে। মালিক সংস্থা হিসেবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন সংক্রান্ত সকল চুক্তি (Construction, জ্বালানি সংগ্রহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা) এবং লাইসেন্সসমূহ কমিশনের হওয়া সত্ত্বেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কমিশনকে বাদ দিয়ে বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তি পিডিবি ও এনপিসিবিএল এর মধ্যে সম্পাদনের জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। মালিক সংস্থা হওয়া সত্বেও কমিশনকে বাদ দিয়ে নবগঠিত একটি কোম্পানির সাথে এ ধরণের চুক্তি করার প্রচেষ্টা কমিশনের অধিকার খর্ব করা এবং কমিশনকে দূর্বল করার অপচেষ্টারই অংশ।

উপযোগীতা যাচাই না করেই iBAS++ সিস্টেম চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা: বিগত সরকার iBAS++ System-এ Personal Ledger (PL) Account –এর মাধ্যমে সরকারি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার রীতিনীতি মেনে পরমাণু প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিশেষায়িত গবেষণা ও সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে বিধায় iBAS++ সিস্টেমে উক্ত বিশেষায়িত কার্যক্রম নির্বিঘ্নে পরিচালনা করা সম্ভব কিনা সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তা ছাড়াও, পারমাণবিক বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট গবেষণা এবং এ সংক্রান্ত প্রকল্প ও তার পরিচালন ব্যয়সহ সকল তথ্য সংবেদনশীল হওয়ায় iBAS++ সিস্টেমের মতো একটি সার্বজনীন সিস্টেমে উক্ত তথ্য আপলোড করা সমীচীন নয় বলে কমিশনের বিজ্ঞানীরা মনে করে। বিশ্বের অন্য কোন দেশের পারমাণবিক বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট গবেষণা ব্যয় এবং বিজ্ঞানীদের ব্যক্তিগত তথ্য কখনই প্রকাশিত হয় না। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের বাৎসরিক বাজেট আনুমানিক ৳৩৬৫ কোটি টাকা, তন্মধ্যে সরকারি অনুদান প্রায় ৮২৮০ কোটি টাকা এবং বাকি অর্থ কমিশনের নিজস্ব আয় থেকে যোগান দেয়া হয়ে থাকে। অর্থ বছর শেষে নিরীক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক প্রতি বছর কমিশনের আর্থিক কার্যক্রম যথাযথভাবে নিরীক্ষা হয়ে থাকে। এমতাবস্থায়, শুধুমাত্র স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার অজুহাতে উপযোগীতা যাচাই ছাড়া কমিশনকে iBAS++ সিস্টেমে অন্তর্ভূক্ত করতে বাধ্য করার প্রচেষ্টা কমিশনের মতো একটি বিশেষায়িত সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠানের বিশেষত্ব নষ্ট করার অপচেষ্টা বলে মনে হয়। উল্লেখ্য, কমিশনের সমধর্মী প্রতিষ্ঠানসমূহ, যেমন UGC এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলি iBAS++ সিস্টেমে এখনও অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

কমিশন iBAS++ সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় কমিশনের অনুকূলে অর্থ ছাড় বন্ধ করা হয়েছে, ফলে কমিশনের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, পেনশন প্রাপ্তিসহ গবেষণা ও সেবা কার্যক্রম পরিচালনায় অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কমিশনে কর্মরত প্রায় ৬০০ বিজ্ঞানীসহ ২৫০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মার্চ’২৫-এর বেতন-ভাতাদি এখনও প্রাপ্ত হননি, এমনকি অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা-কর্মচারীগণও তাঁদের পেনশনভাতা, আনুতোষিকসহ অন্যান্য ভাতাদি পাচ্ছেন না, যদিও সরকারি সিদ্ধান্ত ছিলো মার্চ’২৫ -এর বেতন-ভাতাদি ২৩ মার্চ ২০২৫ এর মধ্যে পরিশোধ করার। কমিশনের ৫২ বছরের ইতিহাসে এই ধরনের অমানবিক, মর্যাদাহানিকর এবং অগ্রহণযোগ্য ঘটনা এই প্রথম। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কমিশনের অনুকূলে সরকারি অনুদানের ৩য় ও ৪র্থ কিস্তির অর্থ ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ছাড়ের জন্য কমিশন কর্তৃক প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ে বারবার পত্র প্রেরণ করা সত্ত্বেও প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে অর্থ ছাড়ের জন্য কোন পত্র প্রেরণ না করায় এই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এহেন অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কমিশনের সকল স্তরের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে ভীষণ ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

প্রয়োজনীয় পদ সৃজন এবং পদোন্নতি না হওয়া:
গত ৫০ বছরে কমিশনের গবেষণা, সেবা ও শিক্ষা সহায়তা কার্যক্রম যেভাবে বিস্তার লাভ করেছে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদ সৃজন এবং নিয়োগ হয়নি। প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে কমিশনের সক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার সম্ভব হচ্ছেনা। তাছাড়া কর্মরত বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পদ স্বল্পতার কারণে যথাসময়ে পদোন্নতি প্রদান না করায় সার্বিক কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে আসছে।  তাই, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের স্বায়ত্বশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা একান্ত প্রয়োজন বলেই সকলে মনে করেন।

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

আরও পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতি আজ গভীর উদ্বিগ্ন!


কর্নেল(অব.) আকরাম, কলাম লেখক, মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
শুক্রবার, ২৮ ফেরুয়ারী, ২০২৫, ০৩:৫৮
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতি আজ গভীর উদ্বিগ্ন!

ছবি সংগৃহীত

 

নিউজ ডেস্ক: আমরা সবাই দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বিগ্ন। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারুজ্জামান নিজেও সামগ্রিক অবস্থা, বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালে তিনি RAOWA-তে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিতে গিয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করার চেষ্টা করেছেন। তার বক্তব্য জনমনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং জনগণের জন্য এটি চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুশীল সমাজ এটিকে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে দেখছে।  

সেনাপ্রধান ও প্রধান উপদেষ্টার মধ্যে কোনো ধরনের মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে কিনা, তা আমাদের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয়। জনগণ চায়, তারা ভবিষ্যতেও দৃঢ়ভাবে একসঙ্গে কাজ করুক।  

BDR হত্যাকাণ্ড নিয়ে তার মন্তব্যকে অনেকে সম্প্রতি গঠিত তদন্ত কমিশনের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। এটি একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও জাতীয় ইস্যু, যা গভীর মনোযোগ দাবি করে। কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি আগাম মন্তব্য করলে সত্য উদঘাটনের কাজ ব্যাহত হতে পারে, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  

এটাই প্রথম নয় যে তিনি জাতিকে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। কয়েক মাস আগে, সেনা সদর দপ্তরের প্রাঙ্গণে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার সময়ও তিনি কঠিন সময়ের ইঙ্গিত দিয়েছিলে। 

নিঃসন্দেহে, আগস্ট ২০২৪ সালে ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর থেকে আমরা একের পর এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি। বাংলাদেশের জনগণ অতীতে কখনো এত সংকটময় সময় দেখেনি। আমরা ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি—এখানে হয় আমরা জিতব, নয়তো হারব। গোটা জাতি জাতীয় ঐক্যের কঠিন পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, এবং আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যদি জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তাহলে দেশীয় বা আন্তর্জাতিক কোনো হুমকিই আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না।  

আমরা ১৯৭৫ সালের নভেম্বরেও আমাদের জাতীয় জীবনের অনুরূপ এক সংকটময় মুহূর্ত দেখেছি। তবে তখন আমাদের সৌভাগ্য ছিল যে, আমাদের দূরদর্শী নেতা জিয়াউর রহমান সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সফলভাবে উত্তরণ ঘটিয়েছিলেন। তিনি অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয় সংকটকে প্রজ্ঞা ও কৌশলে মোকাবিলা করে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন।  

বাংলাদেশের জনগণ তার নেতৃত্বে এক অভাবনীয় আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছিল। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ সঠিক পথে এগিয়ে যেতে পেরেছিল এবং তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করে জাতিকে রক্ষা করেছিলে। তিনি কেবল নিজেই ইতিহাস গড়েননি, বরং সমগ্র জাতির জন্য এক গৌরবময় অধ্যায় সৃষ্টি করেছেন।  

ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আন্তরিকভাবে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার চেষ্টা করছে, তবে দৃঢ়তা প্রদর্শনে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। তবুও জাতি তার নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল। সরকারকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে, তারা একা নয়—পুরো জাতি তাদের পাশে আছে। তাদের উচিত ‘জুলাই বিপ্লব’-এর চেতনা ধারণ করে কাজ করা এবং মনে রাখা যে, বাংলাদেশের জনগণ তাদের সঙ্গে রয়েছে।  

সরকারের উচিত জিয়াউর রহমানের নীতিকে অনুসরণ করা। তিনি দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে মেধাবী ও অভিজ্ঞ মানুষদের খুঁজে বের করে জাতীয় উন্নয়নে কাজে লাগিয়েছিলেন। তিনি প্রাক্তন CSP ও সেনাবাহিনীর জেনারেলদের দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগিয়ে আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার মহান লক্ষ্যে এগিয়ে গিয়েছিলেন। অপরদিকে, শেখ মুজিব এই দক্ষ জনবলকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন, বরং পুরো আমলাতন্ত্র ও সামরিক বাহিনীকে ক্ষুব্ধ করেছিলেন, যার পরিণতি তাকে ভুগতে হয়েছিল।  

সরকারের সাত মাস অতিক্রান্ত হয়েছে, তবুও তারা এখনো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। সাম্প্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে, বিশেষ করে ঢাকায়। এটি কোনোভাবেই ভালো লক্ষণ নয় এবং মানুষ এ নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন। মূল্যস্ফীতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি, ফলে মধ্যবিত্ত শ্রেণি ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়ছে। এই সমস্ত বিষয় সরকার ও জনগণের জন্য বড় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, এবং সমাজে যেকোনো মুহূর্তে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।  

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারুজ্জামান যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। জাতিকে অবশ্যই এটি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। বিপ্লবের অংশীদারদের অবশ্যই যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে এবং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত সর্বোচ্চ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা।  

যদিও কিছু মানুষ সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছেন, আমরা বিশ্বাস করতে চাই যে তিনি ড. ইউনুসের সরকারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবেন। আমাদেরও উচিত আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সরকারকে সমর্থন দেওয়া, যাতে তারা তাদের লক্ষ্যে সফল হতে পারে।  

জাতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দেশ। প্রতিটি নাগরিকের উচিত দেশকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া। জুলাই বিপ্লব ২০২৪-এর মাধ্যমে তৈরি হওয়া বর্তমান সুযোগকে ধ্বংস করার জন্য যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জাতির ঐক্যই একমাত্র পথ।

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম
Share on Facebook

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন এর সর্বশেষ

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন এর জনপ্রিয়

সর্বশেষ - তথ্য ও প্রযুক্তি

সর্বোচ্চ পঠিত - তথ্য ও প্রযুক্তি

তথ্য ও প্রযুক্তি এর সব খবর