a
ফাইল ছবি
বর্তমান সংকটে সরকারের উদ্যোগগুলো সঠিক, কিন্তু পর্যাপ্ত নয় বলে উল্লেখ করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সমস্যা মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি হলেও সংকট সমাধানে সরকার স্বল্পমেয়াদি উদ্যোগ নিচ্ছে। বর্তমানে জ্বালানি সংকট, বিদ্যুত্ সংকট, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট পরবর্তীকালে আরো অন্যান্য খাতেও দেখা দিতে পারে। এর প্রভাবে দেশে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। ফলে রাজনৈতিক সংকটে রূপ নিতে পারে বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
‘বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আভাস এবং বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ উত্তরণ কোন পথে?’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ কথা বলা হয়। ধানমন্ডিতে সিপিডির কার্যালয়ে আয়োজিত এই ব্রিফিংয়ে মূল উপস্থাপনা তুলে ধরেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, জ্যেষ্ঠ গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে দুর্ভিক্ষের কথা বলছেন, সেটি যৌক্তিক কথা। কারণ বিশ্ববাজারে খাদ্য একটি রাজনৈতিক পণ্য হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে খাদ্যপণ্য কেনায় সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। কারণ, নিজের মজুত নিশ্চিত না করে কোনো দেশ পণ্য রপ্তানি করতে চাইবে না। তাই ভবিষ্যতে ডলার থাকলেও বিশ্ববাজারে পর্যাপ্ত খাদ্যপণ্য না-ও থাকতে পারে।
বাংলাদেশের মতো যারা খাদ্য আমদানি নির্ভর দেশ, মূলত তারাই খাদ্যের ঝুঁকিতে রয়েছে। খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে—সরকারের এই মোহ ভঙ্গ হওয়া প্রয়োজন।
খাদ্যসংকট, জ্বালানিসংকট, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট আগামী দিনে প্রলম্বিত হবে কর্মসংস্থানে। এর ফলে দারিদ্র্য বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে, বেকারত্বের আশঙ্কাও রয়েছে। যদি সেটি হয়. তাহলে রাজনৈতিক সংকটে পরিণত হবে। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে সরকারের উদ্যোগগুলো ঢেলে সাজাতে হবে।
মূল উপস্থাপনায় ফাহমিদা খাতুন বলেন, ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকায় চার সদস্যের একটি পরিবারের অত্যাবশ্যকীয় সব খাদ্যপণ্যসহ সার্বিক খরচ ছিল ১৭ হাজার ৫৩০ টাকা। জরিপে দেখা গেছে, বর্তমানে রাজধানীতে বসবাসরত চার সদস্যের একটি পরিবারের মাসে খাদ্য খাতে ব্যয় করতে হচ্ছে গড়ে ২২ হাজার ৪২১ টাকা। মাছ-মাংস বাদ দিলেও খাদ্যের পেছনে ব্যয় হবে ৯ হাজার ৫৯ টাকা। এটা ‘কম্প্রোমাইজড ডায়েট’ বা আপসের খাদ্য তালিকা। মূল্যস্ফীতির লাগামহীন অবস্থা। দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। শুধু আমদানি পণ্য নয়, দেশে উত্পাদিত পণ্যের মূল্যও বেশি। এটা কমার কোনো লক্ষণ নেই। খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কাছাকাছি অবস্থান করছে। তবে বাজারের চিত্রে দেখা যায় পণ্যমূল্য প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি। এজন্য প্রকৃত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মূল্যস্ফীতি নির্ধারণ করা উচিত।
তিনি বলেন, ২৯টি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে কর হার অনেক বেশি। এজন্য এটার প্রভাব পড়ছে মূল্যস্ফীতির ওপর। এটা কমানো গেলে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমত। মূল্যস্ফীতির সমাধানে সব শিল্পে ন্যূনতম বেতন বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে এখনই। এছাড়া ব্যক্তি খাতেও যারা কাজ করছেন, তাদের জীবনমানে এত ধস নেমেছে যে, এ আয় দিয়ে তারা চলতে পারছেন না। তাদের বেতনও পুনর্বিবেচনা করতে হবে। সরকার ওএমএসসহ যেসব পণ্য দিয়েছে, তা সারা দেশে সহজলভ্য করতে হবে। এখানে দুর্নীতি যেন না হয়, সেটাও দেখতে হবে। তিনি আরো বলেন, একেবারেই দরিদ্রদের আর্থিক সহায়তার পরিমাণ কমপক্ষে ১ হাজার টাকা করতে হবে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।
জ্বালানি সংকট সমাধানে সিপিডি বিভিন্ন কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলনে মনোযোগী হওয়া, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে সুপারিশ করেছে। ফাহমিদা খাতুন বলেন, সাধারণত ৬০ দিনের জ্বালানি মজুতকে আদর্শ ধরা হয়। কিন্তু আমাদের ডিজেল ৬১ দিন, অকটেন ১৯ দশমিক ৬ দিন, পেট্রোল ৩৮ দশমিক ৪ দিন, ফার্নেস ওয়েল ২৭ দশমিক ৯ দিনের মজুত আছে। বিপিসির হাতে ২৩ হাজার কোটি টাকা আছে। টাকা একদম নেই বিষয়টা তেমন নয়। এ জন্য জ্বালানি তেলের দর পুনর্বিবেচনার দাবি জানান তারা। জ্বালানি তেলের ঘাটতি মেটাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘খাদ্যসংকটের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা বলছে, ভবিষ্যতে বিশ্বের ৪২টি দেশে খাদ্যসংকট হতে পারে। এই তালিকায় বাংলাদেশও আছে। এই আশঙ্কা শুধু আমাদের নয়, আন্তর্জাতিক সংস্থারও। এজন্য মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে আমাদের অর্থনীতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এক বছরের মধ্যে পরিত্রাণ পাব এটা আশা করা যায় না।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিদ্যুতে ভর্তুকি বেশি। এর বড় কারণ হলো বিদ্যুতের ক্যাপাসিটি চার্জ। সরকারকে এই ক্যাপাসিটি চার্জভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র থেকে সরে আসতে হবে। আইএমএফের যে শর্ত, তাতে বিদ্যুতের ভর্তুকি কমানোর কথা বলা হয়েছে। ক্যাপাসিটি চার্জভিত্তিক বিদ্যুত্ থেকে নো ইলেক্ট্রিসিটি নো চার্জ—এই ব্যবস্থায় আসতে হবে। সূত্র: ইত্তেফাক
ফাইল ছবি
অনেকটা দুর্বল হয়ে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে আঘাত করেছে ঘূর্ণিঝড় অশনি। বুধবার মধ্যরাতে রাজ্যটির উপকূলীয় অঞ্চলে আছড়ে পড়ে ঝড়টি। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে বৃহস্পতিবার ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে দেশটির আবহাওয়া দফতর।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, বুধবার মধ্যরাতে অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলীয় অঞ্চল মাছিলিপটনম ও নার্সাপুরাম এলাকায় আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’। আগেই দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপে রূপ নেওয়ায় খুব একটি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে।
অন্ধ্রপ্রদেশের জাতীয় দুর্যোগ সংস্থার মতে, ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বাতাসের গতিবেগে উপকূলে আছড়ে পড়ে অশনি। এরপর শুরু হয় ভারি বৃষ্টিপাত। উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে বৃহস্পতিবারও মানুষজনকে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলেদের সাগরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
ভারতের আবহাওয়া দফতর জানায়, অশনির প্রভাবে ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে প্রবল বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। এরইমধ্যে পশ্চিমবঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে। বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা না থাকলেও অনেক জায়গায় জারি করা হয়েছে সতর্কতা।
এদিকে অশনির কারণে পশ্চিবঙ্গ থেকে অন্ধ্রপ্রদেশের বেশ কয়েকটি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। সূত্র: বিডি প্রতিদিন
ফাইল ছবি: মিখাইল গর্বাচেভ
সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বশেষ নেতা মিখাইল গর্বাচেভ আর নেই। মঙ্গলবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।
রুশ সংবাদ সংস্থার বরাতে বিবিসি ও রয়টার্স গর্বাচেভের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছে। রাশিয়ার সেন্ট্রাল ক্লিনিকাল হাসপাতাল এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘গুরুতর ও দীর্ঘকালীন অসুখে ভুগে মিখাইল গর্বাচেভ আজ মারা গেলেন।’
রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানিয়েছে, গর্বাচেভের মৃত্যুতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শোক জানিয়েছেন।
মিখাইল গর্বাচেভ বিশ্বে নন্দিত ও নিন্দিত দুটোই। এক সময়ের কমিউনিস্ট নেতা ছিলেন গর্বাচেভ। রাশিয়ায় দীর্ঘসময় ধরে চলা সমাজতন্ত্রের পতন হয়েছিল তার নেতৃত্বেই। ওই পতনের মধ্য দিয়ে বিশ্বে স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটে।
তাই সমাজতন্ত্রবাদীদের কাছে নিন্দিত গর্বাচেভ স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটানোর জন্য অনেকের কাছে নন্দিত। অনেক রুশ গর্বাচেভকে ঘৃণা করেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, পরাশক্তি থেকে রাশিয়াকে দুর্দশাগ্রস্ত দেশের কাতারে নিয়ে আসার জন্য অনেক রুশ এখনও গর্বাচেভকে ক্ষমা করতে পারেন নাই।
সোভিয়েত পতনের পর নিজেও ক্ষমতা হারান গর্বাচেভ। এর পর পশ্চিমা দেশগুলোতে বক্তৃতা দিয়েই সময় পার করেছেন। ১৯৯৯ সালে স্ত্রী রাইসা গর্বাচেভের মৃত্যুতে অনেকটাই ভেঙে পড়েন তিনি।
১৯৯৬ সালে পরিবর্তিত রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন গর্বাচেভ, তবে ভোট পেয়েছিলেন মাত্র ৫ শতাংশ।
রাশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এক সময় কড়া সমালোচক ছিলেন গর্বাচেভ। তবে ২০১৪ সালে পুতিনের নির্দেশে যখন ক্রিমিয়া দখল করে রাশিয়া, তখন তার পক্ষেই ছিলেন তিনি। গত বছর গর্বাচভের ৯০তম জন্মদিনে তাকে আবার প্রশংসায় ভাসিয়েছিলেন স্বয়ং পুতিন। সূত্র: যুগান্তর