a রোযার মাসে আমাদের করনীয়
ঢাকা সোমবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২, ০১ ডিসেম্বর, ২০২৫
https://www.msprotidin.com website logo

রোযার মাসে আমাদের করনীয়


মুফতী রিদওয়ানুল হক, রংপুর প্রতিনিধি, মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
শনিবার, ০১ এপ্রিল, ২০২৩, ১১:১৪
রোযার মাসে আমাদের করনীয়

সংগৃহীত ছবি

মহান আল্লাহ ত'য়ালা আমাদেরকে প্যাকেজ হিসেবে রমজানের রোজা দিয়েছেন। কারণ আল্লাহ তা'য়ালা বলেছেন আমি রমজানে মানুষের নিকটে চলে আসি এবং বলতে থাকি-
الا من مستغفر فاغفر له ، الا من مسترزق فارزق له وهى كذا كذا.....
অর্থঃ এমন কোন গোনাহগার ব্যক্তি আছো যে আমার কাছে গোনাহ মাফ চাইবে, আর আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো। এমন কোন অভাবগ্রস্থ ব্যক্তি আছো যে আমার কাছে রিযিক চাইবে, আর আমি তাকে রিযিক দেব।

আল্লাহ তা'য়ালা আরো বলেন-
রমজানে তোমরা যা ইবাদত করবে আমি তা সত্তর গুন বৃদ্ধি করে দেব, তাই আমাদের উচিৎ বেশি বেশি আল্লাহর ইবাদত করা।

মুরব্বীগন বলেন, যে ব্যক্তি রমজান পেলো কিন্তু  দুইটি কাজ করল না সে যেন অসম্পর্ণ রয়ে গেল।
১। নিজে কিভাবে আল্লাহ এবং তার রাসূলের নিকটতম হওয়া যায়।
২। আমার প্রতিবেশীকে কিভাবে আল্লাহ এবং তার রাসূলের নিকটবর্তী করা যায়।
যদি আমরা এই দুইটি কাজ ভাল ভাবে করতে পারি তাহলে আমরা এই দুনিয়া এবং আখেরাতে উভয় জাহানে কামিয়াবী অর্জন করতে পারবো ইনশা আল্লাহ।

আল্লাহ তা'য়ালা আমাদেরকে এসমস্ত কথার উপর আমল করে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন ছুম্মা-আমিন।

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

আরও পড়ুন

আজ পবিত্র হজ: রোনাজারিতে মুখর থাকবে আরাফাতের ময়দান


আন্তর্জাতিক ডেস্ক:মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
সোমবার, ১৯ জুলাই, ২০২১, ০৮:২৯
আজ পবিত্র হজ: রোনাজারিতে মুখর থাকবে আরাফাতের ময়দান

সংগৃহীত ছবি

আজ পবিত্র হজ। ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।’ অর্থাৎ ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার’-এ ধ্বনিতে আজ মুখর থাকবে আরাফাতের ময়দান।

প্রায় ৬০ হাজার মুসল্লি স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন করে সেখানে খুতবা শুনবেন, আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করবেন, কেঁদে ভাসাবেন বুক।

ময়দানে সমবেত মুসল্লিদের উদ্দেশে এবার খুতবা দেবেন মসজিদুল হারামের অন্যতম ইমাম ও তাইফ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক শায়খ ড. বানদার বিন আবদুল আজিজ বালিলাহ। মক্কার উম আল-কুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি ও মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্নকারী এ আলেমকে এ বছরের জন্য মনোনয়ন দিয়েছেন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ।

করোনা মহামারির কারণে গেল বছর মাত্র ১০ হাজার মুসল্লিকে হজ পালনের অনুমতি দিয়েছিল সৌদি আরব-আগের বছর যেখানে প্রায় ২৫ লাখ মুসল্লি অংশ নিয়েছিলেন। এবার সৌদি আরবে বসবাসরত ১৫০ দেশের ৬০ হাজার নাগরিক হজের অনুমতি পেয়েছেন। ৫ লাখ ৫৮ হাজার আবেদনকারীর মধ্যে ভাগ্যবান এসব মানুষ হজের সুযোগ পেয়ে খুবই উচ্ছ্বসিত।

১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সি-যাদের কোনো দীর্ঘমেয়াদি অসুখ নেই; অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার, মডার্না বা জনসনের দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন-এমন ব্যক্তিদেরই হজ পালনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে সহায়তায় ২৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছেন।

রিয়াদের উম্মে আজম (৫৩) এবার স্বামীসহ হজের অনুমতি পেয়েছেন। তিনি আরব নিউজকে বলেন, যখন মেসেজটি (অনুমতি পাওয়ার খুদেবার্তা) পেলাম, আমার চেয়ে সুখী আর কেউ ছিল না। যেন বিশেষ অনুগ্রহই আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন।

তিনি বলেন, মহামারিতে এত ভয় কেন, যখন আমরা আল্লাহর মেহমান। আমার মনে হয়, আরও বেশি মানুষকে হজের সুযোগ দেওয়া উচিত। সৌদিতে বসবাসকারী মার্কিন নাগরিক মরিয়ম মুহাম্মদ (২৪) বলেন, আমি অভিভূত। অনেকদিন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি। অবশেষে আল্লাহ তা কবুল করলেন।

হজের অনুমতি পাওয়া মুসল্লিরা রোববার পবিত্র হারাম শরিফে তাওয়াফ আল-কদম (সূচনা তাওয়াফ) করে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে মিনায় যান। তাদের আনা-নেওয়ায় প্রায় তিন হাজার বাস ব্যবহার করা হয়, প্রতিটি বাসে মাত্র ২০ জন যাত্রী ছিলেন। হজের অন্যতম সুন্নত রাতটি মিনায় কাটানো। এ সুন্নত পালন করে আজ ভোরে তারা এসেছেন ১৫ কিলোমিটার দূরে আরাফাতের ময়দানে। এ ময়দানে অবস্থান হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা (ফরজ)।

আজ হাজিরা সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত দুই মাইল দৈর্ঘ্য ও দুই মাইল প্রস্থের এ ময়দানে অবস্থান করে আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকবেন। ময়দানের তিনদিক পাহাড়বেষ্টিত। জাবালে রহমত হলো রহমতের পাহাড়। বলা হয়ে থাকে, এ পাহাড়ে হজরত আদম (আ.) ও হজরত হাওয়া (আ.)-এর দেখা হয়েছিল। হজরত মুহাম্মদ (সা.) এ আরাফাতের ময়দানেই জাবালে রহমত পাহাড়ের কাছে দাঁড়িয়ে বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন।

আজ আরাফাতের ময়দানে খুতবার পর এক আজানে জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করবেন হাজিরা। তারা সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে মুজদালিফায় গিয়ে আবারও এক আজানে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন। রাতে সেখানে অবস্থান করবেন খোলা মাঠে। শয়তানের প্রতিকৃতিতে পাথর নিক্ষেপের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ৭০টি পাথর সংগ্রহ করবেন সেখান থেকে। মুজদালিফায় কাল ফজরের নামাজ আদায় করে মিনায় নিজ তাঁবুতে ফিরবেন।

মিনায় ফিরে কাল বড় শয়তানের উদ্দেশে সাতটি পাথর ছুড়বেন হাজিরা। এরপর তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় পশু কুরবানি দেবেন। মাথার চুল ছেঁটে (ন্যাড়া করে) গোসল করে ইহরাম (সেলাইবিহীন দুই টুকরা কাপড়) বদলে স্বাভাবিক পোশাক পরবেন। এরপর মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে পবিত্র কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করবেন। কাবার সামনে দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় ‘সায়ি’ (সাতবার দৌড়) করবেন। সেখান থেকে তারা আবার মিনায় যাবেন। মিনায় যতদিন থাকবেন, ততদিন তিনটি (বড়, মধ্যম, ছোট) শয়তানকে ২১টি পাথর মারবেন। এরপর মক্কায় বিদায়ি তাওয়াফ করবেন তারা।

আজ কাবা শরিফে গিলাফ পরানো হবে: আজ পবিত্র কাবা শরিফে পরানো হবে নতুন গিলাফ। প্রতিবছর (৯ জিলহজ) হজের দিন হাজিরা সব আরাফাতের ময়দানে থাকেন এবং মসজিদে হারামে মুসল্লির সংখ্যাও থাকে কম। হাজিরা আরাফাত থেকে ফিরে এসে কাবা শরিফের গায়ে নতুন গিলাফ দেখতে পান। নতুন গিলাফ পরানোর সময় পুরোনো গিলাফটি সরিয়ে ফেলা হয়। পুরোনো গিলাফ কেটে মুসলিম দেশের সরকারপ্রধানদের উপহার দেওয়া হয়। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের ভেতরেও কাবা শরিফের গিলাফের অংশ টানানো আছে। সূত্র: যুগান্তর

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

সমকালীন প্রসঙ্গ-দিল্লি: গোলাম মাওলা রনি


মুক্তসংবাদ প্রতিদিন ডেস্ক
শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২৪, ০৮:৪২
 সমকালীন প্রসঙ্গ-দিল্লি গোলাম মাওলা রনি

ছবি: গোলাম মাওলা রনি

খুশবন্ত সিংয়ের বইটি পড়ার পর আমার মধ্যে একধরনের পাগলামো শুরু হয়ে গেল। নতুনভাবে দিল্লিকে জানার জন্য আমি বইপুস্তক ঘাঁটতে শুরু করে দিলাম এবং দিল্লির মাটি ও মানুষ সম্পর্কে বাস্তব ধারণা নেয়ার জন্য নিজেকে ইবনে বতুতা, মার্কো পলো অথবা হেরোডোটাস সাজিয়ে লম্বা সময় নিয়ে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিলাম। মহাভারতে বর্ণিত ইন্দ্রপ্রস্থ কিংবা মৌর্য সম্রাট অশোকের জমানার শ্রীনিভাস পুরীর সাথে মুসলমানদের তৈরি দিল্লির কী সম্পর্ক তা জানার জন্য আমি সেবার যে কষ্ট করেছিলাম তা স্মরণ করলে নিজের হাসি থামাতে পারি না। ব্রিটিশরা কেন দিল্লিকে ১০০ বছর ধরে পাঞ্জাব প্রদেশের অধীন একটি ছোট শহর বানিয়ে রেখেছিল এবং ১৯১১ সালে হঠাৎ করে কেনই বা কলকাতা থেকে তাদের রাজধানী দিল্লিতে নিয়ে গেল তা চিন্তা করতে গিয়ে আমার মাথার চুল পড়তে শুরু করল। আর কেন বাংলাদেশের ভূখণ্ড গত পাঁচ হাজার বছর ধরে দিল্লিকে ঘৃণা করে তা খুঁজতে গিয়ে আমি প্রায় মরিমরি অবস্থায় পড়ে গিয়েছিলাম।

আজকের নিবন্ধে দিল্লি নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গেলে রীতিমতো মহাভারত রচনা করতে হবে। সুতরাং ইতিহাস বর্ণনা না করে বরং ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে আমার মনে কেন দিল্লি নিয়ে নিবন্ধ রচনার সাধ জাগল সে ব্যাপারে কিছু বলি। বাংলাদেশের ডামি নির্বাচনের কলকাঠি যে দিল্লি থেকে নাড়ানো হয়েছে তা এখন এই দেশের পাগলরাও বুঝে গেছে। অন্য দিকে যারা কলকাঠি নেড়েছে তাদের লোকজন মশকারা করে স্বামী বলার চেষ্টা করছে। অথচ শব্দটির রয়েছে বহুমাত্রিক অর্থ। সংস্কৃত শোয়ামি থেকে স্বামী শব্দের উদ্ভব যা প্রাচীন হিন্দুরীতি অনুযায়ী একটি সম্মানজনক উপাধি। কোনো নারী কিংবা পুরুষ দীর্ঘ দিন ত্যাগের পথ অনুসরণ করে যে সন্ন্যাস ধর্ম পালন করেন এবং তপস্যা করতে করতে যখন সিদ্ধি লাভ করেন তখন তাদের স্বামী উপাধি দেয়া হয়।

আমাদের দেশে স্বামী বলতে সাধারণত পুংলিঙ্গ বোঝালেও মূলত আদি উৎস সংস্কৃত ভাষায় স্বামীর কোনো লিঙ্গ নেই। এটি একটি মর্যাদাপূর্ণ উপাধি যা নারী-পুরুষ যে কারো ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে। হিন্দিতে স্বামী বলতে প্রভু, শিক্ষক, রাজপুত্র, দেবতার প্রতিচ্ছবি অথবা দেবালয় অর্থাৎ মন্দির বোঝানো হয়ে থাকে। এটি সাধারণত ভারতের উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা ও রাজস্থানে ব্যবহৃত আঞ্চলিক উপাধি যার সাথে দিল্লি-ভারতবর্ষ এবং বাংলার কী সম্পর্ক রয়েছে তা নিয়েও আজকের নিবন্ধে সাধ্যমতো আলোচনার চেষ্টা করব। কিন্তু তার আগে বাংলা ভাষায় স্বামী বলতে কী বোঝায় তা নিয়ে সংক্ষেপে কিছু বলে নিই। একজন নারীকে বিয়েশাদির মাধ্যমে অবাধে শারীরিক সম্পর্কে জড়ানার যিনি অধিকারী তিনিই স্বামী। তিনিই স্বামী যিনি তার স্ত্রীর ওপর অধিকার প্রয়োগ করেন এবং ইচ্ছেমতো বিধিনিষেধ আরোপ করেন। স্বামীর ঔরসে উৎপন্ন এবং স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তানের ওপর স্বামীর কর্তৃত্ব সীমাহীন। বৈবাহিক সম্পর্কে স্বামী একগামী কিংবা অনায়াসে বহুগামী হতে পারে, অর্থাৎ একই সাথে বহু পাত্রীর সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক রাখতে পারে। স্ত্রী যতদিন জীবিত থাকেন ততদিন পুরুষের স্বামীত্ব বজায় থাকে। স্ত্রী মারা গেলে স্বামীর উপাধি পরিবর্তন হয়ে যায় এবং তখন তাকে বিপত্মীক বলে ডাকা হয়। কিন্তু স্ত্রী যদি আইনসঙ্গতভাবে পরিত্যাজ্য হন তবুও স্বামীত্ব চলে যায় না- সে ক্ষেত্রে স্বামীকে বলা হয় প্রাক্তন স্বামী।

ডামি মার্কা নির্বাচনের পর দিল্লির বিরুদ্ধে জনগণের ঘৃণা ও ক্রোধে এক নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। দিল্লির কর্তৃত্বপরায়ণ স্বামীরা যেভাবে বাংলাদেশের ওপর গত ৫২ বছর ধরে ক্রমাগত ছড়ি ঘুরিয়ে আসছে সেই ছড়ির পরিণতি অনাগত দিনে কিরূপ হতে পারে তার কিছু নমুনা ইতিহাস থেকে বর্ণনা করছি। বাংলা নিয়ে সুলতানি আমলে কিংবা মোগল আমলে যখন দিল্লির তৎকালীন স্বামীরা বাড়াবাড়ি করেছে ঠিক তখনই বাংলা বিদ্রোহ করে বসেছে। সেই বিদ্রোহ দমন করার জন্য গিয়াস উদ্দিন বলবন, ফিরোজশাহ তুঘলক, সম্রাট আকবরের সেনাপতি মহারাজা মানসিংহ ও সম্রাট জাহাঙ্গীরের সেনাপতি মীর জুমলা বাংলাদেশে এসেছেন বটে কিন্তু যুদ্ধ করে বাঙালিকে দমাতে পারেননি। সম্রাট আওরঙ্গজেবের জমানায় দু’দফায় সুবেদার শায়েস্তা খান ২০ বছরের জন্য শান্তি স্থাপন করতে পেরেছিলেন বটে কিন্তু শেষ অবধি টিকতে পারেননি। পরে নবাব মুর্শিদ কুলি খান রাজধানী ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদ নিয়ে যাওয়ার পর শুরু হয় নতুন প্রেক্ষাপট।

ইংরেজ জমানার পুরোটা সময় পূর্ববঙ্গ-পশ্চিমবঙ্গ, বিহার-আসাম সবসময়ই ছিল অগ্নিগর্ভ। বারবার প্রশাসনিক রদবদল-বিভক্তি ও শত দমন-পীড়নেও বাংলার মাটি থেকে সূর্যসেনের মতো বিপ্লবী তৈরি হওয়া বন্ধ করতে পারেননি; বরং ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহে বাংলা বৃটিশদের কাছে কতটা গলার কাঁটা হয়েছিল তা সদরঘাটের বাহাদুর শাহ পার্কের ইতিহাস পড়লেই টের পাওয়া যায়। পাকিস্তান জমানায় দিল্লি পূর্ববঙ্গে প্রভাব বিস্তার করতে না পারলেও তাদের তাঁবেদার খয়ের-খাঁ ও এজেন্টদের মাধ্যমে পূর্ববঙ্গের শিল্পায়নের সর্বনাশ করেছিল এবং রাজনীতিতে ইন্ধন জুগিয়ে আরো সব কী করেছিল তা আমরা কমবেশি সবাই জানি।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকারের ওপর অনৈতিক চাপ, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট তৈরির জন্য আওয়ামী লীগে বিভক্তি, ছাত্রলীগে দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত এবং জাসদ-সর্বহারাদেরকে মদদ দিয়ে বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করার মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। এরশাদের সামরিক অভ্যুত্থান থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের আজকের দিন পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সাথে যা কিছু করছে তার ফলে এ দেশের বৃক্ষ-লতা-পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ থেকে শুরু করে মানুষের দেহে যে বিষ ব্যথা তৈরি হয়েছে তা ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে সহ্যের সীমা অতিক্রম করে গেছে।

ডামির আগে ভারত দেশের ছোট-বড় রাজনৈতিক দলের সাথে সমানতালে খেলেছে। প্রেস ক্লাবের সামনে যেসব ছোট ছোট দল ছোটখাটো পথসভা করে তাদের মধ্যেও সরকার গঠন করে প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতি হওয়ার লোভের বীজ বপন করেছে। দেশের ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সাথে তাদের কেমন যোগাযোগ ছিল তা তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি কিংবা তার ভাতিজা নবগঠিত সুপ্রিম পার্টির নেতা সাইফুদ্দীন মাইজভাণ্ডারির নির্বাচনী প্রতীক একতারার তারের বেহাল দশা দেখলেই বোঝা যাবে। হেফাজতের একাংশ, সিলেটের ফুলতলী পীর কিংবা আটরশির ফয়সালের গোলাপ ফুলের করুণ দশার পর তাদের কাছে যদি এখন কোনো ভারতীয় এজেন্ট কথা বলতে যায় তবে মাজারপন্থীদের মেজাজ ঠিক থাকবে না।

ডামির আগে বিএনপি-জামায়াত-জাতীয় পার্টিকে নিয়েও ভারত খেলেছে এবং সবাইকে ফাঁকি দিয়ে জুয়ার ধন তুলে দিয়েছে প্রিয়জনের হাতে। ফলে ডামি নির্বাচন-পরবর্তী সময় পরিবেশ ও প্রতিবেশ এখন দিল্লির জন্য দুর্বোধ্য, ভয়ঙ্কর ও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হয়ে পড়েছে।

দিল্লি সম্পর্কে এত কিছু বলার অর্থ হলো, দিল্লির প্রকৃতি ও পরিবেশ মহাকাল থেকেই জীবাণুযুক্ত। দিল্লির কবলে পড়লে ফেরেশতা কিভাবে শয়তানে পরিণত হয় তা খুশবন্ত সিংয়ের দিল্লি উপন্যাসের পরতে পরতে উল্লেখ করা হয়েছে। একইভাবে প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ফিরিসতা রচিত তারিখ-ই-ফিরিসতা গ্রন্থে এবং গুলশান-ই-ইব্রাহিমি গ্রন্থে মুসলিমদের ভারত বিজয়ের আগের সর্বভারতীয় ইতিহাস বর্ণনা করে গেছেন। দিল্লিকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ ভারত, আফগানিস্তান ও উত্তর ভারতের হাজার বছরের ক্ষোভ ফিরিসতা গ্রন্থে অসাধারণভাবে উপস্থাপন করেছেন। দিল্লির প্রতাপশালী শাসকদের মধ্যে একমাত্র সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক দিল্লির মাটি ও মানুষের বিষাক্ত রসায়ন বুঝতে পেরে তার রাজধানী দিল্লি থেকে দেবগিরিতে স্থানান্তর করেছিলেন। পৃথিবীর তাবৎ সুসভ্য ও মেধাবী অভিযানকারী দিল্লিতে স্থায়ী হননি। আলেকজান্ডার, চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য, অশোক, পৃথ্বিরাজ চৌহান, মুহাম্মদ ঘুরি প্রমুখ দিল্লির মাটি স্পর্শ করেননি। হর্ষবর্ধন-শশাঙ্ক, শিবাজি রাও, রণজিৎ সিং যেমন দিল্লির নাম শুনতে চাননি তদ্রুপ মহাভারতের পাণ্ডব-কৌরবরা দিল্লির পার্শ্ববর্তী হরিয়ানায় যুদ্ধ করেছে কিন্তু তৎকালীন দিল্লি অর্থাৎ ইন্দ্রপ্রস্থের ধারে কাছেও যায়নি।

নাদির শাহ, আহম্মদ শাহ আবদালি এবং তৈমুর লং ভারত জয় করলেও দিল্লিতে অবস্থান করেননি। এমনকি দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলো যথা অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক, কেরালা, তামিলনাড়– ও তেলেঙ্গানা অঞ্চলে বিগত হাজার বছরের ইতিহাসে অনেক বড় রাজবংশ, রাজাধিরাজ তৈরি হয়েছেন কিন্তু তারা দক্ষিণ ভারত নিয়েই সন্তুষ্ট ছিলেন। ব্রিটিশ ভারতে সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেল ও মহাত্মা গান্ধী ছাড়া অন্য কেউ দিল্লির কেন্দ্রীয় রাজনীতির ব্যাপারে উৎসাহী ছিলেন না। আর সেই দক্ষিণ ভারত থেকেই নরেন্দ্র মোদি বাবরি মসজিদ ভেঙে উগ্র হিন্দুত্ববাদের দেবতা হয়ে দিল্লির মসনদে বসে দিল্লির বিষাক্ত ইতিহাসের সাথে নিজের রক্তাক্ত হাতের ছোঁয়া লাগিয়ে ভারতবর্ষে কী সব কাণ্ড করে চলেছেন তা আমরা সবিস্তারে না জানলেও বাংলাদেশে যা কিছু করেছেন তা আমাদের রক্ত-মাংসের ভেতর এমনভাবে ঢুকে গেছে যার প্রতিক্রিয়া জন্ম-জন্মান্তরে আমাদের পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে প্রবাহিত হতে থাকবে।

আমরা আজকের আলোচনার একদম শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। দিল্লির স্বামীদের অনাগত পরিণতি বাংলার জমিনে কী হবে তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। তবে হালআমলে তারা আফগানিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান ও মালদ্বীপ থেকে যেভাবে বিতাড়িত হয়েছে তার চেয়েও করুণ পরিণতি তাদের উপহার দেয়ার জন্য বাংলার আকাশ-বাতাস-স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং প্রকৃতি ও পরিবেশ অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। সূত্র: নয়া দিগন্ত

লেখক: গোলাম মাওলা রনি: সাবেক সংসদ সদস্য, লেখক ও সাংবাদিক

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম
Share on Facebook

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন এর সর্বশেষ

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন এর জনপ্রিয়

সর্বশেষ - ধর্ম