a
ফাইল ছবি
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি ও শিক্ষার্থীর ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন সড়ক মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় সড়ক অবরোধ করে নানা স্লোগান দিতে থাকেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর ফলে রামপুরা থেকে কুড়িল বিশ্বরোডমুখি সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও কোটা বাতিলের দাবিতে রাজধানীর বেড়িবাঁধ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাবের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় ইউল্যাবের সামনের সড়ক অবরোধ করেন তারা। অবরোধের ফলে রাজধানীর গাবতলী থেকে মোহাম্মদপুর হয়ে ধানমন্ডি সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
এদিকে, রাজধানীর প্রগতির সরণির নতুন বাজার এলাকা অবরোধ করে আন্দোলন করেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীরা। এতে বাড্ডা লিংক রোড থেকে কুড়িল বিশ্বরোডমুখি সড়কে যান চলাচল হয়ে যায়।
রাজধানীর চিটাগাং রোডের শনির আখড়া কাজলা রোডের রাস্তায় কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলন করছেন দনিয়া কলেজ ও মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ শিক্ষার্থীরা।
কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজধানীর উত্তরা ১১ নং সেক্টর চৌরাস্তা জমজম মোড় অবরোধ করেছেন উত্তরা ইউনিভার্সিটি, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি ও ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে রাজধানীর বনানী ও কুড়িল বিশ্বরোড সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেছেন শিক্ষার্থীরা। কুড়িল বিশ্বরোড সড়ক অবরোধ করেন স্টেট ইউনিভার্সিটি।
রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে শিক্ষার্থীদের অবরোধে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। অনেকেই বাস থেকে নেমে হেঁটেই গন্তব্যের দিকে রওনা হন।
এদিকে ঢাকার বাইরে কোটা সংস্কারের দাবিতে সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছেন আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (আইআইইউসি) শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় কুমিরা রেলওয়ে স্টেশন ও মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে তারা এ আন্দোলন শুরু করেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস এবং ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী পর্যটন এক্সপ্রেস ট্রেন আটকা পড়েছে। এতে মহাসড়কের প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা কোটাবিরোধী নানা স্লোগান দিয়ে তাদের দাবি জানান দিচ্ছেন।
বার আউলিয়া হাইওয়ে পুলিশের ওসি খোকন চন্দ্র ঘোষ জানান, সকাল থেকে ছাত্ররা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছে। তবে তারা কোনো গাড়ি ভাঙচুর করেননি। পুলিশ এবং প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে থেকে পর্যবেক্ষন করছেন। সূত্র: বিডি প্রতিদিন
সংগৃহীত ছবি
ময়মনসিংহের রিকশাচালক শামীম। তিন সন্তান, স্ত্রী মিলে পাঁচ সদস্যের সংসারে একমাত্র উপার্জনকারী সে। রিকশার পেডেল ঘুরিয়ে সারাদিনে যা পকেটে আসে তা দিয়ে কোনরকম চলে তার সংসার। কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় মঙ্গলবার রাতে সেই রিকশা নিয়ে রাত দেড়টায় মহাসড়কে ওঠার অপরাধে তাকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করে মহাসড়কে দায়িত্বরত পুলিশ। রিকশা বাঁচানোর ভয়ে সারাদিনের উপার্জন ৬০০ টাকা ও আগে পকেটে থাকা ১০০ টাকা দিয়ে রিকশা নিয়ে শেষ পর্যন্ত খালি হাতে বাড়িতে ফিরতে হয় শামীমকে।
শামীম ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার গাড়াজান পন্ডিতপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। জীবন জীবিকার তাগিদে পরিবারসহ ভালুকা এমসির বাজার এলাকায় ভাড়া করা খুপরি ঘরে থাকেন শামিম ।
উক্ত ঘটনার পরদিন বুধবার আবার শামীম রিকশা নিয়ে যাত্রীর আশায় যান সিডস্টোর বাসট্যান্ডে। সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন ভালুকা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। যাকে রিকশাওয়ালা শামীম চিনে না। দাঁড়িয়ের থাকার এক পর্যায়ে চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞেস করেন ‘কোথায় যাবেন’। চেয়ারম্যান তাকে জানান, তার নিজস্ব গাড়ি আসবে। তিনি ভালুকায় যাবেন। এ সময় চেয়ারম্যান সাহেব শামীমের লকডাউনের জন্য আয় কেমন হয় তা জিজ্ঞেস করেন। পরে কথা প্রসঙ্গে মঙ্গলবারের ঘটনাটি খুলে বলেন শামীম।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন। ভালুকা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম ফেসবুকে মঙ্গলবারের ওই ঘটনাটি পোস্ট দিলে তা দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে। নজরে পড়ে ভালুকা হাইওয়ে পুলিশের ওসি মো. মশিউর রহমানের।
রিকশাচালক শামীম বলেন, মঙ্গলবার রাতে সিডস্টোর থেকে দুইজন পুলিশ সদস্যকে নিয়ে ভালুকা মডেল থানার সামনে নামিয়ে দিয়ে বাসট্যান্ড এলাকায় গেলে হাইওয়ে পুলিশের একটি টিম আমাকে সিগন্যাল দেয়। তারা আমার রিকশা নিয়ে যেতে চান। কাকুতি মিনতি করার পর ১ হাজার টাকা জরিমানা চান তারা। কিন্তু ওই রাতে আয়ের ৬০০ টাকা ও পকেটে থাকা ১০০ টাকা দিলে তারা আমাকে ছেড়ে দেন।
আমি ওই দিন বাসায় খালি হাতে ফিরি। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিষয়টি ফেসবুকে প্রকাশের পর হাইওয়ে ওসি তাকে ফোন করেছিলেন বলে জানান শামীম।
এ ব্যাপারে ভালুকা হাইওয়ে পুলিশের ওসি মো. মশিউর রহমান বলেন, এই বিষয়ে আমার কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয়ের ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ার পর আমরা অনুসন্ধান করছি।
আমি ব্যক্তিগতভাবে শামীমকে ফোন দিয়েছিলাম। কে নিয়েছে (টাকা) তাদেরকে সে চিনে না। ওসি সাহেব আশ্বাস দেন আমরা দেখছি ওই রাতে কে ডিউটি করছে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভালুকা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, রিকশাচালকের টাকা নিয়ে যাওয়া অত্যন্ত দুঃখজন ঘটনা। এটা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার প্রয়াস। আগামী জেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে এবং অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ফাইল ছবি
গতকাল মঙ্গলবার রাত নয়টায় পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী পদে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের ছেলে হামজা শাহবাজের নিয়োগ ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে রায় দেন সুপ্রিম কোর্ট। এরপর দিবাগত রাত দুইটায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান–সমর্থিত চৌধুরী পারভেজ এলাহি নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। খবর ডন ও জিও নিউজের।
সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, পাঞ্জাবের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে মরিয়া ছিল কেন্দ্রীয় সরকার।
রায় ঘোষণার পর এক সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে ‘বিচারিক অভ্যুত্থান’ বলে কড়া সমালোচনা করেছেন তথ্যমন্ত্রী মারিয়াম আওরঙ্গজেব। অন্যদিকে, রায় মেনে নিতে পিএমএল-এন জোটের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)।
রাত নয়টায় সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়ালের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ। পাঞ্জাবের ডেপুটি স্পিকার দোস্ত মুহাম্মদ মাজারির আদেশ বাতিল করে এতে বলা হয়, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৩এ(১)(বি) নিয়ে তাঁর জানাশোনা ও বাস্তবায়ন ‘ভুল ও ত্রুটিপূর্ণ’।
গত শুক্রবার পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদে মুখ্যমন্ত্রী পদে ভোটাভুটি হয়। এতে জোটের শরিক পাকিস্তান মুসলিম লিগ-কায়েদের (পিএমএল-কিউ) চৌধুরী পারভেজ এলাহিকে প্রার্থী করে পিটিআই। তিনি পান ১৮৬ ভোট। আর পিএমএল-এন নেতৃত্বাধীন প্রার্থী হামজা শাহবাজ পান ১৭৯ ভোট।
কিন্তু সংবিধানের ৬৩(এ) অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে ডেপুটি স্পিকার পিএমএল-কিউ দলের ১০ সদস্যের ভোট বাতিল করে দেন। কারণ হিসেবে তিনি দাবি করেন, পিএমএল-কিউ প্রধান চৌধুরী সুজাত হোসেন কোনো দলের পক্ষে পার্লামেন্ট সদস্যদের ভোট না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে এক চিঠিতে তাঁকে জানিয়েছেন। ফলে, তিন ভোটে হামজা শাহবাজকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
সংবিধানের ৬৩(এ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে দেওয়া কোনো পার্লামেন্ট সদস্যের ভোট গণনা করা হবে না। এমনকি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ভোট দিলে তাঁদের সদস্য পদও বাতিল বলে গণ্য হবে।
ডেপুটি স্পিকারে সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন পিটিআই নেতা রাজা বাশারাত। তিনি বলেন, পিএমএল-কিউয়ের সংসদীয় নেতা চৌধুরী সাজিদ। তাই এ ক্ষেত্রে সংবিধানের আর্টিকেল ৬৩(এ) প্রযোজ্য হবে না। উল্লেখ্য, এই অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যায় ‘পার্লামেন্টারি পার্টির সিদ্ধান্তের’ কথা বলেছিলেন সুপ্রিম কোর্ট।
একপর্যায়ে অধিবেশন মুলতবি করে পিটিআই ও পিএমএল-কিউ নেতাদের তাঁদের আপত্তি নিয়ে ‘আদালতের দ্বারস্থ হতে বলেন’ ডেপুটি স্পিকার। শেষ পর্যন্ত তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলে গতকাল ডেপুটি স্পিকারের রায় অবৈধ ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ।
একই সঙ্গে চৌধুরী পারভেজ এলাহিকে মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগ দিয়ে তাঁকে রাত সাড়ে ১১টায় শপথ পড়াতে পাঞ্জাবের গভর্নরকে নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্ট। যদি কোনো কারণে গভর্নর এলাহিকে শপথ না পড়ান, তাহলে প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি তাঁকে শপথ পড়াবেন বলে আদেশে বলা হয়।
পাঞ্জাবের গভর্নর এলাহিকে শপথ পড়াতে অস্বীকৃতি জানালে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী রাত দুইটার দিকে তিনি প্রেসিডেন্ট আলভির কাছে শপথ নেন। জিও নিউজ জানায়, ইসলামাবাদে শপথ অনুষ্ঠানে আনতে এলাহির জন্য বিশেষ উড়োজাহাজ পাঠান প্রেসিডেন্ট।
জাতীয় পরিষদে বিরোধী জোটের আনা অনাস্থা প্রস্তাবে হেরে গত ৯ এপ্রিল বিদায় নেয় ইমরান খানের সরকার। অনাস্থা ভোটের অধিবেশন ঘিরেও ওই দিন রাতভর নাটকীয়তা চলে। ওই সংকট চলাকালে মধ্যরাতে বসেছিলেন সুপ্রিম কোর্ট। সূত্র: প্রথম আলো