নির্বিচার হামলা চালিয়ে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার প্রায় ৩০,০০০ নিরীহ ও নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করেছে ইসরায়েলের বাহিনী এবং দিনকে দিন এই সংখ্যা বেড়েই চলছে। অথচ ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা গাজার জনগণের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ করছে না।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বুধবার ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি ওয়ার্ল্ড জায়নিস্ট অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউজেডও) জরুরি সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন। তিনি বলেছেন, ‘‘ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, গাজার জনগণের বিরুদ্ধে নয়।’’
ড্যানিয়েল হ্যাগারি আরও বলেন, ‘‘এই যুদ্ধে আমাদের লক্ষ্য, আমাদের প্রধান লক্ষ্য হল জিম্মিদের উদ্ধার করা। একই সঙ্গে গাজার নাগরিকদের হামাসের হাত থেকে মুক্তি নিশ্চিত করাও আমাদের অন্যতম লক্ষ্য।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা উত্তর থেকে দক্ষিণে হামাসের সামরিক কাঠামো গুঁড়িয়ে দিয়েছি। আমরা ইতিমধ্যে হামাসের ২৪টির মধ্যে অন্তত ১৮টি ব্যাটালিয়ন ধ্বংস করেছি। বাকিগুলো ধ্বংস করার কাজ চলছে। এর মধ্যে অন্তত চারটি ব্যাটালিয়ন রাফাহতে রয়েছে।’’
হ্যাগারি বলেছেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী রাফাহর ১৪ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে পারে না। একটি নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য সেখানকার লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হবে।
অথচ ইসরায়েল হামাসকে নির্মুলের নামে গাজার স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল এমনকি জাতিসংঘ কর্তৃক বিভিন্ন শরণার্থ শিবিরে বোমা মেরে শত শত নারী-শিশুকে হত্যা করেছে এবং বাড়ি-ঘর সব ধ্বংস করেছে। আর ইসরায়েলের এই সামরিক মুখপাত্র বর্তমানে তাদের নিজেদের অবস্থা বেগুতিক দেখে বলছে রাফাহর ১৪ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে পারে না। ৩০ হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যার আগে এসব তত্ত্বকথা তাদের মনে ছিলো না?
ইসরায়েল-আমেরিকার এসব ভন্ডামী দু’মুখো কথা বিশ্বের সকলে কম-বেশি জানে বলেই আস্তে আস্তে আমেরিকামুখী ছোট-বড় দেশগুলোর জনগণ ও সরকার আমেরিকা থেকে মুখ ফিরিয়ে তারা রাশিয়া তথা অন্য বৃহৎ দেশগুলোর সাথে জোটবদ্ধ হয়ে সামনে দিনগুলোতে চলার পথ খুঁচছে!
আমেরিকা আফগানিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশগুলো থেকে তাদের সেনাবাহিনী নিজ দেশে আনতে বাধ্য হয়েছে। নিকট অতীতে ইউক্রেনকে রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়ে বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলকে সাহায্যের নামে ইউক্রেন থেকে তাদের মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। হয়তো নিকট ভবিষ্যতে আমেরিকা অন্য দেশের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে ইসরায়েল তথা মধ্যপ্রাচ্য থেকেও তাদের গুটিয়ে নিয়ে নিজেদের দেশ রক্ষায় ব্যস্ত থাকতে বাধ্য হবে, এই সময় খুব একটা দূরে নয়!
লেখক: কলাম লেখক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক
এবং নির্বাহী পরিচালক, হিউম্যানরাইটস এন্ড এনভায়রমেন্ট ডেভোলপমেন্ট সোসাইটি(হিডস)
করোনার নির্মম ছোবলে অনন্তযাত্রায় পাড়ি জমালেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সঙ্গীতশিল্পী ইন্দ্রমোহন রাজবংশী। বুধবার ৭ এপ্রিল সকাল প্রায় ১০টার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
ইন্দ্রমোহন রাজবংশীর জন্ম রাজধানী ঢাকা শহরে। তার পরিবারের পাঁচ পুরুষ সঙ্গীতের সঙ্গে জড়িত। সঙ্গীত কলেজে লোকসঙ্গীত বিভাগের প্রধান হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন কাজ করেছেন।
তিনি ছিলেন বাংলাদেশ লোকসংস্কৃতি পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৫৭ সালে ছোটদের আসরে গান করতে শুরু করেন তিনি।
১৯৬৭ সালে 'চেনা অচেনা' চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে তার। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন বন্ধে নাম-পরিচয় গোপন করে পাকিস্তানিদের দোভাষী হিসেবে কাজ করেছেন কিছুদিন।পরবর্তীতে সেখান থেকে চলে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা দিতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কণ্ঠযোদ্ধা হিসেবে অংশগ্রহণ করেন রাজবংশী।
ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালী, জারি, সারি, মুর্শিদি ইত্যাদি গানের পাশাপাশি রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত তিনি। দেশের সঙ্গীতাঙ্গণে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১৮ সালে সঙ্গীত বিভাগে একুশে পদক লাভ করেন খ্যাতিমান এই সঙ্গীতশিল্পী।
চলচ্চিত্র, বেতার ও টেলিভিশনে অনেক গান গেয়েছেন তিনি। গান গাওয়ার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকগান সংগ্রহ করতেন ইন্দ্রমোহন রাজবংশী। দেশের সহস্রাধিক কবির লেখা কয়েক লাখ গান সংগ্রহ করেছেন তিনি। তার স্ত্রীর নাম দীপ্তি রাজবংশী, পুত্র রবীন রাজবংশীও লোকগানের সঙ্গে জড়িত। দেশবরেণ্য এই কণ্ঠযোদ্ধার প্রতি রইল অন্তিম শ্রদ্ধা।
পূর্ব জেরুজালেমের শেখ জাররাহ এলাকার বাসিন্দা ফিলিস্তিনি আন্দোলনকর্মী সেই দুই ভাই-বোনকে মুক্তি দিয়েছে দখলদার ইসরায়েলি পুলিশ। আটকের কয়েক ঘণ্টা পর ইসরায়েলি পুলিশ তাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য দেয়। খবর আল-জাজিরার
খবরে বলা হয়, ২৩ বছর বয়সী দুই আন্দোলনকর্মীর নাম মুনা আল-কুরদ ও মোহাম্মদ আল কুরদ। তারা শেখ জাররাহতে চলমান ফিলিস্তিনি আন্দোলনের সম্মুখসারির কর্মী।
ইসরায়েলি পুলিশ হেফাজত থেকে মুক্তির পর মুনা আল-কুরদ বলেন, ‘আমাদের আতঙ্কিত করতে এবং ভয় দেখাতে দখলদাররা যাই করুক না কেন এবং যতোবার গ্রেফতার করুক, তাতে আমরা ভীত নয়। আমরা আমাদের বাড়িতে থাকব এবং আমাদের জন্ম ও বেড়ে ওঠার ভূমি রক্ষায় প্রতিরোধ আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
মুনার ভাই মোহাম্মদ আল কুরদ বলেন, ‘আমরা মোটেও ভীত নয়। আমরা সব অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলে যাব এবং আমাদের বাড়ি ও ভূমি রক্ষায় আরও তৎপর থাকব।’
এর আগে রোববার (৬ জুন) মুনা ও মোহাম্মদকে আটক করে নিয়ে যায় ইসরায়েলি পুলিশ। শেখ জাররাহ আন্দোলনের পেছনে তাদের উস্কানি রয়েছে বলে অভিযোগ করে দখলদার ইসরায়েলি পুলিশ।
মুনা আল-কুরদকে আটকের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। তাতে দেখা যায় মুনাকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি পুলিশ। এসময় মুনা তার পরিবারকে ভয় না পেয়ে আরও শক্ত হতে বলতে শোনা যায়।