a
ফাইল ছবি
শীত মৌসুমে খুশখুশে কাশি, সর্দি, গলা ব্যথা প্রায় লেগেই থাকে। এ জন্য রং চা খাওয়া যেতে পারে। আদা, লবঙ্গ, দারুচিনি, তুলসী, সামান্য লবণ ও মধু দিয়ে তৈরি লাল চা পান করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। একটু সচেতন হলেই এসব সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। ঠাণ্ডা, সর্দি-কাশিতে ঘরোয়া কিছু উপায় অবলম্বন করে ‘ঠাণ্ডা’কে দূরে রাখা যায়।
মধু: ত্বকের পাশাপাশি শরীরের জন্যও মধু বেশ উপকারী। গলার খুসখুসে ভাব কমিয়ে দ্রুত আরাম দেয়। মধু গরম বলে ঠাণ্ডা প্রতিরোধ করে। হালকা গরম পানির সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এ ছাড়া আঙ্গুরের রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে এমন কি চা-এ চিনির পরিবর্তে মধু দিয়ে খেতে পারেন। বয়স্করা মধুর সঙ্গে এক চামচ দারুচিনি গুঁড়া মিশিয়ে খেলেও বেশ উপকার পাবেন।
আদা: প্রাচীনকাল থেকেই ঠাণ্ডা, জ্বর, কাশি ও মাথাব্যথার জন্য আদার ব্যবহার হয়ে আসছে। আদা চা গলার কফ পরিষ্কার করে ও খুসখুসে ভাব কমায়। এ ছাড়াও আদা রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে কুসুম গরম করে দিনে তিনবার খান। দ্রুত কাশি নিরাময় হবে।
রসুন: রসুনে রয়েছে আলিসিন ও অন্যান্য অর্গানোসালফার উপাদান যা সংক্রমণকারী ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিনাশ করে। গলা বসে গেলে রসুন থেঁতো করে তাতে গরম পানি দিয়ে শরবত করে নিন। পাঁচ মিনিট পর মিশ্রণটি পান করুন, অতি দ্রুত ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
লেবু: লেবুতে রয়েছে সাইট্রিক এসিড যা ঠাণ্ডার ভালো ওষুধ। লেবু চা খেতে পারেন। কুসুম গরম পানিতে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে খেয়েই দেখুন ভালো ফল পাবেন। গলাব্যথা বা গলা বসে গেলে গরম পানিতে লেবুর রস ও সামান্য লবণ দিয়ে গড়গড়া করুন। এভাবে দিনে বেশ কয়েকবার করুন।
গোলমরিচ: গরম পানিতে এক চা চামচ গোলমরিচ গুঁড়ার সঙ্গে দুই চা চামচ মধু মিশিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন। গোলমরিচের দানা নিচে জমা হলে ধীরে ধীরে পান করুন। অতি দ্রুত ঠাণ্ডা থেকে মুক্তি পাবেন। সূত্র: বিডি প্রতিদিন
পিয়াজের রস : পিয়াজের রস কাশি নিরাময় করে, এটি অনেকেরই অজানা। পিয়াজ রস করে তাতে মধু দিয়ে খেতে পারেন। এ ছাড়াও খাবারের সঙ্গে খেতে পারেন কাঁচা পিয়াজ।
লবঙ্গ : কয়েক টুকরা লবঙ্গ সেদ্ধ পানিতে সামান্য লবণ মিশিয়ে কুসুম গরম থাকতে খেয়ে নিন। এটি ভীষণ উপকারী। এ ছাড়াও লবঙ্গ ও আদা পানিতে ১৫ মিনিট সেদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গড়গড়া করলেও উপকার পাবেন।
হলুদ মিশ্রিত দুধ : হলুদে রয়েছে অ্যান্টিসেপটিক উপাদান যা বিভিন্ন ভাইরাসজনিত ইনফেকশন সারাতে কার্যকর। গরম দুধের সঙ্গে খানিকটা হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে পান করলে সর্দি ও গলা ব্যথা থেকে অতি দ্রুত মুক্তি পাবেন।
ফাইল ছবি
গত কিছুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিন্নধর্মী ঘটনা সারাদেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সেটি হলো লিচু গাছে আম ধরার মতো ব্যতিক্রমী ঘটনা। এই আশ্চর্যজনক ঘটনাটি ঘটে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সিঙ্গিয়া কলোনিপাড়া গ্রামের আবদুর রহমানের বাড়ির একটি লিচু গাছে। গত মঙ্গলবার হঠাৎ সেই আমটি ছিঁড়েও ফেলা হয়।
করোনাভাইরাস লকডাউন, আইডি কার্ড-মুভমেন্ট পাস ইত্যাদি বিষয় মাঝে মানুষের মুখে চাউর ছিল লিচু গাছে আমের কাহিনিটি। কয়েকদিন আগে ঘটে যাওয়া এ বিরল ঘটনার কোনো বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দিতে পারেননি উদ্যানতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা। শুরু থেকেই বিষয়টি নিয়ে ধোয়াশা থাকলেও পরবর্তীতে জানা যায় এটা ছিল একটা নিছক তৈরি কাহিনী।
ঘটনাটি ছিল কেউ একজন লিচু গাছে আঠাজাতীয় পদার্থ দিয়ে আমটি ডালে লাগিয়ে রাখে। ঘটনা চারিদিক ছড়িয়ে পড়লে আমটি ছিড়ে ফেলা হয়। আমটি যদি সত্যিকার ভাবেই লিচু গাছে ধরত তাহলে আম ছেঁড়ার একদিন বাদে (বুধবার) সেই আমের বোঁটা শুকিয়ে যেত না , তা স্বাভাবিকভাবে আম ছিঁড়ে নেওয়ার পরে বোঁটার মতো নয় এবং কি আঠাজাতীয় পদার্থের উপস্থিতিও রয়েছে সেখানে।
আম ছিঁড়ার ঘটনা জানার পর (বুধবার) কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ঠাকুরগাঁও কার্যালয় ওই ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেছে। এর আগে সোমবার থেকে দুই কর্মকর্তা আম ধরার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছিলে।
ঠাকুরগাঁওয়ের উপ-পরিচালক আবু হোসেন এক বিবৃতিতে বলেন, হয়তো এটি কেউ আঠা দিয়ে ইচ্ছা করে লাগিয়ে দিয়েছিল। অথবা অন্য কোনো কৌশলে করা হয়েছিল। তিনি বলেন, লিচুর বোঁটাটি লম্বা হলেও আমেরটি বোটাটি স্বাভাবিকের তুলনায় খুব খাটো ছিল। এগুলো দেখেই প্রথম থেকেই বিষয়টি অন্যরকম লাগতেছিল। আম ছিঁড়ে ফেলার কারণে সে বিষয় এখন পরিস্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে।
অপরদিকে এ ঘটনার কোনো বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দিতে অক্ষম হয়েছেন উদ্যানতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা। ফলে প্রথমে এটি একটি অলৌকিক ঘটনা মনে করা হচ্ছিল। তবে প্রথম থেকেই কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলে আসছিলেন, যে কেউ আঠা দিয়ে লিচুর ডালে আমটি লাগিয়েও দিতে পারে। ফলে এটা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। ঘটনাটি পর্যবেক্ষণের জন্য কয়েক দিন অপেক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কারণ আমটি কোনো কৌশলে লাগানো হলে তা ঝরে পড়ে যাবে বা শুকিয়ে যাবে।
এছাড়া কয়েকজন কৃষি কর্মকর্তা বিষয়টিকে এভাবে বলেছেন যদি আমটি আসল হয় তাহলে আসতে আসতে বড় হবে তখন এ নিয়ে গবেষনা করা যাবে। কিন্তু পরদিনই আকস্মিকভাবে আমটি ছিঁড়ে ফেলা হয়।
এদিকে বুধবার বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এক গাছে অন্য ফল শুধু গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে সম্ভব। তবে লিচু ও আমের ক্ষেত্রে এটা করা যাবে না। লিচু ও আমের টিস্যু সিস্টেম এক নয়। এদিকে লিচু গাছটির মালিক আবদুর রহমানের দাবি ছিল, এটা কোনো পদ্ধতি নয়। স্বাভাবিকভাবেই সেখানে আম ধরেছে।
গত শনিবার সকালে তার নাতি হৃদয় ইসলাম এসে তাকে জানায়, লিচুগাছে একটা আম ধরেছে। তৎক্ষনাত সেখান গিয়ে লিচুর একপাশে একটি আম দেখে অবাক হয়ে যাই। এ খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে বহু মানুষ এটি দেখতে ভিড় করেন।
এরপর সোমবার বিষয়টি দেশের অধিকাংশ গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। আবদুর রহমানের অভিযোগ ছিল গত মঙ্গলবার এলাকার সাবেক মেম্বার সিকিম লিচুগাছ থেকে আমটি ছিঁড়ে ফেলেছেন। অভিযুক্ত মেম্বার প্রথমদিকে আমটি ছিঁড়ে ফেলার কথা স্বীকার করলেও পরে বিষয়টি অন্যভাবে উপস্থাপন করেন ।
মেম্বার নিজে বলেন, মিডিয়াতে এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় অনেক দূর থেকে মানুষ এসে এলাকায় ভিড় করছে এবং এ ঘটনা দেখতে আসার প্রাক্কালে সোমবার তার ভাতিজা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হন। তাছাড়া স্বাস্থ্যবিধিও মানা হচ্ছিল না, করোনার ঝুঁকি বেড়ে যাবে এসব কথা গাছের মালিক আবদুর রহমানকে বলতে গিয়েছিলাম তখন হয়ত কেউ আমটি ছিঁড়ে ফেলেছে।
সরকার ভাবছে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে কঠোর অবস্থানে থেকে হেফাজতে ইসলামকে মোকাবিলা করার কথা। এ যাবৎ সংঘটিত প্রতিটি সহিংস ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে খুব কম সময়ের মধ্যে চার্জশিট দেবে পুলিশ। এর পর পরই শুরু হবে গ্রেপ্তার। এরই মধ্যে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন সংগ্রহ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
নেতারা জানান, এখন দেশজুড়ে হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক শক্তি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের যোগসূত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা প্রথমে জনগণকে সচেতন করার কর্মকাণ্ডে উদ্যোগী ভূমিকা নেবেন। এরপর জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করবেন।
এ ছাড়া প্রশাসনিকভাবে হেফাজতে ইসলামের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডকে ছাড় না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে কয়েকজন মন্ত্রী সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া শুরু হয়েছে। হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরীসহ ২৪ শীর্ষ নেতা এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নারায়ণগঞ্জের ৩০টি মাদ্রাসার ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় উগ্রবাদী সংগঠনের সন্ত্রাস-সহিংসতা এবং উস্কানিমূলক অপতৎপরতার সঙ্গে সম্পৃক্ত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। এসব তাণ্ডবের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় চার্জশিট দেওয়া হবে। এরপর শুরু হবে আইনানুগ ব্যবস্থা।
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় কয়েক নেতার ভাষ্য, হেফাজতে ইসলামের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে দলের অনেক নেতাকর্মী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে। অনেক জায়গায় আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবির প্রতিও অসম্মান দেখানো হয়েছে। এই বিষয়গুলো নেতাকর্মীরা স্বাভাবিকভাবে নেননি। তারা কেন্দ্রের কাছে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক নির্দেশনা চাচ্ছেন। দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকেও এই বিষয়ে সাংগঠনিক প্রস্তুতি নেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দলের চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক প্রস্তুত রয়েছেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও রংপুর বিভাগে দলের নেতাকর্মীদের তারাই গুছিয়ে আনতে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করবেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী সমকালকে বলেন, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে সরকার। সবাইকে আইনের আওতায় আনবে। আওয়ামী লীগ দায়িত্ববোধের অবস্থানে থেকে সন্ত্রাস ও সহিংসতার বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করে তুলবে। মনে রাখতে হবে, ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলামে জ্বালাও-পোড়াওয়ের কোনো স্থান নেই। এই চেতনাকে জাগ্রত করতে হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবে ১৭ জন মারা গেছেন। হঠাৎ করে এই তাণ্ডব কেন? নিশ্চয়ই এর কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যারাই তাণ্ডব করে থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের তীব্র সমালোচনার পাশাপাশি এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের ইঙ্গিত দিয়েছেন। হেফাজতে ইসলামের সন্ত্রাস-সহিংসতার পেছনে বিএনপি-জামায়াতের ইন্ধন ও সম্পৃক্ততা খুঁজে দেখার কথাও বলেছেন। বিএনপি-জামায়াত ও তাদের মিত্রদের বক্তৃতা-বিবৃতিই হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা প্রমাণ করে- এমনটা মনে করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। বিশেষ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতায় হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে জামায়াতে ইসলামীর সরাসরি সমর্থন এবং বিএনপি নেতাদের এই হরতালকে যুক্তিসংগত আখ্যা দেওয়ার বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত রবিবার সংসদ অধিবেশনে হেফাজতে ইসলামের সাম্প্রতিক তাণ্ডবের চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের পেছনে বিএনপি-জামায়াতের মদদ রয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, 'পুলিশ কেন ধৈর্য দেখিয়েছে- এই প্রশ্ন সংসদেও এসেছে। আমরা ধৈর্য দেখিয়েছি এগুলো বিরত করার জন্য। সংঘাতে সংঘাত বাড়ে। আমরা তা চাইনি। সুবর্ণজয়ন্তী ভালোভাবে উদযাপন করতে চেয়েছি।'
গতকাল সাংবাদিকদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে যারা তাণ্ডব চালিয়েছিল, তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জনগণ শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে রয়েছে। সুতরাং যারা পেছন থেকে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে উস্কানি ও অর্থায়ন করছে, তাদের মুখোশও উন্মোচন করা হবে।
সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতার নামে গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন স্থানে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা রক্তাক্ত সহিংসতার পাশাপাশি ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে। তাদের ডাকা হরতালেও সহিংসতা হয়েছে। জ্বালাও-পোড়াও থেকে রক্ষা পায়নি রেলস্টেশন, ভূমি অফিস, জেলা প্রশাসক-পুলিশ সুপার-সিভিল সার্জন-জেলা পরিষদসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সুরসম্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয় ও ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক নির্দশন। আওয়ামী লীগের অফিস জ্বালিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রীর ছবিও ভাঙচুর করা হয়েছে।
সরকারি সূত্রগুলো বলছে যে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যেও হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের সন্ত্রাস-সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ রিসোর্টে একজন নারীসহ হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের উপস্থিতির পরও এ সংগঠনের নেতাকর্মীরা যেভাবে হামলা-ভাঙচুর চালিয়ে তাদের নেতাকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে; সে বিষয়টিও সরকার এবং প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলেছে।
সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা যায় , হেফাজতে ইসলামের নেতাসহ সংশ্নিষ্ট মাদ্রাসাগুলোর ব্যাংক হিসাব ও আয়-রোজগারে অস্বাভাবিক গরমিল পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনসহ বিভিন্ন ধারায় মামলা দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া সন্ত্রাস-সহিংসতা ও প্রাণহানির দায়েও হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলা করার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। এরই মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত আটটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে সাড়ে ৮ হাজার মানুষকে। এর মধ্যে হেফাজতে ইসলামের দায়িত্বশীল কোনো নেতা বা কর্মীর নাম নেই। হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের ইন্ধন কিংবা সম্পৃক্ততা 'পাওয়া গেলে' তাদের এসব মামলায় হুকুমের আসামি করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
২০১০ সালে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আত্মপ্রকাশ। চট্টগ্রামের হাটহাজারী বড় মাদ্রাসা হিসেবে পরিচিত দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম থেকে পরিচালিত হয় সংগঠনটি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে ২০১৩ সালে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের বিরোধিতা করে হেফাজতে ইসলাম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে প্রথম সবার নজরে আসে। ওই বছর ৫ মে ঢাকার মতিঝিল শাপলা চত্বরে অবস্থান করে গোটা এলাকায় নজিরবিহীন জ্বালাও-পোড়াও চালিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে সংগঠনটি।
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনার পর হেফাজতে ইসলামের তোলা প্রতিটি দাবিতেই সরকার সমঝোতা কিংবা আপসের পথে হেঁটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। হেফাজতে ইসলামের দাবির মুখে পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন এবং সুপ্রিম কোর্টের সামনের ভাস্কর্য অপসারণের সিদ্ধান্তও সরকার নিয়েছে।