a
ফাইল ছবি
পিসিআর ল্যাব টেস্টের মাধ্যমে মাত্র ৪ মিনিটেই করোনা পরীক্ষার সঠিক ফলাফল পাওয়া যাবে বলে দাবি করেছে চীনের সাংহাইয়ের ফুডান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। কোভিড প্যাথোজেন নামে ডাকা হচ্ছে এই পরীক্ষাকে। এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সাময়িকী নেচার বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে প্রকাশিত একটি প্রকাশনা পর্যালোচনায় গবেষক দল বলেছেন, একটি সমন্বিত ও হালকা প্রোটোটাইপ ডিভাইসে সার্স-কভ-২ শনাক্তে একটি ইলেক্ট্রমেকানিক্যাল বায়োসেনসর প্রয়োগ করা হয়েছে। এতে মাত্র ৪ মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে আরএনএ ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে।
তারা আরও জানায়, কোভিড-১৯ ল্যাব পরীক্ষায় যে পরিমাণ সময় খরচ হয়, তা কমিয়ে আনতে পারবে নতুন এই পরীক্ষার মাধ্যমে। সোয়াব থেকে জিনগত উপকরণ বিশ্লেষণে এতে মাইক্রোইলেকট্রনিক্স ব্যবহার করা হয়েছে।
মহামারি পরীক্ষায় চীনা গবেষকদের এই পদ্ধতি দ্রুত, সহজসাধ্য, অতি স্পর্শকাতর ও বহনযোগ্য। সাংহাইয়ের করোনায় আক্রান্ত ৩৩ অধিবাসীর নমুনা নিয়ে এই পদ্ধতির পরীক্ষা করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের নমুনার পিসিআর পরীক্ষাও করা হয়েছে।
পিসিআর পরীক্ষার মতোই নতুন এই পদ্ধতিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফলাফল পাওয়া গেছে। গবেষণায় আরও ৫৪ ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, যাদের করোনা না থাকলেও জ্বর ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ছিল। এতে কোনো ভুল ফলাফল আসেনি।
ফাইল ছবি
প্রতিদিন বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত হারে বাড়ছে এবং এই মুহূর্তে অন্তত ২৯টি জেলা করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ। এসব জেলার মধ্যে রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফেনী, চাঁদপুর, নীলফামারী, সিলেট, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, মাদারীপুর, নওগাঁ, রাজশাহী ইত্যাদি। ঢাকায় সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়।
সোমবার (২৯ মার্চ) স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে এযাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত করা হয়েছে। আর এই সময়ের মধ্যে ৪৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সাংবাদিকদের বলেন, গত কিছুদিন ধরে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে এবং সংক্রমণের মাত্রা ‘খুব দ্রুত বাড়ছে’। তিনি বলেন, মার্চের ১৩ তারিখে সংক্রমণের মাত্রা উচ্চ ছিল ৬টি জেলায়, ২০ তারিখে দেখা গেছে ২০টি জেলা ঝুঁকিতে আছে। আর মার্চের ২৪ তারিখে দেখা গেছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার উচ্চ এমন জেলার সংখ্যা ২৯টি। তাই বোঝা যাচ্ছে, সংক্রমণের হার বাড়ছে দ্রুত।
করোনাভাইরাস থেকে ঝুঁকির মাত্রা প্রতি সপ্তাহেই বিশ্লেষণ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিভিন্ন জেলা থেকে পাওয়া তথ্য, রোগীর সংখ্যা, সংক্রমণের মাত্রা- এসবের ওপর ভিত্তি করে ঝুঁকিপূর্ণ জেলা চিহ্নিত করে অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সংক্রমণের উচ্চ হার সামাল দিতে এখন স্থানীয়ভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রতি জেলায় কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত কমিটি রয়েছে এবং এসব কমিটি স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে মিলে সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য এক সঙ্গে কাজ করবে।
মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আরটিপিসিআরের পাশাপাশি এখন হাসপাতালগুলোতে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৮ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান। তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। নমুনা সংগ্রহের যেসব বুথ বন্ধ করা হয়েছিল, সেগুলোও খুলে দেওয়া হবে।
করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য সরকারের সবচেয়ে বড় যে অস্ত্র, সেই টিকার ঘাটতি নিয়ে আলোচনা আছে। মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা স্বীকার করেন যে যারা প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন, তাদের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেবার মতো টিকার মজুদ বর্তমানে দেশে নেই। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে সরকারের হাতে ৪২ লক্ষ টিকা মজুদ আছে। আর এপ্রিল মাসে কিছু টিকার চালান আসবে বলে সরকার আশা করছে।
সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে হাসপাতালগুলোতে ক্রমে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চেষ্টা করছে যে কভিড-ডেডিকেটেড হাসপাতালের সংখ্যা আরও বাড়ানোর। তবে রোগীদের অনুরোধ জানানো হয়েছে, নিজ নিজ জেলার হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য। মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ঢাকার বাইরে থেকে রোগীরা ঢাকায় চলে আসেন, যে কারণে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে চাপ বাড়ে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সোমবার সরকার ১৮ দফা নতুন নির্দেশনা ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে জনসমাগম সীমিত করা। মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরার মতে, সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে এই ১৮ দফা ‘স্ট্রিক্টলি’ অর্থাৎ কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। এই ১৮ দফা নির্দেশনার মধ্যে সরকার উচ্চসংক্রমণযুক্ত এলাকায় সকল ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করেছে। এ ছাড়া, পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রে জনসমাগম সীমিত করার নির্দেশনাও রয়েছে এর মধ্যে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, যেসব জেলায় উচ্চসংক্রমণ রয়েছে, প্রয়োজনে সেসব জেলার সঙ্গে আন্তজেলা যোগাযোগও সীমিত করা হবে। তবে সেটি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন জেলার পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেবেন। এছাড়া, প্রয়োজন হলে স্থানীয়ভাবে লকডাউন আরোপ করা হতে পারে। প্রত্যেক জেলার হাসপাতালে অক্সিজেনের সুবিধা এবং অন্যান্য চিকিৎসা সুবিধা পর্যাপ্ত রয়েছে বলে দাবি করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
ফাইল ছবি । হেফাজতের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির কেন্দ্রীয় কাউন্সিল
রাজনৈতিক পরিচয়ধারী নেতাদের বাদ দিয়ে খুব শিগগিরিই নতুন কমিটি ঘোষণা করতে যাচ্ছে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। আগামী দুই একদিনের মধ্যে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে।
নতুন কমিটিতে রাজনৈতিক পদে রয়েছেন এমন নেতাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। সংযুক্ত করা হয়েছে সদ্য বিলুপ্ত কমিটি থেকে বাদ পড়া আল্লামা শফীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত কয়েকজন নেতাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হেফাজতের শীর্ষ এক নেতা সোমবার গণমাধ্যমকে বলেন, বিতর্কিত নেতাদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরাসরি রাজনৈতিক দলের পদে আছেন এমন কাউকে খসড়া কমিটিতে রাখা হবেনা।
সূত্রে জানা যায়, রাজনৈতিক পদে রয়েছেন এমন নেতাদের বাদ দিয়ে খসড়া কমিটি ইতোমধ্যে অনুমোদন দিয়েছেন বর্তমান আহ্বায়ক জুনায়েদ বাবুনগরী। দুই একদিনের মধ্যে এ কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হবে।
বাবুনগরীর তৈরি করা খসড়া কমিটি নিয়ে প্রকাশ্যে হেফাজত সংশ্লিষ্টরা মুখ খুলতে চাচ্ছেন না। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ওই কমিটিতে ৩০-৩৮ সদস্যবিশিষ্ট হতে পারে।
খসড়া কমিটিতে জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির, মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদীকে মহাসচিব হিসেবে রাখা হয়।
কমিটিতে মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মাওলানা সালাউদ্দিন নানুপুরী, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান, মাওলানা মুহিব্বুল হক (সিলেট), মাওলানা উবায়দুর রহমান মাহবুব (বরিশাল) কয়েকজনকে নায়েবে আমির হিসেবে রাখা হয়েছে।
যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে রয়েছেন- মাওলানা সাজিদুর রহমান (বি-বাড়িয়া), মাওলানা আবদুল আউয়াল (নারায়নগঞ্জ) ও মাওলানা আরশাদ রহমানী (বসুন্ধরা)।
কমিটি থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, নাছির উদ্দিন মুনির, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, কেন্দ্রীয় নেতা জাকারিয়া নোমান ফয়জী, খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, হাসান জামিল, মুফতি হারুন ইজহারসহ নানা ইস্যুতে বিতর্কে জড়িয়ে পড়া হেফাজতের নেতারা।
একইভাবে আল্লামা আহমদ শফীর হত্যা মামলার অভিযুক্ত নেতাদেরও বাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সদ্য বিলুপ্ত কমিটিতে একক আধিপত্য বিস্তারকারী ‘রাবেতা’ ও ‘জমিয়ত’ সিন্ডিকেটও ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ আগমনকে কেন্দ্র করে গত মার্চের ২৫, ২৬ ও ২৭ তারিখ দেশজুড়ে যে সহিংস ঘটনা ঘটেছে, অন্তত ১৭ জন মানুষের প্রাণহানি হয়। এসব নাশকতার পেছনে জড়িত থাকার অভিযোগে অন্তত এক ডজন হেফাজত নেতা গ্রেফতার রয়েছেন।
সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে কোণঠাসা হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা শুরু থেকেই সমঝোতার চেষ্টা করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তারা গোয়েন্দা সংস্থা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকও করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হেফাজতে ইসলামের এক নেতা বলেন, সর্বশেষ কমিটিতে মামুনুল হক ও জমিয়ত এককভাবে তাদের আধিপত্য বিস্তার করে। যা নিয়ে বাবুনগরীকে বেশ বেকায়দায় পড়তে হয়েছে। পরে মামুনুর হকের রিসোর্টকাণ্ডের পর একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে ওই কমিটি বিলুপ্ত করেন।
নতুন কমিটি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে নানামুখী চাপে রয়েছেন আল্লামা বাবুনগরী। তাই রাজনৈতিক পদধারী নেতাদের বাদ দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করছেন তিনি। তথ্যসূত্র: যুগান্তর