a
ফাইল ছবি: ইমরান খান (বামে) ও নরেন্দ্র মোদি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির চিঠি পাওয়ার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি বজায় রাখার ব্যাপারে উদ্যোগী হলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। গত মঙ্গলবার তিনি মোদির চিঠির উত্তর দিয়েছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ‘পাকিস্তান দিবস’ উপলক্ষে ইমরান খানকে চিঠি লিখেছিলেন। তাতে জানিয়েছিলেন, প্রতিবেশি দেশটির সঙ্গে ভাল সম্পর্ক চায় ভারত। চিঠিতে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত করার বার্তা দিয়েছিলেন তিনি।
ইমরান খান এবার তাতে ইতিবাচকভাবে সাড়া দিলেন। ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার বার্তা দিলেন চিঠিতে।
চিঠিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, “ভারত-সহ প্রতিটি প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সঙ্গেই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চায় পাকিস্তানের নাগরিক। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক ভাল থাকলে তবেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সমস্ত ইস্যুর সমাধান করা সম্ভব। যার মধ্যে অন্যতম জম্মু ও কাশ্মীর সমস্যা।”
একইসঙ্গে করোনা মহামারীর সঙ্গে ভারতীয়দের লড়াইকেও অভিনন্দন জানিয়েছেন ইমরান খান।
সম্প্রতি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ভারত-পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ হয়েছিল। সেখানে আলাদা করে তাদের কোনও বৈঠক না হলেও, পরবর্তীতে ইমরানের এই চিঠি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। সূত্র: এনডিটিভি, ইন্ডিয়াটিভি, আল-জাজিরা
ফাইল ছবি
বছর তিনেক আগে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোকে 'মৃতপ্রায়' বলে মন্তব্য করেছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। ওই সময় দ্য ইকোনমিস্ট সাময়িকীকে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ইউরোপ নিজের নিরাপত্তার জন্য আর ন্যাটোর ওপর নির্ভর করে না। তার এ মন্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে হইচই পড়ে গিয়েছিল।
এরপর একে একে বেশকিছু বৈশ্বিক সংকট দেখা দেয়। এর মধ্যে আছে- করোনা মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধ ও জ্বালানি সংকট।
বিশেষ করে এক বছর আগে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে রুশ জ্বালানির ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের নিষেধাজ্ঞার কারণে ইউরোপে জ্বালানি সংকট দেখা দেয়। মহাদেশটি এ সংকট মোকাবিলায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে দ্রুত ঝুঁকে পড়ে। কিন্তু নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়ে মৌলিক প্রশ্নে ইউরোপ এখনো দ্বিধা-বিভক্ত।
হেলেনিক ফাউন্ডেশন ফর ইউরোপিয়ান অ্যান্ড ফরেন পলিসির পরিচালক জর্জ পাগুলাতোস আলজাজিরাকে বলেন, 'আমি মনে করি, ইউরোপের ঐক্য দুর্বল হয়ে গেছে। ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘির ইতালি মিলে তাদের পররাষ্ট্রনীতি ঠিক করতেন। তারা ইউরোপের একতা তৈরিতে চালকের ভূমিকা পালন করেছিলেন।'
কিন্তু গত জুলাইয়ে আস্থা ভোটে হেরে যান দ্রাঘি। তার পরিবর্তে ক্ষমতায় আসেন চরম ডানপন্থি ও জর্জিয়া মেলোনি।
গত এপ্রিলের পার্লামেন্ট নির্বাচনে ফ্রান্সে ম্যাক্রোঁবিরোধীরা জয়লাভ করেন। ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা দিতে অনীহা প্রকাশ করায় জার্মানিকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।
জর্জ পাগুলাতোস মনে করেন, ইউরোপের মনোবল এর কেন্দ্র থেকে সরে মহাদেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলে সরে গেছে। সেখানকার দেশগুলো চায় যেকোনো মূল্যে ইউক্রেন জয়ী হোক এবং রাশিয়া পরাজিত হোক।
ফিনিশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের রিসার্চ ফেলো মিনা অলান্দার আলজাজিরাকে বলেন, 'বাল্টিক, নর্ডিক ও মধ্য ইউরোপের দেশগুলো এখন পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা বিষয়ে আগের চেয়ে বেশি ন্যাটোমুখী। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য তাদের গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা অংশীদার। ফ্রান্স ও জার্মানি এ বিষয়ে নীরব।'
গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পোল্যান্ডে এসে সেই দেশের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, 'বৈশ্বিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষমতা আমেরিকার আছে।'
প্রতিবেদন অনুসারে, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পর থেকে পূর্ব ইউরোপের সদস্য দেশগুলোতে সেনা সংখ্যা ৪ গুণ বাড়িয়েছে। পাশাপাশি আরও ৩ লাখ সেনাকে প্রস্তুত রাখার ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
তবে ইউক্রেন যুদ্ধের আগে ইউরোপ নিজেদের প্রতিরক্ষা নিয়ে একতা দেখাতে পারেনি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) হাইরিপ্রেজেন্টেটিভ জোসেফ বোরেল বলেছিলেন, 'যারা আমাদের হুমকি দেয় তাদের ওপর চাপ সৃষ্টির ক্ষমতা আমরা রাখি। আমরা শক্তিশালী হচ্ছি।'
তবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সর্বসম্মতভাবে নিষেধাজ্ঞা দিতে ইইউকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। এমনকি ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা পাঠনোর বিষয়েও এই মহাদেশীয় জোটে বিভেদ দেখা গেছে।
গত জানুয়ারিতে জরিপ সংস্থা ইউরোস্কোপিয়া জানিয়েছে, অস্ট্রিয়ায় ৬৪ শতাংশ, জার্মানির ৬০ শতাংশ, গ্রিসের ৫৪ শতাংশ, ইতালি ও স্পেনের ৫০ শতাংশ মানুষ ভূমির বিনিময়ে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তিতে পৌঁছানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। সূত্র: যুগান্তর
ছবি সংগৃহীত
রাজনীতি একটি জাতির ভবিষ্যৎ ইতিহাস নির্ধারণ করে এবং সঠিক পথে পরিচালিত করে। যে জাতি অতীতের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান থেকে শিক্ষা নেয়, সেই জাতিই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নতুন সমাজ গড়ে তুলতে পারে। ইতিহাসের জ্ঞান ছাড়া কোনো জাতি সামনে এগোতে পারে না। সফলতা ও ব্যর্থতা—উভয়ই জাতীয় ইতিহাসের অংশ এবং সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমরা এমন একটি জাতি যারা ইতিহাস অধ্যয়ন পছন্দ করি না; বরং সেটিকে উপেক্ষা করে বারবার ভুল পথে হাঁটি। প্রতিবার ভুল করার সামর্থ্য কোনো জাতির থাকে না, কিন্তু আমরা দীর্ঘদিন ধরে তা-ই করে আসছি, কারণ আমরা ইতিহাসের জ্ঞানকে গুরুত্ব দিইনি।
ব্রিটিশ ভারতের মুসলমানরা আধুনিক শিক্ষার অভাবে পিছিয়ে ছিল। স্যার সায়্যিদ আহমদ এগিয়ে এসে মুসলমানদের মধ্যে আধুনিক শিক্ষার প্রসার ঘটানোর চেষ্টা করেন। একইভাবে স্যার সায়্যিদ আমীর আলী ও নবাব আবদুল লতিফ অবিভক্ত বাংলার মুসলমানদের জন্য কাজ করেন। কিন্তু পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি, যতক্ষণ না পাকিস্তানের জন্ম হয়।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যবিত্ত শ্রেণি নতুন শিক্ষার সুযোগ পায় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রদের জন্য উচ্চশিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে। এর ফলে এই অঞ্চলের ছাত্ররা পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রশাসনিক ক্যাডারে ও কেন্দ্রীয় সরকারে প্রবেশের সুযোগ পায়। মূলত এই মধ্যবিত্ত শ্রেণি এবং শিক্ষার্থীরাই বাংলাদেশের জন্ম সম্ভব করেছিল।
পূর্ব পাকিস্তানের অবহেলিত বাঙালি অভিজাত শ্রেণির দ্রুত উত্থান ঘটে, যা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ফলেই সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু আমরা সেই ইতিহাস ভুলে গেছি এবং তাদের অবদানকে যথাযথভাবে স্বীকার করিনি। এমনকি আমরা তাদের ন্যূনতম সম্মান জানাতেও ব্যর্থ হয়েছি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের তেমন প্রয়োজনীয়তা ছিল না। যদিও একসময় জগন্নাথ কলেজের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব উঠেছিল, তা ব্যর্থ হয়। সম্ভবত রাজনীতিবিদরা তখন সুবুদ্ধির পরিচয় দিয়েছিলেন এবং অতীতের সমাজ সংস্কারকদের প্রতি সম্মান দেখিয়েছিলেন।
কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের কাজটাই যেন সবচেয়ে আগে শুরু হয়। জিন্নাহ হলের নাম পরিবর্তন করে সূর্য সেন হল রাখা হয়, ইকবাল হলের পরিবর্তে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল নামকরণ করা হয়। সারাদেশেই এমন নাম পরিবর্তনের অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে।
সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে, কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় তাদের পাঁচটি হলের নাম পরিবর্তন করেছে এবং বেশিরভাগ হলের নতুন নামকরণ একটি নির্দিষ্ট পরিবারের সদস্যদের নামে করা হয়েছে। ইতিহাস বারবার ফিরে আসে, কিন্তু আমরা তা থেকে শিক্ষা নিতে পারি না।
একই ধরনের প্রতিহিংসামূলক রাজনীতির নজির আমরা দেখেছি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে তার বাড়ি থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হয় এবং বাড়িটি ভেঙে ফেলা হয় শুধুমাত্র প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। কিন্তু কিছু বছর পরেই ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি ঘিরে একই ধরনের প্রতিশোধমূলক রাজনীতি প্রত্যক্ষ করছি।
বাংলাদেশের সমাজে বিভাজনের বীজ বপন করা হয়েছিল স্বাধীনতার পরপরই। শেখ মুজিবুর রহমানের সময় থেকেই এই বিভাজন দৃষ্টিগোচর হয়, যা পরবর্তীতে আরো গভীর হয়েছে। বিশেষ করে সর্বশেষ ফ্যাসিবাদী শাসনামলে এটিকে প্রকাশ্যে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়েছে সমাজকে স্থায়ীভাবে বিভক্ত রাখার উদ্দেশ্যে।
সংস্কৃতি ও শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু ভারতীয় রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এ দুটি ক্ষেত্র পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। এর জন্য ভারতীয় স্বার্থরক্ষাকারী স্থানীয় এজেন্টরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছে এবং এখনো করছে।
গত পাঁচ দশকে আমরা জ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্রে চরমভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়েছি। আমাদের পেশাদার শ্রেণি আজকের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। ফলে আমরা ধীরে ধীরে মেধাহীন ও প্রতিভাহীন জাতিতে পরিণত হচ্ছি। এটি মূলত ভারতীয় আধিপত্যবাদী রাজনীতির ফলাফল।
উচ্চশিক্ষা থেকে ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব কমিয়ে দেওয়াটা আমাদের সমাজের জন্য বড় অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারে আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতা করতে পারছে না, কারণ তাদের ইংরেজির দক্ষতা অত্যন্ত দুর্বল। এটি একমাত্র ফ্যাসিবাদী শাসকদের ভুল নীতির ফলাফল।
২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী সাড়া দেয়নি, বরং কখনো কখনো আমাদের হতাশ করেছে। রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ পেয়েছে, এবং তারা যদি এই সুযোগ নষ্ট করে, তাহলে তা জাতির জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনবে। তাদের কর্মকাণ্ডই ভবিষ্যৎ ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে।
আমরা আশাবাদী, ভবিষ্যতে তাদের কাছ থেকে পরিপক্ব ও বাস্তবমুখী রাজনীতি দেখতে পাবো। কারণ, আজকের রাজনীতি আগামী দিনের ইতিহাস হয়ে উঠবে, এবং আমরা আর কোনো ভুল করার সুযোগ নিতে পারি না।