a
ফাইল ছবি: ম্যাথিউ মিলার
বাংলাদেশ সরকার বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। একই সঙ্গে আইনটিকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করারও আহ্বান জানিয়েছে।
সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থানের কথা জানান দেশটির মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
এ সময় তিনি আইন সংস্কার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের দীর্ঘদিনের প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানান।
প্রেস ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করে নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যায়ন সম্পর্কে জানতে চান। জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকে আমরা স্বাগত জানাই।
তিনি বলেন, আগেও আমরা বলেছি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে সমালোচকদের গ্রেফতার, আটক ও তাদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতে আইনটিকে রিভিউ করার জন্য সব পক্ষকে সুযোগ দিতে এবং তাদের মতামত এতে তুলে ধরতে বাংলাদেশ সরকারকে আমরা উৎসাহিত করছি।
ব্রিফিংয়ে আরেক সাংবাদিক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন আত্মস্বীকৃত খুনির বিষয়ে বলেন, একজন খুনি এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে। তাকে বাংলাদেশের হাতে ফেরত দেওয়া সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, প্রত্যাবর্তন বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না।
ম্যাথিউ মিলারকে আবারও প্রশ্ন করে ওই সাংবাদিক জানতে চান, সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। প্যাসিফিক জোন এবং বাংলাদেশ নিয়ে সেখানে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা?
এ প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, এ বিষয়ে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে তার বেশি আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। ওইসব মিটিংয়ের পরই আমরা সেই বিবৃতি দিয়েছি।
এর আগে সোমবার মন্ত্রিসভা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংস্কার করে নতুন একটি আইন করার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ নামটি পরিবর্তন করে তার বদলে নতুন নাম হবে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধিকাংশ ধারা নতুন আইনেও থাকবে। তবে বিতর্কিত বিভিন্ন ধারায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে দাবি করা হয়।
যেসব ধারা নিয়ে বেশি বিতর্ক ছিল, কয়েকটি ক্ষেত্রে সেগুলোর সাজা কমিয়ে আনা হবে। যেমন- ‘জামিন অযোগ্য’ কয়েকটি ধারাকে করা হয়েছে ‘জামিন যোগ্য’।
এ ছাড়া মানহানি মামলায় কারাদণ্ডের বিধান বাদ দিয়ে রাখা হবে শুধু জরিমানার বিধান। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে সাজা কমানো হবে। সূত্র: যুগান্তর
ছবি সংগৃহীত
সাইফুল আলম , ঢাকা: দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা প্রত্যেকটি নাগরিকের কর্তব্য হলেও দীর্ঘদিন ধরে এই দায়িত্ব পালন করে আসছে সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর থেকেই স্বার্থান্বেষী মহল নানা অঘটন ঘটানোর চেষ্টা করে আসছে। এরই অংশ হিসেবে দেশের ভেতরে ও সীমান্তে উদ্দেশ্য মূলক ভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্টের দিকে ধাবিত করা হচ্ছে সুপরিকল্পিত ভাবে। দেশের অভ্যন্তরে সাম্প্রতিক সময়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। মানুষ আজ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। নাগরিকদের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই।
এরই প্রেক্ষিতে সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ -এর উদ্যোগে আজ শুক্রবার ১৫ মার্চ ২০২৫ তারিখ বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের ১নং হলে "সার্বভৌমত্বের সুরক্ষায় জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা" শীর্ষক আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক মোঃ মোস্তফা আল ইহযায-এর সঞ্চালনা ও সমন্বয়ক মো: সাইফুল আলম সরকারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা আব্দুস সালাম মামুন এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মো: হাবিবুর রহমান হাবিব।
প্রধান আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, বিজিপি'র ভাইস চেয়ারম্যান মতিন, ক্যান্সার গবেষক ডা. সরওয়ার, মেজর জেনারেল আমছা আমিন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ এর চেয়ারম্যান কাজী মজিবর রহমান, লেঃ কর্ণেল ফরিদ আকবর (অব), বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মফিজুর রহমান, ড. আরিফ শাকি, ফয়েজ আহম্মেদ, প্রফেসর শাহজাহান সাজু, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র এডভোকেট মহসিন রশিদ, ডক্টর মালেক ফরাজি, এড. নূর মোহাম্মদ কীরণসহ জাতীয় রাজনীতিবিদ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক, সাবেক সেনা কর্মকর্তা, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিনিধি, ছাত্রপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পেশাজীবিবৃন্দ।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, আমরা ইতিপূর্বে দেখেছিলাম, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলো। কিন্তু চলমান পরিস্থিতি উপলব্ধি করলে তা কার্যকর হয়েছে বলা যাবেনা। আছিয়ার করুণ পরিণতি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আমাদের এ জনপদ শিশুদের জন্যেও অনিরাপদ। এমন ঘটনা প্রমাণ করে আমাদের সমাজে ও মস্তিষ্কে পচন ধরেছে। অবক্ষয় হয়েছে সামাজিক মূল্যবোধের। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলা একান্ত প্রয়োজন।
এই সময় বক্তাগণ আরও বলেন, এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্রের বীজবপন করছে ভারত, ছড়ানো হচ্ছে প্রতিহিংসা। ভারতীয়রা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দিয়ে রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে এবং ঐ অঞ্চলে অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে একটি প্রক্সি যুদ্ধ লাগানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। যা গত কিছুদিন যাবৎ দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা সমূহে ভারতীয় আগ্রাসন থেকে দৃশ্যমান হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে আরাকান আর্মির সুসম্পর্ক থাকায় আরাকান আর্মির মাধ্যমেও বাংলাদেশের সাথে প্রক্সি যুদ্ধ করানোর ষড়যন্ত্র করছে ভারত। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে আহবান জানান। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীদের নির্মূলে একটি সামরিক কমিশন গঠন ও বিশেষ অভিযান পরিচালনা করার আহবান জানান। এসময় পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় সাত দফা দাবি উপস্থাপন করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের সাত দফা দাবি সমূহ:
১. পার্বত্য চট্টগ্রামের ব্রিটিশ কোম্পানি ১৯০০ শাসনবিধি বাতিল করে, পার্বত্যাঞ্চলে স্বাধীন সাংবিধানিক শাসন প্রতিষ্ঠা করা। পার্বত্য অঞ্চলের সকল জাতির স্ব-স্ব সংস্কৃতি ও স্বকীয়তা রক্ষায় আলাদা কমিশন গঠন করা।
২. বৈষম্যমুক্ত দেশ গঠনের লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে পার্বত্যাঞ্চলে ভূমি জরিপ চালু করে ভূমিহীন ও ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ি/বাঙালিদের পার্বত্যাঞ্চলে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ।
৩. বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সকল জাতিসত্তাকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি তথা বাংলাদেশী বাঙালি/চাকমা/ত্রিপুরা/মারমা/ অন্যান্য হিসাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্তিকরণ।
৪. "শান্তি চুক্তি" নামক কালো চুক্তি বাতিল করে সংখানুপাতিক ভিত্তিতে সকল জাতিসত্তার সম-অধিকার নিশ্চিতকরণে সম্প্রীতি কমিশন গঠন।
৫. ১৯৮৯ সালে প্রবর্তিত পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন বাতিল করে নির্বাচনের মাধ্যমে পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন করা।
৬. পার্বত্য অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদ নির্মূলে সামরিক কমিশন গঠন এবং স্বাধীনতা পরবর্তী হতে অদ্যাবধি গণহত্যা সমূহের বিচার কার্য বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে সম্পন্ন করা।
৭. ২০১৮ সালের আদিবাসী শব্দ ব্যবহার বন্ধে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের পূর্ণ বাস্তবায়ন ও আদিবাসী স্বীকৃতির ষড়যন্ত্র স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা।