a
সংগৃহীত ছবি
করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় রোজ মৃত্যু বাড়ছে। শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও বেড়েই চলেছে। এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ দৈনিক মৃত্যু গতকাল একদিনে ১৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
দেশে কঠোর লকডাউন দিয়েও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। গতকাল ৮৬৬১ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার বেড়ে ২৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ।
এমতাবস্থায় চলমান সর্বাত্মক লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হতে পারে জানা গেছে। আজ অথবা আগামীকাল মঙ্গলবার লকডাউন বাড়ানোর বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে।
এ বিষয়ে রোববার রাতে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক এম ইকবাল আর্সলান বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা আগেই কমপক্ষে দুই সপ্তাহ লকডাউনের পরামর্শ দিয়েছিলাম। সুপারিশে আমরা বলেছিলাম করোনার সুফল পেতে হলে তিন সপ্তাহ লকডাউন আইডিয়াল, না হলে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ লকডাউন দিতে হবে।’
রোববার চলমান কঠোর লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। সরকার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক নয়। মৃত্যুর সংখ্যা এখনো একশ’র বেশি। তাই বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও বাড়ানোর বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।’
কতদিন বাড়তে পারে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে ৭ দিন বাড়তে পারে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘করোনায় যে হারে মৃত্যু ও আক্রান্ত হচ্ছে, বিধিনিষেধ বাড়ানো ছাড়া সরকারের কাছে অন্য কোনো পথ খোলা নেই।’
কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সুপারিশের আলোকে ২৮ জুন থেকে ৩০ জুন তিন দিন সীমিত পরিসরে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার।
এরপর ১ জুলাই থেকে দেশব্যাপী শুরু হয় কঠোর বিধিনিষেধ। যা শেষ হবে ৭ জুলাই। নতুন করে ৭ দিন সময় বাড়ানো হলে ১৪ জুলাই পর্যন্ত চলবে এই কঠোর বিধিনিষেধ।
গত ৩০ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে লকডাউনের বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে।
বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী। বিনা প্রয়োজনে বের হলেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। গত চারদিনে শুধু ঢাকায়ই সহস্রাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সূত্র: যুগান্তর
সংগৃহীত ছবি
সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়ে পরিবেশগত পরিবর্তনে আবহাওয়ার পরিবর্তন লক্ষ্যনীয়। বিশেষ করে জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন— বন্যা, খরা, সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি, নদী ভাঙন, ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বজ্রপাত ইত্যাদির প্রবণতা তুলনামূলক বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে কিছু দিন ধরে বজ্রপাতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি অতীতের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃদ্ধি জলবায়ুগত এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানের পরিবর্তনের ফলে ঘটে যাচ্ছে।
আবহাওয়াবিদ ও পরিবেশবিদদের মতে, এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের অন্যতম বড় কারণ হচ্ছে দূষণ। গাছ কেটে বহুতল নির্মাণ, গাড়ির ধোঁয়া, কলকারখানার ধোঁয়া, যেখানে সেখানে বছর ধরে নির্মাণকাজ চালিয়ে যাওয়ার কারণে অত্যধিক মাত্রায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। সেই তুলনায় গাছ লাগানো হচ্ছে না। মাত্রাতিরিক্ত দূষণের কারণে বাতাসে গরম ধূলিকণা বাড়ছে, যা বজ্রপাতের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে।
এদিকে বাতাসের উপরের পরিমণ্ডলে বর্ষার আগে পরে মে-জুন মাস নাগাদ প্রচুর জলীয় বাষ্প থেকে যাচ্ছে। যখনই উষ্ণ বায়ু উপর দিকে ওঠার চেষ্টা করছে, তখনই অন্যান্য বায়ু ও জলীয়কণার সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে বিদ্যুৎ তৈরি হচ্ছে। ফলে একেকটা জলীয় কণা ব্যাটারির মতো কাজ করছে অর্থাৎ বাজ পড়ছে।
আবহাওয়াবিদরা আরও জানাচ্ছেন, সাধারণত কিউমুলোনিম্বাস মেঘ থেকে বজ্রপাত ও বৃষ্টি হয়। সেই কারণে এই মেঘকে বজ্রগর্ভ মেঘও বলা হয়ে থাকে। গত কয়েক বছর ধরে এপ্রিল-জুন মাসে এই বজ্রগর্ভ মেঘের পরিমাণ বেড়েছে। তার একটা অন্যতম কারণ যেমন বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি, তেমনই আর একট কারণ, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া। আর এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকে দূষণ। দূষণের মাত্রা যত বাড়ছে, গড় তাপমাত্রা তত বাড়ছে।
ফলে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। তাছাড়া একটা ঘূর্ণিঝড় চলে যাওয়ার পর বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প থেকে যায়। সব মিলিয়ে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হওয়ার কারণে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি হচ্ছে।
বজ্রপাত থেকে বাঁচতে আমাদের করণীয়:
বজ্রপাতের সময় করণীয় সম্পর্কে প্রতিটি মানুষের উপস্থিত জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে যারা ঘরের বাইরে ক্ষেতখামারে কাজ করে তারা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। যেহেতু মেঘের নিম্নদেশের ঋণাত্মক চার্জ এবং পৃথিবীর ধনাত্মক চার্জের স্পার্কিংয়ের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরি হয় এবং এই ক্ষেত্রের মধ্যে যা কিছু পড়ে তা অতিরিক্ত তাপের কারণে পুড়ে যায়।
সেহেতু উঁচু স্থান অর্থাৎ উঁচু গাছ, ইলেকট্রিক পোল, মোবাইল টাওয়ার ইত্যাদি এরূপ বস্তুর সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে। কেননা যে স্থান বা বস্তু যত উঁচু সে স্থান মেঘের তত সন্নিকটে থাকায় বজ্রপাতের সম্ভাবনা তত বেশি হয়ে থাকে।
দুর্যোগ আবহাওয়ায় বাড়ির ছাদ কিংবা উঁচু স্থানে অবস্থান করলে দ্রুত সেখান থেকে নেমে নিরাপদ স্থানে যেতে হবে। মৌসুমে ঘনকালো (ঝড়মেঘ) মেঘ দেখলেই সাবধান হতে হবে এবং বৃষ্টি শুরুর আগে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে।
পাকা বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া বেশি নিরাপদ। তবে পাকাবাড়ি সুউচ্চ হলে সেক্ষেত্রে বজ্র নিরোধক ব্যবস্থা থাকতে হবে। বজ্রপাতের সময় জানালার কাছে না থাকাই ভালো। পায়ে রাবারের স্যান্ডেল পরে থাকা এবং পানি ও যে কোনো ধাতববস্তুর যেমন সিঁড়ির বা বারান্দার রেলিং, পানির কল ইত্যাদির স্পর্শ থেকে বিরত থাকা নিরাপদ। বিদ্যুৎ পরিবাহী যে কোনো বস্তুর স্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে। পুকুর বা জলাশয়ে থাকা নিরাপদ নয়।
বজ্রপাতে বাড়ির ইলেকট্রনিক্স জিনিসপত্র যেগুলো ইলেকট্রিক সংযোগ বা ডিসের সংযোগ থাকে সেগুলো বিচ্ছিন্ন করা ভালো। নতুবা পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ছাড়া এগুলো বন্ধ থাকলেও স্পর্শ থেকে বিরত থাকতে হবে।
মাঠের মধ্যে ফাঁকা জায়গায় থাকলে যদি বজ্রপাত হওয়ার অবস্থা তৈরি হয় তাহলে কানে আঙ্গুল দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিচু হয়ে বসে থাকতে হবে। তবে মাটিতে শোয়া পড়া যাবে না, কেননা মটিতে শুয়ে পড়লে বিদ্যুৎ পৃষ্ঠ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
গাড়িতে থাকা অবস্থায় বজ্রপাতের পরিস্থিতি তৈরি হলে গাড়ির মধ্যে থাকায় নিরাপদ। তবে মনে রাখতে হবে গাড়ির ধাতব কোনো অংশের সংস্পর্শ থেকে বিরত থাকতে হবে।
টিনের বাড়ির চেয়ে ছনের বাড়ি এমনকি কংক্রিটের দালান বাড়ি বেশি নিরাপদ। তবে সব বাড়িকে দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শক্রমে বজ্র নিরোধক ব্যবস্থা লাগাতে হবে। যেসব বাড়িতে বৈদ্যুতিক সংযোগ রয়েছে সেগুলোর সংযোগের সময় আর্থিং ব্যবস্থা সঠিকভাবে স্থাপন করতে হবে।
তাল জাতীয় সুউচ্চ প্রজাতির গাছ প্রচুর পরিমাণে মাঠের মধ্যে লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে। বজ্রপাতে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা বৈদ্যুতিক শকে আহত ব্যক্তিদের মতো চিকিৎসা দিতে হবে। শরীর থেকে দ্রুত বৈদ্যুতিক চার্জ অপসারণের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে। বজ্রপাতে আহত ব্যক্তির অস্বাভাবিক আচরণে বিচলিত না হয়ে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
ছবি সংগৃহীত
দেশের কঠিন অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে আবাসনশিল্প। এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৩ শতাধিক ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ বা সহযোগী শিল্পও ভালো নেই। সব মিলিয়ে আবাসনশিল্পের ৪৫৮ উপখাত ঝুঁকিতে রয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশের আবাসন খাতে চলছে ভয়াবহ অস্থিরতা। আতঙ্কিত ক্রেতারা টাকা হাতছাড়া করতে নারাজ। প্লট ও ফ্ল্যাটের কিস্তি পরিশোধ বন্ধ। নেই টাকার সরবরাহ। এমন পরিস্থিতিতেও আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাংক কোনো সহযোগিতা করছে না। অসংখ্য ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধের হুমকিতে পড়েছে। সব মিলিয়ে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা। জানা গেছে, সরাসরি অর্ধ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে আবাসনশিল্পে। আর এই শিল্পের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রায় ২ কোটি মানুষ নির্ভরশীল।
আবাসনশিল্প মালিকদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-রিহ্যাব জানিয়েছে, দেশে সাম্প্রতিক সময়ে নির্মাণসামগ্রীর মূল্য অনেক বেড়েছে। প্লট আর ফ্ল্যাট বিক্রি এখন শূন্যের কোঠায়। ক্রেতাদের কিস্তি পরিশোধও বন্ধ। নেই টাকার সরবরাহ। ফলে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন উদ্যোক্তারা। অনেক ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার হুমকিতে পড়ায় ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন। উদ্যোক্তারা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপসহ উন্নত দেশগুলোতে আবাসন খাতে ১ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশে ক্রেতাদের জন্য সেই ব্যবস্থা নেই। তাই চলমান এই সংকট উত্তরণে আবাসন খাতের ক্রেতাদের জন্য স্বল্প সুদের বিশেষ ঋণ তহবিল গঠন করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে রিহ্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া মিলন গণমাধ্যমকে বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা এখন খারাপ। ক্রেতারা কিস্তি দিতে পারছেন না। ক্রেতারা টাকা ধরে রেখে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। ইতোমধ্যে আবাসন শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি ও সমস্যা সমাধানে বর্তমান সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছে রিহ্যাব। সরকারও সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে। এই রিহ্যাব নেতা আরও বলেন, বর্তমানে প্লট ও ফ্ল্যাটের অত্যধিক রেজিস্ট্রেশন খরচ কমানোর বিষয়ে খুব দ্রুত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের সঙ্গে বৈঠক করবে রিহ্যাব। পাশাপাশি এই সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্পের সর্বশেষ ক্ষয়ক্ষতি জানতে এবং করণীয় নির্ধারণে শিগগিরই বৈঠক করবে রিহ্যাব।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন- এফবিসিসিআই পরিচালক ও জেসিএক্স ডেভেলপমেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল হোসেন চৌধুরী জুয়েল বলেন, গত তিন মাস ধরে কিস্তি পরিশোধ বন্ধ করে দিয়েছেন ক্রেতাদের অনেকে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ক্রেতা তাদের অর্ডার (ক্রয় আদেশ) বাতিল করেছেন। কেউ কেউ কিস্তি দিচ্ছেন অনিয়মিত।
এ ব্যবসায়ী নেতা জানান, গত সেপ্টেম্বর মাসে ১৫ থেকে ২০টি ফ্ল্যাট বিক্রি হলেও চলতি মাসে দু-একটিতে এসেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আবাসনসহ এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য ব্যবসায়ও ধস নামবে। ফলে বেকার হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া বেড়েছে ঋণের সুদ। তৈরি হয়েছে তারল্য সংকট। চাহিদার তুলনায় কমেছে ঋণ। ফলে আবাসন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নামবে। কমে যেতে পারে মোট জাতীয় উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি। যত দ্রুত সম্ভব তারল্য সংকট দূর ও ঋণের সুদ কমাতে হবে। জনসাধারণের মধ্যে সৃষ্ট আতঙ্ক দূর করে আস্থা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। আবাসনশিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানির জটিলতাও দূর করতে হবে। প্লট ও ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন খরচ কমাতে হবে।
রিহ্যাব বলছে, ২০১০-২০১২ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ১৫ হাজারের কাছাকাছি ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি হয়েছে। ২০১৩-২০১৬ পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে বিক্রি হয় ১২ হাজারের বেশি ফ্ল্যাট। ২০১৭-২০২০ পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ১৩-১৪ হাজার ফ্ল্যাট বিক্রি হয়। ২০২০ সালের জুলাই-২০২২ সালের জুন পর্যন্ত প্রতি বছর ১৫ হাজারের কাছাকাছি ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছে। এরপর নির্মাণ উপকরণের মূল্যবৃদ্ধিতে ফ্ল্যাটের বিক্রি কমে আসে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিক্রি হয় ১০ হাজারের কাছাকাছি ফ্ল্যাট। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আরও কমে সেটি ১০ হাজারের নিচে অবস্থান করছে। এতে দেখা যায়, ফ্ল্যাটের চাহিদা দিন দিন কমেছে। এর সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে ও পরের কঠিন অর্থনৈতিক সংকটে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে আবাসনশিল্প।
রিহ্যাব জানায়, মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের আবাসন সুবিধা সহজলভ্য করার জন্য সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন। একসময় এই সিঙ্গেল ডিজিট সুদের ঋণ প্রদান ব্যবস্থা চালু ছিল। তখন অনেক মধ্যবিত্ত সিঙ্গেল ডিজিট সুদের ঋণ নিয়ে ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন। মধ্যবিত্তের আবাসনের স্বপ্ন পূরণ করতে এবং আবাসন খাতে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে একই ধরনের ব্যবস্থা আবারও গ্রহণ করা প্রয়োজন। বালাদেশে ফ্ল্যাট নিবন্ধন ব্যয় সার্কভুক্ত দেশ এমনকি উন্নত বিশ্বের মধ্যেও সবচেয়ে বেশি। রেজিস্ট্রেশন ব্যয় কম হলে, ক্রেতারা দলিলে সঠিক মূল্য দেখাতে উৎসাহিত হবেন। সরকারও সঠিক রাজস্ব পাবে।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ- সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষক ও অর্থনীতিবিদ তৌফিকুল ইসলাম বলেন, আবাসন খাত এখন দেশের সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নেই। এমনকি মধ্যবিত্তরাও ফ্ল্যাট কিনতে পারছেন না। উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশে আবাসন খাতের ক্রেতাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সুবিধা নেই। আবার দেশের অর্থনীতিও কঠিন পরিস্থিতিতে আছে। ফলে চলমান পরিস্থিতিতে আবাসন খাত ধাক্কা খাচ্ছে।
জানা গেছে, দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাবে ইট, বালু, রড, সিমেন্ট, কনস্ট্রাকশন, স্যানিটারি, সিরামিক, গ্লাস, অ্যালুমিনিয়াম, ক্যাবল ও লাইটিং শিল্পের মতো ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ খাত দুশ্চিন্তায় রয়েছে। চরম ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে লাখ লাখ নির্মাণ শ্রমিকের কর্মসংস্থান। সব মিলিয়ে আবাসনশিল্পের ৪৫৮ উপখাতে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমেছে। এর মধ্যে রড, সিমেন্ট, তার, স্যানিটারি, তালা, চাবি, বোর্ড, দরজা অন্যতম। এ হিসেবে হিসাব করলে জিডিপির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে আবাসন খাত। নির্মাণসামগ্রীর দাম কমলে মানুষ আবার এ খাতে বিনিয়োগে আসতে পারে।
আবাসনশিল্প সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, এ খাতে জড়িত ৩ শতাধিক ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ বা সহযোগী শিল্প খাত রয়েছে। আর ১৮ খাতে বিভক্ত পণ্যভিত্তিক উপখাত হলো ৪৫৮টি। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো- রড, সিমেন্ট, রেডিমিক্স, ইট, পাথরসহ ১১টি উপখাত নিয়ে সিভিল খাত। ক্যাবল, সার্কিট ব্রেকার, সুইচ-সকেট, মিটার, লাইট মিলিয়ে ৩০টি উপখাতের ইলেকট্রিক খাত। উড, দরজা, লকসহ ২৫টি উপখাত নিয়ে উড খাত। পাইপ, গ্লাস, ট্যাব, ফিটিংস, ওয়াটার পাম্প নিয়ে ২০টি উপখাতের প্লাম্বিং খাত। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রকারের টাইলস, মার্বেল, স্টোন, মোজাইক চিপস ইত্যাদি ১৩টি উপখাত নিয়ে টাইলস খাত। কমোড, বেসিন, বাথট্যাব, হ্যান্ড শোয়ার, কানেকশন পাইপ, গ্রেটিংসহ ৩৩টি উপখাত নিয়ে স্যানিটারি খাত। পেইন্ট, ফোম ল্যাব, বুন্স অ্যান্ড পোলিশ নিয়ে ৬টি উপখাতের পেইন্ট খাত। সুরকি, কেমিক্যাল, অ্যাডমিক্সার, স্টোনসহ ৬টি উপখাত। ফ্লোর ব্রোম, হেয়ার ব্রুশ, সেফটি নেট, রয়েল প্লাগ, প্লামব্রুশ, হস পাইপ, প্যাড লক, মাসকিন ট্যাব ইত্যাদি ৯৭টি উপখাত নিয়ে হার্ডওয়্যার খাত। লিফট, সাব-স্টেশন, সোলার সিস্টেম, জেনারেটর, ইন্টারকমসহ ১৮টি উপখাতের ইলেকট্র্রিক খাত। অ্যালুমিনিয়াম, গ্রিল, ফায়ার ডোর, স্টিল অবকাঠামো, স্কাই লাইট, এলপিজি সিস্টেম, সুইমিংপুল ইত্যাদি নিয়ে ৬৪টি উপখাতের সাব-কন্ট্রাক্ট খাত। এক্সকেভেটর, লিট ট্রাক, রোড রোলার মেশিন, বুলডুজার, ডাম্প ট্রাকস, পাইপ ড্রাইভিং মেশিনসহ ১৯টি উপখাতের কনস্ট্রাকশন মেশিনারিজ খাত। সিভিল, ইলেকট্রিক্যাল, স্যানিটারি, টাইলস, পেইন্টম সয়েল টেস্ট, পাইল ওয়ার্ক নিয়ে ২৬টি উপখাতের শ্রম খাত। এ ছাড়াও ভূমি উন্নয়ন, প্রশাসনিক, হোম এপ্লিক্যান্স ও অফিস স্টেশনারি খাতে আরও ৯০টি উপখাত জড়িত আবাসনশিল্পের সঙ্গে। এসব খাতে ২ হাজারেরও বেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ এখন হুমকিতে পড়েছে। ওই ৩ শতাধিক ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্পের মধ্যে রয়েছে- ২৭টি কনস্ট্রাকশন সামগ্রী খাত। ৪৩টি বাথ ও কিচেন ফিটিংস পণ্যসামগ্রী উৎপাদন ও সরবরাহকারী খাত। আরও আছে- ৪৪টি ইলেকট্রিক্যাল, ৪৪টি ফার্নিচার, ১৮টি সাফেচ ফার্নিশিংসহ আরও অনেক ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্প। ৩ শতাধাকি ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ বা সহযোগী শিল্প খাতের মধ্যে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলছে- দেশের সিমেন্ট, রড, স্টিল ও রি-রোলিং মিলস, সিরামিক ও টাইলস, কেমিক্যালস, ইট, বালু, পাথর, রং, পিভিসি পাইপ, উড, গ্লাস, অ্যালুমিনিয়াম, কিচেন ফিটিংস, গ্যাস স্টোভ, ওয়াটার হিটার, আয়রন, ফ্লাসিং ইকুইপমেন্টস, বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন, ট্রান্সফরমার, লাইট, ক্যাবলস, ফ্যান, এয়ার কন্ডিশনার, এয়ার কুলার, বিল্ডিং ইস্টুলেশন, গ্লাস ডোর, টিমবার, ইলেকট্র্রিক্যাল সিকিউরিটি ডোর, বিল্ডিং সেফটি, মোজাইক, পেইন্ট, সিরামিকের বিভিন্ন পণ্য, বিভিন্ন ধরনের পাইপ, ফিটিংস, ক্যাবলস, কাচ ও কাচজাতীয় অন্যান্য পণ্য, পাথর ও পাথরজাত পণ্য, পেইন্ট, লোহাজাতীয় বিভিন্ন পণ্য, আসবাবপত্র ও কাঠজাত বিভিন্ন পণ্য, প্লাইউড, বৈদ্যুতিক ফিটিংস ও অন্যান্য সামগ্রী, নির্মাণকাজের যন্ত্রপাতি, আঠাজাতীয় বিভিন্ন পণ্য, স্টিলজাত পণ্য, অ্যালুমিনিয়াম খাতের মতো ৩ শতাধিক ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ বা সহযোগী শিল্প। আবাসন খাত হুমকিতে পড়ায় বিপর্যয় নেমেছে ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্পেও। এসব খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, আবাসন খাত সচল হলেই ঘুরে দাঁড়াবে লিঙ্কেজ শিল্প। এ ছাড়াও আবাসন কোম্পানিগুলোতে ২০ হাজার নির্মাণকাজ ব্যবস্থাপক, ১০ হাজার ডিপ্লোমা প্রকৌশলী, ৩ হাজার স্নাতক প্রকৌশলী এবং প্রায় ৫০০ স্থপতি নিয়োজিত আছেন। সূত্র: বিডি প্রতিদিন