a
ফাইল ছবি । মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ওবায়দুল কাদের, হাছান মাহমুদের কথায় এখন ঘোড়াও হাসে, সবাই হাসে। নতুন পন্থায় তারা বিএনপিকে নিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করছে। তাদের কথার উত্তর দিতে চাই না।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় বুধবার (৯ জুন) দুপুরে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, তারা কী যে বলে নিজেরাও জানে না। তারা মিথ্যা বলে। অবলীলায় ঠান্ডা মাথায় হাছান মাহমুদরা বিএনপিকে নিয়ে মিথ্যা বলেন।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এমনি এমনি ক্ষমতায় কেউ এনে দেবে না। স্বৈরাচারী কায়দায় বর্তমান সরকার ক্ষমতা আঁকড়ে আছে। নির্বাচনে তারা জয়ী হতে পারবে না জেনেই ক্ষমতাসীনরা নির্বাচন নির্বাচন খেলা করে নিজেরাই জয়ী হয়ে বসে আছে।
ছবি সংগৃহীত
কর্নেল(অব.) আকরাম: কটি জাতির জন্য পদ্ধতি বা ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং একটি সরকারি ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু ফরাসি বিপ্লবের পর থেকে আমরা বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে সংঘাত দেখতে পাচ্ছি। বিশ্বে অতীতে বিভিন্ন পদ্ধতির অভিজ্ঞতা রয়েছে। পশ্চিমে রাজতন্ত্র ও রাজপ্রথা এবং পূর্বে খিলাফত ব্যবস্থা ছিল, কিন্তু উভয় ব্যবস্থাই এখন বিলুপ্ত।
বর্তমান সময় গণতন্ত্রের যুগ এবং এটি এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বে সর্বোত্তম সরকারি ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচিত। একটি দেশের সংবিধান সরকারের গঠন ও কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধান নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল, কিন্তু এটি জনগণের ভালো শাসনের উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। এটি বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণেও ব্যর্থ হয়েছে।
জনগণের অধিকার ও আকাঙ্ক্ষার বিষয়ে আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা খুব একটা ইতিবাচক নয়। বর্তমান সংবিধানে নাগরিকদের অধিকার সম্পর্কে অনেক ভালো বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হলেও তা কখনই বাস্তবায়িত হয়নি। উপরন্তু অতীতে দেশের জনগণকে শাসকদের দ্বারা সব সময়ই হয়রানি ও চাপের মুখে রাখা হয়েছে।
যেহেতু দেশের বেশিরভাগ জনগণ মুসলিম, তাই তাদের প্রত্যাশা সংবিধানে প্রতিফলিত হওয়া উচিত। জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং নাগরিকদের এমন একটি ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের প্রশাসনে সক্রিয় ভূমিকা পালনের সুযোগ দিতে হবে যা তাদের জন্য উপযুক্ত। একটি টেকসই কল্যাণমুখী সমাজ গঠনের জন্য এই ব্যবস্থাকে অর্থবহ ও ব্যবহারিক করে তুলতে গভীর গবেষণা এবং সুচিন্তিত পরিকল্পনা প্রয়োজন।
দেশের জনগণ সংবিধানে আর কোনো মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেখতে প্রস্তুত নয়, বরং তারা একটি সত্যিকারের কল্যাণ রাষ্ট্রের দিকনির্দেশনা চায়। একটি জাতি মূলত তার সংবিধানের মাধ্যমেই গঠিত হয় এবং এটি যথাযথ যত্ন ও বিচক্ষণতার সাথে করা উচিত। রাতারাতি কোনো ভালো ফলাফল অর্জিত হয় না। আমরা অতীতে ভয়াবহ দুর্ভোগের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি এবং কোনো অশুভ ভবিষ্যৎকে আমরা প্রশংসা করব না। ভবিষ্যতে যেকোনো ব্যবস্থা সংক্রান্ত উদ্যোগে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চেতনা ও আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হওয়া উচিত। আমাদের জনগণ সবচেয়ে বেশি কষ্টভোগ করছে এবং তারা তাদের দুর্ভোগের অবসান চাইছে।
২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব নিঃসন্দেহে জাতিকে বর্তমান সংবিধানের উপযোগিতা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার সুযোগ তৈরি করেছে। এদিকে জাতি দুটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এক শিবিরে রয়েছে বিএনপি এবং অন্যটিতে রয়েছে সিএনসি, একটি নতুন ছাত্রনেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল। জামাত সম্ভবত এনসিপির পদক্ষেপের পক্ষে থাকবে। সংবিধান ও শাসন ব্যবস্থা নিয়ে দুটি শিবিরের মধ্যে একটি সত্যিকারের সংঘাতের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
উভয় পক্ষই অনমনীয় ও একগুঁয়েমী বলে মনে হচ্ছে এবং সমস্যা সমাধানের জন্য পারস্পরিক সমঝোতার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এদিকে এনসিপির নেতারা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে শাসন ব্যবস্থা নিয়ে বাংলাদেশে নিকট ভবিষ্যতে একটি রাজনৈতিক সংঘাত হতে পারে। সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন যে দেশটি যুদ্ধের পরিবেশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
১৯৭২ সাল থেকে আমরা কখনই সত্যিকারের স্বাধীনতা অনুভব করতে পারিনি এবং ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা শাসনামলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে যখন আমরা আমাদের নিজ দেশের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছি। গত পনেরো বছর ধরে ভারত বাংলাদেশের মালিক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। মনে হচ্ছে আমরা আমাদের ইতিহাসের সাম্প্রতিক অতীত ভুলে গেছি এবং তাদের অনুগ্রহ পাওয়ার চেষ্টা করছি।
ঐক্যের মাধ্যমে অর্জিত সাফল্য এখন মারাত্মক হুমকির মুখে এবং এটি মোকাবেলা করার জন্য আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। পরাজিত শত্রুরা এই অস্থির পরিস্থিতিকে তাদের সুবিধা নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করবে না। আমরা সম্পূর্ণ জেনেশুনেই আমাদের নিজেদের পায়ে কুড়াল মারতে চলেছি। আমরা কি এতই মূর্খ যে সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলোর পরেও আমাদের জাতীয় স্বার্থ বুঝতে পারছি না?
এনসিপির প্রত্যাশা অনুযায়ী দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্রের বিষয়ে একটি জাতীয় সংলাপ হোক। আসুন আমরা আমাদের প্রত্যাশার বিষয়ে বাস্তববাদী ও ব্যবহারিক হই। প্রতিটি শিবিরকে ধৈর্য ধরতে হবে এবং পরিপক্কতা ও বিচক্ষণতার সাথে কাজ করতে হবে। সবকিছু রাতারাতি করা যায় না। আমরা নতুন বাংলাদেশে ভবিষ্যতে একটি সুস্থ রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার সংস্কৃতি দেখতে চাই। আমাদের আর জনগণকে ভণ্ডামির রাজনীতির শিকার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
ছবি সংগৃহীত
নিউজ ডেস্ক: প্রতিদিন আমাদের যে সংকটগুলোর মুখোমুখি হতে হয়, সেগুলো দক্ষতা এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে সামাল দেওয়ার জন্য ভালো ও যোগ্য নেতৃত্ব অপরিহার্য। অন্যথায়, এক সংকট আরেক সংকটের জন্ম দেবে এবং শেষ পর্যন্ত তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। যদি নেতৃত্ব সংকট মোকাবেলায় যথেষ্ট দক্ষ না হয়, তাহলে সংকটের পরিণতি সমাজের জন্য মারাত্মক হয়ে দাঁড়াবে এবং সমাজ যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে।
আমরা জাতি হিসেবে শুরু থেকেই বহু সংকটের মধ্য দিয়ে গিয়েছি এবং এর মূল্যও চোকাতে হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে দুই প্রেসিডেন্টের হত্যাকাণ্ড। উভয় ক্ষেত্রেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতা উপেক্ষা করা যায় না। ২০০৫ সালের আগস্টের ঘটনা এবং ২০০৯ সালের বিডিআর হত্যাকাণ্ড আমাদের সমাজকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। অনেকেই মনে করেন, এই দুটি ঘটনায় ভারত সরাসরি জড়িত ছিল।
সংকট ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ এবং এটি পরিচালনার জন্য পেশাদার ও অভিজ্ঞ লোকজনের প্রয়োজন। কিন্তু প্রতিবারই আমরা সংকটের মূল কারণ চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছি। এটি একটি জাতীয় ব্যর্থতা এবং এখনো পর্যন্ত আমরা একটি কার্যকর সংকট ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি।
সম্প্রতি, আমরা ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে সরকার গঠনের প্যাটার্ন নির্ধারণ নিয়ে নতুন সংকট প্রত্যক্ষ করেছি। আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল নিজেই স্বীকার করেছেন যে, বিপ্লব পরবর্তী সময়ের জন্য উপযুক্ত সরকার গঠনের বিষয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটি একটি গুরুতর ভুল এবং সংকট মোকাবেলায় ইতিহাসের জ্ঞান অপরিহার্য।
এই সময়ে একটি জাতীয় বা বিপ্লবী সরকার গঠিত হওয়া উচিত ছিল, যেখানে ড. ইউনুস রাষ্ট্রপতি বা প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে এবং কর্নেল (অব.) অলি আহমদ রাষ্ট্রপতি বা প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। উপদেষ্টাদের বেশিরভাগ বিএনপি থেকে এবং কিছু উপদেষ্টা অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সমন্বয়কদের মধ্যে থেকে নির্বাচিত হওয়া উচিত ছিল।
সময় এখনো শেষ হয়ে যায়নি। দ্রুত এই উদ্যোগ নেওয়া গেলে নির্বাচন এবং সংস্কার সংক্রান্ত অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক ও সংকট বন্ধ করা সম্ভব হবে।
জাতিকে একত্রিত হয়ে জাতীয় সংকট মোকাবিলা করতে হবে এবং এটিই উচ্চ পর্যায়ের সংকট ব্যবস্থাপনার আদর্শ রূপ।
সম্প্রতি আমরা একের পর এক সংকটের সম্মুখীন হচ্ছি, কিন্তু কার্যকর সমাধান দেখা যাচ্ছে না। এটি স্পষ্টভাবে আমাদের নেতৃত্বের অযোগ্যতার প্রতীক।
সচিবালয়ে আনসার বাহিনীর সাম্প্রতিক সংকট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য সরাসরি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র সমন্বয়কদের হত্যা আরও একটি অশনি সংকেত। বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা প্রশাসনকে অস্থিতিশীল করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সংকটের মুখে ফেলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারা যেকোনো সময় ধর্মঘটের ডাক দিয়ে সরকারকে পঙ্গু করতে পারেন।
সচিবালয়ের ভবনে সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বর্তমান সরকারকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, সরকারের ভেতরেই বিরোধী শক্তি রয়েছে এবং তারা সরাসরি সরকারের মূল অংশে আঘাত হানতে সক্ষম।
এই সংকটগুলো আমাদের কাছে পরিষ্কার সংকেত দেয় যে, সরকারি যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে কাজ করছে না। এগুলো সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করা সক্রিয় শক্তির চিহ্ন, যারা বহুমাত্রিক সংকট সৃষ্টি করতে পিছপা হবে না। ভারতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তারা আমাদের জন্য বিশাল সমস্যা তৈরি করবে এবং সরকারকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করবে।
ভবিষ্যতের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সংকট মোকাবিলার জন্য আমাদের কী প্রস্তুতি রয়েছে, সেটি এখন সবার উদ্বেগের বিষয়। সংকট মোকাবেলায় পরিপক্বতা ও প্রজ্ঞার সঙ্গে আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
পলাশীর যুদ্ধের পর লর্ড ক্লাইভ যদি মাত্র কয়েকজন ইংরেজ অফিসার নিয়ে প্রশাসন চালাতে পারেন, তাহলে আমরা কেন পারব না? জিয়াউর রহমান আমাদের সামনে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি সীমিত সংখ্যক পেশাদার সামরিক ও বেসামরিক অফিসারের সহায়তায় প্রশাসন দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করেছিলেন। বহুমুখী সমস্যা মোকাবিলা করেও তিনি অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে তা দূর করেছিলেন এবং আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল নেতা হিসেবে স্বীকৃত।
আমাদের এখনো এমন কিছু উজ্জ্বল বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা জিয়াউর রহমান ও এরশাদের সঙ্গে কাজ করেছেন। তাদের খুঁজে বের করে জাতির জন্য কাজে লাগানো উচিত।
সরকারের কার্যকারিতা, গতিশীলতা এবং পেশাদারিত্ব বাড়ানোর জন্য মন্ত্রিসভায় দ্রুত পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিতে হবে এবং অভিজ্ঞ ও দক্ষ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন এবং বিজয় আমাদেরই হবে, ইনশাআল্লাহ।
লেখক: সম্পাদক, সামরিক ইতিহাস জার্নাল এবং আইন ও ইতিহাসের অধ্যাপক