a বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে যে কারণে রণক্ষেত্র পরিণত
ঢাকা শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২, ২১ নভেম্বর, ২০২৫
https://www.msprotidin.com website logo

বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে যে কারণে রণক্ষেত্র পরিণত


এমএস.প্রতিদিন ডেস্ক:
বৃহস্পতিবার, ১৯ আগষ্ট, ২০২১, ১০:৫৫
বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে যে কারণে রণক্ষেত্র পরিণত

ফাইল ছবি

বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে সাঁটানো অবৈধ ব্যানার-বিলবোর্ড-প্লাকার্ড অপসারণকে কেন্দ্র করেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয় উপজেলা পরিষদ এলাকা। তিন দফা গুলি ও দফায় দফায় লাঠিচার্জে আহত হন বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) প্যানেল মেয়র, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের পদদিধারী নেতাসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। কোতয়ালী মডেল থানার ওসি গুলিবিদ্ধ হন। আহত হন জেলা আনসার কমান্ডারসহ পুলিশের দুইজন সদস্য। এ ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান ও জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার। 

অপরদিকে, এ ঘটনাকে উদ্দেশ্যমূলক দাবি করে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত দাবি করেছেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস ও মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর। এদিকে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ ঘটনার বিচার চেয়েছেন সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। 

সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস বলেন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশ নগরীর অবৈধ ব্যানার-বিলবোর্ড অপসারণ চলছিল। 

বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিসিসি কর্মীরা উপজেলা পরিষদ চত্বরের বিলবোর্ড অপসারণ করতে গেলে তাদের বাঁধা দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। একপর্যায়ে তিনি বিসিসি কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং সরকারি কাজে বাধা দেন। এ নিয়ে বাদানুবাদের একপর্যায়ে আনসার সদস্যরা আমাদের কর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি করে। এতে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরের বাসিন্দা মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য হারুন অর রশিদ বলেন, সিটি করপোরেশনের কর্মীদের ওপর গুলির খবর পেয়ে মেয়র ঘটনাস্থলে গেলে তাকেসহ নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে ফের গুলি করেন আনসার সদস্যরা। এতে তিনিসহ (হারুন) বেশ কয়েকজন আহত হন। 

মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, মানববর্ম করে মেয়রকে গুলির হাত থেকে রক্ষা করে, তাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেন তারা। এরপর দফায় দফায় গুলি ও লাঠিচার্জ করে আওয়ামী লীগের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ২৩ জনকে শের-ই বাংলা মেডিকেলেসহ অন্যান্যদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা। তাদের মধ্যে ২৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মনির হোসেন পেশকারের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আহক শ্রমিকলীগ কর্মী নাসির আলমসহ পুলিশের দুই সদস্যকে ভর্তি করা হয় জেলা পুলিশ হাসপাতালে। কোতয়ালী থানার ওসি মো. নুরুল ইসলামের বুকেও একটি স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়েছে। তবে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হননি।

হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান বলেন, গুলিবিদ্ধ ২৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে মনির নামে একজনের চোখে গুলি লেগেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের চিকিৎসা চলছে। 

এদিকে রাত ২টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান, রেঞ্জ ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামান এবং জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দারসহ অন্যান্যরা। 

এ সময় তাদের সামনে প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান। তিনি বলেন, রাতে ব্যানার অপসারণে বাধা দেওয়ায় কিছু লোক তার ওপর চড়াও হয়। তাদের হামলার হাত থেকে বাঁচতে গুলি করে আনসার সদস্যরা। তখন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হাসান মাহমুদ বাবুকে টেনে তিনি তার সরকারি বাসভবনে নিয়ে যান।

এ ঘটনা খতিয়ে দেখার কথা বলেন বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার। তদন্তে যে বা যারা দোষী হবেন তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন তিনি। 

মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে উদ্ভুত পরিস্থিতি তাৎক্ষণিক মোকাবিলা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আটক করা হয়েছে কয়েকজনকে। তবে তাদের সংখ্যা জানাতে পারেননি তিনি। এ ঘটনায় মামলা দায়েরসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান পুলিশ কমিশনার। 

অপরদিকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনাকে উদ্দেশ্যেমূলক বলে দাবি করেছেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসায় হামলার অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে এ ঘটনায় সাংগঠনিক ও আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর। 

সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বলেন চোখের সামনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিবিদ্ধ হতে দেখে তিনি ব্যথিত। তিনি এ ঘটনায় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার দাবি করেন। সূত্র: বিডি প্রতিদিন

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

আরও পড়ুন

রাজধানীর যেসব থানাগুলো করোনায় উচ্চ ঝুঁকিতে


এমএস.প্রতিদিন ডেস্ক:
রবিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২১, ০৫:১১
রাজধানীর যেসব থানাগুলো করোনায় উচ্চ ঝুঁকিতে

ফাইল ছবি

রাজধানীর অন্তত ১৯টি থানা কোভিড-১৯ সংক্রমণের ক্ষেত্রে উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এসব থানায় শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের উপরে। এরমধ্যে রূপনগর ও আদাবরে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (আইএসএস) করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণ করে শনিবার গণমাধ্যমকে বিষয়টি জানিয়েছে আইইডিসিআর।

আইইডিসিআর বলছে, উত্তর সিটি করপোরেশনের রূপনগর থানা এলাকায় শনাক্তের হার ৪৬ শতাংশ এবং আদাবর থানা এলাকায় শনাক্তের হার ৪৪ শতাংশ। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় সংক্রমণের হার উত্তরের চেয়ে বেশি।

সারাদেশে সংক্রমণের গড় হার ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ হলেও রাজধানীর অন্তত ১৭টি স্থানে সংক্রমণের হার ৩০ শতাংশেরও বেশি পাওয়া গিয়েছে। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আরও ২৩টি এলাকায় সংক্রমণের হার ২০ শতাংশেরও বেশি।

ঢাকার ১৭টি থানায় শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের ওপরে। ২৩টি থানা এলাকায় ২০ শতাংশের ওপরে। ৭টি থানা এলাকায় সংক্রমণের হার ১১ শতাংশের বেশি।

করোনায় উচ্চ ঝুঁকিতে রাজধানীর নিম্নের থানাগুলোতে:

সারাদেশের শনাক্তের হারের সঙ্গে তুলনা করলে ঢাকায় শনাক্তের হার অনেক বেশি। রূপনগর ও আদাবর ছাড়া যেখানে সংক্রমণের হার ৩০ শতাংশের বেশি, সেই থানাগুলো হল- শাহ আলী, রামপুরা, তুরাগ, মিরপুর, কলাবাগান, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, মুগদা, গেণ্ডারিয়া, ধানমণ্ডি, হাজারীবাগ, নিউমার্কেট, চকবাজার, সবুজবাগ, মতিঝিল, দারুসসালাম ও খিলগাঁও।

সংক্রমণের হার ২১ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে আছে এমন থানাগুলো হচ্ছে- শাহবাগ, বংশাল, লালবাগ, শাহজাহানপুর, রমনা, কামরাঙ্গীরচর, শ্যামপুর, বাড্ডা, বনানী, উত্তরখান, শেরে বাংলা নগর, সূত্রাপুর, যাত্রাবাড়ী, পল্লবী, কাফরুল, ডেমরা, ওয়ারী, ভাটারা, দক্ষিণখান, খিলক্ষেত, কদমতলী, উত্তরা পূর্ব ও পল্টন থানা এলাকা।

শনাক্তের হার ১১ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে পাওয়া গেছে তেজগাঁও, উত্তরা পশ্চিম, ভাষানটেক, গুলশান, ক্যান্টনমেন্ট, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এবং বিমানবন্দর থানা এলাকা।
 

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

কারাবন্দী থেকেই ব্যবসায় জড়িত শীর্ষ জঙ্গিরা


নিউজ ডেস্ক:
বুধবার, ৩১ মার্চ, ২০২১, ১০:০৯
কারাবন্দী থেকেই ব্যবসায় জড়িত শীর্ষ জঙ্গিরা

প্রতিকী ছবি

নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা কারাগারে বসেই ব্যবসা করছে। গড়ে তুলেছে সরবরাহ প্রতিষ্ঠান। অসাধু কিছু কারা সদস্যকে ম্যানেজ করে শুরু করা এসব ব্যবসা থেকে অর্জিত মুনাফা পৌঁছে যাচ্ছে কারাবন্দী জঙ্গি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে। ব্যবসার মূলধন এবং সংগঠনের তহবিল সংগ্রহের জন্য কারাবন্দী জঙ্গিদের নির্দেশেই তাদের একটি অংশ বর্তমানে ডাকাতিসহ নানা অপরাধে লিপ্ত। অবাক করা তথ্য হলো- এসব কিছু হচ্ছে ভয়ংকর অপরাধী এবং কারাবন্দী শীর্ষ জঙ্গিদের জন্য তৈরি করা কাশিমপুরের হাই সিকিউরিটি জেলে। 

গত সোমবার পূর্ব তেজতুরী বাজার এলাকা থেকে দুই জঙ্গিকে  গ্রেফতারের পর চাঞ্চল্যকর এমন তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর  গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও জোনাল টিম। আসিফুর রহমান আসিফ (২৬) ও পিয়াস শেখ (২৮) নামে এই দুই জঙ্গিকে গতকাল আদালতের নির্দেশে তাদের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এর আগে  সোমবার রাতে ডিবির পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে একটি মামলা ( নম্বর ৭০) করেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গ্রেফতারের সময় আসিফের কাছে টাকার দুটি বান্ডিল পাওয়া গেছে। ২০ হাজার টাকার  একটি বান্ডিলের ওপরে নাহিদ তাসনিম, কাশিমপুর এবং ১৫ হাজার টাকার একটি বান্ডিলের ওপর আল-আমিন, কাশিমপুর লেখা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসিফ জানিয়েছে, এগুলো ডাকাতির টাকা। এই টাকা কাশিমপুর জেলখানায় কর্তব্যরত একজন কারারক্ষীর মাধ্যমে ভিতরে নাহিদ তাসনিম ও আল-আমিনের কাছে পাঠানোর কথা ছিল। এর আগেও ডাকাতি করা টাকা তারা একাধিক কারারক্ষীর মাধ্যমে কারাগারের ভিতরে পাঠিয়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তেজগাঁও জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহাদাত হোসেন সুমা গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি এখনই কোনো মন্তব্য করতে চান না। তবে গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। এগুলোর যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। শিগগিরই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। গ্রেফতারকৃত দুজনের তথ্য এবং তাদের কাছ থেকে একটি সেল ফোনে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসিফ জানিয়েছে, ডাকাতি করা অর্থ দিয়ে সংগঠনের কারাবন্দী শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে হালাল অ্যান্ড ফ্রেশ নামে একটি খাদ্যপণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিল। কারাগার থেকে তাসনিম, সাঈদ, ফয়সাল ও আল-আমিন তাকে বিভিন্ন লোকজনের নম্বর দিত সেখানে সে চাহিদামতো মধু, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্য দিয়ে আসত। 

শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ মতো একাধিকবার সে কাশিমপুর কারাগারেও খেজুর ও মধু সরবরাহ করেছে। কারাগারে যোগাযোগের জন্য কাজে লাগানো হতো নারীদের। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গ্রেফতার আসিফ ও পিয়াস জেএমবির সক্রিয় সদস্য। 

কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি জেলে কারাবন্দী জেএমবির পৃষ্ঠপোষক ও শীর্ষ নেতা আবু সাঈদ, আবদুল্লাহ আল তাসনিম, আল-আমিন ও ফয়সালের সঙ্গে নিয়মিত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করত। শীর্ষ এই জঙ্গি নেতাদের নির্দেশে জেএমবির সক্রিয় সদস্য আনোয়ার আলী ওরফে হৃদয়, হাফিজুল শেখ ওরফে সকাল, আবু সালেহ, সোহেলসহ অজ্ঞাতনামা জঙ্গিরা ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে। এই অর্থের একটি অংশ জেলখানায় কর্তব্যরত কয়েকজন সদস্যের মাধ্যমে কারাবন্দী শীর্ষ নেতাদের কাছে পাঠাত। অবশিষ্ট টাকা হৃদয়, তানজিল বাবু ও সকালের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত সংগঠনের নেতা-কর্মী ও জেলে থাকা সদস্যদের পরিবারের কাছে পাঠাত। তাদের কাছ থেকে দুই রাউন্ড গুলিসহ একটি পিস্তল, কয়েকটি মোবাইল ও ৩৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। 

দীর্ঘদিন জঙ্গি প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করে আসা কাউন্টার টেরোরিজমের একজন কর্মকর্তা জানান, তাদের কাছে আগে থেকেই তথ্য ছিল কাশিমপুর কারাগারে তাসনিম-সাঈদরা রীতিমতো ব্যবসা-বাণিজ্য করে অর্থ উপার্জন করছে। কারাবন্দীদের কাছে এবং তাদের পরিবারের কাছে তাসনিম মধু বিক্রি করত। আসিফ গ্রেফতারের পর আগে থেকে পাওয়া তথ্যের সত্যতা পেয়েছেন।

জানতে চাওয়া হলে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার গিয়াস উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তাই এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করা সমীচীন হবে না। কারাগারে জঙ্গিরা কেউ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুধু জঙ্গি কেন, সাধারণ কোনো বন্দীরও মোবাইল ফোন ব্যবহার বা বিধিবহির্ভূত কিছু করার সুযোগ নেই।

ডাকাতির নির্দেশ আসে কারাগার থেকে : আসিফের মোবাইল ফোনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন অ্যাপস ঘেঁটে কিছু তথ্যে রীতিমতো বিস্মিত তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। কারণ, এসব বার্তা ছিল কারাবন্দী শীর্ষ জঙ্গিদের। একটি বার্তায় সরকারি কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ নেতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বাসায় ডাকাতি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ডাকাতি করতে গিয়ে গ্রেফতার হলে কি করতে হবে সে বিষয়েও নির্দেশনা রয়েছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই আসিফ এবং পিয়াস জানিয়েছে, তারা পুরাতন জেএমবির সক্রিয় সদস্য। কাশিমপুর কারাগারে বন্দী তাদের শীর্ষ নেতা আবদুল্লাহ আল তাসনিম ওরফে নাহিদ, আবু সাঈদ, আল-আমিন ও ফয়সালের নির্দেশে তারা সংগঠনের তহবিল সংগ্রহের জন্য ডাকাতি করে বেড়াত। পুলিশের অভিযানের সময় তাদের সঙ্গে আনোয়ার আলী ওরফে হৃদয়, তানজিল বাবু, হাফিজুল শেখ ওরফে সকাল, আবু সালেহ, পাভেল ওরফে রাহুল, জোসেফ, রোজীসহ বেশ কয়েকজন বৈঠকের জন্য মিলিত হয়েছিল। 

গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় একাধিক ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে হাতিরঝিল, তেজগাঁও থানাধীন এলাকায় ছয়টি ডাকাতির ঘটনায় তারা পেশাদার ডাকাত দলের সঙ্গে জঙ্গি সম্পৃক্ততা পেয়েছিলেন। সে সময় পেশাদার কয়েকজন ডাকাত সদস্যকে গ্রেফতারের পর হৃদয়, তানজিল বাবু, সকালসহ কয়েক জনের নাম পান তারা। তবে ঘটনার পর থেকেই তারা আত্মগোপনে ছিল।

নির্দেশদাতা কারা : জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে গঠিত বিশেষায়িত ইউনিট কাউন্টার টেরোরিজম সূত্র বলছে, নির্দেশদাতাদের অন্যতম হলেন শীর্ষ জঙ্গি নেতা আবু সাঈদ। কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে বন্দী এই শীর্ষ জঙ্গি ২০০৫ সালে সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি। ২০০৭ সালে ভারতে পালিয়ে গিয়ে নদীয়া, বীরভূম ও বর্ধমান জেলার জেএমবির কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। 

২০১৪ সালে বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণে তার সম্পৃক্ততা পাওয়ায় কলকাতা পুলিশের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) তাকে ধরতে ১০ লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করে। ২০১৫ সালে আবু সাঈদ দেশে ফিরে এলে দুই বছরের মাথায় ২০১৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর বগুড়া জেলা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। 

নির্দেশদাতাদের অন্য আরেকজন আবদুল্লাহ আল তাসনিম ওরফে নাহিদ। ২০১০ সালে জেএমবির আমির মাওলানা সাইদুর রহমান গ্রেফতার হওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পালন করে তাসনিম। ২০১৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে তাসনিম গ্রেফতার হয়। আবু সাঈদ ও তাসনিম ছাড়াও বাকি দুই শীর্ষ জঙ্গি নেতার একজন আল-আমিন আনসার আল ইসলামের নেতা ও ফয়সাল হরকাতুল জিহাদ নেতা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে তারা কারাগারে রয়েছে। সূত্র:বিডিপ্রতিদিন

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম
Share on Facebook

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন এর সর্বশেষ

সর্বশেষ - সারাদেশ