a
চোখের জলই যেন এখন আছমা বেগমের একমাত্র সম্বল। এবারের কঠোর লকডাউনে অভাবের তাড়নায় আছমা বেগম রাজধানীর রাস্তায় মাস্ক বিক্রি করা শুরু করেছেন, এর আগে তিনি গৃহকর্মীর কাজ করতেন।
কিন্ত আছমা আগে যে বাড়িতে কাজ করতেন, সেই বাড়ির মালিকের চাকরি চলে যাওয়ায় তারাও এখন গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। আর তাই আছমা বেগম কঠোর লকডাউনের মধ্যে কর্মহীন হয়ে পড়ে।
তিন সন্তানের জননী। স্ট্রোক করার পর থেকে স্বামী এখন পর্যন্ত কোন কাজ করতে পারে না। আছমার কাজের টাকা দিয়েই তাদের সংসার চলতো। তাই তিনি মানিকনগর তার বাসা থেকে একটি কাজের সন্ধানে বের হয়েছিল। কিন্ত এ কঠোর লকডাউনে কোন কাজের ব্যবস্থা করতে না পেরে মাস্ক বিক্রির কথা ভাবেন। দোকানে গিয়ে তিনি দেখেন এক বক্স মাস্ক কিনতে লাগে ১১০ টাকা অর্থাৎ এক প্যাকেট মাস্কের দাম ১১০ টাকা। কিন্তু আছমার কাছে ছিল মাত্র ৯০ টাকা। এক প্রকার আকুতি-মিনতি করেই তিনি এক প্যাকেট মাস্ক কিনে বিক্রি শুরু করেন সন্তানদের মুখে দু'মুঠো খাবারের ব্যবস্থা করতে।
ফাইল ছবি
রাকিব, ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া ছাত্র। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট। করোনাকালে কঠোর লকডাউনেও ব্যাটারি চালিত অটো-ভ্যান নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। পরিবার ও নিজের হাত খরচের জন্য সামান্য আর্থিক চাহিদা পূরণ করতে তিনি অটো-ভ্যান হাতে তুলে নিয়েছেন।
করোনায় স্কুল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তার পরিবারকে সহযোগিতা করছেন ওই কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থী। তার কাছে প্রশ্ন ছিল কেন তুমি অটো চালাচ্ছো। সহজ সরল উত্তর স্কুল বন্ধ, তাই আব্বুকে বলে অটো-ভ্যানটি নিয়ে রাস্তায় বেড়িয়ে পড়েছি।
রাকিব টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার পৌর শহরের শিয়ালকোল এলাকার লবণ ব্যবসায়ী হাকিমের ছেলে। সে তার পাশের এলাকার ভারই দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। রাকিব বলেন- করোনায় স্কুল বন্ধ। কি করব, পড়াশোনা নেই। আমার বন্ধুরা মোবাইলে অনলাইন ক্লাস করে। কিন্তু আমার ফোন না থাকায় ক্লাস করতে পারি না। মাঝে মাঝে সহপাঠীদের ফোনে ক্লাস করি। করোনার কারণে সহপাঠীদের বাড়িতে যাওয়া যায় না।
করোনাকালে অনেক শিক্ষার্থী অলস সময় পার করলেও কেন অটো-ভ্যান নিয়ে রাস্তায় বের হতে হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে রাকিব বলেন- কয়েক মাস আগে আব্বুকে বলেছিলাম একটা স্মার্ট মোবাইল ফোন কিনে দেওয়ার জন্য। আব্বুর কাছে টাকা না থাকায় তার অটো-ভ্যান নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছি। এছাড়াও সংসার খরচে কিছু টাকা দিয়ে বাকি টাকা জমিয়ে একটা মোবাইল ফোন কিনে অনলাইন ক্লাস করব।’
এদিকে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে অহরহ খোঁজ মেলে এমন শিশুর। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এভাবে চলতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে শিশু শ্রম বাড়ার পাশাপাশি স্কুল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। স্থানীয় অটো-ভ্যান চালকদের কাছ থেকে জানা যায়, প্রত্যেক শিশু প্রথমে অটো-ভ্যান খেলার হাতেখড়ি হয় তাদের। আমাদের মতো নিম্ন আয়ের সন্তানরা বেশি ভাগ সংসারের আর্থিক সংকট দূর করতে নিরুপায় হয়ে এমন কাজে করাতে বাধ্য করতে হয়।
অটো-ভ্যান চালকরা আরও বলেন- তারপর এ সময়টা করোনাকালীন সময়। ওরা ঘরবন্ধি। দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় পড়াশোনার প্রতি তাদের কোন আগ্রহ নেই। এতে করে শিক্ষার্থী আরও অকালে ঝড়ে পড়ছে। অনলাইন ক্লাসের নামে ক্ষুদে ছাত্ররা মোবাইলে নানা ধরণের গেমসে আসক্ত হচ্ছেন। এছাড়া এমন অনেক হতদরিদ্র পরিবার আছে, যেখানে শিশু শিক্ষার্থীরা সংসারের খরচ চালাতে ভাড়ায় ভ্যানগাড়ি চালিয়ে বা অন্যান্য কাজকর্ম করে সংসারের হাল ধরে থাকেন।
শুধু রাকিব নয়। তার মতো নিম্ন আয়ের পরিবারের শিক্ষার্থীরা করোনাকালে পড়াশোনা থেকে দূরে গিয়ে পরিবারের অর্থের যোগান দিচ্ছেন নানা ধরণের কাজ করে। উপজেলার পৌর শহর, গোবিন্দাসী বাজার, মাটিকাটা, নিকরাইল, সিরাজকান্দি বাজার, পাথাইলকান্দি (যমুনা) সেতু বাজারসহ বিভিন্ন ছোট-বড় হাটবাজার ঘুরে দেখা যায় রাস্তায় অহরহ কম বয়সের শিশুরা ব্যাটারিচালিত ভ্যানগাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে, বেশি গতিতে গাড়ি চালিয়ে ওভারটেক করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে দেখা গেছে শিশু চালক-যাত্রীদের। অনেক অভিভাবক আজকাল নিজেই ভ্যানগাড়ির চাবি তুলে দিচ্ছেন তার সন্তানদের হাতে।
উপজেলার ভারই দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালেেয় প্রধান শিক্ষক কামরুল হাসান বলেন, ‘করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুরা এখন বাডীতে অলস সময় পার করছে। আমার প্রতিষ্ঠানটি প্রান্তিক এলাকায় হওয়ায় বেশীর ভাগ শিশুই হতদরিদ্র পরিবার থেকে এসেছে। রাস্তা-ঘাটে আমার স্কুলের অনেক শিক্ষার্থীকেই দেখি ব্যাটারিচালিত ভ্যান গাড়িতে যাত্রী কিংবা মালামাল পরিবহন করছে। অভিবাভকেরা যদি সচেতন না হন, তবে কিছুদিন পর এই শিক্ষার্থীরা আর স্কুলে আসবে না। আমার মনে হয়, শিশুদের এ ধরণের ঝুঁকিপূর্ণ কাজের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।’
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহিনুল ইসলাম জানান- বিষয়টি দুঃখজনক, করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকার কারণে ও পারিবারিক অসচ্ছলতায় অনেক শিশুকেই আজকাল এ ধরণের ব্যাটারি চালিত অটো-ভ্যান যানবাহনগুলো চালাতে দেখা যাচ্ছে। এগুলো তো আমরা বন্ধ করতে পারি না। তবে, যেসব নিম্নবিত্ত শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তাদের তালিকা হচ্ছে।
ফাইল ছবি
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট ইরানকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। এই হুমকির পাল্টা জবাব দিয়েছে ইরান। ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী-বা আইআরজিসি’র প্রধান কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি বলেছেন, প্রতিরক্ষানীতিতে শত্রুদের যেকোনো হঠকারী পদক্ষেপের ‘তাৎক্ষণিক, গুরুতর ও শক্তিশালী জবাব’ দেওয়া হবে। খবর ইরনার।
বুধবার পারস্য উপসাগরের হরমুজ প্রণালিতে মোতায়েন আইআরজিসি’র নৌসেনাদের যুদ্ধ প্রস্তুতি পরিদর্শনের পর এ সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। তিনি বলেছেন, ‘ইরানকে হুমকি দিয়ে যারা কথা বলছে বিশেষ করে দখলদার ইসরায়েলের জেনে রাখা উচিত যে কোনো স্থানে যে কোনো মাত্রার হামলার দাঁতভাঙা জবাব দিতে তেহরান প্রস্তুত রয়েছে। ইরানের স্বার্থে আঘাত হানা হবে অথচ তেহরান তার জবাব দেবে না- এমন দিনের অবসান হয়েছে। ইরানের শত্রুরা যেন আর কোনোদিন সেই দিনগুলো ফিরে আসার স্বপ্নে বিভোর না হয়।’
উল্লেখ্য. এর আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনেট সেনাবাহিনীর উত্তর কমান্ডে ভ্রমণকালে তেহরানকে লক্ষ্য করে এক হুমকিতে বলেন, সমস্ত মধ্য প্রাচ্যে যখন আগুন জ্বলছে তখন তারা (ইরান) শান্ত্বভাবে তেহরানে বসে থাকতে পারে না। ইসরায়েল একাই দেখে নেবে ইরানকে। আমরা ইরানের বিরুদ্ধে বিশ্বকে সমবেত করার চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে আমরা এককভাবেও কাজ করতে জানি। ইরান জানে আমাদের নিরাপত্তার হুমকি হলে তার জন্য কী মূল্য দিতে হয়।