a ১১ হাজার কোটি টাকা রেমিট্যান্স এলো ১৬ দিনে
ঢাকা রবিবার, ২৪ কার্তিক ১৪৩২, ০৯ নভেম্বর, ২০২৫
https://www.msprotidin.com website logo

১১ হাজার কোটি টাকা রেমিট্যান্স এলো ১৬ দিনে


মুক্তসংবাদ প্রতিদিন ডেস্ক
বৃহস্পতিবার, ১৮ আগষ্ট, ২০২২, ১১:৩৬
১১ হাজার কোটি টাকা রেমিট্যান্স এলো ১৬ দিনে

ফাইল ছবি

করোনার অভিঘাত আর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা খারাপ অবস্থা। এরমধ্যেও বাংলাদেশ প্রবাসী আয় আলোর মুখ দেখাচ্ছে।

২০২২-২৩ নতুন অর্থবছরের প্রথম মাস (জুলাই) থেকেই প্রবাসী আয়ে ঢল নেমেছে। সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে চলতি আগস্ট মাসেও। এই মাসের প্রথম ১৬ দিনে ১১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৯৫ টাকা) এই অর্থের পরিমাণ ১১ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি। গত বছরের এই সময়ে ১০০ কোটি ৭০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। প্রতিদিন এসেছে ৭ কোটি ২৬ লাখ ডলার বা প্রায় ৭০০ কোটি টাকা।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া নতুন অর্থবছরের প্রথম দেড় মাসে (১ জুলাই থেকে ১৬ আগস্ট) ৩২৮ কোটি ৮০ লাখ (৩.২৭ বিলিয়ন) রেমিট্যান্স এসেছে। যা বাংলাদেশি টাকায় (প্রতি ডলার ৯৫ টাকা) ৩১ হাজার ৪৬ কোটি টাকা। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি।

গত অর্থবছরের প্রথম দেড় মাসে (২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ১৬ আগস্ট) ২৮৭ কোটি ৮০ লাখ (২.৮৮ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। সূত্র: যুগান্তর

 

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

আরও পড়ুন

গণমুখী ও বাস্তবভিত্তিক বাজেট প্রনয়ণ করায় মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাকে অভিনন্দন


সাইফুল আলম, ঢাকা প্রতিনিধি, মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
বুধবার, ০৪ জুন, ২০২৫, ০৪:৪৮
গণমুখী ও বাস্তবভিত্তিক বাজেট প্রনয়ণ করায় মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাকে অভিনন্দন

ছবি: মুক্তসংবাদ প্রতিদিন

 

সাইফুল আলম, ঢাকা:  শ্রমিকদের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত সংগঠন বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশন গণমুখী ও বাস্তবভিত্তিক বাজেট প্রনয়ণ করায় মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। গতকাল ৩ জুন ২০২৫ ইং তারিখে জাতীয় প্রেসক্লাব ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। 

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিন উদ্দিন বিএসসি এবং সাধারণ সম্পাদক মোঃ হারিক হোসেন বলেন, বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আজকের এই বাজেট প্রতিক্রিয়ায় উপস্থিত হওয়ার জন্য আপনাদের জানাই ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট পরবর্তী সময়ে আপনাদের সামনে আমরা উপস্থিত হয়েছি। আপনারা জানেন, বিড়ি শিল্প উপহাদেশের একটি আদি ও পুরাতন শিল্প । এই উপমাহাদেশে যখন বেকার মানুষের কোন কর্মসংস্থানের সুযোগ ছিল না তখন বিড়ি শিল্পই ছিল একমাত্র কর্মসংস্থান। আজও দেশে এমন অঞ্চল রয়েছে যেখানে বিড়ি শিল্পই কর্মসংস্থানের একমাত্র অবলম্বন।

এটি বৈষম্যহীন ও টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনা পেশ করা হয়েছে। দেশের ৫৪তম বাজেট। বাজেটের মূল লক্ষ্য “মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রন”। সংকটের এই সময়ে এটি খুবই গণমুখী ও বাস্তবভিত্তিক বাজেট। এই বাজেটে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। ৬২৬ আমদানি পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে। একইসাথে প্রাচীন শ্রমঘন বিড়ি শিল্পের উপর শুল্ক অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। খাদ্যনিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে বাজেটে নিত্যপণ্যের দাম কমানোর সিদ্ধান্তে আমরা সরকারকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। সমতাভিত্তিক, কল্যাণমুখী ও সময়োপযোগী প্রনয়ণ করায় বাংলাদেশের বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা, ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। একইসাথে মাননীয় অর্থ উপদেষ্টা ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি ।

বিড়ি শিল্প দেশের প্রাচীন শ্রমঘন একটি শিল্প। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে এই শিল্পের অবদান অপরিসীম। তবে বিভিন্ন সময়ে দেশী ও বিদেশী ষড়যন্ত্রে বিড়ি শিল্পে বারবার মাত্রাতিরিক্ত শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে বিড়িতে কোনো শুল্ক ছিল না এবং বিড়ি একটি কুটির শিল্প হিসেবে পরিচিত ছিল। এদিকে বিড়ি ও সিগারেট একই গোত্রভূক্ত হওয়া শর্তেও এ দুটির মধ্যে বৈষম্য বিরাজ করছে। বিড়ির অগ্রীম আয়কর ১০ শতাংশ। আর সিগারেটের অগ্রীম আয়কর ৩ শতাংশ ছিল। কিন্তু শ্রমিকদের দীর্ঘ আন্দোলন ও সংগ্রামের ফলে সিগারেটের অগ্রীম আয়কর ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করেছে সরকার। তবুও বিড়ি ও সিগারেটের অগ্রীম আয়করে ব্যাপক বৈষম্য বিরাজ করছে। সুতরাং শ্রমিক বান্ধব বিড়ি শিল্পের ওপর থেকে অগ্রিম আয়কর সম্পূর্ণ ভাবে প্রত্যাহার করতে হবে।

বিড়ি একটি দেশিয় শ্রমিক নির্ভর শিল্প। পাকিস্থান, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়াতে হাতে তৈরি বিড়িকে প্রণোদনা দেয়া হয়। এসব দেশে বিড়ি ফ্যাক্টরী প্রতিষ্ঠা না করলে সিগারেট ফ্যাক্টরী করার অনুমোদন দেওয়া হয় না। কিন্তু বাংলাদেশে তার বিপরীত চিত্র। বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানীর ষড়যন্ত্রে বারবার বিড়ি শিল্পের উপর মাত্রাতিরিক্ত শুল্কারোপ করা হয়েছে। অসম শুল্কের ভারে শিল্পটি আজ ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে এসে পৌঁছেছে। শ্রমিকরাই দেশের মূল চালিকা শক্তি, শ্রমিকরাই দেশের অর্থনীতির ভিত। শ্রমিক বাঁচলে দেশ বাঁচবে, দেশ বাঁচলে শ্রমিক বাঁচবে। একইসাথে দেশের উন্নয়ন এবং শ্রমজীবি মানুষের স্বার্থে নিম্নতম মজুরী বোর্ডের মাধ্যমে বিড়ি শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধি করার অনুরোধ করছি।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিড়ি শিল্পের মালিকদের অবদান অপরিসীম। তারা এ দেশে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। অথচ বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানী বিএটি ও জেটিআই এ দেশের টোব্যাকো কোম্পানীর মার্কেট শোষণ করছে। তারা এদেশের মানুষের ফুসফুস পুড়িয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। বর্তমানে টোব্যাকো মার্কেটের ৮০ শতাংশ থেকে ৮৫ শতাংশ দখল করে আছে নিম্নস্তরের সিগারেট। এসব নিম্নস্তরের সিগারেট ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির। সুতরাং দেশীয় শ্রমঘন বিড়ি শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষার্থে এই দেশে বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানীর নিম্নস্তরের সিগারেট উৎপাদন বন্ধের আহবান জানাচ্ছি। নানাবিধ প্রতিকূলতার মাঝে টিকে থাকা বিড়ি শিল্পের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে নকল ব্যান্ডরোলযুক্ত বিড়ি । বিড়িতে ট্যাক্স বৃদ্ধির ফলে অসাধু বিড়ি ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় সরকারের ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে নকল বিড়ি উৎপাদন করে। এছাড়া খুচরা বিক্রেতাগণও বেশি লাভের আশায় নকল বিড়ি বিক্রিতে উৎসাহিত হয়। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারায় এবং প্রকৃত রাজস্ব প্রদানকারী বিজি মালিকরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সুতরা দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধশালী করতে হলে নকল বিড়ি বন্ধ করতে হবে। একইসাথে নকল বিড়ি ও সিগারেট উৎপাদান এবং বিক্রি বন্ধে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে জেলা পর্যায়ে নকল বিড়ি প্রতিরোধ কমিটি গঠনের দাবি জানাচ্ছি।

দেশীয় শিল্প, প্রান্তিক গরীব, অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কর্ম রক্ষার্থে আমাদের দাবিসমূহ পেশ করছি। দাবীসমূহ-
১. বিড়ি শিল্পের উপর থেকে অগ্রীম আয়কর প্রত্যাহার করতে হবে।
২. বহুজাতিক কোম্পানীর নিম্নস্তরের সিগারেট বন্ধ করতে হবে।
৩. নূন্যতম মজুরী বোর্ডের মাধ্যমে বিড়ি শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধি করতে হবে।
৪. নকল বিড়ি উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ করতে হবে।
সুপ্রিয় বন্ধুগণ,
জাতির জাগ্রত বিবেক হিসেবে আপনারা অতীতেও আমাদের পাশে ছিলেন এবং ভবিষ্যতেও পাশে থাকবেন বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। আপনাদের কলম আমাদের রুটি-রুজির সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আপনাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে আমাদের বক্তব্য শোনার জন্য পুনরায় আস্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করছি। খোদা হাফেজ।

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

কুমির-শিয়ালের গল্প


আরাফাত আলম, বিশেষ প্রতিনিধি, মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
সোমবার, ০৫ মে, ২০২৫, ০৫:৩৪
কুমির-শিয়ালের গল্প

ছবি সংগৃহীত

কুমির দেখলে, সে শিয়ালের সঙ্গে কিছুতেই পেরে উঠছে না। তখন সে ভাবলে, 'ও ঢের লেখাপড়া জানে, তাতেই খালি আমাকে ফাঁকি দেয়। আমি মূর্খ লোক, তাই তাকে আঁটতে পারি না।' অনেকক্ষণ ভেবে কুমির এই ঠিক করল যে, নিজের সাতটা ছেলেকে শিয়ালের কাছে দিয়ে খুব করে লেখাপড়া শেখাতে হবে। তার পরের দিনই সে ছানা সাতটাকে সঙ্গে করে শিয়ালের বাড়ি গিয়ে উপস্থিত হল। শিয়াল তখন তার গর্তের ভিতরে বসে কাঁকড়া খাচ্ছিল। কুমির এসে ডাকলে,

'শিয়াল পণ্ডিত, শিয়াল পণ্ডিত, বাড়ি আছ?' শিয়াল বাইরে এসে বললে, 'কী ভাই, কী মনে করে?'

কুমির বললে, 'ভাই, এই আমার ছেলে সাতটাকে তোমার কাছে এনেছি। মূর্খ হলে করে খেতে পারবে না। ভাই, তুমি যদি এদের একটু লেখাপড়া শিখিয়ে দাও।' শিয়াল বললে, 'সে আর বলতে? আমি সাতদিনে সাতজনকে পড়িয়ে পণ্ডিত করে দেব।' শুনে কুমির তো খুব খুশি হয়ে ছানা সাতটাকে রেখে চলে গেল। তখন শিয়াল তাদের একটাকে আড়ালে নিয়ে বললে—
'পড় তো বাপু— কানা খানা গানা ঘানা,
কেমন লাগে কুমির ছানা?'

এই কথা বলে, সেটার ঘাড় ভেঙে, খেয়ে ফেললে।
পরদিন যখন কুমির তার ছানা দেখতে এল, তখন শিয়াল তাদের একেকটি করে গর্তের বাইরে এনে দেখাতে লাগল। ছয়টিকে ছয়বার দেখালে, শেষেরটা দেখালে দুবার। বোকা কুমির তা বুঝতে না পেরে ভাবলে, সাতটাই দেখানো হয়েছে। তখন সে চলে গেল, আর অমনি শিয়াল ছানাগুলোর একটাকে আড়ালে নিয়ে বললে—
'পড় তো বাপু— কানা খানা গানা ঘানা, কেমন লাগে কুমির ছানা?'

এই কথা বলে, সেটার ঘাড় ভেঙে, খেয়ে ফেলল। পরদিন কুমির তো ছানা দেখতে এল। শিয়াল একেকটি করে গর্তের বাইরে এনে, পাঁচবার পাঁচটাকে দেখাল, শেষেরটিকে দেখাল তিনবার। তাতেই কুমির খুশি হয়ে চলে গেল। তখন শিয়াল ঠিক আগের মতো করে আর একটা ছানাকে খেল।

এমনি করে সে রোজ একটি ছানা খায়, আর কুমির এলে তাকে ফাঁকি দিয়ে ভোলায়। শেষে যখন একটি ছানা বই আর রইল না, তখন সেই একটিকেই সাতবার দেখিয়ে সে কুমিরকে বোঝাল। তারপর কুমির চলে গেলে সেটিকেও খেয়ে ফেলল। তারপর আর একটিও রইল না।

তখন শিয়ালনী বললে, 'এখন উপায়? কুমির এলে দেখাবে কি? ছানা না দেখতে পেলে তো অমনি আমাদের ধরে খাবে!'
শিয়াল বললে, 'আমাদের পেলে তো ধরে খাবে। নদীর ওপারের বনটা খুব বড়, চল আমরা সেইখানে যাই। তা হলে কুমির আর আমাদের খুঁজে বার করতেই পারবে না।'

এই বলে শিয়াল শিয়ালনীকে নিয়ে তাদের পুরনো গর্ত ছেড়ে চলে গেল। এর খানিক বাদেই কুমির এসেছে। সে এসে 'শিয়াল পণ্ডিত, শিয়াল পণ্ডিত' বলে কত ডাকল, কেউ তার কথার উত্তর দিল না। তখন সে গর্তের ভিতর-বার খুঁজে দেখল—শিয়ালও নেই শিয়ালনীও নেই! খালি তার ছানাদের হাড়গুলো পড়ে আছে।
তখন তার খুব রাগ হল, আর সে চারদিকে ছুটাছুটি করে শিয়ালকে খুঁজতে লাগল। খুঁজতে-খুঁজতে নদীর ধারে গিয়ে দেখল, শিয়াল আর শিয়ালনী সাঁতরে নদী পার হচ্ছে।

অমনি 'দাঁড়া হতভাগা।' বলে সে জলে ঝাঁপ দিয়ে পড়ল। জলের নীচে ছুটতে কুমিরের মতো আর কেউ পারে না, দেখতে দেখতে সে গিয়ে শিয়ালের পিছনের একটা পা কামড়ে ধরল।

শিয়াল সবে তার সামনের দু-পা ডাঙায় তুলেছিল, শিয়ালনী তার আগেই উঠে গিয়েছিল। কুমির এসে শিয়ালের পা ধরতেই সে শিয়ালনীকে ডেকে বললে, 'শিয়ালনী, শিয়ালনী, আমার লাঠিগাছা ধরে কে টানাটানি করছে। লাঠিটা বা নিয়েই যায়।'
একথা শুনে কুমির ভাবলে, 'তাই তো, পা ধরতে গিয়ে লাঠি ধরে ফেলেছি। শিগগির লাঠি ছেড়ে পা ধরি।'

এই ভেবে যেই সে শিয়ালের পা ছেড়ে দিয়েছে, অমনি শিয়াল একলাফে ডাঙায় উঠে গিয়েছে। উঠেই বোঁ করে দে ছুট। তারপর বনের ভিতরে ঢুকে পড়লে আর কার সাধ্য তাকে ধরে।

তারপর থেকে কুমির কেবলই শিয়ালকে খুঁজে বেড়ায়। কিন্তু শিয়াল বড্ড চালাক, তাই তাকে ধরতে পারে না। তখন সে অনেক ভেবে এক ফন্দি করল। কুমির একদিন চড়ায় গিয়ে হাত পা ছড়িয়ে মড়ার মতো পড়ে রইল। তারপর শিয়াল আর শিয়ালনী কচ্ছপ খেতে এসে দেখল, কুমির কেমন হয়ে পড়ে আছে। তখন শিয়ালনী বললে, 'মরে গেছে। চল খাইগে!' শিয়াল বললে, 'রোস, একটু দেখে নিই।' এই বলে সে কুমিরের আর-একটু কাছে গিয়ে বলতে লাগল, 'না। এটা দেখছি বড্ড বেশি মরে গেছে। অত বেশি মরাটা আমরা খাই না। যেগুলো একটু-একটু নড়ে-চড়ে, আমরা সেগুলো খাই।' তা শুনে কুমির ভাবলে, 'একটু নড়ি-চড়ি, নইলে খেতে আসবে না।' এই মনে করে কুমির তার লেজের আগাটুকু নাড়তে লাগল। তা দেখে শিয়াল হেসে বললে, ঐ দেখ, লেজ নাড়ছে! তুমি তো বলেছিলে মরে গেছে!' তারপর আর কি তারা সেখানে দাঁড়ায়! তখন কুমির বললে, 'বড্ড ফাঁকি দিলে তো! আচ্ছা এবারে দেখাব!'

একটা জায়গায় শিয়াল রোজ জল খেতে আসত। কুমির তা দেখতে পেয়ে সেখানে গিয়ে লুকিয়ে রইল। ভাবল শিয়াল জল খেতে এলেই ধরে খাবে। সেদিন শিয়াল এসে দেখল সেখানে একটাও মাছ নেই! অন্য দিন ঢের মাছ চলা-ফেরা করে। শিয়াল ভাবল, 'ভালো রে ভালো আজ সব মাছ গেল কোথায়? বুঝেছি, এখানে কুমির আছে!' তখন সে বললে, 'এখানকার জল বেজায় পরিষ্কার। একটু ঘোলা না হলে কি খাওয়া যায়? চল শিয়ালনী, আর-এক জায়গায় যাই।' এ কথা শুনেই কুমির তাড়াতাড়ি সেখানকার জল ঘোলা করতে আরম্ভ করলে। তা দেখে শিয়াল হাসতে-হাসতে ছুটে পালিয়েছে!

আর একদিন শিয়াল এসেছে কাঁকড়া খেতে। কুমির তার আগেই সেখানে চুপ করে বসে আছে। শিয়াল তা টের পেয়ে বললে, 'এখানে কাঁকড়া নেই, থাকলে দু-একটা ভাসত।'

অমনি কুমির তার লেজের আগাটুকু ভাসিয়ে দিল। কাজেই শিয়াল আর জলে নামল না। এমনি করে বারবার শিয়ালের কাছে ঠকে গিয়ে, শেষে কুমিরের ভারি লজ্জা হল। তখন সে আর কী করে মুখ দেখাবে? কাজেই সে তার ঘরের ভিতরে গিয়ে বসে রইল।

 

....ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

শিয়াল পণ্ডিত, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম
Share on Facebook

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন এর সর্বশেষ

সর্বশেষ - অর্থনীতি