a বিষন্ন অবসর
ঢাকা সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২, ২৪ নভেম্বর, ২০২৫
https://www.msprotidin.com website logo

বিষন্ন অবসর


ফেসবুক ডেস্ক:
রবিবার, ২৩ মে, ২০২১, ১১:৪৬
বিষন্ন অবসর

ফাইল ছবি। মুক্তা দাশ

বিষন্ন অবসর 
মুক্তা দাশ 

ভাদ্র  এখনো অনেক দুর।
সবে জৈষ্ঠ্যমাস ... 
আম, কাঠাল আর তাল পাঁকা গরমে অস্হির চারিধার।
ধান নেয়া হয়ে গেছে, খড়ের গাদাগুলো পিরামিডের দেয়াল দিয়ে দাড়িয়ে আছে বাড়ির এককোণে 
নিকোনো উঠোন তাপে তাতিয়ে উঠেছে  !  
মাটি পোড়া মিহি আগুনের আঁচে 
পা রাখা দায়। 
জামগাছতলায় বাতাসের হা হুতাশে 
আমি একা! 
তাতিয়ে উঠছে ক্রমশঃ শরীর 
ডাসা ডাসা জামের টইটম্বুর রস যেনো ঘাম হয়ে ঝরে পড়ছে নিস্প্রভ অবহেলায় !!
নিঁখুত হাতে বোনা তালপাতার পাখাটাই সম্বল। 
সেটাও বড্ড নড়বড়ে  
যতই হাত চালাই না কেনো 
ঘোরে তো ঘোরে না 
যেনো নুয়ে পড়া দেহ , ভাবলেশহীন । 
পুকুরপাড়ে কুকুরটা একনাগারে ডেকেই যাচ্ছে... 
ভাদ্র মাস এখনো অনেক দুর...! 
জৈষ্ঠ্যের অসহ্য তাপে 
বারবার নেয়ে উঠছি 
ফোঁটা ফোঁটা ঘামে !!
সেও  সুখের ছোঁয়া দিয়ে যায় 
 নিঃসংকোচে  অবলীলায় ।।

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

আরও পড়ুন

একটি মানবিক বিয়ের গল্প


এমএস.প্রতিদিন ডেস্ক:
রবিবার, ০৪ এপ্রিল, ২০২১, ০৪:৪১
একটি মানবিক বিয়ের গল্প

ফাইল ছবি

হাফেজ শহিদুল ইসলাম আমার ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের একজন। সাংগঠনিক কাজে আমার দু-চারজন সহযোগীর অন্যতম। বেশ পুরোনো আমাদের সম্পর্ক। সম্পর্কের গভীরতা পারিবারিক পরিধি পর্যন্ত। পরিবারসহ একে অপরের বাসায় যাতায়াত আমাদের দীর্ঘদিনের। সেই সূত্রে তার পারিবারিক অভিভাবকত্ব করতাম আমি। পারিবারিকভাবে খুঁটিনাটি বিষয়ে পরামর্শের জন্য তারা আমার দ্বারস্থ হত। দুই সন্তানের ছোট সংসার নিয়ে চলছিল তাদের জীবন।

একটাপর্যায়ে এসে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে শুরু হয় মনোমালিন্য। মনোমালিন্য থেকে বাদানুবাদ এবং সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু। আজ থেকে তিন বছর আগের কথা। তখন তাদের সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি আমি। তাদের উভয়ের সাথে কথা বলি। কিন্তু কোনোভাবেই আর সেটি সম্ভব হয়নি। ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় তাদের। ছাড়াছাড়ির পর দ্বিতীয় সংসার শুরু করেন হাফেজ শহিদুল ইসলাম। সেই বিবাহ আমি পড়াই। তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে সুখে শান্তিতে দিনাতিপাত করছেন। সেই ঘরে জন্ম নিয়েছে ফুটফুটে আরেকটি সন্তান। 

অপরদিকে হাফেজ শহিদ ভাইয়ের স্ত্রী হয়ে যায় অনেকটা অসহায়। এক রকমের কূলকিনারাহীন। রাগের মাথায় সংসার ভেঙে গভীর সংকটে পড়ে যান তিনি। ওই পরিস্থিতিতে তার জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়ে। স্বাভাবিকভাবেই তিনি আমার শরণাপন্ন হন।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় বিষয়ে পরামর্শ নেন। আর সেই দুঃসময়ে সহযোগিতা করার মতো আমি ছাড়া আর কেউ ছিল না তার। ইসলামী দৃষ্টিকোণ এবং অভিভাবকত্বের জায়গা থেকে আমি তার অর্থনৈতিক দায়িত্ব গ্রহণ করি। জীবনের করণীয় বিষয়ে দিক-নির্দেশনার জন্য নিয়মিতই আমার সাথে যোগাযোগ রাখতে হয় তাকে। 

এমতাবস্থায় একজন বেগানা নারীর সাথে এভাবে সম্পর্ক রাখাকে শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে আমার কাছে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়। তখন আমি সিদ্ধান্ত নেই, যত দিন তার অভিভাবকত্বের প্রয়োজন হবে আমার, তাকে বেগানা হিসেবে রেখে অভিভাবকত্ব করবনা, বরং ইসলামী শরিয়তের আলোকে বৈধ একটা সম্পর্ক তৈরি করে নেব। বিষয়টি নিয়ে ঘনিষ্টজনদের সাথে কথা বলি এবং এ বিষয়ে তাদের জানিয়ে শরিয়তের বিধান অনুযায়ী বিবাহের কালেমা পড়ে বিবাহ করে নেই। 

দু বছর যাবত এভাবেই মানবিক ও ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে আমি তার অভিভাবকত্ব করছি এবং একজন অসহায় নারীর দায়িত্ব গ্রহণ করে একটি পুণ্যের কাজ করেছি বলে বিশ্বাস করি। আমি যা বললাম, এটা আল্লাহর নামের হাজার বার শপথ করে বলতে পারব। বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য কুল্লামার শপথও করতে পারি।

বিষয়টি খোলাসা করার পরেও যুবলীগ, আওয়ামী লীগের গুন্ডারা আমার সাথে যে অমানবিক আচরণ করেছে এবং হামলা করেছে, গায়ে হাত তুলেছে, আমি এর বিচার চাই আল্লাহর কাছে, প্রশাসনের কাছে এবং জনগণের কাছে। পুলিশের উপস্থিতিতে তাদের এই হামলা ও আচরণ প্রমাণ করে বর্তমানে বাংলাদেশে মান-সম্মান কিংবা জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে চলাফেরা করা সম্ভব না।

(মামুনুল হকের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)/সূত্র:বিডিপ্রতিদিন

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর স্বার্থে ড্যাপ ও ইমারত বিধিমালা সংশোধন করলে এর দায়ভার নিতে হবে সরকারকে


সাইফুল আলম, বিশেষ প্রতিনিধি, মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫, ০৯:৫৭
ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর স্বার্থে ড্যাপ ও ইমারত বিধিমালা সংশোধন করলে এর দায়ভার নিতে হবে সরকারকে

ছবি: মুক্তসংবাদ প্রতিদিন

 

মো: সাইফুল আলম সরকার, ঢাকা:  ব্যবসায়িক স্বার্থগোষ্ঠীর অনৈতিক চাহিদা পূরণ করতে ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালার বিদ্যমান ত্রুটিপূর্ণ সংশোধন প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। ড্যাপ ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালার যে কোন সংশোধন নাগরিক, পেশাজীবি, কমিউনিটি ও সামাজিক সংগঠনসমূহকে যথাযথ সম্পৃক্ত করবার মাধ্যমে এবং তাদের মতামতের সাপেক্ষে সার্বিক জনকল্যাণ ও শহরের বাসযোগ্যতাকে মাথায় রেখে করতে হবে। নাগরিকদের উপেক্ষা করে ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর স্বার্থে ড্যাপ ও ইমারত বিধিমালা সংশোধন করলে এর দায়ভার নিতে হবে সরকারকে।

আজ ১৮ মার্চ, ২০২৫ (মঙ্গলবার), সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকার আবদুস সালাম হল এ অনুষ্ঠিত গোষ্ঠীস্বার্থে বারবার ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালার পরিবর্তনঃ জনস্বার্থ, ও বাসযোগ্যতার বিপন্নতা এবং নাগরিকের করণীয় শীর্ষক ‘সংবাদ সম্মেলন’ এ তুলে ধরা হয়।

বিগত সময়ে গোষ্ঠীস্বার্থে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পরিকল্পনায় যে সকল পরিবর্তন করা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক সঠিক তদন্ত করে শ্বেতপত্র প্রকাশ করবার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ড্যাপে এলাকাভিত্তিক নাগরিক সুবিধাদি যথা স্কুল, হাসপাতাল, পার্ক, খেলার মাঠ প্রভৃতির যে প্রস্তাবনা দেয়া আছে, সেগুলোর বাস্তবায়নের রাজউক, সিটি কর্পোরেশনসহ সরকারী সংস্থাসমূহকে অতি দ্রুত এলাকাভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে বাস্তবায়ন করতে হবে।

বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান এর সঞ্চালনায় ‘সংবাদ সম্মেলন’ এ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)-র সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান। তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান এর পর দেশের সংবিধানসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সংস্কার হলেও সমগ্র দেশের টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের নগরায়ন, নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, ইমারত, নির্মাণ ও পরিবেশ সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিমালার যৌক্তিক কোন সংস্কার হয়নি। বিপরীতে ড্যাপ নিয়ে স্বার্থান্বেষী মহল সবসময়ই অপপ্রচারণা চালিয়েছে। ড্যাপ অচিরেই সংশোধন করা হবে, এই বার্তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিয়ে ভবন নির্মানে আগ্রহী ভবন মালিকদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। ইমারত নকশা ও নির্মাণ সংশ্লিষ্ট অনেক পেশাজীবি নতুন ড্যাপের প্রস্তাবনা অনুযায়ী ভবন নকশায় আগ্রহী না হয়ে ভবন মালিকদের ভিন্ন বার্তা দেবার চেষ্টা করেছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা প্রণয়ন এর সাথে সাথেই বারংবার স্বার্থান্বেষী মহলের বাধার কারণে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হতে পারছে না।

গত দুটি বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা প্রণয়ন এর পরপরই রিভিউ কমিটি গড়ে ড্যাপ বাস্তবায়নের মূল শক্তিটাই নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। সরকার উভয় ক্ষেত্রেই প্রভাবশালী মহলের কাছে সামগ্রিক জনস্বার্থ, শহরের বাসযোগ্যতাকে ছাড় দিয়েছে। অনুরূপভাবে বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা ২০০৪ এর সংশোধন করা হয় ২০১৫ সালে, যাতে আবাসন ব্যবসায়ীদের চাপে জনস্বার্থ উপেক্ষা করে নাগরিক সুবিধাদির মানদণ্ড অনেক কমিয়ে ফেলা হয়েছে, ফলে কমেছে পার্ক, খেলার মাঠ, বিদ্যালয় প্রভৃতি নাগরিক সুবিধাদি। শহরের পরিবেশ-প্রতিবেশ ও বাসযোগ্যতা বিপন্ন করতে এ ধরনের ষড়যন্ত্র এখনো চলছে।

তিনি আরো বলেন , ২০০৮ সালের ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় আবাসিক ভবনের জন্য মোটা দাগে রাস্তার প্রশস্থতা ও প্লটের আয়তনের উপর ভিত্তি করে সর্বনিম্ন ‘এফএআর’ মান ৩.১৫ ও সর্বোচ্চ ৬.৫ দেয়া হয়েছিল। বর্তমান বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় আবাসিক এ৩ (ফ্ল্যাট বা এপার্টমেন্ট) শ্রেণীর জন্য এই মান সর্বোচ্চ ৪.২৫ নির্ধারণ করা হয়েছিল, যা মে’২০২৪ সালে খসড়া ইমারত বিধিমালায় অনুসরণ করা হয়েছিল। অথচ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে রাজউক কর্তৃক প্রণীত ইমারত বিধিমালার খসড়াতে প্লটভিত্তিক আবাসিক এ৩ ক্যাটাগরির ফার মান ৫.৫ করা হয়েছে, যা প্রায় অবাসযোগ্য ঢাকা শহরের উপর চাপ মারাত্মকভাবে বাড়িয়ে দেবে। অথচ বৈশ্বিকভাবেই ছোট আয়তনের প্লটভিত্তিক আবাসিক ভবনের ক্ষেত্রে ফার মান সাধারণত ১ থেকে ২.৫ এর মধ্যেই হয়ে থাকে। ড্যাপে অনেকে এলাকার ফার ও জনঘনত্ব কয়েকগূণ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে রাজউক। অথচ সেসব এলাকার নাগরিক সুবিধাদি একই থাকছে। গোষ্ঠীস্বার্থে বিধিমালার ফার মান পরিবর্তন শহরের জন্য বাসযোগ্যতার জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। নগর পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নগর এলাকার ধরন, মান ও অবস্থান অনুযায়ী পরিকল্পনার কৌশল, জনঘনত্ব, ফার মান, উচ্চতা সীমা প্রভৃতি ভিন্ন হয়ে থাকে।

২০২৪ সালের শুরুতে প্রস্তুতকৃত খসড়া ইমারত বিধিমালায় আবাসিক এলাকার ফার মান বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার সাথে সংগতি রেখে কেন্দ্রীয় ঢাকা, বহিঃস্থ নগর ও অন্যান্য নগর এলাকার জন্য পৃথক ফার মান দেয়া হয়েছিল। এটা অত্যন্ত বিস্ময়কর যে বর্তমান ইমারত বিধিমালা প্রস্তাবনায় এই এলাকাভিত্তিক প্রস্তাবনা বাদ দেয়া হয়েছে। ভবনের সেটব্যাক দূরত্ব যথাযথ করে ভবনের ভেতর প্রাকৃতিক আলো-বাতাস চলাচলের বিষয়টিও উপেক্ষিত বিধিমালার প্রস্তাবনায়।

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এবং বায়ুমন্ডল অধ্যায়ন কেন্দ্র এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, জলাবদ্ধতা, যানজট ও বর্জ্য অব্যবস্থাপনার কারণে ঢাকা অমানবিক শহরে পরিণত হয়েছে। শুধুমাত্র ব্যবসায়িক চিন্তা-ভাবনার জন্য ঢাকা বর্তমানে এমন একটি অবস্থায় এসেছে দাঁড়িয়ে যে, সম্প্রতি একটি জরিপে দেখা গিয়েছে যে বিশ্বের ১৪৭ টি বসবাসযোগ্য নগরীর ভিতরে ঢাকার অবস্থান ১৪৩ যা মূলত ঢাকার অবসবাসযোগ্যতাকেই চিহ্নিত করে। বাংলাদেশে যেকোন প্রকল্প বা স্থাপনা বাস্তবায়নের সময় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করা হয় না। এছাড়াও যথাযথ পরিকল্পনার অভাবে ঢাকা শহরের সবুজ  এলাকা ও জলাশয় মারাত্মকভাবে কমে গিয়েছে। গাছ ও বনভূমি ধবংস বন্ধ করা সহ পুরো ঢাকা শহরের যথাযথ পরিকল্পনার জন্যে সরকারের কাছে তিনি আহবান জানান।

বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, যে কোন শহরের টেকসই পরিকল্পনা এবং সামগ্রিক জনস্বার্থ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় বিধিবিধান সম্বলিত ইমারত নির্মাণ বিধিমালা প্রণয়ন এবং সেটির কার্যকর বাস্তবায়ন অত্যন্ত প্রয়োজন। ঢাকার ইমারত বিধিমালা যেন প্রণয়ন হচ্ছে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সুরক্ষা করতে। শহরের ডাক্তার হচ্ছে পরিকল্পনাবিদ অথচ রাজঊক এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ড্যাপ সংশোধনের ব্যাপারে পরিকল্পনাবিদদের মতামতকে একদমই অগ্রাহ্য করছে।  ফলে সামনে ঢাকার নাগরিকদের জন্য আরও বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।

সেন্টার ফর হাউজিং এন্ড বিল্ডিং রিসার্চের নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী মো: আবু সাদেক বলেন, আবাসন ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেবার জন্য এত বছর পরেও পূর্বাচল এলাকায় গ্যাস, পানি ও অন্যান্য পরিসেবা ও নাগরিক সুবিধাদি গড়ে উঠেনি। স্বাধীনতার পর এই প্রথম পেশাজীবি সংগঠন ও সাধারণ নাগরিকদের মতামতকে উপেক্ষা করে নীতিমালা সংশোধন করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ অনৈতিক। গুটিকয়েক স্বার্থান্বেষী ব্যবসায়ীগোষ্ঠীর মুনাফা বাড়ানোর জন্য এই পরিবর্তন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি রাজঊক এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে ড্যাপ সংশোধনের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট নাগরিক ও পেশাজীবি মহলের মতামত গ্রহণ করে পরিকল্পিত শহর গড়ে তোলার আহবান জানান।

বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. শায়ের গফুর বলেন যে, নগর নাগরিকদের হাত থেকে বেহাত হয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়িদের পণ্য হয়ে গিয়েছে শহর। ব্যবসায়িরা রাজনৈতিক ভাবে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করতে বিল্ডিং এর উচ্চতা, ফার বাড়িয়ে নিচ্ছে। ফলে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। কোন প্রকার পরিকল্পনা ছাড়াই প্রধান সড়কের পাশে নতুন শপিং মল তৈরী করার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে প্রকট যানজট। সুতরাং লক্ষ্য রাখতে হবে, একটা শহরের মধ্যে যেন সবকিছু কেন্দ্রভুত না হয়। যথার্থ পরিকল্পনা ও বিকেন্দ্রীকরণ কৌশল নিতে  পারলে ঢাকার জনসংখ্যা কমানোও সম্ভব।

বিআইপি সাবেক সহ-সভাপতি ফজলে রেজা সুমন বলেন, ড্যাপ ও ইমারত বিধিমালার সাথে সম্পৃক্ত সব অংশীজনদের  মতামতের ভিত্তিতে ড্যাপ ও ইমারত বিধিমালা সংশোধন করতে হবে। বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থে বিধিমালা সংশোধন করা যাবে না। তিনি আরও বলেন, যারা অতীতে পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় সম্মুখ সারিতে ছিল, আজ তারাই ড্যাপ ও বিধিমালা সংশোধন করে ঢাকার বাসযোগ্যতা নষ্ট করবার চক্রান্ত করছে, যা কাম্য নয়। ঢাকার বাসযোগ্যতা নষ্ট করতে যেন কোন আইন ও পরিকল্পনার সংশোধনী না করা হয়, উপদেষ্টাদের প্রতি আহবান জানান তিনি।

জুরাইন এলাকার নাগরিক অধিকারকর্মী মিজানুর রহমান বলেন যে, ঢাকা শহরে শিশুদের খেলার কোন জায়গা নেই, চারপাশের পরিবেশও ভালো না। ফলে শিশুরা গৃহবন্দি হয়ে থাকে। তাদের স্বাভাবিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) টাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, মানুষের শহরকে কিভাবে বাসযোগ্য রাখা যায় তা আমাদেরকে ভাবতে হবে। যাদের মাঝে দেশপ্রেম নেই, তারা দেশের বাসযোগ্যতা চায় না।

বাসযোগ্যতা, প্রাণ-প্রকৃতি নষ্ট করে, এমন কোন পরিকল্পনা আমরা চাই না। তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক সৈয়দা রত্না বলেন, জুলাই আন্দোলন যে বৈষম্যের জন্য হয়েছে, সেই বৈষম্য এখনও চলছে,যা পান্থকুঞ্জ পার্কে দৃশ্যমান। ঢাকার মাঠ হবে উন্মুক্ত, কোন মাঠকেই ব্যবসায়িক কাজের জন্য বন্ধ করা যাবে না।

১৯নং ওয়ার্ড কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন, করাইল এর সভাপতি সেলিনা আক্তার বলেন, বর্তমান সরকার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অংশ। অথচ আগামী ১৯ ই অনুষ্ঠিতব্য মার্চ উপদেষ্টা পরিষদের পরিকল্পনা মিটিংয়ে করাইলে বসবাসরত প্রায় ২.৫ লাখ নিম্ন আয়ের মানুষের বাসস্থানসহ মৌলিক অধিকার সংরক্ষণে কোন পরিকল্পনা নেই। তিনি আরো উল্লেখ করেন ভারত,শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডের মত দেশে নিম্নআয়ের মানুষের জন্য সরকারিভাবে আবাসন ব্যবস্থা ও অনুদানের ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশে বেশ কিছু এনজিও সংস্থা কাজ করলেও সরকারের পক্ষ হতে উল্লেখযোগ্য কোন উদ্যোগ নেই। এছাড়া করাইল বস্তিতে পানযোগ্য পানির অপ্রতুলতা এবং দুইটি পাম্পের পানি নিয়ে ব্যবসায়ীদের অবৈধ ব্যবসার কথা তুলে ধরে এর প্রতিকারের দাবি জানান তিনি। নিম্নআয়ের মানুষকে দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনায় অন্তর্ভূক্ত করে সকলের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণের আহবান জানান তিনি।

এছাড়াও সংবাদ সম্মেলন উপস্থিত ছিলেন বিআইপির সহ সভাপতি-১ পরিকল্পনাবিদ সৈয়দ শাহরিয়ার আমিন, বিআইপির বোর্ড সদস্য পরিকল্পনাবিদ মোঃ মোসলেহ উদ্দীন হাসান, পরিকল্পনাবিদ উসওয়াতুন মাহেরা খুশি, পরিকল্পনাবিদ মোঃ ফাহিম আবেদীন এবং পরিকল্পনাবিদ  নাহিদ আরিফীন সহ নাগরিক ও পেশাজীবিগগণ।
 
সংবাদ সম্মেলনের যৌথ আয়োজনে যুক্ত থাকা বিভিন্ন নাগরিক, পেশাজীবী ও সামাজিক সংগঠনসমূহ হচ্ছে - বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি), সেন্টার ফর এ্যাটমসফেরিক পলিউশন স্টাডিজ (ক্যাপস), ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্ট, বাংলাদেশ আরবান ফোরাম, সেন্টার ফর হাউজিং এন্ড বিল্ডিং রিসার্চ, ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি), ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা), সেন্টার ফর ল' এন্ড পলিসি এফেয়ার্স, বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইনডিজেনাস নলেজ, ইনস্টিটিউট ফর ওয়েলবিং বাংলাদেশ, ধ্রুবতারা ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, উইমেন এন্ড ডিজএ্যাবিলিটিজ ফাউন্ডেশন, ইনস্টিটিউট অব ফরেস্টার বাংলাদেশ, বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন, তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলন, ন্যাশনাল ডিবেট ফেডারেশন এবং ১৯ নং ওয়ার্ড কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন, করাইল।

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম
Share on Facebook

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন এর সর্বশেষ