a
ফাইল ছবি
এল ক্লাসিকোয় জিতে লা লিগায় পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে উঠল রিয়াল মাদ্রিদ। রবিবার স্যান্টিয়াগো বার্নাবিউতে বার্সেলোনাকে ৩-১ গোলে হারিয়ে এল ক্লাসিকোয় বাজিমাত করল কার্লো আন্সেলোত্তির দল। ম্যাচের ৮২ মিনিট পর্যন্ত ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল রিয়াল। ম্যাচের ১২ মিনিটে করিম বেঞ্জিমার গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর ৩৫ মিনিটে ভালভেরদে-র গোলে লিড দ্বিগুণ করে রিয়েল।
ম্যাচের ৮৩ মিনিটে ব্যবধান কমান বার্সার ফার্নান্দো টোরেস। খেলা শেষের ঠিক আগে পেনাল্টি থেকে ফল রিয়ালের পক্ষে ৩-১ করেন রডরিগো। লা লিগায় ৯ ম্যাচে ২৫ পয়েন্ট পেয়ে শীর্ষে উঠল রিয়াল। অন্যদিকে, মৌসুমে প্রথম হারের স্বাদ পেল জাভির দল।
ফাইল ছবি: মেসি
কী জানি কী হয়! উত্তেজনা ও উৎকণ্ঠা লিওনেল মেসির চোখে মুখে। পারবেন কি ইন্টার মায়ামিকে প্রথম শিরোপাটা এনে দিতে? কিছুই তখন তাঁর হাতে ছিল না। নিজের কাজটা আগেই সেরে রেখেছিলেন। নির্ধারিত সময়ে করেছেন নান্দনিক এক গোল। টাইব্রেকারে দলের প্রথম শটটি নিয়েও করেছেন গোল।
এরপরই শুরু টেনশন! তবে মেসিকে নিরাশ করেননি তাঁর সতীর্থরা। ম্যারাথন পেনাল্টি শুটআউটে দুই দল ১০টি করে শট নিয়ে ফেলেছে, টাইব্রেকারে তখন ৯-৯ এ সমতায়। শট নিতে এলেন গোলরক্ষকেরা। দারুণ শটে গোল করলেন ইন্টার মায়ামির গোলরক্ষক ড্রেক ক্যালেন্ডার। এরপর প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের শট ঠেকিয়ে দলকে এনে দেন শিরোপাও। ১-১ গোলে সমতায় থাকার পর ইন্টার মায়ামি টাইব্রেকারে ম্যাচ জিতে নেয় ১০-৯ গোলে।
গত বছরের ডিসেম্বরে বিশ্বকাপ জিতে সপ্তম স্বর্গে আরোহণ করেছিলেন মেসি। ফুটবল থেকে নিজের আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই বলে নিজেই একাধিকবার বলেছেন। কিন্তু নিজের জন্য নয়, যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন তলানিতে থাকা ইন্টার মায়ামিকে ভালো কিছু উপহার দেবেন বলে। সেই লক্ষ্যে প্রথম ধাপেই সফল আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক। লিগস কাপের মধ্য দিয়ে মায়ামিকে এনে দিলেন প্রথম শিরোপা।
এদিন ন্যাশভিলের মাঠ জিওডিস পার্কে শুরু থেকেই বল পায়ে রেখে আক্রমণ তৈরির চেষ্টা করে ইন্টার মায়ামি। ৪ মিনিটের মাথায় লং বলে সুযোগ তৈরির চেষ্টা করেছিলেন মেসি। যদিও সেই সুযোগ পরিণতি পায়নি। ইন্টার মায়ামি বলের দখল রেখে খেলায় ন্যাশভিলে এ সময় চেষ্টা করছিল প্রতি-আক্রমণ থেকে সুযোগ তৈরির।
দুই-একবার ওপরেও ওঠে এসেছিল তারা। যদিও তা গোল আদায়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না। বিপরীতে ইন্টার মায়ামিও অ্যাটাকিং থার্ডে গিয়ে খুব একটা জায়গা পাচ্ছিল না। কড়া পাহারার কারণে হতাশ হতে হচ্ছিল তাদের। কিন্তু কড়া পাহারায় কি আর মেসিকে আটকে রাখা যায়! ন্যাশভিলেও পারেনি।
২৩ মিনিটে দুর্দান্ত এক গোলে ইন্টার মায়ামিকে এগিয়ে দেন মেসিই। ন্যাশভিলের ডি-বক্সের কাছাকাছি জায়গায় রবার্ত টেলরের বাড়ানো বল প্রতিপক্ষ খেলোয়াড় ঠিকভাবে বিপদমুক্ত করতে পারেননি। বল চলে আসে বক্সের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা মেসির কাছে। কয়েক পা এগিয়ে শরীরের ঝাঁকুনিতে দুজন ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে বাঁ পায়ের জোরাল শটে গোল করেন মেসি। মেসির সেই গোল তাঁর আশপাশে থাকা ন্যাশভিলের ৫ খেলোয়াড়ের চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। এ নিয়ে ইন্টার মায়ামির হয়ে টানা ৭ ম্যাচে ১০ গোল করলেন মেসি।
বিরতির পরও ন্যাশভিলে চেষ্টা করে ম্যাচে ফেরার। অন্যদিকে ইন্টার মায়ামির চোখ ছিল ব্যবধান বাড়ানোয়। একাধিক আক্রমণ থেকে মেসিরা ব্যবধান বাড়াতে ব্যর্থ হন। ৫৭ মিনিটে সমতা ফেরায় ন্যাশভিলে। দলকে গোল এনে দেন ফাফা পিকাল্ট। কর্নার থেকে আসা বলে নিচু করে হেড নেন ফাফা। বল লাইনে দাঁড়ানো বেঞ্জামিন ক্রেমাশ্চির গায়ে লেগে ফিরে আসছিল। সেই সময় সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গোলরক্ষকের গায়ে লেগে আবার জালে জড়ায় বল।
ম্যাচে সমতা ফেরার পর দুই পক্ষই এগিয়ে যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। ৭০ মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে আরেকটি ট্রেডমার্ক শটে দলকে প্রায়ই এগিয়েই দিয়েছিলেন মেসি! কিন্তু এবার মেসির মাটি কামড়ানো শটে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় গোল পোস্ট। ৭৭ মিনিটে স্যাম সারিডগে ইন্টার মায়ামি গোলরক্ষক ড্রেক ক্যালেন্ডারকে ফাঁকি দিতে পারলে ব্যবধান বাড়াতে পারত ন্যাশভিলে।
শেষ দিকে আরও দুটি দারুণ সেভ করে ইন্টার মায়ামিকে বাঁচান ক্যালেন্ডার। যোগ করা সময়ে গোল পেতে পারত মায়ামিও। কিন্তু তারাও পারেনি বল জালে জড়াতে। এরপর নির্ধারিত সময়ে দুই দলই চেষ্টা করেছিল গোল আদায়ের। কিন্তু পায়নি কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা। ম্যাচ চলে যায় টাইব্রেকারে।
টাইব্রেকারের প্রথম শটটি নিতে আসেন মেসিই। ঠান্ডা মাথায় গোলরক্ষককে উল্টো দিকে পাঠিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। তবে এরপর দুই দলই একটি করে পেনাল্টি মিস করে। ৫ শটের পর সমতা থাকে ৪-৪ এ। এরপর ম্যারাথন পেনাল্টি শুটআউটে জয় পায় মায়ামি। সূত্র: প্রথম আলো
ছবি সংগৃহীত
ইতিহাস প্রতিটি জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু জাতির সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে, আবার কিছু জাতি তা থেকে বঞ্চিত। তবে মানব সভ্যতার স্বার্থে ইতিহাস সবসময় সত্যের প্রতিনিধিত্ব করতে হবে, অন্যথায় ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভুল ইতিহাস জানবে, যা কোনোভাবেই সভ্য বিশ্বের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। ইতিহাসের মূল উদ্দেশ্য জাতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করা এবং একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণের দিকনির্দেশনা দেওয়া। কিন্তু বিকৃত ইতিহাস জাতিকে বিভ্রান্ত করে এবং বিপথে পরিচালিত করে, যার ফলে জাতি এক সময় বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
যে কোনো জাতির উচিত সত্য ইতিহাস অনুসন্ধান করা, যদিও এটি কঠিন। কিন্তু জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এই চেষ্টাটি করা আবশ্যক। আমাদের দুর্ভাগ্যজনক যে, স্বাধীনতার পর গত পাঁচ দশকে শাসকগোষ্ঠী নিজেদের বিবৃতি জাতির সামনে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছে এবং অধিকাংশ ইতিহাসবিদ শাসকদের ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন, বাকিরা নীরব থেকেছেন। অথচ, সত্য ইতিহাসের খোঁজ খুবই জরুরি, কারণ এটি একটি জাতির সাফল্য ও ব্যর্থতা উভয় থেকেই শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য পথ-নির্দেশনা দেয়।
আমাদের জাতি শুরু থেকেই এক বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে—স্বাধীনতা ঘোষণা আসলে কে করেছিলেন? ইতিহাসের নিরিখে এটি মেজর জিয়াউর রহমান, যিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা হিসেবে নিজের জীবন ও পরিবারের ভবিষ্যৎ বিপদের মুখে ফেলে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। এ ঘটনার সাক্ষী আজও জীবিত, যেমন ড. কর্নেল অলি আহমদসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, আওয়ামী লীগ একটি ভিন্ন বিবৃতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে যে, শেখ মুজিব গ্রেফতার হওয়ার আগে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। অথচ তাজউদ্দীন আহমদসহ কয়েকজন নেতার অনুরোধ সত্ত্বেও শেখ মুজিব সে সময় কোনো ঘোষণা দেননি। পরে পাকিস্তান কর্তৃক বন্দি হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সময় কাটান। যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি স্বাধীনতার যুদ্ধেও অংশ নেননি, তবে যুদ্ধের পর নিজেকে একমাত্র নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য সব চেষ্টা করেছিলেন।
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ আমাদের বিজয় দিবস হিসেবে পালিত হয়, কারণ ওই দিন পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। এটি ভারতের জন্য একটি গৌরবময় ঐতিহাসিক মুহূর্ত। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হলো, আমরা কীভাবে একটি বিদেশি দেশের সঙ্গে আমাদের বিজয় ভাগ করে নিই? এটি ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, যার সমাধান জাতীয় স্বার্থে করতে হবে। ২২ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ মুজিবনগর সরকার ঢাকায় ফিরে এসে বাংলাদেশের দায়িত্ব গ্রহণ করে। তাই, ২২ ডিসেম্বরকে আমাদের বিজয় দিবস হিসেবে ঘোষণার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।
স্বাধীনতার সময় এবং পরবর্তীতে জিয়াউর রহমানের অবদানের কথা ইতিহাস থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে এবং তাকে স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। অন্যদিকে, শেখ মুজিবের ব্যর্থতাগুলি কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। সশস্ত্র বাহিনীর অবদান ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে এবং মৌলানা ভাসানীসহ অন্যান্য নেতার ভূমিকাকেও উপেক্ষা করা হয়েছে।
আমাদের ইতিহাসকে মাত্র ২৪ বছরে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে, অথচ আমাদের কয়েকশ বছরের পুরোনো ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে। মুসলিম শাসকদের, যেমন নবাব সিরাজউদ্দৌলার বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা আমরা ভুলে গেছি। মুসলিম ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় বর্ণনার অনুসরণে মুসলিম শাসকদের আক্রমণকারী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যদিও তারা বাংলা ভালো বেসেছেন, বাংলায় বসবাস করেছেন এবং জনগণের কল্যাণে কাজ করেছেন।
মুসলিম নেতাদের, যেমন তিতুমীর, হাজী শরীয়তুল্লাহ, পীর দুদু মিঞা, নবাব আবদুল লতিফ, নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী, স্যার সৈয়দ আমীর আলী, শেরে বাংলা ফজলুল হক, এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অবদানও ইতিহাস থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এগুলো তথাকথিত ইতিহাসবিদদের কাজ, যারা তাদের ভারতীয় মনিবদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কাজ করে গেছেন এবং আজও সক্রিয়।
ভারতের সহযোগিতার কথা আমাদের ইতিহাসে উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের নিজস্ব প্রচেষ্টাগুলিকে তুচ্ছ করা হয়েছে। ভারত আমাদের বিজয়কে তাদের নিজের বিজয় হিসেবে ছিনিয়ে নিয়েছে, যা ইতিহাসের এক বড় ট্র্যাজেডি।
আমাদের ইতিহাসে এমন বহু অসঙ্গতি রয়েছে, যা সমাধান করা অত্যন্ত প্রয়োজন। ইতিহাসবিদদের উচিত জাতির সামনে সত্য ইতিহাস তুলে ধরা। সত্য ইতিহাসের স্বার্থে এই সমস্ত বিষয় এখনই মীমাংসা করা জরুরি।
লেখক: ড. এস কে আকরাম আলী
সম্পাদক, মিলিটারি হিস্ট্রি জার্নাল এবং আইন ও ইতিহাসের অধ্যাপক।