a
ফাইল ছবি
এল ক্লাসিকোয় জিতে লা লিগায় পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে উঠল রিয়াল মাদ্রিদ। রবিবার স্যান্টিয়াগো বার্নাবিউতে বার্সেলোনাকে ৩-১ গোলে হারিয়ে এল ক্লাসিকোয় বাজিমাত করল কার্লো আন্সেলোত্তির দল। ম্যাচের ৮২ মিনিট পর্যন্ত ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল রিয়াল। ম্যাচের ১২ মিনিটে করিম বেঞ্জিমার গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর ৩৫ মিনিটে ভালভেরদে-র গোলে লিড দ্বিগুণ করে রিয়েল।
ম্যাচের ৮৩ মিনিটে ব্যবধান কমান বার্সার ফার্নান্দো টোরেস। খেলা শেষের ঠিক আগে পেনাল্টি থেকে ফল রিয়ালের পক্ষে ৩-১ করেন রডরিগো। লা লিগায় ৯ ম্যাচে ২৫ পয়েন্ট পেয়ে শীর্ষে উঠল রিয়াল। অন্যদিকে, মৌসুমে প্রথম হারের স্বাদ পেল জাভির দল।
ফাইল ছবি
আজ ওল্ড ট্রাফোর্ডের দিকে তাকিয়ে ছিলো বিশ্বের কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমী। কারণ ছিল একটাই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে আজ ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে পুনরভিষেক হয়েছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর। ঘরের ছেলে ১২ বছর পর ফিরেছে ঘরে। সমর্থকদের উল্লাস সীমা ছাড়িয়ে গেছে। তাদের আনন্দ বাড়িয়ে নিউক্যাসেলের বিপক্ষে ম্যাচটিতে মাঠে নেমেই গোল করে দলকে এগিয়ে দিয়েছেন সিআর সেভেন। দল পেয়েছে বড় ব্যবধানে জয়।
প্রথমার্ধের মূল সময় শেষ হয় গোলশূন্যভাবে। যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে ম্যান ইউকে এগিয়ে দেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ১২ বছর পর পুনরভিষেকে এটা তার প্রথম গোল। দ্বিতীয়ার্ধের ৫৬তম মিনিটে গোলটি পরিশোধ করে ফেলে নিউক্যাসেল। ম্যাচে চলে আসে উত্তেজনা। ৬২ তম মিনিটে রোনালদো নিজের দ্বিতীয় গোলটি করে ম্যন ইউকে আবারও এগিয়ে দেন। এরপরেই ম্যাচ চলে আসে ম্যান ইউয়ের নিয়ন্ত্রণে।
এই বিশেষ দিনের বিশেষ ম্যাচটিতে তাকে প্রথম একাদশে রাখা হয়েছিল। মাঠভর্তি দর্শকের সামনে শুরু থেকেই সেই চিরচেনা রূপে ধরা দেন সিআর সেভেন। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে জমে ওঠে ম্যাচ। ৮০তম মিনিটে তৃতীয় গোলটি করেন আরেক পর্তুগীজ ব্রুনো ফার্নান্দেজ। স্কোরলাইন হয়ে যায় ৩-১। ম্যাচ শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে আবারও গোল। নিউক্যাসেলের জালে এবার বল জড়ান জেসি লিংগার্ড। ৪-১ ব্যবধানে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সোলসারের শিষ্যরা।
ছবি সংগৃহীত
কর্নেল(অব.) আকরাম: ষড়যন্ত্র আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি পারিবারিক জীবন থেকে শুরু করে জাতীয় জীবন পর্যন্ত বিস্তৃত। আমাদের জাতি অতীতে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে এবং এর ফলে সীমাহীন কষ্ট ভোগ করেছে। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় ষড়যন্ত্র আমাদের জাতীয় জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অধ্যায় হয়ে উঠেছে।
ভারতে মুসলিম শাসনের সময় ষড়যন্ত্র ছিল একটি সাধারণ ঘটনা। প্রাসাদ অভ্যন্তরের কূটচাল এবং ক্ষমতার দ্বন্দ্বের মাধ্যমে বহু শাসকের পরিবর্তন ঘটেছে। পুরো মুসলিম শাসনামলেই রাজপ্রাসাদের অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র শাসকের পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রেখেছিল। তবে এই সময়ে বাইরের কোনো শক্তির সরাসরি হস্তক্ষেপের নজির ইতিহাসে ছিল না।
বিদেশি শক্তির প্রথম প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্র দেখা যায় বাংলায়, যখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে পড়ে। কোম্পানি নবাবের সেনাপ্রধান মীরজাফর এবং মুর্শিদাবাদের হিন্দু ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক অভিজাতদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাংলার শাসনভার দখল করে। মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতা এবং মুর্শিদাবাদের হিন্দু ব্যাংকারদের সহযোগিতার ফলে বাংলার স্বাধীনতা হারায়, আর ভারতবর্ষের মুসলমানরা প্রায় দুইশত বছরের জন্য ব্রিটিশদের দাসে পরিণত হয়।
পলাশীর যুদ্ধের পরিণতি এতটাই ভয়াবহ হয়েছিল যে, পুরো ভারতবর্ষের মুসলমানরা সমাজের নিপীড়িত শ্রেণিতে পরিণত হয় এবং ব্রিটিশ শাসনামলে একের পর এক ষড়যন্ত্রের শিকার হতে থাকে। কলকাতার হিন্দু অভিজাত সম্প্রদায় বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করে এবং ১৯১১ সালে ব্রিটিশদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে এটি বাতিল করতে বাধ্য করে। কিন্তু ১৯৪৭ সালে একই হিন্দু অভিজাত শ্রেণি বাংলাকে একত্রিত রাখতে দেয়নি। এটি ছিল কংগ্রেসের হিন্দু নেতাদের গভীর ষড়যন্ত্র।
ভারতের মুসলমানরা ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্ম পর্যন্ত একের পর এক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর, পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যবিত্ত শ্রেণি নতুন সুযোগের সন্ধান পায় এবং উন্নতির স্বপ্ন দেখে। কিন্তু স্বাধীনতার শুরু থেকেই ভারত ষড়যন্ত্রমূলক নীতি গ্রহণ করে পাকিস্তানকে বিভক্ত করার পরিকল্পনা করে। ভারত দ্রুত সোভিয়েত-সমর্থিত কমিউনিস্ট দল এবং সদ্য প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে।
ভারতের ষড়যন্ত্র তখনই প্রকট হয়ে ওঠে যখন শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের প্রধান নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ছিল ভারতের ষড়যন্ত্রের স্পষ্ট প্রমাণ। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল। এই সুযোগে শেখ মুজিব তার ছয় দফা দাবি উপস্থাপন করেন, যা পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের কাছে ‘ম্যাগনা কার্টা’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।
ছয় দফা দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং ভারত-সমর্থিত আওয়ামী লীগের চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলো পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার জন্য সক্রিয় হতে শুরু করে। আবদুর রাজ্জাক ও সিরাজুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে কয়েকজন তরুণ নেতা স্বাধীনতা আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু গঠন করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ শেখ মুজিবের নেতৃত্বে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে, কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক-রাজনৈতিক অভিজাত শ্রেণি ষড়যন্ত্র শুরু করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিবর্তে তারা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ওপর দমন-পীড়ন চালায়।
এই সুযোগে ভারত দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যায়। মাত্র নয় মাসের মধ্যে ভারত ও সোভিয়েত রাশিয়ার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় পাকিস্তান বিভক্ত হয়ে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়। ভারতের ষড়যন্ত্র সফল হয় এবং তারা বাংলাদেশকে একটি আজ্ঞাবহ রাষ্ট্রে পরিণত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারতের ষড়যন্ত্র পুরনো সামাজিক কাঠামো, ইসলামী ঐতিহ্য ও মূল্যবোধকে ধ্বংস করার দিকে মোড় নেয়। কথিত ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ এর মাধ্যমে সমাজের ধর্মীয় মূল্যবোধকে দুর্বল করা হয়। গত পাঁচ দশকে আমরা সমাজের নৈতিক অবক্ষয়, শিক্ষার মানের বিপর্যয় এবং আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারে আমাদের অযোগ্যতার প্রমাণ পেয়েছি। ভারতের ষড়যন্ত্র এতটাই সফল হয়েছে যে, আমরা কখনো তা বুঝতে পারিনি।
আমাদের রাজনৈতিক নেতারা, জিয়াউর রহমান ছাড়া, ভারতের ষড়যন্ত্রমূলক রাজনীতিকে বিশ্লেষণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ভারতীয় ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে জিয়াউর রহমান নিহত হন। গত ৫৪ বছরে আমরা ভারতের ষড়যন্ত্র থেকে মুক্ত হতে পারিনি, বরং প্রতিবার তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছি।
বেগম খালেদা জিয়া দুইবার জনগণের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এলেও, দুবারই তার নিজের নিয়োগকৃত সেনাপ্রধানদের ষড়যন্ত্রের শিকার হন। উভয় ক্ষেত্রেই ভারতের হাত ছিল, কিন্তু তার গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক এটি আগে থেকে বুঝতে পারেনি। ফলাফল—আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন।
২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব নতুন বাংলাদেশের সম্ভাবনা তৈরি করলেও এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, বরং সবকিছু আরও জটিল হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত, আর জাতির ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
ভারতীয় আধিপত্যবাদী রাজনীতি আজও সক্রিয় রয়েছে, অন্যথায় কেন রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের পরিবর্তে ভারতের সমর্থনের প্রত্যাশা করবে? আমরা কি কখনো ভারতীয় আধিপত্যবাদী রাজনীতি থেকে মুক্ত হতে পারব? এটি আজ জাতির সামনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
লেখক: ড. শেখ আকরাম আলী
লেখক ও আন্তর্জাতিক কলাম লেখক, মুক্তসংবাদ প্রতিদিন