a
ফাইল ছবি
২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি ও নীতিমালা প্রকাশ করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের ওয়েবসাইট প্রকাশ করা হয়েছে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি। আর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের ওয়েবসাইটে নীতিমালা প্রকাশ করা হয়েছে।
ভতির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে মেডিকেল ভর্তির আবেদন নেওয়া শুরু হবে। ১০ মার্চ রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। আবেদন ফি ১ হাজার টাকা। ১১ মার্চ রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত টেলিটকের মাধ্যমে আবেদন ফি জমা দেওয়া যাবে।’
এতে আরও বলা হয়, ২৬ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র ডাউনলোড করা যাবে। ১ এপ্রিল সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সারাদেশে একযোগে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশি নাগরিক যারা বিদেশি শিক্ষা কার্যক্রম থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তাদের সার্টিফিকেট সমতাকরণ করতে হবে। এজন্য দুই হাজার টাকা জমা দিয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা ও জনশক্তি উন্নয়ন) বরাবর আবেদন করতে হবে।
ভর্তি পরীক্ষা পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসের আলোকে অনুষ্ঠিত হবে। আগের বছরের ন্যায় এইচএসসি পাস প্রার্থীদের ক্ষেত্রে মোট নম্বর থেকে ৫ নম্বর এবং পূর্ববর্তী বছরের সরকারি মেডিকেল, ডেন্টাল কলেজ ডেন্টাল ইউনিটে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে মোট নম্বর থেকে ৭ দশমিক ৫ নম্বর কেটে মেধাতালিকা তৈরি করা হবে। যারা ২০২০ বা ২০২১ সালে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় (পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞানসহ) উত্তীর্ণ হয়েছেন, তারা ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। ২০১৮ সালের আগে এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীরা আবেদন করতে পারবেন না।
এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ মোট ২০০ নম্বর হিসাবে নির্ধারণ করে মূল্যায়ন করা হবে। এক্ষেত্রে এসএসসিতে প্রাপ্ত জিপিএ এর জন্য ৭৫ নম্বর এবং এইচএসসিতে প্রাপ্ত জিপিএর জন্য ১২৫ নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। মোট ৩০০ নম্বরের ভিত্তিতে মেধাতালিকা প্রণয়ন করা হবে।
ভর্তি পরীক্ষা ১০০ নম্বরে হবে। পরীক্ষায় ১০০টি এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। প্রতিটির প্রশ্নের মান ১। এমসিকিউ পরীক্ষা হবে ১ ঘণ্টায়। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় পদার্থবিদ্যায় ২০, রসায়নে ২৫, জীববিজ্ঞানে ৩০, ইংরেজিতে ১৫ এবং সাধারণ জ্ঞান, ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ১০ নম্বরের (মোট ১০০) প্রশ্ন থাকবে।
ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
ভর্তির নীতিমালা দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
সূত্র: বিডি প্রতিদিন
ছবি: মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
সাইফুল আলম, ঢাকা: বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে এই বছরের নির্ধারিত প্রতিপাদ্য ‘ENDING PLASTIC POLLUTION’ ‘প্লাস্টিক দূষণ আর নয়' - সামনে রেখে পোশাক শ্রমিক উন্নয়ন জনকল্যাণ সংস্থা মানববন্ধন ও সমাবেশ আয়োজনের মধ্যে দিয়ে দিবসটিকে উদযাপন করছে।
আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে সকাল-১০ঃ৩০ ঘটিকায় এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের উদ্দেশ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও বিশ্বব্যাপি শ্রমজীবি মানুষকে সচেতনতা গড়ে তোলার প্রয়াসে পরিবেশ নিয়ে ভাবনার জায়গায় একত্রিত হয়েছে । বর্তমান সময়ে জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পৃথিবী চরম ঝুঁকিতে রয়েছে, যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে শ্রমজীবী ও নিম্নআয়ের মানুষের ওপর। পরিবেশগত এই সংকট আমাদের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাই সবাইকে নিজেদের অবস্থান থেকে পরিবেশ রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে। একমাত্র সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে আমাদের ভবিষ্যৎকে নিরাপদ করতে।
এছাড়া বন-ভূমির গাছপালা কেটে ফেলা, শিল্প কলকারখানার ধোঁয়া ও দূষিত বর্জ্যপদার্থ প্রকৃতির সাথে মিশে পরিবেশকে মারাত্মক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে । অন্যান্য সকল ক্ষেত্রের মতো পোশাকশিল্পেও পরিবেশ দূষণের প্রভাব বহুদিন ধরে পরিলক্ষিত হচ্ছে । এ ধরনের পরিবশ দূষণের ফলে কারখানার আশেপাশে যেসব শ্রমিকরা থাকে তাদের খাবার, তাপমাত্রা ও তাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ হয় নোংরা এবং নোংরা পরিবেশের কারনে তারা প্রায়শই বিভিন্ন রোগের শিকার হয় । কারখানায় ব্যবহৃত রাসায়নিক বর্জ্য ও অপরিচ্ছন্ন কর্মপরিবেশের দরুন তাদের বিভিন্ন পেশাগত ব্যাধি হয়। কারখানার ভেতরে সঠিক বায়ুচলাচলের (ভেন্টিলেশন) কোনো ব্যবস্থা নেই, যা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও কর্মপরিবেশের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই অবিলম্বে কার্যকর ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যাতে কর্মস্থলে স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ পরিবেশ বজায় থাকে। তাদের জন্য বাসযোগ্য আবাসস্থল নিশ্চিত করতে হবে। যথাস্থানে কারখানা নির্মাণ করতে হবে।
প্রকৃতি বিনাশ করে এভাবে শিল্প কারখানা ও স্থাপত্য নির্মাণ এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে । সমগ্রবিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশকেও এখন টেকসই উন্নতির জন্য (Sustainable Development) পরিবেশ রক্ষার কথা ভাবতে হচ্ছে। এছাড়াও গ্রীন ডেভেলপমেন্ট নিয়ে পৃথিবীর উন্নত দেশ গুলোও বেশ সোচ্চার এবং অগ্রনী ভুমিকা পালন করছে। বিশ্বেও অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকেও পরিবেশ উন্নয়নের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করে পদক্ষেপ নিতে হবে। টেকসই উন্নয়নের জন্য আজকের মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে শ্রমিকরা পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে বেশ কিছু পদক্ষেপ সরকারের নিকট বলিষ্ট কন্ঠে উত্থাপন করেন ।
পদক্ষেপ সমূহঃ
পরিবেশ রক্ষায় সকলের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন ।
শিল্প কারখনার বর্জ্য ও রাসায়নিক পদার্থের সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনায় কার্যকরী সরকারি পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন ।
শিল্প কারখানায় রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারের দিক নিদের্শনা সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে, উদাহরণ স্বরুপ ইটিপির মাধ্যমে ময়লা জল নিষ্কাশন করে তা পূনঃ ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা ।
কার্বন নিঃস্বরণ কমিয়ে পরিবেশ বান্ধব কারখানা তৈরী করতে হবে ।
জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বন্ধ করে নবায়ন যোগ্য জ্বালানি ব্যবহার বৃদ্ধি করি ।
কারখানায় ন্যায় সঙ্গত রুপান্তরে বায়ার ও ব্র্যান্ডকে পরিবেশ বান্ধব শিল্পকারখানা তৈরীতে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে ।
পাহাড় ও গাছপালা কেটে, নদী-নালা ভরাট করে শিল্পকারখানা ও স্থাপনা নির্মান রোধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে । সামাজিক সংলাপের মাধ্যমে পরিবেশ বান্ধব সবুজ কারখানা গড়ে তোলার অঙ্গীকার বদ্ধ হতে হবে ।
পরিবেশ আইন অমান্যকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে ।
বায়ার ও ব্র্যান্ডকে পরিবেশবান্ধব শিল্পকারখানা তৈরীতে দায়িত্ব গ্রহনের মাধ্যমে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে ।
প্লাষ্টিক দ্রব্য ব্যবহার রোধে মালিক, শ্রমিক, বায়ার, ব্র্যান্ড, দেশী-বিদেশী উন্নয়ন সংস্থা ও সরকার সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করে পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে ।
পরিবেশ বান্ধব ব্যবসানীতি প্রনয়ণ করতে হবে ।
পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সর্বপরি প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার্থে সরকারকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বে ফাষ্ট-ফ্যাশন এর জন্য শ্রমিকদের ঝুকিপুর্ন কাজ বন্ধ করার মাধ্যমে পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ তৈরী করতে হবে ।
জাতীয় বাজেটে পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধসহ শ্রমিকের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিরসনকল্পে যেসকল পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, তার জন্য
বরাদ্দ রাখা।
পরিবেশ দূষণের ফলে শ্রমিকেরা যেসব ক্ষতিকর স্বাস্থ্য হানির স্বীকার হচ্ছে তা রোধকল্পে সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে ।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পোশাক শ্রমিক উন্নয়ন জনকল্যাণ সংস্থার সভাপতি, সহ- সভাপতি, দপ্তর সম্পাদক, নারী কল্যাণ সম্পাদক, অর্থ সম্পাদক সহ বিভিন্ন এলাকার ৪০টি ইউনিয়নের নির্বাহী কমিটির সদস্যসহ আরো শ্রমিকগণ ।
ফাইল ছবি
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গত এক মাসে কয়েক হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং ইউক্রেন থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী ইউরোপীয় দেশগুলোয় আশ্রয় নিয়েছেন ত্রিশ লাখেরও বেশি মানুষ। দুই পক্ষের অনেক যোদ্ধা নিহত হয়েছেন।
বিধ্বস্ত হয়েছে ইউক্রেনের কয়েকটি শহর, আবাসিক এলাকা, বিদ্যালয়, এমনকি হাসপাতালও। পশ্চিমারা এরপরও ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনমূলক আক্রমণকে সফল বলছে না! এর কারণ, এখনো ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের পতন হয়নি। তার মানে আরও বেশি সাধারণ মানুষ এবং শহর, আবাসিক এলাকা, বিদ্যালয় ইত্যাদি ধ্বংসস্তূপে পতিত হলে সেটা পশ্চিমা চোখে বিজয় বলে পরিগণিত হবে (যেমনটি তারা বিভিন্ন দেশে করেছে)!
অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি সেদেশের ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সি পুরুষদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন, যাতে তারা দেশের পক্ষে লড়তে পারেন। কেউ কেউ এভাবে জোরপূর্বক আটকে রাখাকে নাগরিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে অভিহিত করছেন। কারণ তাদের স্ত্রী-সন্তানরা আপনজনহীন অবস্থায় উদ্বাস্তু হয়ে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে প্রাণ নিয়ে ছুটছেন।
পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সম্প্রসারণ নিয়ে রাশিয়া গত বিশ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোনো নেতা সেটা যৌক্তিক বলে স্বীকারও করেছেন। তারপরও আমেরিকার আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি বদলায়নি। রাশিয়া বলছে, এটাই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মূল কারণ। কিন্তু আমাদের আরও অতীতে যেতে হবে এ যুদ্ধের প্রেক্ষাপট বোঝার জন্য।
১৯১৭ সালে রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তী সময়ে আরও ১৪টি সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র নিয়ে ১৯২২ সালে গঠিত হয় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন। পুঁজিবাদ তথা বৈষম্যমূলক অর্থনীতির জায়গায় সমতাকেন্দ্রিক অর্থনীতিনির্ভর ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও জোরদার হয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন সেসব আন্দোলনকে সমর্থন ও সহযোগিতা দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাম্রাজ্যবাদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। দেশে দেশে সমাজতন্ত্রের বিজয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ভীত হয়ে পড়ে। ফলস্বরূপ, সোভিয়েত ইউনিয়নবিরোধী ষড়যন্ত্র এবং বিভিন্ন দেশে সোভিয়েতপন্থি সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীদের সমর্থন ও সহযোগিতা প্রদান শুরু করে। সোভিয়েত ইউনিয়নবিরোধী কর্মকাণ্ডে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার সামরিক শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৪৯ সালে ১২টি দেশ নিয়ে গঠন করে ন্যাটো সামরিক জোট। ১৯৫৪ সালে পশ্চিম জার্মানিকে ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় সোভিয়েত ইউনিয়ন সাতটি সমাজতান্ত্রিক দেশ নিয়ে ১৯৫৫ সালে ওয়ারশ সামরিক জোট গঠন করে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির পর এ জোটও বিলুপ্ত হয়। ওয়ারশ জোট বিলুপ্ত হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে তার একক কর্তৃত্ব বহাল রাখার উদ্দেশ্যে ন্যাটোকে আরও বিস্তৃত করে। বর্তমানে ৩০টি দেশ ন্যাটো জোটের অন্তর্ভুক্ত। ইউক্রেনকেও যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। যে ইউক্রেন একসময় ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত একটি প্রজাতন্ত্র, সেই ইউক্রেন এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লেজুড় হতে চায়!
লেজুড় কেন বললাম? এটি বোঝার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কর্মকাণ্ডে চোখ বুলানো যাক। আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া ইত্যাদি দেশে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো, সেসব দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠন, নিজেদের পছন্দের পুতুল সরকার বসানো বা বসানোর চেষ্টা ইত্যাদি অমানবিক কাজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র করেছে গত কয়েক দশকে। ২০০৩ সালে মিথ্যা অভিযোগে ইরাক আক্রমণ, লাখ লাখ মানুষকে হত্যা এবং দেশটিকে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত করার কাজে লিপ্ত থেকেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আফগানিস্তানে সোভিয়েতসমর্থিত সরকারকে হঠাতে জঙ্গিগোষ্ঠীকে সহযোগিতা, বিনিময়ে দশ বছরে (১৯৭৯-১৯৮৯) লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু, দেশান্তরি হওয়া-এসবের পেছনেও ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এরপর আবার ২০০১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান দখলে রাখার চেষ্টা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। জঙ্গি সৃষ্টি এবং স্বার্থ-সংঘাতে জঙ্গি দমনে নির্বিচারে কোনো দেশে আক্রমণ চালানো-এসব কর্মকাণ্ড মার্কিন অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখার জন্যই দরকার। কেন দরকার? কারণ, যুদ্ধ হলে প্রচুর অস্ত্র বিক্রি হয়, যা তার অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে এবং আরও দেশ আক্রমণ করার সুযোগ দেয়।
তাই প্রশ্ন আসে, চার হাজার কিলোমিটার দূরের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে গিয়ে ইউরোপকে নিরাপত্তা দেবে-এটা কি বাস্তবসম্মত? নাকি, বিশ্বের দ্বিতীয় পরমাণু শক্তিধর রাশিয়াকে কোণঠাসা করা এবং নিজের সাম্রাজ্যবাদী কর্তৃত্ব বিস্তৃত করাই তার মূল লক্ষ্য? এখন সোভিয়েত ইউনিয়ন নেই, নেই ওয়ারশ জোটও। তাহলে কী প্রয়োজন ন্যাটোর? ইউরোপের দেশগুলোর নিজেদের স্বার্থ দেখার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন কি যথেষ্ট নয়? ইউরোপীয় ইউনিয়নে রাশিয়াকে যুক্ত না করার উদ্দেশ্য কী? ইউক্রেন যেটা করেছে-পাশের দেশের সঙ্গে শত্রুতা রেখে চার হাজার কিলোমিটার দূরের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লেজুড় হওয়া-এটা কি সম্মানের? নাকি প্রতিবেশী রাশিয়াকে নিয়ে নিজেদের মাঝে মৈত্রী গড়ে তোলা জরুরি?
এখানে বলা দরকার, ১৯৯১ সালের আগে বিশ্ব যখন দুই পরাশক্তির (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন) প্রভাব বলয়ে ছিল, তখন মূলত তৃতীয় বিশ্বের ১২০টি দেশ নিয়ে গঠিত হয় জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন (ন্যাম), যাদের মূল লক্ষ্য ছিল সাম্রাজ্যবাদবিরোধী, উপনিবেশবিরোধী, বর্ণবাদবিরোধী ঐক্য। তারা কোনো পরাশক্তির জোটে ছিল না। আধুনিক ইউরোপ কি মতাদর্শগত দিক থেকে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর চেয়েও অনুন্নত? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশে যে অন্যায় আগ্রাসন চালিয়েছে, তার সহযোগী ছিল ন্যাটো এবং ন্যাটোভুক্ত কিছু দেশ! এসব কি লজ্জার নয়?
এ বাস্তবতায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি তার ক্ষমতা ধরে রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চান। চান অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং রাশিয়ার ওপর আরও অর্থনৈতিক অবরোধ। এসবের পরিণতি কী? ইউক্রেনে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ছে, এর প্রতিক্রিয়ায় বাড়ছে জীবনযাত্রার ব্যয়। এটা আমাদের আরেকটা শিক্ষাও দিচ্ছে। সেটা হলো, যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগী দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবরোধে এবং আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা ‘সুইফট’ থেকে রাশিয়াকে বাদ দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ডলারভিত্তিক বিশ্ববাণিজ্যও কিছুটা হুমকির মুখে পড়েছে। ইতোমধ্যে রাশিয়া চীনের মুদ্রা লেনদেন ব্যবস্থা ব্যবহার করতে চাছে, ভারত রুপি দিয়ে রাশিয়া থেকে তেল কিনতে সম্মত হচ্ছে, সৌদি আরব রুবল দিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করতে রাজি আছে। এমনকি যে ইউরোপ তেলের জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল, সেখানে এবং খোদ যুক্তরাষ্ট্রে তেলের দাম হুহু করে বেড়েছে।
তাহলে সমাধান কোথায়? জেলেনস্কি প্রথমে না চাইলেও রাশিয়ার প্রধান দাবি ইউক্রেনের ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার ব্যাপারে তিনি এখন নমনীয়। অন্যান্য দাবি (২০১৪ সালে রাশিয়া অধিকৃত ক্রিমিয়াকে স্বীকৃতিদান, রাশিয়া কর্তৃক স্বাধীন ঘোষিত ইউক্রেনের দুই এলাকা দোনেস্ক ও লোহান্সক বিষয়ক) নিয়েও তিনি আলোচনা করতে চান।
আমাদের এটিও বুঝতে হবে, আজকের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কোনো মার্কিনবিরোধী সমাজতান্ত্রিক যুদ্ধ নয়। কিংবা কোনো দেশে মার্কিন আগ্রাসনবিরোধী রাশিয়ার সহযোগিতা নয়। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনও একজন পুঁজিবাদী রাষ্ট্রনায়ক। আর পুঁজিবাদের লক্ষ্য হলো সাম্রাজ্যবাদী হওয়া। আজকের রাশিয়া নব্য-সাম্রাজ্যবাদী হতে চাচ্ছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রাশিয়াবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে। যে কারণে জেলেনস্কির আলোচনা প্রস্তাবে পুতিন এখনো সাড়া দেননি। দুই দেশের অন্য প্রতিনিধিদের পাঁচ দফা আলোচনাও যুদ্ধ বন্ধে ভূমিকা রাখছে না।
আমরা ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের ওপর রাশিয়ার আক্রমণ ও ধ্বংসযজ্ঞের নিন্দা জানাই। একই সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত এ অমানবিক যুদ্ধের পরিসমাপ্তি চাই। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাঝে আত্মসম্মান জাগ্রত হোক, সেই আশাবাদ ব্যক্ত করি। ইউক্রেনকে নিয়ে পশ্চিমাদের ন্যাটো-রাজনীতিরও তীব্র নিন্দা জানাই। ন্যাটোর বিলুপ্তি বৈশ্বিক দাবি হোক, যা বিশ্বে যুদ্ধ বন্ধ করার দাবিও। তা না হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর নব্য-সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়ার দ্বন্দ্বে পৃথিবীকে ভুগতে হবে অনেকদিন। সূত্র: যুগান্তর
অপূর্ব অনির্বাণ : সহকারী অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা; পিএইচডি গবেষক, কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়া