a
ছবি সংগৃহীত
আগামী জুলাই মাস থেকে অবৈধ বা অনিবন্ধিত মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) বিকালে সচিবালয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হুইটলির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আমরা আশা করছি যে, টেকনোলজি ডেভেলপ, টেস্টিং এবং এটা অপারেশন করতে আমাদের ৫ মাস সময় লাগবে। হঠাৎ করে আমরা এমন কোনো নীতি চাপিয়ে দিতে চাই না, যাতে করে একটা অস্থিরতা তৈরি হয়।
সবাই যেন অবৈধ পথ পরিহার করে সঠিকভাবে কেনেন এ আহ্বান জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রথম থেকে বলছি-অবৈধ পথে কেউ যেন ফোন না নিয়ে আসে। যাতে করে পরে তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সেজন্য আমরা একটা রিজেনেবল টাইম দিচ্ছি, আগামী তিন মাসে আমরা টেকনোলজি ডেভেলপ করবো, পরে দুই মাসে টেস্টিং করবো। আমাদের প্রত্যাশা জুলাই মাসের মধ্যে এটা অপারেশনাল করবো। সুতরাং এ সময়ের মধ্যে যেন সবাই সতর্ক থাকে।
অনিবন্ধিত ফোনগুলো রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, এজন্যই দেরি হচ্ছে নতুন ফোনের রেজিস্ট্রেশন করা আর সেকেন্ড হ্যান্ড ফোনের নাম ট্রান্সফার করা। সূত্র: ইত্তেফাক
ফাইল ছবি
জীবনে কখনো ভাবিনি যে ছোট বেলার স্বপ্নের কোম্পানি গুগল থেকে আমার ইন্টারভিউ এর জন্য অফার আসবে আর আমাকে তা ফিরিয়ে দিতে হবে। তার পিছে কারনও ছিলো অবশ্য, সেটা পরেই বলি।
আমার শৈশব কাটে সাতক্ষীরাতে। বাবা মা ছিলেন চাকরিজীবি। স্কুল জীবনে কখনো তেমন আহামরি ভালো স্টুডেন্ট ছিলাম না। তৃতীয় শ্রেনীতে যখন সাতক্ষীরা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ হয় তখন ক্লাসের শেষ ছেলেটি ছিলাম আমি, রোল ছিলো ৫৭। এবং পরের শ্রেনীগুলোতেও এই অবস্থার তেমন উন্নতি হয় নাই।
একটি মধ্যবিত্ত একান্নবর্তী পরিবারের সব থেকে বড় অভিবাবক হওয়ার কারনে বাবা-মার অনেক দায়িত্ব ছিলো, যে কারনে আমার প্রতি কখনো এক্সপেক্টেশন রাখতেন না। আমার যেদিকে ইচ্ছে ওইদিকেই লাইফ গোল সেট করার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। যেই বিষয় আমার ভালো লাগতো, কেবল ওই বিষয়টাই বেশি পড়তাম সবসময়। যে কারনে একটা বিষয়ে ভালো ফলাফল আসলেও বাকিগুলোতে টেনেটুনে কেবল থার্ড টার্ম পরীক্ষায় পাস করেও পরের ক্লাসে উঠছি এমন অনেকবার ঘটেছে। ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞান এবং টেকনোলজির প্রতি আগ্রহ আমার খুব বেশি ছিল। এখনও মনে আছে ক্লাস সিক্সে একবার একটি টেলিফোন বানিয়েছিলাম নিজের পেট প্রোজেক্ট হিসেবে। এইভাবেই কাটে স্কুল জীবন।
কলেজে উঠে প্রথম কম্পিউটার পাই। কলেজ প্রথম বর্ষে বন্ধু শুভর কাছ থেকে পাওয়া “নিটনের সি” বইটি দেখে কিছু বেসিক প্রোগ্রাম লিখছিলাম। তখন থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন বুনতে শুরু করি। এবং মাইক্রোসফট, গুগলের মত কোম্পানিগুলোতে কোটি মানুষের জীবন সহজ করার সফটওয়্যার বানানোর দিবাস্বপ্ন দেখতে থাকতাম।
কলেজ শেষে এইচএসসি-তে রেজাল্ট তেমন ভাল হল না। বুয়েটের ফর্ম তুলতে পারলাম না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলেও মা জোর করলে রুয়েট, কুয়েটের ফর্ম তুলি। ভাগ্যক্রমে রুয়েটে স্বপ্নের ডিপার্টমেন্ট কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ার সুযোগ পেলাম। রুয়েট জীবন নিয়ে গল্প বলতে গেলে কয়েক রাত পার করে দেয়া যাবে। ডিপার্টমেন্টে আমি খুবই ভাল একটা ফ্রেন্ড সার্কেল পাই, যেখানে বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহী বন্ধু পাই।
পাশাপাশি হল লাইফটাও ইঞ্জয় করতে থাকি। রুয়েট লাইফটা জুনিয়র, সিনিয়র, ক্লাসমেটদের জন্যই মূলত আনন্দমুখর ছিলো। সেলিম হল, হামিদ হল, টিনশেড হলে থাকার মুহূর্তগুলো ছিল অবিস্মরণীয়। বিশেষ করে সন্ধ্যায় কারেন্ট চলে গেলেই টিনশেড হলের মাঝে গোল চত্বরে বসে সবাই মিলে বসে গান, মাঝে মধ্যে বাস্কেটবল গ্রাউন্ডে গিটার বাজানো, রাতে ১৫-২০ জন মিলে রাজশাহীর গলিতে গলিতে ঘুরে গান গাওয়া আজও মিস করি।
রুয়েট এসে সিনিয়রদের কাছ থেকে কমপিটেটিভ প্রোগ্রামিং-এর সাথে পরিচয় ঘটে। প্রোগ্রামিং করতে গিয়ে খেয়াল করলাম গণিতে আমার ব্যাসিক খুবই দুর্বল। সে সময় ক্লাস ৯-১০ এর গণিত বই থেকে শুরু করলাম। রুয়েটে আমাদের প্রোগ্রামিং এর জন্য তেমন সুবিধা ছিলনা। একটা অ্যালগরিদম শিখতে দেখা যেত ২-৩ সপ্তাহ লাগতো। এরপর আমরা একজন শিখে আরেকজনকে সেটা শেখাতাম। সে সময়টা প্রোগ্রামিং শেখার জন্য বেশ কষ্ট করতে হয়েছিল। অনেকবার এমনও হয়েছে যে নিজের টাকা দিয়ে প্রোগ্রামিং কনটেস্ট করতে গেছি আমরা যেখানে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাকি সব টীমগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই অর্থায়ন করে কনটেস্টে পাঠানো হতো।
মনে পড়ে আমাদের অ্যালগরিদম চর্চা করার কোন জায়গা না থাকায় রুয়েট প্লে-গ্রাউন্ডে বসে জুনিয়রদের সাথে হোয়াইট বোর্ড নিয়ে এক সাথে আলোচনা করার কথা। অনেক প্রচেষ্টার পর ফোর্থ ইয়ারে এসে আমাদের সবার এত বছরের চেষ্টা দেখে হেড স্যার আমাদের একটা ল্যাব দেন চর্চা চালিয়ে যাওয়ার জন্য। তিনি ল্যাবের নাম দেন এনালাইটিক্যাল প্রোগ্রামিং ল্যাব। এটা হয়ে উঠেছিলো আমাদের প্রোগ্রামিং হাব।
রাজশাহীর গরমে মশার কামড় খেয়ে এই ল্যাবে জুনিয়রদের সাথে সারা রাত জেগে প্রোগ্রামিং করে ভোরবেলা তালাইমারী যেয়ে এক কাপ চা খাওয়ার স্মৃতিগুলো মনে পড়লে এখনও মুখের কোণে একটা হাসি চলে আসে। এই ল্যাবেই আমরা অনেক রকম অ্যাক্টিভিটি করতাম, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো “জ্ঞান-jam” নামক কনটেস্টটি। প্রতিবছর বিদায়ী ব্যাচের দায়িত্ব থাকে বিদায়ের আগে একটা “জ্ঞান-jam” আয়োজন করা। ভাবলেই খুবই গর্ব হয় যে সেই সংষ্কৃতিটা জুনিয়ররা এখনও চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রোগ্রামিং এর পাশাপাশি আমরা RUET জীবনটা আরও মজার করার জন্য বেশ কয়েকটি সংগঠন বানাই সবাই মিলেই। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো Science and Astronomy Society of RUET (ASSR), চিরকুমার সংঘ, সমানুপাতিক, প্রচেষ্টা সহ বেশ কিছু সংগঠন।
আমি রুয়েটে এসে নিজস্ব "Reason to Live" নামের একটি লিস্ট তৈরি করি। কেও আমাকে কোন কিছু পারবো না এমন কিছু বললে আমি সেটা লিখে রাখতাম। যদি কখনও ভুল প্রমান করতে পারি এটা ভেবে। আলহামদুলিল্লাহ বেশ অনেকগুলোই ভুল প্রমান করতে পেরেছি। ফোর্থ ইয়ারে উঠে একবার একটা কনটেস্টে একটা প্রবলেমও সল্ভ করতে পারল না আমাদের টিম, আমরা খুবই লজ্জায় পড়ে যাই।
ডিপার্টমেন্টের এক শিক্ষিকা ক্লাসে সবার সামনে অপমান করে বলছিলেন, “রুয়েট থেকে কখনও কেও গুগল মাইক্রোসফটে চাকরি পাবে না। তাই পড়াশোনায় মনোযোগ দাও”। কথাটা খুবই গাঁয়ে লেগেছিলো। সেটা শোনার পর আমার এক বন্ধু রবিকে বলেছিলাম শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করবো আমি মাইক্রোসফট বা গুগলে যাওয়ার জন্য।
ক্যারিয়ারের শুরুটা হয় শেষ সেমিস্টার শুরুর ঠিক এক সপ্তাহ আগে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জব ফেয়ারে সেলিস রকিং সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকরি পাই। জীবনের মোড়টা ঘুরে সুইডেনের অ্যাডফেনিক্স এবি নামক স্টার্টআপে চাকরির মাধ্যমে। প্রথমে দেশ ছাড়া লাগবে ভেবে রিজেক্ট করার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু সবার পরামর্শে এক্সেপ্ট করি। একটু ভ্রমণপিপাসু হওয়ায় অস্ট্রেলিয়া এবং সিঙ্গাপুরে চাকরি অফার আসলেও ইউরোপকেই বেছে নিয়েছিলাম। এরপর সুইডেনের সনামধন্য ন্যাসডাক কোম্পানিতে চাকরি পাই। এর মাঝেই ২৩ মার্চ,২০১৮ তে ডাক আসে স্বপ্নের কোম্পানি থেকে। ফোনে যখন বলল মাইক্রোসফট কোম্পানি থেকে বলছেন, আমি ভেবেছি আমি হয়তো ভুল শুনেছি। বিশ্বাস হচ্ছিল না, উত্তেজনায় জিজ্ঞাস করে বসি,"তুমি সিরিয়াসলি মাইক্রোসফট থেকে বলছো?" চাকরি পাওয়ার খবর জানাতে ফোন দেই মা-বাবাকে। মা-বাবাকে চাকরির খবর দেয়ার পর খেয়াল করলাম আমার চোখে পানি চলে এসেছে। জীবনের এতো সময় পর আমি প্রথম বুঝতে পারলাম এটাই আনন্দের অশ্রু। অবশেষে ডেনমার্কে এসে জয়েন করি স্বপ্নের কোম্পানিতে। দিনটি ছিল ঈদের দিন। আমার জীবনের বেস্ট ঈদ। ইনফ্যাক্ট বেস্ট মোমেন্ট।
এবার আসি কেন আর একটা স্বপ্নের কোম্পানির ইনটারভিউ অফার আমাকে রিজেক্ট করতে হলো। মাইক্রোসফটে জব হওয়ার ঠিক তিন মাসের মধ্যেই গুগল থেকেও ইন্টারভিউ-এর ডাক আসে। কিন্তু কেবলই মাইক্রোসফটে জয়েন করার কারণে গুগলে আর ইন্টারভিউ দেয়া হয়নি। রিক্রুটারের সাথে এখনও মাঝে মধ্যে কনট্যাক্ট হলেও মাইক্রোসফট ছাড়ার মন এখনও হয় নাই।
আমির খানের থ্রি ইডিয়টস মুভিটা আমার খুবই প্রিয় একটা মুভি। এই মুভিতে যেমনটা দেখেছিলাম, আমি খুব করে চাইতাম এমন কিছু যেন আমার সাথেও হয়। এখন নিজের পছন্দের কাজ করছি, পৃথিবীর অন্যতম সেরা সফটওয়্যার কোম্পানিতে। বিকাল ৫টা পর্যন্ত অফিস থাকলেও অনেক সময়েই আমি রাত ৯টা পর্যন্ত অফিস করি। আমার কাজ আমার এতো প্রিয় বলেই হয়ত টের পাইনা সময় কখন চলে যাচ্ছে। বছর খানেক আগে ডেনমার্কে একটি শিক্ষক সেমিনার আয়োজন করে মাইক্রোসফট যেখানে আমাকে একটা টক দেয়া লাগছিলো। আমি সেখানে গিয়ে রুয়েটে আমার অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করি। কিভাবে রুয়েটে RAPL, ASSR এর মত শিক্ষণীয় সংগঠনগুলো তৈরি করেছিলাম আমরা। সবাই বেশ মুগ্ধ হয়ে আমাদের কাহিনীগুলো শুনেছিলেন।
অন্য সবার মতই রুয়েটে থাকা অবস্থায় অনেক সময় নিজের মধ্যে হতাশা কাজ করত। মনে হত, যদি আশে পাশে কোন নিদর্শন থাকতো যাকে দেখলে মনে হতো যে আমরাও পারবো। সে সময়ে সামাদ ভাই, মুফতি ভাই, রিফাত ভাই, মেরিন ভাই সহ বেশ অনেকে ছিলেন যাদের অনুপ্রেরণায় নিজেকে অনেক বড় জায়গায় কল্পনা করতে পারতাম। এক-একজন মানুষের কাছে সফলতার মাপকাঠি এক-একরকম। প্রতিটা মানুষ তার নিজের মত করে সফল হয়। আমার মতে আমার মত below average একটা ছাত্রের মাইক্রোসফটে আসাকে যদি সত্যিই সফলতা মনে হয়ে থাকে, তাহলে আমি বলবো রুয়েটে প্রতিটা স্টুডেন্ট এর এই পটেনশিয়াল আছে।
আবু আসিফ খান চৌধুরী: সিএসসি, ১০ম ব্যাচ, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার, মাইক্রোসফট ডেভেলপমেন্ট কোপেনহেগেন
ছবি: মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
সাইফুল আলম, ঢাকা: আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওযাশ) খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া উচিত। জোর দাবী জানানো হয় যেন সকল নাগরিকের জন্য বৈষম্যহীন এবং সমতাভিত্তিক ওযাশ সেবা নিশ্চিত করা হয়। সোমবার (১৯ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়।
পিপিআরসি, ওযাটারএইড, এমএইচএম প্লাটফর্ম, ফানসা, এফএসএম নেটওয়ার্ক, স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার ফর অলসহ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা এবং সংস্থাসমূহের নেটওয়ার্ক অফ ওয়াশ নেটওয়ার্ক্স যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পিপিআরসি'র নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, এটা সর্বজনস্বীকৃত যে একটা দেশের নাগরিকদের পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) সেবার প্রাপ্তি একটি জন্মগত অধিকার। এই সেবাগুলো নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে, সামাজিক উন্নয়ন টেকসই করে এবং জলবায়ু সহনশীল পেশা নির্বাচন ও উদ্ভাবনী ওয়াশ সমাধানের মাধ্যমে পরিবেশগত অবক্ষয় রোধ করে। বাংলাদেশ সরকার ওযাশ খাতে একাধিক নীতি ও কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে—যেমন, সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান (SDP) ২০১১–২০২৫ এবং ২০২১ সালের জাতীয় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন কৌশলপত্র।
তিনি আরও বলেন যে, ২০১৬–১৭ অর্থবছর থেকে ওয়াশ খাতে বরাদ্দে যে ঊর্ধ্বগতি দেখা গিযেছিল, তা ২০২৩- ২৪ অর্থবছরে ব্যাহত হয় এবং ২২.৪৬% হ্রাস পায়। এই নেতিবাচক প্রবণতা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-৬ (SDG) এবং জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা (NPTs ১৭–১৮) অর্জনের ক্ষেত্রে হুমকিস্বরূপ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ওযাশ খাতে বরাদ্দ ছিল ১৮২.২৮ বিলিয়ন টাকা, যা ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ২৩% হ্রাস পেয়ে ১৩৯.৭২ বিলিয়ন টাকায় দাঁড়ায। যদিও সংশোধিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বরাদ্দ কিছুটা বেড়ে ৭.২২% বৃদ্ধিসহ ১৪৯.৮১ বিলিয়ন টাকা হয়, এরপর ২০২৪– ২৫ অর্থবছরে তা ২২.৪৬% হ্রাস পেয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন যে, এই ধারাবাহিক নিম্নগামী প্রবণতা এদেশের নাগরিকদের নিরাপদ পানি এবং নিরাপদ স্যানিটেশন সেবার অধিকার নিশ্চিতকরণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে এডিপি- ভিত্তিক ওয়াশ খাতে বরাদ্দের নেতিবাচক প্রবণতা তুলে ধরা হয়েছে। ওযাশ খাতে বিনিযোগে শহর ও গ্রামের মধ্যে যে ব্যবধান ছিল, তা এখনো প্রকট, যা সমতার নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে গুরুতর প্রশ্ন তোলে। এডিপি বাজেটে ওয়াশ খাতের বরাদ্দে শহর ও গ্রামাঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য এখনো অব্যাহত রয়েছে।
ওয়াটারএইড বাংলাদেশের পলিসি এন্ড এডভোকেসি লিড ফাইয়াজউদ্দিন আহমদ এডভোকেট বলেন যে, বাজেটে পাহাড়ি, উপকূলীয ও হাওর অঞ্চলের জন্য বরাদ্দে কোন ধারাবাহিকতা নেই। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উপকূলীয অঞ্চলের বরাদ্দ কিছুটা বৃদ্ধি পায় নতুন প্রকল্পের কারণে, তবে এসকল এলাকার মধ্যে ন্যায্যতা এখনো নিশ্চিত হয়নি। এই ধারা সরকার ঘোষিত সকল নাগরিকের জন্য নিরাপদ পানি ও নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশনের (NPTs ১৭ ও ১৮) প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
ক্লাইমেট জাস্টিস এলায়েন্সের সুমাইয়া বিনতে আনোয়ার বলেন যে, ২৫টি মন্ত্রণালয জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড (CCTF) এবং এডিপি প্রকল্পের মাধ্যমে ওযাশ সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও মাত্র ১৩টা মন্ত্রণালয ওযাশ খাতে বিনিযোগকে অগ্রাধিকার দেয় দিয়ে আসছে। তবে প্রশংসনীযভাবে, জলবায়ু-সম্পর্কিত ওযাশ বাজেট উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
কিছু মন্ত্রণালয় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও অন্যান্য অভিযোজন কর্মসূচি সংরক্ষণের লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার এলায়েন্সের মোহাম্মদ যোবাযের হাসান জানান যে, ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে বাজেট বাস্তবায়নে সরকারি সামর্থ্যের অভাবে দেরি হয়েছে, ফলে সংশোধিত বাজেটে আংশিক বরাদ্দ প্রত্যাহার করা হয়। গত ৮ অর্থবছরেও পূর্ণ বাজেট ব্যবহার সম্ভব হয়নি। ২০২৩-২৪ বছরের সরকারী এডিপি প্রকল্পের বাস্তবায়ন দক্ষতা ও সচেতনতার অভাবে পূর্ণ বরাদ্দ ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি।
পিপিআরসি'র মোহাম্মদ আবদুল ওয়াজেদ বলেন, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয বাজেটে এডিপি বরাদ্দের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক বৈষম্য নিরসন এবং সংশ্লিষ্ট সম্প্রদাযের সম্পৃক্ততাকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি। চর, হাওর, পাহাড়ি অঞ্চলসহ জলবায়ুগত ঝুঁকির আওতাধীন সুবিধাবঞ্চিত এলাকা এবং নগরগুলোর মধ্যকার বরাদ্দ বৈষম্য নিরসন করা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, ওয়াশ খাতের জন্য এডিপি'র বরাদ্দ ওঠানামা এবং কম আনুপাতিক বৃদ্ধির প্রবণতা দেখায়। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাতে (এমডিজি) ওয়াশ খাতের তুলনায় এসডিজি যুগের ওয়াশ খাতের লক্ষ্যমাত্রা আরও জটিল এবং চ্যালেঞ্জিং।
সম্মেলনে নেটওয়ার্ক অফ ওয়াশ নেটওয়ার্ক্স এর পক্ষ থেকে উপস্থাপিত প্রধান দাবীগুলো হচ্ছেঃ
১। শহর-গ্রাম, মাধ্যমিক ছোট শহর ও দুর্গম অঞ্চলে বৈষম্যহীন ওয়াশ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। এডিপি-তে ওযাশ উপ-খাতসমূহ (পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যবিধি) এবং সংশ্লিষ্ট প্রকল্পসমূহ (এফএসএম, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু সহনশীল প্রকল্পসমূহ) সঠিক অনুপাতে ও ন্যায্যভাবে বাড়াতে হবে।
২। অন্তর্ভুক্তিমূলক ওয়াশ বিনিযোগকে উৎসাহিত করতে হবে যাতে তা নারীর অধিকার এবং প্রান্তিক ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য (চা-শ্রমিক, বেদে, দলিত, হরিজন, জলদাস/জেলেরা প্রভৃতি) ন্যায্য বরাদ্দ নিশ্চিত করতে পারে।
৩। প্রকল্প বাস্তবাযননে সক্ষমতা বাড়াতে হবে যাতে সমযমতো বাজেট ব্যবহার নিশ্চিত হয় এবং সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ কমে যাওয়া কমানো যায়।
৪। ওয়াশ বাজেট বাড়ানো ও এডিপি বৃদ্ধির সম্প্রসারণের মধ্যে সামঞ্জস্য করতে হবে যাতে হুট করে ওয়াশ বাজেট ওঠানামা এড়ানো যায়।
৫। জলবায়ু অর্থায়নের আওতায় সকল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে (মোট ২৫টি) ওযাশ-কেন্দ্রিক প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ঝুঁকি অবহিতকরণ এবং জনগোষ্ঠীকে সংযুক্ত (আরসিসিই) করণ বিষয়ক মেথড যথাযথভাবে প্রযোগ করতে হবে, যার মধ্যে জনগণের জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ থাকবে।