a
ফাইল ছবি
অনলাইন গেম ফ্রি ফায়ার ও পাবজি তরুন সমাজ বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু এসব গেম বিপজ্জনক হয়ে যাচ্ছে দিন দিন তাই অনলাইন এই গেম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল সোমবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ফ্রি ফায়ার পাবজির মতো তরুন সমাজকে বিপদগামী করা টিকটক, ভিগো লাইভ ও লাইকির মতো সব ধরনের অ্যাপস বন্ধের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
গত ২৪ জুন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় মানবাধিকার সংগঠন ‘ল অ্যান্ড লাইফ’ ফাউন্ডেশনের পক্ষে গেম এবং অ্যাপগুলোর ক্ষতিকারক দিক তুলে জনস্বার্থে একটি রিটটি করেন সুপ্রিমকোর্টের দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব ও মোহাম্মদ কাউছার। গত ১ জুলাই এ বিষয়ে শুনানি নিয়ে আদেশের জন্য কঠোর লকডাউনের পর পরবর্তী শুনানি হয় গত সোমবার সেখানে এই আদেশ দেন হাইকোর্ট। এর আগে ফ্রি ফায়ার ও পাবজির আসক্তি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে এটি বন্ধে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে সুপারিশ করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারও আগে পাবজি সাময়িকভাবে বন্ধ করা হলেও পরে আবার চালু করা হয়েছিল।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ওই সময় জানিয়েছিল, ওই দুটি গেম কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের মধ্যে আসক্তি তৈরি করেছে। কিন্তু হঠাৎ করে বন্ধ করতে গেলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে। তাই ধীরে সুস্থে বিকল্প পদ্ধতিতে গেম দুটি বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হবে। বন্ধ করলেও তরুণরা ভিপিএন দিয়ে গেমটি খেলবে এমন প্রশ্নে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় জানিয়েছিলেন, যারা এ ধরনের গেমে আসক্ত তারা ভিপিএনসহ নানা বিকল্প উপায়ে গেমটি খেলতে পারে। আমরা সেসবও বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করব। সম্প্রতি নেপালে পাবজি নিষিদ্ধ করে দেশটির আদালত। একই কারণে ভারতের গুজরাটেও এ গেম খেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। এমনকি গেমটি খেলার জন্য কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল।
দক্ষিণ কোরিয়ার গেম ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান ব্লু হোয়েলের অনলাইন ভিডিও ২০১৭ সালে চালু হয়। এরপর থেকে এই গেমটি দ্রুত বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ২০১৮ সালে অ্যাঙ্গরি বার্ড, টেম্পল রান, ক্যান্ডি ক্রাশের মতো গেমগুলোকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন গেমের তালিকায় শীর্ষে জায়গা করে নেয় পাবজি। অন্যদিকে চায়না প্রতিষ্ঠান ২০১৯ সালে তৈরি করা যুদ্ধ গেম ফ্রি ফায়ার একইভাবে তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বিশেষ করে করোনা মহামারির ফলে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীরা এসব গেমে আসক্ত হচ্ছে।
ফাইল ছবি
খুব সকালে যখন ঘুম থেকে উঠি, তখন আমরা সবাই দেখে থাকি যে সূর্যের রঙ হলুদ বর্ণের। ধীরে ধীরে যখন বেলা বাড়তে থাকলে সূর্যের রঙ পরিবর্তন হয়ে কমলা রং ধারণ করে। আর দিনের শেষসময়ে সূর্য হয়ে উঠে একদম টাটকা লাল।
সূর্যের এ রঙ বদলানো নিয়ে আমরা কি চিন্তা করেছি কখনো? কেন এমনটা হয়? সূর্য আসলে কোন রঙের- লাল, হলুদ নাকি কমলা, নাকি অন্য কোনো রঙের! আমরা জানি সূর্য একটা নক্ষত্র, আর সব নক্ষত্রেরই কোনো না কোনো রঙ আছে। রঙগুলো হলো রেড জায়ান্ট, রেড ডোয়ার্ফ, ব্লু জায়ান্ট, সুপার জায়ান্ট ইত্যাদি।
নক্ষত্রের রঙ কেমন হবে তা সাধারণত তার তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে থাকে। একটি নক্ষত্রের ভেতর থেকে ফোটন বের হয়ে তা মহাশূন্যে হারিয়ে যায়, ফলে ফোটন থেকে বের হওয়া শক্তির পরিমান আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। এসব কারণে দেখা যায় একটি নক্ষত্র ইনফ্রারেড, আল্ট্রাভায়োলেট, লাল অথবা নীল রঙের আলোকরশ্মির বিকিরণ ঘটাচ্ছে একই সময়ে। এমনকি সেখানে বিদ্যমান থাকতে পারে এক্স ও গামা রশ্মিও।
নক্ষত্রের রঙের বিভিন্ন পরিবর্তন এর জন্য বিশেষ কিছু কারণ রয়েছে,একটি নক্ষত্রের তাপমাত্রা যদি হয় সাড়ে পঁয়ত্রিশ হাজার কেলভিনের কম হয় তবে তার রঙ হবে লাল। আবার কোনো নক্ষত্রের তাপমাত্রা যদি দশ হাজার কেলভিনের উপরে হয় তবে তা নীল রঙের হবে। সূর্যের তাপমাত্রার পরিমাণ প্রায় ছয় হাজার কেলভিনের মতো। এ তাপমাত্রার নক্ষত্রগুলো সাধারণত হয়ে থাকে সাদা রঙের। সেক্ষেত্রে সূর্যের আসল রঙ হলো সাদা।
কি অবাক হচ্ছেন? হ্যাঁ, সূর্যের রং আসলেই সাদা রঙের। আসলে মহাশূন্যে গিয়ে যদি আমরা সূর্যকে স্বচক্ষে দেখে আসতে সক্ষম হতাম, তবে ১০০ ভাগ নিশ্চিত হোমার যে সূর্যের রঙ আসলে একেবারে সাদা। সূর্য ও সূর্যলোকের রঙ সাদা। তাহলে প্রশ্ন হলো সূর্যকে বিভিন্ন সময় লাল, হলুদ বা কমলারঙে দেখি কেনো? এর পিছনে বিশেষ কারণ হলো বায়ুমণ্ডলে সূর্যরশ্মির বিচ্ছুরণ ঘটে। ছোট ছোট তরঙ্গদৈর্ঘের নীল ও বেগুনি আলোকরশ্মি অপসারিত হয়ে যায়। সূর্য থেকে আসা আলোক বর্ণালির এ দুটো রঙ সরে গেলে তা অনেকটা হলুদের মতো হয়ে যায়। সূর্যকে আমরা তখন হলুদ দেখি। অন্যান্য রঙের বেলায়ও এ ঘটনা ঘটে।
এভাবে সূর্যের আলো যখন বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে পৃথিবীতে আসে তখন তার রঙ বদলে হলুদ, কমলা বা ম্যাজেন্টা রঙ ধারণ করে। তবে আরেকটি প্রশ্ন হলো সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় সূর্যের রঙ লাল হয়ে যায় কেন? সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় ভাসমান ধূলিকণা ও বাতাসের অন্যান্য উপাদান সূর্যরশ্মির নীল প্রান্তের কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের বর্ণকে বেশি বিক্ষিপ্ত করে ও লাল প্রান্তের বেশি তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের বর্ণকে কম বিক্ষিপ্ত করে। ফলে সূর্য লাল বর্ণ ধারণ করে থাকে।
ছবি সংগৃহীত
ময়মনসিংহ ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত এ আদালতে বিচারাধীন মামলা ছিল ৩৭ হাজারের বেশি। প্রায় একই চিত্র শেরপুর ও যশোর ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালেরও। এ দুই আদালতে ১৮ হাজার ও ১২ হাজার মামলা সামলাচ্ছেন দুজন বিচারক। শুধু এ তিন আদালতই নয়, দেশের সব আদালতের বিচারকের কাঁধেই রয়েছে সক্ষমতার চেয়ে চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি মামলা। সম্প্রতি প্রাপ্ত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গড়ে বিচারকপ্রতি বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩০০-এর বেশি।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩ লাখে। এর মধ্যে অধস্তন আদালতগুলোয় ৩৭ লাখ ৩০ হাজার। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন মামলা ছিল প্রায় ৬ লাখ। ২০১২ সালে বিচারাধীন মামলা ছিল ২১ লাখ ৩৫ হাজার। এক যুগের ব্যবধানে বিচার বিভাগে মামলার জট বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
আইনজ্ঞরা বলছেন, বিচারকস্বল্পতা ও এজলাস সংকট মামলাজটের বড় দুটি কারণ। পাশাপাশি আইনের ত্রুটি, সাক্ষী হাজির করতে না পারাও জট বৃদ্ধি করে। এসব সমস্যা দ্রুত দূর করতে পারলেই কমবে মামলাজট। তাঁরা বলেন, ‘আমাদের দেশে বিচারকরা নিজেদের সক্ষমতার চেয়ে চার-পাঁচ গুণ বেশি মামলার চাপ সামলাচ্ছেন। সিভিল রুলস অ্যান্ড অর্ডার অনুযায়ী, একজন বিচারকের কাছে সর্বোচ্চ ৫০০ মামলা থাকার কথা। এর চেয়ে বেশি মামলা থাকলেই ন্যায়বিচার না পাওয়ার শঙ্কা থাকবে। তাই যে কোনোভাবে বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।’
আইনজ্ঞরা আরও বলেন, বিচারে দীর্ঘসূত্রতার কারণে বিচারপ্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কোনো কোনো মামলা নিষ্পত্তির জন্য তাদের যুগের পর যুগ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বিচার বিলম্বের কারণে একদিকে মামলা পরিচালনার ব্যয় বাড়ছে, অন্যদিকে বাড়ছে ভোগান্তি। কোনো মামলায় সাক্ষী মারা যাচ্ছে, কোনো মামলায় বাদীও মারা যাচ্ছে। মামলাজটের সমস্যাটা বর্তমানে প্রকট আকার ধারণ করেছে। এর থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসতে হবে। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি ও জট কমিয়ে আনার বিষয়ে সুপারিশ করে গত বছর আগস্টে আইন কমিশনও একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে।
মামলাজটের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সরকার মামলাজট কমানোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে তা কমানোর জন্য নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিছু কার্যকর পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। বিচারে গতি আনতে প্রতি বছরই উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিচারক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এজলাস সংকট নিরসনে এরই মধ্যে সব জেলায় নতুন আদালত ভবন করা হয়েছে। আশা করছি, আমাদের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর সুফল খুব শিগগিরই পাওয়া যাবে।’
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, উচ্চ আদালত থেকে নিম্ন আদালত পর্যন্ত সর্বত্র মামলাজট বেড়েই চলেছে। বিচারকের সংখ্যা বাড়িয়েও কোনো লাভ হয়নি। কারণ বিচারকের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মামলা দায়েরের সংখ্যা। ২০০৮ সালে আপিল বিভাগে বিচারপতি ছিলেন সাতজন। বিচারাধীন মামলা ছিল ৬ হাজার ৮৯২টি। এরপর আপিল বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা আর কোনো দিন সাতের নিচে নামেনি। বর্তমানে আপিল বিভাগে বিচারপতি আটজন। আর গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বিচারাধীন মামলা ছিল ২৬ হাজার ৫১৭টি। একইভাবে সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগেও ২০০৮ সালে বিচারাধীন মামলা ছিল ২ লাখ ৯৩ হাজার ৯০১টি। ওই সময়ে হাই কোর্টে বিচারপতি ছিলেন ৬৭ জন। ২০১০ সালের পর এ বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা কখনো ৯০-এর নিচে নামেনি। কিন্তু মামলাজট ঊর্ধ্বমুখী। বর্তমানে হাই কোর্ট বিভাগে ৮৪ জন বিচারপতি দায়িত্বরত রয়েছেন। আর এ বিভাগে বর্তমানে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৫ লাখ ৪৩ হাজার ৮৪৭টি।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০০৭ সালের নভেম্বরে বিচার বিভাগ পৃথক্করণের সময় অধস্তন আদালতগুলোয় বিচারক ছিলেন ৩০১ জন। বিপরীতে বিচারাধীন মামলা ছিল প্রায় ১৩ লাখ। বর্তমানে ২ হাজারের বেশি বিচারকের মধ্যে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত রয়েছেন প্রায় ১ হাজার ৮০০ জন। আর অধস্তন আদালতগুলোয় বিচারাধীন মামলা ৩৭ লাখ ২৯ হাজার ২৩৫টি। এসব তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশে একজন বিচারকের বিপরীতে গড়ে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মামলা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে অনেক আদালতের পরিস্থিতি আরও খারাপ। কিছু কিছু আদালতে একজন বিচারকের আওতায় ৫ থেকে ১০ হাজারের বেশি মামলা রয়েছে। আবার একজন বিচারককে একাধিক আদালতেরও দায়িত্ব পালন করতে হয়। ফলে বিচারকদেরও হিমশিম খেতে হচ্ছে মামলার চাপ সামাল দিতে। আর এ কারণে অনেক মামলার শুনানির তারিখ ধার্য হচ্ছে ছয় থেকে আট মাস পরপর। আবার অনেক সময় ধার্য তারিখে শুনানি না করেই তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর এভাবেই বেড়ে যাচ্ছে দীর্ঘসূত্রতা।
বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, জনসংখ্যা অনুপাতে বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বিচারকের সংখ্যা কম। ১৭ কোটি ৩৮ লাখ জনসংখ্যার দেশে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন ১ হাজার ৮০০ বিচারক। অর্থাৎ গড়ে ৯৬ হাজার মানুষের বিপরীতে একজন বিচারক দায়িত্ব পালন করেন। যেখানে ভারতে আনুমানিক ৪৭ হাজার ৬১৯ জনের বিপরীতে একজন, পাকিস্তানে ৫০ হাজার, অস্ট্রেলিয়ায় ২৪ হাজার ৩০০, যুক্তরাষ্ট্রে ১০ হাজার এবং যুক্তরাজ্যে প্রতি ৩ হাজার ১৮৬ নাগরিকের বিপরীতে একজন বিচারক দায়িত্ব পালন করেন।
গত ১ মার্চ এক অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘যে পরিমাণ বিচারক সারা বাংলাদেশে থাকা দরকার সে পরিমাণ বিচারক নেই। দেশে ৯০ থেকে ৯৫ হাজার মানুষের জন্য একজন বিচারক। এত কম বিচারক দিয়ে মামলাজট কমানো সম্ভব নয়। এ সংখ্যাটা বাড়াতে হবে। লজিস্টিক সাপোর্টসহ অন্যান্য সুযোগসুবিধা বাড়াতে হবে।’
জট কমবে যেভাবে: মামলাজট নিরসনের উপায় সম্পর্কে জানতে চাইলে নিজের বিচারিক অভিজ্ঞতা তুলে ধরে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মূলত দুটি কারণে মামলাজট বাড়ে। একটি হচ্ছে অবকাঠামো সমস্যা আর অন্যটি আইনগত জটিলতা।’ তিনি বলেন, ‘অবকাঠামোগত সমস্যার মধ্যে এজলাস ও বিচারক সংকট অন্যতম।’ বিচারক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে বছরে প্রায় ১০০ জন বিচারক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তবে এ সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। বর্তমানে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা বিবেচনায় দু-তিন বছরের মধ্যে অন্তত ৫ হাজার বিচারক নিয়োগ দেওয়া জরুরি। আইন কমিশনও এমন সুপারিশই দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জট কমাতে হলে ছোটখাটো সমস্যাগুলো আদালতের বাইরেই সমাধান করতে হবে। ফৌজদারি আইনেও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বা এডিআর পদ্ধতির ব্যবহার বাড়ানোর কথা বলা আছে। একই সঙ্গে তদন্তের সময় কমানো, বিচারক ও সংশ্লিষ্টদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।’ এ ছাড়া নতুন কোনো থানা বা উপজেলা করা হলে ইউএনও, এসি ল্যান্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থানা বা উপজেলার জন্য একজন বিচারকের পদ সৃষ্টি করতে হবে বলেও মত দেন এই বিচারক।
মামলাজট নিরসনে আইনগত জটিলতা দূর করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিচারকাজে কিছু সময় ক্ষেপণের সুযোগ আমাদের আইনেই রয়েছে। এগুলো আগে দূর করতে হবে। যেমন নোটিস বা সমন জারিতে অনেক সময় চলে যায়। প্রচলিত পদ্ধতির পরিবর্তে ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল পদ্ধতিতে নোটিস বা সমন জারি করা যেতে পারে। এতে সময় অনেকটা বাঁচবে। এ ছাড়া জবাব দাখিলে সময়সীমা নির্ধারণ করার পাশাপাশি বাদী বা বিবাদী পক্ষের বারবার সময় আবেদন নিরুৎসাহ করতে হবে।’ সাক্ষ্য আইন সংশোধন করে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার ও ভিডিও কনফারেন্সে সাক্ষ্য গ্রহণের বিধান যুক্ত করার প্রশংসাও করেন তিনি। এই বিচারক বলেন, ‘নতুন সাক্ষ্য আইন বিচারের সময় কমিয়ে আনতে সহায়ক হবে। তবে এর যথাযথ অনুসরণ করতে হবে।’
আইন কমিশনের সুপারিশ: মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি ও জট কমিয়ে আনার বিষয়ে সুপারিশ করে গত বছর আগস্টে আইন কমিশন একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে জটের মূল পাঁচটি কারণ উল্লেখ করা হয়। সেগুলো হচ্ছে: পর্যাপ্ত বিচারক না থাকা, বিশেষায়িত আদালতে পর্যাপ্ত বিচারক নিয়োগ না হওয়া, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা, জনবলের অভাব এবং দুর্বল অবকাঠামো।
অন্য কারণগুলো হলো: মামলার সুষম বণ্টন না হওয়া, প্রশাসনিক শৈথিল্য, পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না হওয়া, কর্মকর্তা-কর্মচারীর জবাবদিহির অভাব, আইনজীবীর আন্তরিকতার অভাব, দুর্বল মামলা ব্যবস্থাপনা, জমিজমা-সংক্রান্ত নথি সংরক্ষণের অভাব, প্রচলিত বিচারব্যবস্থায় মামলা নিষ্পত্তিতে ব্যবহারিক জটিলতা, সাক্ষীর অনুপস্থিতি, ক্রমাগত শুনানির অভাব, যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব, নকল সরবরাহে অনিয়ম, উচ্চ আদালত কর্তৃক নথি তলব, সংশ্লিষ্ট মামলার আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিভিশন, মোকদ্দমা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা, উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ ইত্যাদি।
মিথ্যা-হয়রানিমূলক মামলা কমাতে কয়েকটি সুপারিশও করে আইন কমিশন। এরমধ্যে আছে: মামলা দায়েরের সময় মিথ্যা, ফলহীন ও হয়রানিমূলক মামলা করার বিষয়টি নিরুৎসাহ করতে হবে। নালিশি মামলা গ্রহণের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর (ফরিয়াদি) অভিযোগ যাচাইয়ের মাধ্যমে মামলার রক্ষণীয়তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে মিথ্যা মামলা হলে বাদীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনের ২১১ ধারার আওতায় মামলা করার বাধ্যবাধকতা আনতে হবে এবং দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এতে মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রবণতা কমবে এবং মামলার সংখ্যা কমানো সম্ভব হবে।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, জরুরি ভিত্তিতে বিভিন্ন পর্যায়ে পদ সৃষ্টি করে কমপক্ষে ৫ হাজার বিচারক নিয়োগ করা হলে জট কমিয়ে মামলার সংখ্যা সহনীয় পর্যায়ে আনা সম্ভব হবে। তবে রাষ্ট্রের সীমিত সক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে স্বল্প সময়ে এত বিচারক নিয়োগ করা সম্ভব নয়। আবার একসঙ্গে এত বিচারক নিয়োগ করলে তাদের গুণগত মানেরও অবনতি ঘটতে পারে। তবে ধারাবাহিকভাবে প্রতি বছর কমপক্ষে ৫০০ বিচারক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন বলে প্রতিবেদনে মত দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিজিটাল বাংলাদেশে আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে মামলাজট নিরসনে কার্যকর ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারলে বিচারব্যবস্থার ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা হারিয়ে যাবে। আইন কমিশন মনে করে, মামলাজট নিরসনের ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্নভাবে এক বা একাধিক সমস্যা ও তার প্রতিকারের প্রতি নজর না দিয়ে সামগ্রিকভাবে গঠনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যাবশ্যক। সূত্র: বিডি প্রতিদিন
লেখক: আরাফাত মুন্না, বাংলাদেশ প্রতিদিন