a
ছবি: মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
কামরুল হোসেন, ঢাকা: বিজ্ঞান ও শিল্প-প্রযুক্তির বিকাশে স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের এবং স্ব-শিক্ষিত বিজ্ঞানীদের নিয়ে তিনদিনব্যাপি বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) বিজ্ঞান ও শিল্প প্রযুক্তি মেলা' ২০২৫ শুরু।
আজ (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) সকালে পরিষদের ধানমন্ডি ক্যাম্পাসে শুরু হয়েছে। ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের এই মিলনমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সম্মানিত সিনিয়র সচিব জনাব মোঃ মোকাব্বির হোসেন । তিনি বলেন, ছোট ছোট এই কোমলমতি ছেলেমেয়েরা যতটুকু অগ্রগতি দেখাতে পেরেছে আমাদের সময় এতটা সুযোগ ছিল না।
আমি সত্যিই আনন্দিত এই ধরনের বিজ্ঞানমেলায় আসতে পেরে। আশা করছি বর্তমান সময়কে ছাপিয়ে ভবিষ্যতে দেশের আবিষ্কারজগতে আরো কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। তিনি বিসিএসআইআর এর চেয়ারম্যান সহ সকল কর্মকর্তা কর্মচারীকে শুভকামনা জানান। এক আবেগঘন পরিবেশে তিনি বলেন, আমি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে থেকেও কিছু ক্রিয়েশন করতে পারিনি। আর আপনারা নতুন নতুন উদ্ভাবন করে যাচ্ছেন সত্যিই বিষয়টা দারুন। দেশের উদ্ভাবনী জগতে আপনারা আরও সাফল্য নিয়ে আসবেন সেই প্রত্যাশা করছি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মোঃ দেলোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত সচিব, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় । তিনি বলেন, ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে এক ছাতার নিচে মিলিত হতে পেরেছে এবং তাদের উদ্ভাবনী শক্তি আপনাদের মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারছে এটি সত্যিই প্রশংসনীয়। বিসিএসআইআর বিজ্ঞান ও শিল্প-প্রযুক্তি মেলা-২০২৫ সফল হোক এবং ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের মাঝ থেকে এক সময় দেশ সেরা বিজ্ঞানী তৈরি হোক এই প্রত্যাশাই করছি।
সভাপতির ভাষণে পরিষদের মাননীয় চেয়ারম্যান ড. সামিনা আহমেদ ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের উদ্দেশ্য বলেন”, তোমাদের এই শ্রম এবং সাধনা দেশ গঠনের কাজে ভূমিকা পালন করবে। তোমরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। বিসিএসআইআর এর সকল বিজ্ঞানী, সকল কর্মকর্তা এবং কর্মচারীসহ পুরো মেলা জুড়ে যারা সহযোগিতা করেছেন এবং শ্রম দিয়েছেন সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
৩ দিন ব্যাপী (২৪-২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫) আয়োজিত এই ক্ষুদে বিজ্ঞান মেলায় বিভিন্ন গ্রুপে প্রতিষ্ঠানের ৬৬টি বিজ্ঞান প্রজেক্ট প্রদর্শিত হয়, যেখানে অংশ গ্রহণ করে প্রায় ২০০ ক্ষুদে বিজ্ঞানী। এছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও মেলায় উপস্থিত দর্শনার্থীদের জন্য তাদের কার্যক্রম তুলে ধরেন।
বিসিএসআইআর বিজ্ঞান ও শিল্প প্রযুক্তি মেলা-২০২৫-এর তথ্য কণিকা:
ক-গ্রুপ (৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি) – মোট প্রকল্প ২১টি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান -১৯টি, অংশগ্রহনকারী- ৭৬ জন: খ-গ্রুপ (৯ম থেকে ১০ম শ্রেণি) – মোট প্রকল্প ১৫টি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান -১৫টি, অংশগ্রহনকারী- ৬০ জন: গ-গ্রুপ (একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি) – মোট প্রকল্প ১৮টি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান -১৭টি, অংশগ্রহনকারী-৫৮ জন: ঘ-গ্রুপ (স্ব-শিক্ষিত বিজ্ঞানী) - মোট প্রকল্প ২টি এবং অংশগ্রহনকারী- ৮ জন।
এছাড়া বিসিএসআইআর-এর পদ্ধতি/প্রসেস গ্রহণকারী ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের ষ্টল -৭টি। বিজ্ঞান ও শিল্প প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য সরকারী প্রতিষ্ঠনের ষ্টল- ৪টি।
ফাইল ছবি
মোবাইল ফোন সেবায় দুই দিন বিঘ্ন ঘটতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। নতুন তরঙ্গবিন্যাস ও পরিবর্তনের কারণে এটি হতে পারে। এ জন্য মোবাইল গ্রাহকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
সোমবার বিটিআরসির স্পেকট্রাম ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক ড. সোহেল রানা স্বাক্ষরিত এ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, ‘নতুন তরঙ্গে সেবা নিশ্চিত করতে আগামী ১ ও ৮ এপ্রিল রাতে ৮ ঘণ্টা করে মোবাইল সেবায় বিঘ্ন ঘটতে পারে।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘প্রথম ধাপে ১৮০০ মেগাহার্টজের তরঙ্গবিন্যাসের কারণে ১ এপ্রিল রাত ১১টা থেকে ২ এপ্রিল সকাল ৭টা পর্যন্ত ৮ ঘণ্টা মোবাইল ফোন সেবায় বিঘ্ন ঘটতে পারে। দ্বিতীয় ধাপে ২১০০ মেগাহার্টজ তরঙ্গের নতুন বিন্যাসের জন্য ৭ এপ্রিল রাত ১১টা থেকে ৮ এপ্রিল সকাল ৭টা পর্যন্ত মোবাইল সেবায় বিঘ্ন ঘটতে পারে।’
ছবি সংগৃহীত
আইনের শাসন যে কোনো সমাজে টেকসই শান্তি ও উন্নতির জন্য অত্যন্ত অপরিহার্য ও গুরুত্বপূর্ণ। আইন সবকিছুর ঊর্ধ্বে এবং আইনের শাসনের মূল উদ্দেশ্য হলো দেশে আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করা ও ন্যায়বিচারের মাধ্যমে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। সুশাসন ও সৎ বিচারব্যবস্থা ছাড়া আইনের শাসন বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি একটি পূর্বশর্ত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ব্রিটিশ শাসনকাল ছাড়া উপমহাদেশের ইতিহাসে আমরা কখনো প্রকৃত অর্থে আইনের শাসনের অভিজ্ঞতা পাইনি।
আজকের বিশ্বে আইনের শাসনকে সমাজ শাসনের একটি কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিখ্যাত ব্রিটিশ আইনজ্ঞ এ. ভি. ডাইসি ‘আইনের শাসন’-এর প্রবক্তা। তিনি সমাজে শৃঙ্খলা ও টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আইনের গুরুত্বকে বিশেষভাবে তুলে ধরেছেন। আইনের শাসনের তিনটি মূলনীতি হলো—
১. আইনকে স্বেচ্ছাচারীভাবে ব্যবহার করা যাবে না।
২. প্রতিটি নাগরিক আইনের চোখে সমান।
৩. নাগরিকদের অধিকার সংবিধানে নিশ্চিত থাকতে হবে।
কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়, তার সামাজিক অবস্থান বা ক্ষমতা যাই হোক না কেন। "আপনি যত উচ্চ পদেই থাকুন না কেন, আইন আপনার ঊর্ধ্বে"—এই নীতিই আইনের শাসনের মূল আদর্শ।
স্বাধীন বিচারব্যবস্থা ও চ্যালেঞ্জসমূহ:
একটি স্বাধীন ও কার্যকর বিচারব্যবস্থা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অত্যন্ত জরুরি। তবে এটি বাস্তবায়ন করা কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ কাজ। যেহেতু পুরো বিষয়টি জটিল, তাই তড়িঘড়ি কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সুফল আসবে না। এ কাজে যথাযথ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের যুক্ত করতে হবে। প্রয়োজনে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিতেও কুণ্ঠাবোধ করা উচিত নয়, কারণ দক্ষ ও পেশাদার ব্যক্তিদের ছাড়া বিচারব্যবস্থার সংস্কার সম্ভব নয়।
একটি কার্যকর বিচারব্যবস্থা গঠনে নতুন বিচারকদের নির্বাচন, নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এটি একদিনের মধ্যে সম্ভব নয়, তবে দেরি না করে অবিলম্বে কাজ শুরু করা উচিত।
বর্তমান বিচারব্যবস্থার দুর্বলতা:
বর্তমান বিচারব্যবস্থা সমাজে প্রকৃত অর্থে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম নয়। এটি একটি ফ্যাসিবাদী সরকারকে সুবিধা দিতে গঠিত হয়েছে, জনগণের কল্যাণে নয়। তাই পুরো বিচারব্যবস্থা পুনর্গঠন করা প্রয়োজন। যদিও বিচারকগণ বিচারব্যবস্থার মূল চালিকাশক্তি, তবে আইনজীবীদের ভূমিকাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। বিচারব্যবস্থা শুধু বিচারকদের নিয়ে গঠিত নয়, আইনজীবীরাও এর অংশ। আইনজীবীদের মানুষের কল্যাণে কাজ করার মানসিকতা ও উৎসাহ সৃষ্টি করতে হবে।
আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার পুরোপুরি নির্ভর করে বিচারক ও আইনজীবীদের সততা ও পেশাদারিত্বের ওপর। যদি এই দুই সম্প্রদায়ের কোনো একটি দুর্নীতিগ্রস্ত হয় বা পেশাগতভাবে অযোগ্য হয়, তাহলে সমাজে আইনের শাসন কার্যকর করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
তদন্ত ও অপরাধ বিচার ব্যবস্থায় সংস্কার:
অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসনেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। অপরাধ তদন্ত কর্মকর্তাদের অবশ্যই সৎ, দক্ষ ও দায়িত্বশীল হতে হবে। অপরাধ দমন ও অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পুলিশের কার্যকর ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি।
এ ছাড়াও, সমাজের দায়িত্বও কম নয়। জনগণের সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। কীভাবে সাধারণ মানুষ এই সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সহযোগিতা করতে পারে, তা নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা জরুরি। নৈতিক শিক্ষার উন্নয়ন জনগণের চারিত্রিক পরিবর্তন আনতে পারে, যা এই লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
অর্থনৈতিক সংস্কার ও সামাজিক উন্নয়ন:
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—গরিব জনগণের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। অন্যথায় কোনো সংস্কারই টেকসই ফল আনবে না। বেশিরভাগ অপরাধ দারিদ্র্যের কারণে সংঘটিত হয়, তাই মানুষের জীবনমান উন্নয়নে জরুরি অর্থনৈতিক সংস্কার প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক যাকাত ব্যবস্থা গরিব মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে কার্যকর উপায় হতে পারে।
গণমাধ্যমের ভূমিকা:
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গণমাধ্যম যদি সঠিকভাবে কাজ করে, তাহলে বিচারব্যবস্থা সংস্কার সহজ হবে। তারা একদিকে সমাজকে সচেতন করতে পারে, অন্যদিকে বিচারব্যবস্থার পর্যবেক্ষক হিসেবেও কাজ করতে পারে।
আইনের শাসনকে একটি সামাজিক আন্দোলন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে এর গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অপরিহার্য, তবে শুধু বিচার বিভাগের স্বাধীনতা যথেষ্ট নয়। সমগ্র সমাজকে এই আন্দোলনে অংশ নিতে হবে, তবেই টেকসই শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
লেখক: অধ্যাপক কর্ণেল আকরাম
সম্পাদক, মিলিটারি হিস্টোরি জার্নাল