a
ফাইল ছবি: মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন
এক ঘন্টা কর্মঘন্টা বাড়িয়ে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধাস্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস সময়সূচির পরিবর্তন আসছে। পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটির পর থেকে এসব অফিসগুলোতে কর্মঘন্টা হবে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। সূত্র: ইত্তেফাক
ফাইল ছবি
করোনার সংক্রমণ বাড়ায় চলমান বিসিএস পরীক্ষা থেকে শুরু করে সকল পরীক্ষা সাময়িক স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। ৪০তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা স্থগিতের পর এবার নন-ক্যাডার আরও দু’টি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
এর মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন নার্সিং এবং মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের সিনিয়র স্টাফ নার্স পদের আগামী ১০ এপ্রিলের লিখিত পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
পিএসসি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, উক্ত পদের লিখিত পরীক্ষার পুননির্ধারিত তারিখ ও সময় পরবর্তীতে জানিয়ে দেয়া হবে। এছাড়াও পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের অধীন বস্ত্র অধিদপ্তরের ২য় শ্রেণীর (১০ম গ্রেড) ফটো টেকনিশিয়ান পদে প্রার্থীদের ৬ এপ্রিলের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (নন-ক্যাডার) মো: নজরুল ইসলাম জানান, কোভিড-১৯ উর্ধ্বমুখী সংক্রমণের পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সকলকে এ লিখিত পরীক্ষার পরিবর্তিত তারিখ ও সময় পরে জানিয়ে দেয়া হবে।
এর আগে গত সোমবার ৪০তম বিসিএসের চলমান মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। পরীক্ষার তারিখ পরে জানানো হবে জানিয়েছেন।
সম্প্রতি ৪০তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে পিএসসি। ৪০তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নেন ৩ লাখ ২৭ হাজার পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন ২০ হাজার ২৭৭ জন।
পিএসসির সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সরকারের নির্দেশনা মেনে অফিস পরিচালনা করছে পিএসসি। করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পরীক্ষা কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি উন্নতি হলে পরীক্ষার বিষয়াদি পরবর্তীতে জানিয়ে দেয়া হবে।
ছবি: মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
সাইফুল আলম, ঢাকা: কিডনি রোগ বিশ্বজুড়ে ক্রমাগত বেড়েই চলছে। বাংলাদেশেও এই রোগের প্রাদুর্ভাব উদ্বেগজনক হারে উর্ধ্বমুখী। কিডনি রোগের কারণে শুধু ব্যক্তিগত জীবনই বিপর্যয় হয় না বরং এই রোগাক্রান্ত পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের উপরও বিশাল অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে। রোগের মারাত্মক পরিণতি, অতিরিক্ত চিকিৎসা খরচ এবং চিকিৎসা ব্যায় সাধ্যাতীত হওয়ায় সিংহভাগ রোগী বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর করুন চিত্র তুলে ধরেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ক্যাম্পাস আয়োজিত "কিডনি স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণ: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আলোচকবৃন্দ।
বক্তাগণ সরকারী কোরকারী ও সেচ্ছাসেবী সংস্থা কিংবা প্রতিষ্ঠান গুলোর সমন্বিত পরিকল্পিত প্রয়াসের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। "বিশ্ব কিডনি দিবস-২০১৫” উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে দেশের শীর্ষস্থানীয় কিডনি বিষয়ক বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কিডনি এওয়ারনেস মনিটরিং এন্ড প্রিদেশন সোসাইটি (ক্যাম্প), ১১ মার্চ (মঙ্গলবার) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এই গোলটেবিল ঝৈকের আয়োজন করে। সহযোগী সংগঠন হিসেবে ছিলো বাংলাদেশ রেনাল এসোসিয়েশন।
গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাম্পাস এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক ডা এম এ সামাদ। তিনি তার মূল প্রবন্ধে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর তথ্য অনুযায়ী, কিডনি রোগ বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর অন্যতম কারণ গুলোর মধ্যে একটি। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলিতে কিডনি রোগের প্রকোপ বাড়ছে, বিশেষ করে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং স্থূলতার মতো অসংক্রামক রোগের কারণে। বিশ্বব্যাপী প্রায় ৮৫ কোটি মানুষ শুধু দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত। এই সংখ্যা ডায়াবেটিস রোগীদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ এবং ক্যান্সার রোগীদের চেয়ে প্রায় বিশ গুন। মৃত্যুর কারণ হিসেবে কিডনি রোগ ১৯৯০ সালে ছিল ১৯তম স্থানে, বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৭ম স্থানে, এভাবে চলতে থাকলে ২০৪০ সালে দখল করে নেবে ৫ম স্থান। আবার উন্নয়নশীল বা স্বল্লোন্নত দেশে কিডনি রোগের হার সবচেয়ে বেশি। তিনি বলেন, বাংলাদেশেও কিডনি রোগের প্রাদুর্ভাব উদ্বেগজনক। তথ্য মতে, প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ লোক কোন না কোন কিডনি রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার কিডনি রোগী ডায়ালাইসিসের উপর নির্ভরশীল হয়। শহর ও আমাঞ্চলে সমানভাবে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। দারিদ্র্য, অসচেতনতা, চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতা এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। আরো ২৪ থেকে ৩০ হাজার রোগী হঠাৎ কিডনি বিকল হয়ে সাময়িক ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হয়। এই রোগ আমাদের দেশের জন্য একটি বড় অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা। পক্ষান্তরে, সবাই যদি কিডনি রোগের ব্যাপকতা, ভয়াবহতা, পরিণতি ও ক সম্পর্কে সচেতন থাকে এবং স্বাস্থ্য সম্মত জীবনযাপন করে তা হলে ৬০-৭০ ভাগ ক্ষেত্রে এই মরণঘাতী কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা।
কিডনি রোগের সাধারণ কারণ গুলো হল- অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, স্থূলতা, নেফ্রাইটিস, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান, ব্যাথানাশক ঔষধের অতিরিক্ত ব্যবহার, জন্মগত ও বংশগত কিডনি রোগ, মূত্রতন্ত্রের প্রদাহ ও পাথরে রোগী। আমরা একটু লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবো যে, প্রায় সবগুলো কারণই আমাদের অস্বাস্থ্যকর জীবন ধারার সাথে জড়িত, একটু সচেতন হলে প্রতিরোধ যোগ্য। তাছাড়া যারা ঝুঁকিতে আছেন যেমন যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ওজন বেশী, বংশে কিডনি রোগ আছে, যারা ধূমপায়ী, যারা তীব্র মাত্রার ব্যাথার ঔষধ খেয়েছেন, যাদের পূর্বে কোন কিডনি রোগের ঝুঁকি আছে তাদের বছরে অন্তত ২ বার প্রেসার ও রক্তের ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করে নেয়া উচিৎ। কেননা প্রাথমিক অবস্থায় কিডনি রোগ সনাক্ত করতে পারলে চিকিৎসার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
ডাঃ সামাদ বলেন, কিডনি বিকলের চিকিৎসা সর্বাধিক ব্যয়বহুল। ফলে চিকিৎসা করতে গিয়ে পুরো পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়। তাই ক্যাম্পস এর স্লোগান “কিডনি রোগ জীবননাশা-প্রতিরোধই বাঁচার আশা" ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে চাই। অর্থাৎ কিডনি রোগ প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্ত করে চিকিৎসার মাধ্যমে মরণব্যাধি কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা যায়। এর জন্য প্রয়োজন গণসচেতনতা।
কিডনি ফাউন্ডেশন এর সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ হারুন-উর-রশিদ কিডনি রোগকে 'নীরব দুর্যোগ" এ আখ্যায়িত করে বলেন এ রোগের জটিলতা ও চিকিৎসা ব্যয়ের আধিক্য বিবেচনায় প্রতিরোধকেই একমাত্র অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে হবে ।অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, কিডনি রোগ প্রতিরোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে। এ জন্য একটি সুষ্ঠু কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। তিনি বলেন, বিশেষ করে বাচ্চাদের এবং যুব সমাজের মাঝে যাতে কিডনি রোগ প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।গাজী আশরাফ হোসেন বলেন, বিশেষ করে বাচ্চাদের এবং যুব সমাজের মাঝে যাতে কিডনি রোগ প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য নিয়মিত খেলাধুলা, নিয়মিত হাঁটা ও ব্যায়াম করার ব্যবস্থা নিতে হবে। কঠিন ভাবে তাদের ফাষ্টফুড, জাঙ্কফুড, অলসতার প্রবণতা থেকে মুক্ত করতে হবে।গোলটেবিল বৈঠকে বিজ্ঞ প্যানেল আলোচক হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন শাহ সানাউল হক, বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। মাহবুব মোর্শেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)। ডাঃ সৈয়েদ জাকির হেসেন, লাইন ডাইরেক্টর, নন কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল (এনসিডিসি), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ডাঃ মোঃ হালিমুর রশিদ, লাইন ডাইরেক্টর (সিডিসি), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধ্যাপক ডাঃ নজরুল ইসলাম, সভাপতি, বাংলাদেশ রেনাল এসোসিয়েশন। অধ্যাপক ডাঃ আফরোজা বেগম, সভাপতি, পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ। মিজ রোকেয়া ইসলাম, কবি ও কথাসাহিত্যিক, চেয়ারম্যান, প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র। সিরাজুল ইসলাম, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র। হাসান হাফিজ, সম্পাদক, দৈনিক কালের কন্ঠ। সহকারী অধ্যাপক ডাঃ ফারহাদ হাসান চৌধুরী, সদস্য সচিব, বাংলাদেশ রেনাল এসোসিয়েশন। ক্যাম্পস এর নির্বাহী পরিচালক রেজওয়ান সালেহীন বলেন, ক্যাম্পস কিডনি রোগ প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত সচেতনতার বাণী প্রচার করে যাচ্ছে। আমরা যদি কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলি তা হলে কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই সরকারী ও বেসরকারী পর্যায় থেকে যদি সকলে এগিয়ে আসেন তা হলে এই রোগ নিরাময় করা অনেকটাই সহজ হবে। গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত সকল আলোচকদের তাদের মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য ক্যাম্পস এর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
এ গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা অভিমত ব্যাক্ত করেন যে, চিকিৎসা করে নয় বরং প্রতিরোধ করেই এ রোগের প্রাদূর্ভাব প্রশমন করতে হবে আর এ জন্য সচেতনতাই একমাত্র উপায়। কিডনি রোগ প্রতিরোধে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করতে ক্যাম্পস এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং বিত্তবানদের এমন মহৎ কাজে সহযোগীতার আহবান জানান। এ ছাড়াও গোলটেবিল বৈঠকে দেশের সরকারী পর্যায়ের নীতি নির্ধারক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, শিল্পী, শিক্ষাবিদ, ক্রীড়াবিদসহ বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।