a ফেরাউনেরও কি মোবাইল ছিনতাই হয়েছিল?
ঢাকা শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২, ২১ নভেম্বর, ২০২৫
https://www.msprotidin.com website logo

ফেরাউনেরও কি মোবাইল ছিনতাই হয়েছিল?


এমএস.প্রতিদিন ডেস্ক:
শনিবার, ১২ জুন, ২০২১, ০৩:৪৩
ফেরাউনেরও কি মোবাইল ছিনতাই হয়েছিল?

ফাইল ছবি । সৈয়দ বোরহান কবীর

 

লকডাউনের ঢাকায় তীব্র যানজট। মন্ত্রী আয়েশে কথা বলছেন মোবাইলে। সারা দিন সুনসান কক্ষে নিয়মনীতির জীবন থেকে একটু নস্টালজিক হতে চাইলেন মন্ত্রী। গাড়ির জানালাটা খুলে দিলেন। আচমকা ফোন নিয়ে দৌড় দিল এক দুষ্ট। মন্ত্রীর গাড়িতে ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী থাকেন। তিনি কী করলেন জাতি জানে না। ঘটনা ৩০ মের। এক সপ্তাহ পর মন্ত্রী নিজেই একনেকের বৈঠক শেষে জানালেন, এখনো তিনি তাঁর মোবাইল ফোন ফেরত পাননি। মন্ত্রীর মোবাইল অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি বস্তু। মন্ত্রীর হাত থেকে মোবাইল ছিনতাই করে পালিয়ে যাওয়া তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এভাবে প্রকাশ্যে যদি মন্ত্রীর ফোন ছিনতাই হয় তাহলে তো মন্ত্রীও অরক্ষিত। ভাগ্যিস স্বয়ং মন্ত্রীকেই ছিনতাই করা হয়নি। এই মন্ত্রী অবশ্যই ভাগ্যবান। ১৯৭৩ সালে বিসিএস ক্যাডার হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। 

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর তিনি নানা পদে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। যে সময় জাতির পিতার হত্যার বদলা নিতে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন। যখন জাতির পিতার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক শিষ্য তোফায়েল আহমেদ সামরিক স্বৈরাচারের নির্মম নির্যাতনে ক্ষতবিক্ষত হয়ে কারাপ্রকোষ্ঠে। আওয়ামী লীগের তরুণ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে তাঁকে পিটিয়ে মুমূর্ষু করার সেই সময় এই মন্ত্রী অসাংবিধানিক সরকারের একান্ত অনুগত চাকুরে। তাঁর দীর্ঘ পেশাগত জীবনে তিনি জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং বেগম জিয়ার সঙ্গে কাজ করেছেন নিপুণ দক্ষতায়। কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক, এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখার যুগ্মসচিবসহ নানা আকর্ষণীয় পদে তিনি তরতর করে উন্নতি করেছেন। ২০০৫ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ওই সময় একজন পাগলও জানত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ২০০১ সাল থেকে বিএনপি-জামায়াত যে দুঃশাসন চালিয়েছে, তা প্রতিরোধ করতে মানুষ মুখিয়ে। বাংলাদেশের আমলারা দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে দূরদর্শী চিন্তা করতে না পারলেও নিজেদের আয়-উন্নতির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় সিদ্ধহস্ত। বারবার এটি প্রমাণিত। 

এরশাদের আস্থাভাজন এবং বিশ্বস্ত আমলা প্রয়াত এম কে আনোয়ার ও কেরামত আলী যেমন বিএনপিতে যোগ দিয়ে নিজেদের অবসর-উত্তর জীবনের জন্য অসাধারণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। স্বৈরাচারের দোসর হয়েও তারা বিএনপির ‘গণতান্ত্রিক’ জমানায় গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হয়েছিলেন। তেমনি আমাদের পরিকল্পনামন্ত্রী হিসাবে পাকা। ২০০৫ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনে এমপি হন। ২০১৪ সালে প্রতিমন্ত্রী। ২০১৯ সালে পূর্ণমন্ত্রী। আমলাতন্ত্রে পদোন্নতি প্রক্রিয়া তাঁর অবসর জীবনেও অব্যাহত থাকে। তাই তিনি সদা হাস্যময়, সর্বতো বিরাজমান। বাজেটের দিন বাজেট দিলেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু সব টেলিভিশন চ্যানেলে দেখা গেল পরিকল্পনামন্ত্রীর সরব উপস্থিতি। ভাগ্যিস মন্ত্রীর সেদিন মোবাইলটাই ছিনতাই হয়েছিল। উনি নিজে যদি অপহৃত হতেন তাহলে বাজেট-পরবর্তী এত কথা কে বলতেন?

বাংলাদেশের আমলারা বিভিন্নকালে কিম্ভূত সব আবিষ্কার করেন। জিয়ার আমলে এক আমলা জিয়াকে খুশি করতে ‘জাতীয় পোশাক’ আবিষ্কার করেছিলেন। সচিবালয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের স্যুট-টাইয়ের বদলে জিয়ার পোশাকের আদলে সাফারি পরার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরশাদের আমলে আমলাদের বাড়বাড়ন্ত ছিল চোখে পড়ার মতো। বেগম জিয়ার আমলে একদা চৈনিক বাম আমলা বিভিন্ন সেক্টর করপোরেশনে বিশেষায়িত পদে আমলার অনুপ্রবেশ তত্ত্ব আবিষ্কার করেন। ২১ পর বছর আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পায় ১৯৯৬ সালে। গণঅভ্যুত্থানে পতন হয় বেগম জিয়ার। এক ভুতুড়ে নির্বাচনের মাধ্যমে কয়েক দিনের এক নৈশ সংসদে বেগম জিয়া নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিলটি পাস করে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। জনতার আন্দোলনের ফসল ঘরে তোলেন গুটিকয় আমলা। জনতার মঞ্চে এসেই তারা বাজিমাত করেন। এই দলের শিরোমণি আমলাকে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি। দ্রুত তিনি আমলার পোশাক ছেড়ে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আবিভর্‚ত হন। প্রতিমন্ত্রী হন। এই আমলা এখনো প্রবহমান নদীর মধ্যেই বহতা। তিনিও এক আবিষ্কারের জন্য অমর হয়ে থাকবেন। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা রানা প্লাজার পিলার ধরে টানাহেঁচড়া করেছিল। এজন্যই রানা প্লাজা নাকি ধসে পড়েছিল। আমলারা পারেনও বটে। 

২০০১ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এলে আমলাদের ব্যাপক ক্ষমতায়ন হয়। এ সময় রাজনৈতিক কর্মীদের ভূমিকায় দেখা যায় আমলাদের। এ ধারা এখনো অব্যাহত। শুধু পার্থক্য হলো বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে চুল পরিমাণ সম্পর্ক থাকে, চৌদ্দগুষ্টিতে কেউ আওয়ামী লীগ করে এমন সবাইকে হয় চাকরি থেকে বিদায় অথবা নীলডাউন করার মতো ওএসডি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ এসব ব্যাপারে উদার। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে বিএনপি-জামায়াতপন্থি আমলারাও ঝটপট দ্রুত পদোন্নতি পান। আওয়ামীপন্থি আমলার আত্মীয়ও (বেয়াই) সচিব হন। আওয়ামীপন্থি আমলার বিশ্ববিদ্যালয়ের দোস্ত, তাই ছাত্রদল করেও কেউ সচিব হন। 

আওয়ামী লীগ আমলে বরং ছাত্রলীগ করে সরকারি চাকরিতে এসেছেন এমন অনেকেই অবিচার এবং অবমূল্যায়নের শিকার হন। সে অন্য প্রসঙ্গ। আমি বলতে চাইছিলাম আমলাদের কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠার ধারাবাহিকতা। সব সরকারের আমলেই আমলারা নিজেদের বলয়, প্রভাব এবং কর্তৃত্ব অব্যাহত রেখেছে। এখন তা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে আমলারা যেন গোটা সরকারকে গিলে ফেলেছে। এখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় নাকি আমলা লীগ ক্ষমতায় সে প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে যখন চারদিকে কথাবার্তা ঠিক তখন মন্ত্রিসভায় আমলাদের অন্যতম প্রতিনিধি বললেন, ‘আমলাতন্ত্র আমাদের মধ্যে আছে এবং থাকবে। ফেরাউনও আমলাতন্ত্রের বিকল্প বের করতে পারেনি।’ ৮ জুন একনেকের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমিও ছোটখাটো আমলা ছিলাম, এখন বড় আমলা।’

ফেরাউন নিকৃষ্ট স্বৈরাচার, জঘন্য, পাপিষ্ঠ একনায়ক। আল কোরআনে বিভিন্ন স্থানে ৬৭ বার ফেরাউন প্রসঙ্গ এসেছে। সুরা ইউনুসের ৮৩ নম্বর আয়াতে ফেরাউনকে ‘ন্যায় লঙ্ঘনকারী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ফেরাউনের উদাহরণ মন্ত্রী কেন দিলেন? এটি অজ্ঞতা নাকি সুপ্ত ষড়যন্ত্রের অসতর্ক প্রকাশ? পৃথিবীর নিকৃষ্ট স্বৈরাচার কেন ‘আমলাতন্ত্র’ উৎখাত করবে? বাংলাদেশের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলেই দেখা যায়, যখনই অনির্বাচিত একনায়করা অস্ত্রের জোরে ক্ষমতা দখল করেছে, তখন তারা আমলানির্ভর হয়েছে। আমলা বা সরকারি কর্মচারী, রাষ্ট্রের অনিবার্য অনুষঙ্গ। কেউ আমলাদের বিলোপ চায়নি। কিন্তু আমলাদের সর্বগ্রাসী রূপ গণতন্ত্র এবং জনঅধিকারের জন্য ক্ষতিকর, হুমকি। একটি দেশে গণতন্ত্র যত বেশি বিকশিত, আমলাতন্ত্র ততটাই নিয়ন্ত্রিত। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হলো একটি ভারসাম্যমূলক শাসনব্যবস্থা। এখানে ক্রিয়াশীল প্রত্যেকের নিজস্ব বৃত্ত থাকে। একে অন্যকে জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকে। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। এর মাধ্যমেই গণতন্ত্রে জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটে। আমলারা যখন জবাবদিহির ঊর্ধ্বে চলে যান, সবকিছুর নিয়ন্ত্রক হন তখন তা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ান। বাংলাদেশে আমার মতো অনেকেই বিশ্বাস করেন, আমলারা ক্রমে তাদের গন্ডি অতিক্রম করেছেন। একটি রাজনৈতিক সরকার যখন আমলাদের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে যায় তখন গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহ দুর্বল হয়ে যায়। এটিই আমাদের আশঙ্কার জায়গা।

ফেরাউনের মতো অত্যাচারী, ঘৃণিত, সীমা লঙ্ঘনকারীরা তো চাটুকার, স্তাবক আমলাদের ওপর নির্ভরশীল হবেই। একটি জনগণের সরকার কখনো তা হবে না। যেমন হননি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু আমলাদের জনগণের সেবক করতে চেয়েছিলেন। জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাসী জাতির পিতা ১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে প্রদত্ত এক ভাষণে বলেছিলেন, ‘আজ আমরা যারা এখানে আছি, তারা সরকারি বা বেসরকারি কর্মচারী। পুলিশ, সামরিক বাহিনী, বর্ডার গার্ড, রক্ষীবাহিনী বা আনসার যা-ই আমরা হই না কেন, সবাই এই বাংলাদেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকা দিয়েই চলি এবং সবাইকে রাখা হয়েছে জনগণের সেবা করার জন্য।’ বঙ্গবন্ধু এটাই বিশ্বাস করতেন। বঙ্গবন্ধু যা বিশ্বাস করবেন তা তিনি যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করে হলেও আদায় করতেন। আজকের এই বাংলাদেশ তার প্রমাণ। আমলাদের ‘জনগণের সেবক’ বানাতে চেয়েছিলেন জাতির পিতা। ফেরাউনের মতো ঘৃণিতরা আমলাতন্ত্রকে ক্ষমতাবান করে আর বঙ্গবন্ধুর মতো মহামানবরা আমলাতন্ত্রের ‘চেতনা’ পাল্টে দেওয়ার কাজ শুরু করেছিলেন। 

বাকশাল যদি বাস্তবায়ন হতো তাহলে আমলারা আজকের মতো ফুলে ফেঁপে উঠতেন না। চতুর্থ সংশোধনী পাসের দিন জাতীয় সংসদে প্রদত্ত ভাষণে জাতির পিতা সে রূপরেখাও দিয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে দেওয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘মেন্টালিটি চেঞ্জ করতে হবে। সরকারি কর্মচারী, মন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট- আমরা জনগণের সেবক, আমরা জনগণের মাস্টার নই।’ এজন্যই জেলা গভর্নরের দায়িত্ব বঙ্গবন্ধু রাজনীতিবিদদের দিয়েছিলেন, আমলাদের দেননি। জাতির পিতা যদি আর কিছুদিন দেশটা গোছাতে পারতেন, যদি তিনি তাঁর দ্বিতীয় বিপ্লব সফল করতে পারতেন তাহলে হয়তো মন্ত্রী এ রকম দম্ভভরে আমলাদের জয়গান করতে পারতেন না। তাহলে হয়তো আমলারা মাস্টার থাকতেন না, সেবকই হতেন। ’৭৫-এর পর আমলারা পরগাছার মতো রাষ্ট্রব্যবস্থায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে। আমলাতন্ত্রকে কেউ অস্বীকার করে না। মৌর্য সাম্রাজ্যেও আমলাতন্ত্র ছিল। কিন্তু এ রকম একচ্ছত্র আমলানির্ভর ছিল? 

ড. আকবর আলি খান ‘অবাক বাংলাদেশ: বিচিত্র ছলনাজালে রাজনীতি’ শিরোনামে গ্রন্থে বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র সম্পর্কে চমকপ্রদ কিছু কথা লিখেছেন। ‘বর্তমানে আইনত বিসিএস অ্যাডমিন ক্যাডারের সদস্যরা পাকিস্তানের সিএসপিদের চেয়ে বেশি সুবিধা পাচ্ছেন।’ (পৃষ্ঠা : ২৪৬)। সরকারি আমলারা ক্ষমতাবান হচ্ছেন প্রতিদিন। এ নিয়ে কথাবার্তাও কম হচ্ছে না। তার পরও আমলারাই সবকিছু দখল করে নিচ্ছেন। সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর নানাভাবে রাষ্ট্র ও সরকারের সঙ্গে তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হচ্ছে না। এখন সরকারের শীর্ষ আমলাদের প্রায় সবাই চুক্তিতে। এখন চুক্তিভিত্তিক আমলাতন্ত্র চলছে দেশে। আর যারা চুক্তিতে থাকতে পারছেন না তাদের জন্য হতাশ হওয়ার কিছু নেই।

বর্তমানে দেশের সব সাংবিধানিক এবং গুরুত্বপূর্ণ পদ আমলাদের দখলে চলে গেছে। নির্বাচন কমিশন থেকে পাবলিক সার্ভিস কমিশন, মানবাধিকার কমিশন থেকে তথ্য অধিকার কমিশন- সর্বত্র আমলারা চেয়ার দখল করে রেখেছেন। উপজেলা চেয়ারম্যানরা ঠুঁটো জগন্নাথ, ক্ষমতা সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হাতে। জেলার রাজা ডিসি। এখন আবার পৌরসভাও আমলাদের কর্তৃত্বে চলে যাচ্ছে। পৌরসভায় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। 

মাননীয় মন্ত্রী বলবেন কি এমন সর্বগ্রাসী আমলাতন্ত্র বিশ্বে কোন দেশে আছে? আচ্ছা ধরে নিলাম আমাদের রাজনীতিবিদরা মূর্খ, লেখাপড়া জানেন না। এজন্যই চালকের আসনে আমলাদের বসানো হয়েছে, ভালো কথা। কিন্তু আমলারা জবাবদিহির ঊর্ধ্বে চলে যান কীভাবে? আমলারা দুর্নীতি করলে তার বিচার করা যাবে না। আইন করে বিচার বন্ধ করা হয়েছে। আমলারা যৌন কেলেঙ্কারি করবেন, তাদের বিভাগীয় তদন্ত হবে। ফৌজদারি মামলা করা যাবে না। জামালপুরের এক ডিসির নারী কেলেঙ্কারি নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় হলো। কিন্তু শাস্তি হলো পদাবনতি। কি আশ্চর্য! বাগেরহাটের আরেক জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির লিখিত অভিযোগের পর তাকে শুধু বদলি করা হলো। দুর্নীতি দমন কমিশনে যেতে হয় না দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত আমলাকে। তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে, আমলারা কি সবকিছুর ঊর্ধ্বে? ধরাছোঁয়ার বাইরে। আর এ রকম আমলাতন্ত্রের পক্ষে সাফাই গেয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী ফেরাউনের উদাহরণ দেন, তখন বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাই। অবশ্য ফোন হারিয়ে এত দিনে তা উদ্ধার করতে না পেরে মন্ত্রীর মানসিক ভারসাম্য ঠিক আছে কি না ভাবতেই হয়। 

আমরা বরং মন্ত্রীর ফেরাউন-তত্ত্বকে আমলাদের যা খুশি তাই বক্তব্য হিসেবে উপেক্ষা করি। কিন্তু মন্ত্রীর ফোন উদ্ধারে আমরা একটি আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করতেই পারি। বাংলাদেশে সব সংকট সমাধানে আমলাতান্ত্রিক ফরমুলা অনুসরণ করা হয়। আসুন আমরা একটু কল্পনার জগতে যাই। মন্ত্রীর ফোন উদ্ধারে আমলারা কী করতে পারেন অনুমানের চেষ্টা করি।

মন্ত্রীর ফোন হারানোর ঘটনা তদন্তের জন্য একজন সচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চপদস্থ কমিটি গঠিত হলো। তদন্ত কমিটিকে এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হলো। তদন্তকাজের সুবিধার জন্য তদন্ত কমিটির সদস্যদের পৃথক পরিবহন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হলো। তদন্ত কমিটি বাংলাদেশ মোবাইল ফোনের সংখ্যা কত তা জানার জন্য বিটিআরসিকে চিঠি দিল। বিটিআরসি এটি সব মোবাইল ফোন অপারেটরকে জানাল। এটি করতে করতে এক সপ্তাহ শেষ হলো। তদন্ত কমিটির মেয়াদ বাড়ানো হলো আরও সাত দিন। এবার তদন্ত কর্মকর্তারা আইফোন (যেহেতু মন্ত্রীর ফোনটি আইফোন) কার কার আছে সে তালিকা চাইলেন। এভাবে সপ্তাহ যায়, সময় বাড়ানো হয়, তদন্ত দ্রুত এগিয়ে যায়। তদন্ত দল বলল, তারা তদন্ত করছে, তদন্ত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।

একপর্যায়ে তদন্ত দল গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের জন্য ‘অ্যাপেল’-এ সরেজমিনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। আইফোন হারানোর তদন্ত হবে আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপেলের অফিসে যাওয়া হবে না তা কী করে হয়! তদন্ত দল ছুটল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এভাবে এক বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর তদন্ত কমিটি ঘোষণা করল তারা তদন্ত শেষ করেছে। পাঁচ তারকা হোটেলে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠান। ২ হাজার পৃষ্ঠার তদন্ত রিপোর্ট। তদন্ত দলের প্রধান যিনি তদন্তের সময় সচিব ছিলেন, এখন সিনিয়র সচিব। অনেক কথা বললেন। শেষ কথা হলো এটাকে ছিনতাই বলা যায় না। কারণ মোবাইল ফোনটি ভয়ভীতি কিংবা অস্ত্র দেখিয়ে কেড়ে নেওয়া হয়নি। 

যেহেতু এটি ‘ছিনতাই’ নয় চুরি তাই এটি এ কমিটির এখতিয়ারাধীন বিষয় নয়। কীভাবে চুরি হলো তা নিয়ে আরেকটি কমিটি হতে পারে। এ ছাড়া তদন্ত কমিটি ১০১টি সুপারিশ করল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- মন্ত্রীরা গাড়িতে থাকা অবস্থায় জানালার কাচ নামাবেন না। মুঠোফোন মুঠোয় শক্ত করে ধরবেন। সিটবেল্ট পরবেন, ইত্যাদি।

তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশের পর সাংবাদিকরা মন্ত্রীর কাছে ছুটলেন তাঁর প্রতিক্রিয়ার জন্য। মন্ত্রী বললেন ‘খুব ভালো রিপোর্ট, ইনডেপথ। তারা প্রচুর পরিশ্রম করেছেন।’ ভাগ্যিস ফেরাউনের আমলে মোবাইল ফোন ছিল না। ফেরাউনের যদি মোবাইল থাকত তাহলে মন্ত্রী অবধারিতভাবে বলতেন, ‘ফেরাউনেরও মোবাইল ছিনতাই হয়েছিল। ছিনতাই ছিল, আছে, থাকবে।’

লেখক: সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত। 
ইমেইল: poriprekkhit@yahoo.com /সংগৃহীত: বিডিপ্রতিদিন

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

শতভাগ বিদ্যুতের দেশে লোডশেডিং আসলে কেন?


আবু হানিফ, বিশেষ প্রতিনিধি, মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
সোমবার, ২৫ জুলাই, ২০২২, ০৯:৩১
শতভাগ বিদ্যুতের দেশে লোডশেডিং আসলে কেন?

ছবি:ইঞ্জিনিয়ার ফকর উদ্দিন মানিক

এই ভ্যাপসা গরমে লোডশেডিং এ অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ, এরফলে দুর্বিষহ জনজীবন। কয়েকদিন ধরে পত্রিকার পাতায় ও টিভি চ্যানেলে দেশের সর্বত্র লোডশেডিং এর খবর পাওয়া যাচ্ছে। সরকার বলছে, গ্যাস সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় লোডশেডিং করতে  হচ্ছে। তবে কবে নাগাদ পরিস্থিতির উন্নত হতে পারে, সে ব্যাপারে কোন নিশ্চয়তা দিতে পারেননি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। কিন্তু এর প্রতিকার কি?

২০১১ সাল পর্যন্ত এই দেশে ঘরবাড়িতে বিদ্যুতের অভাবে  ঘুটঘুটে অন্ধকার থাকতো,  লোডশেডিং ছিল  নিত্য-নৈমত্তিক  ঘটনা। অনেকের কাছে তা ছিল দুঃসহ স্মৃতির মতো। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্যে মানুষ লোডশেডিং শব্দটি ভুলেই গিয়েছিল। সেই অবস্থা থেকে দেশ আবার লোডশেডিংয়ের অন্ধকারে ছেয়ে গেল কেন? হ্যাঁ, এ ব্যাপারে বিশ্ব পরিস্থিতির দায় আছে, কিন্তু এর বাইরে কি আর কারোর কোনো দায় নেই? বলা বাহুল্য, দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা ২২-২৫ হাজার মেগাওয়াট হলেও চাহিদা মাত্র ১৩-১৪ হাজার মেগাওয়াট। তাই অনেকের প্রশ্ন সক্ষমতা সত্ত্বেও লোডশেডিং কেন?

আসলে দেশে সর্বশেষ হিসাব মতে - ২০০৮-০৯ সালে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ৭ হাজার মেগাওয়াট থাকলেও তখন উৎপাদন হতো মাত্র ৪ হাজার মেগাওয়াট অর্থাৎ ঘাটতি থাকতো  প্রায় ৩ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু ২০২২ সালে এসে প্রায় ২৫ হাজার মেগাওয়াট  উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও চাহিদা মত প্রায় ১৪ হাজার মেগাওয়াট  উৎপাদন করার মত কাঁচামালের যথেষ্ট ঘাটতি আছে। ফলে ১-২ ঘন্টা লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। কারণ বিশ্ববাজারে তেল ও গ্যাসের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদ্যুৎ  কেন্দ্রগুলোর ইউনিট প্রতি উৎপাদন খরচ আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুন বেড়ে গেছে। এর প্রধান কারণ প্রায় ৮৫% বিদুৎ কেন্দ্র গ্যাস ও তেল নির্ভর বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। তিনি বলেন, ধৈর্য্য সহকারে এই সংকট মোকাবেলা করতে হবে। সবাইকে নিজ উদ্যোগে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। পৃথিবীর অনেক উন্নত রাষ্ট্র, যাদের অনেক টাকা পয়সা আছে, তারাও লোডশেডিংয়ে যাচ্ছে। ব্রিটেনে হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ায় হচ্ছে, জাপানে হচ্ছে। কোনো কোনো দেশে বরাদ্দ থাকা সত্বেও, ব্যাংকে অর্থ থাকা সত্বেও সংবরণ করছে।

'যে জন দিবসে মনের হরষে জ্বালায় মোমের বাতি,
আশু গৃহে তার দেখিবে না আর নিশীথে প্রদীপভাতি।’
কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের  কবিতার মত -দিনের বেলা প্রদীপ জ্বালানো মানুষকে পরবর্তীতে প্রয়োজনের সময় অন্ধকারেই সময় কাটাতে হয়। ঠিক তদ্রুপ দুঃসময়েও যে জাতি কারণে-অকারণে তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ মৌলিক চাহিদাসম্পন্ন রাষ্ট্রীয় সম্পদ অপচয় না করে মিতব্যয়ী হবে সেই জাতিই সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে উপনীত হবে। বস্তুত অপব্যয়ই অভাব নিয়ে আসে।

পৃথিবীর অন্যতম সেরা আবিষ্কার বিদ্যুৎ। চোখ বন্ধ করে একবার চিন্তা করে দেখলে বুঝতে পারবেন বিদ্যুৎ ছাড়া কিছুই সম্ভব না, আর সেই মূল্যবান বিদ্যুৎ সৃষ্টির সেরা জীব হয়েও আমরা অহরহ অপচয় করি। এক ঢাকা শহরে যদি তিন দিন বিদ্যুৎ না থাকে কেমন হবে ভাবুনতো?  - বিদুৎ না থাকলে লিফট চলবে কি?
 
জেনারেটর দিয়ে কয় ঘন্টা বেক-আপ দিবেন?  শুধু তাই না - বিদুৎ না থাকলে উৎপাদন কমে যাবে - ফলে জিনিসের দাম বেড়ে যাবে, এর ফলে আয়ের সাথে ব্যয়ের অনেক পার্থক্য হওয়ায় জীবনযাত্রা অনেক কঠিন হয়ে যাবে। শুধু কি তাই, বিদ্যুৎ না থাকলে অনলাইন ভিত্তিক  ব্যাংকিং লেনদেন বন্ধ হলে  অর্থনৈতিতে স্থবিরতা দেখা দিবে।

সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও লোডশেডিং মানেই হলো বিদ্যুৎখাতের 'উন্নয়ন' দর্শনে বড় রকমের ত্রুটি রয়ে গেছে। এ মত দিয়েছেন  জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। বিদ্যুৎ ছিল না, এখন বিদ্যুৎ আছে। কত বিদ্যুৎ দরকার, উৎপাদন সক্ষমতা কত বাড়ানো হবে, বিজ্ঞানভিত্তিক এই 'উন্নয়ন' দর্শন আমাদের বিদ্যুৎ খাতে অনুপস্থিত বলে মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

লোডশেডিং এর  কারণ-
আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাস ও তেলের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি লোডশেডিং এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে জাতীয় সম্পদের অপচয়। বিশেষ করে অতিমাত্রায় বিদ্যুতের অপচয় লক্ষ করা যায় বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে। যেখানে অযথা লাইট, ফ্যান, এসিসহ বিভিন্ন ভারি বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যবহার হয়ে থাকে। এছাড়াও শহর - গ্রাম প্রায় সব বাসা-বাড়িতে অত্যাধিক মাত্রায় ও কিছু ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনে টিভি, ফ্রিজ, এসি, ওয়াশিং মেশিন, হিটার, ইস্ত্রিসহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্র ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যেগুলো বিদ্যুৎ অপচয়ের জন্য দায়ী।
এছাড়াও রান্নার কাজের জন্য অতিরিক্ত  গ্যাসের ব্যবহার, কাপড় শুকানোর জন্য বৈদ্যুতিক ফ্যানের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার, ম্যাচের কাঠি বাচানোর জন্য গ্যাসের চুলা জালিয়ে রাখা,  বাসায় ফ্যান, লাইট চালু রেখে অন্য কাজে ব্যস্ত থাকা ও বিয়ে বাড়িতে জাঁকজমকপূর্ণভাবে অপ্রয়োজনীয়  আলোকসজ্জা লোডশেডিং এর জন্য দায়ী।
 
এই দিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ  বুয়েটের  অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ তামিম বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক জ্বালানি পরিস্থিতি বিবেচনায় খরচ সাশ্রয়ের জন্য লোডশেডিংই সেরা বিকল্প। তিনি আরো বলেন-  শুধু বাংলাদেশ নয়, উন্নত বহু দেশ জ্বালানি সংকটে পড়েছে। কেউ প্রস্তুত ছিল না। ইউরোপ মারাত্মক সংকটে পড়েছে। জাপান, তাইওয়ান, ভারতেও সংকট দেখা দিয়েছে। তিনি আরো বলেন - দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতার কোন ঘাটতি নেই, কিন্তু উৎপাদনের জন্য প্রাথমিক কাচামালের প্রাপ্যতার যথেষ্ট ঘাটতি আছে। জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় দেশের গ্যাস উৎপাদনে নজর দেয়া প্রয়োজন ছিলো।

অপরদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ইজাজ হোসেন  বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ পেতে সরকার জামালপুরে ১শ মেগাওয়াট যে কেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে, সেটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এ ধরনের একটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আমরা দেশে সৌরশক্তির বড় অবদানটা বুঝতে পারবো। বিদ্যুতের ট্যারিফ বেশি হলেও পরিবেশের কথা মাথায় রেখে অন্তত এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন জরুরি। নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান সম্ভব।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের জ্বালানি উপদেষ্টা এবং বুয়েটের  অধ্যাপক ডা. শামসুল আলম বলেন, সঠিকভাবে লোড ম্যানেজমেন্ট ( লোডশেডিং)  গ্যাস ও বিদ্যুতের বর্তমান উৎপাদন হারের মধ্যেও জনগণের দুর্ভোগ কমাতে পারে। দেশে প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অবৈধভাবে ব্যবহার হয়।  দেশের সকল  গ্যাস ও বিদ্যুতের অবৈধ ব্যবহার বন্ধেরও মাধ্যমে এর সমাধান দ্রুত সম্ভব।

অপরদিকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় আপাতত স্পট মার্কেট (খোলাবাজার) থেকে গ্যাস কেনা হচ্ছে না। এ অবস্থায় জ্বালানি ঘাটতি মোকাবিলায় সারা দেশে দিনে কয়েক ঘন্টার লোডশেডিং চলছে।

বিদ্যুতের ব্যবহার নিয়ে আমাদের চিন্তা করার এখনই উপযুক্ত সময় । অভিযোগ বা পাল্টা অভিযোগের বিষয় নয় এটি বরং ঐক্যবদ্ধভাবে এটা সমাধান করতে হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন। তিনি বলেন, সরকার এই সমস্যার সমাধান করতে সাধ্যাতীত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে বিদ্যুৎ,গ্যাস পানিসহ মৌলিক চাহিদাসম্পন্ন রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।  আন্তর্জাতিক  বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দামের অস্থিরতার সময় বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহারের মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট কমানোর গেলে এবং বিশ্ব পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

এ দিকে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, এই পরিস্থিতি সাময়িক। জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী কিছু সময়ের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানোর কথা ভাবছেন। আমাদের প্রচুর বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। বিশ্বে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি কাঁচামালের কারণে  আমরা উৎপাদন কমাতে বাধ্য হয়েছি। যে তেল আমরা ৭০ থেকে ৭১ ডলারে কিনতাম সেটা এখন প্রায় ১৭১ ডলার হয়ে গেছে এবং মূল্য  দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বের প্রতিটি দেশ জ্বালানি সাশ্রয়ে কেউ দাম বাড়াচ্ছে কেউবা ব্যবহার কমাচ্ছে । পুরো বিশ্বে এই সংকটময় সময়ের মূল কারণ হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পাশাপাশি করোনা পরবর্তী শিল্প উৎপাদনে বিদ্যুৎ এর চাহিদা বেড়ে যাওয়া।  অর্থনীতির ভাষায় চাহিদা বাড়লে দাম বাড়ে আর ঘাটতি থাকলেও দাম বাড়ে। ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ সাশ্রয় না করলে দাম না বাড়ানোর বিকল্প থাকবে না। যদি আমরা সবাই গ্যাস ও বিদ্যুৎ  ব্যবহারে মিতব্যয়ী হয়ে উঠি, তাহলে খুব দ্রুত  এই পরিস্থিতি আমরা  কাটিয়ে উঠতে পারবো।

অন্যদিকে, বিদ্যুৎ সংকটের এই সময়ে সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কথা জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন  বলেন -বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ফলে শিডিউল অনুযায়ী এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং, দোকান-পাট রাত ৮ টায় বন্ধ,তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্থগিত ও সরকারি-বেসরকারি অফিসের কিছু কার্যক্রম ভার্চুয়ালি এবং সপ্তাহে একদিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখার, অফিস টাইম কমানো, ওয়ার্ক ফ্রম হোম, অফিস ভবনে বিদ্যুৎ খরচ সীমিত করার জন্য এতোমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রায় সারাদেশ এখন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। শহর, মফস্বল কিংবা অজপাড়াগাঁ সবখানেই এখন বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থার সহজলভ্যতার ফলে অনেকেই বিভিন্ন সময়ে, কারণে বা অকারণে বিদ্যুৎ অপচয় করে, যা আমাদের দেশের সার্বিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকর।এখন সবারই উচিত বিদ্যুৎ অপচয় রোধ করা। আমরা নিজেদের অজান্তেই প্রত্যহ অনেক বিদ্যুৎ অপচয় করে ফেলি। এর সঙ্গে দিনকে দিন বাড়তে থাকা বিভিন্ন  প্রযুক্তির  পণ্যের ব্যবহারতো আছেই। তাই বলে কি বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন না? অবশ্যই করবেন। তবে বৈশ্বিক সংকটময় মুহূর্তে
বিদ্যুৎ ব্যবহারে অপচয় না করে বরং মিতব্যয়ী হওয়া উচিত। বিদ্যুতের অপচয় কমাতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক- বিদ্যুৎ অপচয় রোধে কী করণীয়-

*  টিউব লাইটে ইলেকট্রিক্যাল ব্যালেষ্ট ব্যবহার না করে যদি ভালো মানের ইলেকট্রনিক্স ব্যালেষ্ট ব্যবহার করা যায়, তাহলে বিদ্যুৎ বিল কম আসবে অনেক।

* ফ্যানের রেগুলেটর যদি ইলেকট্রনিক্স রেগুলেটর হয় বিদ্যুৎ বিলের খরচ বেঁচে যাবে।

* দেওয়ালের বিভিন্ন পয়েন্টে অযথা চার্জার লাগিয়ে রাখলেও কিছু বিদ্যুৎ খরচ হয়। দরকার না হলে প্লাগ খুলে ও সুইচ বন্ধ করে রাখুন।

* প্রয়োজন ব্যাতীত ওভেন, ফ্যান, পিসি ইত্যাদি বন্ধ করে রাখুন।

* বিদ্যুৎ সংযোগ খারাপ বা ত্রুটিপূর্ণ হলে আপনার বিদ্যুৎ খরচ বেশি হতে পারে। খারাপ সংযোগ সারিয়ে তুলুন।

* পুরোনো লাইট বাল্ব বদলে এনার্জি সেভার বাল্ব ব্যবহার শুরু করুন। এগুলো ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে পারে।

* ওয়াশিং মেশিন শুধু বিদ্যুৎ নয় পানিরও অপচয় করে বেশি।

* ড্রায়ারে বা ফ্যান ছেড়ে কাপড় শুকানোর বদলে বারান্দা বা ছাদে মেলে দিন।

* রেফ্রিজারেটরের কয়েল বছরে অন্তত দু’বার পরিষ্কার করিয়ে নিন। এসির ফিল্টারও পরিষ্কার রাখুন। তাহলে বিদ্যুৎ খরচ কমবে।

* পানি গরম করতে গিজার বা হিটার ব্যবহার কমিয়ে দিন।

* হেয়ার ড্রায়ারের বদলে বাতাসেই শুকিয়ে নিন চুল। এতে করে বিদ্যুতের অপচয় কমবে।

* গ্যাস সরবরাহ সচল থাকার পরও বিদ্যুৎ চালিত চুলা ব্যবহার না করা, বিদুৎ চালিত চুলা বিদ্যুৎ অপচয়ের অন্যতম কারণ।

* বাইরে বের হওয়ার সময় সব বৈদ্যুতিক সুইচ বন্ধ করে বের হওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ভুলবশত যেন কেউ রাতে লাইট জ্বালিয়ে ঘুমিয়ে না পড়েন।

* ওভেন চালানোর অভ্যাস ত্যাগ করুন। বিশেষ করে মাইক্রোওয়েভ। রাইস কুকার, কারি কুকার ইত্যাদি একেবারেই বাধ্য না হলে ব্যবহার করবেন না।

* নিয়ন গ্যাসীয় ডিম লাইট ও ইলেকনিং বেলাষ্ট ডিম লাইটে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। এভাবে ডিম লাইট থেকে ৫ ভাগের এক ভাগ বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়।

* বিভিন্ন উৎসব কিংবা অনুষ্ঠানে আলোকসজ্জা কমানোর ব্যবস্থা করুন। এমনকি বিয়ের অনুষ্ঠানেও অতিরিক্ত আলোকসজ্জা এড়িয়ে চলুন।

বর্তমানে অনেক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অযথা বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানো, রাস্তার বাতি সময়মতো বন্ধ না করাসহ নানাভাবে আমরা প্রতিনিয়ত বিদ্যুতের অপচয় করছি। প্রাত্যহিক জীবনে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, তেল একে অপরের পরিপূরক। তাই বিদ্যুৎসহ সকল জাতীয় সম্পদের অপচয় রোধ করার এখনই সময়। বিদ্যুৎসহ সকল রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় রোধ করার উপায়গুলো -

* দিনের আলোর সর্বোত্তম ব্যবহার হোক -দিনের বেলায় লাইট, ফ্যান কিংবা এসি কম ব্যবহার করে বাইরের আলো আর প্রাকৃতিক হাওয়াকে সাদরে আলিঙ্গন  জানান আপন আলয়ে। ভোরবেলাতেই জেগে উঠুন রোজ। দিনের আলোয় হোক নিত্যদিনের সঙ্গী।  সুস্বাস্থ্য আর সু-অভ্যাস দুটিই হবে ভোরের জাগরণে। আপনি ভরপুর হবেন প্রাণশক্তিতে, আর বেঁচে যাবে অহেতুক বিদ্যুৎ শক্তির খরচ।

* এসির ব্যবহার কমানো হোক - বাড়িতে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র থাকলেই যে সব সময় তা চালাতে হবে, তা কিন্তু নয়। কখনো কখনো প্রাকৃতিক হাওয়াও উপভোগ করতে পারেন ছাদে বা বারান্দায়। বারান্দার সবুজ গাছ ঘরেও আনে শীতল পরশ।

*জ্বালানী ব্যবহারে অপচয় রোধ করি -জ্বালানী গ্যাসের প্রবাহ অবিরাম পাচ্ছেন একই টাকায় এই ভেবে দেশের সম্পদের অপচয় করা যাবে না। আমাদের মা -বোনেরা অনেকেই ম্যাচের কাঠি বাঁচাতে চুলা জ্বালিয়ে রাখেন যেটা কোনভাবেই  উচিৎ নয় । প্রয়োজনের অধিক জ্বালানি গ্যাস ব্যবহার না করার অভ্যাস রপ্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে জাতীয় সম্পদের অপচয় রোধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ তথা জরিমানা আরোপের ব্যবস্থা নিশ্চিতে পদক্ষেপ নিতে হবে।

*  মোটরযানের জ্বালানি বাঁচাতেও সচেষ্ট থাকুন- আমার টাকায় আমার জ্বালানী  আমি খরচ করবো এই মনোভাব থেকে বের হতে হবে কারণ জ্বালানীর জন্য সরকার প্রায় ৫-১০ গুণ ভর্তুকি দেন। কম দূরত্বের জন্য মোটরসাইকেলের চেয়ে বাই সাইকেলে বা  হেঁটে যাওয়া স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। যানবাহনে বিনা প্রয়োজনে ইঞ্জিন বন্ধ রাখতে হবে।

*পানির সাশ্রয়ী ব্যবহার হোক - আপনি হয়তো  প্রতিনিয়ত পানি পাচ্ছেন । আবার কোথাও রাত জেগে মোটর চালিয়েও পানি পাচ্ছে না অনেকেই । সুপেয় পানির অভাব বিশ্বব্যাপী। আপনার পানির অপচয়ের কারণে হয়তো অনেক এলাকায় পানির সংকট দেখা দিবে। তাই প্রয়োজনীয়  পানি ‘ব্যবহার’ করুন কিন্তু  অপচয় নয়।

* কাপড় ধোয়ার যন্ত্রের সীমিত ব্যবহার হোক- কাপড় ধোয়ার যন্ত্র প্রতিদিন না চালিয়ে কাপড় জমিয়ে রেখে কয়েক দিন অন্তর চালাতে পারেন। অথবা ওয়াশিং মেশিন ব্যবহারের পরিবর্তে হাতে কাপড় ধৌত করলে শারীরিক পরিশ্রমের পাশাপাশি জাতীয় সম্পদও বেঁচে যাবে।

*  সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধি করা, পাওয়ার সেভিংস বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার।বাইরে বের হবার সময় ঘরের লাইট, ফ্যান, এসি  ওয়াইফাইয়ের সুইচ অফ করবেন।

* ইজিবাইক ও অটোরিকশা বন্ধ হোক - গবেষণায় দেখা গেছে অবৈধ প্রায় ১৫ লক্ষ ইজিবাইক ও অটোরিকশায় অবৈধ চার্জেই  গিলে খাচ্ছে প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। অন্যদিকে দেশের সাধারণ মানুষ মনে করে - জ্বালানি সংকট হতেই পারে কিন্তু এ বিষয়ে আগে থেকেই যদি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হতো  তাহলে লোডশেডিং এর পরিমাণ অসহনীয় পর্যায়ে যেতো না! অনেকের ধারণা  সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহনে যারা প্রভাবিত করেন তারা মূলত এই ক্রাইসিসের মুখে পড়তে হয় না। লোডশেডিং যাইহোক তারা এসিতেই থাকবেন অপরদিকে সমাজের বৃহৎ জনগোষ্ঠী মৌলিক চাহিদা হতে বঞ্চিত হবেন। এতে মানুষের মনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া হবে, অথচ দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত সুবিধা, শান্তি শৃঙ্খলা নানা সূচকে দেশর অভূতপূর্ব উন্নতি হলেও  কিন্তু  মৌলিক চাহিদায় প্রভাব পড়লে বাকি সব কিছু ম্লান হবে। এ বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে জনমানুষের ভোগান্তি রোধ করার বিকল্প নাই।

উন্নয়নশীল দেশ থেক  উন্নত দেশ হওয়ার জন্য  প্রত্যেক মানুষকে  সততা,দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রাকৃতিক সম্পদ হোক বা মনুষ্য সৃষ্ট  সম্পদই হোক, প্রতি ক্ষেত্রে সম্পদের সুষ্ঠু  ব্যবহারে আমাদের আরও সতর্ক ও দায়িত্বশীল ভুমিকা পালন করতে হবে। বড় বড় অপচয় ও অব্যবস্থাপনা ছাড়াও আমাদের দিন যাপনে, দৈনন্দিন কাজকর্মে, চলতে-ফিরতে অসতর্কতা-অসচেতনতা ও অজ্ঞতার কারণে আমরা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও কর্মপরিবেশে গ্যাস, বিদুৎ, পানি, তেল ব্যবহারে ছোট ছোট অপচয় করে যাচ্ছি।  দিয়াশলাইয়ের কাঠি বাঁচানো ও কাপড় শুকানোর জন্য বাসাবাড়ির গ্যাসের চুলা অকারণে জ্বালিয়ে রাখার বিষয়টি মা-বোনদের পুরনো অভ্যাস । এই  অপচয়ের কারণেই হয়তো ঢাকা শহরের অনেক এলাকায় এখন গ্যাস সংকট দেখা দেয়। শুধু তাই না, অপচয়ে রাজার ভাণ্ডারও ফুরিয়ে যায় এবং
সব ধর্মে অপচয় কে বর্জন ও মিতব্যয়িতাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনের  বলা হয়েছে- ‘অপচয়কারী শয়তানের ভাই '। তাই জাতির প্রতিটি কণা পরিমাণ সম্পদের যথাযথ সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতের জন্য অপচয়প্রবণতা ত্যাগ করে জাতীয়  সম্পদ রক্ষায় মিতব্যয়ী হতে পারলে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব হবে বলে মনে করেন দেশে বিশেষ্টজনেরা।

ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ' - ত্যাগই মানবজীবনের মহৎ আদর্শ। ত্যাগের মধ্য দিয়েই মনুষ্যত্বের বিকাশ সাধিত হয়। যথার্থ মনুষ্যত্ব বোধসম্পন্ন মানুষের পরিচয় তার ভোগ-লালসার মাধ্যমে প্রকাশ পায় না, পরের জন্য ত্যাগের মধ্যেই মানুষের প্রকৃত সুখ নিহিত। মনে রাখতে হবে - সরকারের একার পক্ষে জাতীয় সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব নয়। তাই জাতীয় সম্পদ ব্যবহারে প্রত্যেকের  একটুখানি সচেতনতার কারণে সাশ্রয় হওয়া  বিদ্যুৎই হয়তো একজনের বড় ধরনের কোনো কাজে লাগতে পারে। অতএব, দেশের সুনাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের নিজ জায়গা থেকে এগিয়ে আসা এবং নিজে সচেতনতা অবলম্বনপূর্বক অপরজনকে সচেতন করার মাধ্যমে বিদুৎসহ সকল রাষ্ট্রীয় সম্পদের  অপচয় কমিয়ে দেশের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করি।

ইঞ্জিনিয়ার ফকর উদ্দিন মানিক
লেখক: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
সভাপতি - সিএসই এলামনাই এসোসিয়েশন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

অনিবন্ধিত সব অনলাইন বন্ধ করা সমীচীন হবে না: তথ্যমন্ত্রী


এমএস.প্রতিদিন ডেস্ক:
বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ০৬:৩২
অনিবন্ধিত সব অনলাইন বন্ধ করা সমীচীন হবে না: তথ্যমন্ত্রী

ফাইল ছবি । ড. হাছান মাহমুদ

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ৭দিনের মধ্যে অনিবন্ধিত সবগুলো অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া সমীচীন হবে না। এ বিষয়ে আদালতকে অবহিত করা হবে। বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন তিনি।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, আদালতকে আমরা জানাবো সাতদিনের মধ্যে সবগুলো বন্ধ করে দেওয়া সমীচীন হবে না। অনেকগুলো বন্ধ করবো, আদালতকে জানাবো, আসলে কি প্রক্রিয়ায় রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে।

কিছু গণমাধ্যমকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হয়েছে। বাকিগুলোর বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে-জানতে তিনি বলেন, আবেদনের পর যাচাই-বাছাই করার জন্য আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এগুলো তদন্তকারী সংস্থাকে দেয়। সেটি শেষ করে না আসা পর্যন্ত আমরা দিতে পারি না। এ কারণেই সময় লাগছে। 
 
তথ্যমন্ত্রী বলেন, এখন যেগুলো রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত, সেগুলো ছাড়া আর কোনো অনলাইন ভবিষ্যতে বের হবে না, তেমন নিয়মতো নেই। যেসব অনলাইন সত্যিকার অর্থে গণমাধ্যম হিসেবে কাজ করে না বরং নিজস্ব বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে এবং ব্যাঙের ছাতার মতো এত অনলাইন দেশে প্রয়োজন নেই।

তিনি বলেন, যার যেমন ইচ্ছে একটি অনলাইন খুলে বসবে এবং সেটি নিয়ে যেমন ইচ্ছে তেমন সংবাদ পরিবেশন করবে, মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করবে, গুজব রটানোর কাজে ব্যস্ত হবে, অন্যের চরিত্র হনন করবে, ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হবে, কোন ব্যবসায়িক স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য সেখানে লেখালেখি হবে, এটি কখনোই সমীচীন নয়। সেক্ষেত্রে এ আদেশ অবশ্যই একটি সহায়ক আদেশ।  

হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা আদালতের লিখিত কপি পাওয়ার পর যে সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে, সে সময়সীমার মধ্যে অবশ্যই কিছু অনলাইন বন্ধ করবো। তবে ভবিষ্যতেও অনলাইন রেজিস্ট্রেশন দিতে হবে। একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিবন্ধন দেওয়া হচ্ছে। আমরা আদালতের কাছে সে বিষয়টি উপস্থাপন করবো। কিছু অনলাইন আমরা বন্ধ করবো।

ইতিমধ্যে কিছু বন্ধও করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আমরা আদালতের নজরে এটিও আনবো, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং যাচাই-বাছাই ছাড়া সবগুলোকে একসঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয়, সেটিও কতটুকুক সমীচীন, সেটিও ভাবার বিষয়। সেজন্য আমরা আদালতের নজরে আনবো। সূত্র: বিডি প্রতিদিন

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম
Share on Facebook

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন এর সর্বশেষ

সর্বশেষ - মতামত