a
সংগৃহীত ছবি
পবিত্র মাহে রমজান আল্লাহকে একান্ত করে আপন করে নেয়ার মাস এবং নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নেয়ার মাস। এ মাসের বিশেষ মাহাত্ম হচ্ছে লাইলাতুল কদর। তাইতো মুমিনের হৃদয় কাঁদে লাইলাতুল কদরের প্রত্যাশায়।
বিগত বছরে আত্মায় সংগোপনে সঞ্চিত তাবৎ পাপ অপরাধ ও হৃদয়াভ্যন্তরে পুঞ্জীভূত সব পঙ্কিলতাকে ধুয়ে মুছে সাফ করে সজ্জিতরূপে সজ্জনে পরিণত হওয়ার মাস হল রমজান।
যারা এ মাসের প্রতিটি সময়কে বিশেষ ইবাদত বন্দেগিতে রত থেকে অতিবাহিত করতে পারবেন তারাই কেবল আল্লাহপাকের প্রিয়ভাজন হবেন। বসন্ত মৌসুমে ফুটন্ত ফুলের সমারোহ হতে মধু আহরণ করে মৌ-মক্ষিকা যেমন সেই মৌসুমকে সার্থক করে তেমনিভাবে একনিষ্ঠ চিত্তের খোদা প্রেমিকগণ রমজানে নিবেদিত ইবাদত গোজারের মাধ্যমে জীবনোদ্দেশ্যকে সার্থক করে এবং আবিষ্কার করে নেয় রমজানের সেই রাতটিকে- যে রাতের ইবাদত হাজার মাস চেয়েও অধিক মর্যাদাবান।
প্রত্যেক মুমিন বান্দার জন্য ‘লাইলাতুল কদর’-এর আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থ রয়েছে, আর তা হলো, এটা এমন এক রাত, যখন মুমিন এক মহান আশীর্বাদ লাভ করতে পারে।
প্রসিদ্ধ একটি হাদিস দ্বারা একথা সাব্যস্ত যে, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘কদরের রাতে যে ব্যক্তি ঐকান্তিক বিশ্বাসের সাথে আল্লাহর পুরস্কার লাভের আশা করে, তার অতীতের সব গুণাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়’ (বোখারি, প্রথম খণ্ড)।
আমাদের দেশে ২৭ রমজানের রাতকেই লাইলাতুল কদর হিসেবে পালন করা হয়। তবে হাদিসে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লাইলাতুল কদর অন্বেষণের সময় কখন হবে সে বিষয়ে উপদেশ দিয়ে বলেছেন, ‘রমজান মাসের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর অন্বেষণ কর’ (বোখারি)। হাদিসের ভাষ্যমতে, রমজান মাসের শেষাংশের যেকোনো বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে যেকোনো রাতই লাইলাতুল কদর হতে পারে।
মহান এ রাত সম্পর্কে আল্লাহপাক তার পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআনে বলেন, ‘এবং তোমাকে কিসে অবহিত করবে যে, লাইলাতুল কদর কি? লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। ঐ রাতে ফেরেশতাগণ এবং কামেল রূহ সকল তাদের প্রতিপালকের হুকুম অনুযায়ী যাবতীয় বিষয়সহ নাযেল হয়’ (সুরা কাদর)।
এ রাত কখন আসে, কিভাবে আসে এবং কেমন আরাধ্য আত্মার কাছে মহিমান্বিত এ রজনী ধরা দেয়, সে বিষয়ে আমাদেরকে অবগত হতে হবে।
হজরত রাসুল পাক (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের জীবনে আগত প্রতিটি রমজানের শেষ দশকের কোন এক বেজোড় রাত্রিতে এ সম্মানিত রজনীকে সন্ধান করো’ (বোখারি)।
অর্থাৎ রমজানের ত্রিশটি দিবস অসম্ভব কঠোর সাধনায় অবিরাম আরাধনার পর এ মাসের প্রায় শেষ প্রান্তে এসেই কেবল একজন আরাধক সেই রাতের সন্ধান লাভ করতে পারে। আর এটাই হলো রমজানের নিবিড় ইবাদতের মর্মকথা।
অতএব, ঐশী পুণ্যে পরিপূর্ণ এ রাতের সন্ধান লাভ করা কোন সাধারণ বিষয় নয় এবং এটি কোন সাধারণ কাজও নয়। যে মহাজন বছরের প্রতিটি দিবস ও রাত সাতিশয় সাধনায় দ্বীনের ইবাদতে ব্রত থেকে পুণ্যতায় পূর্ণ হতে পারবেন কেবল তিনিই সন্ধান পাবেন সে রাতের সওগাত সম্ভার।
মহান আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘স্মরণ রেখো, আল্লাহর স্মরণেই হৃদয় প্রশান্তি লাভ করে’ (১৩:২৮)।
মুমিন মাত্রই মাহে রমজানের পবিত্রতায় আল্লাহ স্মরণের মাত্রাকে বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেয়, ইবাদতের একাগ্রতাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। এমন কোন পুণ্যের কাজ নেই যা কিনা সে হাতছাড়া করে।
আল্লাহ প্রেমিকের অন্বেষণ মাত্র একটাই থাকে আর তা হলো, লাইলাতুল কদরকে লাভ করা। এ প্রাপ্যতার মাঝেই সে আত্মার শান্তি আর এ উপার্জনের মাঝেই সে জীবনের সার্থকতা খুঁজে পায়। প্রতিটি বছর রমজান তার সেই স্বর্গ-সুধা প্রদানের জন্যই আমাদের প্রত্যেককে আহ্বান করে।
তাই আসুন! রমজানের এ শেষ ক’টিদিন সিয়াম সাধনায় নিবিড়চিত্তে নিবেদিত হয়ে সেই মাহাত্ম্য আহরণে মত্ত হই, যার মাঝে প্রকৃত সুখ নিহিত। কেননা এই শেষ দশকেই আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে আত্মার নাজাতের প্রতিশ্রুতিসহ লাইলাতুল কদরের উপহার রেখেছেন।
এমনিভাবে বিভিন্ন ইবাদতে খোদা মানুষের আত্মার মঙ্গলার্থে নানান উপায়ে মজুত রেখেছেন তার অনন্যসব অবদান। এসব ব্যবস্থাদি মানুষের প্রতি খোদার অনুকম্পা প্রদর্শনেরই প্রমাণ।
তাই আমাদের উচিত হবে খোদা সকাশে ধর্ণা দিয়ে সেসব অনুকম্পাদি আহরণ করা। নচেৎ জীবন হবে মূল্যহীন। আমরা তো কোনভাবেই প্রত্যাশা করতে পারি না যে, আমাদের জীবনে আবারও এ রমজান ফিরে আসবে।
আমরা যদি আমাদের প্রণান্ত প্রচেষ্টা ও আল্লাহর দয়ায় সেই নেয়ামত পেয়েই যাই তখন আমাদের কি করা উচিত?
এক্ষেত্রে রাসুল করিম (সা.)-এর উপদেশ বাণী হল, তিনি (সা.) বলেছেন, যখন তোমরা লাইলাতুল কদরের সন্ধান পাবে, তখন এ দোয়াটি পাঠ করবে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি, হে আল্লাহ তুমি অবশ্যই ক্ষমাশীল। তুমি ক্ষমা করাকে পছন্দ কর, কাজেই তুমি আমাকে ক্ষমা কর’ (তিরমিজি)।
হে আমাদের পরম প্রিয় করুণাময় খোদা! তুমি আমাদের প্রত্যেককে ক্ষমা কর এবং রমজানের সবকটি নেয়ামত আমাদের প্রত্যেককে দান কর আর লাইলাতুল কদর লাভে আমাদেরকে ধন্য কর, আমিন।
লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট/masumon83@yahoo.com/সূত্র:যুগান্তর
ফাইল ছবি
হিজাব পরে শ্রেণিতে ক্লাস নেয়া যাবে না- কলেজ কর্তৃপক্ষের এমন বিধিনিষেধের মুখে চাকরিই ছেড়ে দিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত একটি আইন কলেজের শিক্ষিকা সানজিদা কাদের। তার অভিযোগ, কলেজ গভর্নিং বডি কর্তৃক জারি করা কথিত আদেশটি তার মূল্যবোধ এবং ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। খবর হিন্দুস্তান টাইমস।
কলেজটিতে হিজাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল গত ৩১ মে। এরপর চাকরিতে ইস্তফা দেন সানজিদা কাদের এবং ৫ জুন থেকে তিনি আর ক্লাস নেননি।
গত মার্চ-এপ্রিল থেকেই হিজাব পরিধান করেই ক্লাস নিচ্ছিলেন সানজিদা। তবে তার কয়েক সপ্তাহ পর হঠাৎ কলেজ কর্তৃপক্ষ জারি করে পোশাক বিধি। ওই শিক্ষিকার অভিযোগ, ক্রমশ পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছায় যে, জুন মাসের পাঁচ তারিখ কলেজ থেকে তিনি চাকুরি ছাড়তে বাধ্য হন।
এরপর বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসায় শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। ফলে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। পরে তারা দাবি করেন, কিছু ভুল বোঝাবুঝির কারণে এমনটি ঘটেছে। কর্তৃপক্ষ এও দাবি করে যে, তারা কখনোই সানজিদা কাদেরকে ক্লাস নেওয়ার সময় কাপড় দিয়ে মাথা ঢেকে রাখতে নিষেধ করেনি।
এরপর কলেজ কর্তৃপক্ষ গত ১১ জুন সানজিদা কাদেরকে একটি ইমেইল পাঠিয়ে পুনরায় ক্লাস নেওয়ার অনুরোধ জানায়। সেখানে আরও বলা হয়েছে যে, শিক্ষকদের পোশাক বিধি পর্যালোচনা ও মূল্যায়নের পর সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, ক্লাস নেওয়ার সময় সানজিদা কাদের দোপাট্টা বা স্কার্ফ ব্যবহার করে মাথা ঢাকতে পারবেন। সূত্র: ইত্তেফাক
ফাইল ছবি
দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে সব জায়গায় মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে ৬টি নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। মঙ্গলবার ছয়টি নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সব মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বিভাগীয় কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
নির্দেশনার চিঠিতে বলা হয়, সাম্প্রতিককালে সারাদেশে কোভিড-১৯ আক্রান্তের হার দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে ও জনগণের মধ্যে মাস্ক পরিধান এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে যথেষ্ট শৈথিল্য দেখা যাচ্ছে।
কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির গত ১৪ জুনের সভায় গৃহীত সুপারিশ প্রতিপালনের জন্য এবং কোভিড প্রতিরোধে ছয়টি নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সচিব ও বিভাগীয় কমিশনারদের অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।
১. স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করতে সব গণমাধ্যমে অনুরোধ জানাতে হবে।
২. সবক্ষেত্রে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা, ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নীতি প্রয়োগ করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম যথাসম্ভব বর্জন করতে হবে।
৩. ধর্মীয় প্রার্থনার স্থানগুলোতে (যেমন- মসজিদ, মন্দির, গির্জা ইত্যাদি) মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
৪. জ্বর, সর্দি, কাশি বা কোডিড-১৯ এর উপসর্গ দেখা দিলে কোভিড টেস্ট করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
৫. দোকান, শপিংমল, বাজার, ক্রেতা-বিক্রেতা, হোটেল-রেস্টুরেন্ট সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধান করতে হবে। অন্যথায় তাকে আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
৬. স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরিধানের বিষয়ে সব মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় ইমামরা সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন। সূত্র: বিডি প্রতিদিন