a
ছবি: মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
সাইফুল আলম, ঢাকা: জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলা বিশেষত মিথেন গ্যাস নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তি নির্ভর নতুন উদ্ভাবন নিয়ে এসেছেন জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী ও তাঁর গবেষক দল। আজ ২৬ মে সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এ উদ্ভাবন বিষয়ে বিস্তারিত উপস্থাপন করেন তিনি।
রোম, কৃষাণ ফাউন্ডেশন, মেধাসম্পদ সুরক্ষা মঞ্চ ও জ্যাকফুট পোস্টের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বেসিসের সাবেক সভাপতি ও বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম ফাহিম মাশরুর, পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ, অমল ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ইশরাত করিম ইভা।
সংবাদ সম্মেলনে আবেদ চৌধুরী বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী গ্রীনহাউস গ্যাসের অন্যতম মিথেনের বড় অংশ আসে গবাদিপশু অর্থাৎ গরু, ছাগল আর মহিষের পেট থেকে। এই জাবর কাটা প্রাণীগুলোর হজম প্রক্রিয়ার সময় ঢেঁকুর, নিঃশ্বাস ও বর্জ্যের মাধ্যমে বিপুল মিথেন গ্যাস নিঃসরণ হয়। বৈশ্বিকভাবে প্রতিবছর এ ধরনের গবাদিপশু থেকে নির্গত হয় প্রায় ১০০ মিলিয়ন টন মিথেন। বাংলাদেশের গবাদিপশু খাত থেকেও প্রতিবছর প্রায় ৩০ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই-অক্সাইডের সমতুল্য মিথেন নির্গত হয়।
অস্ট্রেলিয়ার গবেষণা প্রতিষ্ঠান Loam Bio এর পক্ষ থেকে এই আবিষ্কার সম্পর্কে বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী বলেন, তাদের উদ্ভাবিত বিশেষ ধরনের প্রাকৃতিক ছত্রাক, যা গবাদিপশুর হজম প্রক্রিয়ায় মিথেন উৎপাদন ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে সক্ষম। এই ছত্রাক কোনো রকম জেনেটিক মডিফিকেশন ছাড়াই কাজ করে এবং পশুর স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলে না। এটি পশুখাদ্যে ফিড অ্যাডিটিভ হিসেবে মেশালে কার্যত মিথেন নির্গমন বন্ধ হয়ে যায়।
২০২৫ সালের মার্চ মাসে Biotechnology Reports জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা ইতোমধ্যেই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই আবিষ্কারের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে নতুন কোম্পানি - ROAM Agricultural। প্রতিষ্ঠানটির মডেল অনুযায়ী খামারিরাই ছোট ছোট ইউনিটে এই ছত্রাক উৎপাদন করতে পারবেন। তিনি বলেন, ROAM কোম্পানির মালিকানার বড় অংশ মাত্র ৮ মিলিয়ন ডলারে বিনিয়োগকারীদের জন্য উন্মুক্ত; বাংলাদেশেও এই সুযোগ নিতে পারে। আবেদ চৌধুরী বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, সঠিক প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গবাদী পশু থেকে মিথেন নির্গমন ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব। বাংলাদেশ যদি মিথেন নির্গমন অর্ধেক কমাতে সক্ষম হয়, তাহলে এই "সবুজ অর্থনীতি"-র সম্ভাব্য বাজারমূল্য দাঁড়াবে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার!
এছাড়াও উক্ত অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন এ কে এম ফাহিম মাশরুর, পাভেল পার্থ এবং ইশরাত করিম ইভা। তারা বলেন, বাংলাদেশ থেকে মিথেন গ্যাস নির্গমন কমাতে হবে। সবুজ অর্থনীতির দিকে আগাতে হবে। বাংলাদেশ যদি চায় ROAM কোম্পানির বিনিয়োগে অংশগ্রহণ করতে পারে। ক্ষতিকর মিথেন গ্যাস নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরীর নতুন উদ্ভাবন নিয়ে অনেক বড় আশা প্রকাশ করেন। বৈশ্বিক জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে এই উদ্ভাবন অনেক কাজে লাগবে বলে সবাই প্রত্যাশা করেন এবং বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরীকে শুভেচ্ছা ও সাধুবাদ জানান।
ছবি সংগৃহীত
গতকাল সকাল সাড়ে নয়টায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমিকম্প হয়। ভূমিকম্পটি ৫.২ মাত্রার হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির তেমন খবর পাওয়া যায়নি। তবে ৬ বা তার অধিক কম্পন হলে খুদ ঢাকা শহরেই অনেক ক্ষয়ক্ষতি হতো বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
ভূতাত্ত্বিকদের মতে, রাজধানী ঢাকা শহর মাঝারি ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং বিল্ডিং কোড না মানা এর অন্যতম বড় কারণ। ইতিপূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আকতার ও অধ্যাপক মো. জিল্লুর রহমানসহ অনেকের মতে, ভূমিকম্পের উৎসগতভাবে ঢাকা 'মধ্য' ঝুঁকিতে রয়েছে। আর ঝুঁকিটা বাড়ার অন্যতম কারন অবকাঠামোগত ত্রুটির কারণে। এই ঢাকা শহরে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
উল্লেখ্য, তুরস্ক ও সিরিয়ার ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির অন্যতম কারন সেদেশগুলোতেও যথাযথ বিল্ডিং কোড না মানার কারণে। আর এবিষয়গুলো সামনে এসেছিল বড় আকারের দুর্ঘটনা ঘটার পর। আর আমাদের দেশে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড না মানার ব্যাপকতর অভিযোগ রয়েছে। প্রতিটি সংস্থাকে ম্যানেজ করে বেশিরভাগ সুউচ্চ ভবনগুলো গড়ে উঠেছে।
আবার সেসব সংস্থার লোকজন পরিবর্তন হলে তাদের স্থলে আসীন ব্যক্তিদেরও সেসব দুর্বল ভবনগুলো থেকে বছরকে বছর ম্যানেজের উপর দিয়েই চলে যাচ্ছে। আর বেশিরভাগ ডেভোলপার কোম্পানিগুলো থাকে সব সময় ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তারা কোন রকম বিল্ডিং তৈরি করে বিক্রি করে হয়ে যায় উধাও। আর এসব লক্ষ্য করা যায় যখন কোন বড় রকমের দুর্ঘটনা ঘটে, তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায়না।
এদিকে নগর পরিকল্পনাবিদরা মনে করেন, ঢাকাসহ অন্যান্য ঘনবসতি শহরগুলোতে ভূমিকম্প বা বড় আকারের কোন দুর্যোগ দেখা দিলে দুর্যোগ পরবর্তী উদ্ধারকার্য চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে উঠবে। ফলে এতে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির সম্ভাবনা থেকেই যায়।
এমনিতেই ঢাকার বেশির ভাগ ভবনগুলোতে ভূমিকম্প প্রতিরোধ ব্যবস্থা একেবারেই দূর্বল। অন্যদিকে পুরান ঢাকার ভবনগুলো গা ঘেঁষাঘেষি করে তৈরি করা এবং রাস্তাগুলোও সরু। ছোটখাটো যানবাহন চলাচল করা দূরুহ ব্যাপার। তাই সামান্য দুর্ঘটনাতেও সেখানে উদ্ধারমূলক কর্মকান্ড চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। বসিলা, বনশ্রী, আফতাবনগরসহ ঢাকা শহরের বেশীরভাগ সুউচ্চ ভবনগুলো জলাভূমি ভরাট করে বালি বা কাদামাটির উপর তৈরি করার কারণে ঝুঁকির মাত্রা এক্ষেত্রে অনেক বেশি।
২০০৯ সালে জাইকা ও সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচী(সিডিএমপি) এক জরিপে উল্লেখ করেছে যে, ঢাকায় ৭ বা তার চেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে শহরের প্রায় ৭২ হাজার ভবন ভেঙ্গে পড়বে এবং ১ লাখ ৩৫ হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্থ হবে। প্রায় ১৪ বছরে নিয়ম না মেনে তৈরি করা আরও অনেক বিল্ডিং হয়েছে, সেসব যোগ করলে ক্ষতিগ্রস্থ ভবন সংখ্যা কত দাঁড়ায় তা সহজেই অনুমেয়। সুধীজন ও বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন, ভূমিকম্পসহ অন্যান্য দুর্যোগ সময়গুলোতে যাতে ক্ষতির পরিমাণ সহনীয় থাকে সে ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে আলোচনা ও টক-শোতে পরামর্শ দিলেও দৃশ্যমান কোন পরিবর্তন চোখে পরেনি।
বিশেষত: এসব বিষয়ে অনেকে অনেক কথা বললেও একজন মানুষের নাম না বললেই নয়, তিনি হচ্ছেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও ঠোঁটকাটা প্রিয় মানুষটি মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন।
লেখকঃ মোহা. খোরশেদ আলম, সম্পাদক: মুক্তসংবাদ প্রতিদিন ও নির্বাহী পরিচালক: হিউম্যানরাইটস এন্ড এনভায়রমেন্ট ডেভে. সোসাইটি(হিডস)।
ফাইল ছবি
ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে নতুন করে আরও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’ বসিয়েছেন দখলদার সেনারা।
ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন- হামাসের যোদ্ধারা ব্যাপক সংখ্যায় ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের আশঙ্কায় আয়রন ডোমের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে বলে জানা যায়। খবর হারেৎজের।
ইসরাইলি মিডিয়া আরও বলে যে, ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে ইহুদিবাদী সেনার সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। বায়তুল মুকাদ্দাসে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন-হামাস গাজা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ শুরু করতে পারে বলে আশঙ্কা থেকে ইসরাইল এসব পদক্ষেপ নিয়েছে।
এ ছাড়া পশ্চিমতীরেও ফিলিস্তিনিরা অভিযান চালানোর আশঙ্কা করছে দখলদার ইসরায়েল সেনারা। এ কারণে সেখানে তাদের পূর্বনির্ধারিত প্রশিক্ষণ কোর্স স্থগিত করেছে।
সোমবার সন্ধ্যায় গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলে একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। ক্ষেপণাস্ত্রটি ইসরাইলের একটি অনাবাসিক এলাকায় আঘাত হানে। এর পর দখলদার বাহিনী গাজার দক্ষিণে ব্যাপক বিমান হামলা চালায়।
এতে ৯ শিশুসহ অন্তত ২০ ফিলিস্তিনি নিহত হন। গত কয়েক দিন ধরেই বায়তুল মুকাদ্দাসে মসজিদুল আকসা ও এর আশপাশের এলাকায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ব্যাপক হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল বাহিনী। এসব হামলায় তিন শতাধিক ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।