a কবির গভীর অভিমান
ঢাকা বুধবার, ২ পৌষ ১৪৩২, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫
https://www.msprotidin.com website logo

কবির গভীর অভিমান


ফেসবুক ডেস্ক:
মঙ্গলবার, ০১ জুন, ২০২১, ১১:৫৮
কবির গভীর অভিমান

ফাইল ছবি। কাজী নজরুল ইসলাম

 
কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে বিদ্রাহী কবি বিশেষণটি না দিলে মন ভরে না। এই মহান কবিকে আমরা এখনও বিদ্রোহী বলে জানি এবং সেভাবেই জানতে ও ভাবতে আমরা বেশি পছন্দ করি। যৌবনের কবিও বলা হয়। যে কবি যৌবনের তার বিদ্রোহী হতে কোনো বাধা নেই। একালের কবিও তো সে কথাই বলেন। ‘এখন যৌবন যার , যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়' " (হেলাল হাফিজ)। যুদ্ধ আর বিদ্রোহের মধ্যে ব্যবধান আছে। সব যুদ্ধ বিদ্রোহ নয়। পক্ষান্তরে বিদ্রোহ থেকে যুদ্ধ উৎপন্ন না হয়েই পারে না। সে যুদ্ধ  হতে পারে সশস্ত্র , হতে পারে সামাজিক প্রতিরোধ কিংবা সাংস্কৃতিক লড়াই। বাংলাদেশের মানুষ তো বটেই, গোটা উপমহাদেশের জনগণ দু’শ বছর লড়াই করেছেন্। বুকের ভেতর দ্রোহের আগুন জ্বেলে তারা ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। সেই সংগ্রামের বিচিত্রতা ও বহুমাত্রিকতার ইতিহাস কমবেশি আমরা সবাই জানি। দুই শতাব্দির লালিত দ্রোহে ভাষা দিলেন কাজী নজরুল ইসলাম।

সেই সংগ্রাম আবারও আমরা প্রত্যক্ষ করেছি পাকিস্তানের তেইশ বছরের দুঃশাসনের মধ্যে। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে  নজরুলের কবিতা ও গান আমাদের সাহস জুগিয়েছে, প্রাণিত করেছে যুদ্ধের ময়দানে, অবরূদ্ধ জনপদে। তবু, বিদ্রোহ বা যুদ্ধ প্রৌঢ়- প্রাচীনের জন্য সহজ নয়। নজরুল যখন বলেন, আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল, আমি দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙঙ্খল!’Ñতখন বিচলিতবোধ করেন শান্তিপ্রিয় কোনো কোনো প্রৌঢ়বোদ্ধা।  কিন্তু ক্ষুব্ধ তরুণ বলেন, এই তো  আমার প্রাণের কথা। অতঃপর বিদ্রোহ আর যৌবনকে সমান্তরাল বলে ভেবে নেয়া যায় বৈ কি!
 
নিশ্চয়ই কবি  জানতেন যে, লোকে তাঁকে বিদ্রোহী বলেই বেশি ভালবাসেন। তাসত্তে¡ও মাঝে মাঝে মনেহয়, তিনি নিজেও এই অভিধায় বিব্রতবোধ করতেন। সে জন্যে তিনি কৈফিয়ৎ দিতেও কুণ্ঠিত হননি। চির-বিদ্রোহী কবিতায় তিনি বলছেন,
‘বিদ্রোহী করেছে মোরে আমার গভীর অভিমান।
তোমার ধরার দুঃখ কেন
আমায় নিত্য কাঁদায় হেন?
বিশৃঙ্খল সৃষ্টি তোমার, তাই তো কাঁদে আমার প্রাণ!
বিদ্রোহী করেছে মোরে আমার গভীর অভিমান।’
বোঝাই যায়, অভিমানী কবির এই কৈফিয়ৎ কোনো মানুষের কাছে নয়, এই কৈফিয়ৎ ;নাকি জিজ্ঞাসা তাঁর স্রষ্টার কাছে । অন্তর্যামীর প্রতি কতটা গভীর ভালবাসার দাবি বুকের ভেতর লালন করলে পরে এমন উদ্ধত ভাষাভঙ্গি প্রয়োগ করা যায়, তা সহজেই অনুমেয়।  এ-ও একধরণের সমর্পণ। রবীন্দ্রনাথও সমর্পিত কবি। কিন্তু দু’জনের প্রকাশভঙ্গি আলাদা। একজন রাগী , অভিমান ক্ষুব্ধ, আরেকজন বিনীত, মার্জিত প্রার্থনায় আনত।

নজরুল বিদ্রোহী। তিনি দার্শনিকও বটে। তিনি যখন বলেন, আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে? Ñ তখন চট করে মাথায় প্রশ্ন এসে যায়, সকাল হলে মানুষ জাগে নাকি মানুষ জাগলে সকাল হয়? প্রশ্নটি খুবই জটিল নিঃসন্দেহে। একজন কিশোর পাঠক যখন কবিতাটি পাঠ করে, তখন তার মনে কোনো প্রশ্নের উদ্রেক নাও হতে পারে। তার কাছে এ শুধু একটি ভাললাগার পদ্য। কিন্তু প্রাপ্তমনস্ক মানুষ আপনমনে প্রশ্নবিদ্ধ হতেই পারেন। এই জিজ্ঞাসার জবাব খুঁজতে গেলেই আমরা মুখোমুখি হই কঠিনতর জীবন সত্যের। রাত পোহালে , সূর্য উঠলেই সকাল হয়। ভোরের আলো ফোটে। আলো ফুটলেও সব সময় কিন্তু সে আলোতে জীবনের অন্ধকার ঘুচে যায় না। মানুষ জাগলে, তার দীর্ঘ, দীর্ঘতর সংগ্রামের মধ্য দিয়েই আলোকমন্ডিত হয় জীবন। কাল হতে কালান্তরের, দেশ হতে দেশান্তরের ইতিহাসের পাতায় পাতায় তার প্রমাণ রয়েছে। সেই সত্যেরই প্রতিধ্বনি করেন বিদ্রোহী কবি।  উষার দুয়ারে আঘাত হেনে তিমির রাত টুটাবার আহবান শুনি আমরা তাঁর  কণ্ঠে। তিনি ভীত- সন্ত্রস্ত মানুষকে শোনান অভয়ের বাণী, মাভৈঃ,মাভৈঃ। তাঁর অভয় মন্ত্র;
ওরে    যে যায় যাক সে, তুই শুধু বল ‘আমার হয়নি লয়’।
বল    আমি আছি, আমি পুরুষোত্তম, আমি চির দুর্জয়!
বল    নাহি ভয়, নাহি ভয়,
বল    মাভৈঃ মাভৈঃ, জয় সত্যের জয়।’

এ হলো আত্মশক্তি উদ্বোধনের গান। ব্যক্তি বা  জাতির সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে তার নিজের মনের শক্তি। ইংরেজিতে একে বলা হয়, পাওয়ার অব পজেটিভিটি। মানুষ যতদিন নিজেকে ভয় থেকে মুক্ত করতে না পারে, ততদিন তার মুক্তি নাই। ভয়ের হাত ধরেই আসে পরাজয়। ভয় থেকে পলায়ন করার সুযোগ নেই বরং জয় করতে হয়, জয় করতে হবে। একে জয় না করে স্বাধীনতাও আসে না। আবার সমাজে ভয় কায়েম রেখে স্বাধীনতা পূর্ণতা পায় না। রুজভেল্টের ফোর ফ্রিডম তত্তে¡ও বলা হয়েছে একই কথা। নজরুল তাই সবসময় প্রাসঙ্গিক এবং সর্বজনীন। তিনি দূত মানবমুক্তির।

 

--------- ফাইজুস সালেহীন, বৃহত্তর ময়মনসিংহ লেখক-সাংবাদিক ফাউন্ডেশন

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

ফিরে এসো


কবি টুটুল, মুক্তসংবাদ প্রতিদিন ডেস্ক
বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪, ০৪:৩০
ফিরে এসো

ছবি: সংগৃহীত

ফিরে এসো
কামরুল আলম

ফিরে এসো অনামিকা
আমার মনের অন্তরে
রাখবো তোমায় যতন করে
এই মনের গহিনে।

ফিরে এসো অনামিকা
ঘন মেঘের আকাশে,
নেবো তোমায় আপন করে
এই হৃদয়ের গভীরে।

ফিরে এসো অনামিকা
রৌদ্র ঝলমল আকাশে
থাকবে তুমি আমার হয়ে
আমার মনের অন্দরে।

ফিরে এসো অনামিকা
সব মায়া ত্যাগ করে
রাখবো তোমায় সারাজীবন
আমার মনো মন্দিরে।

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের যৌথ স্বার্থের ক্ষেত্রসমূহ: কর্নেল আকরাম


কর্নেল আকরাম, মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৩:৩৪
বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের যৌথ স্বার্থের ক্ষেত্রসমূহ: কর্নেল আকরাম

ছবি সংগৃহীত

নিউজ ডেস্ক: সাধারণ স্বার্থ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য পথ নির্দেশ প্রদান করে। কোনো জাতি একা টিকে থাকতে পারে না; বরং অন্য দেশগুলোর সহযোগিতা ও সমর্থনের প্রয়োজন হয়। আন্ত:রাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি একটি সাধারণ চর্চা। আধুনিক যুগে কোনো রাষ্ট্রই অন্য রাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া টিকে থাকতে পারে না। অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন এখন একটি বাস্তবতা, যা নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট দেশের প্রয়োজনের ওপর।  

দুই দেশের সাধারণ স্বার্থ পারস্পরিক যোগাযোগ বাড়াতে এবং সম্পর্ক উন্নত করতে সরাসরি কাজ করে। বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান উভয়ই ভ্রাতৃপ্রতীম দেশ, যাদের মধ্যে বিশ্বাস, ইতিহাস এবং সংস্কৃতি বিশেষভাবে মিল রয়েছে। বর্তমানে উভয় দেশই বিদ্যমান সম্পর্ককে বহুমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে আরও উন্নত করার তাগিদ অনুভব করছে। উভয় দেশের মানুষের উন্নয়নের জন্য একে অপরকে সমর্থন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সম্পর্কের ভিত্তি হওয়া উচিত মানুষে মানুষে সম্পর্ক, সরকার থেকে সরকারের মধ্যে সম্পর্ক নয়।  

সরকারি সম্পর্ক সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায়, কিন্তু মানুষের মধ্যে সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং দুই ভ্রাতৃপ্রতীম দেশের মধ্যে স্থায়ী বন্ধন তৈরি করে। উভয় দেশের জনগণ নিকট ভবিষ্যতে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়নের গভীর আগ্রহ প্রকাশ করছে।  

মানুষের সম্পর্ক গড়ে তুলতে গভীর এবং দূরদর্শী নীতিমালা প্রণয়ন ও আন্তরিকতার প্রয়োজন। এটি এমন এক আদর্শ সম্পর্ক, যা আমরা বহুদিন ধরে আকাঙ্ক্ষা করে আসছি। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর কারণে এটি বাস্তবায়িত হয়নি, যদিও দুই দেশের জনগণ সর্বদা এর পক্ষে ছিল।  

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বিপ্লব পুরো চিত্র বদলে দিয়েছে এবং আমাদের স্বাধীনতার পর থেকে তৈরি হওয়া কৃত্রিম বাধাগুলো সফলভাবে ধ্বংস করেছে। এখন আমরা এমন একটি কার্যকর পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করতে সম্পূর্ণ স্বাধীন, যা সব দিক থেকে আমাদের জন্য উপযুক্ত।  

সাধারণ স্বার্থের ক্ষেত্রগুলো দ্রুত চিহ্নিত করা উচিত, সময় নষ্ট না করে। সম্পর্কের মূল ভিত্তি হওয়া উচিত স্থায়ী ভ্রাতৃত্বপূর্ণ বন্ধন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা।  

শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়: শিক্ষা ও সংস্কৃতি হতে পারে আদর্শ ক্ষেত্র। উভয় দেশের সরকারকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান উৎসাহিত করা উচিত। দুই দেশের গবেষকদের বিভিন্ন সাধারণ স্বার্থের ক্ষেত্রে গবেষণা পরিচালনায় পৃষ্ঠপোষকতা করা উচিত। লেখক এবং বুদ্ধিজীবীদের নিয়মিত সফর পরিচালনা করা প্রয়োজন।  

মিডিয়া ও সংবাদপত্র: মিডিয়া এবং সংবাদপত্র পাকিস্তানের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে চমৎকার ভূমিকা রাখতে পারে। উভয় দেশের সংবাদ মাধ্যমের লোকজনের নিয়মিত সফর বিনিময় এবং এটি যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া উচিত।  

সংস্কৃতি: সংস্কৃতি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র যেখানে উভয় দেশ একত্রে কাজ করতে পারে। উভয় দেশের মধ্যে ঘন ঘন সাংস্কৃতিক সফর শুরু করা উচিত। সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের বিনিময় দুই দেশের মধ্যে দ্রুত বন্ধন তৈরি করতে সহায়ক।  

স্বাস্থ্য: স্বাস্থ্য খাতেও উভয় দেশ একত্রে কাজ করে মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে পারে। উভয় দেশে আধুনিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল যৌথভাবে প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।  

ক্রীড়া ও পর্যটন: ক্রীড়া ও পর্যটনের ক্ষেত্রেও যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ঐতিহাসিক স্থানগুলোর শিক্ষামূলক দলভিত্তিক সফর যত দ্রুত সম্ভব শুরু করা উচিত।  

বাণিজ্য ও শিল্প: বাণিজ্য ও শিল্প একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। উভয় দেশের জনগণ ব্যাপক বাণিজ্য কার্যক্রমের মাধ্যমে উপকৃত হতে পারে। জুট ও টেক্সটাইল শিল্পে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।  

প্রশাসন, বিচার ও পুলিশিং: উভয় দেশ নিজেদের প্রশাসনিক, বিচারিক এবং পুলিশিং অভিজ্ঞতা শেয়ার করে এসব ক্ষেত্রের উন্নয়নে কাজ করতে পারে।  

জল সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সমুদ্র: জল সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং সমুদ্র সম্পদ শেয়ারিং উভয় দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হতে পারে। নিরাপদ সমুদ্র নিশ্চিত করতে যৌথ শিপিং লাইন এবং জাহাজ নির্মাণ উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।  

সর্বোপরি উভয় দেশের সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসা উচিত। যে কোনো প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে দুই দেশের জনগণের মানসিক প্রস্তুতি থাকা জরুরি। সর্বোপরি, উভয় দেশের জনগণকে যে কোনো সাধারণ শত্রুর বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে।  

আসুন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে একে অপরের প্রয়োজনে  সত্যিকারের ভ্রাতৃপ্রতীম বন্ধুত্ব গড়ে তুলি।


লেখক : সম্পাদক, মিলিটারি হিস্ট্রি জার্নাল ও আইন ও ইতিহাসের অধ্যাপক।

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম
Share on Facebook

সর্বশেষ - শিল্প ও সাহিত্য