a লকডাউন দেখতে বের হয়ে শতাধিক ব্যক্তি আটক
ঢাকা সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২, ২৪ নভেম্বর, ২০২৫
https://www.msprotidin.com website logo

লকডাউন দেখতে বের হয়ে শতাধিক ব্যক্তি আটক


এমএস.প্রতিদিন ডেস্ক:
বৃহস্পতিবার, ০১ জুলাই, ২০২১, ০৫:৫২
লকডাউন দেখতে বের হয়ে শতাধিক ব্যক্তি আটক

ফাইল ছবি

লকডাউনে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বের হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। এর মধ্যে লকডাউনের প্রথমদিন কেমন হচ্ছে, তা দেখতে অকারণে বাইরে বের হওয়ার অপরাধে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। 

গণমাধ্যমকে এ খবর নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) আ স ম মাহাতাব উদ্দিন। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিটি থানার পুলিশ সদস্যরা মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়া ঘরের বাইরে ঘুরাঘুরির অপরাধে শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।

ডিসি আরও জানান, কিছু যানবাহন আটকানো হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। 

আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মিরপুর, গাবতলী, টেকনিক্যাল, শাহআলী, পল্লবী, মিরপুর, কাফরুলসহ বিভিন্ন এলাকায় দু’জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিপুল সম্পদের সন্ধান!


এমএস.প্রতিদিন ডেস্ক:
রবিবার, ০১ আগষ্ট, ২০২১, ১০:৪১
হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিপুল সম্পদের সন্ধান!

ফাইল ছবি

নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপকমিটি থেকে সদ্য বহিষ্কৃত নেত্রী এবং জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা হেলেনা জাহাঙ্গীর (হেজা)। এরই মধ্যে তার নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের নামে পাঁচটি গার্মেন্টস, রাজধানীর অভিজাত এলাকায় ১৫টি ফ্ল্যাট, অসংখ্য ভুঁইফোড় সংগঠনের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা পেয়েছে একটি সংস্থা। 

হেলেনা জাহঙ্গীরকে গ্রেফতারের পর সংবাদ সম্মেলনেও র‌্যাব হেলেনার আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি উল্লেখ করেছে। এদিকে, শিগগিরই তার সম্পদের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধানে নামছে বলে নিশ্চিত করেছে সূত্র। দুদক তার মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টিও খতিয়ে দেখবে। দুদকের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, মানি লন্ডারিং, বিদেশে অর্থ পাচারসহ হেলেনা জাহাঙ্গীরের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত কোনো প্রকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ আছে কি না সে বিষয়ে অনুসন্ধানে নামতে পারে সংস্থাটি। 

দুদকের সচিব ড. মুহম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, র‌্যাব যেহেতু তাদের ব্রিফিংয়ে হেলেনা জাহাঙ্গীরের আর্থিক বিষয়টি উল্লেখ করেছে তাই তারা অফিশিয়ালি আমাদেরকে অবহিত করবে। পরবর্তীতে কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই তার বিপুল সম্পদের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে এগুলো কীভাবে তিনি অর্জন করেছেন সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি। এ ব্যাপারে র‌্যাবের ভাষ্য ছিল, দলকে ভাঙিয়ে তিনি বিভিন্ন সময়ে চাঁদাবাজি কিংবা ‘ব্ল্যাকমেল’ করে দুর্নীতির মাধ্যমে আদায় করা টাকাগুলো তিনি ফ্ল্যাট কেনা ও ফাউন্ডেশনে বিনিয়োগ করতেন। দুদক চাইলে র‌্যাব তাদের সহায়তা করবে। দুদক কমিশনার  মোজাম্মেল হক খান জানান, দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধে হেলেনা জাহাঙ্গীর জড়িত থাকলে অবশ্যই সে বিষয়ে অনুসন্ধানসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তদন্তে যা উঠে এসেছে: একটি সংস্থার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, রাজধানীতে হেলেনা জাহাঙ্গীরের সর্বমোট ১৫টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এর মধ্যে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরে পাঁচটি, গুলশান ৩৬ নম্বর সড়কের পাঁচটি, গুলশান ২ নম্বরের ৮৬ নম্বর সড়কের ৭/বি নম্বর বাড়িতে ৮ হাজার ফুটের একটি ফ্ল্যাট, গুলশান এভিনিউতে একটি, গুলশান নিকেতনে একটি, মিরপুর ১১ নম্বরের ৬ নম্বর রোডে একটি ও কাজী পাড়ায় একটি ফ্ল্যাট। এর বাইরে তিনি মোট পাঁচটি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের মালিক। এগুলো হলো মিরপুর ১১ নম্বরের নিউ কনসার্ন প্রিন্টিং ইউনিট, নারায়ণগঞ্জের জয় অটো গার্মেন্টস, জেসি এমব্রয়ডারি, প্যাক কনসার্ন ও হুমায়রা স্টিকার। এ ছাড়া অনেক ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন। এগুলোর মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন সময় দেশ-বিদেশ থেকে অনুদান সংগ্রহ করেছেন। অনুদান সংগ্রহে ব্ল্যাকমেলিং ছিল হেলেনার অন্যতম একটি কৌশল। কেবল জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের ব্যানারেই তিনি বিপুল অঙ্কের চাঁদাবাজি এবং অনুদান সংগ্রহ করেছেন। ‘জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের সঙ্গে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের প্রভাবশালী একাধিক নেতাকে সম্পৃক্ত করেছিলেন। তাদের সামনে রেখেই তিনি অনেকের সঙ্গে ব্ল্যাকমেলিং করেছেন এমন অভিযোগ এখন উঠে আসছে। সুনামগঞ্জে তিনি ত্রাণ বিতরণ করায় স্থানীয়রা তাকে পল্লী মাতা উপাধি দিয়েছেন। তবে এই ফাউন্ডেশনের নামে প্রবাসীদের কাছ থেকে অনেক টাকা এনেছেন তিনি। এগুলো কী কাজে ব্যবহার করা হয়েছে সে বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি হেলেনা জাহাঙ্গীর। 

হেলেনা দেশের ১২টি অভিজাত ক্লাবের সদস্য। সেগুলো হলো- গুলশান ক্লাব, গুলশান ক্যাপিটাস ক্লাব, গুলশান নর্থ ক্লাব, ঢাকা বোর্ড ক্লাব, গুলশান সোসাইটি ক্লাব, কুমিল্লা ক্লাব, গুলশান জগার সোসাইটি, ফিল্ম ক্লাব, গুলশান হেলথ ক্লাব, গুলশান লেডিস ক্লাব, ঢাকা রাইফেলস ক্লাব ও ওয়ার্ড ট্রাভেলস ক্লাব। হেলেনার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হেলেনা জাহাঙ্গীরের স্বামী ১৯৯০ সাল থেকে গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে অন্যদের সঙ্গে পার্টনারশিপের মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করে এখন পর্যন্ত পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি। একটা সময় রাজধানীর একটি অভিজাত ক্লাবে চিয়ার গার্ল হিসেবে কাজ করেছেন হেলেনা। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি কখনো ছয়টি অভিজাত গাড়ি, কখনো বা আটটি গাড়ির কথা বলেছেন। তবে আয়ের উৎস সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য দিচ্ছেন না। এখন সিআইডি কিংবা দুদক এ ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।


জানা গেছে, ২০১৮ সালে তিনি আইপি টিভির কার্যক্রম শুরু করেন। তার এসব চ্যানেলে প্রায় ৭০ জন স্টাফ রয়েছে। তাদের বেতন ভাতা পরিশোধের ব্যাপারে অনিয়ম রয়েছে। জয়যাত্রা আইপিটিভির নিবন্ধন না করে স্টাফদের বেতন-ভাতা না দিয়ে অন্যায়ভাবে স্টাফদের চাকরিচ্যুত করেন তিনি। 

গত দুই বছরে বিভিন্ন মাধ্যম এবং টেলিভিশনে চাকরি দেওয়ার কথা বলে, এজেন্সি দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বিভিন্ন পরিমাণ টাকা আদায় করছেন তিনি। কারও কাছ থেকে ১০ হাজার, কারো কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা, আবার কারও কাছ থেকে ১ লাখ টাকা নিয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে এভাবে তিনি কী কারণে টাকা নিয়েছেন এবং কী কাজে ব্যবহার করেছেন এসব বিষয়ে হেলেনা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি বলেও জানান র‌্যাব কর্মকর্তারা। তারা জানতে পেরেছেন, এসবের দায় অফিস স্টাফদের ওপর চাপিয়েছেন তিনি। তার বাসা এবং অফিস থেকে যে পরিমাণ ভাউচার পাওয়া গেছে তা এখনো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। জয়যাত্রা টেলিভিশনের আইডি কার্ড ব্যবহার করে অনেক প্রতিনিধিও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন।

সাইবার টিম ছিল হেলেনার: হেলেনার নিজস্ব একটি বিশেষ সাইবার টিম রয়েছে। টিমের সদস্যদেরকে তিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে নিজের প্রচার প্রচারণায় ব্যবহার করতেন। যারা তার সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করত তাদেরকে কৌশলে ঘায়েল করার পাশাপাশি অপমান অপদস্ত করতেন তিনি। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বর্তমানে হেলেনা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। মামলার তদন্তও করছে পুলিশ। এখন এ বিষযে তদন্তকারী কর্মকর্তাই বলবেন। তবে এখন পর্যন্ত বিতর্কিত এই নারীর বিষয়ে অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে প্রতিটি তথ্যই গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখে আমরা ছায়া তদন্ত করছি।

হেলেনার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা: অনুমোদন ও বৈধ কাগজপত্র ছাড়া জয়যাত্রা টিভির সম্প্রচারের অভিযোগে হেলেনা জাহাঙ্গীরের নামে পল্লবী থানায় আরেকটি মামলা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন আইনে র‌্যাব-৪-এর মামলার বাদী হয়েছেন র‌্যাব-৪-এর উপপরিদর্শক ইদ্রিস আলী। শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে ওই মামলা করেন। এ নিয়ে হেলেনা জাহাঙ্গীরের নামে রাজধানীর গুলশান থানায় দুটি, পল্লবী থানায় একটিসহ তিনটি মামলা হলো। ওই মামলায় হেজাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। 

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর গুলশান-২ এর ৩৬ নম্বর রোডের ৫ নম্বরের হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায় অভিযান চালিয়ে ১৯ বোতল বিদেশি মদ, একটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া, একটি হরিণের চামড়া, দুটি মোবাইল ফোন, ১৯টি চেক বই ও বিদেশি মুদ্রা, দুটি ওয়াকিটকি সেট এবং ক্যাসিনো খেলার সরঞ্জামসহ ৪৫৬টি চিপস উদ্ধার করা হয়। সূত্র: বিডি প্রতিদিন

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

আরও পড়ুন

পশ্চিমা বিশ্ব ২০ বছরের যুদ্ধে যেসব শিক্ষা পেল


আন্তর্জাতিক ডেস্ক:মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১১:৩৬
পশ্চিমা বিশ্ব ২০ বছরের যুদ্ধে যেসব শিক্ষা পেল

ফাইল ছবি

পশ্চিমা বিশ্ব গত ২০ বছরের যুদ্ধে যে ৫টি শিক্ষা পেয়েছে তা বিশদভাবে নীচে উল্লেখ করা হলো। এই সন্ত্রাসবাদ বিরোধী তথাকথিত লড়াইয়ে কোন ধরনের কৌশলে আসলে কাজ হয়েছে- আর কোনটিতে হয়নি, তা বিশ্লেষণের সময়ে এসেছে।

আফগানিস্তানে আল কায়েদাকে আশ্রয় দিয়েছিল যে তালেবান, তারা যখন আবার দেশটির ক্ষমতায় ফিরে এসেছে, তাতে কি এটা বলা যাবে যে, ১১ সেপ্টেম্বরের সকালে আমাদের জ্ঞান আসলে যতটা ছিল, এখন আমরা তার চেয়ে বেশি জানি?

নাইন ইলেভেনের হামলা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখন্ডে এ যাবতকালের সবচেয়ে ভয়ংকর সন্ত্রাসী হামলা। এ ঘটনার পর যখন দেশটি বিরাট এক ধাক্কা খেয়েছে, তখন অনেকেই বাকি বিশ্বকে দেখা শুরু করলেন একেবারে মোটা দাগের বিচারে- পৃথিবী দুই ভাগে বিভক্ত, ভালো লোক আর খারাপ লোক। 

নাইন ইলেভেনের হামলার ঠিক নয়দিন পরই প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ঘোষণা করলেন, “প্রত্যেক দেশ, প্রত্যেক অঞ্চলকে এখন একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আপনারা হয় আমাদের সঙ্গে আছেন, অথবা আপনারা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আছেন।”

তথাকথিত ‘সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ’ ঘোষণা করা হলো। এই ঘোষণার পর প্রথমে আফগানিস্তান এবং তারপর ইরাকে আক্রমণ চালানো হলো। মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর উত্থান ঘটলো। ইরান সমর্থিত মিলিশিয়াদের বিস্তার ঘটলো। হাজার হাজার সৈনিক এবং তার চেয়ে আরও বহু গুণ বেসামরিক মানুষ নিহত হলো।

সন্ত্রাসবাদ নির্মূল হয়নি- বরং ইউরোপের প্রায় প্রত্যেকটি বড় দেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছে।

তবে কিছু সাফল্যও আছে। এখনো পর্যন্ত নাইন ইলেভেনের সঙ্গে তুলনীয় ভয়ংকর কোনও হামলা হয়নি। আফগানিস্তানে আল-কায়েদার ঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে। তাদের নেতাকে পাকিস্তানে খুঁজে বের করে হত্যা করা হয়েছে। আইসিস সিরিয়া এবং ইরাকের একটা বিরাট অঞ্চলে স্বঘোষিত খেলাফতের মাধ্যমে যে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল, তা ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

নীচে যে তালিকা দেওয়া হয়েছে তা নিঃসন্দেহে তর্ক সাপেক্ষ এবং মোটেই পূর্ণাঙ্গ নয়। এখানে মধ্যপ্রাচ্য, আফগানিস্তান, ওয়াশিংটন এবং গুয়ানতানামো বে-তে গিয়ে সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের খবরাখবর সংগ্রহ করতে গিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণে যা উঠে এসেছে, তার ভিত্তিতে এসব তৈরি করা হয়েছে।

১. গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার করা

নাইন ইলেভেনের হামলার অনেক ক্লু ছিল, কিন্তু কেউই আসলে সময়মতো এসব বিন্দুকে সংযুক্ত করে একটা পূর্ণাঙ্গ ছবি পাওয়ার চেষ্টা করেনি। নাইন ইলেভেনের হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি প্রধান গুপ্তচর সংস্থা, এফবিআই এবং সিআইএ, উভয়েই জানতো যেকোনও একটা হামলার ষড়যন্ত্রের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

কিন্তু এই দুটি সংস্থা, যার একটি স্বদেশে এবং আরেকটি বিদেশে গুপ্তচরবৃত্তি চালায়, পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত ছিল। যার ফলে তারা যা জানতো, তা নিজেদের মধ্যেই রেখে দিয়েছিল, অন্য সংস্থাকে জানতে দেয়নি। নাইন ইলেভেনের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রে যে কমিশন গঠিত হয়, তারা এসব ভুল পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করেছে এবং এরপর গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার করার ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি ঘটেছে।

২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টারে (এনসিটিসি) দেখানো হয়েছিল ১৭টি ভিন্ন ভিন্ন মার্কিন সংস্থার সংগ্রহ করা গোয়েন্দা তথ্য কিভাবে প্রতিদিনই এক জায়গায় রাখা হচ্ছে।

ব্রিটেনও একইভাবে নিজস্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে: জয়েন্ট টেররিজম অ্যানালিসিস সেন্টার (জেটিএসি)। লন্ডনের এমব্যাংকমেন্টের এক অফিস ভবনে এমআই-ফাইভ, এমআই-সিক্স, প্রতিরক্ষা, পরিবহন, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য ক্ষেত্রের কয়েক ডজন বিশ্লেষক নিয়মিত এক সঙ্গে বসেন। তারা যুক্তরাজ্যের মানুষের জন্য স্বদেশে এবং বিদেশে যেসব হুমকি আছে, সেগুলো প্রতিনিয়ত পর্যালোচনা করেন।

কিন্তু এই ব্যবস্থা একেবারে নিখুঁত নয়। জয়েন্ট টেররিজম অ্যানালিসিস সেন্টার (জেটিএসি) প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দুই বছর পরই আল-কায়েদা ২০০৫ সালের ৭ জুলাই ব্রিটিশ নাগরিকদের ব্যবহার করে লন্ডনে বোমা হামলা চালালো। এই হামলায় নিহত হয়েছিল ৫০ জনের বেশি।

পরের বছর মধ্য আকাশে কয়েকটি এয়ারলাইনার উড়িয়ে দেওয়ার আরেকটি বড় ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল, কিন্তু পাকিস্তানের সহায়তায় সেটি বানচাল করে দেওয়া সম্ভব হয়। কিন্তু এরপরও ২০১৭ সালে ব্রিটেনে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, যার মধ্যে ম্যানচেস্টারের হামলা ছিল অন্যতম।

কাজেই ভালো গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং শেয়ার করার পরও এরকম হামলা বন্ধ করা যায় না, যদি কোন বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে সে বিষয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

২০১৫ সালে প্যারিসে যে হামলা হয়েছিল, এটি তার একটি উদাহরণ। ওই হামলায় নিহত হয়েছিল ১৩০ জন। এ ঘটনার বিচার এখন চলছে।

ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো একে অন্যের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান না করার কারণেই মূলত এই হামলা হতে পেরেছিল।

২. কোন মিশনের লক্ষ্য স্থির করা এবং এ থেকে বিচ্যূত না হওয়া:
আফগানিস্তানে কেন তালেবানের শাসন ফিরে এলো, তার জন্য যেসব কারণের কথা উল্লেখ করা হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে এটি: ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। এই সিদ্ধান্তটি ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারী, এর ফলে আফগানিস্তানে যা ঘটছিল, তা থেকে সবার দৃষ্টি অন্যদিকে সরে গিয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের যেসব বিশেষ বাহিনী সাফল্যের সঙ্গে আল-কায়েদার সদস্যদের খুঁজে বের করে দমন করেছিল এবং আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে মিলে তালেবান বিদ্রোহীদের দৌড়ের ওপর রেখেছিল, তাদের সেখান থেকে প্রত্যাহার করে পাঠিয়ে দেওয়া হলো ইরাকে।

এটি তালেবান এবং অন্যান্যদের নতুন করে সংগঠিত হওয়ার এবং আরও বেশি শক্তি সঞ্চয় করে ফিরে আসার সুযোগ করে দিল। ২০০৩ সালের নভেম্বরে আফগানিস্তানের পাকতিয়া প্রদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পদাতিক বাহিনীর একটি ঘাঁটি পরিদর্শনে দেখা যায়, আমেরিকানরাই তখন তাদের মিশনকে ‘অপারেশন ফরগটেন’ বলতে শুরু করে দিয়েছে।

এটা ভুলে যাওয়া খুব সহজ যে, আফগানিস্তানে মূল মিশনটা কিন্তু ছিল বেশ সোজাসাপ্টা এবং সেটা বেশ ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়েছিল। তালেবান শাসকরা যখন নাইন-ইলেভেনের হামলার জন্য দায়ীদের হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানালো, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের নর্দার্ন এলায়েন্সের (তালেবান শাসন বিরোধী জোট) হাত মেলালো এবং সাফল্যের সঙ্গেই আফগানিস্তান থেকে তালেবান এবং আল কায়েদাকে বিতাড়িত করলো।

কিন্তু এর পরের বছরগুলোতে এই মিশন তার লক্ষ্য হারালো, এটির মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হয়ে গেল নানা দিকে।

সে সময় বেশিরভাগ আফগানের জীবনযাত্রার অনেক উন্নতি হলেও ‘জাতি গঠনের’ নামে শত শত কোটি ডলার দুর্নীতি এবং অপচয়ের মাধ্যমে নষ্ট করা হলো।

৩. সতর্কতার সঙ্গে মিত্র বেছে নেয়া:
২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র যখন ইরাকের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালায়, তখন ব্রিটেন তার ঘনিষ্ঠতম মিত্রের পেছন পেছন এই যুদ্ধে অংশ নেয়। এরপর ইরাকে দখলদারিত্বের সময় যুক্তরাষ্ট্র যত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ব্রিটেনকে তা মানতে হয়েছে একজন ‘জুনিয়র পার্টনার’ হিসেবে।

ইরাকি সেনাবাহিনী ভেঙে না দেওয়ার কিংবা বাথ পার্টির সব সদস্যকে সরকারি পদে নিষিদ্ধ না করার যে জরুরি আবেদন জানানো হয়েছিল, তা উপেক্ষা করা হয়। এর ফল দাঁড়িয়েছিল মারাত্মক: কর্মহীন হয়ে যাওয়া ইরাকি সামরিক বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সদস্যরা এবং চরমপন্থী জিহাদীরা একজোট হয়ে গেল। এটাই পরে আইসিসে পরিণত হলো।

নাইন ইলেভেনের পর সবার মধ্যে যে আতংক তৈরি হয়েছিল- তার পরিণামে যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্স সংস্থাগুলো এমন সব শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে একযোগে কাজ করা শুরু করলো, যাদের মানবাধিকারের রেকর্ড ভয়ংকর। এই ভুলের খেসারত পরে দিতে হয়েছে।

যেমন, ২০১১ সালে লিবিয়ায় কর্নেল গাদ্দাফিকে যখন উৎখাত করা হলো, তারপর সাংবাদিকরা এমন এক চিঠি খুঁজে পেলেন যেটি এমআই-সিক্সের এক সিনিয়র অফিসার লিখেছিলেন লিবিয়ার এক গোয়েন্দা কর্মকর্তার কাছে। এতে একজন ইসলামপন্থী ভিন্নমতাবলম্বীকে লিবিয়ায় ফেরত পাঠানো নিয়ে কথা হচ্ছিল, যাতে তাকে গ্রেফতার করে নির্যাতন চালানো যায়।

এখন সহিংস জিহাদি কর্মকাণ্ড সবচেয়ে বাড়বাড়ন্ত আফ্রিকার সেই সব দেশে, যেখানে শাসনব্যবস্থা খুবই খারাপ, বা মোটেই নেই। সেখানে এদের দমনে কাদের সহযোগিতা নেওয়া হবে, সেটা পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

৪. মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা, নতুবা নৈতিক অবস্থান হারানো:
মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ একটা কথা বারবার বলেছেন: “আমরা হয়তো মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি পছন্দ করি না, কিন্তু তাদের দেশে আইনের শাসনকে আমরা সবসময় শ্রদ্ধা করি। তবে গুয়ানতানামো বে’র আগে পর্যন্ত।”

যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সন্দেহভাজনদের, বা কোন কোন ক্ষেত্রে নিরপরাধ লোকজনকে ধরে আনা, যাদেরকে আসলে পুরস্কারের লোভে একধরণের বিক্রি করা হয়েছে- এরপর তাদেরকে ন্যাপি আর গগলস পরিয়ে অর্ধেক পৃথিবী ঘুরিয়ে কিউবার গুয়ানতানামো বে’র এক মার্কিন নৌ ঘাঁটিতে বন্দী করে রাখা- এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্বের সুনামের অপূরণীয় ক্ষতি করেছে।

বিনা বিচারে লোকজনকে বন্দী করে রাখার মতো ঘটনা ঘটতো স্বৈরতান্ত্রিক দেশগুলোতে। আরবরা আশা করেনি যে আমেরিকাতেও এটা ঘটতে পারে।

এরপর যা ঘটেছিল, তা ছিল আরও মারাত্মক। সিআইএ এসব জায়গায় ওয়াটারবোর্ডিং (বন্দীদের মাথায় পানি ঢেলে তারা পানিতে ডুবে যাচ্ছে এমন এক অনুভূতি তৈরি করা) এবং আরও নানা রকম কৌশলে বন্দীদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছিল জিজ্ঞাসাবাদের সময়। ওবামা প্রশাসন এসে এসব বন্ধ করেছিল, কিন্তু ততদিনে ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।

৫. বেরিয়ে আসার পরিকল্পনা থাকা:
নাইন ইলেভেনের আগে পশ্চিমা দেশগুলো অন্য যেসব দেশে সামরিক হস্তক্ষেপ করেছে, তুলনামূলকভাবে সেগুলো ছিল অনেক দ্রুত এবং সহজ। সিয়েরা লিওন, কসোভো, বা এমনকি ১৯৯১ সালের ডেজার্ট স্টর্ম অভিযান- এই সবগুলো অভিযান শেষ করার একটা নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করা ছিল।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আফগানিস্তান এবং ইরাকে যে আক্রমণ চালানো হলো, তার পরিণামে যে যুদ্ধ শুরু হলো, তাকে বলা হচ্ছিল ‘চিরকালের যুদ্ধ’। ২০০১ এবং ২০০৩ সালে যারা এই যুদ্ধ শুরু করেছিল, তারা কেউ ধারণা করতে পারেনি যে দুই দশক পরও এই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।

সোজা কথায় বললে, পশ্চিমা দেশগুলো আসলে বুঝতেই পারেনি যে তার কীসের মধ্যে গিয়ে পড়ছে, এবং সেখান থেকে বেরিয়ে আসার কোন বাস্তবসম্মত পরিকল্পনাও ছিল না।

এতে কোনও সন্দেহ নেই যে, পশ্চিমা দেশগুলো যদি ২০০১ সালে আফগানিস্তান থেকে তালেবান এবং আল-কায়েদাকে হটিয়ে না দিত, তাহলে সেখান থেকে আরও অনেক আক্রমণ চালানো হতো। আফগানিস্তানে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী মিশন ব্যর্থ হয়নি, তবে দেশ গঠনের কাজ কখনোই শেষ হয়নি।

আর এখন আফগানিস্তানের একটা ছবিই বেশিরভাগ মানুষের মনে গেঁথে থাকবে: সেটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর সি-১৭ পরিবহন বিমানের সঙ্গে সঙ্গে রানওয়ে ধরে ছুটতে থাকা মরিয়া আফগানদের ছবি।

তারা এমন এক দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছিল, যে দেশটিকে পশ্চিমা বিশ্ব বলতে গেলে প্রায় পরিত্যাগ করেছে বা প্রত্যাঘাত হয়েছে।

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম
Share on Facebook

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন এর সর্বশেষ

সর্বশেষ - অপরাধ