a
সংগৃহীত ছবি
১৯৫৯ সালে অ্যান্টার্কটিকা চুক্তি সই হয়েছিল। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মহাদেশটি হুমকির মুখে পড়েছে। চুক্তিতে ঐ মহাদেশকে যুদ্ধ, অস্ত্র ও পরমাণু বর্জ্য থেকে মুক্ত রাখতে একমত হয়েছিলেন বিশ্বের নেতৃবৃন্দ।
এই চুক্তিতে বলা হয়েছিল, ঐ অঞ্চলে কোনো একক দেশের নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। সব দেশের বিজ্ঞানীরা মিলেমিশে সেখানে বৈজ্ঞানিক গবেষণা করবেন। ঐ অঞ্চলকে ‘শান্তি ও বিজ্ঞানের জন্য নিয়োজিত একটি প্রাকৃতিক সংরক্ষিত এলাকা’ হিসেবে ধরে রাখতে একমত হয়েছিলেন নেতারা।
পরে ১৯৭৬ সালে ঐ চুক্তির মাধ্যমে অ্যান্টার্কটিকায় প্রাকৃতিক সম্পদের খোঁজ চালানোর ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
ওই কারণে অনেক দিন পর্যন্ত অ্যান্টার্কটিকা তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ধরে রাখতে পেরেছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলা শুরু করেছে।
এই শতাব্দীতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার অঙ্গীকার করেছেন বিশ্বনেতারা। যে নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে তাতে তাপমাত্রা প্রায় তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে জার্মানির গবেষণা সংস্থা ক্লাইমেট অ্যাকশন ট্র্যাকার।
গত মাসে ‘নেচার’ জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন জানা গেছে, বিশ্বের তাপমাত্রা যদি তিন ডিগ্রি বাড়ে তাহলে অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলার হার অনেক বেড়ে যাবে এবং সে হারে সমুদ্রের পানির উচ্চতাও বাড়বে।
অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিন্ডার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ আলেসান্দ্রো আন্তোনেল্লা অ্যান্টার্কটিকার পরিবেশগত রাজনীতি নিয়ে বই লিখেছেন। তিনি বলছেন, অ্যান্টার্কটিকা চুক্তি সই করা দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির মতো বিশ্বের সবচেয়ে বড় দূষণকারী দেশ রয়েছে।
নতুন করে দূষণকারী দেশের তালিকায় যুক্ত হওয়া চীন, ভারত এবং ব্রাজিলও ঐ চুক্তির সঙ্গে আছে। এটা এক ধরনের ভণ্ডামি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ফাইল ফটো
সৌদি আরব গত এক সপ্তাহে তীব্র হামলার পর এবার ইয়েমেনে দীর্ঘ ছয় বছর ধরে চলমান সংঘাতের অবসান ঘটাতে যুদ্ধবিরতি ও রাজনৈতিক সমঝোতা চুক্তিসহ নতুন একটি প্রস্তাব দিয়েছে। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ গতকাল সোমবার এক ঘোষণায় ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদেরকে এ প্রস্তাব দেন।
ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, যদি হুথি বিদ্রোহীরা উদ্যোগের শর্তগুলো মানতে সম্মত হয়, তাহলে সৌদি আরবও জাতিসংঘ-পর্যবেক্ষণাধীন দেশটিতে (ইয়েমেন) যুদ্ধবিরতি মেনে চলবে। তবে এই যুদ্ধবিরতি ও রাজনৈতিক সমঝোতার প্রস্তাব নিয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি ইয়েমেন ও ইরান-সমর্থিত হুথিদের।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সপ্তাহে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ইয়েমেনে তীব্র বিমান হামলা চালিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। রাজধানী সানা ও লোহিত সাগরের উপকূলে একটি শস্য বন্দরসহ আরো কয়েক ডজন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। এর মাঝেই সৌদি আরবের পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা আসলো। সূত্র : সিএনএন
সংগৃহীত ছবি
নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজনৈতিক ঐক্য সংকটকালীন সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং যে কোনো সংকট মোকাবিলায় এটি একেবারে অপরিহার্য। শেখ হাসিনা-পরবর্তী সময়ে নতুন কোনো রাজনৈতিক সমঝোতার আশা আমরা এখনো পাইনি। বরং আমরা দেখতে পাচ্ছি, দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই আরও তীব্র হয়েছে। জাতি তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগে রয়েছে এবং এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
এই সংকটময় সময়ে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। জাতি আশা করে, এই দুই দলের মধ্যে ঐক্য হবে, কারণ এর কোনো বিকল্প নেই।
১৯৭৫ সালের নভেম্বর বিপ্লবের পর যে জাতীয় ঐক্য তৈরি হয়েছিল, তা ছিল দেশের রাজনৈতিক ঐক্যের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। নবগঠিত বিএনপির নেতৃত্বে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক ঐক্য সেই সময়ে নবজাতীয়তাবাদী শক্তি এবং বিদ্যমান ইসলামী রাজনৈতিক শক্তির একটি সফল মেলবন্ধন হিসেবে কাজ করেছিল।
জিয়াউর রহমানের দক্ষ নেতৃত্বে সৃষ্ট রাজনৈতিক ঐক্য অল্প সময়ের মধ্যেই সকল সংকট মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছিল। এটি সম্ভব হয়েছিল শুধুমাত্র ঐক্যের কারণেই।
জাতীয় ঐক্যকে জাতীয় শক্তির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জাতি যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তবে কোনো কিছুই তাদের ক্ষতি করতে পারে না। এটি একটি জাতির জন্য সুপার পাওয়ার হিসেবে কাজ করে।
সম্প্রতি রাজধানীতে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মানুষের জমায়েত এবং দুই ছাত্র দলের সংঘর্ষ স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, দেশের শত্রুরা অরাজকতা সৃষ্টি করতে সক্রিয় রয়েছে।
বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির একের পর এক অবনতি সরকার এবং জাতির জন্য কোনো শুভ লক্ষণ বহন করে না। বড় আকারের আইনশৃঙ্খলা সংকট দেখা দেওয়া অসম্ভব নয়, যা বর্তমান সরকারের স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিক সমর্থন সরকারকে প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করতে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শক্তি জোগাতে পারে। তবে সরকারকে তাদের কাজের গতি বাড়াতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
এই মুহূর্তে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর ঐক্য অপরিহার্য, নতুবা অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত শত্রুরা এর সুযোগ নিতে দ্বিধা করবে না। বিপ্লবের সময় কয়েকশো মানুষের জীবন এবং জনগণের অমানবিক কষ্টের মাধ্যমে অর্জিত সুযোগ কোনোভাবেই উপেক্ষা করা উচিত নয়। এই সময়ে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য উভয় দলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
জাতীয় স্বার্থকে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে রাখতে হবে। রাজনৈতিক ঐক্য ছাড়া জাতিকে অভ্যন্তরীণ এবং বহিরাগত হুমকির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব নয়।
জাতীয় সংকটকালে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং কোনো দলেরই এটি উপেক্ষা করা উচিত নয়। বিএনপি, যেহেতু দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল, তাদের দায়িত্ব অন্যান্য রাজনৈতিক দলের তুলনায় অনেক বেশি। যদি তারা ১৯৭৫ সালের মতো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার গুরুদায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়, তবে ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না।
বিএনপিকে বিচক্ষণতার সঙ্গে জাতিকে নেতৃত্ব দিতে হবে এবং তারা কোনোভাবেই ভুল করার সুযোগ নিতে পারবে না। তারা ভুলে গেলে চলবে না যে, পুরো জাতি তাদের যোগ্য নেতৃত্বের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তাদের অবশ্যই সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে একটি নিরাপদ এবং নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা যায়।
যেমনটি তারা অতীতে প্রমাণ করেছিল, এবারও তাদের সেই সামর্থ্য প্রমাণ করতে হবে, ইনশাআল্লাহ।
লেখক: প্রফেসর ড. এস কে আকরাম আলী
সম্পাদক, মিলিটারি হিস্ট্রি জার্নাল