a
ছবি সংগৃহীত
সম্প্রতি চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখেনা ভূরাজনীতিতে এর প্রভাব ও গুরুত্ব কত অপরিসীম! সারা বিশ্বে হঠাৎ চীন যেভাবে আধিপত্য বিস্তারে যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তার দায় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মিত্র এড়াতে পারবে?
ইরান-সৌদি আরবে সন্ধি স্থাপনের পর পরই আরব রাজনীতিতে বরফ গলতে শুরু করেছে। মধ্যপ্রাচ্যে ইরাক,ইয়েমেনসহ অন্যান্য দেশগুলোর সাথে ইরানের যে বৈরিতা শুরু হয়েছিল, সৌদির সাথে ইরানের সম্পর্ক উন্নয়নে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে আমুল পরিবর্তন আসছে।
মূল কথায় আসি। যদিও চীন মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা আনয়নে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করছে কিন্তু ভূ-রাজনীতি বিবেচনায় চীনকে গনতন্ত্রের সহায়ক শক্তি হিসেবে কখনো বিবেচনা করা যাবে না। কারন চীন অর্থনৈতিক, সামরিক শক্তির পাশাপাশি বহুমাত্রায় নিজের শক্তি বাড়াতে মধ্যপ্রাচ্যসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর সহিত যোগাযোগ বৃদ্ধি করেইা যাচ্ছে। আর এটা করতে গিয়ে বেছে নিচ্ছে বিভিন্ন দেশের ফ্যাসিবাদ ও কর্তৃত্ববাদী সরকারকে। দেশটি নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে আর্থিক সহযোগিতার নামে ফ্যাসিবাদ রপ্তানি করছে এবং আমেরিকার পুঁজিবাদী মুক্তবাজার মডেলের বিপরীতে হিউম্যান অথোরিটি বা মানুষের কর্তৃত্ব নিয়ে বিশ্বকে দখলে নিতে চাচ্ছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মান, জাপান ও ইতালি অক্ষশক্তিগুলোর পতন হলে যুক্তরাষ্ট্র পুঁজিবাদী অর্থনীতির নাম করে মুক্তবাজার ও উদার রাজনীতির খোলস পরে মানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতার ধোঁয়া তুলে বিশ্ব রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছিল। যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার নামে বিভিন্ন দেশে অন্যায়ভাবে ক্ষমতার পরিবর্তন করেছে। অনেক ক্ষেত্রে নিরংকুশ জনপ্রিয় ও গণতান্ত্রিক সরকারগুলোকেও অন্যায়ভাবে ক্ষমতা থেকে তাড়িয়ে দিয়ে তাদের ইচ্ছা মতো শাসককে বসিয়ে দিতেও কার্পন্য করেনি। এসব করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দেশের কিছু সুশীল সমাজ, জনসাধারণ ও সামরিক বাহিনীকে নির্লজ্জভাবে ব্যবহার করেছে। যদিও ইদানীং চীনকে ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র তার নীতির পরিবর্তন এনেছে, তারপরও রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন হীন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বুঝতে পেরে এবং একক ক্ষমতাধর যুক্তরাষ্ট্র করোনা উত্তরোত্তর ও খালি হাতে আফগানিস্তান ও ইরাক হতে সৈন্য ফেরত এককচ্ছত্র ক্ষমতা শৈথিল্য বিশ্ব দরবারে প্রকাশের ফলে দেরিতে হলেও ঘুপটি মেরে থাকা দেশগুলো বর্তমানে চীন-রাশিয়ার বলয়ে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে চলে আসছে।
পূর্বেই বলেছি চীন তার শক্তির বলয় বাড়াতে বিভিন্ন দেশে ফ্যাসিবাদ ও কর্তৃত্ববাদী সরকারকে সমর্থন দিয়ে আমেরিকার আধিপত্যবাদ ঠেকিয়ে নিজেদের দিকে ভেড়াচ্ছে। ফলে চীন রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া, মায়ানমার, সিরিয়াসহ অগনতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রধানদের সঙ্গে নিয়ে বিশ্বরাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান পাকা পোক্ত করতে মরিয়া।
এদিকে, চীন তার শক্তি বৃদ্ধিতে অর্থনৈতিক শক্তি, দক্ষ কূটনীতি ও সামরিক শক্তি দিয়ে বিভিন্ন দেশ ও শাসককে নিরবে নিজেদের পক্ষে নেয়ার কাজ করে যাচ্ছে। আর এটা করতে গিয়ে চীন বিভিন্ন দেশের অগণতান্ত্রিক সরকারগুলোর সাথে কাজ করছে। এরই সর্বশেষ উদাহরণ ইরান-সৌদি আরবকে মিলিয়ে দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে আমেরিকার বলয় থেকে বের করার সুযোগ সৃষ্টি করে চমক তৈরির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও চীন একই নীতিতে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে।
উল্লেখ্য, ইসরায়েলের নিরাপত্তার কথা বলে ফিলিস্তিনীসহ আরব দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রষ্ট নীতির কারনে বিশ্বের শান্তিকামী মুসলমানকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা উল্লেখ না করলেই নয়। বাংলাদেশের জন্ম থেকে বর্তমানবধি যুক্তরাষ্ট্রের প্রচ্ছন্ন ভূমিকা এদেশের স্বাধীন প্রিয় ও সচেতন জনগনকে আশাহত করে অনেক অনেক ক্ষেত্রে। আর যুক্তরাষ্ট্রের এসব রাজনীতিতে ইইউসহ পশ্চিমা শক্তিগুলো নির্লজ্জ সমর্থনের কারনে অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বলয় থেকে বেরিয়ে চীন-রাশিয়ার বলয়ে ঝুঁকছে।
আরো উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ সময়ে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই করে নিজেদের ইমেজ নষ্ট করেছে। এরমধ্যে আরও দৃশ্যমান তাদের নীতিতে দ্বি-চারিতা ও দূর্বল কূটনৈতিক কৌশল। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশগুলোতে অযথা সংঘাত বাধিয়ে সেসব দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার জ্বলন্ত উদাহরণ সম্পর্কে সম্যক ধারণা সবার।
তারপরও যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষয়িষ্ণু শক্তির বিপরীতে চীনের উত্থান কোনভাবেই বিশ্ববাসীর জন্য আশাপ্রদ নয়। কারণ চীন বিভিন্ন দেশের এক নায়কতন্ত্র লৌহমানব ও কর্তৃত্ববাদী শাসকদের সঙ্গে নিয়ে একক মঞ্চ তৈরি করার সুযোগ করে দিচ্ছে ও তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তিগুলোর যুদ্ধাংদেহী মনোভাব ও ভুল পররাষ্ট্রনীতির কারনে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মিত্র দেশগুলোকে একে একে হারানোর ফলে সেসব জায়গাগুলো পূরণ করছে চীন। বিশেজ্ঞদের ধারণা, বিশ্ব ভূ-রাজনীতিতে চীনের উত্থানের দায় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তিগুলো কোনভাবে এড়াতে পারবে না।
মোহা. খোরশেদ আলম
কলাম লেখক ও সম্পাদক মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
নির্বাহী পরিচালক
হিউম্যানরাইটস এন্ড এনভায়রমেন্ট ডেভে. সোসাইটি
ছবি: সংগৃহীত
অবশেষে চতুর্থবারে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস করা হয়েছে। সোমবার প্রস্তাবটির ওপর নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়। ১৫ সদস্যের মধ্যে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়েছে ১৪টি। তবে ভোট দানে বিরত ছিল রাশিয়া। খবর আল-জাজিরা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত ৩১ মে গাজায় তিন ধাপে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের এ প্রস্তাব দেন। সোমবার প্রস্তাবটির ওপর নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটি হয়। জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের দূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড ইসরায়েল ও হামাসকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ।
যুদ্ধবিরতির এই প্রস্তাবকে তিনি নতুন সুযোগ বলেও অভিহিত করেছেন। নিরাপত্তা পরিষদে পাস হওয়া যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি কীভাবে যুদ্ধবিরতির শর্তগুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সে বিষয়ে মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে কাজ করার সদিচ্ছার কথা জানিয়েছে। তবে নিরাপত্তা পরিষদে পাস হওয়া যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েল সরকার।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের দেওয়া প্রস্তাবই ঘোষণা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।
এর আগে তিনবার গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়েছিল কিন্তু প্রতিবার আমেরিকা সব সময় ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছে এবং নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো প্রদান করে ইসরায়েলকে খুশি করতে যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব বিরত রেখেছে।
ছবি সংগৃহীত: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভবন, সেগুন বাগিচা
নিউজ ডেস্ক: চার সিটি করপোরেশনে অবস্থিত আয়কর সার্কেলের অধিভুক্ত সরকারি কর্মচারী, ব্যাংকার, মোবাইল প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও ছয়টি বড় কোম্পানির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিশেষ আদেশে এ তথ্য জানিয়েছে।
স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের ইলেকট্রনিক মাধ্যমে রিটার্ন দাখিল সংক্রান্ত এনবিআরের বিশেষ আদেশে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের আয়কর আইনের ক্ষমতাবলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চার ধরনের ব্যক্তি করদাতাদের ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অনলাইনে আয়কর দাখিল বাধ্যতামূলক করল।
তালিকার প্রথমে রয়েছেন ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে অবস্থিত আয়কর সার্কেলসমূহের অধিক্ষেত্রভুক্ত সব সরকারি কর্মচারী। তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন সব তফসিলি ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারী। তৃতীয়ত, দেশের সব মোবাইল টেলিকম সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা বা কর্মচারীদেরও অনলাইনে রিটার্ন প্রদান করতে হবে।
এ ছাড়া ছয়টি বড় বিদেশি কোম্পানিতে কর্মরত কর্মকর্তা- কর্মচারীদের বাধ্যতামূলকভাবে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে। এই কোম্পানিগুলো হলো ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড, ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, বাটা শু কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড এবং নেসলে বাংলাদেশ পিএলসি।
এর আগে গত সোমবার দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারি প্রশাসনের বিভিন্ন দাপ্তরিক লেনদেনে ডিজিটাল প্রযুক্তি চালুর বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তাদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ঐ বৈঠকে বৃহত্তর ঢাকা অঞ্চলের সব সরকারি কর্মকর্তাদের ই-রিটার্ন পোর্টালের মাধ্যমে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
এ ছাড়া বড় শিল্প গ্রুপগুলোকেও ই-রিটার্ন জমা দেওয়ার বিষয়ে উৎসাহিত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সিদ্ধান্তের এক দিন পর এনবিআর বিশেষ আদেশ জারি করল।
২০২৪-২৫ করবর্ষের রিটার্ন দাখিল ও কর পরিপালন সহজীকরণের লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অনলাইন রিটার্ন দাখিল সিস্টেম গত ৯ সেপ্টেম্বর করদাতাদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এরপর ২ অক্টোবর পর্যন্ত অনলাইনে আয়করের ই-রিটার্ন জমার সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। সরকার আশা করছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ১০ লাখ করদাতা অনলাইনে আয়কর নথি বা রিটার্ন জমা দেবেন।
অনলাইনে রিটার্ন তৈরি ও জমা দেওয়া যাচ্ছে। আবার এই সিস্টেম থেকে ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে করদাতারা কর পরিশোধ করতে পারছেন। এ ছাড়া দাখিল করা রিটার্নের কপি, প্রাপ্তি স্বীকারপত্র, আয়কর সনদ, কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ডাউনলোড ও প্রিন্ট করা যাচ্ছে। সূত্র: প্রথম আলো