a অপারেশন বুলডোজার ও ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ির ঐতিহাসিক ধ্বংসযজ্ঞ
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫
https://www.msprotidin.com website logo

অপারেশন বুলডোজার ও ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ির ঐতিহাসিক ধ্বংসযজ্ঞ


কর্নেল আকরাম, কলাম লেখক, মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
মঙ্গলবার, ১১ ফেরুয়ারী, ২০২৫, ০৯:০৭
অপারেশন বুলডোজার ও ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ির ঐতিহাসিক ধ্বংসযজ্ঞ

ছবি সংগৃহীত

 

বুলডোজার সাধারণত ধ্বংসযজ্ঞের কাজে ব্যবহৃত হয় এবং সাম্প্রতিক সময়ে আমরা এটি ৩২ নম্বরে প্রকাশ্যে ব্যবহৃত হতে দেখেছি। হাজার হাজার মানুষ সেখানে জড়ো হয়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ির ঐতিহাসিক ধ্বংসযজ্ঞে অংশগ্রহণ করেছে। অনেকেই এই ধ্বংসযজ্ঞ উপভোগ করেছে আনন্দের সঙ্গে। এটি স্মরণ করিয়ে দেয় বেগম খালেদা জিয়াকে জোরপূর্বক তার বাসভবন থেকে উচ্ছেদ এবং তার বাড়ি ভেঙে ফেলার ঘটনাকে।  

একটি যুগ আগে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, এই বাড়ির সকল বাসিন্দাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। সেই সময়ে কেউ সাহস করেনি রাস্তায় নেমে এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে। অনেকেই এই ঘটনাকে "আগস্ট বিপ্লবের" অংশ হিসেবে দেখেছে। তবে ইতিহাসই নির্ধারণ করবে এর প্রকৃত অবস্থান এবং মূল্যায়ন।  

তবে প্রতিটি কর্মেরই একটি প্রতিক্রিয়া থাকে—এটি শুধু সময়ের ব্যাপার। ইতিহাস বারবার নিজেকে পুনরাবৃত্ত করে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলী দেখিয়ে দিয়েছে যে, মানুষ ৩২ নম্বর বাড়িকে ধ্বংস করতে বদ্ধপরিকর। বাড়িটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং শেখ মুজিবের ম্যুরাল সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা হয়েছে। ভবনের বেসমেন্টে স্কুলছাত্রীদের ইউনিফর্ম পাওয়া গেছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে সেখানে সম্ভাব্য নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে। অনেকেই মনে করেন, ৩২ নম্বর বাড়িটি দীর্ঘদিন ধরে ষড়যন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু ছিল।  

শেখ হাসিনা সীমা অতিক্রম করেছেন। যখন জনগণের ক্ষোভ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল, তখন তিনি তার দলের নিষিদ্ধ ছাত্রসংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়। বর্তমানে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, এবং এটি কোথায় গিয়ে শেষ হবে তা কেউ জানে না। কিন্তু এটা নিশ্চিত যে, ভবিষ্যতের পরিণতি বিবেচনা না করেই শেখ হাসিনা নিজেই আগুনে ঘি ঢেলেছেন।  

ভারতের আশীর্বাদ নিয়ে শেখ হাসিনা যদি আরও পদক্ষেপ নেন, তবে তার অনুসারীদের জানমাল হুমকির মুখে পড়বে। বিপ্লবের সময় এবং বিজয়ের পরও "বিপ্লববিরোধী" শক্তির বিরুদ্ধে তেমন হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়নি। অথচ ওবায়দুল কাদের নিজেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে সরকার পরিবর্তনের পর প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ নিহত হতে পারে।

শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক পদক্ষেপ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা, যা দেশকে আরও সংকটে ফেলতে পারে। জনগণ এবং শিক্ষার্থীরা যে কোনো সময় রাস্তায় নেমে বিপ্লববিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে। যারা দেশের শান্তি বিনষ্ট ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে মানুষ জেগে উঠছে।  

জনগণ এখনও ভুলে যায়নি কিভাবে বেগম খালেদা জিয়াকে জোরপূর্বক বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল এবং কিভাবে তার বাড়ি গুঁড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। পরবর্তীতে সেই জায়গায় উচ্চ ভবন নির্মাণ করে কর্মকর্তাদের আবাসন ব্যবস্থা করা হয়েছে।  

এখন জনগণের দাবি, ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবে শহীদ হওয়া পরিবারগুলোর জন্য ৩২ নম্বরে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হোক। যারা অতীতে বাড়ি ধ্বংস ও নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিল, তারা এর দায় এড়াতে পারবে না। ইতিহাসের পরিহাস—যারা একসময় অন্যের বাড়ি ধ্বংস করেছিল, আজ তাদেরই বাড়ি একই পরিণতির শিকার হয়েছে।  

আমাদের জানতে হবে, যেসব জেনারেল ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদ করেছিল এবং জাতীয় স্বার্থ উপেক্ষা করেছিল, তারা প্রতারক ও বিশ্বাসঘাতক। জনগণ কখনোই এই ষড়যন্ত্রকারীদের ক্ষমা করবে না।  

২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব এখনো শেষ হয়নি। এটি পরিপূর্ণ রূপ নিতে আরও কয়েক বছর সময় লাগতে পারে।* আজ নেওয়া প্রতিটি পদক্ষেপই বিপ্লবের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে যতক্ষণ না বিপ্লবের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় এবং রাষ্ট্র কাঠামোতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও সংস্কার সম্পন্ন হয়।  

কলাম লেখক: প্রফেসর ড. এস কে আকরাম আলী

 

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

আরও পড়ুন

ফেরাউনি জমানার পাপাচার এবং মহামারীর ইতিবৃত্ত!


মুক্তসংবাদ প্রতিদিন ডেস্ক
বুধবার, ১৪ আগষ্ট, ২০২৪, ০৫:৫৮
ফেরাউনি জমানার পাপাচার এবং মহামারীর ইতিবৃত্ত!

ছবি: সংগৃহীত

 

মিসর দেশের হাজার হাজার বছরের ইতিহাসে শত শত ফেরাউনের কাহিনী রয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন সত্যিকার অর্থেই প্রজারঞ্জক মহান শাসক। কেউ কেউ ছিলেন বহু দোষে দুষ্ট শাসক নামের কলঙ্ক। কারো কারো মধ্যে আবার বিপরীতমুখী দ্বৈত সত্তা ছিল। অর্থাৎ রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য জমিনে যা কিছু করা দরকার তা তারা করেছেন। কিন্তু রাষ্ট্রের প্রধান নিয়ামক জনগণের মনমানসিকতা, বিশ্বাস, ভালোবাসা এবং বোধবুদ্ধিকে অপমান করার জন্য যত নিকৃষ্ট ছলচাতুরী করা দরকার তার প্রায় সবই তারা করেছেন। ফলে মানুষের অন্তরলোক এবং জমিনের ঊর্ধ্বলোক অর্থাৎ আসমানের মধ্যে যে মহাজাগতিক শক্তি রয়েছে যা কিনা এই পৃথিবীর সব কিছুর ভারসাম্য রক্ষা করে, প্রাকৃতিক আইন বলবৎ রাখে এবং সব সাক্ষীকে নিরাপত্তা দান করে সেগুলোর প্রায় সব কিছুই লানত হিসেবে এই শ্রেণীর শাসকের তকদির তছনছ করে দেয়।

মিসরীয় ফেরাউনদের মধ্যে যিনি অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে পরিচিত তার নাম ছিল প্রথম সেটি। তার স্ত্রী তুইয়াও অত্যন্ত মহীয়সী রমণী ছিলেন। ধারণা করা হয়, এই মহান শাসকের জমানাতেই শিশু হজরত মুসা আ: মিসরের রাজপ্রাসাদে অলৌকিকভাবে আশ্রয় লাভ করেন এবং একজন রাজপুত্ররূপে লালিত পালিত হতে থাকেন। পরে তিনি যৌবনপ্রাপ্ত হলে তার নেতৃত্বগুণ, প্রজাদের প্রতি মমত্ব, সাহস শক্তি এবং বুদ্ধিমত্তা দেখে ফেরাউন প্রথম সেটি এতটাই মুগ্ধ হয়ে পড়েন যে, তাকে ভবিষ্যৎ শাসকরূপে মনোনীত করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু একটি দুর্ঘটনার কারণে মুসা আ: ফেরারি আসামিরূপে রাজপ্রাসাদ থেকে পালিয়ে মাদায়েনের দিকে চলে যান। ফলে তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয়। এই ঘটনার কয়েক বছর পর সম্রাট সেটির মৃত্যু হয় এবং তার একমাত্র পুত্রসন্তানরূপে রামসিস দ্য সেকেন্ড অর্থাৎ দ্বিতীয় রামসিস সিংহাসনে আসীন হন।

বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ, লৌকিক উপকথা এবং সাহিত্য উপন্যাসে যে অভিশপ্ত ফেরাউনের কথা বলা হয় তিনি যে দ্বিতীয় রামসিস তা বেশির ভাগ ঐতিহাসিক বিশ্বাস করেন। দ্বিতীয় রামসিসের রাজত্বকাল, তার জ্ঞান গরিমা এবং সমসাময়িক দুনিয়াতে তার ইতিবাচক প্রভাব প্রতিপত্তির যে ইতিহাস লিখিত রয়েছে সেগুলোর সাথে তার পতনের কাহিনী মেলানো সত্যিকার অর্থেই কঠিন একটি বিষয়। মিসরের হাজার বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসে তিনিই হলেন সর্বকালের সেরা জনপ্রিয় শাসক এবং কিংবদন্তির সম্রাট। তার রাজত্বকালকে বলা হয় উনিশতম ডাইনেস্টি। তিনি ক্ষমতায় ছিলেন ১২৭৯ খ্রিষ্ট পূর্বাঙ্গ থেকে ১২১৩ খ্রিষ্ট পূর্বাঙ্গ পর্যন্ত। অন্য দিকে তার জীবৎকাল ছিল নব্বই বছর। অর্থাৎ নব্বই বছর জীবৎকালের ৪২ বছরই তিনি মিসর শাসন করেছেন। ১৮৮১ সালে যখন তার মৃতদেহ আবিষ্কৃত হয় তখন তা রাজকীয় মর্যাদায় প্রাচীন রাজধানী লুক্সরের রয়্যাল ফ্যাসি থেকে কায়রোতে আনা হয়। একটি ঐতিহ্যবাহী ইঞ্জিনবিহীন ফেরাউন জমানার ধাঁচে তৈরি জাহাজে করে দ্বিতীয় রামসিসের মৃতদেহ যখন নীল নদ দিয়ে আনা হচ্ছিল তখন লাখ লাখ মিসরবাসী বন্দুকের গুলি ছুড়ে, আতশবাজি ফুটিয়ে এবং নেচেগেয়ে তাদের সম্রাটকে স্বাগত জানাতে থাকে।

তাবৎ দুনিয়ার ইতিহাসবিদেরা গবেষণা করে রীতিমতো গলদঘর্ম হচ্ছেন দ্বিতীয় রামসিস জমানার রাজনৈতিক সফলতা, রাজ্য বিস্তার, সমগ্র সাম্রাজ্যে সরকারি কাজকর্ম, রাজকীয় স্থাপনা, জনস্বার্থে নির্মিত রাস্তাঘাট, সরাইখানা, সেচব্যবস্থা, খাল খনন, প্রাচীন সুয়েজ খাল পুনঃখনন, জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, মিসরকে সামরিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে পৃথিবীর একনম্বর পরাশক্তিতে পরিণত করা ইত্যাদি শুভ কর্মের সাথে তার জমানার শেষের দিকে সাত সাতটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মহামারী যা কিনা গ্রেট প্লেগ হিসেবে চিহ্নত সেগুলোর ভয়াবহ পরিণতির সমন্বয় ঘটাতে গিয়ে তারা ভেবে পাচ্ছেন না কেন মিসরীয় জনগণ তাকে এত ভালোবাসে।

অন্য দিকে বাইরের দুনিয়ার অনাদিকালের লোকজন তাকে অভিশাপ দেয়। অথবা কেনো মহাকালের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা কিনা অল্প কয়েক মাসের ব্যবধানে পরপর সাতবার সাতটিরূপে তার রাজধানীকে আক্রমণ করেছিল, কেন তার রাজধানী সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়েছিল, পরবর্তীতে বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছিল এবং কালের গর্ভে সেটি কেন প্রায় ১৫ মিটার মাটির নিচে চাপা পড়ল।

আধুনিককালের বিজ্ঞানীরা দ্বিতীয় রামসিসের রাজধানীর সন্ধান পেয়েছেন। প্রযুক্তির কল্যাণে তারা মাটির নিচে চাপা পড়া রাজধানীর মানচিত্রটি পর্যন্ত বানিয়ে ফেলেছেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে, রামসিসের রাজধানী যা কিনা সিটি অব রামসিস নামে পরিচিত ছিল তা লম্বায় ছিল ১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থেও ১৫ কিলোমিটার। অর্থাৎ ২২৫ বর্গকিলোমিটারের প্রাচীন সেই মহানগরীর মতো সৌন্দর্যমণ্ডিত, আধুনিক, পরিকল্পিত, নিরাপদ এবং সুখসম্পদে পরিপূর্ণ কোনো রাজধানীর জন্ম পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি হয়নি। তার জমানায় পরিচিত দুনিয়ার জ্ঞানী গুণী, ব্যবসায়ী, কবি-সাহিত্যিক থেকে শুরু করে শান্তিপ্রিয় সচেতন নাগরিকদের স্বপ্নময় সাধ ছিল দ্বিতীয় রামসিসের রাজধানীর নাগরিক হওয়ার বাসনা। নীল নদের চমৎকার একটি বাঁকে গড়ে ওঠা রাজধানীটি তার মৃত্যুর পরে যখন বিরানভূমিতে পরিণত হচ্ছিল, তখন অলৌকিকভাবে নীল নদ তার গতিপথ পরিবর্তন করে সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে বহু যোজন দূরে চলে আসে। ফলে পানির অভাবে সেখানে কোনো পাখ-পাখালিও টিকতে পারেনি।

দ্বিতীয় রামসিসের পতন নিয়ে প্রাচীন তাওরাত-ওল্ড টেস্টামেন্ট এবং পবিত্র কালামে রব্বানী আল কুরআনে যে কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে তা প্রায় একই রকমের। ফলে ঐতিহাসিকরা তার পতনের কার্যকারণের সমীকরণ করতে না পারলেও ধর্মবেত্তারা ঠিকই গাণিতিক হিসাবে অনেক কিছু বের করে ফেলেছেন। তাদের মতে, ফেরাউন রামসিসের পতনের প্রধান কারণ হলো তিনি নিজের প্রতি মস্তবড় জুলুম করেছেন। তার রাষ্ট্রক্ষমতা লাভ, রাজ্য জয় এবং সর্বক্ষেত্রের সফলতায় তিনি নিজের প্রকৃতি গঠন এবং পরিণতি সম্পর্কে উদাসীন হয়ে পড়েছিলেন। তার মেধা, মননশীলতা, ঐতিহ্যবাহী রাজকীয় পারিবারিক শিক্ষা ইত্যাদি সব কিছু ভুলে গিয়ে তিনি ফটকাবাজ দালাল, চাটুকার কবি, ধড়িবাজ অসৎ ব্যবসায়ী এবং ফুর্তিবাজ মেধাবী চরিত্রহীন লোকদের সংস্পর্শে এসে নিজেকে প্রথমে মহামানব, তারপর অতি মানব, তারপর দেবতাদের প্রতিনিধি ভাবতে শুরু করেন। পরে তিনি নিজেকে দেবতা বলে ঘোষণা করেন এবং সর্বশেষে দেবতাদের প্রধান অর্থাৎ ঈশ্বর বলে ঘোষণা করতে থাকেন।

তার রাজনৈতিক সফলতা ও ক্ষমতা, সামরিক প্রতিভা, জনকল্যাণ, গণমুখী আচরণ তথা রাজনৈতিক চরিত্র এবং অঢেল অর্থের সাথে সাথে চরিত্রহীন মেধাবী আমির ওমরা, সেনাপতি, পুলিশ, বেসামরিক আমলা, ধড়িবাজ পুরোহিত কবি এবং জাদুকরদের সম্মিলিত প্রচার প্রপাগান্ডার কারণে তার জমানার বেশির ভাগ লোকজন বিশ্বাস করতে শুরু করে যে, তিনি সত্যিকার অর্থেই ঈশ্বর, যা কিনা আসমানের মালিককে বিক্ষুব্ধ করে তোলে।

দ্বিতীয়ত, তিনি জনগণের মধ্যে স্পষ্টত তিনটি পরস্পরবিরোধী সম্প্রদায় তৈরি করে সমাজে মারাত্মক ফ্যাতনা জুলুম নির্যাতন শোষণ বঞ্চনার এক নবতর অধ্যায় রচনা করেন, যা তার পূর্বসূরিরা কোনো দিন করেনি। তিনি তার বংশীয় বা দলীয় লোক, যারা পরিচিত ছিল কিবতি নামে, তাদের নাগরিকদের মর্যাদা দান করেন এবং রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সুযোগ-সুবিধায় তাদের ঈশ্বরের প্রতিনিধিরূপে সব অপকর্ম করার লাইসেন্স দেন। তিনি বনি ইসরাইল নামক সুবিখ্যাত জাতিগোষ্ঠী যাদের প্রায় কারো লাখ লোক তার রাজধানী এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় বসবাস করতেন, তাদের সব নাগরিক অধিকার হরণ করেন। ফলে এসব হতভাগ্য লোকজন সহায় সম্পতি হারিয়ে ক্রীতদাসে পরিণত হন। যারা স্বাধীন থাকতে পেরেছিলেন তারাও কিবতিদের দ্বারা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হতে থাকেন।

রামসিসের ঈশ্বর হওয়ার বাসনা যারা সৃষ্টি করেছিল, তারা সারা সাম্রাজ্যে বিরাট এক শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি করে ফেলেছিল। এই সিন্ডিকেট সব ব্যবসা-বাণিজ্য, নিয়োগ-বদলি ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে রাষ্ট্রের মধ্যে আলাদা একটি রাষ্ট্র গড়ে তুলেছিল। রামসিস যখন বুঝতে পারলেন তিনি ঈশ্বর নন বা কোনো মানুষের পক্ষে ঈশ্বর হওয়া অসম্ভব তখন তিনি আল্লাহর নবী হজরত মুসা আ:-এর প্রস্তাব মতো বনি ইসরাইলিদের মুক্তি দিতে রাজি হলেন। কিন্তু তার তৈরি বশংবদ কুখ্যাত সিন্ডিকেটটি বারবার তাকে প্ররোচিত করে তার দেয়া প্রতিশ্রুতি থেকে তাকে পাপের পথে ফিরিয়ে আনতে থাকে। এমন একটা সময় আসে যখন তিনি রীতিমতো অসহায় হয়ে পড়েন। কিন্তু দাম্ভিকতা, লোকলজ্জা এবং তাকে ঘিরে থাকা স্বার্থান্বেষী পাপিষ্ঠের দলের প্ররোচনায় তিনি বারবার অপরাধ করতে থাকেন।

মিসরীয় ফেরাউনদের কতগুলো সাধারণ বৈশিষ্ট্য ছিল। তারা বিচারক হিসেবে নিরপেক্ষ এবং সর্বদা ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতেন। তারা কথা দিলে তা রক্ষা করতেন এবং রাজ্যে সুশাসন নিশ্চিত করতেন। ফলে হাজার হাজার বছর ধরে তারা বংশপরম্পরায় মিসরকেন্দ্রিক বিস্তীর্ণ এলাকা অর্থাৎ উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ব্যাবিলন, সিরিয়া প্রভৃতি অঞ্চল শাসন করতে পেরেছিলেন। দ্বিতীয় রামসিসের জমানায় ফেরাউনদের অধিকৃত রাজ্যের পরিধি ছিল সবচেয়ে বড়। অন্য দিকে, রাজকোষে অঢেল অর্থের পাহাড় এবং সামরিক বাহিনীর শক্তিমত্তার কারণে তার সাথে টক্কর দেয়ার মতো কোনো রাজশক্তি দেশে বিদেশে ছিল না। এ অবস্থায় যুদ্ধ বিগ্রহের ঝক্কি ঝামেলা থেকে তিনি মুক্ত ছিলেন এবং সাম্রাজ্যের উন্নয়নের জন্য কাজ করতে গিয়ে জনগণের একাংশের শ্রদ্ধা ভালোবাসা পেতে শুরু করেন। ফলে তার মধ্যে আত্মতৃপ্তি, অহংবোধ, ভোগবিলাস, রাগ-ক্ষোভ প্রদর্শন এবং অন্যদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার মানবিক রোগগুলো প্রবল থেকে প্রবলতর হতে থাকে। তিনি চাটুকারদের খপ্পরে পড়ে এমন সব কা- শুরু করেন, যা মহান স্রষ্টা আল্লাহকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে।

ঐতিহাসিকদের বর্ণনা মতে, ফেরাউন দ্বিতীয় রামসিসের বৈষম্যমূলক রাষ্ট্রীয় নীতি, তার নিয়োগকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি এবং বহুমুখী পাপাচারে সমগ্র রাজ্যের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ, দাসদাসী শ্রেণী এবং বিবেকবান ভালো মানুষগুলোর জীবনে জাহান্নামের বিভীষিকা নেমে আসে। অন্য দিকে, সুবিধাবাদী লোকজনের আনন্দ উল্লাস, ধনীদের প্রাসাদসমূহে আয়োজিত জলসা, রাষ্ট্রীয় কর্মচারীদের সীমাহীন বিলাসিতা, রাজকোষের অর্থে নির্মিত শত শত মূর্তি, পিরামিড ইত্যাদি স্থাপনা এবং রাজপরিবারের সব সদস্য এবং তাদের সেবক চাপরাসিদের ভোগবিলাস ও অপব্যয়ের কারণে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল, যেখান থেকে দরিদ্র অসহায় ও আর্তমানবতার অভাব অভিযোগ দেখা যেত না এবং তাদের কান্নার আওয়াজ শোনা যেত না।

সামাজিক বৈষম্য মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। ধনী ও দরিদ্রের মধ্যকার বৈষম্য জঘন্য পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। ক্ষমতাশালী এবং বিত্তশালীরা ভিখিরির উপার্জন ছিনিয়ে নিতে গিয়ে কোনো রকম লজ্জা বা বিবেক দ্বারা তাড়িত হতো না। কারো মুখের অন্ন কেড়ে নেয়া, দরিদ্র ও দুর্বলদের কাছে যদি কোনো আকর্ষণীয় বস্তু থাকত তা সে নারী শিশু বা সোনা রুপা মণি মাণিক্য কিংবা জমি, যা-ই হোক সেগুলো প্রকাশ্যে কেড়ে নেয়ার মধ্যে ক্ষমতাশালীরা একধরনের পাশবিক তৃপ্তি অনুভব করত। বিচারব্যবস্থা সর্বদা ধনী ও ক্ষমতাবানদের পক্ষে ছিল। কিবতি জনগোষ্ঠীর লোক না হলে কেউ বিচারক, সেনাপতি, জায়গিরদার বা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মচারী হতে পারত না। এ অবস্থায় নির্যাতিত লোকেরা এতটাই নির্বোধ, বাকরুদ্ধ, বধির বা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল, যাদেরকে দেখলে গৃহপালিত ও অবহেলিত গরু ঘোড়া দুম্বা উট ইত্যাদি প্রাণী পর্যন্ত করুণা করত।

উল্লেখিত অবস্থায় লাখ লাখ মানুষকে যারা পশুর চেয়েও অধম বানিয়ে ফেলেছিল তাদের কুকর্মে মানুষের স্রষ্টার নিদারুণ গোসসা হয়। তিনি অপরাধীদের সতর্ক করার জন্য পরপর সাতবার সাত প্রকৃতির মহামারী দিয়ে মিসর সাম্রাজ্যে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। কিন্তু কোনো মহামারী যখন পাপিষ্ঠদের পাপকার্য থেকে বিরত রাখতে পারল না, তখন চূড়ান্তভাবে যে গজব ফেরাউন ও তার সাঙ্গোপাঙ্গদের ওপর নেমে এলো তাতে করে নিরীহ মিসরবাসী রাহুগ্রাস থেকে রক্ষা পেল। সূত্র: নয়াদিগন্ত

লেখক : গোলাম মাওলা রনি, সাবেক সংসদ সদস্য

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

আরও পড়ুন

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পূর্বে শিক্ষার্থীদের টিকা নিশ্চিতের পরিকল্পনা


এম.এস প্রতিদিন ডেস্ক
সোমবার, ১৭ মে, ২০২১, ০৭:৫৯
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পূর্বে শিক্ষার্থীদের টিকা নিশ্চিতের পরিকল্পনা

ফাইল ছবি

বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ খোলার পূর্বে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। আজ ১৭ মে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ পরিকল্পনা নেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া সম্পন্ন হলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খুলে দেওয়া হবে।

মহামারী করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি ২৯ মে পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরাসরি পাঠদান বন্ধ থাকলেও ভার্চুয়ালিভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখতে হবে। 

গত বছরের  ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বেশ কয়েক ধাপ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি বাড়ানোর পর ২৩ মে খুলে দেওয়ার কথা থাকলেও করোনাএ প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় তাও সম্ভব হচ্ছে না। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য নতুন করে ২৯ মে ধার্য্য করা হয়েছে, তবে এ নিয়েও শিক্ষার্থী অবিভাবকদের মনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে বিশাল শঙ্কাবিরাজ করছে।

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / khurshedalm@msprotidin.com
Share on Facebook

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন এর সর্বশেষ

সর্বশেষ - মতামত