a ইসলামী পুনর্জাগরণে শাহ্ আবদুল হান্নান
ঢাকা শনিবার, ২৩ কার্তিক ১৪৩২, ০৮ নভেম্বর, ২০২৫
https://www.msprotidin.com website logo

ইসলামী পুনর্জাগরণে শাহ্ আবদুল হান্নান


ফাহমিদ-উর-রহমান, মুক্তসংবাদ প্রতিদিন ডেস্ক
মঙ্গলবার, ০৪ জুন, ২০২৪, ০৫:০১
ইসলামী পুনর্জাগরণে শাহ্ আবদুল হান্নান

ফাইল ছবি: শাহ্ আবদুল হান্নান

    
বিশ শতকের শেষার্ধ থেকে দুনিয়াজুড়ে মুসলিম পুনর্জাগরণবাদ একটি বড় ঘটনা হয়ে ওঠে। এটি দ্রুত মিডিয়ার শিরোনাম হয় এবং এটিকে ভিত্তি করে প্রচুর বুদ্ধিবৃত্তিক অনুশীলন চলে। মুসলিম জগতের দীর্ঘ ঔপনিবেশিকতা তার মুসলিম আত্মপরিচয়কে সংশয়াপন্ন করে তুলেছিল। এই পুনর্জাগরণবাদ বিস্মৃত পরিচয়কে খুঁজে বের করে এবং ব্যক্তি ও জনপরিসরে ইসলামী পরিচয়কে বুনিয়াদ করে নতুন এক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক মাত্রা সৃষ্টি করে। এই নতুন মাত্রা আধুনিক ইসলামের গতিশীলতা ও নেতৃত্বের মধ্যে প্রতিফলিত হয়। বাংলাদেশের শাহ্ আবদুল হান্নান এরকম একজন চিন্তক পুরুষ, যার মধ্যে আমরা এই নতুন ভাবনার স্ফুরণ দেখি।

ব্যক্তিজীবনে একজন উচ্চপদাধিকারী আমলা হওয়া সত্ত্বেও ইসলামের ওপর তার গভীর পড়াশোনা, ইজতেহাদি মন, আধুনিক জগতের প্রেক্ষিতে ইসলামকে বোঝাপড়ার কৌশল এবং নানামুখী সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কার্যক্রমে তার প্রাণবন্ত ও সজীব অংশগ্রহণ তাকে বাংলাদেশের ইসলামী ভাবজগতের নেতৃস্থানীয় পুরুষে পরিণত করেছে।

ইসলামী পুনর্জাগরণবাদের একটি প্রধান অনুষঙ্গ হচ্ছে ইসলামী অর্থনীতির বিকাশ। ইসলামী অর্থনীতি বলতে এর তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক- দু’টি দিকই বোঝায়। গত কয়েক দশকে বিভিন্ন দেশে ইসলামী অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের বিস্তার ঘটেছে। এ সময় মুসলিম অর্থনীতিবিদরা ইসলামী শিক্ষার আলোকে ইসলামী অর্থনীতির একটি কাঠামোগত রূপ দেন। এটি জ্ঞানজগতে ইসলামী অর্থনীতি হিসেবে চালু হয়ে যায়। ইসলামী অর্থনীতি বিকাশের প্রয়োজনে স্বাভাবিকভাবে নেতৃত্বেরও উত্থান ঘটেছে, যারা একই সাথে তাত্ত্বিক ও সক্রিয় কর্মী। এ ক্ষেত্রে খুরশিদ আহমদ, উমর ছাপরা প্রমুখ খুব উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ইসলামী অর্থনীতির তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক বিকাশে শাহ্ আবদুল হান্নান অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করেছেন। অ্যাকাডেমিয়া ও সরকারি বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ভেতরে অবস্থান করে তিনি ইসলামী কাঠামোর মধ্যে অর্থনৈতিক তত্ত্ব ও চর্চার একটি অনুসরণীয় মানদণ্ড স্থাপন করেছেন। তাকে বাংলাদেশের ইসলামী অর্থনীতির জনকও বলা যায়।

ইসলাম অর্থনীতিকে মূল্যবোধকেন্দ্রিক হওয়ার ওপর জোর দেয়। ধনতন্ত্রের অবাধ স্বাধীনতা এবং সমাজতন্ত্রের সামাজিক মালিকানার ধারণা দুনিয়ায় অনেক ভালো কাজ করলেও বাস্তবে অর্থনৈতিক অসমতা দূর করতে পারেনি। বর্তমান পৃথিবীর অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ অনেকটা ধনতন্ত্রের হাতে। কিন্তু ধনতন্ত্র দুনিয়াজুড়ে প্রতিষ্ঠা করেছে একধরনের সোস্যাল ডারউইনিজম। ধনতন্ত্রের মাধ্যমে এখানে ধারণা দেয়া হয়েছে অর্থনীতিতেও ন্যাচারাল সিলেকশন হবে। শুধু যোগ্যরাই বেঁচে থাকবে, গরিবদের স্থান থাকলেও সেটি খুব প্রান্তিক অবস্থান হবে। এখানে এথিকসের কোনো জায়গা নেই। শাহ্ আবদুল হান্নান তাই সঙ্গত প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আর তা-ই যদি হয় তাহলে কোন যুক্তিতে আমরা দরিদ্রের জন্য কাজ করব? দারিদ্র্য কেন দূর করব? কেন আমরা নিরক্ষরতা দূর করব? কেন আমরা বঞ্চিত জনগণের জন্য কাজ করব? এসবই তো মূল্যবোধের সাথে সম্পর্কিত।’

আসলে ধনতন্ত্র হলো একটি মূল্যবোধহীন অর্থনীতি। ঠিক এই প্রেক্ষিতে ইসলামী অর্থনীতির ধারণাটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কারণ এটি মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন। এর তিনটি ভিত্তি : তাওহিদ, খেলাফত ও ইনসাফ। তাওহিদ মানে হচ্ছে সব মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি এবং এটি কোনো তাৎপর্যহীন ঘটনা নয়। সবমানুষের গুরুত্ব রয়েছে এবং প্রত্যেককে গুরুত্ব দিতে হবে। খেলাফত মানে হচ্ছে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মানুষ আল্লাহর খলিফা। সে কোনো দৈবাৎ ঘটনা নয় বা জন্মগত অপরাধী নয়। এই নীতির ভিত্তিতে সব মানুষ সমান। সবাই সমান মর্যাদার অধিকারী। এই সমতার বৈশিষ্ট্য বিশ্বভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত। এটি খেলাফতের আরেকটি বৈশিষ্ট্য। মানুষ সম্পদের আমানতদার। সে মূল মালিক নয়। সে নিজের ইচ্ছামতো সম্পদ ব্যবহার করতে পারবে না। সম্পদকে ব্যবহার করতে হবে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী। এটি খেলাফতের তৃতীয় বৈশিষ্ট্য।

ইনসাফের দাবি হচ্ছে সব মানুষের প্রয়োজন পূর্ণ করতে হবে। সবার জন্য সম্মানজনক আয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এমনভাবে অর্থনীতিকে সাজাতে হবে, যাতে সবার আয়ের ব্যবস্থা হয়।

ইসলামী অর্থনীতির কতকগুলো নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ বৈশিষ্ট্যগুলোই এটিকে ধনতন্ত্র ও সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি থেকে পৃথক চরিত্র দিয়েছে। শাহ্ আবদুল হান্নানের ভাষায়, ‘ইসলামী অর্থনীতির ইসলামিত্ব হচ্ছে তার মূল্যবোধ এবং তার প্রয়োগনীতিতে। অর্থনীতি বিষয়ে কয়েকটি প্রধান ইসলামী মূলনীতি হচ্ছে- সুদ নিষিদ্ধকরণ, সম্পত্তির মালিকানা সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি, দুস্থদের জন্য সামাজিক ব্যবস্থা (জাকাত), ব্যবসায় ও জীবিকা অনুসন্ধানের অধিকার, অর্থ ও সম্পদ জমাকরণের বিরুদ্ধে শক্ত মনোভাব, ইসলামের মিরাসি ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতির প্রতিরোধ।’

শাহ্ আবদুল হান্নান মনে করতেন, ইসলামের জাকাত-ব্যবস্থা দারিদ্র্য দূরীকরণের একটি মোক্ষম অস্ত্র হতে পারে। কিন্তু বর্তমানে যেভাবে জাকাত চালু আছে সেটি দিয়ে তা করা সম্ভব নয়। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে কেন্দ্রীভূতভাবে জাকাত আদায় ও বণ্টনের ব্যবস্থা হলে সবচেয়ে ভালো হয়। অথবা কোনো সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমেও করা যেতে পারে। জাকাত এমনভাবে দিতে হবে, যাতে জাকাত গ্রহীতা একেবারে স্বাবলম্বী হয়ে যায়। এই যে দৃষ্টিভঙ্গি, তার বাস্তব প্রয়োগ ব্যতীত দারিদ্র্য দূর করা কঠিন কাজ।

ইসলামী কাঠামোর মধ্যে দারিদ্র্য দূরীকরণের আরেকটি টুলস হলো ওয়াক্ফ ব্যবস্থা। মুসলিম জগতে দীর্ঘ কলোনিয়াল শাসন ওয়াক্ফ ব্যবস্থাকে রীতিমতো তছনছ করে দিয়েছে। আল্লাহর পথে দান-খয়রাত ইসলামী নৈতিকতার অংশ। এ কারণে মুসলমানরা কিছু সম্পদ দরিদ্রদের জন্য সবসময় ওয়াক্ফ করতেন। ওয়াক্ফের আয় থেকে মসজিদ, মাদরাসা, সরাইখানা চলত, এমনকি দরিদ্র ছাত্রদের ব্যয় নির্বাহ করা হতো। শাহ্ আবদুল হান্নান ওয়াক্ফ ব্যবস্থাকে পুনর্জীবিত করার পক্ষপাতী ছিলেন, যাতে মুসলিম সমাজে দারিদ্র্যের অবসান হয়।

ব্যাংকিং আধুনিক অর্থনীতির প্রাণ। কারণ ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেই অর্থের আদান-প্রদান হয় এবং এর মাধ্যমে অর্থনীতি গড়ে ওঠে। বিশ্বব্যাংকের চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর রিফর্ম প্রোগ্রামের (এফএসআরপি) প্রজেক্ট ডাইরেক্টরের দায়িত্ব পালনকালে তার তত্ত্বাবধানে নিম্নোক্ত সংস্কারগুলো গৃহীত হয়- ঋণ শ্রেণিকরণের আন্তর্জাতিক নীতি গ্রহণ; আন্তর্জাতিক নিয়মের রিস্ক ওয়েটেড ক্যাপিটাল অ্যাডিকুয়েসি পদ্ধতি গ্রহণ; ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো চালুকরণ; লেন্ডিং রিস্ক অ্যানালাইসিস বা ক্রেডিট রিস্ক অ্যানালাইসিস চালুকরণ ইত্যাদি। এসব নীতিমালার সংযোজন ব্যাংক তথা আর্থিক খাতকে বিশ্বমানে উত্তরণে ভূমিকা রাখে। ১৯৯১ সালে তার নেতৃত্বে বাংলাদেশে ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স (ভ্যাট) প্রবর্তন হয়।

শাহ্ আবদুল হান্নান ইসলামী ব্যাংকিংয়ের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি মনে করতেন, ইসলামী ব্যাংকিং যদি জাতীয় ব্যাংকিং পদ্ধতি হয় তাহলে সুদ উঠে যাবে। ইসলামের সামাজিক-অর্থনৈতিক লক্ষ্যাবলি প্রতিষ্ঠা করা তখন সহজ হবে। ইসলামী ব্যাংকিংয়ের একটি লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের চাহিদা পূরণ করা। চাহিদা পূরণ না করতে পারলে সমাজে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। আর ইনসাফ না থাকলে সাম্য প্রতিষ্ঠা হবে না, সঙ্ঘাতমুক্তিও ঘটবে না। বাংলাদেশে ইসলামী অর্থনীতির ক্ষেত্রে শাহ্ আবদুল হান্নানের সবচেয়ে বড় অবদান হচ্ছে এটিকে তিনি তাত্ত্বিক জায়গা থেকে প্রায়োগিক স্তরে নিয়ে এসেছেন। বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের সফলতার পশ্চাতে তার কারিশমা একটি বড় রকমের ভূমিকা রেখেছে। তিনি ইসলামী ব্যাংকিংয়ের জন্য ব্যাংকিং খাতে বিদ্যমান আইন সংস্কার করেন। ফলে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের জন্য প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর হয়।

শাহ্ আবদুল হান্নানের একটি অগ্রাধিকারের বিষয় ছিল সমাজে নারীর অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করা। তিনি ছিলেন নারীর মুক্তি, অধিকার ও স্বাধীনতার একজন প্রবল কণ্ঠস্বর। ইসলামী কাঠামোর মধ্যে থেকে তিনি নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। তিনি মনে করতেন, ইসলামী কাঠামোর মধ্যে নারীকে যে অধিকার দেয়া হয়েছে তা কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে বেশি। কিন্তু বাস্তবে সেই অধিকার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তারা বঞ্চিত হয়। বাস্তব ও তত্ত্বের এই ফারাক তাকে ব্যথিত করেছে। তিনি উপলব্ধি করেছেন, আমাদের জীবনে ইসলামী মূল্যবোধের কার্যকারিতা হ্রাস পাওয়ার ফলে এরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে তিনি মুসলিম জীবনে ইসলামী মূল্যবোধকে ফিরিয়ে আনার ওপর জোর দেন যাতে কি না নারীর ওপর জুলুমের অবসান ঘটে।

সমাজে নারীর অবস্থান ও অধিকার নিয়ে নানা কথা শোনা যায় বটে, কিন্তু আমাদের সমাজে নারীরা যে অনেকসময় অত্যাচারের শিকার হয়- এটিও মিথ্যা নয়। পিতার সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া, মোহরানা না পাওয়া এগুলো যে অহরহই ঘটে তাও অস্বীকার করা যাবে না। এর ফলে অনেকের মধ্যে একটি ধারণা হয়- এ অবস্থার জন্য মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোতে ইসলামই দায়ী। ইসলামের কারণেই নারীদের ছোট করে দেখা হয় এবং তারা অধিকারবঞ্চিত হয়। ফলাফল যা হয় তা আরো মারাত্মক। অনেকেই ইসলাম থেকে বিদ্রোহ করে পশ্চিমা নারীবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ে।

শাহ্ আবদুল হান্নানের কথা হলো, ইসলামী কাঠামোর মধ্যে নারীর যে অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে তা কথায় নয়, কাজে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ইসলামের মধ্যে তার নিজের মতো করে নারীর ক্ষমতায়নের একটি ব্যবস্থা আছে। ইসলামী ফ্রেমওয়ার্কে নারীর যে অধিকার দেয়া হয়েছে তা ইসলামের আবির্ভাবকালীন সময়ের চেয়ে চিন্তাভাবনার দিক দিয়ে অনেক অগ্রসর ছিল। শাহ্ আবদুল হান্নান দেখান, এটি আজকালকার পরিপ্রেক্ষিতেও অনেক অগ্রসর চিন্তা। এমনকি পশ্চিমের চেয়েও। তাহলে মুসলিম সমাজে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে কেন?

শাহ্ আবদুল হান্নান লিখেছেন, ‘ধর্ম মানুষের মধ্যে নিঃস্বার্থপরতা ও অন্যকে অগ্রাধিকার প্রদানের যে মানসিকতা সৃষ্টি করে তা অন্য কোনো মাধ্যমে সম্ভব নয়। এ দেশের নারীরা যে অধিকারবঞ্চিত হচ্ছে, নির্যাতিত হচ্ছে তা ধর্মের কারণে নয়; বরং ধর্ম থেকে আমাদের বিচ্যুতির কারণে। আমাদের মধ্যে সৃষ্ট স্বার্থপরতা, নীতিহীনতা ও ভোগস্পৃহাই এর জন্য দায়ী।’ তাহলে এর প্রতিকার কী? শাহ্ আবদুল হান্নানের ভাষায়- ‘আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, তাদেরকে সে অধিকার ভোগ করার সুযোগ তথা সামাজিক অবস্থা তৈরি করে দেয়া।’

শুধু লেখালেখির মাধ্যমে নয়, নানারকম সামাজিক কার্যক্রমের ভেতর দিয়ে নারী প্রশ্নটিকে তিনি সবসময় সজাগ করে তুলেছেন। নারীর হিজাবের অধিকারের প্রশ্নে তিনি সোচ্চার ছিলেন। ধর্ষণ, পতিতাবৃত্তি, নারী অপহরণ, যৌতুক, পর্নোগ্রাফি প্রভৃতির বিরুদ্ধে তার আপসহীন ভূমিকা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। শুধু তাই নয়, এসব প্রশ্নে তিনি সমাজের ইন্দ্রিয়কেই জাগানোর চেষ্টা করেননি, তিনি এর বিপক্ষে রীতিমতো সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলারও চেষ্টা করেছেন। তিনি জানতেন, সমাজ না জাগলে এ ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব।

চিন্তাগতভাবে শাহ্ আবদুল হান্নান ছিলেন মধ্যপন্থী। ইসলামের নামে তিনি কোনো রকমের বাড়াবাড়িকে সমর্থন করেননি। এই বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই তিনি ইসলামকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন। বিশেষ করে আধুনিক সভ্যতার প্রচুর অগ্রগতি ও অর্জনের সামনে তিনি ইসলামকে নতুন করে পাঠ করেছেন। একালে ইসলামের রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাঠামো কী রকম হবে তা নিয়ে বিস্তর চিন্তাভাবনা করেছেন। কুরআন ও হাদিসের মৌলিক নীতির ভিত্তিতে তিনি একালের মুখোমুখি হয়েছেন এবং ইসলামের পুনর্ব্যাখ্যা করেছেন।

শাহ্ আবদুল হান্নান মনে করতেন, চরমপন্থা ইসলামকে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কিন্তু ইসলামের স্বভাব মধ্যপন্থা, চরমপন্থা নয়। চরমপন্থা ক্ষুদ্র বিষয়কে বৃহৎ করে তোলে। চরমপন্থীরা কারো কথা শুনতে চায় না। সমন্বয় করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সমন্বয় তারাই করে, যারা মধ্যপন্থা অবলম্বন করে। চরমপন্থা উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ হতে দেয় না। আর মুসলিম বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ না হলে সে কী করে জাগবে?

শাহ্ আবদুল হান্নান মুসলিম জগতে একধরনের ভাববিপ্লবের পক্ষপাতী ছিলেন। বহুদিন ধরে মুসলিম জগতে বুদ্ধিবৃত্তির খরা চলছে। এই খরা নিয়ে পশ্চিমা সভ্যতার সৃষ্টিশীলতার টগবগে আগুনকে মোকাবেলা করা যাবে না। শাহ্ আবদুল হান্নান চেয়েছিলেন মুসলিম জগতে চিন্তার চাষাবাদ হোক, গবেষণার ফুল ফুটুক, সৃষ্টিশীলতার আগুন টগবগিয়ে উঠুক। মুসলিম জগতে একটি বর্ধনশীল জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও সংস্কৃতি গড়ে উঠুক। তিনি তার কৃতি ও সাধনার ভেতর দিয়ে বারবার আমাদের এ দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। সূত্র: নয়াদিগন্ত

 

লেখক : ফাহমিদ-উর-রহমান

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

বিনম্র শ্রদ্ধায় সত্যজিৎ রায়কে


এমএস.প্রতিদিন ডেস্ক:
শনিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৩৯
বিনম্র শ্রদ্ধায় সত্যজিৎ রায়কে

সত্যজিৎ রায়

সত্যজিৎ রায় (জন্মঃ২ মে ১৯২১-মৃত্যুঃ ২৩ এপ্রিল ১৯৯২) আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাঙালি চলচ্চিত্রকার; আলোকচিত্রী, চিত্রকর, শিশুসাহিত্যিক, সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবেও সুপরিচিত। ১৯২১ সালের ২ মে তিনি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস ছিল বৃহত্তর ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জ জেলার মসুয়া গ্রামে। 

পিতা প্রখ্যাত লেখক, সম্পাদক ও আলোকচিত্রী সুকুমার রায় ছিলেন রয়াল ফটোগ্রাফিক সোসাইটি অব গ্রেট ব্রিটেন-এর ফেলো। তার মাতা সুপ্রভা রায় ছিলেন একজন সঙ্গীতশিল্পী ও হস্তশিল্পে পারদর্শী এবং তার পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীও ছিলেন প্রখ্যাত লেখক, শিশু সাহিত্যিক, চিত্রকর, আলোকচিত্রী, ব্লক ডিজাইনার এবং শিশুতোষ পত্রিকা সন্দেশ (১৯১৩)-এর সম্পাদক।

জন্মের মাত্র দুই বছরের মধ্যেই পিতাকে হারিয়ে মামার আশ্রয়ে দৃঢ়চেতা মাতার তত্ত্বাবধানে সত্যজিৎ রায়ের শৈশব-কৈশোর অতিবাহিত হয়।

বালিগঞ্জ সরকারি হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্সসহ বিএ পাসের পর ১৯৪০ সালে সত্যজিৎ রায় শান্তিনিকেতনে ভর্তি হন।

১৯৪৩ সালে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার কমার্শিয়াল আর্টিস্ট হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু হয়। বিজ্ঞাপনের ভাষা ও ডিজাইনে তিনি নতুন মাত্রা সংযোজন করেন। প্রায় একই সময়ে তিনি বইয়ের প্রচ্ছদ এবং পত্রিকায় ছবি আঁকা শুরু করেন।

১৯৪৭ সালে কয়েকজন বন্ধুর সহায়তায় গঠন করেন কলকাতা চলচ্চিত্র সংসদ। পরবর্তী বছরে তার সুযোগ ঘটে ফরাসি চলচ্চিত্রকার জাঁ রেনোয়ার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার। রেঁনোয়া তার পরিচালিত 'দ্য রিভার' ছবির কিছু অংশ কলকাতায় শুটিং করেন এবং সত্যজিৎ তা প্রত্যক্ষ করেন।

পরে চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্দেশ্যে তিনি গঠন করেন ‘কনক পিকাচার্স’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। সত্যজিৎ এ সময় এ 'পারফেক্ট ডে' নামে একটি চিত্রনাট্য রচনা করেন।

১৯৫০ সালে চাকরির সূত্রে পাঁচ মাস লন্ডনে অবস্থানকালে তিনি প্রায় একশ চলচ্চিত্র দেখেন এবং পরিচিত হন ব্রিটিশ চলচ্চিত্র নির্মাতা লিন্ডসে অ্যান্ডারসন, চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞ পেনেলোপি হাস্টন এবং গ্যাবিন ল্যাম্বটি-এর সঙ্গে।

ইতালির ভিত্তোরিও ডি সিকা পরিচালিত 'দ্য বাইসাইকেল থিফ' দেখে তিনি মুগ্ধ হন এবং বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস 'পথের পাঁচালী' অবলম্বনে ছবি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। একই বছর অক্টোবরে দেশে ফিরে তিনি এর চিত্রনাট্য রচনা করেন এবং ১৯৫২ সালে অপেশাদার লোকজন নিয়ে ছবির শুটিং শুরু করেন। বহু ধারদেনা এবং গহনা, বইপত্র ও সঞ্চিত সম্পদ বিক্রয় করেও তিনি ছবির কাজ শেষ করতে পারেন নি। নিজের জীবন বীমার পলিসি বন্ধক দিয়ে ও বন্ধুবান্ধব-আত্মীয়দের কাছ থেকে তিনি মাত্র ১৭,৫০০ টাকা সংগ্রহ করেন।

পরে তিনি ব্যয় কম করার জন্য পুরানো ক্যামেরা ভাড়া করেন, খাদ্য ও যাতায়াত খরচ কমিয়ে দেন এবং কলকাতার প্রত্যন্ত এলাকায় শুটিং করেন।

তিনি একজন প্রযোজকের সন্ধান করছিলেন যিনি অন্তত ৪০,০০০ টাকা অর্থায়নে সক্ষম। ছবির এক-তৃতীয়াংশ চিত্রায়িত হওয়ার পর যোগাড় করা টাকা শেষ হয়ে যায়।
বাধ্য হয়ে তিনি পশ্চিমবঙ্গের সরকারের কাছে অর্থসাহায্য কামনা করেন। এ বিষয়ে আমলাদের অনীহা প্রত্যক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় নিজে ছবিটির নির্মাণ ব্যয় সংকুলানের ব্যবস্থা করেন।

১৯৫৫ সালে 'পথের পাঁচালী' নিউইয়র্কে প্রদর্শিত হয় এবং ঐ বছরই, আগস্টে কলকাতার প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হয়। মুক্তির পরপরই ছবিটি সারা বিশ্বে প্রশংসা লাভ করে এবং পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করে।

১৯৫৫ সালে 'পথের পাঁচালী' রাষ্ট্রপতি ও পশ্চিমবঙ্গ সাংবাদিক সমিতির পুরস্কার লাভ করে। ঐ বছরই ছবিটি ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘সর্বশ্রেষ্ঠ মানব দলিল’ হিসেবে জুরি বোর্ডের বিশেষ পুরস্কার অর্জন করে।

ছবিটি পৃথিবীর বিভিন্ন শহর ও দেশ, যথা এডিনবার্গ, ম্যানিলা, স্পেন, সানফ্রান্সিসকো, বার্লিন, ভ্যাঙ্কুবার, ডেনমার্ক ও জাপানে পুরস্কৃত হয়।

১৯৫৬-তে মুক্তি পায় তার দ্বিতীয় ছবি অপরাজিত, এটি তাকে এনে দেয় ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব পুরস্কার, গোল্ডেন লায়ন, Cinema Nuveall এবং ক্রিটিকস অ্যাওয়ার্ড।
১৯৫৬ থেকে ১৯৯২-এর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত চলচ্চিত্র মিশে ছিল তার চিন্তা ও কর্মে। তিনি ছিলেন বিশ্বের সেরা দশজন চলচ্চিত্রকারের মধ্যে একজন।

তার চলচ্চিত্র কর্মের মধ্যে রয়েছে ২৮টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চিত্র, ৫টি তথ্যচিত্র এবং ৩টি টেলি-ফিল্ম।
নির্মিত চলচ্চিত্রসমূহের মধ্যে উলে­খযোগ্য হলো:
পথের পাঁচালী (১৯৫৫), অপরাজিত (১৯৫৬), পরশপাথর (১৯৫৭), জলসাঘর (১৯৫৮), অপুর সংসার (১৯৫৯), দেবী (১৯৬০), তিন কন্যা (১৯৬১), রবীন্দ্রনাথ (১৯৬১), কাঞ্চনজঙ্ঘা (১৯৬২), অভিযান (১৯৬২), মহানগর (১৯৬৩), চারুলতা (১৯৬৪), কাপুরুষ ও মহাপুরুষ (১৯৬৫), নায়ক (১৯৬৬), চিড়িয়াখানা (১৯৬৭), গুপী গাইন বাঘা বাইন (১৯৬৯), অরণ্যের দিনরাত্রি (১৯৭০), প্রতিদ্বন্দ্বী (১৯৭০), সিকিম (১৯৭১), সীমাবদ্ধ (১৯৭১), অশনি সংকেত (১৯৭৩), সোনার কেল্লা (১৯৭৪)প্রভৃতি।
লেখক হিসেবেও তিনি খ্যাতি অর্জন করেন।তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে: বিষয় চলচ্চিত্র,একেই বলে শ্যুটিং,ফেলুদা সিরিজ,শঙ্কু সিরিজ,পিকুর ডায়েরী।

সত্যজিৎ রায় জীবনে বহু পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি পথের পাঁচালীর জন্য (১৯৫৫-১৯৬৬) ভারত ছাড়াও মোট ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন।

তিনি ভারত সরকারের কাছে ৪০টি ও বহির্বিশ্বের কাছে ৬০টি পুরস্কার লাভ করেন। সেসবের মধ্যে দেশ বিদেশের বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারী ডক্টরেট ডিগ্রি, বিশ্বভারতীর দেশিকোত্তম, দাদা সাহেব ফালকে,ভারত রত্ন ইত্যাদি। অস্কার পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক সত্যজিৎ রায় ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

মেসবা খান: ২৩ এপ্রিল ১৯৯৪/সূত্র:সংবাদ

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

কৃষি ডিপ্লোমা ছাত্রদের ৮ দফা দাবি মানতে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচির মাধ্যমে ৪৮ ঘন্টার আলটিমেটাম


সাইফুল আলম, বিশেষ প্রতিনিধি, মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ০৩:০৩
কৃষি ডিপ্লোমা ছাত্রদের ৮ দফা দাবি মানতে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচির মাধ্যমে ৪৮ ঘন্টার আলটিমেটাম

ছবি: মুক্তসংবাদ প্রতিদিন

 

সাইফুল আলম, ঢাকা:  ৮ দফা দাবির বাস্তবায়ন নিয়ে আজ ১৩ই এপ্রিল সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন কৃষি ডিপ্লোমা ছাত্র অধিকার আন্দোলনের শিক্ষার্থীবৃন্দরা। আজকের শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচির মাধ্যমে ৪৮ ঘন্টার আলটিমেটাম দেয় এই শিক্ষার্থীরা। যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে দাবিগুলো মানা না হয় তাহলে আরো কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তারা।

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, কৃষিতে দক্ষ জনশক্তি তৈরী করার জন্য বাংলাদেশে সরকারি ১৮ টি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট সহ অসংখ্য বেসরকারি কৃষি কলেজ রয়েছে, যেখানে কৃষিতে ৪ বছরের ডিপ্লোমা কোর্সে অধ্যয়ন করা হয়। সরকারি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে মিলিয়ে প্রায় অর্ধলক্ষ শিক্ষার্থী রয়েছে, বর্তমানে এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম ক্ষোভ আর হতাশ বিরাজমান, কারন কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীগণ চরম বৈষম্যের স্বীকার।

কৃষি ডিপ্লোমা ছাত্র অধিকার আন্দোলনের ব্যানারে সারা বাংলাদেশের প্রতিটি সরকারি বেসরকারি কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের নিয়ে ০৮ দফা দাবি আদায়ে নিয়মতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নামে। এই যৌক্তিক ০৮ দফা দাবি নিয়ে ২০০৮ সাল, ২০০৯ সাল, ২০১৬ সালে আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে। কিন্তু বারংবার দাবি যৌক্তিক বলে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েও আজ পর্যন্ত কোন দাবি বাস্তবায়ন করা হয় নাই।

তাদের ০৮ দফা দাবির মধ্যে কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ অর্থাৎ পলিটেকনিক ছাত্র/ছাত্রীদের ডুয়েট এর ন্যায় একটি স্বতন্ত্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা অন্যতম একটি দাবি। পৃথিবীর কোন দেশে উচ্চশিক্ষার জন্য আন্দোলন করতে হয় রাজপথে নামতে এমন এমন কোন দেশ আছে আমাদের জানা নেই, প্রিয় সাংবাদিক ভাইবোনদের কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম।
কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীগন যদি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে দক্ষ জনসম্পদ হিসেবে তৈরি হয় তাহলে সমস্যা কোথায়?

কয়েক যুগ এই যৌক্তিক বিষয় নিয়ে কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদগন আন্দোলন সংগ্রাম করার পরেও যখন দাবিগুলোর বিষয়ে কোন এক অজানা কারনে, কোন একদল কুচক্রী মহলের ইন্ধনে বাস্তবায়ন না হওয়ার কারনে আমরা জুলাই বিপ্লবের স্পিরিট টা কাজে লাগিযে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আবারো সোচ্চার হই। বর্তমান সরকার যাতে বিভ্রান্ত না হয় সেই জন্য আমরা প্রথমে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে কয়েক মাস আগে মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা, শিক্ষা সচিব, কৃষি উপদেষ্টা, কৃষি সচিব, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক সহ বিভিন্ন জেলা প্রশাসক বরাবর আমাদের দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি জমা দিই। তারা আমাদের এই দাবিগুলো কে অধিকার বলে অবিহিত করেন এবং যৌক্তিক দাবি বলে দ্রুত বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক ভাবে সত্য যে আবারো কোন এক কুচক্রী মহলের ইন্ধনে যারা আমাদেরকে শিক্ষার একটি গন্ডিতে রেখে মজা পায়, যারা চায়না আমরা তাদের সমকক্ষ পর্যায়ে যাই ঐ সমস্ত মহলের কারণে আমাদের দাবিকে আবারো বাস্তবায়ন না করার কৌশল অবলম্বন করছে।

আমরা সেজন্য আবারো অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস পরিক্ষা বর্জন কর্মসূচি গ্রহণ করি এবং সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ভাবে আমাদের কর্মসূচি পালন করি। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো তারা আমাদের দাবি আদায়ে পদক্ষেপ না নিয়ে বিভিন্ন ভাবে ছাত্রদের বদলি, ড্রপআউট সহ হুমকি ধমকি প্রদর্শন করছে যা ছাত্রদের সাথে অত্যন্ত সাংঘর্ষিক বিষয়।

আমরা আপনারা জাতির বিবেক সাংবাদিকদের মাধ্যমে তাদেরকে বলে দিতে চাই, জুলাই আন্দোলনকে ভূলে যাবেন না। বৈষম্যের বিরুদ্ধে কিভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করে দাবি আদায় করতে হয় তা আমাদের জানা রয়েছে। আমরা এবার দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবো না। প্রয়োজনে আরো কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।

আমাদের ০৮ দফা দাবির প্রতিটি দাবিই অত্যন্ত যৌক্তিক। আপনাদের অবগতির জন্য নিম্নে ০৮ দফা দাবি গুলো পেশ করা হলো।
১। ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের স্বতন্ত্র পাবলিক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ দিতে হবে।
২। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কে দ্বিতীয় শ্রেনীর কর্মচারী হিসেবে গেজেট করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে এবং প্রতিবছর নিয়োগের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।
৩। কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য শিক্ষক সংকট দূরীকরণ করতে হবে।
৪। কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষাকে ডি.এ.ই এর অধিনস্থ থেকে বের করে সম্পূর্ণভাবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আলাদা প্রতিষ্ঠান করতে হবে।
৫। সকল কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সহকারি বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদটি শুধুমাত্র ডিপ্লোমা কৃষিবিদ দের জন্য সংরক্ষিত করতে হবে।
৬। ডিপ্লোমা কৃষিবিদ দের বেসরকারী চাকুরীর ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১০ম গ্রেডের পে-স্কেলে বেতন দিতে হবে। ৭। কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের কে মাঠ সংযুক্তি ভাতা প্রদান করতে হবে (ইন্টার্নি)।
৮। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা-দের চাকুরীতে প্রবেশের পর ৬ মাসের ফাউন্ডেশন ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।
উপরোক্ত দাবিগুলো আদায় হলে কৃষিতে দক্ষ জনশক্তি তৈরী হবে। কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার বৈষম্য গুলো দূর হবে। কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার বৈষম্য দূর হলে বাংলাদেশের কৃষি অনন্য উচ্চতায় পৌছাবে বলে বিশ্বাস করি।

তাদের এই যৌক্তিক দাবিগুলো লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরা এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান কৃষি ডিপ্লোমা ছাত্র অধিকার আন্দোলন।

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম
Share on Facebook

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন এর সর্বশেষ

সর্বশেষ - শিল্প ও সাহিত্য