a
ড. আলাউদ্দিন আল আজাদ । ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ও বিশ্বের সাহিত্য ভাণ্ডারে আলাউদ্দিন আল আজাদ এক বিশেষ শ্রদ্ধেয় নাম। ভাষাসৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট কবি, সব্যসাচী লেখক, শিক্ষাবিদ ড. আলাউদ্দিন আল আজাদ আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এক উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। আলাউদ্দিন আল আজাদ বাংলাদেশের তথা সারা বিশ্বের সাহিত্য জগতের দীপ্তিমান প্রতিভা, মহান ব্যক্তিত্ব ও স্বকীয় মহিমায় উদ্ভাসিত এক নিরীক্ষাধর্মী সাহিত্যশিল্পী।
আলাউদ্দিন আল আজাদ ১৯৩২ সালের ৬ মে বৃহত্তর ঢাকার বর্তমানে নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার রামনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা গাজী আব্দুস সোবহান এবং মাতার নাম মোসাঃ আমেনা খাতুন। আলাউদ্দিন আল আজাদ অভিজাত, বনেদি ও সাংস্কৃতিক পরিবারে জন্ম নিলেও শৈশবটা তেমন সুখকর ছিল না। মাত্র দেড় বছর বয়সে মাকে হারান এবং দশ বছর বয়সে বাবা ইন্তেকাল করেন। আর তখন থেকেই শুরু প্রায় সর্বহারা আজাদের সংগ্রামশীল জীবনের।
আলাউদ্দিন আল আজাদ ছিলেন প্রগতিশীল লেখক, বামপন্থী চিন্তাধারা ও কর্মকাণ্ডের সাথে তিনি নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। বামপন্থী রাজনৈতিক-সামাজিক আন্দোলনে এবং প্রগতিশীল সাহিত্য-আন্দোলনে আলাউদ্দিন আল আজাদের সাহসী ভূমিকা আজ অনেকেই ভুলে গেছেন। কিন্তু পথে-মাঠে-ময়দানে ও শিল্পকর্মে আলাউদ্দিন আল আজাদ মার্ক্সসীয় ভাবধারাকে সমুন্নত রাখার জন্য ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছেন। আলাউদ্দিন আল আজাদ তার প্রকৃত নাম নয়। আলাউদ্দিনের সাথে যুক্ত হয়েছে লেখক নাম 'আল আজাদ'। আর তাঁর ডাক নাম ছিল 'বাদশা'। শৈশবে তিনি বাবা-মাকে হারান; আর এখান থেকেই শুরু হয় তার জীবনসংগ্রাম। গ্রামজীবনের কৃষিভিত্তিক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা ছিল তার সার্বক্ষণিক সঙ্গী।
আলাউদ্দিন আল আজাদ ১৯৪৯ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে অইএ পাস করেন। ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্সে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম এবং ১৯৫৪ সালে প্রথম শ্রেণীতে এমএ পাস করেন। ১৯৫৫ সালে তোলারাম কলেজের প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ঈশ্বরগুপ্তের জীবন ও কবিতা বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
পরবর্তীকালে সিলেট এমসি কলেজ, চট্টগ্রাম কলজসহ পাঁচটি সরকারি কলেজে অধ্যাপনা এবং পরবর্তীকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে তিনি ঢাকা কলেজের প্রিন্সিপালও ছিলেন। পেশাগত জীবনে মস্কোর বাংলাদেশ দূতাবাসে সংস্কৃতি উপদেষ্টা, শিক্ষা সচিব, সংস্কৃতিবিষয়ক বিভাগ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। সাহিত্যের সকল ক্ষেত্রেই ছিল তার পদচারণা। তাঁর রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৪৯টি। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহঃ
১। তেইশ নম্বর তৈলচিত্র (১৯৬০),
২। শীতের শেষরাত বসন্তের প্রথম দিন (১৯৬২),
৩। কর্ণফুলী (১৯৬২),
৪। ক্ষুধা ও আশা (১৯৬৪),
৫। খসড়া কাগজ (১৯৮৬),
৬। শ্যাম ছায়ার সংবাদ (১৯৮৬),
৭। জ্যোৎস্নার অজানা জীবন (১৯৮৬),
৮। যেখানে দাঁড়িয়ে আছি (১৯৮৬),
৯। স্বাগতম ভালোবাসা (১৯৯০),
১০। অপর যোদ্ধারা (১৯৯২),
১১। পুরানা পল্টন (১৯৯২),
১২। অন্তরীক্ষে বৃক্ষরাজি (১৯৯২),
১৩। প্রিয় প্রিন্স (১৯৯৫),
১৪। ক্যাম্পাস (১৯৯৪),
১৫। অনূদিত অন্ধকার (১৯৯১),
১৬। স্বপ্নশীলা (১৯৯২),
১৭। কালো জ্যোৎস্নায় চন্দ্রমল্লিকা (১৯৯৬),
১৮। বিশৃঙ্খলা (১৯৯৭)
গল্প গ্রন্থঃ
১। জেগে আছি,
২। ধানকন্যা,
৩। মৃগনাভি,
৪। অন্ধকার সিঁড়ি,
৫। উজান তরঙ্গে,
৬। যখন সৈকত,
৭। আমার রক্ত স্বপ্ন আমার
কাব্য গ্রন্থঃ
১। মানচিত্র,
২। ভোরের নদীর মোহনায় জাগরণ,
৩। সূর্য জ্বালার স্বপন,
৪। লেলিহান পান্ডুলিপি
নাটকঃ
১। এহুদের মেয়ে,
২। মরোক্কোর জাদুকর,
৩। ধন্যবাদ,
৪। মায়াবী প্রহর,
৫। সংবাদ শেষাংশ।
রচনাবলীঃ শিল্পের সাধনা এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের ওপর লেখা বই "ফেরারী ডায়েরী (১৯৭৮)"
দেশবরেণ্য এই গুণীকবি বিভিন্ন সময় নানান ধরনের পুরস্কার লাভ করেছেন তার ভিতর উল্লেখযোগ্য কিছু হলো:
বাংলা একাডেমি পুরস্কার ১৯৬৪, ইউনেস্কো পুরস্কার ১৯৬৫, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ১৯৭৭, আবুল কালাম শামসুদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার ১৯৮৩, আবুল, মনসুর আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ১৯৮৪, লেখিকা সংঘ পুরস্কার ১৯৮৫, রংধনু পুরস্কার ১৯৮৫, অলক্তা, সাহিত্য পুরস্কার ১৯৮৬, একুশে পদক ১৯৮৬, শেরে, বাংলা সাহিত্য পুরস্কার ১৯৮৭, নাট্যসভা ব্যক্তিত্ব, পুরস্কার ১৯৮৯, কথক একাডেমী পুরস্কার ১৯৮৯ এবং
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ স্বর্ণ পদক ১৯৯৪।
দেশবরেণ্য এই কবি ২০০৯ সালের ৩রা জুলাই মৃত্যুবরণ করে।
ছবি:মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
মহান ২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বাংলাদেশ বেকার সম্প্রদায়। রাত ১টা ৩০ মিনিটে সংঘটনের সভাপতি মো: আল কাওছার এবং সাধারণ সম্পাদক মো: সাইফুল আলমের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ফুলেল শুভেচ্ছা নিবেদন করেন।
একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রথমে রাষ্ট্রপতি এবং পরে প্রধানমন্ত্রী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর স্পিকার ও প্রধান বিচারপতি শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তার কিছুক্ষণ পরেই বাংলাদেশ বেকার সম্প্রদায় সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সকলে মিলে কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করেন। পরবর্তীতে উপস্থিত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাসহ বিশিষ্টজনদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
বেকারের অধিকার আমাদের অঙ্গীকার এই শ্লোগানকে সামনে রেখে সারাদেশের লাখ লাখ বেকারের কর্মসংস্থান এবং বেকারদের জন্য ৪ দফা দাবী বাস্তবায়নের লক্ষে সক্রিয় আন্দোলন এবং গণসংযোগ করে যাচ্ছেন এই সংগঠনটি। জাতির সূর্যতরুণদের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সবাই। শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক মো: জসীম নায়েক, সহ- সভাপতি - জোবাইদুল হক সবুজ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক - আ আ ম আশিকুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক - বঙ্কিম চন্দ্র সরকার, প্রচার সম্পাদক - মো: রোমান গাজী সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও গত কয়েক বছর ধরে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
বাঙালি জাতির জন্য এই দিবসটি হচ্ছে চরম শোক ও বেদনার। অনদিকে মায়ের ভাষা বাংলার অধিকার আদায়ের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত। যেকোনো জাতির জন্য সবচেয়ে মহৎ ও দুর্লভ উত্তরাধিকার হচ্ছে মৃত্যুর উত্তরাধিকার-মরতে জানা ও মরতে পারার উত্তরাধিকার। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদরা জাতিকে সে মহৎ ও দুর্লভ উত্তরাধিকার দিয়ে গেছেন।
১৯৫২ সালের এদিনে ‘বাংলাকে’ রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বাংলার (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ছাত্র ও যুবসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ সে সময়ের শাসকগোষ্ঠীর চোখ-রাঙানি ও প্রশাসনের ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে আসে। মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে দুর্বার গতি পাকিস্তানি শাসকদের শংকিত করে তোলায় সেদিন ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিক গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। সেই থেকে দিবসটি গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হয়ে আসছে।
ফাইল ছবি
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের একটি বড় এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। আজ সোমবার রাতে এই ভূমিকম্প হয়। তাৎক্ষণিকভাবে এতে ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্য মতে, রাত ৮টা ৪৯ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডে এই ভূমিকম্প হয়। ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫।
ইউএসজিএস বলছে, ভারতের আসামের করিমগঞ্জ জেলা থেকে ১৮ কিলোমিটার উত্তরপশ্চিমে এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি। এর কেন্দ্র ছিল ভূ–পৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে।
আর গুগলের অ্যান্ড্রয়েড আর্থকোয়েক অ্যাল্যার্টস সিস্টেম বলছে, বাংলাদেশের সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ৪ কিলোমিটার দূরে ভারত সীমান্তে এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি।
এই ভূমিকম্প বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত ও মিয়ানমারেও অনুভূত হয়েছে। সূত্র: প্রথম আলো