a
সংগৃহীত ছবি
বিভিন্ন দাবিতে দেশের পণ্য পরিবহন সেক্টর ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। এ সেক্টরের তিনটি সংগঠন পৃথকভাবে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে। দেশব্যাপী ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি পালন করছে সংগঠনগুলো।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ট্যাংকলরি প্রাইমমুভার মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ ১০ দফা দাবিতে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ কাভার্ড ভ্যান-ট্রাক-প্রাইমমুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ ট্রাকচালক শ্রমিক ফেডারেশন ১৫ দফা দাবিতে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ৭২ ঘণ্টা কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে।
কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়নের দাবিতে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ট্যাংকলরি প্রাইমমুভার মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ গতকাল বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে। সমাবেশে বক্তব্য দেন সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক মো. রুস্তম আলী খান, সিনিয়র যুগ্ম- আহ্বায়ক মো. আব্দুল মান্নান ও সদস্যসচিব মো. তাজুল ইসলাম।
বক্তারা ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ১০ দফা দাবি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা না হলে ২৭ এবং ২৮ সেপ্টেম্বর ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালনের আহ্বান জানান। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জটিলতা নিরসন করে সহজশর্তে লাইসেন্স দেওয়া, পণ্য পরিবহনের সময় মালামাল চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই রোধে জরুরি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, চেকিংয়ের নামে পুলিশি হয়রানি, চাঁদাবাজি ও মাসিক মাসোহারা বন্ধ করা উল্লেখযোগ্য।
অন্যদিকে বাংলাদেশ কাভার্ড ভ্যান-ট্রাক-প্রাইমমুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ট্রাকচালক শ্রমিক ফেডারেশন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করাসহ ১৫ দফা দাবিতে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ৭২ ঘণ্টা কর্মবিরতি ঘোষণা দিয়েছে।
সম্প্রতি এক যৌথসভায় বক্তব্য রাখেন কাভার্ড ভ্যান-ট্রাক-প্রাইমমুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুকবুল আহমেদ, বাংলাদেশ কাভার্ড ভ্যান ট্রাক-প্রাইমুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব চৌধুরী জাফর আহাম্মদ, বাংলাদেশ ট্রাকচালক শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তালুকদার মো. মনির, জেনারেল সেক্রেটারি ওয়াজি উল্ল্যাহ প্রমুখ। নেতৃবৃব্দ তাদের বক্তব্যে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮-এর সংশোধনী প্রস্তাবসহ ১৫ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ জানান। সূত্র: ইত্তেফাক
সংগৃহীত ছবি
নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে আগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (৯ জুলাই) দুপুর ১টার দিকে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। উল্লেখ্য, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের কারখানার দ্বিতীয় তলায় আগুন লাগে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা সাংবাদিকদের জানান, তৃতীয় তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। পরে তা খুব দ্রুতই আগুন ছড়িয়ে পড়ে ৬ তলা ভবনজুড়ে। তখন ভবনের বিভিন্ন তলায় কর্মচারী ও কর্মকর্তারা আটকা পড়ে। কেউ কেউ প্রাণ বাঁচাতে লাফিয়ে নিচে পড়ে আহত হয়।
ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট একেক করে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। কিন্তু বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে সময় লাগে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন ও মেইনটেনেন্স বিভাগের উপপরিচালক দেবাসীস রঞ্জন।
নিখোঁজদের স্বজনরা জানান, সন্ধ্যার পর থেকে কারো সাথে কোন যোগাযোগ হয় নাই।
ছবি সংগৃহীত
কুমির দেখলে, সে শিয়ালের সঙ্গে কিছুতেই পেরে উঠছে না। তখন সে ভাবলে, 'ও ঢের লেখাপড়া জানে, তাতেই খালি আমাকে ফাঁকি দেয়। আমি মূর্খ লোক, তাই তাকে আঁটতে পারি না।' অনেকক্ষণ ভেবে কুমির এই ঠিক করল যে, নিজের সাতটা ছেলেকে শিয়ালের কাছে দিয়ে খুব করে লেখাপড়া শেখাতে হবে। তার পরের দিনই সে ছানা সাতটাকে সঙ্গে করে শিয়ালের বাড়ি গিয়ে উপস্থিত হল। শিয়াল তখন তার গর্তের ভিতরে বসে কাঁকড়া খাচ্ছিল। কুমির এসে ডাকলে,
'শিয়াল পণ্ডিত, শিয়াল পণ্ডিত, বাড়ি আছ?' শিয়াল বাইরে এসে বললে, 'কী ভাই, কী মনে করে?'
কুমির বললে, 'ভাই, এই আমার ছেলে সাতটাকে তোমার কাছে এনেছি। মূর্খ হলে করে খেতে পারবে না। ভাই, তুমি যদি এদের একটু লেখাপড়া শিখিয়ে দাও।' শিয়াল বললে, 'সে আর বলতে? আমি সাতদিনে সাতজনকে পড়িয়ে পণ্ডিত করে দেব।' শুনে কুমির তো খুব খুশি হয়ে ছানা সাতটাকে রেখে চলে গেল। তখন শিয়াল তাদের একটাকে আড়ালে নিয়ে বললে—
'পড় তো বাপু— কানা খানা গানা ঘানা,
কেমন লাগে কুমির ছানা?'
এই কথা বলে, সেটার ঘাড় ভেঙে, খেয়ে ফেললে।
পরদিন যখন কুমির তার ছানা দেখতে এল, তখন শিয়াল তাদের একেকটি করে গর্তের বাইরে এনে দেখাতে লাগল। ছয়টিকে ছয়বার দেখালে, শেষেরটা দেখালে দুবার। বোকা কুমির তা বুঝতে না পেরে ভাবলে, সাতটাই দেখানো হয়েছে। তখন সে চলে গেল, আর অমনি শিয়াল ছানাগুলোর একটাকে আড়ালে নিয়ে বললে—
'পড় তো বাপু— কানা খানা গানা ঘানা, কেমন লাগে কুমির ছানা?'
এই কথা বলে, সেটার ঘাড় ভেঙে, খেয়ে ফেলল। পরদিন কুমির তো ছানা দেখতে এল। শিয়াল একেকটি করে গর্তের বাইরে এনে, পাঁচবার পাঁচটাকে দেখাল, শেষেরটিকে দেখাল তিনবার। তাতেই কুমির খুশি হয়ে চলে গেল। তখন শিয়াল ঠিক আগের মতো করে আর একটা ছানাকে খেল।
এমনি করে সে রোজ একটি ছানা খায়, আর কুমির এলে তাকে ফাঁকি দিয়ে ভোলায়। শেষে যখন একটি ছানা বই আর রইল না, তখন সেই একটিকেই সাতবার দেখিয়ে সে কুমিরকে বোঝাল। তারপর কুমির চলে গেলে সেটিকেও খেয়ে ফেলল। তারপর আর একটিও রইল না।
তখন শিয়ালনী বললে, 'এখন উপায়? কুমির এলে দেখাবে কি? ছানা না দেখতে পেলে তো অমনি আমাদের ধরে খাবে!'
শিয়াল বললে, 'আমাদের পেলে তো ধরে খাবে। নদীর ওপারের বনটা খুব বড়, চল আমরা সেইখানে যাই। তা হলে কুমির আর আমাদের খুঁজে বার করতেই পারবে না।'
এই বলে শিয়াল শিয়ালনীকে নিয়ে তাদের পুরনো গর্ত ছেড়ে চলে গেল। এর খানিক বাদেই কুমির এসেছে। সে এসে 'শিয়াল পণ্ডিত, শিয়াল পণ্ডিত' বলে কত ডাকল, কেউ তার কথার উত্তর দিল না। তখন সে গর্তের ভিতর-বার খুঁজে দেখল—শিয়ালও নেই শিয়ালনীও নেই! খালি তার ছানাদের হাড়গুলো পড়ে আছে।
তখন তার খুব রাগ হল, আর সে চারদিকে ছুটাছুটি করে শিয়ালকে খুঁজতে লাগল। খুঁজতে-খুঁজতে নদীর ধারে গিয়ে দেখল, শিয়াল আর শিয়ালনী সাঁতরে নদী পার হচ্ছে।
অমনি 'দাঁড়া হতভাগা।' বলে সে জলে ঝাঁপ দিয়ে পড়ল। জলের নীচে ছুটতে কুমিরের মতো আর কেউ পারে না, দেখতে দেখতে সে গিয়ে শিয়ালের পিছনের একটা পা কামড়ে ধরল।
শিয়াল সবে তার সামনের দু-পা ডাঙায় তুলেছিল, শিয়ালনী তার আগেই উঠে গিয়েছিল। কুমির এসে শিয়ালের পা ধরতেই সে শিয়ালনীকে ডেকে বললে, 'শিয়ালনী, শিয়ালনী, আমার লাঠিগাছা ধরে কে টানাটানি করছে। লাঠিটা বা নিয়েই যায়।'
একথা শুনে কুমির ভাবলে, 'তাই তো, পা ধরতে গিয়ে লাঠি ধরে ফেলেছি। শিগগির লাঠি ছেড়ে পা ধরি।'
এই ভেবে যেই সে শিয়ালের পা ছেড়ে দিয়েছে, অমনি শিয়াল একলাফে ডাঙায় উঠে গিয়েছে। উঠেই বোঁ করে দে ছুট। তারপর বনের ভিতরে ঢুকে পড়লে আর কার সাধ্য তাকে ধরে।
তারপর থেকে কুমির কেবলই শিয়ালকে খুঁজে বেড়ায়। কিন্তু শিয়াল বড্ড চালাক, তাই তাকে ধরতে পারে না। তখন সে অনেক ভেবে এক ফন্দি করল। কুমির একদিন চড়ায় গিয়ে হাত পা ছড়িয়ে মড়ার মতো পড়ে রইল। তারপর শিয়াল আর শিয়ালনী কচ্ছপ খেতে এসে দেখল, কুমির কেমন হয়ে পড়ে আছে। তখন শিয়ালনী বললে, 'মরে গেছে। চল খাইগে!' শিয়াল বললে, 'রোস, একটু দেখে নিই।' এই বলে সে কুমিরের আর-একটু কাছে গিয়ে বলতে লাগল, 'না। এটা দেখছি বড্ড বেশি মরে গেছে। অত বেশি মরাটা আমরা খাই না। যেগুলো একটু-একটু নড়ে-চড়ে, আমরা সেগুলো খাই।' তা শুনে কুমির ভাবলে, 'একটু নড়ি-চড়ি, নইলে খেতে আসবে না।' এই মনে করে কুমির তার লেজের আগাটুকু নাড়তে লাগল। তা দেখে শিয়াল হেসে বললে, ঐ দেখ, লেজ নাড়ছে! তুমি তো বলেছিলে মরে গেছে!' তারপর আর কি তারা সেখানে দাঁড়ায়! তখন কুমির বললে, 'বড্ড ফাঁকি দিলে তো! আচ্ছা এবারে দেখাব!'
একটা জায়গায় শিয়াল রোজ জল খেতে আসত। কুমির তা দেখতে পেয়ে সেখানে গিয়ে লুকিয়ে রইল। ভাবল শিয়াল জল খেতে এলেই ধরে খাবে। সেদিন শিয়াল এসে দেখল সেখানে একটাও মাছ নেই! অন্য দিন ঢের মাছ চলা-ফেরা করে। শিয়াল ভাবল, 'ভালো রে ভালো আজ সব মাছ গেল কোথায়? বুঝেছি, এখানে কুমির আছে!' তখন সে বললে, 'এখানকার জল বেজায় পরিষ্কার। একটু ঘোলা না হলে কি খাওয়া যায়? চল শিয়ালনী, আর-এক জায়গায় যাই।' এ কথা শুনেই কুমির তাড়াতাড়ি সেখানকার জল ঘোলা করতে আরম্ভ করলে। তা দেখে শিয়াল হাসতে-হাসতে ছুটে পালিয়েছে!
আর একদিন শিয়াল এসেছে কাঁকড়া খেতে। কুমির তার আগেই সেখানে চুপ করে বসে আছে। শিয়াল তা টের পেয়ে বললে, 'এখানে কাঁকড়া নেই, থাকলে দু-একটা ভাসত।'
অমনি কুমির তার লেজের আগাটুকু ভাসিয়ে দিল। কাজেই শিয়াল আর জলে নামল না। এমনি করে বারবার শিয়ালের কাছে ঠকে গিয়ে, শেষে কুমিরের ভারি লজ্জা হল। তখন সে আর কী করে মুখ দেখাবে? কাজেই সে তার ঘরের ভিতরে গিয়ে বসে রইল।
....ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
শিয়াল পণ্ডিত, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী