a
ফাইল ছবি
কোপা আমেরিকার ফাইনালের হারের শোককে শক্তিতে পরিনত করে টোকিও অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন হলো ব্রাজিল। এক মাস আগে কোপা আমেরিকার ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার কাছে হেরে রানার আপ হয় ব্রাজিল। মাস না পেরুতেই আরেকটি অর্জন যোগ হলো ব্রাজিল ফুটবলে। টোকিও অলিম্পিকে বাংলাদেশ সময় আজ শনিবার টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনাল মাঠে নামে ব্রাজিল এবং তারা স্পেনকে ২ঃ১ গোলে হারিয়ে ব্যাক টু ব্যাক অলিম্পিকের সোনা জিতলো টিম ব্রাজিল। ব্রাজিলের হয়ে গোল করে কুনহা আর ম্যালকম।
খেলায় উত্তাপ ছড়াচ্ছিলো উভয় দলই নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ১ঃ১ গোলে সমতা থাকায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে গড়ায় ফাইনালের ভাগ্য সেখানে ১০৮ তম মিনিটে ম্যালকমের গোলে এগিয়ে যায় ব্রাজিল এর আগে ৪৫+৩ মিনিটে কুনহার গোলে লিড নিয়ে বিরতিতে যায় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। হাফ টাইমের পর ৬১ মিনিটে দারুন এক গোল করে স্পেনকে সমতায় ফেরান ওয়ারজাবেল। ৮৫ তম মিনিটে ক্রসবারে বল না লাগলে আজ হয়ত চ্যাম্পিয়ন হত স্পেনই। গত অলিম্পিকের চ্যাম্পিয়ন ছিল ব্রাজিল সেদিক থেকে কিছুটা এগিয়ে থেকেই ফাইনালে নামে সেলেসাওরা।
গত মঙ্গলবার সেমিফাইনালে মেক্সিকোর বিপক্ষে টাইব্রেকারে জিতে ফাইনালে উঠে সেলেসাওরা।
অন্যদিকে, ১৯৯২ সালে বার্সা অলিম্পিকে একমাত্র স্বর্ণ জিতেছিল স্পেন। ওইবারই অলিম্পিকে ফুটবলের অভিষেক হয়েছিল। আর ২০০০ সালে সিডনিতে শেষ ফাইনাল খেলে স্প্যানিশরা, ক্যামেরুনের কাছে হেরে রুপা জিতে সন্তুষ্ট থাকতে হয় স্পেনের।
ফাইল ছবি
লিওনেল মেসি নিজের মতো করে আলো ছড়াতে পারেননি। আলো ছড়ানো কী, শেষ দিকে সহজ একটা সুযোগ হারিয়েছেন। আর্জেন্টিনার কৌশল মেনে বারবার রক্ষণেই বেশি মনোযোগী ছিলেন।
কিন্তু ভালো খেলতে না পারার আক্ষেপ মনে হয় না মেসিকে খুব একটা পোড়াবে। ক্যারিয়ারজুড়ে বয়ে চলা আক্ষেপ ঘোচার দিনে আর এসব কেন মনে রাখতে যাবেন মেসি!
আক্ষেপ তার একটাই ছিল—আর্জেন্টিনার জার্সিতে কিছু জিততে না পারা। সেই আক্ষেপ আজ ঘুচেছে। তা-ও কীভাবে! কোপা আমেরিকার ফাইনালে ব্রাজিলের মাটিতে, ব্রাজিলের ফুটবলতীর্থ মারাকানায় নেইমারের ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা।
মেসির আক্ষেপ ঘুচেছে দি মারিয়ার গোলে। ২১ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে রদ্রিগো দি পলের চোখধাঁধানো পাস ধরে দারুণ চিপে বল জালে জড়ান দি মারিয়া। সেটিই শেষ পর্যন্ত ঘুচিয়েছে মেসির আক্ষেপ।
ফুটবল-বিধাতাই হয়তো ঠিক করে রেখেছিলেন, এমন একটা ম্যাচেই হবে মেসির আজন্ম অপেক্ষার অবসান। এর চেয়ে বড় কোনো উপলক্ষ তো আর হতে পারত না! নেইমার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে আলো ছড়াতে শুরু করার পর থেকে মেসি বনাম নেইমারের একটা ফাইনালের অপেক্ষায় ছিল ফুটবল। কিন্তু বিশ্বকাপে তো তেমনটা কখনোই হয়ইনি, কোপা আমেরিকাও এমন কিছু দেখেনি। আজ মারাকানায় হলো প্রথমবার।
এতে নেইমার-মেসি দুজনই কাঁদলেন। নেইমারের কান্নাটা তাঁর ব্রাজিলের হয়ে বড় কোনো শিরোপার এত কাছে এসেও সেটি ঘোচাতে না পারার আর মেসির কান্নায় জুড়ে আছে অনেক কষ্টের শেষে সব পাওয়ার অপূর্ব আনন্দ।
কাগজে-কলমের সব হিসাব অবশ্য ম্যাচের আগে উল্টোটাই হওয়ার আভাস দিয়েছিল। ব্রাজিল এই মুহূর্তে দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে শক্তিশালী দল। কি র্যাঙ্কিংয়ে, কি খেলোয়াড়ের নামের ভারে। প্রমাণ দেবে পরিসংখ্যানও। আর্জেন্টিনার কাছে আজকের হারটা ছিল ২০১৬ কোপায় পেরুর কাছে হেরে গ্রুপ পর্বে বিদায়ের পর লাতিন কোনো দলের কাছে ব্রাজিলের প্রথম হার। পাঁচ বছর আগের সেই ব্রাজিল ছিল দুঙ্গার ব্রাজিল।
তিতের অধীনে আলো ছড়াতে থাকা ব্রাজিলকে রুখতে আজ কী দারুণ কৌশলই না বেছে নিয়েছেন আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনি! ব্রাজিল কোচ তিতে সেমিফাইনালের একাদশে কোনো বদল আনেননি, কিন্তু ফাইনালের আগে বদল আনার ক্ষেত্রে স্কালোনি প্রায়োগিক ভাবনাকে দমিয়ে দেননি মোটেও। ফাটকাগুলো দারুণ কাজে লেগেছে!
রক্ষণের কেন্দ্রে হাঁটুর চোট কাটিয়ে ফেরা ক্রিস্টিয়ান রোমেরোকে এনেছেন স্কালোনি, ৭৮ মিনিটে মাঠ ছাড়ার আগে অসাধারণ খেলেছেন ইতালিয়ান ক্লাব আতালান্তায় খেলা ডিফেন্ডার। দুই ফুলব্যাকেও এসেছে বদল, গনসালো মন্তিয়েল আর মার্কোস আকুনিয়া দুজনই দারুণ খেলেছেন। তবে স্কালোনির যে বদলটা সবচেয়ে বেশি কাজে লেগেছে, তা হলো আক্রমণে আনহেল দি মারিয়াকে আনা।
টুর্নামেন্টে আগের কয়েক ম্যাচে বদলি নেমে আলো ছড়িয়েছেন, কিন্তু আজ দি মারিয়াকে শুরু থেকেই খেলিয়েছেন স্কালোনি।
ব্রাজিলের দুই ফুলব্যাকের মধ্যে লেফটব্যাক রেনান লোদি আক্রমণে ওঠেন বেশি, তাঁর ফেলে রাখা জায়গা ধরে দি মারিয়া গতি কাজে লাগিয়ে ব্রাজিলকে ভোগাতে পারবেন, এই ভাবনা থেকেই দি মারিয়াকে নামানো।
এই ভাবনারই পুরস্কার হয়ে এল আর্জেন্টিনার গোল। প্রথম থেকে দুই দলের অতি-সাবধানী ফুটবলে সুযোগ তেমন মেলেনি কারওই। তবে প্রথমার্ধে দাপটটা পুরোপুরি ছিল আর্জেন্টিনারই। ২১ মিনিটে গোলটা অবশ্য এসেছে হঠাৎ করেই। আর্জেন্টিনার দুই উইং ধরে দি মারিয়া আর আকুনিয়া উঠে যাচ্ছিলেন বারবার, জায়গা নিয়ে অপেক্ষায় থাকতেন মাঝমাঠ থেকে উড়ে আসা বলের। সে কৌশলেই এল গোল।
মাঝমাঠের বৃত্তেরও একটু ভেতর থেকে দি মারিয়ার উদ্দেশে বাতাসে ভাসানো অসাধারণ এক থ্রু বাড়ান পুরো ম্যাচে আর্জেন্টিনার মাঝমাঠের প্রাণ হয়ে থাকা রদ্রিগো দি পল। দি মারিয়া সেটি নিয়ন্ত্রণে নিলেন, এদিকে পাশে থাকা রেনান লোদিও তাঁকে আটকাতে গিয়ে করলেন ভুল! আর যায় কোথায়! ব্রাজিল গোলকিপার এদেরসন এগিয়ে এসে আটকাতে চেয়েছিলেন দি মারিয়াকে, কিন্তু আর্জেন্টাইন উইঙ্গারের দারুণ চিপ ঠেকানোর সাধ্য ছিল না অসহায় দাঁড়িয়ে থাকা এদেরসনের।
ম্যাচের আগে আলোচনায় ছিল ব্রাজিল মেসিকে কীভাবে আটকাবে, আর আর্জেন্টিনা নেইমারকে। উত্তরটা পেতে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। মেসির পায়ে বল গেলেই তিনজন ব্রাজিলিয়ান এসে ঘিরে ধরেছেন মেসিকে। কৌশলটা বেশ কাজেও দিয়েছে ব্রাজিলের। মেসি সেভাবে আলো ছড়াতে পারেননি।
নেইমারকে আটকানোর ক্ষেত্রে আর্জেন্টিনা ধরেছে ভিন্ন পথ। টুর্নামেন্টে ব্রাজিলের মিডফিল্ডে সৃষ্টিশীলতার জোগান দিয়েছেন লুকাস পাকেতা, নেইমারের সঙ্গে মাঝমাঠের সম্পর্কও তৈরি করেছেন তিনিই। আর্জেন্টিনা আজ তাই নেইমারের পেছনে দু-তিনজনকে না রেখে পাকেতা-নেইমারের সংযোগটা ছিন্ন ক্রার কৌশলে খেলেছে। দ্বিতীয়ার্ধে মিডফিল্ডার ফ্রেডের বদলে স্ট্রাইকার রবার্তো ফিরমিনো নামার আগে সে কৌশলে ১০০-তে ১০০ পেয়েছে আর্জেন্টিনা।
প্রথমার্ধে কোনো সুযোগই তৈরি করতে না পারা ব্রাজিলের আক্রমণের ধার বাড়ে দ্বিতীয়ার্ধে ফিরমিনো নামার পর। নেইমার এ স্ময়ে দারুণ খেলেছেন। বারবার সুযোগ তৈরি করেছেন, কিন্তু সেগুলো কাজে লাগাতে পারেননি কেউ! ৫২ মিনিটে একবার বল জালেও জড়ায় ব্রাজিল, কিন্তু রিচার্লিসনের সেই গোল বাতিল হয় অফসাইডে। তার দুমিনিট পরই রিচার্লিসনেরই দারুণ শট বাজপাখির ক্ষিপ্রতায় আটকে দেন এই টুর্নামেন্ট দিয়ে আর্জেন্টিনার ইতিহাসে ঠাঁই করে নেওয়া গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ।
দ্বিতীয়ার্ধে গোলের খোঁজে ব্রাজিল আরও আক্রমণাত্মক হয়েছে। ফিরমিনোর পর একে একে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, গাব্রিয়েল বারবোসাকেও নামিয়েছেন তিতে। নেইমার আর রিচার্লিসন তো ছিলেনই! বারবোসা নেমে আর্জেন্টিনাকে ভুগিয়েছেন। একবার পেনাল্টির দাবিও তুলেছেন, যদিও তা ধোপে টেকার মতোই ছিল না। টেকেওনি। শেষদিকে ব্রাজিলের আক্রমণ জোর পেয়েছে, যদিও সেসব আক্রমণে পরিকল্পনার ছাপের চেয়ে মরিয়া ভাব বেশি ছিল।
ব্রাজিলের আক্রমণাত্মক বদলির বিপরীতে মাঝমাঠ আর রক্ষণকে শক্তিশালী করা আর্জেন্টিনা শেষ পর্যন্ত ঝাঁঝটা সয়ে গেছে। পাল্টা আক্রমণে বরং আরও পরিষ্কার সুযোগ তৈরি করেছে। ৮৯ মিনিটে মেসির নেতৃত্বে গড়ে ওঠা পাল্টা আক্রমণটাতে শেষ টানতে ব্যর্থ মেসি নিজেই। দি পলের দারুণ থ্রু ধরে ব্রাজিল গোলকিপারকে একা পেয়ে গিয়েছিলেন মেসি, কিন্তু শট ঠিকঠাক নিতে পারেননি।
ব্যর্থতাটা শেষ পর্যন্ত আর কাঁদায়নি মেসিকে। মেসি কেঁদেছেন ঠিকই, কিন্তু সে কান্না ব্যর্থতার নয়। এর চেয়ে সুখের কান্না মেসি সম্ভবত ফুটবল মাঠে আর কখনো কাঁদেননি! সূত্র: প্রথম আলো
ফাইল ছবি: ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ
বাংলাদেশি অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের উল্টো ঝুলিয়ে রাখার হুমকি দিলেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। শুক্রবার দেশটির ঝাড়খণ্ড রাজ্যে বিজেপির আয়োজিত নির্বাচনী এক অনুষ্ঠানে এই হুমকি দেন তিনি।
অমিত শাহ বলেছেন, ঝাড়খণ্ডে বিজেপি সরকার গঠন করতে পারলে প্রত্যেক বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে খুঁজে বের করে করে উল্টো ঝুলিয়ে রাখা হবে।
প্রদেশের সাহেবগঞ্জ জেলায় পরিবর্তন যাত্রা নামের এক পদযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে অমিত শাহ বলেন, রাজ্যের প্রত্যেকটি গ্রামে গ্রামে আগামী ২ অক্টোবর পর্যন্ত পরিবর্তন যাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। এই পদযাত্রার মাধ্যমে পরিবর্তনের বার্তা দেওয়া হবে।
দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় এই রাজ্যে বিজেপিকে সরকার গঠনে সহায়তা করার জন্য জনতার প্রতি আহ্বান জানান অমিত শাহ। এ সময় তিনি বাংলাদেশি অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দেন।
ঝাড়খণ্ডের সাঁওতাল পরগণা জেলায় উপজাতি জনগোষ্ঠীর লোকজনের সংখ্যা কমে যাওয়া এবং বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা বেড়ে যাওয়া সম্পর্কে অতীতে বিজেপির বিভিন্ন নেতার করা মন্তব্যের সঙ্গে সুর মিলান তিনি।
অমিত শাহ বলেছেন, এই জমি আদিবাসীদের। কিন্তু এখানে অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। আদিবাসীদের সংখ্যা ৪৪ শতাংশ থেকে কমে বর্তমানে ২৮ শতাংশে নেমে এসেছে। অনুপ্রবেশকারীরা জেএমএম, কংগ্রেস এবং আরজেডির ভোট ব্যাংক হওয়ায় এখানকার সরকার জনকল্যাণের পরিবর্তে অনুপ্রবেশকারীদের কল্যাণে নিযুক্ত রয়েছে।
রাজ্যের পাকুর জেলায় ‘হিন্দুদের ঝাড়খণ্ড ছাড়তে হবে’ স্লোগান দিতেও শুনেছেন বলে অভিযোগ করেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। একই সঙ্গে হেমন্ত সরেন নেতৃত্বাধীন ঝাড়খণ্ডের জোট সরকারকে ভারতের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, হেমন্তের সরকার দুর্নীতি ছাড়া কিছুই করছে না। এই সরকারকে তিনি ভারতের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার বলে অভিহিত করেন। সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ