a
ফাইল ছবি
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অণুবিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল বলেছেন, করোনা আক্রান্তের পর শ্বাসকষ্ট শুরু হলে চিকিৎসা নিতে হবে। ডেল্টার চিকিৎসার মতো ওষুধ বিশ্ববাজারে আছে। এছাড়া জিংকের সমন্বয়ে তৈরি ভিটামিন-সি গ্রহণের মাধ্যমে ডেল্টা ধরন প্রতিরোধ সম্ভব। সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও এ ধরনের ভিটামিন উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে অনুমোদন দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
শনিবার দুপুরে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল আয়োজিত এক ওয়েবিনারে তিনি এসব তথ্য জানান।
ড. বিজন কুমার শীল বলেন, ডেল্টা ধরনের ভয়াবহতার জন্য অন্যান্য মিউটেশনের (পর্যায়ক্রমে রূপান্তর) সঙ্গে টি-১৯আর (T19R) মিউটেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। নিয়মিত মাস্ক পরিধান এবং ভ্যাকসিন নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, ডেল্টা ধরনের সঙ্গে ফ্লু ভাইরাসের যথেষ্ট মিল রয়েছে। এটি খুব দ্রুত ছড়ায়। ফলে পরিবারের কেউ আক্রান্ত হলে বাকি সবাই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ধরনে কেউ আক্রান্ত হলে, তার আশপাশের সবাইকে পরীক্ষা করতে হবে। হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় অবশ্যই কাপড় বা টিস্যু ব্যবহার করতে হবে।
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক লায়লা পারভীন বানুর সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. বিজন কুমার শীল। এতে আরও বক্তব্য দেন- গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
তিনি বলেন, টিকার একটি ডোজ তৈরি করতে আধ ডলারের বেশি খরচ হয় না। এর জন্য ন্যূনতম ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। দেশে যারা ব্যবসায়ী আছেন, পরীমনির জন্য যারা বিনিয়োগ করে থাকেন, তারা ইচ্ছা করলে সাত দিনের মধ্যে ৫০ কোটি টাকা জোগার করে দিতে পারেন। এতদিন যারা দেশ শোষণ করেছেন, তারা ভালো একটা কাজ করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের টার্গেট হওয়া উচিত ছয় মাসের মধ্যে নিজস্ব টিকা তৈরি করা। কিউবা যেমন টিকা তৈরি করেছে, ইরান যেমন টিকা তৈরি করেছে, তেমনি বাংলাদেশ যদি চায় তাহলে রাশিয়া সহযোগিতা করবে। আমরাও কিউবার মতো টিকা তৈরি করতে পারব, তখন এর দাম পড়বে আধ ডলার।
ওয়েবিনারে আরও বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক একে আজাদ চৌধুরী, পিএইচসির সাবেক পরিচালক অধ্যাপক জাকির হোসেন, বিএসএমএমইউর ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েদুর রহমান, আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মোস্তাক হোসেন, প্রধান স্বাস্থ্য বাতায়ন ডা. নিজাম উদ্দীন আহমেদ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ড. এস. তাসাদ্দেক আহমেদ, উপাধ্যক্ষ ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার, গণস্বাস্থ্যের গণমাধ্যম উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা প্রমুখ। সূত্র: যুগান্তর
করোনাভাইরাস
গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ১১২ জন। এ নিয়ে করোনাভাইরাসে দেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১৪ হাজার ৩৮৮ জন।
এদিকে, গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে শনাক্ত হয়েছে ৭৬৬৬ জন। এ নিয়ে দেশে মোট করোনাভাইরাসে শনাক্তের সংখ্যা ৯ লাখ ৪ হাজার ৪৩৬ জন।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে আরও জানানো হয়, গত ১ দিনে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ৪০২৭ জন করোনারোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ১১ হাজার ৭০০ জন।
ছবি সংগৃহীত
ভারত আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। আমরা সবাই জানি, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারত আমাদের সর্বাত্মক সহায়তা দিয়েছিল। এটি একটি ঐতিহাসিক সত্য যে, তাদের প্রত্যক্ষ সমর্থনের কারণে মাত্র নয় মাসের মধ্যেই আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। অনেকেই মনে করেন, ভারত আমাদের পাশে না থাকলে বাংলাদেশ কখনোই সৃষ্টি হতো না।
তবে আমরা কি কখনো ভেবেছি, ভারত কেন আমাদের সাহায্য করেছিল? অনেকেই বলবেন, ভারত একটি দুর্বল পাকিস্তান দেখতে চেয়েছিল। যখন সুযোগ তাদের হাতে আসে, তখন তারা তা লুফে নিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেনি। এটি ভারতীয় স্বার্থের একটি সাধারণ উপলব্ধি। যখন মুক্তিযোদ্ধারা ভালো অবস্থানে ছিল, তখন ভারত পাকিস্তানের সাথে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং কয়েক দিনের মধ্যে বিজয় অর্জন করে। বলা হয়ে থাকে, ভারত আমাদের বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে সেটিকে তাদের বিজয় হিসেবে ঘোষণা করেছিল। এটি আমাদের ভাগ্যের নির্মম পরিহাস।
১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর লে. জেনারেল নিয়াজি ভারতীয় সেনাবাহিনীর লে. জেনারেল অরোরার কাছে আত্মসমর্পণের চুক্তিতে সই করেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়। কিন্তু বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল ওসমানীকে আত্মসমর্পণের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। বলা হয়ে থাকে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ভারতীয় বিজয় দেখানোর জন্য বাংলাদেশকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
গত ৫৩ বছর ধরে ভারতীয় মিডিয়া, বুদ্ধিজীবী এবং ভারত সরকার এই ঘটনাকে তাদের ইতিহাসের এক মহান বিজয় হিসেবে তুলে ধরেছে। কিন্তু আমরা একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে কখনোই এই দাবির বিরোধিতা করতে পারিনি। বরং, আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ করে নিজেদের জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়েও তাদের সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করেছি।
শুধুমাত্র জিয়াউর রহমানের সময়েই বাংলাদেশ সফলভাবে ভারতীয় আধিপত্যবাদী রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছিল। তবে এজন্য তাকে নিজের জীবন দিতে হয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী এবং চীনপন্থী কিছু রাজনৈতিক দল, যেমন ভাসানীর ন্যাপ, ভারতীয় সমর্থনের আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতন ছিল।
ভারত ১৯৪৭ সালের বিভাজন মেনে নিতে পারেনি এবং পাকিস্তানের জন্মের প্রথম দিন থেকেই তারা এর বিরুদ্ধে কাজ করে এসেছে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, যার সত্যতা শেখ মুজিব স্বাধীনতার পরে স্বীকার করেছিলেন, এর একটি স্পষ্ট প্রমাণ।
ভারত পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ভালো বন্ধু হিসেবে ভান করেছিল শুধুমাত্র পাকিস্তানকে ভেঙে ফেলার এবং একটি উপনিবেশ রাষ্ট্র সৃষ্টি করার জন্য। তাদের উদ্দেশ্য ছিল এক সময়ে এটি ভারতীয় ইউনিয়নের সাথে একীভূত করা।
আজ এটি আরও স্পষ্ট হয়ে গেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্য থেকে। তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন, ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত এক ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করেছিল। মোদি আরও বলেন, এটি ছিল ভারতের যুদ্ধ, যেখানে ভারতীয় সেনারা সাহসিকতা এবং বীরত্ব প্রদর্শন করেছিল এবং ভারতের জন্য এক গৌরবময় বিজয় এনেছিল। এটি বাংলাদেশের প্রতি ভারতের প্রকৃত অবস্থান প্রকাশ করে।
সম্প্রতি জুলাই-আগস্ট বিপ্লব ২০২৪-এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ভারতীয় আধিপত্য থেকে বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু ভারত এই পরিবর্তন মেনে নিতে পারেনি এবং বাংলাদেশকে পুনরায় তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে মরিয়া। ভবিষ্যতে তারা বিভিন্ন কার্ড দেখাতে পারে, বিশেষত সংখ্যালঘু কার্ড, খেলার চেষ্টা করবে। এমনো হতে পারে যে কোন একটি ইস্যু ধরে বাংলাদেশের একটি অংশ দাবি করে আক্রমণ করতে পারে।
যদি বাংলাদেশের জনগণ ভারতের স্বার্থের এই সরল সমীকরণটি বুঝতে ব্যর্থ হয়, তবে তা হবে আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে জাতীয়তাবাদী শক্তির পতাকার নিচে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের অবশ্যই ড. ইউনুস সরকারকে সফলতার সাথে কাজ করার জন্য সহযোগিতা করে যেতে হবে। বর্তমানের অর্ন্তবর্তী সরকারকেও সব দল ও মতকে বিবেচনা রেখে সবাইকে একসাথে ঐক্যমতের ভিত্তিতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। নির্বাচনের পরও রাজনৈতিক সরকারগুলোকেও ঐক্যমতের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করলে কোন বহি:শত্রু এদেশে হুমকি হিসেবে দাঁড়াতে পারবেনা।
আমাদের সামনে যে সুযোগ এসেছে, এটি কাজে লাগাতে হবে। আর আমরা যদি এসব সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হই, তাহলে সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের আকাশে কালো মেঘ ঘনিয়ে আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
লেখক: সম্পাদক, মিলিটারি হিস্ট্রি জার্নাল এবং আইন ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক।