a
ফাইল ছবি
মামলার যে কোনো রায় বা আদেশ প্রকাশ্য আদালতে ঘোষণা করতে অধস্তন আদালতের বিচারকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের এই নির্দেশনা মেনে চলতে বিচারকদের প্রতি সার্কুলার জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
গতকাল বুধবার এই সার্কুলার জারি করা হয়। এতে বলা হয়, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে নিম্ন আদালতসমূহের বিচারকের জামিনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্বর্তী আদেশ ও রায় প্রকাশ্য আদালতে মামলার সংশ্লিষ্ট পক্ষগণ বা তাদের আইনজীবীদের উপস্থিতিতে ঘোষণার নির্দেশ দেওয়া হলো।
উল্লেখ্য, ‘দুদক বনাম পার্থ গোপাল বনিক ও অন্য’ মামলার রায়ে হাইকোর্ট বলেছে, ৮০ লাখ টাকা আত্মসাত্ ও পাচারের মামলায় সাবেক ডিআইজি প্রিজন্স পার্থ গোপাল বনিকের জামিন আবেদন শুনানির পর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক মো. ইকবাল হোসেন তাত্ক্ষণিক ভাবে প্রকাশ্য আদালতে কোনো আদেশ প্রদান করেননি, যা সংশ্লিষ্ট আইনজীবীগণ কর্তৃক স্বীকৃত।
আদেশটি অতিগোপনে কারা কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়, যা সংশ্লিষ্ট পক্ষের আইনজীবীরাও জ্ঞাত ছিলেন না। এ ধরনের ঘটনা হতাশা ও লজ্জাজনক এবং আইনের সাথে সংগতিহীন।
সংশ্লিষ্ট আইনসমূহে অর্থাত্ ফৌজদারি কার্য বিধির ধারা ৩৬৬ এবং ক্রিমিনাল রুলস অ্যান্ড অর্ডাস (প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রসিকিউটর অব সাব-অর্ডিনেট কোর্টস), ২০০৯ রুল ১৭৯(২)-এ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে ‘রায়’ প্রকাশ্য আদালতে সংশ্লিষ্ট পক্ষদের উপস্থিতিতে প্রদান করতে হবে।
যদিও আইন ও বিধিতে ‘রায়’ শব্দটি উল্লেখ রয়েছে, কিন্তু আইন ও বিধির মর্ম হলো গুরুত্বপূর্ণ যে কোনো বিষয়ে আদালতের আদেশ/সিদ্ধান্ত প্রকাশ্য আদালতে প্রদান করতে হবে। কিন্তু এই মামলায় আইনের ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের দ্বৈত বেঞ্চ চলতি মাসে এই রায় দেন। এই রায়ের নির্দেশনা মেনে চলার জন্য অধস্তন আদালতের সকল পর্যায়ের বিচারকদের প্রতি সার্কুলার জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট। সূত্র: ইত্তেফাক
ছবি:মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ ইউনিটের (মানবিক শাখা) ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দেয়ার মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. আকতারুল ইসলামের বিরুদ্ধে রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) আসামিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক নাহিদুল ইসলাম। এসময় বিচারক ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে আসামি আকতারুল বলেন, 'আমি ছোট ভাইকে পরীক্ষা দিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে এসেছিলাম। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে আসতে দেরি হওয়ায় ছোট ভাইকে ঢুকাতে গেলে গেট থেকে ধরে নিয়ে যায় প্রক্টর অফিস। তারপর তারা মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়।'
পরে বিচারক এজাহার পড়ে আসামিকে বলেন, 'আপনি মিথ্যা বলছেন কেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডীন মামলাটি করেছেন। পরীক্ষা দেয়ার পর আপনাকে সন্দেহভাজন হিসেবে ধরে নেয়া হয় বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।' এসময় মিথ্যা বলার বিষয়টি স্বীকার করেন আসামির আইনজীবী ঢাকা বারের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজুর রহমান মন্টু। তবে এ ঘটনার সঙ্গে আর কেউ জড়িত নেই, তাই রিমান্ড নেয়ার প্রয়োজন নেই বলেন এই আইনজীবী। পরে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদ রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নাহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আসামি বড় চক্রের সদস্য। তাকে রিমান্ডে নিলে বাকি আসামিদের ধরা সহজ হতো। তবে আমাদের তদন্ত চলবে। প্রয়োজনে আবার রিমান্ড আবেদন করা হবে বলেন তিনি।
গত ১৩ আগস্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদদীন বাদী হয়ে আসামি আকতারুলসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ মামলার বাকি আসামিরা হলেন- মূলহোতা মো. রাব্বি ও মূল শিক্ষার্থী সিজান মাহফুজ।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১৩ আগস্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছভুক্ত বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ পরীক্ষায় অংশ নেয়া ছাত্র-ছাত্রীদের প্রবেশপত্রসহ অন্যান্য কাগজপত্র যাচাই করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মো. মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবনের একটি কক্ষের পরীক্ষায় অংশ নেয়া পরিক্ষার্থীদের প্রবেশপত্রসহ অন্যান্য কাগজপত্র যাচাই করছিলেন।
এসময় আকতারুল ইসলাম নামে এক পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র ও সংযুক্ত ছবির সঙ্গে তার চেহারার মিল না থাকার বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আটক শিক্ষার্থী জানায়, পলাতক আসামি সিজান মাহফুজ ও মূলহোতা রাব্বির পরামর্শ, প্ররোচনায় ও সহযোগীতায় এক লাখ ৪০ হাজার টাকার চুক্তিতে পরীক্ষায় অংশ নেয় বলে তিনি স্বীকার করেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড.মোঃ ইমদাদুল হক বলেন, আমরা আজকে অবগত হলাম রিমান্ড না মঞ্জুর হয়েছে আবার এটাকে ডিফেন্ড করবে যাতে রিমান্ডে নেয়া ও এই চক্রকে ধরার জন্য কাজ চলছে, যদি পুলিশ প্রশাসন ব্যর্থ হয় তাহলে মামলা সিআইডির হাতে হস্তান্তর করা হবে।
ফাইল ছবি
জীবনে কখনো ভাবিনি যে ছোট বেলার স্বপ্নের কোম্পানি গুগল থেকে আমার ইন্টারভিউ এর জন্য অফার আসবে আর আমাকে তা ফিরিয়ে দিতে হবে। তার পিছে কারনও ছিলো অবশ্য, সেটা পরেই বলি।
আমার শৈশব কাটে সাতক্ষীরাতে। বাবা মা ছিলেন চাকরিজীবি। স্কুল জীবনে কখনো তেমন আহামরি ভালো স্টুডেন্ট ছিলাম না। তৃতীয় শ্রেনীতে যখন সাতক্ষীরা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ হয় তখন ক্লাসের শেষ ছেলেটি ছিলাম আমি, রোল ছিলো ৫৭। এবং পরের শ্রেনীগুলোতেও এই অবস্থার তেমন উন্নতি হয় নাই।
একটি মধ্যবিত্ত একান্নবর্তী পরিবারের সব থেকে বড় অভিবাবক হওয়ার কারনে বাবা-মার অনেক দায়িত্ব ছিলো, যে কারনে আমার প্রতি কখনো এক্সপেক্টেশন রাখতেন না। আমার যেদিকে ইচ্ছে ওইদিকেই লাইফ গোল সেট করার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। যেই বিষয় আমার ভালো লাগতো, কেবল ওই বিষয়টাই বেশি পড়তাম সবসময়। যে কারনে একটা বিষয়ে ভালো ফলাফল আসলেও বাকিগুলোতে টেনেটুনে কেবল থার্ড টার্ম পরীক্ষায় পাস করেও পরের ক্লাসে উঠছি এমন অনেকবার ঘটেছে। ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞান এবং টেকনোলজির প্রতি আগ্রহ আমার খুব বেশি ছিল। এখনও মনে আছে ক্লাস সিক্সে একবার একটি টেলিফোন বানিয়েছিলাম নিজের পেট প্রোজেক্ট হিসেবে। এইভাবেই কাটে স্কুল জীবন।
কলেজে উঠে প্রথম কম্পিউটার পাই। কলেজ প্রথম বর্ষে বন্ধু শুভর কাছ থেকে পাওয়া “নিটনের সি” বইটি দেখে কিছু বেসিক প্রোগ্রাম লিখছিলাম। তখন থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন বুনতে শুরু করি। এবং মাইক্রোসফট, গুগলের মত কোম্পানিগুলোতে কোটি মানুষের জীবন সহজ করার সফটওয়্যার বানানোর দিবাস্বপ্ন দেখতে থাকতাম।
কলেজ শেষে এইচএসসি-তে রেজাল্ট তেমন ভাল হল না। বুয়েটের ফর্ম তুলতে পারলাম না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলেও মা জোর করলে রুয়েট, কুয়েটের ফর্ম তুলি। ভাগ্যক্রমে রুয়েটে স্বপ্নের ডিপার্টমেন্ট কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ার সুযোগ পেলাম। রুয়েট জীবন নিয়ে গল্প বলতে গেলে কয়েক রাত পার করে দেয়া যাবে। ডিপার্টমেন্টে আমি খুবই ভাল একটা ফ্রেন্ড সার্কেল পাই, যেখানে বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহী বন্ধু পাই।
পাশাপাশি হল লাইফটাও ইঞ্জয় করতে থাকি। রুয়েট লাইফটা জুনিয়র, সিনিয়র, ক্লাসমেটদের জন্যই মূলত আনন্দমুখর ছিলো। সেলিম হল, হামিদ হল, টিনশেড হলে থাকার মুহূর্তগুলো ছিল অবিস্মরণীয়। বিশেষ করে সন্ধ্যায় কারেন্ট চলে গেলেই টিনশেড হলের মাঝে গোল চত্বরে বসে সবাই মিলে বসে গান, মাঝে মধ্যে বাস্কেটবল গ্রাউন্ডে গিটার বাজানো, রাতে ১৫-২০ জন মিলে রাজশাহীর গলিতে গলিতে ঘুরে গান গাওয়া আজও মিস করি।
রুয়েট এসে সিনিয়রদের কাছ থেকে কমপিটেটিভ প্রোগ্রামিং-এর সাথে পরিচয় ঘটে। প্রোগ্রামিং করতে গিয়ে খেয়াল করলাম গণিতে আমার ব্যাসিক খুবই দুর্বল। সে সময় ক্লাস ৯-১০ এর গণিত বই থেকে শুরু করলাম। রুয়েটে আমাদের প্রোগ্রামিং এর জন্য তেমন সুবিধা ছিলনা। একটা অ্যালগরিদম শিখতে দেখা যেত ২-৩ সপ্তাহ লাগতো। এরপর আমরা একজন শিখে আরেকজনকে সেটা শেখাতাম। সে সময়টা প্রোগ্রামিং শেখার জন্য বেশ কষ্ট করতে হয়েছিল। অনেকবার এমনও হয়েছে যে নিজের টাকা দিয়ে প্রোগ্রামিং কনটেস্ট করতে গেছি আমরা যেখানে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাকি সব টীমগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই অর্থায়ন করে কনটেস্টে পাঠানো হতো।
মনে পড়ে আমাদের অ্যালগরিদম চর্চা করার কোন জায়গা না থাকায় রুয়েট প্লে-গ্রাউন্ডে বসে জুনিয়রদের সাথে হোয়াইট বোর্ড নিয়ে এক সাথে আলোচনা করার কথা। অনেক প্রচেষ্টার পর ফোর্থ ইয়ারে এসে আমাদের সবার এত বছরের চেষ্টা দেখে হেড স্যার আমাদের একটা ল্যাব দেন চর্চা চালিয়ে যাওয়ার জন্য। তিনি ল্যাবের নাম দেন এনালাইটিক্যাল প্রোগ্রামিং ল্যাব। এটা হয়ে উঠেছিলো আমাদের প্রোগ্রামিং হাব।
রাজশাহীর গরমে মশার কামড় খেয়ে এই ল্যাবে জুনিয়রদের সাথে সারা রাত জেগে প্রোগ্রামিং করে ভোরবেলা তালাইমারী যেয়ে এক কাপ চা খাওয়ার স্মৃতিগুলো মনে পড়লে এখনও মুখের কোণে একটা হাসি চলে আসে। এই ল্যাবেই আমরা অনেক রকম অ্যাক্টিভিটি করতাম, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো “জ্ঞান-jam” নামক কনটেস্টটি। প্রতিবছর বিদায়ী ব্যাচের দায়িত্ব থাকে বিদায়ের আগে একটা “জ্ঞান-jam” আয়োজন করা। ভাবলেই খুবই গর্ব হয় যে সেই সংষ্কৃতিটা জুনিয়ররা এখনও চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রোগ্রামিং এর পাশাপাশি আমরা RUET জীবনটা আরও মজার করার জন্য বেশ কয়েকটি সংগঠন বানাই সবাই মিলেই। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো Science and Astronomy Society of RUET (ASSR), চিরকুমার সংঘ, সমানুপাতিক, প্রচেষ্টা সহ বেশ কিছু সংগঠন।
আমি রুয়েটে এসে নিজস্ব "Reason to Live" নামের একটি লিস্ট তৈরি করি। কেও আমাকে কোন কিছু পারবো না এমন কিছু বললে আমি সেটা লিখে রাখতাম। যদি কখনও ভুল প্রমান করতে পারি এটা ভেবে। আলহামদুলিল্লাহ বেশ অনেকগুলোই ভুল প্রমান করতে পেরেছি। ফোর্থ ইয়ারে উঠে একবার একটা কনটেস্টে একটা প্রবলেমও সল্ভ করতে পারল না আমাদের টিম, আমরা খুবই লজ্জায় পড়ে যাই।
ডিপার্টমেন্টের এক শিক্ষিকা ক্লাসে সবার সামনে অপমান করে বলছিলেন, “রুয়েট থেকে কখনও কেও গুগল মাইক্রোসফটে চাকরি পাবে না। তাই পড়াশোনায় মনোযোগ দাও”। কথাটা খুবই গাঁয়ে লেগেছিলো। সেটা শোনার পর আমার এক বন্ধু রবিকে বলেছিলাম শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করবো আমি মাইক্রোসফট বা গুগলে যাওয়ার জন্য।
ক্যারিয়ারের শুরুটা হয় শেষ সেমিস্টার শুরুর ঠিক এক সপ্তাহ আগে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জব ফেয়ারে সেলিস রকিং সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকরি পাই। জীবনের মোড়টা ঘুরে সুইডেনের অ্যাডফেনিক্স এবি নামক স্টার্টআপে চাকরির মাধ্যমে। প্রথমে দেশ ছাড়া লাগবে ভেবে রিজেক্ট করার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু সবার পরামর্শে এক্সেপ্ট করি। একটু ভ্রমণপিপাসু হওয়ায় অস্ট্রেলিয়া এবং সিঙ্গাপুরে চাকরি অফার আসলেও ইউরোপকেই বেছে নিয়েছিলাম। এরপর সুইডেনের সনামধন্য ন্যাসডাক কোম্পানিতে চাকরি পাই। এর মাঝেই ২৩ মার্চ,২০১৮ তে ডাক আসে স্বপ্নের কোম্পানি থেকে। ফোনে যখন বলল মাইক্রোসফট কোম্পানি থেকে বলছেন, আমি ভেবেছি আমি হয়তো ভুল শুনেছি। বিশ্বাস হচ্ছিল না, উত্তেজনায় জিজ্ঞাস করে বসি,"তুমি সিরিয়াসলি মাইক্রোসফট থেকে বলছো?" চাকরি পাওয়ার খবর জানাতে ফোন দেই মা-বাবাকে। মা-বাবাকে চাকরির খবর দেয়ার পর খেয়াল করলাম আমার চোখে পানি চলে এসেছে। জীবনের এতো সময় পর আমি প্রথম বুঝতে পারলাম এটাই আনন্দের অশ্রু। অবশেষে ডেনমার্কে এসে জয়েন করি স্বপ্নের কোম্পানিতে। দিনটি ছিল ঈদের দিন। আমার জীবনের বেস্ট ঈদ। ইনফ্যাক্ট বেস্ট মোমেন্ট।
এবার আসি কেন আর একটা স্বপ্নের কোম্পানির ইনটারভিউ অফার আমাকে রিজেক্ট করতে হলো। মাইক্রোসফটে জব হওয়ার ঠিক তিন মাসের মধ্যেই গুগল থেকেও ইন্টারভিউ-এর ডাক আসে। কিন্তু কেবলই মাইক্রোসফটে জয়েন করার কারণে গুগলে আর ইন্টারভিউ দেয়া হয়নি। রিক্রুটারের সাথে এখনও মাঝে মধ্যে কনট্যাক্ট হলেও মাইক্রোসফট ছাড়ার মন এখনও হয় নাই।
আমির খানের থ্রি ইডিয়টস মুভিটা আমার খুবই প্রিয় একটা মুভি। এই মুভিতে যেমনটা দেখেছিলাম, আমি খুব করে চাইতাম এমন কিছু যেন আমার সাথেও হয়। এখন নিজের পছন্দের কাজ করছি, পৃথিবীর অন্যতম সেরা সফটওয়্যার কোম্পানিতে। বিকাল ৫টা পর্যন্ত অফিস থাকলেও অনেক সময়েই আমি রাত ৯টা পর্যন্ত অফিস করি। আমার কাজ আমার এতো প্রিয় বলেই হয়ত টের পাইনা সময় কখন চলে যাচ্ছে। বছর খানেক আগে ডেনমার্কে একটি শিক্ষক সেমিনার আয়োজন করে মাইক্রোসফট যেখানে আমাকে একটা টক দেয়া লাগছিলো। আমি সেখানে গিয়ে রুয়েটে আমার অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করি। কিভাবে রুয়েটে RAPL, ASSR এর মত শিক্ষণীয় সংগঠনগুলো তৈরি করেছিলাম আমরা। সবাই বেশ মুগ্ধ হয়ে আমাদের কাহিনীগুলো শুনেছিলেন।
অন্য সবার মতই রুয়েটে থাকা অবস্থায় অনেক সময় নিজের মধ্যে হতাশা কাজ করত। মনে হত, যদি আশে পাশে কোন নিদর্শন থাকতো যাকে দেখলে মনে হতো যে আমরাও পারবো। সে সময়ে সামাদ ভাই, মুফতি ভাই, রিফাত ভাই, মেরিন ভাই সহ বেশ অনেকে ছিলেন যাদের অনুপ্রেরণায় নিজেকে অনেক বড় জায়গায় কল্পনা করতে পারতাম। এক-একজন মানুষের কাছে সফলতার মাপকাঠি এক-একরকম। প্রতিটা মানুষ তার নিজের মত করে সফল হয়। আমার মতে আমার মত below average একটা ছাত্রের মাইক্রোসফটে আসাকে যদি সত্যিই সফলতা মনে হয়ে থাকে, তাহলে আমি বলবো রুয়েটে প্রতিটা স্টুডেন্ট এর এই পটেনশিয়াল আছে।
আবু আসিফ খান চৌধুরী: সিএসসি, ১০ম ব্যাচ, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার, মাইক্রোসফট ডেভেলপমেন্ট কোপেনহেগেন