a
সংগৃহীত ছবি
মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে সারাদেশে ৭দিনের কঠোর বিধিনিষেধ ঘোষণা করেছিল সরকার। এরপর সেই বিধিনিষেধের সময়সীমা আরো ৭দিন বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জানি করা হয়।
চলমান বিধিনিষেধের ৮ম দিনে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়ায় রাজধানীতে ১ হাজার ৭৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এ বিষয়ে ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৩১৮ জনকে ১৬ লাখ ৭৯০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ ৯৩৭টি গাড়িকে ২১ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছে।
প্রসঙ্গত, সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ অমান্য করে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়ার অভিযোগে গত সাতদিনে ডিএমপি ৪ হাজার ১৮৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
ফাইল ছবি
বিএনপির গণমিছিল প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি আছে। আমাদের প্রস্তুতি তো বড় কথা নয়, তাদের আমরা অনুমতি দিলাম, তাদের দায়িত্বটা বড়।’
‘কথায় কথায় তাদের সঙ্গে অ্যাকশন নেওয়া এসব করতে চাই না। আমরা সবাই দায়িত্বশীল। তাদের দায়িত্বের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা রাখতে চাই। তারপরও যদি তারা দায়িত্ব পালন করতে না পারে, তাহলে তার দায়-দায়িত্ব তাদের বহন করতে হবে।’
আজ শুক্রবার এক প্রশ্নের জবাবে সংবাদমাধ্যমকে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি কী? আমাদের পুলিশ থাকবে। তাদের অনুমতি দিয়েছি শর্তসাপেক্ষে। শর্ত ভঙ্গ করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। ভবিষ্যতে যদি তারা বারবার শর্ত ভঙ্গ করে, তার দায়-দায়িত্ব তাদের বহন করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য আমাদের যতটুকু কঠোর হওয়া দরকার, আমরা ততটুকু কঠোর হব।’
খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আজ শুক্রবার বিকাল যুগপৎভাবে ঢাকায় গণমিছিল করছে বিএনপি। সূত্র: বিএনপি
ছবি সংগৃহীত
আইনের শাসন যে কোনো সমাজে টেকসই শান্তি ও উন্নতির জন্য অত্যন্ত অপরিহার্য ও গুরুত্বপূর্ণ। আইন সবকিছুর ঊর্ধ্বে এবং আইনের শাসনের মূল উদ্দেশ্য হলো দেশে আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করা ও ন্যায়বিচারের মাধ্যমে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। সুশাসন ও সৎ বিচারব্যবস্থা ছাড়া আইনের শাসন বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি একটি পূর্বশর্ত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ব্রিটিশ শাসনকাল ছাড়া উপমহাদেশের ইতিহাসে আমরা কখনো প্রকৃত অর্থে আইনের শাসনের অভিজ্ঞতা পাইনি।
আজকের বিশ্বে আইনের শাসনকে সমাজ শাসনের একটি কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিখ্যাত ব্রিটিশ আইনজ্ঞ এ. ভি. ডাইসি ‘আইনের শাসন’-এর প্রবক্তা। তিনি সমাজে শৃঙ্খলা ও টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আইনের গুরুত্বকে বিশেষভাবে তুলে ধরেছেন। আইনের শাসনের তিনটি মূলনীতি হলো—
১. আইনকে স্বেচ্ছাচারীভাবে ব্যবহার করা যাবে না।
২. প্রতিটি নাগরিক আইনের চোখে সমান।
৩. নাগরিকদের অধিকার সংবিধানে নিশ্চিত থাকতে হবে।
কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়, তার সামাজিক অবস্থান বা ক্ষমতা যাই হোক না কেন। "আপনি যত উচ্চ পদেই থাকুন না কেন, আইন আপনার ঊর্ধ্বে"—এই নীতিই আইনের শাসনের মূল আদর্শ।
স্বাধীন বিচারব্যবস্থা ও চ্যালেঞ্জসমূহ:
একটি স্বাধীন ও কার্যকর বিচারব্যবস্থা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অত্যন্ত জরুরি। তবে এটি বাস্তবায়ন করা কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ কাজ। যেহেতু পুরো বিষয়টি জটিল, তাই তড়িঘড়ি কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সুফল আসবে না। এ কাজে যথাযথ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের যুক্ত করতে হবে। প্রয়োজনে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিতেও কুণ্ঠাবোধ করা উচিত নয়, কারণ দক্ষ ও পেশাদার ব্যক্তিদের ছাড়া বিচারব্যবস্থার সংস্কার সম্ভব নয়।
একটি কার্যকর বিচারব্যবস্থা গঠনে নতুন বিচারকদের নির্বাচন, নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এটি একদিনের মধ্যে সম্ভব নয়, তবে দেরি না করে অবিলম্বে কাজ শুরু করা উচিত।
বর্তমান বিচারব্যবস্থার দুর্বলতা:
বর্তমান বিচারব্যবস্থা সমাজে প্রকৃত অর্থে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম নয়। এটি একটি ফ্যাসিবাদী সরকারকে সুবিধা দিতে গঠিত হয়েছে, জনগণের কল্যাণে নয়। তাই পুরো বিচারব্যবস্থা পুনর্গঠন করা প্রয়োজন। যদিও বিচারকগণ বিচারব্যবস্থার মূল চালিকাশক্তি, তবে আইনজীবীদের ভূমিকাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। বিচারব্যবস্থা শুধু বিচারকদের নিয়ে গঠিত নয়, আইনজীবীরাও এর অংশ। আইনজীবীদের মানুষের কল্যাণে কাজ করার মানসিকতা ও উৎসাহ সৃষ্টি করতে হবে।
আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার পুরোপুরি নির্ভর করে বিচারক ও আইনজীবীদের সততা ও পেশাদারিত্বের ওপর। যদি এই দুই সম্প্রদায়ের কোনো একটি দুর্নীতিগ্রস্ত হয় বা পেশাগতভাবে অযোগ্য হয়, তাহলে সমাজে আইনের শাসন কার্যকর করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
তদন্ত ও অপরাধ বিচার ব্যবস্থায় সংস্কার:
অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসনেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। অপরাধ তদন্ত কর্মকর্তাদের অবশ্যই সৎ, দক্ষ ও দায়িত্বশীল হতে হবে। অপরাধ দমন ও অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পুলিশের কার্যকর ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি।
এ ছাড়াও, সমাজের দায়িত্বও কম নয়। জনগণের সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। কীভাবে সাধারণ মানুষ এই সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সহযোগিতা করতে পারে, তা নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা জরুরি। নৈতিক শিক্ষার উন্নয়ন জনগণের চারিত্রিক পরিবর্তন আনতে পারে, যা এই লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
অর্থনৈতিক সংস্কার ও সামাজিক উন্নয়ন:
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—গরিব জনগণের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। অন্যথায় কোনো সংস্কারই টেকসই ফল আনবে না। বেশিরভাগ অপরাধ দারিদ্র্যের কারণে সংঘটিত হয়, তাই মানুষের জীবনমান উন্নয়নে জরুরি অর্থনৈতিক সংস্কার প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক যাকাত ব্যবস্থা গরিব মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে কার্যকর উপায় হতে পারে।
গণমাধ্যমের ভূমিকা:
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গণমাধ্যম যদি সঠিকভাবে কাজ করে, তাহলে বিচারব্যবস্থা সংস্কার সহজ হবে। তারা একদিকে সমাজকে সচেতন করতে পারে, অন্যদিকে বিচারব্যবস্থার পর্যবেক্ষক হিসেবেও কাজ করতে পারে।
আইনের শাসনকে একটি সামাজিক আন্দোলন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে এর গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অপরিহার্য, তবে শুধু বিচার বিভাগের স্বাধীনতা যথেষ্ট নয়। সমগ্র সমাজকে এই আন্দোলনে অংশ নিতে হবে, তবেই টেকসই শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
লেখক: অধ্যাপক কর্ণেল আকরাম
সম্পাদক, মিলিটারি হিস্টোরি জার্নাল