a নিজের অপকর্ম ঢাকতে ছাত্রদল নেতাকে ফাঁসানোর অভিযোগ
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫
https://www.msprotidin.com website logo

নিজের অপকর্ম ঢাকতে ছাত্রদল নেতাকে ফাঁসানোর অভিযোগ


অমৃতরায়, বিশেষ প্রতিনিধি, মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫, ০৩:৪৫
নিজের অপকর্ম ঢাকতে ছাত্রদল নেতাকে ফাঁসানোর অভিযোগ

ছবি: ‍মুক্তসংবাদ প্রতিদিন

 

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেলকে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, নিজের অবৈধ কর্মকাণ্ড আড়াল করতে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে হিমেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়েছে। হিমেল এই অভিযোগকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছেন এবং পুরো বিষয়টিকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

ওই চিকিৎসকের নাম মোশারফ হোসাইন। তিনি ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের প্রফেসর ও আইসিইউ-এর প্রধান এবং পুরান ঢাকার মিটফোর্ডে অবস্থিত মেডি এইড হাসপাতালের পরিচালক। ভুক্তভোগী ডাক্তার মোশারফ নিজেকে ড্যাবের সদস্য এ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বলে দাবি করেছেন।

অভিযোগের ব্যাপারে মেহেদী হাসান হিমেল জানান, ‘ডা. হারিস আমার মামা হন, তার সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক। আমাদের বাড়িও পাশাপাশি। আমার মামার সাথে অন্যায় হচ্ছে, এটা শোনার পর আমি ঘটনার খোঁজ নিতে গিয়েছিলাম। উভয়পক্ষের সাথে কথা বলেছি, সমাধানের জন্য দিন তারিখ ঠিক করা হয়েছে। তিনি আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির যেই অভিযোগ এনেছেন এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তিনি কারো চাপে পড়ে আমার রাজনৈতিক সুনাম নষ্ট করতে আমার বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছেন। তিনি নিজের অপকর্ম ঢাকতে আমার উপর দোষ চাপাচ্ছেন।’

ঘটনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে হিমেল জানান, তার মামা ডাক্তার হারিসসহ আরও দুইজন চিকিৎসক ২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর রাজধানীর মিটফোর্ড টাওয়ারের তৃতীয় তলা (বর্তমানে মেডিলাইফ হাসপাতাল) ল্যান্ডস্কেপ কোম্পানির কাছ থেকে ক্রয় করেন। পরবর্তীতে তারা উক্ত ফ্লোরটি মেডিলাইফ হাসপাতাল নামে ভাড়া দেন, যেখানে ডাক্তার মোশাররফও শেয়ারহোল্ডার হিসেবে যুক্ত হন।

এর পূর্বে, ডাক্তার হারিসসহ মোট ছয়জন চিকিৎসক ‘এভার হেলথ হাসপাতাল’ নামে একই ফ্লোরে একটি প্রাইভেট হাসপাতাল পরিচালনা করতেন। সেই সময়কার কিছু চিকিৎসা সরঞ্জামের যৌথ মালিকানা বিষয়টি পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয় এবং ডাক্তার মোশাররফ তার অংশের মালামাল বুঝে নেন।

কিন্তু ২০২৫ সালের ১ মার্চ ডাক্তার মোশাররফ ফ্লোরে তালা দেন এবং ৫ মার্চ ভোরে ফ্লোরে থাকা সকল চিকিৎসা সরঞ্জাম ও মালামাল বেআইনিভাবে লুট করে নিয়ে যান বলে অভিযোগ করেন মালিক পক্ষ। এমনকি ফ্লোরে ভাংচুর ও নতুন করে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটান। অথচ ডাক্তার মোশাররফ ওই ফ্লোরের বৈধ মালিক নন বলে জানিয়েছেন হিমেল।

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে মালিকপক্ষ হিমেলকে বিষয়টি জানান এবং তিনি স্বশরীরে মালিক ডাক্তারগণসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে মীমাংসার উদ্যোগ নেন। দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা চলাকালীন, আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয়, মঙ্গলবার দুপুর ২টায় ল্যান্ডস্কেপ কোম্পানির সাথে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি পরিষ্কার করা হবে এবং বুধবার দুই পক্ষ বসে মীমাংসার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হবেন।

হিমেল বলেন, “আমি কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে এক টাকাও দাবি করিনি। বরং একজন আত্মীয় ও একজন সচেতন ছাত্রনেতা হিসেবে আমি একটি অবৈধ দখলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে সহযোগিতা করেছি। একজন চিকিৎসক ও প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েও যদি কেউ আইন অমান্য করে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে জোরপূর্বক তালা লাগায়, সম্পত্তি দখল করে নেয়, তাহলে সেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমি সেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি, যেভাবে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা পুরো ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়।”

এবিষয়ে ড. হারিস জানিয়েছেন, “আমরা মিডফোর্ড টাওয়ারের তৃতীয় তলা কিনে মেডি লাইফকে ভাড়া দিয়েছি। তবে সরকার পরিবর্তনের পর ৫ আগস্ট বিকেলে ডা. মোশাররফ একবার তালা লাগান, যা আমরা সেনাবাহিনীর সহায়তায় খুলি। পরে ১ মার্চ ওয়ারীর কমিশনার আবুল বাশারের সহায়তায় পুনরায় তালা লাগানো হয়। পরবর্তীতে আইনগত সহায়তা নিতে থানায় গেলে বিভিন্ন জায়গায় আবুল বাশারের প্রভাবে তাদের সহযোগিতা করতে নিষেধ করা হয়। তাই বিষয়টি তিনি যেহেতু রাজনৈতিক প্রভাবের জায়গাতে নিয়ে গিয়েছে আমরাও পলিটিক্যালি সমাধানের চেষ্টা করেছি।

তিনি আরও জানান, শুরুতে বিষয়টি হিমেলকে ঈদের সময় তাকে অবগত করি। এরপর গত পরশু আমরা মেডি লাইফের চেয়ারম্যান ও ব্যবসায়িক অংশীদারের সঙ্গে ডা. মোশাররফের কাছে যাই। তাঁকে জিজ্ঞাসা করি, আপনি কি এই ফ্লোরের মালিক? তিনি জানান, না, তিনি মালিক নন। তাঁর মতে, এই পদক্ষেপগুলো কমিশনার আবুল বাশার নিয়েছেন।”

তিনি অভিযোগ করেন, সেখান থেকে বেরিয়ে ডা. মোশাররফ থানায় মিথ্যা অভিযোগ করেন যে, তারা নাকি তার কাছে বিশ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে, যা সম্পূর্ণ বানোয়াট। এই অভিযোগ সত্য কিনা মেডি লাইফের চেয়ারম্যান বিষয়টি স্পষ্ট করতে পারবেন। ইতিমধ্যে আমরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি।

অপর মালিক ডা: মুর্শিদা পারভীন বলেন, ‘মোশাররফ আওয়ামী আমলে ফারুক খানের ভাতিজি জামাই পরিচয় দিয়ে আমাদের অত্যাচার করেছে এবং ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ এ মেডিকেল অফিসার থেকে প্রফেসর প্লাস হেড অফ ডিপার্টমেন্ট হয়েছে।এখন আবার বিএনপির নাম ভাঙিয়ে আমার ফ্লোর জোর করে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। আমরা তার অত্যাচারের কাছে অসহায়।’

ডা: রাজিব বলেন, ‘আমি ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একই ডিপার্টমেন্ট চাকরি করার কারণে আমার বিরুদ্ধে ডিরেক্টর, ডেপুটি ডিরেক্টর উনাদের কাছে বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগ করে আমাকে হেনস্তা করে। সাথে আমার ফ্লোর জোরপূর্বক দখল করে রেখে আমাদেরকেই মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। যারা আমাদের বিপদে পাশে দাঁড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেও মিথ্যে অভিযোগ আনছে।’

আরেকজন মালিক ডা: মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা ওর মতো ভূমিদস্যুদের হাত থেকে আইনগত বা সামাজিক হস্তক্ষেপ কামনা করছি। তার মত লোক দেশের জন্য ক্ষতিকর, আমরা চাইনা পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনার কোন দোসর পুনরায় আর কারো সম্পদ দখল করুক।’

ডা. মোশাররফ হোসেনের লুটপাটের কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ এই প্রতিবেদকের কাছে এসেছে। দেখা যাচ্ছে তিনি ট্রাকে করে হাসপাতালের মালামাল সরাচ্ছেন।

এরইমাঝে গত রোববার ডা. মোশাররফ হোসেন জবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল-এর বিরুদ্ধে দলবল নিয়ে তার ক্লিনিকে যেয়ে হেনস্তা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ আনেন। এই ব্যাপারে ডা. মোশারফের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

আরও পড়ুন

ভর্তি ফরম বিক্রি করে গুচ্ছের ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় ৪৪ কোটি টাকা


সিয়াম, জবি প্রতিনিধি, মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০২২, ০৯:৫৪
ভর্তি ফরম বিক্রি করে গুচ্ছের ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় ৪৪ কোটি টাকা

সংগৃহীত ছবি

গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয় ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি ফরম থেকে ৪৪ কোটি টাকার বেশি আয় করেছে। গত ২৫ জুন গুচ্ছের আবেদনের সময়সীমা শেষ হয়েছে।

এ বছর ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছের ভর্তি ফরমের মূল্য গতবারের চেয়ে ৩শ টাকা বৃদ্ধি আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয় এক হাজার ৫০০ টাকা।

১৫ জুন থেকে শুরু হওয়া গুচ্ছ ভর্তির আবেদন শেষ হয় ২৫ জুন। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার তথ্যমতে এবার গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার তিন ইউনিটে আবেদন জমা পড়েছে মোট ২ লাখ ৯৪ হাজার ৫১৪ টি। এ বছর সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছে বিজ্ঞান বিভাগে। ইউনিট ভিত্তিক হিসেব করলে গুচ্ছ ভর্তি কমিটির তথ্যমতে এ ইউনিটে  আবেদন জমা পড়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৭২৬ টি। বি ইউনিটে আবেদন জমা পড়েছে ৯০ হাজার ৬১৮ টি। সি ইউনিটে৪২ হাজার ১৭০ টি।

আগামী ৩০ জুলাই ‘ক’ ইউনিট, ১৩ অগাস্ট ‘খ’ ইউনিট ও এবং ২০ আগস্ট ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

এ বছর গুচ্ছভুক্ত ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় হলো— জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

‘কার নিন্দা করো তুমি’-নাদিরা মজুমদার


আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
বুধবার, ৩১ মার্চ, ২০২১, ০৩:৫০
‘কার নিন্দা করো তুমি’

ছবি সংগৃহীত: জো বাইডেন ও ভ্লাদিমির পুতিন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার ক্ষমতা গ্রহণের শতদিন পূর্তির প্রাক্কালে, বার্ধক্যজনিত শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতাকে পাত্তা না দিয়েই তিনটি লাগসই পদক্ষেপ নেন। কারণ, বিশ্বে এখন ‘আমেরিকা ফার্স্ব’ নয়, ‘আমেরিকা ইজ ব্যাক’। কোভিডের ছত্রছায়ায়, ‘দি গ্রেট-রিসেট’ তথা ‘আমাদের গণতন্ত্র’কে বহাল করার একমাত্র আন্তর্জাতিক বাধা অথবা কানাগলি তৈরি করে রেখেছে ‘চীন-রাশিয়া-ইরান’ মৈত্রীবন্ধন।

উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের ফ্রিডম অব্যাহত রাখার তাগিদে তাই ১২ মার্চ স্বয়ং বাইডেন ‘কোয়াড’-এর বাকি তিন শরিক জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের সঙ্গে ভার্চুয়াল সামিট করেন। ‘কোয়াডে’র চার দেশের রাষ্ট্রীয় প্রধানরা প্রতিশ্রুতি দেন যে, ইন্দো-প্যাসিফিকের দেশগুলোকে ২০২২ সালের শেষের দিকে এক বিলিয়ন ডোজ কোভিড টিকা সরবরাহ করা হবে; টিকা তৈরি হবে ভারতে, অর্থায়নের দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের, বিতরণে থাকবে অস্ট্রেলিয়া। এটি একটি খুশির খবর হতে পারে; কিন্তু অনেকের মনে প্রশ্ন জাগছে—‘কোভিড’কে টেনে লম্বা করে ২০২২ সালের শেষ পর্যন্ত ঝুলিয়ে রাখা কেন! বিশেষ করে যখন দিনকে দিন ইউরোপসহ সর্বত্র স্পুতনিক-ভি ও সিনোফার্মের টিকার ডিমান্ড বাড়ছে! ‘কোয়াড’ থেকে কি বহু জল্পনাকল্পনার ‘এশিয়া ন্যাটো’র আবির্ভাব হবে! দেখা যাক। তবে ‘কোয়াডে’র শরিক ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির উচ্ছ্বসিত মন্তব্য যে, কোয়াড হবে গ্লোবাল-সাউথের (উন্নয়নশীল দেশসমূহ) শক্তি বাহিনী!

কথা প্রসঙ্গে বলছি যে, ভারতের রুশ এস-৪০০ কেনার বিষয়টি সিনেট ফরেন পলিসি কমিটি এখন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে এবং কিনলে ‘স্যাংকশনে’র ভীতি দেখানো হয়েছে; দিন কয় পূর্বে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লয়েড অস্টিন নয়া দিল্লিতে বলেছেনও। কৃষক আন্দোলনের বিষয়টি নিয়েও ওয়াশিংটনে বিষমভাবে কুমিরের কান্নাকাটি চলছে; কিন্তু যদিও তা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ‘কোয়াড’ থেকে ‘এশিয়া ন্যাটো’ নয়—গ্লোবাল সাউথ বরং ভারতের স্ট্র্যাটেজিক অটোনমি সংরক্ষণের প্রত্যাশায় রয়েছে।

পুতিনের প্রসঙ্গ এবার। তবে তার আগে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রফেশনাল ’সিভি’তে দ্রুত চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক। বাইডেনের রাজনৈতিক কেরিয়ারের বয়স মোটামুটি অর্ধশতাব্দী। কাজেই, বয়সে ও রাজনীতিতে জো ‘ঝানু’ ব্যক্তি। দীর্ঘ অনেক বছর ছিলেন সিনেটর হিসেবে, তারপরে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভিপি ছিলেন আট বছর ধরে, মাধ্যখানে চার বছর ফাঁকা গেছে; বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট তিনি। কর্মজীবনে সিনেট বৈদেশিক বিষয়ক কমিটির জ্যেষ্ঠ সিনেটর হিসেবে ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণে কংগ্রেসের অনুমতি আদায়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।

ইরাক আক্রমণ, সাদ্দাম হোসেনের উচ্ছেদ ইত্যাদির অজুহাত ছিল গণবিধ্বংসী অস্ত্র এবং ছিল তো নির্জলা মিথ্যা বানোয়াট নৃশংস ‘ফেয়ারিটেল’। এই অন্যায় আক্রমণে কম করে এক মিলিয়ন মানুষ মারা যায় এবং মধ্যপ্রাচ্যে ও আশপাশের অন্যত্র সন্ত্রাসবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে দেওয়া হয়। কিংবা প্রেসিডেন্ট ওবামার ভিপি থাকাকালে, প্রেসিডেন্টের ‘ওভারসিজ কনটিনজেন্সি অপারেশনস’ এবং ৮০টি দেশের ওপর রাতের অন্ধকারে নাইট ড্রোন হামলা চালানোর অংশীদার তিনি। লিবিয়া ও লিবিয়ার গাদ্দাফির নৃশংস পরিণতি, যুগোস্লাভ ফেডারেশনের আকাশ থেকে বিরামহীন ৭৮ দিনরাত্রি বোমাবর্ষণ ইত্যাদিও রয়েছে।

কিছুদিন আগে, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে প্রেসিডেন্ট বাইডেন সিরিয়ায় বোমাবর্ষণের হুকুম দেন। কিছু লোক মারা যায়। ১৭ মার্চ ‘ডিক্লাসিফাই’কৃত একটি মার্কিন ‘ইনটেল’ প্রতিবেদনে দাবি করা হয় যে, প্রেসিডেন্ট পুতিন ২০২০ সালের মার্কিন নির্বাচনের সময় ডেমোক্রেটিক প্রার্থী বাইডেনের বিরুদ্ধে ‘প্রভাব/ইনফ্লুয়েন্স অপারেশন’ পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ঘটনাক্রমে এই একই তারিখে প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন ‘এবিসি নিউজে’ তার প্রথম সাংবাদিক সাক্ষাত্কার দেন।

এই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে সাংবাদিক জর্জ স্টেফানোপউলস প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে প্রশ্ন করেন, ‘নির্বাচনের সময় ভ্লাদিমির পুতিন আপনার মানহানি করেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সমর্থন করেছেন, আমাদের নির্বাচনের ভিত্তিকে দুর্বল করেছেন, আমাদের সমাজকে বিভক্ত করেছেন। কী মূল্য তাকে দিতে হবে?’ বাইডেন বলেন, মূল্য তাকে দিতে হবে। ... তার সঙ্গে ফোনে দীর্ঘ কথোপকথন হয়েছে; বলেছি, ‘আমি আপনাকে জানি, আপনিও আমাকে জানেন। যদি প্রমাণিত হয় তো ফলভোগের জন্য প্রস্তুত থাকুন।’ ... স্টেফানোপউলস বলেন, ‘আপনি বলছিলেন যে, উনি হূদয়শূন্য ব্যক্তি!’ বাইডেন বলেন, ‘ও হ্যাঁ, আমি তাকে বলেছি বটে, তার উত্তর ছিল যে—আমরা একে অপরকে বুঝতে পারছি, ....বলেছি, আপনার চোখের ভেতরে তাকালাম কিন্তু আমার মনে হয় না যে আপনার হূদয় বলে কিছু আছে।’ স্টেফানোপউলস বলেন, ‘অতএব, ভ্লাদিমির পুতিনকে আপনি চেনেন।’...এক অর্থে, এটিকে ঐতিহাসিক ইন্টারভিউ বলা চলে, মার্কিন-রুশ সম্পর্কের ‘ওয়াটারশেড-মুহূর্ত’ বা ‘আজ...দুজনার দুটি পথ গেছে বেঁকে-মুহূর্ত’। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের ‘এলিট’দের অনেকেরই কূটনৈতিক কম্পিটেন্স বা যোগ্যতা, ঔচিত্যবোধ, শিষ্টতার অভাব নতুন কিছু নয়। যেমন, বছর দুই আগে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ‘ঠগ’ বলতে আটকায়নি। বা ভেনিজুয়েলার মাদুরো’কে অবলীলায় ‘সন্ত্রাসী’র লেবেল দেওয়া হয়।

প্রশ্ন হলো—মস্কো এখন কী করবে? রাশিয়ার উত্তর ছিল তাত্ক্ষণিক এবং সুস্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূতকে শলাপরামর্শের জন্য মস্কোতে ডেকে পাঠানো হয়। এটি একটি নজিরবিহীন পদক্ষেপ। সুস্পষ্ট ইঙ্গিত যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে রাশিয়া পুনর্বিবেচনা করতে চায়। বাইডেনের অপমানের জবাব দিতে পুতিন রুশ টেলিভিশনে আসেন, ধীরস্থির শান্ত গলায় বলেন যে, বাইডেন স্টেটমেন্টে যা বলেছেন, আমরা পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত। অতঃপর, বাইডেনকে তিনি সুস্বাস্থ্য কামনা করেন এবং বলেন যে, ঠাট্টা নয়, তিনি বাস্তবিকই তার সুস্বাস্থ্য কামনা করছেন। অবশ্য পুতিন প্রচলিত বচন বা লোককথা ব্যবহার করেন, বলেন যে, ‘যে যেমন, সে ভাবে যে অন্যলোকেও ঠিক তারই মতো; বা ‘অন্য লোকের সম্বন্ধে যা-ই বলো না কেন তুমি আসলে তা-ই’।

প্রেসিডেন্ট পুতিনের মতে, ইউরোপিয়ানরা যখন সামরিক শক্তি নিয়ে (আমেরিকা) মহাদেশ বিজয়ে মত্ত, সেই সময়ে আমেরিকান প্রশাসনিক শ্রেণি সংগঠিত হতে থাকে। পুতিন জাপানের বিরুদ্ধে দুটো পারমাণবিক বোমা ফেলা এবং কালো মানুষ নিয়ে দাসপ্রথা চালুর ইতিহাস ইত্যাদি—সবই অন্যায়-অবিচারভিত্তিক যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব নিপীড়নের ইতিহাস। বাইডেনের বক্তব্যের জবাব হিসেবে পুতিন একটি চমকপ্রদ প্রস্তাব করেন। অনুবাদ করলে দাঁড়ায়: এসো আমরা ‘ভারবাল শুটআউটে’ নামি। লাইভ চ্যাট কাম ডুয়েল; বিষয়বস্তু: প্যান্ডেমিক, আঞ্চলিক কনফ্লিক্ট রিজোলিয়োশন এবং স্ট্র্যাটেজিক স্থিততা/স্ট্যাবিলিটি। অডিয়েন্স: মার্কিন ও রুশ পাবলিক; শর্ত: স্বতঃস্ফূর্ত, লিখিত স্ক্রিপ্ট ব্যবহার অবৈধ। পুতিনের সময় বাইডেনের ফুল প্রোগ্রাম, সময় কবে হবে, অনিশ্চিত। অর্থাত্, ‘টাফ টকিং আমেরিকান ওয়েস্টার্ন’-এর ছোঁয়া মেশানো কোনো ঐতিহাসিক শোউডাউন হবে না, হচ্ছে না!

তবে উভয়ের ক্ষেত্রেই অনেকের মনে রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতার লাইন ঘুরতে পারে—‘ওরে ভাই, কার নিন্দা করো তুমি। মাথা করো নত। / এ আমার এ তোমার পাপ।’  সূত্র:ইত্তেফাক

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম
Share on Facebook

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন এর সর্বশেষ

সর্বশেষ - আমার ক্যাম্পাস