ঢাকা শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ, ২০২৪
https://www.msprotidin.com website logo

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বক্তব্যের ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছি কিন্তু পায়নি: মির্জা ফখরুল


মুক্তসংবাদ প্রতিদিন ডেস্ক
শনিবার, ২০ আগষ্ট, ২০২২, ০৭:৪৩
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বক্তব্যের ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছি কিন্তু পায়নি: মির্জা ফখরুল

ফাইল ছবি: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বক্তব্য দিচ্ছেন

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‌আমি গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ব্যাখ্যা পায়নি। অথচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার জায়গায় অবিচল। তিনি একটা বক্তব্য দিয়েছেন সেই বক্তব্যে তিনি আবার ওইটাই নিশ্চিত করেছেন।

আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসেসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউটেব) এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।

ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ যখন স্বাধীন হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করে, তখন আওয়ামী সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত সরকারকে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে বলেছেন। এর অর্থ তারা ভারত সরকারের অনুকূলেই টিকে আছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এখন আর কোনো নির্বাচনের কথা নয়। এখন আর ঘুম পাড়ানির কোনো কথা নয়। এখন একটা মাত্র দাবি- এই সরকার কবে যাবে। আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য অবশ্যই ইতিহাসে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যতবারই ক্ষমতায় এসেছে বাংলাদেশের আত্মা-স্বপ্নকে ধ্বংস করেছে। এর জন্য তাদের জবাবদিহি করতেই হবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বলেছি সবার আগে গণতন্ত্রের নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। তারেক রহমানসহ ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দেওয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। অবিলম্বে এই সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং নতুন নির্বাচন কমিশনের মধ্য দিয়ে একটি জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল পার্লামেন্ট ও সরকার গঠন করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘লুটেরা সরকারের এলিট শ্রেণি হচ্ছে আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী, এমপি, ওয়ার্ড পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। কিছু আছেন যারা প্রতিদিন দেখবেন প্রজেক্ট তৈরি করছে কীভাবে তাদের সম্পদ আরও বাড়বে। কানাডার বেগমবাজারে তাদের আরও বাড়ি তৈরি হবে। আরও আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু উচ্ছিষ্টভোগী শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী। তারা যখন টকশোতে কথা বলেন, তারা প্রমাণ করতে চান আসলেই মানুষ বেহেশতে আছে। মোমেন সাহেব কোনো অমূলক কথা বলেননি।’ সূত্র: বিডি প্রতিদিন

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

আরও পড়ুন

জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর পূর্ণাঙ্গ ভাষণ


নিউজ ডেস্ক:
বৃহস্পতিবার, ২৫ মার্চ, ২০২১, ০৯:২৭
জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর পূর্ণাঙ্গ ভাষণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভাষণটি হুবহু পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
 
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
প্রিয় দেশবাসী।
আসসালামু আলাইকুম।
২৬-এ মার্চ আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবস। এবার স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে। আমরা উদযাপন করছি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। একইসঙ্গে উদযাপিত হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি - তিনি আমাদের এই সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের তৌফিক দান করেছেন।
 
এই শুভদিন উপলক্ষে স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে আমি দেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরে বসবাসকারী বাংলাদেশের সকল নাগরিককে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করছি সেইসব বন্ধু রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিকে যাঁরা আমাদের চরম দুঃসময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।

১৯৭১ সালের ২৫-এ মার্চের রাতে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ‘অপারেশন সার্চ লাইটের’ নামে নিরস্ত্র বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানায় তৎকালীন ইপিআর হেডকোয়ার্টার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার ঘনবসতি এলাকাগুলোতে একযোগে হামলা চালায় পাকিস্তানি সামরিক জান্তা। হাজার হাজার মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। আগুন ধরিয়ে দেয় অসংখ্য ঘরবাড়িতে। দেশের অন্যান্য শহরগুলোতে হাজার হাজার বাঙালিকে হত্যা করা হয়।
 
ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশের এবং তৎকালীন ইপিআর-এর  বীর বাঙালি সদস্যরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে। আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় এবং পাড়া-মহল্লার অলি-গলিতে বেরিকেড তৈরি করে পাকিস্তানি সৈন্যদের চলাচলে বাধা দেয়। কিন্তু অত্যাধুনিক অস্ত্র, ট্যাংক আর অস্ত্রসজ্জিত যানবাহনের সামনে নিরস্ত্র প্রতিরোধ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। নিরস্ত্র বাঙালির উপর হামলা চালিয়ে নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে বন্দি হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে ২৬-মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সমগ্র জাতিকে নির্দেশ দেন প্রতিরোধ যুদ্ধের। মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার। তাঁর ঘোষণা তৎকালীন ইপিআর-এর ওয়ারলেসের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তানি জান্তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে গিয়ে কারাগারে নিক্ষেপ করে।
 
এর আগে, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়লাভের পর পাকিস্তানি শাসকেরা যখন ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিবর্তে নিপীড়ন-নির্যাতনের আশ্রয় নেয়, তখনই অসহযোগ আন্দোলনের এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঘোষণা করেন: এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।
 
বীর বাঙালি তাঁর নির্দেশে ৯-মাসের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে শত্রুমুক্ত করে। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়।

আমি ২৫-এ মার্চের সেই কাল্রাতের শহিদদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি। স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় চার-নেতা, ৩০-লাখ শহিদ এবং ২-লাখ নির্যাতিত মাবোনকে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আমার সালাম।

আমি গভীর বেদনার সঙ্গে স্মরণ করছি ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ঘাতকদের হাতে নির্মমভাবে নিহত আমার মা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, তিন ভাই মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, মুক্তিযোদ্ধা লে. শেখ জামাল ও দশ বছরের শেখ রাসেল, দুই ভ্রাতৃবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, চাচা শেখ আবু নাসের-সহ সেই রাতের সকল শহিদকে।
 
প্রিয় দেশবাসী,
আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা ২৪ বছরের নিরন্তর রাজনৈতিক সংগ্রামের ফসল। আর এই সংগ্রামের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সৃষ্ট আন্দোলনে যে স্বাধিকারের বীজ বপন করেছিলেন, তাকেই সযত্নে লালন-পালন করে তিনি স্বাধীন মাতৃভূমি প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পরিণত মহিরূহে রূপান্তরিত করেন। শেখ মুজিব থেকে পরিণত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।

ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়েই ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৫৮’র আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলন, ৬৬’র ঐতিহাসিক ৬-দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭০’র নির্বাচন এবং ৭১’র রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা পাই স্বাধীনতা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নামের সেই মহাপুরুষের জন্ম হয়েছিল বলেই আজ আমরা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক। তাঁর জন্ম হয়েছিল বলেই আজ আমরা নিজস্ব দেশ, ভাষা-সংস্কৃতি নিয়ে গর্ববোধ করি।
 
শেখ মুজিব একটি দেশ, একটি জাতি-রাষ্ট্রের স্রষ্টা। কাজেই তাঁর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা একযোগে উদযাপন করছি।

আমি বাংলাদেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানাই এজন্য যে, জাতীয় জীবনের এই দুই গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক উদযাপনকালে স্বাধীনতাযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে তাঁরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসিয়েছেন।  
 
সুধিবৃন্দ,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শুধু একটি স্বাধীন-সার্বভৈৗম ভূখণ্ডেরই স্বপ্ন দেখেননি, তিনি স্বপ্ন দেখতেন এ জনপদের সাধারণ মানুষ, যাঁরা শত শত বছর ধরে শোষণ-বঞ্চণা, নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, না-খেয়ে না-দেয়ে, রোগে-শোকে মারা গেছে, তাঁদের দুঃখ-দুর্দশা দূর করতে। তাঁদের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসার ব্যবস্থা করে উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে।
 
আমাদের দুর্ভাগ্য মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় স্বাধীনতা বিরোধী কুচক্রী মহল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করে। তাঁকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে যেমন স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধূলিস্যাৎ করে দেওয়া হয়।
 
১৯৭২ সালে ২৮-এ জুন সিলেটে এক সমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেন: ‘‘... প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রী হবার জন্য আমি রাজনীতি করি নাই। আমি রাজনীতি করেছিলাম সাড়ে সাত কোটি মানুষের মুক্তির জন্য। এখন আমার রাজনীতির মুক্তি হয়েছে। আমার অর্থনীতির মুক্তি প্রয়োজন। এইটা না হলে স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে। যদি বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না খায়, যদি বাংলার মানুষ সুখে বাস না করে, বাংলার মানুষ যদি অত্যাচার, অবিচারের হাত থেকে বাঁচতে না পারে তো এই স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে।” 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শুধু স্বপ্ন দেখতেন না, কী করে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হয় তা তিনি জানতেন।  স্বাধীনতার পর একেবারে শূণ্য হাতে মাত্র সাড়ে তিন বছরে ধ্বংস-প্রাপ্ত রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, রেললাইন, পোর্ট সচল করে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করেন। ১২৬টি দেশের স্বীকৃতি ও ২৭টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে তিনি স্বল্পোন্নত দেশের কাতারভুক্ত করেন।
 
১৯৭৫-পরবর্তী অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী অগণতান্ত্রিক শাসকেরা বাংলাদেশকে আদর্শচ্যূত করেছে। 
 
দীর্ঘ একুশ বছর এদেশের মানুষকে ধোকা দিয়েছে। জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করে তাঁদের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখেছে। বাংলাদেশকে ভিক্ষুকের দেশ হিসেবে বহির্বিশ্বে পরিচিত করেছে।
 
প্রিয় দেশবাসী,
স্বাধীনতার অর্ধশত বছর অতিক্রম করা জাতীয় জীবনে একটি তাৎপর্যপূর্ণ মাইলফলক। আমাদের জন্য এই সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব আরও বর্ণময় হয়েছে এ জন্য যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে সরকার পরিচালনা শুরু করে। আজ বাংলাদেশ সম্পর্কে সকল  নেতিবাচক এবং নিরাশাবাচক ভবিষ্যদ্বাণী অসার প্রমাণিত করে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে গর্বিত দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।
 
এক দশক আগেও বাংলাদেশকে যেখানে দারিদ্র্য আর অনুন্নয়নের উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করা হতো, আজ উন্নয়ন বিশেষজ্ঞগণ সেই বাংলাদেশকেই দারিদ্র্য-জয় এবং উন্নয়নের আদর্শ মডেল হিসেবে তুলে ধরছেন।
 
আমি ২০০৫-০৬ অর্থবছর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে কয়েকটি সূচকের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরছি।

২০০৫-০৬ বছরে মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার। বর্তমানে যা ২০৬৪ ডলার হয়েছে। ঐ সময়ে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১.৫ শতাংশ। বর্তমানে দারিদ্র্যের হার কমে দাঁড়িয়েছে ২০.৫ শতাংশ। জিডিপি’র আকার ৪ লাখ ৮২ হাজার ৩৩৭ কোটি থেকে ২৮ লাখ কোটি টাকা হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল মাত্র ০.৭৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থাৎ এক বিলিয়ন ডলারের কম যা বর্তমানে ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। 

২০০৫-০৬ বছরে বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার কোটি টাকা। বর্তমান অর্থবছরের আমাদের বাজেটের আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। মানুষের গড় আয়ু ২০০৫-০৬ বছরের ৫৯ বছর থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৯-২০ সালে দাঁড়িয়েছে ৭২.৬ বছর। শিশু মৃত্যুহার হার কমে প্রতি হাজারে ৮৪ থেকে ২৮ এবং মাতৃমৃত্যু হার প্রতি লাখে ৩৭০ থেকে ১৬৫ জনে দাঁড়িয়েছে।
 
ঐ সময় সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৭৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি। দানাদার শস্যের উৎপাদন ২০০৫-০৬ বছরের ১ কোট ৮০ লাখ মে. টন থকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৪,৯০০ মেগাওয়াট থেকে ২৪ হাজার ৪২১ মেগাওয়াটে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ৪৭ থেকে ৯৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

আজকের এই অর্জন এ দেশের সাধারণ মানুষের। এ দেশের কৃষক-শ্রমিক-পেশাজীবী, আমাদের প্রবাসী ভাইবোনেরা, এ দেশের উদ্যোক্তাগণ - তাঁদের শ্রম, মেধা এবং উদ্বাবনী শক্তি দিয়ে দারিদ্র্য নিরাময়ের অসম্ভব কাজকে সম্ভব করে তুলেছেন। আমার সরকার শুধু নীতি সহায়তা দিয়ে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করেছে। আপনারা প্রমাণ করেছেন, বাংলাদেশের মানুষ অনুকূল পরিবেশ পেলে যেকোন অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারে।
 
আমাদের বিগত ১২ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আর্থ-সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। গত মাসে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। গড় আয়ু, লিঙ্গ সমতা, সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা, নারী শিক্ষা, নারীর রাজনৈতিক অধিকার, নারী ও শিশু মৃত্যুহার, স্যানিটেশন, খাদ্য প্রাপ্যতা - ইত্যাদি নানা সূচকে বাংলাদেশ শুধু তার প্রতিবেশি দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে যায়নি, অনেক ক্ষেত্রে অনেক উন্নত দেশকেও ছাড়িয়ে গেছে।

আজকের এই উত্তরণের পথ মোটেই মসৃণ ছিল না। দেশের ভিতরে-বাইরে স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে নানা অপতৎপরতা চালিয়েছে। সে প্রক্রিয়া এখনও অব্যাহত আছে। কাজেই আমাদের সকলকে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে দেশবিরোধী সকল অপতৎপরতা রুখে দাঁড়াতে হবে।

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা। প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ডাকে ছাত্রছাত্রী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে, শ্রমিক কারখানা ছেড়ে, কৃষক লাঙল ফেলে, কামার, কুমার, জেলে তাঁদের কাজ ফেলে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সশস্ত্র বাহিনী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাঙালি সদস্যরা পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে প্রতিরোধ সংগ্রামে সামিল হয়েছিলেন। জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সকলেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
 
একবার ভাবুন, আমরা আজ যে স্বাধীন দেশের মাটিতে আজ মুক্ত নিশ্বাস ফেলছি তা অর্জনে কত শত তরুণ অকাতরে প্রাণ দিয়েছেন? কত মা তাঁদের সন্তান হারিয়েছেন, কত বাবা তাঁদের পুত্র হারিয়েছেন, কত ভাইবোন তাঁদের ভাই হারিয়েছেন, কত স্ত্রী তাঁদের স্বামী হারিয়েছেন, সন্তানেরা বাবা হারিয়েছেন? কতশত মুক্তিযোদ্ধা পঙ্গু হয়ে দুঃসহ জীবনযাপন করছেন?
 
তাঁদের একটাই প্রত্যাশা ছিল এ দেশ স্বাধীন হবে। এ দেশের মানুষ সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। সকলে মৌলিক অধিকার ভোগ করবে। আজকে আমরা তাঁদের সেই প্রত্যাশা কিছুটা হলেও পূরণ করতে পেরেছি।

সুবর্ণজয়ন্তীর এই শুভক্ষণে আমাদের শপথ নিতে হবে কেউ যেন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। দেশের গণতান্ত্রিক এবং উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে না পারে। আসুন, সকল ভেদাভেদ ভুলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলি।
 
প্রিয় দেশবাসী,
আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি। তবে এই উদযাপন যেন শুধু আনুষ্ঠানিকতা-সর্বস্ব না হয়। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে আমাদের দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার নতুন করে শপথ নিতে হবে।

এবারের স্বাধীনতা দিবস অন্যান্য বছরের স্বাধীনতা দিবসের মত নয়। এবার স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হলো। এই দিন আনন্দে অবগাহনের দিন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় তাই আহ্বান জানাই:
আনন্দধ্বনি জাগাও গগনে।
কে আছ জাগিয়া পূরবে চাহিয়া,
বলে ‘উঠ উঠ’ সঘনে গভীর নিদ্রামগনে।
হেরো তিমির রজনী যায় ওই, হাসে ঊষা নব জোতির্ময়ী-
নব আনন্দে, নব জীবনে,
ফুল্ল কুসুমে, মধুর পবনে, বিহগ কলকূজনে।
সকলে ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সকলের সহায় হোন।
খোদা হাফেজ।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
 
সূত্র: বিডি-প্রতিদিন

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

মার্কিন উপসহকারী মন্ত্রী মিরা রেজনিক ঢাকায় পৌঁছেছেন


আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
সোমবার, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ১২:৫১
মার্কিন উপসহকারী মন্ত্রী মিরা রেজনিক ঢাকায় পৌঁছেছেন

ফাইল ছবি: মার্কিন উপসহকারী মন্ত্রী মিরা রেজনিক

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র নবম নিরাপত্তা সংলাপে অংশ নিতে ঢাকায় পৌঁছেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনৈতিক সামরিকবিষয়ক ব্যুরোর উপসহকারী মন্ত্রী মিরা রেজনিক।

আজ সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) এক টুইট বার্তায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস।

টুইট বার্তায় বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক-সামরিক বিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মিরা রেজনিককে স্বাগতম। তিনি যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা সংলাপের জন্য ঢাকায় এসেছেন।

এতে আরও বলা হয়, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে মুক্ত, অবারিত এবং শান্তিপূর্ণ রাখা নিয়ে একই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল আঞ্চলিক উন্নয়ন, মানবাধিকার, নিরাপত্তা সহায়তা এবং সন্ত্রাসবাদ দমন নিয়ে আলোচনা হবে। সূত্র: ইত্তেফাক

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম
Share on Facebook