a শুভ জন্মদিন বঙ্গবন্ধু
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫
https://www.msprotidin.com website logo

শুভ জন্মদিন বঙ্গবন্ধু


মুক্তসংবাদ প্রতিদিন:
বুধবার, ১৭ মার্চ, ২০২১, ১০:১১
শুভ জন্মদিন বঙ্গবন্ধু

ফাইল ফটো:

আজ ১৭ মার্চ, শুভ জন্মদিন বঙ্গবন্ধু! প্রতি বছর এ দিনটি আমার একান্ত ভাবনার দিন, আনন্দ ও বেদনায় আপ্লুত স্মরণীয় দিন। কেন আনন্দ-বেদনা? নিজের মনে গুঞ্জরিত এ প্রশ্নের উত্তর মনের মধ্যেই আছে। আনন্দ এ জন্য যে, ১৭ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্ম হয়। বেদনা এ জন্য যে, আপনার কথা ভাবলে গ্রিক ট্র্যাজেডির নায়কের চরিত্রের করুণ পরিণতির কথা মনে পড়ে যায়। আপনার মৃত্যুর কয়েক দিন আগে তোলা একটি ছবির দিকে তাকিয়ে আমার দুই চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে। কী অনবদ্য ভঙ্গিতে বসে আছেন আপনি! মুখে পরম তৃপ্তির কোনো রহস্যময় ঈষৎ হাসি ছড়িয়ে আছে। ছবিটির দিকে তাকিয়ে আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, কী ভাবছেন আপনি? দেশের কথা? দেশের মানুষের কথা? নাকি অন্য কিছু? আপনার বসার টেবিলের পাশেই আমি তখন দাঁড়িয়ে ছিলাম। ভাবতে পারিনি, পরিচিত বা অপরিচিত কারও তোলা ছবিটি প্রতিটি ১৭ মার্চে আমাকে এভাবে আনন্দ-বেদনায় মগ্ন করে রাখবে।

আপনাকে আমি চিনতাম ও জানতাম স্কুলে ছাত্রাবস্থা থেকে। প্রথম চাক্ষুষ দেখা পাই ১৯৬২ সালে প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত কচি-কাঁচার মেলার এক অনুষ্ঠানে। আপনি মেলার সদস্যদের উদ্দেশে একটি বক্তব্য রেখেছিলেন। ৬০ বছর পরে সে বক্তৃতার কথাগুলো খুব একটা মনে থাকার কথা নয়। ভালোভাবে লেখাপড়া করার জন্য ও দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ হওয়ার জন্য আপনি শিশু-কিশোরকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কচি-কাঁচার মেলার সদস্যরা আপনাকে গার্ড অব অনার দিয়ে নিজেরা গৌরবান্বিত হয়েছে। কচি-কাঁচার মেলার চারজন সদস্য- সদ্যপ্রয়াত খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, বাংলা একাডেমির সভাপতি শামসুজ্জামান খান, শিল্পী হাশেম খান ও আমি ছিলাম আপনার একান্ত ভক্ত ও অনুরক্ত। দাদাভাই রোকনুজ্জামান খান গর্বভরে বলতেন, ‘কচি-কাঁচার মেলার সদস্যদের কেউ রাজাকার হয়নি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অনেকে আত্মদান করেছে’। মুক্তিযুদ্ধকালে দৈনিক ইত্তেফাক ও কচি-কাঁচার আসরের অফিসটিকেও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

আপনার সঙ্গে প্রথম পরিচয় হলো ষাটের দশকের মাঝামাঝি পুরানা পল্টনের আওয়ামী লীগ অফিসে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু শেখ ফজলুল হক মনি তার হোন্ডার পেছনে আমাকে তুলে আপনার সঙ্গে পরিচয় করাতে নিয়ে যান। খুব কম সময়ই ছিলাম আপনার সামনে। কিন্তু আমার ক্ষুদ্র জীবনে সেটা ছিল এক মাহেন্দ্রক্ষণ। ওই দিনটির স্মৃতি মনের মণিকোঠায় চিরকাল উজ্জ্বল হয়ে আছে। আরও অনেক স্মৃতি আছে আমার। মুক্তিযুদ্ধকালে আমি মুজিবনগর সরকারের তথ্য বিভাগে চাকরিরত ছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী আমাকে বঙ্গভবনে ডেকে নেন। ওই সময়ের একটি ছোট্ট স্মৃতি আমার খুবই মনে পড়ে। ১৯৭২ সালের প্রথম দিকের ঘটনা। রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুকে দেখতে ৩২ নম্বরের বাড়িতে গিয়েছিলেন। সঙ্গে আমিও ছিলাম। দুদিন পরে বঙ্গবন্ধু বঙ্গভবনে এলেন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে। বঙ্গবন্ধুকে গাড়িতে তুলে দিতে সামরিক সচিব ও আমি করিডোর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, মাহবুব! কাল তোমারে দেখেছি!

আমি সবিস্ময়ে বললাম, কোথায় স্যার? তুমি কালকে টেলিভিশনে আসছিলা। বঙ্গবন্ধু বললেন।

কী আশ্চর্য! এটা কি একটা বলার কথা হলো আমার মতো নগণ্য একজন সরকারি কর্মকর্তাকে? সেদিন বুঝতে পারিনি। পরে বুঝতে পেরেছি, এমন ছোটখাটো ঘটনাও দৃষ্টি এড়ায় না তাঁর। এজন্যই তো তিনি বঙ্গবন্ধু!

১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রিত্বের পদ ত্যাগ করে রাষ্ট্রপতি হন। সেদিনই তিনি আমাকে ডেকে বলেছিলেন, ‘তুমি আমার সঙ্গে থাকবা।’ এরপর তাঁর মৃত্যুদিন পর্যন্ত আমি বঙ্গবন্ধুর অধীনে তাঁর সহকারী প্রেস সচিব নিয়োজিত হই। প্রেস সচিব ছিলেন আবদুল তোয়াব খান। ২৫ জানুয়ারি থেকে ওই বছর ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় খুব বেশি নয়। কিন্তু ওই সময়টুকু বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে আমার জীবনের গৌরবগাথা। তাঁর সঙ্গে অনেক স্মৃতি আছে এ সময়ের, যার কিছু ঘটনা আমার ‘বঙ্গভবনে পাঁচ বছর’ বইয়ে উল্লেখ করেছি। এর মধ্যে আছে বঙ্গবন্ধুর পিতার চল্লিশায় টুুঙ্গিপাড়া যেতে ‘গাজী’ জাহাজে মধ্যরাতে নিজের মাথার বালিশ আমার মাথার তলে দিয়ে দেওয়া, টাঙ্গাইলে ভাসানী সাহেবের বাড়ি থেকে খুলনায় তাঁর ভাই শেখ নাসেরের বাড়িতে যাওয়ার পথে অভুক্ত আমাকে খাবার প্রদানের জন্য হেলিকপ্টারের কর্মকর্তাদের নির্দেশ, বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর অনুলেখক হিসেবে কাজ করার সময় একান্ত স্মৃতিচারণা, ১৪ আগস্টে ৩২ নম্বরের বাসায় যাওয়ার আগে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার শেষ কথোপকথন, আরও কত কী!

স্বাধীন বাংলাদেশে আপনার প্রথম জন্মদিন উদযাপনের স্মৃতি চিরকাল মনে থাকবে। ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ সকাল ১০টায় তেজগাঁও বিমানবন্দরে নামল ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষ বিমান ‘রাজহংস’। ভারতরত্ন ইন্দিরা সর্বপ্রথম অবতরণ করলেন। তারপর নামলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং এবং পরে অন্য অতিথিবৃন্দ। বিমানবন্দরে ইন্দিরাকে ফুলের মালা পরিয়ে অভ্যর্থনা জানান শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব। বিকাল ৩টায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ভাষণ দিলেন ইন্দিরা গান্ধী। ময়দানের একপাশে নৌকার আকারে বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে ‘ইন্দিরা মঞ্চ’ নামে। বিশাল জনসমুদ্রকে সামনে রেখে ইন্দিরা গান্ধী প্রথম দুই মিনিট বাংলায় বক্তৃতা দেন, পরে বাংলায় দীর্ঘ বক্তৃতাদানে অক্ষমতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে হিন্দিতে বক্তৃতা করলেও কবিগুরুর কবিতার দুটি চরণ আবৃত্তি করেন। ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চল রে।’

ইন্দিরা গান্ধীকে আমি প্রথম দেখি ১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর কলকাতার প্যারেড গ্রাউন্ডে। বক্তৃতায় মাঝখানে ছেদ পড়ল, দিল্লি থেকে খবর এসেছে পাকিস্তান ভারত আক্রমণ করেছে। তার পরের ঘটনা তো সবারই জানা। স্বাধীনতার পর এবার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গভবনে ছিলেন। তাঁর আরাম-আয়েশের জন্য আমাদের যথাসাধ্য প্রচেষ্টা ছিল। বঙ্গভবনের একজন অফিসার হিসেবে তখন তাঁকে কাছে থেকে ঘনিষ্ঠভাবে দেখতে পাই। আরও কাছে থেকে দেখতে পাই ওই বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ভারতে রাষ্ট্রীয় সফরকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে এবং পরবর্তীতে শান্তিনিকেতনে। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে ঢাকায় এসে তিন দিন বঙ্গভবনে ছিলেন তিনি। দেশে ফেরার আগে বঙ্গভবনের অফিসারদের কিছু উপহার দিয়েছিলেন। আমি পেয়েছিলাম ভারতীয় র-সিল্কের একপ্রস্থ কাপড়। পরে তা দিয়ে একটা পাঞ্জাবি তৈরি করাই। সব মিলিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর প্রথম জন্মদিনটি চিরকালই আমার স্মৃতিতে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে।

আবার ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ। ব্যক্তিগত একটি ঘটনার কথা মনে হলে আমার মন সঙ্কুচিত হয়ে যায়। কথাটা সঙ্গতকারণে আগে কাউকে বলিনি। সেটাও ১৯৭৫ সালের ঘটনা। আমরা হেলিকপ্টারে বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধনের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে যাই। ফেরার পথে আমি চট্টগ্রামে ব্যক্তিগতভাবে দুই দিনের যাত্রাবিরতি করি। চট্টগ্রাম নিউমার্কেট থেকে আমি চাকচিক্যময় একটা স্যুটপিস কিনি। স্যুট বানিয়ে ওটা পরে অফিসে যেতে বঙ্গবন্ধুর সামনে পড়ে যাই। তিনি আমাকে পোশাক সম্পর্কে কিছু না বললেও আমার এক সহকর্মীকে বলেন, অত জমকালো পোশাক যদি কাউকে সাধারণ মানুষ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, সেটা কি ঠিক? কথাটা জানার পর পোশাকের বিষয়ে আমি সাবধান হয়ে গিয়েছিলাম। এই একটি ঘটনা ছাড়া বঙ্গবন্ধু আমাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আর কখনো ভর্ৎসনা করেননি।

আজ সবচেয়ে মনে পড়ছে বঙ্গবন্ধুর শেষ জন্মদিনটির কথা। ১৯৭৫ সালের ১৬ মার্চ আমাকে ডেকে বললেন, ‘তুমি তো কচি-কাঁচা! তুমি কাল আমার বাসায় আসবা। আমি যে এক সময়ে শিশু-কিশোর সংগঠনের কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার প্রথম আহ্বায়ক ছিলাম, কথাটা তিনি জানতেন। এজন্য আমাকে কচি-কাঁচা বলে সম্বোধন করেছেন এবং তাঁর জন্মদিনে বিশেষভাবে উপস্থিত থাকতে বলেছেন। দিনটি বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোরের সঙ্গে কাটাবেন। ছোটদের সান্নিধ্য তিনি যে কতটা ভালোবাসেন, তা সবাই জানে। ১৭ মার্চ সকালবেলা ৩২ নম্বরের বাড়িতে পৌঁছে গেলাম। বঙ্গবন্ধুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে তিনি শুধু মাথা ঝাঁকিয়ে হাসলেন। এত প্রাণোচ্ছল বোধহয় তাকে খুব কমই দেখেছি। নিজের জন্মদিন বলেই হয়তো তিনি খুশিতে উচ্ছল হয়েছিলেন। আমার বারবার মনে হচ্ছিল, জন্মদিন বলেই কী তিনি ছেলেবেলার কথা মনে করে একেবারে শিশু হয়ে গেছেন?

৩২ নম্বরের বাসায় তখনো তেমন জনসমাগম হয়নি। শেখ কামাল এসে মিষ্টির প্লেট তুলে দিলেন হাতে। জিজ্ঞাসা করলেন, মাহবুব ভাই, নাশতা করেছেন তো? না করে থাকলে আমার সঙ্গে একটু আসেন। আমি জানালাম, নাশতা করেই এসেছি। একটু পরে মন্ত্রী এম কোরবান আলী এলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে অভিনন্দন জানালেন। বিগলিত হাসি দিয়েই অভিনন্দনের উত্তর দিলেন বঙ্গবন্ধু। সেদিন সকাল বেলায়ই ‘বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলার’ ছোটমণিদের নিয়ে এসেছেন দৈনিক বাংলার ‘শাপলা কুঁড়ির আসর’-এর পরিচালক বিমান ভট্টাচার্য। বঙ্গবন্ধু আগত শিশুদের গাল ছুঁয়ে আদর করলেন। তাদের সঙ্গে গল্পে মেতে উঠলেন। পরে অন্যান্য সংগঠনের শিশু-কিশোররাও এলো। ৩২ নম্বরের বাড়ির গেটের বাইরে তখন অগণিত নেতা-কর্মী ও ভক্তদের ভিড়। তারা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাতে সমবেত হয়েছেন। ভিতরে আসতে পারছেন না। বঙ্গবন্ধু বলে দিয়েছেন, তিনি আগে ছোটদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

আজ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এ দুটি গৌরবময় সময়ের মোহনায় দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবিটির দিকে আবার তাকিয়ে দেখছি। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গে একটি সংবিধানও দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের সংবিধানে ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা’র আদর্শ মূলনীতি হিসেবে ঘোষিত হয়েছিল। সে চারটি মূলনীতির অনেক পরিবর্তন হয়েছে আজ। বঙ্গবন্ধুর ছবিটির দিকে তাকিয়ে আমার বারবার মনে হচ্ছে, কী ভাবছেন বঙ্গবন্ধু? দেশের কথা না, দেশের মানুষের কথা? এর বাইরে তাঁর তো কোনো ভাবনা ছিল না। আমার মতে, বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করার পাশাপাশি অনুসরণ করা প্রয়োজন ছিল। আমরা কি তা পেরেছি? আজ এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর ছবির দিকে তাকিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা হচ্ছে- ‘আপনি কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলেন?’

লেখক: নির্বাচন কমিশনার, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। উৎস: বাংলাদেশ প্রতিদিন

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

আগষ্ট অভ্যুত্থানে ভারতের আসল চেহারা বেরিয়ে এলো: কর্নেল (অব.) আকরাম


কর্নেল আকরাম, কলাম লেখক: মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৪:৪০
আগষ্ট অভ্যুত্থানে ভারতের আসল চেহারা বেরিয়ে এলো: কর্নেল (অব.) আকরাম

ছবি সংগৃহীত

 

ভারত আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। আমরা সবাই জানি, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারত আমাদের সর্বাত্মক সহায়তা দিয়েছিল। এটি একটি ঐতিহাসিক সত্য যে, তাদের প্রত্যক্ষ সমর্থনের কারণে মাত্র নয় মাসের মধ্যেই আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। অনেকেই মনে করেন, ভারত আমাদের পাশে না থাকলে বাংলাদেশ কখনোই সৃষ্টি হতো না।  

তবে আমরা কি কখনো ভেবেছি, ভারত কেন আমাদের সাহায্য করেছিল? অনেকেই বলবেন, ভারত একটি দুর্বল পাকিস্তান দেখতে চেয়েছিল। যখন সুযোগ তাদের হাতে আসে, তখন তারা তা লুফে নিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেনি। এটি ভারতীয় স্বার্থের একটি সাধারণ উপলব্ধি। যখন মুক্তিযোদ্ধারা ভালো অবস্থানে ছিল, তখন ভারত পাকিস্তানের সাথে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং কয়েক দিনের মধ্যে বিজয় অর্জন করে। বলা হয়ে থাকে, ভারত আমাদের বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে সেটিকে তাদের বিজয় হিসেবে ঘোষণা করেছিল। এটি আমাদের ভাগ্যের নির্মম পরিহাস।  

১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর লে. জেনারেল নিয়াজি ভারতীয় সেনাবাহিনীর লে. জেনারেল অরোরার কাছে আত্মসমর্পণের চুক্তিতে সই করেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়। কিন্তু বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল ওসমানীকে আত্মসমর্পণের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। বলা হয়ে থাকে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ভারতীয় বিজয় দেখানোর জন্য বাংলাদেশকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছিল।  

গত ৫৩ বছর ধরে ভারতীয় মিডিয়া, বুদ্ধিজীবী এবং ভারত সরকার এই ঘটনাকে তাদের ইতিহাসের এক মহান বিজয় হিসেবে তুলে ধরেছে। কিন্তু আমরা একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে কখনোই এই দাবির বিরোধিতা করতে পারিনি। বরং, আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ করে নিজেদের জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়েও তাদের সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করেছি।  

শুধুমাত্র জিয়াউর রহমানের সময়েই বাংলাদেশ সফলভাবে ভারতীয় আধিপত্যবাদী রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছিল। তবে এজন্য তাকে নিজের জীবন দিতে হয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী এবং চীনপন্থী কিছু রাজনৈতিক দল, যেমন ভাসানীর ন্যাপ, ভারতীয় সমর্থনের আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতন ছিল।  

ভারত ১৯৪৭ সালের বিভাজন মেনে নিতে পারেনি এবং পাকিস্তানের জন্মের প্রথম দিন থেকেই তারা এর বিরুদ্ধে কাজ করে এসেছে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, যার সত্যতা শেখ মুজিব স্বাধীনতার পরে স্বীকার করেছিলেন, এর একটি স্পষ্ট প্রমাণ।  

ভারত পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ভালো বন্ধু হিসেবে ভান করেছিল শুধুমাত্র পাকিস্তানকে ভেঙে ফেলার এবং একটি উপনিবেশ রাষ্ট্র সৃষ্টি করার জন্য। তাদের উদ্দেশ্য ছিল এক সময়ে এটি ভারতীয় ইউনিয়নের সাথে একীভূত করা।  

আজ এটি আরও স্পষ্ট হয়ে গেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্য থেকে। তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন, ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত এক ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করেছিল। মোদি আরও বলেন, এটি ছিল ভারতের যুদ্ধ, যেখানে ভারতীয় সেনারা সাহসিকতা এবং বীরত্ব প্রদর্শন করেছিল এবং ভারতের জন্য এক গৌরবময় বিজয় এনেছিল। এটি বাংলাদেশের প্রতি ভারতের প্রকৃত অবস্থান প্রকাশ করে।  

সম্প্রতি জুলাই-আগস্ট বিপ্লব ২০২৪-এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ভারতীয় আধিপত্য থেকে বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু ভারত এই পরিবর্তন মেনে নিতে পারেনি এবং বাংলাদেশকে পুনরায় তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে মরিয়া। ভবিষ্যতে তারা বিভিন্ন কার্ড দেখাতে পারে, বিশেষত সংখ্যালঘু কার্ড, খেলার চেষ্টা করবে। এমনো হতে পারে যে কোন একটি ইস্যু ধরে বাংলাদেশের একটি অংশ দাবি করে আক্রমণ করতে পারে।  

যদি বাংলাদেশের জনগণ ভারতের স্বার্থের এই সরল সমীকরণটি বুঝতে ব্যর্থ হয়, তবে তা হবে আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে জাতীয়তাবাদী শক্তির পতাকার নিচে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের অবশ্যই ড. ইউনুস সরকারকে সফলতার সাথে কাজ করার জন্য সহযোগিতা করে যেতে হবে। বর্তমানের অর্ন্তবর্তী সরকারকেও সব দল ও মতকে বিবেচনা রেখে সবাইকে একসাথে ঐক্যমতের ভিত্তিতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। নির্বাচনের পরও রাজনৈতিক সরকারগুলোকেও ঐক্যমতের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করলে কোন বহি:শত্রু এদেশে হুমকি হিসেবে দাঁড়াতে পারবেনা।

আমাদের সামনে যে সুযোগ এসেছে, এটি কাজে লাগাতে হবে। আর আমরা যদি এসব সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হই, তাহলে সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের আকাশে কালো মেঘ ঘনিয়ে আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি।


লেখক: সম্পাদক, মিলিটারি হিস্ট্রি জার্নাল এবং আইন ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক।

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

আফগানিস্তানের পরিস্থিতি জটিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র: পাক প্রধানমন্ত্রী


আন্তর্জাতিক ডেস্ক:মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই, ২০২১, ১১:১৩
আফগানিস্তানের পরিস্থিতি জটিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র: পাক প্রধানমন্ত্রী

ফাইল ছবি । ইমরান খান

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, আফগানিস্তানের বর্তমান জটিল পরিস্থিতি তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন নিউজ চ্যানেল পিবিএসকে বুধবার দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি ওই মন্তব্য করেন। খবর দ্য ডনের।

ইমরান খান বলেন, আফগানিস্তানে যখন ন্যাটো জোটের দেড় লাখ সেনা মোতায়েন করা হচ্ছিল, তখনই তালেবানের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল।

তিনি বলেন, এখন যখন ১০ হাজারেরও কম সেনা রয়েছে এবং তাদেরও চলে যাওয়ার তারিখ চূড়ান্ত হয়েছে তখন তালেবানকে রাজনৈতিক সমঝোতায় বাধ্য করা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, তালেবান বর্তমানে এ যুদ্ধে নিজেদেরকে বিজয়ী ভাবছে।

আফগান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ আশরাফ গনি অভিযোগ করেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান থেকে প্রায় ১০ হাজার জঙ্গি আফগানিস্তানে প্রবেশ করেছে।

এই প্রশ্নের জবাবে ইমরান খান বলেন, পাকিস্তানে প্রায় ৩০ লাখ আফগান নাগরিক বসবাস করছে, যাদের অনেকেই তালেবানের জাতিগোষ্ঠীর লোক, বিশেষ করে পশতুন জনগোষ্ঠী।

আফগানরা পাকিস্তানের যেসব ক্যাম্পে বসবাস করে সেগুলোতে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ পর্যন্ত মানুষের বসবাস। পাকিস্তানের পক্ষে কীভাবে তাদের খোঁজখবর রাখা সম্ভব?

পাক প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আফগান সংকট সমাধানের একমাত্র উপায়ে দেশটির সরকারের সঙ্গে তালেবানের একটি রাজনৈতিক সমঝোতায় উপনীত হওয়া।

তিনি বলেন, আফগানিস্তানে যুদ্ধ চলতে থাকলে পাকিস্তানকে দু’টি বিষয়ের মোকাবিলা করতে হবে।

প্রথমটা হলো, আবার পাকিস্তানে আফগান শরণার্থীদের ঢল নামবে কিন্তু সেরকম পরিস্থিতি সামাল দেয়ার মতো অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পাকিস্তানের নেই।

দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, পাকিস্তানে আফগানিস্তানের চেয়ে বেশি পশতুন বসবাস করে। যুদ্ধ চলতে থাকলে পাকিস্তানি পশতুনরা বসে থাকবে না বরং তাদের এ যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে আফগান সরকার অভিযোগ করছে যে, দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে তালেবানকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে পাকিস্তান কিন্তু এই অভিযোগ কঠোর ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেছে ইসলামাবাদ।

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম
Share on Facebook

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন এর সর্বশেষ

সর্বশেষ - মতামত