a সমকালীন প্রসঙ্গ-দিল্লি: গোলাম মাওলা রনি
ঢাকা শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২, ২৮ নভেম্বর, ২০২৫
https://www.msprotidin.com website logo

সমকালীন প্রসঙ্গ-দিল্লি: গোলাম মাওলা রনি


মুক্তসংবাদ প্রতিদিন ডেস্ক
শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২৪, ০৮:৪২
 সমকালীন প্রসঙ্গ-দিল্লি গোলাম মাওলা রনি

ছবি: গোলাম মাওলা রনি

খুশবন্ত সিংয়ের বইটি পড়ার পর আমার মধ্যে একধরনের পাগলামো শুরু হয়ে গেল। নতুনভাবে দিল্লিকে জানার জন্য আমি বইপুস্তক ঘাঁটতে শুরু করে দিলাম এবং দিল্লির মাটি ও মানুষ সম্পর্কে বাস্তব ধারণা নেয়ার জন্য নিজেকে ইবনে বতুতা, মার্কো পলো অথবা হেরোডোটাস সাজিয়ে লম্বা সময় নিয়ে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিলাম। মহাভারতে বর্ণিত ইন্দ্রপ্রস্থ কিংবা মৌর্য সম্রাট অশোকের জমানার শ্রীনিভাস পুরীর সাথে মুসলমানদের তৈরি দিল্লির কী সম্পর্ক তা জানার জন্য আমি সেবার যে কষ্ট করেছিলাম তা স্মরণ করলে নিজের হাসি থামাতে পারি না। ব্রিটিশরা কেন দিল্লিকে ১০০ বছর ধরে পাঞ্জাব প্রদেশের অধীন একটি ছোট শহর বানিয়ে রেখেছিল এবং ১৯১১ সালে হঠাৎ করে কেনই বা কলকাতা থেকে তাদের রাজধানী দিল্লিতে নিয়ে গেল তা চিন্তা করতে গিয়ে আমার মাথার চুল পড়তে শুরু করল। আর কেন বাংলাদেশের ভূখণ্ড গত পাঁচ হাজার বছর ধরে দিল্লিকে ঘৃণা করে তা খুঁজতে গিয়ে আমি প্রায় মরিমরি অবস্থায় পড়ে গিয়েছিলাম।

আজকের নিবন্ধে দিল্লি নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গেলে রীতিমতো মহাভারত রচনা করতে হবে। সুতরাং ইতিহাস বর্ণনা না করে বরং ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে আমার মনে কেন দিল্লি নিয়ে নিবন্ধ রচনার সাধ জাগল সে ব্যাপারে কিছু বলি। বাংলাদেশের ডামি নির্বাচনের কলকাঠি যে দিল্লি থেকে নাড়ানো হয়েছে তা এখন এই দেশের পাগলরাও বুঝে গেছে। অন্য দিকে যারা কলকাঠি নেড়েছে তাদের লোকজন মশকারা করে স্বামী বলার চেষ্টা করছে। অথচ শব্দটির রয়েছে বহুমাত্রিক অর্থ। সংস্কৃত শোয়ামি থেকে স্বামী শব্দের উদ্ভব যা প্রাচীন হিন্দুরীতি অনুযায়ী একটি সম্মানজনক উপাধি। কোনো নারী কিংবা পুরুষ দীর্ঘ দিন ত্যাগের পথ অনুসরণ করে যে সন্ন্যাস ধর্ম পালন করেন এবং তপস্যা করতে করতে যখন সিদ্ধি লাভ করেন তখন তাদের স্বামী উপাধি দেয়া হয়।

আমাদের দেশে স্বামী বলতে সাধারণত পুংলিঙ্গ বোঝালেও মূলত আদি উৎস সংস্কৃত ভাষায় স্বামীর কোনো লিঙ্গ নেই। এটি একটি মর্যাদাপূর্ণ উপাধি যা নারী-পুরুষ যে কারো ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে। হিন্দিতে স্বামী বলতে প্রভু, শিক্ষক, রাজপুত্র, দেবতার প্রতিচ্ছবি অথবা দেবালয় অর্থাৎ মন্দির বোঝানো হয়ে থাকে। এটি সাধারণত ভারতের উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা ও রাজস্থানে ব্যবহৃত আঞ্চলিক উপাধি যার সাথে দিল্লি-ভারতবর্ষ এবং বাংলার কী সম্পর্ক রয়েছে তা নিয়েও আজকের নিবন্ধে সাধ্যমতো আলোচনার চেষ্টা করব। কিন্তু তার আগে বাংলা ভাষায় স্বামী বলতে কী বোঝায় তা নিয়ে সংক্ষেপে কিছু বলে নিই। একজন নারীকে বিয়েশাদির মাধ্যমে অবাধে শারীরিক সম্পর্কে জড়ানার যিনি অধিকারী তিনিই স্বামী। তিনিই স্বামী যিনি তার স্ত্রীর ওপর অধিকার প্রয়োগ করেন এবং ইচ্ছেমতো বিধিনিষেধ আরোপ করেন। স্বামীর ঔরসে উৎপন্ন এবং স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তানের ওপর স্বামীর কর্তৃত্ব সীমাহীন। বৈবাহিক সম্পর্কে স্বামী একগামী কিংবা অনায়াসে বহুগামী হতে পারে, অর্থাৎ একই সাথে বহু পাত্রীর সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক রাখতে পারে। স্ত্রী যতদিন জীবিত থাকেন ততদিন পুরুষের স্বামীত্ব বজায় থাকে। স্ত্রী মারা গেলে স্বামীর উপাধি পরিবর্তন হয়ে যায় এবং তখন তাকে বিপত্মীক বলে ডাকা হয়। কিন্তু স্ত্রী যদি আইনসঙ্গতভাবে পরিত্যাজ্য হন তবুও স্বামীত্ব চলে যায় না- সে ক্ষেত্রে স্বামীকে বলা হয় প্রাক্তন স্বামী।

ডামি মার্কা নির্বাচনের পর দিল্লির বিরুদ্ধে জনগণের ঘৃণা ও ক্রোধে এক নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। দিল্লির কর্তৃত্বপরায়ণ স্বামীরা যেভাবে বাংলাদেশের ওপর গত ৫২ বছর ধরে ক্রমাগত ছড়ি ঘুরিয়ে আসছে সেই ছড়ির পরিণতি অনাগত দিনে কিরূপ হতে পারে তার কিছু নমুনা ইতিহাস থেকে বর্ণনা করছি। বাংলা নিয়ে সুলতানি আমলে কিংবা মোগল আমলে যখন দিল্লির তৎকালীন স্বামীরা বাড়াবাড়ি করেছে ঠিক তখনই বাংলা বিদ্রোহ করে বসেছে। সেই বিদ্রোহ দমন করার জন্য গিয়াস উদ্দিন বলবন, ফিরোজশাহ তুঘলক, সম্রাট আকবরের সেনাপতি মহারাজা মানসিংহ ও সম্রাট জাহাঙ্গীরের সেনাপতি মীর জুমলা বাংলাদেশে এসেছেন বটে কিন্তু যুদ্ধ করে বাঙালিকে দমাতে পারেননি। সম্রাট আওরঙ্গজেবের জমানায় দু’দফায় সুবেদার শায়েস্তা খান ২০ বছরের জন্য শান্তি স্থাপন করতে পেরেছিলেন বটে কিন্তু শেষ অবধি টিকতে পারেননি। পরে নবাব মুর্শিদ কুলি খান রাজধানী ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদ নিয়ে যাওয়ার পর শুরু হয় নতুন প্রেক্ষাপট।

ইংরেজ জমানার পুরোটা সময় পূর্ববঙ্গ-পশ্চিমবঙ্গ, বিহার-আসাম সবসময়ই ছিল অগ্নিগর্ভ। বারবার প্রশাসনিক রদবদল-বিভক্তি ও শত দমন-পীড়নেও বাংলার মাটি থেকে সূর্যসেনের মতো বিপ্লবী তৈরি হওয়া বন্ধ করতে পারেননি; বরং ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহে বাংলা বৃটিশদের কাছে কতটা গলার কাঁটা হয়েছিল তা সদরঘাটের বাহাদুর শাহ পার্কের ইতিহাস পড়লেই টের পাওয়া যায়। পাকিস্তান জমানায় দিল্লি পূর্ববঙ্গে প্রভাব বিস্তার করতে না পারলেও তাদের তাঁবেদার খয়ের-খাঁ ও এজেন্টদের মাধ্যমে পূর্ববঙ্গের শিল্পায়নের সর্বনাশ করেছিল এবং রাজনীতিতে ইন্ধন জুগিয়ে আরো সব কী করেছিল তা আমরা কমবেশি সবাই জানি।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকারের ওপর অনৈতিক চাপ, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট তৈরির জন্য আওয়ামী লীগে বিভক্তি, ছাত্রলীগে দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত এবং জাসদ-সর্বহারাদেরকে মদদ দিয়ে বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করার মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। এরশাদের সামরিক অভ্যুত্থান থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের আজকের দিন পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সাথে যা কিছু করছে তার ফলে এ দেশের বৃক্ষ-লতা-পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ থেকে শুরু করে মানুষের দেহে যে বিষ ব্যথা তৈরি হয়েছে তা ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে সহ্যের সীমা অতিক্রম করে গেছে।

ডামির আগে ভারত দেশের ছোট-বড় রাজনৈতিক দলের সাথে সমানতালে খেলেছে। প্রেস ক্লাবের সামনে যেসব ছোট ছোট দল ছোটখাটো পথসভা করে তাদের মধ্যেও সরকার গঠন করে প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতি হওয়ার লোভের বীজ বপন করেছে। দেশের ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সাথে তাদের কেমন যোগাযোগ ছিল তা তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি কিংবা তার ভাতিজা নবগঠিত সুপ্রিম পার্টির নেতা সাইফুদ্দীন মাইজভাণ্ডারির নির্বাচনী প্রতীক একতারার তারের বেহাল দশা দেখলেই বোঝা যাবে। হেফাজতের একাংশ, সিলেটের ফুলতলী পীর কিংবা আটরশির ফয়সালের গোলাপ ফুলের করুণ দশার পর তাদের কাছে যদি এখন কোনো ভারতীয় এজেন্ট কথা বলতে যায় তবে মাজারপন্থীদের মেজাজ ঠিক থাকবে না।

ডামির আগে বিএনপি-জামায়াত-জাতীয় পার্টিকে নিয়েও ভারত খেলেছে এবং সবাইকে ফাঁকি দিয়ে জুয়ার ধন তুলে দিয়েছে প্রিয়জনের হাতে। ফলে ডামি নির্বাচন-পরবর্তী সময় পরিবেশ ও প্রতিবেশ এখন দিল্লির জন্য দুর্বোধ্য, ভয়ঙ্কর ও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হয়ে পড়েছে।

দিল্লি সম্পর্কে এত কিছু বলার অর্থ হলো, দিল্লির প্রকৃতি ও পরিবেশ মহাকাল থেকেই জীবাণুযুক্ত। দিল্লির কবলে পড়লে ফেরেশতা কিভাবে শয়তানে পরিণত হয় তা খুশবন্ত সিংয়ের দিল্লি উপন্যাসের পরতে পরতে উল্লেখ করা হয়েছে। একইভাবে প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ফিরিসতা রচিত তারিখ-ই-ফিরিসতা গ্রন্থে এবং গুলশান-ই-ইব্রাহিমি গ্রন্থে মুসলিমদের ভারত বিজয়ের আগের সর্বভারতীয় ইতিহাস বর্ণনা করে গেছেন। দিল্লিকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ ভারত, আফগানিস্তান ও উত্তর ভারতের হাজার বছরের ক্ষোভ ফিরিসতা গ্রন্থে অসাধারণভাবে উপস্থাপন করেছেন। দিল্লির প্রতাপশালী শাসকদের মধ্যে একমাত্র সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক দিল্লির মাটি ও মানুষের বিষাক্ত রসায়ন বুঝতে পেরে তার রাজধানী দিল্লি থেকে দেবগিরিতে স্থানান্তর করেছিলেন। পৃথিবীর তাবৎ সুসভ্য ও মেধাবী অভিযানকারী দিল্লিতে স্থায়ী হননি। আলেকজান্ডার, চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য, অশোক, পৃথ্বিরাজ চৌহান, মুহাম্মদ ঘুরি প্রমুখ দিল্লির মাটি স্পর্শ করেননি। হর্ষবর্ধন-শশাঙ্ক, শিবাজি রাও, রণজিৎ সিং যেমন দিল্লির নাম শুনতে চাননি তদ্রুপ মহাভারতের পাণ্ডব-কৌরবরা দিল্লির পার্শ্ববর্তী হরিয়ানায় যুদ্ধ করেছে কিন্তু তৎকালীন দিল্লি অর্থাৎ ইন্দ্রপ্রস্থের ধারে কাছেও যায়নি।

নাদির শাহ, আহম্মদ শাহ আবদালি এবং তৈমুর লং ভারত জয় করলেও দিল্লিতে অবস্থান করেননি। এমনকি দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলো যথা অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক, কেরালা, তামিলনাড়– ও তেলেঙ্গানা অঞ্চলে বিগত হাজার বছরের ইতিহাসে অনেক বড় রাজবংশ, রাজাধিরাজ তৈরি হয়েছেন কিন্তু তারা দক্ষিণ ভারত নিয়েই সন্তুষ্ট ছিলেন। ব্রিটিশ ভারতে সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেল ও মহাত্মা গান্ধী ছাড়া অন্য কেউ দিল্লির কেন্দ্রীয় রাজনীতির ব্যাপারে উৎসাহী ছিলেন না। আর সেই দক্ষিণ ভারত থেকেই নরেন্দ্র মোদি বাবরি মসজিদ ভেঙে উগ্র হিন্দুত্ববাদের দেবতা হয়ে দিল্লির মসনদে বসে দিল্লির বিষাক্ত ইতিহাসের সাথে নিজের রক্তাক্ত হাতের ছোঁয়া লাগিয়ে ভারতবর্ষে কী সব কাণ্ড করে চলেছেন তা আমরা সবিস্তারে না জানলেও বাংলাদেশে যা কিছু করেছেন তা আমাদের রক্ত-মাংসের ভেতর এমনভাবে ঢুকে গেছে যার প্রতিক্রিয়া জন্ম-জন্মান্তরে আমাদের পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে প্রবাহিত হতে থাকবে।

আমরা আজকের আলোচনার একদম শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। দিল্লির স্বামীদের অনাগত পরিণতি বাংলার জমিনে কী হবে তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। তবে হালআমলে তারা আফগানিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান ও মালদ্বীপ থেকে যেভাবে বিতাড়িত হয়েছে তার চেয়েও করুণ পরিণতি তাদের উপহার দেয়ার জন্য বাংলার আকাশ-বাতাস-স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং প্রকৃতি ও পরিবেশ অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। সূত্র: নয়া দিগন্ত

লেখক: গোলাম মাওলা রনি: সাবেক সংসদ সদস্য, লেখক ও সাংবাদিক

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

মোদি অসত্য কথা বলেছেন


আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
শুক্রবার, ০২ এপ্রিল, ২০২১, ০৪:২৩
মোদি অসত্য কথা বলেছেন

লেখক সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দুই দিনের বাংলাদেশ সফর সফল না ব্যর্থ? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে একমাত্র দিল্লির সাউথ ব্লক এবং ঢাকার সেগুনবাগিচা। কিন্তু ভারতে মোদিবিরোধী প্রতিক্রিয়া এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, অবিজেপি-শাসিত সব রাজ্যের নেতারা ধিক্কার জানিয়েছেন। বিশ্বের অন্যতম বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং লিখিত বিবৃতি দিয়ে মোদিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছেন, মোদির বক্তব্যে একটা বিষয় পরিষ্কার, ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ যে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, যার সহযোদ্ধা ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী- এ কথা বিশ্ব জানে, জানে বাংলাদেশ, জানে ভারতবর্ষ। সেখানে বিজেপির আরেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির কোনো ভূমিকাই ছিল না। তিনি কোনো সংগঠনও তৈরি করেননি, আর বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাকিস্তান-আমেরিকা বিরোধী কোনো আন্দোলনও করেননি। 

মোদি তাঁর বক্তব্যে শুধু ইন্দিরাজিকেই অপমান করেননি, অটলজিকেও অপমান করেছেন। মোদি ঢাকায় বলেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় তিনি সত্যাগ্রহ করেছেন। একজন প্রধানমন্ত্রীর বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে এমন অসত্য বিবৃতি দেওয়া দেশের পক্ষে অপমানজনক বলে মনমোহন সিং মনে করেন। মোদির তখন বয়স ছিল আঠারো কি উনিশ। তখন তিনি আরএসএস স্কুলের ছাত্র। ভারতের ইতিহাস বিকৃত করার কোনো অধিকার তার থাকা উচিত নয়। ঢাকায় তিনি তাঁর বক্তব্যের মধ্যে যে এ ধরনের বজ্জাতি করবেন তা ঢাকা সফরের চার দিন আগেই জানা গিয়েছিল। কারণ ঢাকা সফরের এক সপ্তাহ আগে থেকেই বিজেপি অফিস প্রচার করে মোদি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে সত্যাগ্রহ করেছিলেন। 

মনমোহন সিং তাঁর বিবৃতিতে আরও বলেছেন, এ অসত্য বিবৃতি দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের কাছে তাঁর ক্ষমা চাওয়া উচিত। ঢাকায় তাঁর উক্তির পরে ভারতের আরটিআই (তথ্য জানার অধিকার), যে আইনটি মনমোহনের আমলেই হয়েছিল, সে আইনটিও তুলে দেওয়ার জন্য মোদি এবং অমিত শাহ আদাজল খেয়ে উঠেপড়ে লেগেছেন।

Bangladesh Pratidinমনমোহন সিং মোদির ঢাকা সফরের বিকৃতি নিয়ে এতই ক্ষুব্ধ যে তিনি মোদির উদ্দেশে বলেছেন, দোহাই আপনার, দেশের বর্তমান প্রজন্ম তো বটেই নবীন প্রজন্মের কাছেও ইতিহাস বিকৃত করবেন না। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না, আপনাকেও করবে না। ’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর ইন্দিরাজি লোকসভায় যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা ঘোষণা করছিলেন তখন অটলজি দাঁড়িয়ে বলেছিলেন (সংসদের রেকর্ড দেখতে পারেন), আপনি দেবী দুর্গা। আপনি এক অসাধারণ কাজ করেছেন। 

মোদি আপনার বিবৃতিতে তো সে কথাটি বলেননি। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর আপনি বলেছিলেন আর এখনো বলছেন, আপনি গান্ধী পরিবারকে ইতিহাস থেকে পুরোপুরি মুছে দেবেন। মনমোহন সিং বলেছেন যারা ইতিহাস মুছে ফেলার কথা বলেন তারা মূর্খের স্বর্গে বাস করেন। ইতিহাস ইতিহাসই। আপনার জানা উচিত গুজরাট দাঙ্গায় শত শত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ নিহত হওয়ার সময়ে সংসদে দাঁড়িয়ে বিজেপির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলজি বলেছিলেন, আপনি রাজধর্ম পালন করেননি। তিনি আপনাকে পদ থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আপনি লালকৃষ্ণ আদবানির বদান্যতায় সেদিন গুজরাটের ক্ষমতায় থেকে গিয়েছিলেন। 

বাজপেয়িজি আমাদের সবার শ্রদ্ধার পাত্র, তাই তাঁকে নিয়ে বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে অসত্য কথা বলা শুধু অন্যায় নয়, অপরাধ। এ অপরাধের কোনো ক্ষমা নেই। আপনি বাংলাদেশে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে ভোটে জেতার জন্য মন্দিরে মন্দিরে পুজো দিয়েছেন। পুজো দেওয়ার অধিকার আপনার আছে, কিন্তু সে পুজো পুঁজি করে ভোটব্যাংক তৈরি বা ক্ষমতা দখলের চেষ্টার কোনো অধিকার আপনার নেই।

মোদির বাংলাদেশ সফরের এক দিন পর নিখিল ভারত কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা সাংবাদিকদের ডেকে কয়েকটি প্রশ্ন তুলেছেন। তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যা, ইন্দিরা গান্ধী ও তাঁর পুত্র এবং পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে হত্যার ইতিহাস আপনার অজানা থাকার কথা নয়। অথচ আপনি এ ব্যাপারে একটি শব্দও ঢাকায় উচ্চারণ করেননি। 

সুরজেওয়ালা আরও বলেছেন, বাজপেয়িজির প্রধানমন্ত্রিত্বের আমলে সংসদে সন্ত্রাসবাদীদের হামলার সময় অটল বিহারি বাজপেয়ি প্রথম ফোনটি পান তখনকার বিরোধী দলের নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর কাছ থেকে। সোনিয়া গান্ধী ফোন তুলেই অটলজিকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কোথায় আছেন? কেমন আছেন? সে বছরই সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিয়ে অটল বিহারি বাজপেয়ি সাংবাদিকদের এ গোপন কথাটি উল্লেখ করে বলেছিলেন, নীতিগতভাবে আমাদের মধ্যে যত বিভেদই থাক, আমরা ভারতবাসী হিসেবে এক এবং ঐক্যবদ্ধ। দেশের গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সার্বভৌমত্ব আমাদের সবার কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্যই সংসদ হামলার সময় বিরোধী দলের নেত্রী হয়েও সোনিয়াজি আমার কুশল জিজ্ঞেস করেছিলেন। এই হলো সৌজন্য। 

রাজীব গান্ধী হত্যার পর তাঁর শোকসভায় দাঁড়িয়ে অটল বিহারি বাজপেয়ি বলেছিলেন, রাজীব গান্ধী যখন প্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘের বার্ষিক অধিবেশনে যোগ দিতে যাবেন, তখন তিনি খবর পেলেন অটলজি খুব অসুস্থ, তাঁর বিদেশে চিকিৎসা দরকার। রাজীব অটলজিকে বললেন, আপনাকে আমার সঙ্গে নিউইয়র্কে যেতে হবে। আপনার চিকিৎসা দরকার। রাজীব গান্ধী কোনো দিন কাউকে এ কথা বলেননি। তিনি অটলজিকে সঙ্গে নিয়ে নিউইয়র্কে যান এবং তাঁর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেশে ফিরে আসেন। কিন্তু এ কথাটি ফাঁস করে দেন অটলজি, রাজীব গান্ধীর হত্যার পর তাঁর স্মরণসভায়। এটাই ছিল ভারতের গণতন্ত্র ও সৌজন্য।

মোদির ঢাকা সফরের পর অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন বিদেশ সচিবের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তারা দেখেছেন নেহরু থেকে নরসীমা রাও বা মনমোহন সিং সবাই এক অসামান্য সৌজন্যবোধ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি পেশাগত কারণে নয় মাসের প্রতিদিনের বড় বড় ঘটনার সাক্ষী ছিলাম এবং আনন্দবাজারে তার রিপোর্টও করেছি। কিন্তু কোনো দিন দেখিনি জনসংঘের কোনো নেতা বা কর্মী বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য রাস্তায় বেরিয়েছেন। 

মোদির এ আত্মপ্রচার এবং ক্ষমতার দম্ভে ভারতবর্ষের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে শিক্ষাবিদ, ইতিহাসবিদ, রাজনীতিবিদ সবাই উদ্বিগ্ন। সবার একটাই শঙ্কিত প্রশ্ন- এ দেশটাকে মোদি-শাহরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? ক্ষমতা দখলই কি শেষ কথা? মনুষ্যত্ববোধ বলে কিছু থাকবে না? থাকবে না সৌজন্যবোধ?

লেখক : প্রবীণ সাংবাদিক [ভারত]। সংগৃহীত:বিডিপ্রতিদিন

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

আরও পড়ুন

ঈদ উপহারের জন্য অন্তঃসত্ত্বা বউকে হত্যা


এম.এস প্রতিদিন ডেস্ক
সোমবার, ১০ মে, ২০২১, ১১:৪৬
ঈদ উপহারের জন্য অন্তঃসত্ত্বা বউকে হত্যা

ফাইল ছবি

সিলেটের ওসমানীনগরে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ নিহতের স্বামী আরশ আলী ও শাশুড়ি মিনারা বেগমকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গত রবিবার (৯ মে) দুপুরে স্থানীয় থানায় কনে পক্ষ হত্যা মামলা দায়ের করলে অভিযুক্তদের  গ্রেফতার করে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত।

ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিহতের বড় ভাই ইসলাম উদ্দিন শনিবার (৮ মে) রাতে নিহতের স্বামী এবং শ্বাশুড়িকে আসামি করে ওসমানীনগর থানায় মামালা দায়ের করেন। পুলিশ জানায়, গত শনিবার দুপুরে সিলেটের  ওসমানীনগর উপজেলার উসমানপুর ইউনিয়নের তাহিরপুর গ্রামের মৃত ইছন আলীর বাড়ি থেকে নিহত শরিফা বেগমের (২০) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের দাগ বিদ্যমান ছিল। নিহত শরিফা সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বলে দাবি তার পরিবারের।

তবে স্বামী ও শাশুড়ির অভিযোগ ছিল, শরিফা আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু শনিবার দুপুরে তার স্বামীর নিজ ঘরের বিছানা থেকে গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওসমানীগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল বণিক বলেন, ‘এ ঘটনায় নিহতের ভাই মামলা দায়ের করেন। আসামীদের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।’

এদিকে নিহত শরিফার পারিবার থেকে জানতে পারা যায়, প্রায় ৯ মাস আগে ওসমানীনগর উপজেলার উসমানপুর ইউনিয়নের তাহিরপুর গ্রামের মৃত ইছন আলীর ছেলে আরশ আলীর সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার পুটিয়া গ্রামের শাকিম উল্লাহর ছোট মেয়ে শরিফার। বিয়ের অল্পকিছুদিন পর থেকেই যৌতুকসহ নানা কারণে স্বামী আরশ আলী ও শাশুড়ি মিনারা বেগম তার ওপর বিভিন্ন সময় অত্যাচার নির্যাতন শুরু করেন। বিষয়টি নিহতের পরিবার জানা সত্ত্বেও শরিফা অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় কারণে তার বাবা মা তাকে এসব সহ্য করে শ্বশুরবাড়িতেই থাকার কথা বলে।

পরিবারের অভিযোগ, এই রমজানে আরশ আলী শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে যান। এ সময় ইফতার দিতে কিছুটা  দেরি করার নানা কথা শোনান স্বামী। এছাড়া তাকে কেন আলাদাভাবে সাজানো থালায় ইফতার দিল না এ নিয়ে তাদের উভয়ের মাঝে তুমুল ঝগড়া হয়।

গত শুক্রবার (৭ মে) সন্ধ্যায় শরিফার বাবা তার স্বামীসহ অন্যান্য সদস্যদের জন্য ঈদের উপহার এখনো কেন নিয়া আসে নাই তা নিয়ে আবার ঝগড়া শুরু হয়। ঘটনার একপর্যায়ে শরিফাকে তার স্বামী ও শাশুড়ি মারধর করে। বিষয়টি সাথে সাথেই তার ভাইকে ফোন করে জানান শরিফা। পর সাহরির সময়ে শরিফার মোবাইল বন্ধ পান তার পরিবার। পরে যখন নতুন জামা কাপড় নিয়ে শরিফার বোন রওয়ানা হন পথিমধ্যে খবর পান শরিফা ভীষণ অসুস্থ তার এসে দেখেন তার বোন চিরতরে ঘুমিয়ে গেছে।

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / khurshedalm@msprotidin.com
Share on Facebook

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন এর সর্বশেষ

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন এর জনপ্রিয়

সর্বশেষ - মতামত