a
ফাইল ছবি
হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক রিসোর্ট কান্ডের পর হঠাৎ ধাক্কা খেয়েছে হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক কার্যক্রম। পাশাপাশি সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ কয়েকজন নেতা আটক হয়েছেন। অনেকে গ্রেফতার আতঙ্কে আছেন। এমতাবস্থায় সাংগঠনিক স্থবিরতা কাটাতে নানা ধরণের উদ্যোগী নিচ্ছেন হেফাজত ইসলাম।
ধরপাকড়, মামলা, গ্রেফতার ও সরকারের চাপ মোকাবিলায় নানা তৎপরতা শুরু করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। তারা দেশের প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কমিটি গঠন, জেলায় জেলায় আইনি সহায়তা সেল গঠন এবং বিভিন্ন দূতাবাসে স্মারকলিপি দেওয়াসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত হাতে নিয়েছে। এছাড়া সমমনা ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করবে বলে জানা গেছে।
রবিবার হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির রুদ্ধদ্বার বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও মহানগরে হেফাজতের কমিটি রয়েছে। এর বাইরে সারাদেশে ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠন করাসহ সংগঠনকে এগিয়ে নিতে ‘সাংগঠনিক সেল’ গঠিত হয়। এই সেলের দায়িত্ব দেওয়া হয় যুগ্ম-মহাসচিব জুনায়েদ আল হাবিব, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী ও সহকারী মহাসচিব মুফতি শাখাওয়াত হোসেনকে। তাদের মধ্যে আজিজুল হক ইসলামাবাদী বৈঠক শেষে বাড়ি ফেরার পর গ্রেফতার হন।
জুনায়েদ আল হাবিব বৈঠকের বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, সাংগঠনিক সেলের মাধ্যমে এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে সারা দেশের কমিটিগুলোর কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করা হবে। এ জন্য রোববারের সভায় তিনজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ফাইল ছবি
কলকাতাভিত্তিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের 'কূটনৈতিক বার্তা' সত্যি হলে সেটি অপ্রত্যাশিত ও দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ভারতের মতো একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কাছে এটা অপ্রত্যাশিত, যদি সংবাদ সত্য হয়ে থাকে। আমরা আশা করবো বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে মর্যাদা দেবে ভারত।
স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার (১৯ আগস্ট) সকালে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভারত সবসময় গণতন্ত্রের কথা বলে। আমরা আশা করবো, এই দেশে সকল দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ-নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যাপারে ভারত পূর্ণ সমর্থন দেবে।
এই কথা বিএনপি কখনও বলতো না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বলতে বাধ্য হচ্ছি। আমরা দেখতে পাচ্ছি, যদি কলকাতাভিত্তিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর সত্য হয়ে থাকে, তবে ভারত বাংলাদেশের রাজনীতির আভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বাংলাদেশে কোনো মৌলবাদী দলের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা নেই।বাংলাদেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে দেখা গেছে, কখনোই কোনো মৌলবাদী দল ক্ষমতায় আসতে পারেনি। বরং তাদের যে শক্তি তা দিন দিন ক্ষীয়মান হয়ে এসেছে।
বিএনপি নেতা বলেন, আমরা বাংলাদেশের মানুষের আস্থার ওপর আস্থা রাখি। তাদের শক্তির ওপর আস্থা রাখি।
ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আওয়ামী লীগ পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে তারা মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করেছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করেছে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করেছে। এই সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করেছে এবং এখন বাংলাদেশের মানুষকে জিম্মি করে তারা একটা রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, দেশের জনগণ আজকে এক হয়েছে, সব দলগুলো এক হয়েছে, তারা তাদের অধিকার-ভোটের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য লড়াই শুরু করেছে। এই একদফা লড়াইয়ে জনগণ জয়ী হবে নিশ্চয়ই। সূত্র: ইত্তেফাক
ফাইল ছবি
বিপুলসংখ্যক মৃত্যুর জন্য তুরস্ক সরকার ভূমিকম্পের তীব্রতাকে দায়ী করলেও তুরস্কের সাধারণ মানুষ ও বিশেষজ্ঞরা ভবন নির্মাণে অনিয়মকেই এর জন্য দায়ী করছেন।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তুরস্কের ইস্তাম্বুলের একটি বহুতল ভবন ধসে ২১ জনের মৃত্যু হয়। তদন্তে দেখা যায়, আটতলা ভবনের ওপরের তিনটি তলা নির্মাণ করা হয়েছিল অবৈধভাবে। কিন্তু ভবনটির মালিকপক্ষ স্রেফ কিছু অর্থ জরিমানা দিয়ে ভবনটি বৈধ করে নিয়েছিল।
তুরস্কের মতো ভূমিকম্পপ্রবণ একটি দেশে ভবন নির্মাণের সময় নিরাপত্তা-সংক্রান্ত নীতিমালা না মানার পরও জরিমানা দিয়ে ‘ক্ষমা’ পাওয়ার এ সুযোগ বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে সতর্ক করে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা। ২০১৯ সালের ভবন ধসের পর চেম্বার অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্সের চেয়ারম্যান সেমাল গোকচে বলেছিলেন, এর অর্থ হলো আমাদের শহরগুলো, বিশেষত ইস্তাম্বুলকে কবরস্থানে পরিণত করা এবং আমাদের ঘরগুলো থেকে কফিন বের করার পরিস্থিতি তৈরি করা।’ (টার্কিশ সিটিজ কুড বিকাম ‘গ্রেভইয়ার্ডস’ উইথ বিল্ডিং অ্যামনেস্টি, ইঞ্জিনিয়ার্স সে, রয়টার্স, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯)
চার বছর যেতে না যেতেই তুরস্কের প্রকৌশলীদের সেই আশঙ্কা সঠিক প্রমাণিত হলো। ৬ ফেব্রুয়ারি ভয়াবহ ভূমিকম্পে হাজার হাজার ভবন ধসে সিরিয়া ও তুরস্কের এক বিশাল অঞ্চল আক্ষরিক অর্থেই কবরস্থানে পরিণত হয়েছে। ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ২৪ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, যার মধ্যে তুরস্কের অধিবাসী প্রায় সাড়ে ২০ হাজার।
এই বিপুলসংখ্যক মৃত্যুর জন্য তুরস্ক সরকার ভূমিকম্পের তীব্রতাকে দায়ী করলেও তুরস্কের সাধারণ মানুষ ও বিশেষজ্ঞরা ভবন নির্মাণে অনিয়মকেই এর জন্য দায়ী করছেন। ইস্তাম্বুলের বোগাজিচি ইউনিভার্সিটির কান্দিলি অবজার্ভেটরি অ্যান্ড আর্থকোয়েক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মুস্তাফা এরদিক আল-জাজিরাকে বলেছেন, ‘ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা এত বেশি হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো যথাযথ মান বজায় রেখে ভবন নির্মাণ না করা।’
তুরস্কের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশের উচিত হবে অবিলম্বে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের দুর্বল অবকাঠামোর ভবন চিহ্নিত করে সেগুলোর সংস্কারের কর্মসূচি হাতে নেওয়া, নতুন ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড মানা হচ্ছে কি না, তার তদারকি নিশ্চিত করা, ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতা ও চিকিৎসার সমন্বিত পরিকল্পনা তৈরি ও তার নিয়মিত ড্রিল করা, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসহ পরিষেবাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোকে ভূমিকম্পসহনীয় করা।
অথচ আনাতোলিয়ান ফল্ট লাইনের ওপর অবস্থিত হওয়ায় তুরস্ক মারাত্মক ভূমিকম্পপ্রবণ একটি অঞ্চল। এর আগে ১৯৯৯ সালে দেশটির উত্তর-পশ্চিমে ইজমিত অঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ১৭ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। বিভিন্ন সময় ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির শিকার তুরস্কে ভবন নির্মাণে কঠোর আইন প্রণয়ন করা হয়, যার সর্বশেষ সংস্করণটি করা হয় ২০১৮ সালে। কিন্তু এসব আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ায় এবং সময়-সময় জরিমানার বিনিময়ে ক্ষমার ব্যবস্থা থাকায় তুরস্কের পুরোনো ভবনগুলোকে যেমন ভূমিকম্পসহনীয় করা হয়নি, তেমনই নতুন নির্মিত অনেক ভবনও ভূমিকম্পপ্রতিরোধী করে নির্মিত হয়নি।
বিবিসির অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শুধু পুরোনো ভবনই নয়, এমনকি সদ্য নির্মিত অনেক ভবনও ভূমিকম্পে ধসে গেছে, যা এসব ভবন নির্মাণে অনিয়মকেই নির্দেশ করে। তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোয় প্রায় ৭৫ হাজার ভবন ওই ক্ষমার আওতায় এসেছিল। (টার্কি আর্থকোয়েক: হোয়াই ডিড সো মেনি বিল্ডিংস কলাপস?, বিবিসি, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩)
তুরস্কের ক্ষমতাসীন এরদোয়ান সরকার বরাবরের মতো ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে জরিমানার বিনিময়ে বিল্ডিং কোড ভঙ্গ করে নির্মাণ করা ভবনের বৈধতা দেওয়ার কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল। সে সময় জরিমানার বিনিময়ে ক্ষমার জন্য ১ কোটি আবেদন জমা পড়ে, যার মধ্যে থেকে ১৮ লাখ আবেদন মঞ্জুর করা হয়। ভবন নির্মাণে অনিয়মকে এভাবে ক্ষমা করে ২০১৯ সাল নাগাদ তুরস্ক সরকারের আয় হয় ৩১০ কোটি ডলার। (টার্কিশ সিটিজ কুড বিকাম ‘গ্রেভইয়ার্ডস’ উইথ বিল্ডিং অ্যামনেস্টি, ইঞ্জিনিয়ার্স সে, রয়টার্স, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯)
তুরস্কে ভবন নির্মাণে অনিয়ম ও ভূমিকম্পে বিপুল হতাহতের এ ঘটনা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে। তুরস্ক-সিরিয়ার মতো বাংলাদেশও ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা, সিলেট সীমান্তে সক্রিয় ডাউকি ফল্টের অবস্থান ও টাঙ্গাইলের মধুপুর ফল্টের অবস্থান এবং উত্তর-পূর্বে সীমান্তসংলগ্ন ইন্ডিয়ান প্লেট ও ইউরেশিয়ান প্লেটের সংযোগস্থল হওয়ায় বাংলাদেশ ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ১৮৭০ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত বড় আকারের বেশ কয়েকটি ভূমিকম্প হয়েছে এ অঞ্চলে। পরবর্তী সময়ে ছোট ছোট কিছু ভূমিকম্প হলেও বড় মাত্রার কোনো ভূমিকম্প হয়নি।
তবে গত ১০০ বছরে বড় কোনো ভূমিকম্প না হওয়ায় ছোট কম্পনগুলো শক্তি সঞ্চয় করে সামনে বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা তৈরি করছে বলে মনে করছেন ভূতত্ত্ববিদেরা। বাংলাদেশে তুরস্কের মতো শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে বিশেষত রাজধানী ঢাকাসহ ঘনবসতিপূর্ণ শহরের ভবনগুলোর কত শতাংশ টিকে থাকবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
বাংলাদেশে ইমারত নির্মাণ আইন ও বিধিমালা থাকলেও ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে তা যথাযথভাবে মেনে না চলার অভিযোগ বহুদিনের। আর আইন মেনে চলতে বাধ্য করবার ব্যাপারে নগরকর্তৃপক্ষের গাফিলতিও সুবিদিত,তারা মাঝে মাঝে অভিযান চালালেও ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম ও নিয়মিত তদারকির অভাবে পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হচ্ছে না। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সূত্র ধরে বণিক বার্তা জানাচ্ছে, দেশের শহরাঞ্চলের নির্মাণ করা ও নির্মাণাধীন ৬০ শতাংশ ভবনই তৈরি হচ্ছে বা হয়েছে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে।
এর মধ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর আওতাধীন ভবনের ৬৫.০৩ শতাংশ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতাধীন ২৮.৫৭ শতাংশ, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ৫৩.৬৯ শতাংশ, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ৬৭.৯৬ শতাংশ, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ২৫.৩৭ শতাংশ এবং জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের আওতাধীন ভবনের ২৪.৫৩ শতাংশ ভবন নানা ধরণের নিয়ম ভঙ্গ করে তৈরী।
ভবন নির্মাণে অনিয়মের মধ্যে রয়েছে অনুমোদিত উচ্চতার বেশি উঁচু ভবন নির্মাণ, নকশার বাইরে গিয়ে ভবন সম্প্রসারণ, আবাসিক ভবনের অনুমোদন নিয়ে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ, ভবনের চারপাশে প্রয়োজনীয় খোলা জায়গা না রাখা, যথাযথ অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা না রাখা ইত্যাদি। (শহরাঞ্চলের ৬০% ভবন নির্মাণে নিয়মের ব্যত্যয়, ২০ জানুয়ারি ২০২২, বণিক বার্তা) এভাবে অনিয়মের মাধ্যমে নির্মিত ভবনগুলো ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে মারাত্বক বিপর্যয়ের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি (সিডিএমপি) কর্তৃক ২০০৯ সালে তৈরি একটি রিপোর্ট অনুসারে, শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৮৩ শতাংশ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৯২ শতাংশ এবং সিলেট সিটি করপোরেশনের ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এসব নগরে পুরোপুরি ভেঙে পড়া ভবনের সংখ্যা হবে যথাক্রমে ২ লাখ ৩৮ হাজার, ১ লাখ ৪২ হাজার এবং ৫০ হাজার। ঢাকায় ৭৪৮টি পানির পাম্প, ৭টি গ্যাস কম্প্রেসর স্টেশন এবং ৫৪ হাজার বৈদ্যুতিক স্থাপনা, চট্টগ্রামে ৭২টি পানির পাম্প, ২২টি গ্যাস কম্প্রেসর স্টেশন এবং ২৮ হাজার বৈদ্যুতিক স্থাপনা ও সিলেটে ১৮টি পানির পাম্প, ১টি গ্যাস কম্প্রেসর স্টেশন এবং ৯ হাজার বৈদ্যুতিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ঢাকায় পানির পাইপে ১ হাজার ১৬টি ও গ্যাস পাইপে ৬৮৪টি স্থানে, চট্টগ্রামে পানির পাইপে ৭২৭টি ও গ্যাস পাইপে ২২৯টি স্থানে এবং সিলেটে পানির পাইপে ১২২টি ও গ্যাস পাইপে ৯৭টি স্থানে লিকেজ বা ছিদ্র তৈরি হবে। এ ছাড়া ঢাকায় ১০৭টি, চট্টগ্রামে ৩৬টি এবং সিলেটে ১৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটবে। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের সিট পাওয়া যাবে ঢাকায় মোট সিটের ১২ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৪ শতাংশ এবং সিলেটে ১ শতাংশেরও কম। রাত দুইটায় ভূমিকম্প হলে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে মৃতের সংখ্যা হবে যথাক্রমে ২ লাখ ৬০ হাজার, ৯৫ হাজার ও ২০ হাজার।
আর বেলা দুইটায় ভূমিকম্প হলে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে মৃতের সংখ্যা হবে যথাক্রমে ১ লাখ ৮৩ হাজার, ৭৩ হাজার ও ১৪ হাজার। (সূত্র: আর্থকোয়েক রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট অব ঢাকা, চিটাগং অ্যান্ড সিলেট সিটি করপোরেশন এরিয়া, কমপ্রিহেনসিভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম, ২০০৯, পৃষ্ঠা xi- xiii)
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির এই রিপোর্ট তৈরির পর এক যুগেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে, এ সময়ে নিয়ম না মেনে তৈরি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা আরও বেড়েছে। কিন্তু ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি কমানো বা উদ্ধার তৎপরতার প্রস্তুতির কোনো অগ্রগতি নেই। পুরোনো ভবনগুলোকে ঝুঁকিমুক্ত করার কোনো উদ্যোগ নেই, নতুন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে যথাযথ নকশা মানা হচ্ছে কি না এবং রড, সিমেন্ট, বালুর যথাযথ ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, তা-ও দেখার কেউ নেই।
এ অবস্থায় ঢাকায় সাতের বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন তো ধ্বংস হবেই, সেই সঙ্গে নিয়ম না মেনে ও জলাশয় ভরাট করে তৈরি নতুন ভবনও ধসে পড়বে। রানা প্লাজা ধস-পরবর্তী অভিজ্ঞতা দেখিয়ে দিয়েছে ভূমিকম্পে বিপুল ধ্বংসযজ্ঞ হলে আমাদের উদ্ধার তৎপরতার সামর্থ্য কত সীমিত। এ অবস্থায় ধ্বংসস্তূপ থেকে মানুষকে উদ্ধার, চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, ভূমিকম্প-পরবর্তী পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাস সংযোগ সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনা ও অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলা নিয়ে কেমন অসহনীয় একটা পরিস্থিতি হবে, তা অনুমান করাও কঠিন।
ভূমিকম্প একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কিন্তু এর ক্ষয়ক্ষতি পুরোপুরি রাজনৈতিক। ভূমিকম্প প্রতিরোধ করা যায় না, কিন্তু যথাযথ প্রস্তুতি ও পরিকল্পনার মাধ্যমে ভূমিকম্পে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা যায়।
তুরস্কের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশের উচিত হবে অবিলম্বে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের দুর্বল অবকাঠামোর ভবন চিহ্নিত করে সেগুলোর সংস্কারের কর্মসূচি হাতে নেওয়া, নতুন ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড মানা হচ্ছে কি না, তার তদারকি নিশ্চিত করা, ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতা ও চিকিৎসার সমন্বিত পরিকল্পনা তৈরি ও তার নিয়মিত ড্রিল করা, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসহ পরিষেবাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোকে ভূমিকম্পসহনীয় করা।
দুর্বল অবকাঠামোর ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঝুঁকি অনেক বেশি, বড় আকারের ভূমিকম্প নিয়মিত হয় না বলে ভূমিকম্প মোকাবিলার প্রস্তুতিতে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। সূত্র: প্রথম আলো
লেখক: কল্লোল মোস্তফা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবেশ ও উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক লেখক। ই-মেইল: kallol_mustafa@yahoo.com