a ই-অরেঞ্জের অন্যতম ‘পৃষ্ঠপোষক’ পুলিশ কর্মকর্তা ভারতে আটক
ঢাকা শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২, ২১ নভেম্বর, ২০২৫
https://www.msprotidin.com website logo

ই-অরেঞ্জের অন্যতম ‘পৃষ্ঠপোষক’ পুলিশ কর্মকর্তা ভারতে আটক


এমএস.প্রতিদিন ডেস্ক:
শনিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ০৯:৩৪
ই-অরেঞ্জের অন্যতম ‘পৃষ্ঠপোষক’ পুলিশ কর্মকর্তা ভারতে আটক

ফাইল ছবি

গ্রাহকের কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত বিতর্কিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের ‘পৃষ্ঠপোষক’ বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা ভারতে আটক হয়েছেন। 

শুক্রবার ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফের) সদস্যরা পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার চ্যাংরাবান্ধা সীমান্তে আটক করে।

শনিবার ভারতীয় এক গণমাধ্যমে খবর পাওয়া যায় যে, অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে শুক্রবার কোচবিহার জেলার চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত থেকে সোহেল রানা নামে এক বাংলাদেশিকে আটক করেছে বিএসএফ। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বলেছে, আটকের সময় তার কাছ থেকে বিদেশি পাসপোর্ট, একাধিক মোবাইল এবং এটিএম কার্ড জব্দ করা হয়েছে। তাকে মেখলিগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা করেছে বিএসএফ।

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে নিজ অফিস করেছেন সোহেল রানা। এরপর থেকে আর থানায় আসেননি, রিপোর্টও দেননি, ছুটিও নেননি বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগে উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. আসাদুজ্জামান। তার ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণমাধ্যম সূত্রে খবর পাচ্ছি তিনি নেপাল-ভারত সীমান্তে বিএসএফের হাতে আটক হয়েছেন। তবে আমরা এখনো তা নিশ্চিত হতে পারিনি। বনানী থানার ওসি (তদন্ত) সোহেল রানা ও আটক সোহেল রানা একই ব্যক্তি কি না তা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নূরে আজম মিয়া বলেন, এখন তিনি কোথায় আছেন সেই তথ্য আমাদের কাছে নেই। বিজিবির পরিচালক (অপারেশন্স) লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান বলেন, ভারত- নেপাল সীমান্তে সোহেল রানা নামে এক বাংলাদেশি আটক হয়েছেন বলে শুনেছি। কিন্তু আমরা বিএসএফের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পাইনি। সোহেল রানা আটক হয়ে থাকলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করা হবে।

বিএসএফের হাতে আটক সোহেল রানা গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারী বহুল আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক। তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত ছিলেন। তার বোন ও ভগ্নিপতি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘ই-অরেঞ্জ’পরিচালনা করতেন। তাদের ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

আরও পড়ুন

পিয়াসা পরীদের রাজ্যে আসা-যাওয়া প্রায় ৩০০ নাম!


বিনোদন ডেস্ক:মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
সোমবার, ০৯ আগষ্ট, ২০২১, ১০:৫০
পিয়াসা পরীদের রাজ্যে আসা-যাওয়া প্রায় ৩০০ নাম!

ফাইল ছবি

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানে সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া নায়িকা, প্রযোজক ও মডেলদের আসরে যাতায়াতকারীদের লম্বা তালিকা তৈরি করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। তালিকায় মোট কতটি নাম আছে এবং কাদের নাম আছে সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি সিআইডি। তারা বলছেন- অনেক নাম পেয়েছেন। এদের মধ্যে বিত্তশালী ও পদস্থ ব্যক্তিদের নামও আছে। যাচাই-বাছাই না করে এসব নাম প্রকাশ করবে না সিআইডি। কারণ এতে অনেক নিরীহ মানুষও বিপদে পড়তে পারেন।

সিআইডির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, আলোচিত নায়িকা পরীমণি, মডেল ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা, মরিয়ম আক্তার মৌ, প্রযোজক ও অভিনেতা নজরুল ইসলাম ওরফে নজরুল রাজসহ ১০-১২ জনের একটি সিন্ডিকেট অভিজাত এলাকায় নিয়মিত আসর বসাত। আসরগুলোতে মদ পান, ডিজে পার্টিসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো। গ্রেফতার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ, মোবাইল ফোন, কললিস্ট, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাপস থেকে সিন্ডিকেটভুক্তদের আসরে যাতায়াত করা প্রায় ৩০০ জনের নাম পাওয়া গেছে। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে গ্রেফতার হওয়ার পর রিমান্ডে থাকা ব্যক্তিরা। প্রাপ্ত নামের অনেকগুলোই ছদ্মনাম বা সাংকেতিক নাম। সিআইডি তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রযুক্তিগত তদন্তের সহায়তায় প্রকৃত নাম ঠিকানা, পেশা, আয়ের উৎস ইত্যাদি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছে। বিশাল এই তালিকা থেকে যাছাই-বাছাই শেষে তালিকাটি ছোট ও নির্ভুল করে আনার কাজ করে যাচ্ছে সিআইডি। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের উপকমিটি থেকে অব্যাহতি পাওয়া হেলেনা জাহাঙ্গীর, শরিফুল হাসান মিশু ও মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানের চাঁদাবাজি, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা এবং তাদের ঘনিষ্ঠজনদের বিষয়েও খোঁজখবর নিচ্ছে সিআইডি।

গত শনিবার সিআইডি হেলেনা জাহাঙ্গীর, পরীমণি, পিয়াসা, মৌ, নজরুল ইসলাম রাজ, মিশু হাসানের বাসায় তল্লাশি অভিযান চালায়। এসব বাসা থেকে সিসিটিভি ফুটেজ, বিভিন্ন আলামত ও ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছে। ল্যাপটপ, ডেস্কটপ পাসপোর্ট, মোবাইল, হার্ডডিস্ক ও ফেরারি গাড়ি জব্দ করা হয়। তদন্তের অংশ হিসেবে এই তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে জানিয়েছে সিআইডি।

রবিবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে প্রধান কার্যালয়ে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন, ‘দায়ের হওয়া সাত মামলার ডকেট ও আসামি বুঝে পেয়েছি। আসামিরা আমাদের হেফাজতে আসার পর ধারাবাহিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে যাচ্ছি। তারা অনেক তথ্য দিয়েছে। তদন্তের স্বার্থে সেগুলো প্রকাশ করা যাবে না। আমরা প্রাপ্ত তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করছি।’ শেখ ওমর ফারুক আরও বলেন, ‘নজরুল রাজ, পরীমণি ও পিয়াসাদের সঙ্গে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের যোগাযোগ ও সম্পৃক্ততার তথ্য আমরা পেয়েছি। যাদের অনেকেই তাদের আড্ডা ও ডিজে পার্টিতে যেতেন।

যাতায়াতকারীদের মধ্যে ব্যাংকার, বিত্তশালী ও পদস্থ ব্যক্তিদের নামও রয়েছে।’ পরীমণির সঙ্গে ব্যাংকের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সখ্য বিষয়ে সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন পেশার অনেকেরই নাম পাচ্ছি কিন্তু সেগুলো এখনই বলা যাবে না। যেহেতু অনেকগুলো মামলা এবং অনেক তথ্যের ছড়াছড়ি সেজন্য অনেক নিরপরাধ মানুষ ফেঁসে যেতে পারেন। সেটি যেন না হয় সেজন্য আমরা কোনো ধরনের তাড়াহুড়া করছি না। ধারাবাহিকভাবে আমরা তদন্ত কাজ এগিয়ে নেব।’ 

সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, ‘আমরা দেখছি কিছু গণমাধ্যম বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তার নাম-পরিচয় প্রকাশ করে সংবাদ প্রচার করছে। সেখানে সিআইডির বরাত দিয়ে কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তার নাম প্রকাশিত হয়েছে। আমরা নিশ্চিত করে বলতে চাই সিআইডির কোনো কর্মকর্তা এসব তথ্য দেননি।’ এই সিন্ডিকেটের হাতে ব্ল্যাকমেলের শিকার কোনো ভিকটিম অভিযোগ করেছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ওমর ফারুক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো ভিকটিম অভিযোগ করেননি। তবে কিছু তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সে অনুযায়ী তদন্ত চলছে। আসামিদের পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আরও তথ্যের প্রয়োজন হলে আমরা আসামিদের ফের রিমান্ডে নেব।’ 

সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, ‘পুলিশের হেফাজতে থাকা একটি ফেরারি গাড়ি আমরা নিয়ে এসেছি। এটি র‌্যাব জব্দ করেছিল মিশু হাসানের বাসা থেকে। আমরা গাড়িটির বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। এ ছাড়া মিশু হাসানের বাসায় অভিযান চালিয়ে আরও বেশ কিছু আলামত জব্দ করা হয়েছে। আমরা তদন্তের স্বার্থে সেসব বিষয় প্রকাশ করছি না।’ 

সিআইডির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এই সিন্ডিকেট বিভিন্ন ব্যাংকে চাকরি ও বড় অংকের ঋণ পাওয়ার বিষয়ে তদবির করত। বিশেষ করে দুটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নামও প্রকাশ করেছে তারা। কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা, এমপির ভাই ও ছেলের নামও পাওয়া গেছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘অভিজাত এলাকার এই ভয়াবহ সিন্ডিকেট প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলির তদবির করত বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এরা নিজের কাজ বাগিয়ে নিতে যাকে যেভাবে খুশি করা সম্ভব সে পদ্ধতি অনুসরণ করত। এমনকি সিন্ডিকেটভুক্ত তরুণীদের সঙ্গে দেশে-বিদেশে স্পেশাল প্লোজার্স ট্যুরে পাঠাত এই চক্র।’ 

অপর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘নায়িকা পরীমণিসহ সিন্ডিকেটের সদস্যরা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে টার্গেট করা ব্যক্তিকে ‘হিপনোটাইজ’ করে ফেলত। তারা যে কোনো মূল্যে নিজেদের কাজ হাসিল করে নিত। এ রকম কয়েকজন ভিক্টিমের সঙ্গে তারা কথাও বলেছেন। কিন্তু তারা আইনগত ব্যবস্থা বা মামলা করতে রাজি হননি।’  প্রসঙ্গত, গত ১ আগস্ট বারিধারা থেকে মডেল পিয়াসা ও মোহাম্মদপুর থেকে মৌ, ৩ আগস্ট রাতে ভাটারা থানা এলাকা থেকে মিশু হাসান এবং তার সহযোগী জিসানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন ৪ আগস্ট বনানীর বাসা থেকে নায়িকা পরীমণি, প্রযোজক নজরুল রাজ, পরীমণির ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম দীপু ও রাজের ম্যানেজার সবুজ আলীকে গ্রেফতার করা হয়। ৬ আগস্ট গ্রেফতার করা হয় পরীমণির কস্টিউম ডিজাইনার জিমিকে। এসব ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় সাতটি মামলা হয়েছে। মামলাগুলোর তদন্তভার পেয়েছে সিআইডি। গ্রেফতার আসামিদের সিআইডি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। 

পরীমণি-সাকলায়েন কাণ্ডে পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত কমিটি : পরীমণিকে বাসায় নিয়ে এডিসি গোলাম সাকলায়েন শিথিলের ১৮ ঘণ্টা সময় কাটানোর অভিযোগের তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে পুলিশ সদর দফতর। গতকাল পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি মিয়া মাসুদ করিমকে (ট্রেনিং) প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য দুজন হলেন ডিএমপির উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন সেন্টারের উপ-কমিশনার (ডিসি) হামিদা পারভিন এবং সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস) রুমানা আক্তার। সাকলায়েন যে মামলার তদারকি কর্মকর্তা সেই মামলার তথ্য, তার বাসায় পরীমণির আসা-যাওয়ায় মামলার তদন্তে কোনো প্রভাব পড়েছে কি না, সাকলায়েন পুলিশের আইন অনুযায়ী কোনো অপরাধ করেছেন কি না- তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তুলে ধরতে বলা হয়েছে কমিটিকে। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কমিটিকে ১৫ কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়েছে। সূত্র: বিডি প্রতিদিন

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

বিনম্র শ্রদ্ধায় সত্যজিৎ রায়কে


এমএস.প্রতিদিন ডেস্ক:
শনিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৩৯
বিনম্র শ্রদ্ধায় সত্যজিৎ রায়কে

সত্যজিৎ রায়

সত্যজিৎ রায় (জন্মঃ২ মে ১৯২১-মৃত্যুঃ ২৩ এপ্রিল ১৯৯২) আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাঙালি চলচ্চিত্রকার; আলোকচিত্রী, চিত্রকর, শিশুসাহিত্যিক, সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবেও সুপরিচিত। ১৯২১ সালের ২ মে তিনি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস ছিল বৃহত্তর ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জ জেলার মসুয়া গ্রামে। 

পিতা প্রখ্যাত লেখক, সম্পাদক ও আলোকচিত্রী সুকুমার রায় ছিলেন রয়াল ফটোগ্রাফিক সোসাইটি অব গ্রেট ব্রিটেন-এর ফেলো। তার মাতা সুপ্রভা রায় ছিলেন একজন সঙ্গীতশিল্পী ও হস্তশিল্পে পারদর্শী এবং তার পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীও ছিলেন প্রখ্যাত লেখক, শিশু সাহিত্যিক, চিত্রকর, আলোকচিত্রী, ব্লক ডিজাইনার এবং শিশুতোষ পত্রিকা সন্দেশ (১৯১৩)-এর সম্পাদক।

জন্মের মাত্র দুই বছরের মধ্যেই পিতাকে হারিয়ে মামার আশ্রয়ে দৃঢ়চেতা মাতার তত্ত্বাবধানে সত্যজিৎ রায়ের শৈশব-কৈশোর অতিবাহিত হয়।

বালিগঞ্জ সরকারি হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্সসহ বিএ পাসের পর ১৯৪০ সালে সত্যজিৎ রায় শান্তিনিকেতনে ভর্তি হন।

১৯৪৩ সালে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার কমার্শিয়াল আর্টিস্ট হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু হয়। বিজ্ঞাপনের ভাষা ও ডিজাইনে তিনি নতুন মাত্রা সংযোজন করেন। প্রায় একই সময়ে তিনি বইয়ের প্রচ্ছদ এবং পত্রিকায় ছবি আঁকা শুরু করেন।

১৯৪৭ সালে কয়েকজন বন্ধুর সহায়তায় গঠন করেন কলকাতা চলচ্চিত্র সংসদ। পরবর্তী বছরে তার সুযোগ ঘটে ফরাসি চলচ্চিত্রকার জাঁ রেনোয়ার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার। রেঁনোয়া তার পরিচালিত 'দ্য রিভার' ছবির কিছু অংশ কলকাতায় শুটিং করেন এবং সত্যজিৎ তা প্রত্যক্ষ করেন।

পরে চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্দেশ্যে তিনি গঠন করেন ‘কনক পিকাচার্স’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। সত্যজিৎ এ সময় এ 'পারফেক্ট ডে' নামে একটি চিত্রনাট্য রচনা করেন।

১৯৫০ সালে চাকরির সূত্রে পাঁচ মাস লন্ডনে অবস্থানকালে তিনি প্রায় একশ চলচ্চিত্র দেখেন এবং পরিচিত হন ব্রিটিশ চলচ্চিত্র নির্মাতা লিন্ডসে অ্যান্ডারসন, চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞ পেনেলোপি হাস্টন এবং গ্যাবিন ল্যাম্বটি-এর সঙ্গে।

ইতালির ভিত্তোরিও ডি সিকা পরিচালিত 'দ্য বাইসাইকেল থিফ' দেখে তিনি মুগ্ধ হন এবং বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস 'পথের পাঁচালী' অবলম্বনে ছবি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। একই বছর অক্টোবরে দেশে ফিরে তিনি এর চিত্রনাট্য রচনা করেন এবং ১৯৫২ সালে অপেশাদার লোকজন নিয়ে ছবির শুটিং শুরু করেন। বহু ধারদেনা এবং গহনা, বইপত্র ও সঞ্চিত সম্পদ বিক্রয় করেও তিনি ছবির কাজ শেষ করতে পারেন নি। নিজের জীবন বীমার পলিসি বন্ধক দিয়ে ও বন্ধুবান্ধব-আত্মীয়দের কাছ থেকে তিনি মাত্র ১৭,৫০০ টাকা সংগ্রহ করেন।

পরে তিনি ব্যয় কম করার জন্য পুরানো ক্যামেরা ভাড়া করেন, খাদ্য ও যাতায়াত খরচ কমিয়ে দেন এবং কলকাতার প্রত্যন্ত এলাকায় শুটিং করেন।

তিনি একজন প্রযোজকের সন্ধান করছিলেন যিনি অন্তত ৪০,০০০ টাকা অর্থায়নে সক্ষম। ছবির এক-তৃতীয়াংশ চিত্রায়িত হওয়ার পর যোগাড় করা টাকা শেষ হয়ে যায়।
বাধ্য হয়ে তিনি পশ্চিমবঙ্গের সরকারের কাছে অর্থসাহায্য কামনা করেন। এ বিষয়ে আমলাদের অনীহা প্রত্যক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় নিজে ছবিটির নির্মাণ ব্যয় সংকুলানের ব্যবস্থা করেন।

১৯৫৫ সালে 'পথের পাঁচালী' নিউইয়র্কে প্রদর্শিত হয় এবং ঐ বছরই, আগস্টে কলকাতার প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হয়। মুক্তির পরপরই ছবিটি সারা বিশ্বে প্রশংসা লাভ করে এবং পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করে।

১৯৫৫ সালে 'পথের পাঁচালী' রাষ্ট্রপতি ও পশ্চিমবঙ্গ সাংবাদিক সমিতির পুরস্কার লাভ করে। ঐ বছরই ছবিটি ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘সর্বশ্রেষ্ঠ মানব দলিল’ হিসেবে জুরি বোর্ডের বিশেষ পুরস্কার অর্জন করে।

ছবিটি পৃথিবীর বিভিন্ন শহর ও দেশ, যথা এডিনবার্গ, ম্যানিলা, স্পেন, সানফ্রান্সিসকো, বার্লিন, ভ্যাঙ্কুবার, ডেনমার্ক ও জাপানে পুরস্কৃত হয়।

১৯৫৬-তে মুক্তি পায় তার দ্বিতীয় ছবি অপরাজিত, এটি তাকে এনে দেয় ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব পুরস্কার, গোল্ডেন লায়ন, Cinema Nuveall এবং ক্রিটিকস অ্যাওয়ার্ড।
১৯৫৬ থেকে ১৯৯২-এর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত চলচ্চিত্র মিশে ছিল তার চিন্তা ও কর্মে। তিনি ছিলেন বিশ্বের সেরা দশজন চলচ্চিত্রকারের মধ্যে একজন।

তার চলচ্চিত্র কর্মের মধ্যে রয়েছে ২৮টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চিত্র, ৫টি তথ্যচিত্র এবং ৩টি টেলি-ফিল্ম।
নির্মিত চলচ্চিত্রসমূহের মধ্যে উলে­খযোগ্য হলো:
পথের পাঁচালী (১৯৫৫), অপরাজিত (১৯৫৬), পরশপাথর (১৯৫৭), জলসাঘর (১৯৫৮), অপুর সংসার (১৯৫৯), দেবী (১৯৬০), তিন কন্যা (১৯৬১), রবীন্দ্রনাথ (১৯৬১), কাঞ্চনজঙ্ঘা (১৯৬২), অভিযান (১৯৬২), মহানগর (১৯৬৩), চারুলতা (১৯৬৪), কাপুরুষ ও মহাপুরুষ (১৯৬৫), নায়ক (১৯৬৬), চিড়িয়াখানা (১৯৬৭), গুপী গাইন বাঘা বাইন (১৯৬৯), অরণ্যের দিনরাত্রি (১৯৭০), প্রতিদ্বন্দ্বী (১৯৭০), সিকিম (১৯৭১), সীমাবদ্ধ (১৯৭১), অশনি সংকেত (১৯৭৩), সোনার কেল্লা (১৯৭৪)প্রভৃতি।
লেখক হিসেবেও তিনি খ্যাতি অর্জন করেন।তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে: বিষয় চলচ্চিত্র,একেই বলে শ্যুটিং,ফেলুদা সিরিজ,শঙ্কু সিরিজ,পিকুর ডায়েরী।

সত্যজিৎ রায় জীবনে বহু পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি পথের পাঁচালীর জন্য (১৯৫৫-১৯৬৬) ভারত ছাড়াও মোট ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন।

তিনি ভারত সরকারের কাছে ৪০টি ও বহির্বিশ্বের কাছে ৬০টি পুরস্কার লাভ করেন। সেসবের মধ্যে দেশ বিদেশের বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারী ডক্টরেট ডিগ্রি, বিশ্বভারতীর দেশিকোত্তম, দাদা সাহেব ফালকে,ভারত রত্ন ইত্যাদি। অস্কার পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক সত্যজিৎ রায় ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

মেসবা খান: ২৩ এপ্রিল ১৯৯৪/সূত্র:সংবাদ

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম
Share on Facebook

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন এর সর্বশেষ

সর্বশেষ - অপরাধ