a
সংগৃহীত ছবি
দেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী এসডি রুবেল পরিমণিকে নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘হ্যালো বিবেক, বিচার আদালতে হোক, মিডিয়া তে নয়। হয়তো তিনি যথার্থই বলেছেন, তার মতো অন্ধ কিছু ভক্ত পরিমণিকে নিয়ে মাতামাতি করছেন তাদের কাছে রুবেলের এই মন্তব্য যথার্থই মনে হবে।
কিন্তু আজ সমাজে পরিমণির মতো ব্যক্তিরা সমাজ সংসারকে (পুরুষ/মহিলা) কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। পরিমণির মতো এসব নায়িকারা যখন চলচ্চিত্র প্রাঙ্গণ কলুষিত করছে, তখন ভাল ইমেজের নায়ক-নায়িকারা বা অভিনেতারা বিব্রতবোধ করেন এবং পরিমণির এসব কর্মকান্ডে বিব্রত হয়েছেন অনেকেই। সাধারণ মানুষ মনে করেন চলচ্চিত্র প্রাঙ্গণ এমনই। আসলে কি তাই?
বিচারালয়ে বিচার হবে, তবে নষ্ট মানুষগুলো কষ্ট দেবে সমাজের ভাল মানুষকে তা হতে পারে না। একজন পরিমণি ৫/৬ বছরে সমাজে এরকম দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে, তা হতে দেয়া যায় না। আর সমাজে এসব ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভবও হয়ে উঠে না।
তাই বিচারালয়ে বিচার হয়তোবা যথোপযুক্তভাবেই হবে। পাশাপাশি জনসম্মুখে এসব ব্যক্তিদের কার্যকলাপ প্রকাশ পেলে অন্য সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা ও ঘৃণা জন্মাবে। ফলে ভবিষ্যতে এসব পরিমণরা গড়ে উঠার সুযোগ নেবে না।
সমাজে নষ্ট ব্যক্তিদের অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে সকলকেই সচেতন থাকতে হবে। আমাদের সমাজে প্রত্যেক সেক্টরে এসব পরিমণি খুঁজে পাওয়া যাবে। এদের ঘৃণিত কাজগুলো অঙ্গুলি দিয়ে প্রকাশ করার সুযোগ থাকলে ভবিষ্যতে এরকম ঘটনাগুলো কম ঘটবে বৈকি।
সমাজে নষ্ট বা বিতর্কিত মানুষের পক্ষ নিয়ে স্বনামধন্য ব্যক্তিরা মন্তব্য করতে আরও যত্নশীল হবেন, এমনটাই মনে করেন সচেতন মহল। প্রসঙ্গত, পরিমণের বিষয়টি নিয়ে এস ডি রুবেল ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন এভাবে-
‘হ্যালো বিবেক, বিচার আদালতে হোক, মিডিয়া তে নয়। জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পরীমণিকে প্রথমত মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করানো উচিত ছিল? একান্ত ব্যক্তিগত জীবনে পরীমণি যদি ভুল করে থাকে, একজন শিল্পীকে বৃহত্তর স্বার্থে শুধরানোর জন্য সামাজিক সুযোগ রাখা উচিত ছিল কি! পর্দার আড়ালে সে যদি ভুল করে থাকে, সেটা বিচ্ছিন্নভাবে জনগণের সামনে এনে কার স্বার্থ হাসিল করা হল! সম্ভাবনাময় একজন শিল্পীর এমন পতনে হৃদয় ব্যথিত!’
ফাইল ছবি
অভিনেত্রী নুসরাত জাহানের স্বামীর নাম ওয়েবসাইটের নথিতে দেয়া আছে নিখিল জৈন। আর লোকসভার ওয়েবসাইটে স্পষ্ট লেখা নুসরাত বিবাহিত। তিনি বিয়ে করেছেন ২০১৯ সালের ১৯ জুন মাসে। আর এই বিষয়টি সামনে আসতেই হইচই শুরু হয়েছে গোটা পশ্চিমবঙ্গে।
এর আগে বুধবার দুপুরে অভিনেত্রী নুসরাত জাহান স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘‘নিখিলের সঙ্গে আমি সহবাস করেছি। বিয়ে নয়। ফলে বিবাহ বিচ্ছেদের প্রশ্নই ওঠে না।’’
এরপরই হইচই শুরু হয়ে যায়। কিন্তু পরে দেখা যায়, নুসরাত নিখিলের সঙ্গে লিভ-ইন করেছেন বলে দাবি করলেও সরকারি নথিতে তিনি বিবাহিত এবং স্বামীর নাম নিখিল জৈন।
সম্প্রতি জানা যায়, মা হতে চলেছেন নুসরাত। অনাগত সন্তানের পিতৃপরিচয় কী তা নিয়ে গত ৫ দিন ধরে বিতর্ক তুঙ্গে। শুধু তাই নয়, নিখিলের সঙ্গে তার বিবাহ বিচ্ছেদ হচ্ছে না কেন, এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে চার দিক থেকে। এমনকি লেখিকা তসলিমা নাসরিনও নুসরাতের নীরবতা নিয়ে কথা বলেছিলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
তসলিমা নাসরিন লিখেছিলেন, ‘…এই যদি পরিস্থিতি হয়, তবে নিখিল আর নুসরাতের ডিভোর্স হয়ে যাওয়াই কি ভালো নয়? অচল কোনও সম্পর্ক বাদুড়ের মতো ঝুলিয়ে রাখার কোনও মানে হয় না। এতে দু’পক্ষেরই অস্বস্তি।’ এর পরেই নুসরাত জানিয়েছেন, তিনি আদৌ নিখিলকে বিয়েই করেননি।
যদিও এর আগে খুব কম অতিথি নিয়েই তুরস্কে বিয়ে হয়েছিল নুসরাত ও নিখিলের। সেই প্রসঙ্গ টেনে নুসরাত জানিয়েছেন, তুরস্কের বিবাহ আইন অনুসারে ওই অনুষ্ঠান অবৈধ। উপরন্তু হিন্দু-মুসলিম বিবাহের ক্ষেত্রে বিশেষ বিবাহ আইন অনুসারে বিয়ে করা উচিত। যা এ ক্ষেত্রে মানা হয়নি। ফলত, এটা বিয়েই নয়। বুধবার এমনই যুক্তি প্রকাশ্যে এনেছেন অভিনেত্রী নুসরাত। তার দাবিনানুযায়ী, যে বিয়ে আইনতসিদ্ধ নয়, তার জন্য বিবাহ বিচ্ছেদের প্রয়োজন নেই।
কিন্তু সংসদকে বিবাহিত হিসেবে পরিচয় জানিয়েছেন কেন? এবার উঠবে সেই প্রশ্ন। কারণ, নিয়ম অনুযায়ী সংসদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ওয়েবসাইটে পরিচয় দেওয়া হয়। তবে গত লোকসভা ভোটের আগে লোকসভা নির্বাচনকে যে হলফনামা দিয়েছিলে নুসরাত তাতে অবিবাহিতই দাবি করেছিলেন নিজেকে। কারণ, তার বিয়ের যে তারিখ লোকসভার ওয়েবসাইটে রয়েছে তা নির্বাচনের পরের। সূত্র: আনন্দবাজার
ফাইল ফটো:
আজ ১৭ মার্চ, শুভ জন্মদিন বঙ্গবন্ধু! প্রতি বছর এ দিনটি আমার একান্ত ভাবনার দিন, আনন্দ ও বেদনায় আপ্লুত স্মরণীয় দিন। কেন আনন্দ-বেদনা? নিজের মনে গুঞ্জরিত এ প্রশ্নের উত্তর মনের মধ্যেই আছে। আনন্দ এ জন্য যে, ১৭ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্ম হয়। বেদনা এ জন্য যে, আপনার কথা ভাবলে গ্রিক ট্র্যাজেডির নায়কের চরিত্রের করুণ পরিণতির কথা মনে পড়ে যায়। আপনার মৃত্যুর কয়েক দিন আগে তোলা একটি ছবির দিকে তাকিয়ে আমার দুই চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে। কী অনবদ্য ভঙ্গিতে বসে আছেন আপনি! মুখে পরম তৃপ্তির কোনো রহস্যময় ঈষৎ হাসি ছড়িয়ে আছে। ছবিটির দিকে তাকিয়ে আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, কী ভাবছেন আপনি? দেশের কথা? দেশের মানুষের কথা? নাকি অন্য কিছু? আপনার বসার টেবিলের পাশেই আমি তখন দাঁড়িয়ে ছিলাম। ভাবতে পারিনি, পরিচিত বা অপরিচিত কারও তোলা ছবিটি প্রতিটি ১৭ মার্চে আমাকে এভাবে আনন্দ-বেদনায় মগ্ন করে রাখবে।
আপনাকে আমি চিনতাম ও জানতাম স্কুলে ছাত্রাবস্থা থেকে। প্রথম চাক্ষুষ দেখা পাই ১৯৬২ সালে প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত কচি-কাঁচার মেলার এক অনুষ্ঠানে। আপনি মেলার সদস্যদের উদ্দেশে একটি বক্তব্য রেখেছিলেন। ৬০ বছর পরে সে বক্তৃতার কথাগুলো খুব একটা মনে থাকার কথা নয়। ভালোভাবে লেখাপড়া করার জন্য ও দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ হওয়ার জন্য আপনি শিশু-কিশোরকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কচি-কাঁচার মেলার সদস্যরা আপনাকে গার্ড অব অনার দিয়ে নিজেরা গৌরবান্বিত হয়েছে। কচি-কাঁচার মেলার চারজন সদস্য- সদ্যপ্রয়াত খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, বাংলা একাডেমির সভাপতি শামসুজ্জামান খান, শিল্পী হাশেম খান ও আমি ছিলাম আপনার একান্ত ভক্ত ও অনুরক্ত। দাদাভাই রোকনুজ্জামান খান গর্বভরে বলতেন, ‘কচি-কাঁচার মেলার সদস্যদের কেউ রাজাকার হয়নি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অনেকে আত্মদান করেছে’। মুক্তিযুদ্ধকালে দৈনিক ইত্তেফাক ও কচি-কাঁচার আসরের অফিসটিকেও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
আপনার সঙ্গে প্রথম পরিচয় হলো ষাটের দশকের মাঝামাঝি পুরানা পল্টনের আওয়ামী লীগ অফিসে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু শেখ ফজলুল হক মনি তার হোন্ডার পেছনে আমাকে তুলে আপনার সঙ্গে পরিচয় করাতে নিয়ে যান। খুব কম সময়ই ছিলাম আপনার সামনে। কিন্তু আমার ক্ষুদ্র জীবনে সেটা ছিল এক মাহেন্দ্রক্ষণ। ওই দিনটির স্মৃতি মনের মণিকোঠায় চিরকাল উজ্জ্বল হয়ে আছে। আরও অনেক স্মৃতি আছে আমার। মুক্তিযুদ্ধকালে আমি মুজিবনগর সরকারের তথ্য বিভাগে চাকরিরত ছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী আমাকে বঙ্গভবনে ডেকে নেন। ওই সময়ের একটি ছোট্ট স্মৃতি আমার খুবই মনে পড়ে। ১৯৭২ সালের প্রথম দিকের ঘটনা। রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুকে দেখতে ৩২ নম্বরের বাড়িতে গিয়েছিলেন। সঙ্গে আমিও ছিলাম। দুদিন পরে বঙ্গবন্ধু বঙ্গভবনে এলেন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে। বঙ্গবন্ধুকে গাড়িতে তুলে দিতে সামরিক সচিব ও আমি করিডোর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, মাহবুব! কাল তোমারে দেখেছি!
আমি সবিস্ময়ে বললাম, কোথায় স্যার? তুমি কালকে টেলিভিশনে আসছিলা। বঙ্গবন্ধু বললেন।
কী আশ্চর্য! এটা কি একটা বলার কথা হলো আমার মতো নগণ্য একজন সরকারি কর্মকর্তাকে? সেদিন বুঝতে পারিনি। পরে বুঝতে পেরেছি, এমন ছোটখাটো ঘটনাও দৃষ্টি এড়ায় না তাঁর। এজন্যই তো তিনি বঙ্গবন্ধু!
১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রিত্বের পদ ত্যাগ করে রাষ্ট্রপতি হন। সেদিনই তিনি আমাকে ডেকে বলেছিলেন, ‘তুমি আমার সঙ্গে থাকবা।’ এরপর তাঁর মৃত্যুদিন পর্যন্ত আমি বঙ্গবন্ধুর অধীনে তাঁর সহকারী প্রেস সচিব নিয়োজিত হই। প্রেস সচিব ছিলেন আবদুল তোয়াব খান। ২৫ জানুয়ারি থেকে ওই বছর ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় খুব বেশি নয়। কিন্তু ওই সময়টুকু বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে আমার জীবনের গৌরবগাথা। তাঁর সঙ্গে অনেক স্মৃতি আছে এ সময়ের, যার কিছু ঘটনা আমার ‘বঙ্গভবনে পাঁচ বছর’ বইয়ে উল্লেখ করেছি। এর মধ্যে আছে বঙ্গবন্ধুর পিতার চল্লিশায় টুুঙ্গিপাড়া যেতে ‘গাজী’ জাহাজে মধ্যরাতে নিজের মাথার বালিশ আমার মাথার তলে দিয়ে দেওয়া, টাঙ্গাইলে ভাসানী সাহেবের বাড়ি থেকে খুলনায় তাঁর ভাই শেখ নাসেরের বাড়িতে যাওয়ার পথে অভুক্ত আমাকে খাবার প্রদানের জন্য হেলিকপ্টারের কর্মকর্তাদের নির্দেশ, বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর অনুলেখক হিসেবে কাজ করার সময় একান্ত স্মৃতিচারণা, ১৪ আগস্টে ৩২ নম্বরের বাসায় যাওয়ার আগে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার শেষ কথোপকথন, আরও কত কী!
স্বাধীন বাংলাদেশে আপনার প্রথম জন্মদিন উদযাপনের স্মৃতি চিরকাল মনে থাকবে। ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ সকাল ১০টায় তেজগাঁও বিমানবন্দরে নামল ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষ বিমান ‘রাজহংস’। ভারতরত্ন ইন্দিরা সর্বপ্রথম অবতরণ করলেন। তারপর নামলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং এবং পরে অন্য অতিথিবৃন্দ। বিমানবন্দরে ইন্দিরাকে ফুলের মালা পরিয়ে অভ্যর্থনা জানান শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব। বিকাল ৩টায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ভাষণ দিলেন ইন্দিরা গান্ধী। ময়দানের একপাশে নৌকার আকারে বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে ‘ইন্দিরা মঞ্চ’ নামে। বিশাল জনসমুদ্রকে সামনে রেখে ইন্দিরা গান্ধী প্রথম দুই মিনিট বাংলায় বক্তৃতা দেন, পরে বাংলায় দীর্ঘ বক্তৃতাদানে অক্ষমতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে হিন্দিতে বক্তৃতা করলেও কবিগুরুর কবিতার দুটি চরণ আবৃত্তি করেন। ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চল রে।’
ইন্দিরা গান্ধীকে আমি প্রথম দেখি ১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর কলকাতার প্যারেড গ্রাউন্ডে। বক্তৃতায় মাঝখানে ছেদ পড়ল, দিল্লি থেকে খবর এসেছে পাকিস্তান ভারত আক্রমণ করেছে। তার পরের ঘটনা তো সবারই জানা। স্বাধীনতার পর এবার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গভবনে ছিলেন। তাঁর আরাম-আয়েশের জন্য আমাদের যথাসাধ্য প্রচেষ্টা ছিল। বঙ্গভবনের একজন অফিসার হিসেবে তখন তাঁকে কাছে থেকে ঘনিষ্ঠভাবে দেখতে পাই। আরও কাছে থেকে দেখতে পাই ওই বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ভারতে রাষ্ট্রীয় সফরকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে এবং পরবর্তীতে শান্তিনিকেতনে। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে ঢাকায় এসে তিন দিন বঙ্গভবনে ছিলেন তিনি। দেশে ফেরার আগে বঙ্গভবনের অফিসারদের কিছু উপহার দিয়েছিলেন। আমি পেয়েছিলাম ভারতীয় র-সিল্কের একপ্রস্থ কাপড়। পরে তা দিয়ে একটা পাঞ্জাবি তৈরি করাই। সব মিলিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর প্রথম জন্মদিনটি চিরকালই আমার স্মৃতিতে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে।
আবার ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ। ব্যক্তিগত একটি ঘটনার কথা মনে হলে আমার মন সঙ্কুচিত হয়ে যায়। কথাটা সঙ্গতকারণে আগে কাউকে বলিনি। সেটাও ১৯৭৫ সালের ঘটনা। আমরা হেলিকপ্টারে বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধনের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে যাই। ফেরার পথে আমি চট্টগ্রামে ব্যক্তিগতভাবে দুই দিনের যাত্রাবিরতি করি। চট্টগ্রাম নিউমার্কেট থেকে আমি চাকচিক্যময় একটা স্যুটপিস কিনি। স্যুট বানিয়ে ওটা পরে অফিসে যেতে বঙ্গবন্ধুর সামনে পড়ে যাই। তিনি আমাকে পোশাক সম্পর্কে কিছু না বললেও আমার এক সহকর্মীকে বলেন, অত জমকালো পোশাক যদি কাউকে সাধারণ মানুষ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, সেটা কি ঠিক? কথাটা জানার পর পোশাকের বিষয়ে আমি সাবধান হয়ে গিয়েছিলাম। এই একটি ঘটনা ছাড়া বঙ্গবন্ধু আমাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আর কখনো ভর্ৎসনা করেননি।
আজ সবচেয়ে মনে পড়ছে বঙ্গবন্ধুর শেষ জন্মদিনটির কথা। ১৯৭৫ সালের ১৬ মার্চ আমাকে ডেকে বললেন, ‘তুমি তো কচি-কাঁচা! তুমি কাল আমার বাসায় আসবা। আমি যে এক সময়ে শিশু-কিশোর সংগঠনের কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার প্রথম আহ্বায়ক ছিলাম, কথাটা তিনি জানতেন। এজন্য আমাকে কচি-কাঁচা বলে সম্বোধন করেছেন এবং তাঁর জন্মদিনে বিশেষভাবে উপস্থিত থাকতে বলেছেন। দিনটি বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোরের সঙ্গে কাটাবেন। ছোটদের সান্নিধ্য তিনি যে কতটা ভালোবাসেন, তা সবাই জানে। ১৭ মার্চ সকালবেলা ৩২ নম্বরের বাড়িতে পৌঁছে গেলাম। বঙ্গবন্ধুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে তিনি শুধু মাথা ঝাঁকিয়ে হাসলেন। এত প্রাণোচ্ছল বোধহয় তাকে খুব কমই দেখেছি। নিজের জন্মদিন বলেই হয়তো তিনি খুশিতে উচ্ছল হয়েছিলেন। আমার বারবার মনে হচ্ছিল, জন্মদিন বলেই কী তিনি ছেলেবেলার কথা মনে করে একেবারে শিশু হয়ে গেছেন?
৩২ নম্বরের বাসায় তখনো তেমন জনসমাগম হয়নি। শেখ কামাল এসে মিষ্টির প্লেট তুলে দিলেন হাতে। জিজ্ঞাসা করলেন, মাহবুব ভাই, নাশতা করেছেন তো? না করে থাকলে আমার সঙ্গে একটু আসেন। আমি জানালাম, নাশতা করেই এসেছি। একটু পরে মন্ত্রী এম কোরবান আলী এলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে অভিনন্দন জানালেন। বিগলিত হাসি দিয়েই অভিনন্দনের উত্তর দিলেন বঙ্গবন্ধু। সেদিন সকাল বেলায়ই ‘বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলার’ ছোটমণিদের নিয়ে এসেছেন দৈনিক বাংলার ‘শাপলা কুঁড়ির আসর’-এর পরিচালক বিমান ভট্টাচার্য। বঙ্গবন্ধু আগত শিশুদের গাল ছুঁয়ে আদর করলেন। তাদের সঙ্গে গল্পে মেতে উঠলেন। পরে অন্যান্য সংগঠনের শিশু-কিশোররাও এলো। ৩২ নম্বরের বাড়ির গেটের বাইরে তখন অগণিত নেতা-কর্মী ও ভক্তদের ভিড়। তারা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাতে সমবেত হয়েছেন। ভিতরে আসতে পারছেন না। বঙ্গবন্ধু বলে দিয়েছেন, তিনি আগে ছোটদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
আজ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এ দুটি গৌরবময় সময়ের মোহনায় দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবিটির দিকে আবার তাকিয়ে দেখছি। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গে একটি সংবিধানও দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের সংবিধানে ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা’র আদর্শ মূলনীতি হিসেবে ঘোষিত হয়েছিল। সে চারটি মূলনীতির অনেক পরিবর্তন হয়েছে আজ। বঙ্গবন্ধুর ছবিটির দিকে তাকিয়ে আমার বারবার মনে হচ্ছে, কী ভাবছেন বঙ্গবন্ধু? দেশের কথা না, দেশের মানুষের কথা? এর বাইরে তাঁর তো কোনো ভাবনা ছিল না। আমার মতে, বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করার পাশাপাশি অনুসরণ করা প্রয়োজন ছিল। আমরা কি তা পেরেছি? আজ এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর ছবির দিকে তাকিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা হচ্ছে- ‘আপনি কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলেন?’
লেখক: নির্বাচন কমিশনার, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। উৎস: বাংলাদেশ প্রতিদিন