a
ফাইল ছবি
বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ইউরোপ অঞ্চলে পাঁচ ম্যাচ পর জয়ের দেখা পেল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। ঘরের মাঠে ফিনল্যান্ডকে ২-০ গোলে হারিয়েছে ফরাসিরা। জোড়া গোল করেছেন সদ্য সাবেক বার্সা তারকা অ্যান্তনিও গ্রিজম্যান। এই জয়ের সঙ্গে গ্রুপ টেবিলের শীর্ষে অবস্থান বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। অস্বস্তি আর ছন্দহীনতা যেন চেঁপে ধরেছিল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের।
টানা ৫ ম্যাচে জয়হীন দিদিয়ের দেশমের দল। যেখানে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে পয়েন্ট খোঁয়াতে হয়েছে ইউক্রেন আর বসনিয়া হার্জেগোভিনার মতো দলের বিপক্ষে। অবশেষে চেনা রূপে ফিরেছে ফরাসিরা। অলিম্পিয়াকোতে ম্যাচের শুরু থেকে আক্রমণের পসরা সাজায় গ্রিজম্যান-বেঞ্জেমারা। কিন্তু রক্ষণাত্মক ফিনল্যান্ডের রক্ষণ যেন কোনোভাবেই ভাঙ্গতে পারছিল না ফ্রান্স। ২২ মিনিটে গোলটা বলতে গেলে পেয়েই গিয়েছিলেন করিম বেঞ্জেমা। তবে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের বাঁধায় এগিয়ে যাওয়া হয়নি এই পর্যায়ে।
এরপর আর বেশি অপেক্ষায় থাকতে হয়নি তাদের। ২৫ মিনিটে দারুণ বুঝাপড়ায় ডেডলক ভাঙ্গেন অ্যান্তনিও গ্রিজম্যান। এবার অবশ্য বলটা বানিয়ে দেওয়ার কাজটা করেছেন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা করিম বেঞ্জেমা। গোটা স্টেডিয়ামে উল্লাসের জোয়ার। প্রথমার্ধে আরো বেশ কয়েকটি আক্রমণ কাঁপন ধরিয়ে ছিল ফিনল্যান্ডের রক্ষণে। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। ৪৯ মিনিটে কর্নার থেকে পাওয়া বলটা জায়গা মতো পাঠাতে ব্যর্থ ফরাসি ফুটবলার। তবে ৫৩ মিনিটে আর মিস করেননি গ্রিজম্যান। সতীর্থের পাস থেকে পাওয়া বল নিখুঁত ফিনিশিংয়ে জাল কাঁপান ফিনল্যান্ডের। জোড়া গোলের সঙ্গে ২-০ গোলের লিড স্বাগতিক শিবিরে। ৫৯ মিনিটে ফ্রান্সের আক্রমণটা চোখে লেগে থাকার মতো। বেঞ্জেমা, মার্শিয়ালদের দারুণ বোঝাপড়ার ফিনিশিংটা করতে পারেননি গ্রিজম্যান। ফলে মিস করেন হ্যাটট্রিকও। ৮১ মিনিটে আরও একটা সুযোগ নষ্ট হয় দেশম বাহিনীর। শেষ দিকে একটা সুযোগ তৈরি করেছিল ফিনল্যান্ড। তবে ফ্রান্স গোলরক্ষকের বাঁধা ব্যবধান কমানো হয়নি। শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। সেই সঙ্গে ৬ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে অবস্থান ফ্রান্সের।
ফাইল ছবি
লা লিগার নিয়মের বেড়াজালে আটকা পড়ে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সোলোনা ছাড়তে বাধ্যই হলেন জীবন্ত কিংবদন্তি ফুটবলার লিওনেল মেসি। বার্সোলোনার সাথে ছিন্ন হলো ২১ বছরের দীর্ঘ সম্পর্ক। মেসির বিদায় উপলক্ষে আজ ক্যাম্প নূতে প্রেস কনফারেন্সে করেন লিওনেল মেসি সেখানে বার্সাকে বিদায় বলার সাথে সাথেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে লিও বলেন "এই ক্লাব একজন ব্যক্তির থেকে বড়, ধীরে ধীরে সবাই অভ্যস্ত হয়ে যাবে তবে প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হবে সবার"
তার পরবর্তী গন্তব্য কোথায় হবে সেটা জিজ্ঞাসা করতেই মেসি বলেন পিএসজির সম্ভাবনা বেশি, কথা বার্তা চলছে তবে এখনো কনফার্ম নয়, আমি অনেকগুলা অফার পেয়েছি পরশু থেকে।
অপর আরেক প্রশ্নে লিও বলেন “আমি সব কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিলাম আমি বেতন কমিয়েও এখানে থাকতে রাজি ছিলাম কিন্তু শেষ মূহুর্তে লা লিগা তা হতে দিলো না”
বিভিন্ন গণমাধ্যমের সূত্রানুসারে মেসি পিএসজিতেই যাচ্ছেন।
একাধিক সুত্রে জানা যায় সেখানে মেসিকে নেইমারের থেকেও বেশি বেতন দেয়া হবে যা কমপক্ষে ৪০ মিলিয়ন এর আশপাশ। নেইমার তার ১০ নম্বর জার্সি মেসিকে অফার করলেও মেসি তার ক্যারিয়ারের শুরুতে ১৯ নম্বর জার্সি পড়ে খেলা সেই ১৯ নম্বর জার্সিতেই মাঠ মাতাবেন বলে ধারনা করা হচ্ছে।
ছবি সংগৃহীত
নিউজ ডেস্ক: ইতিহাসের মোড়ঘোরানো মুহূর্তসমূহ একটি জাতির রূপ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং তা নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট এলাকা বা দেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার উপর।দক্ষিণ এশিয়ার জনগণ ইতিহাসের এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, যা তাদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। উদাহরণস্বরূপ, দ্বাদশ শতকের শেষ দিকে মুসলমানদের বিজয়ী হিসেবে আগমন এবং পরবর্তীকালে শাসক হিসেবে এই ভূখণ্ডে বসবাস শুরু, যা চলতে থাকে ১৭৫৭ সালে পলাশীর তথাকথিত যুদ্ধে ব্রিটিশদের দ্বারা বাংলা দখল পর্যন্ত। এই ১৭৫৭ সালকে ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের ইতিহাসে একটি মোড়ঘোরানো বছর হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ব্রিটিশ শাসনামলে মুসলমানরা তাদের ক্ষমতা হারায় এবং সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগীতে পরিণত হয়।১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের প্রতিক্রিয়ায় তারা চরম নিপীড়নের শিকার হয়, যদিও হিন্দুরাও ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করেছিল। এই ১৮৫৭ সালও ভারতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে বিবেচিত। ১৮৮৫ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশ সরকারের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত হলে মুসলমানদের সরাসরি রাজনীতিতে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা হয়নি। কিন্তু বিশ শতকের শুরুতে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে, যখন ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ গঠিত হয়। এই ১৯০৬ সালকেও ভারতের মুসলমানদের ইতিহাসে একটি মোড়ঘোরানো বছর হিসেবে দেখা হয়। ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ ভারতের মুসলমানদের রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন।
১৯১৩ সালে মুসলিম লীগ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে নেতা হিসেবে পেয়ে সৌভাগ্য অর্জন করে, যদিও ১৯১৫ সালের জানুয়ারিতে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত হন। আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু গ্র্যাজুয়েট মুসলিম লীগে যোগ দিয়ে জিন্নাহর হাত শক্তিশালী করেন। অল্প সময়েই জিন্নাহ ভারতের মুসলমানদের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতায় পরিণত হন। এক সময় তিনি হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের অগ্রদূত হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন, কিন্তু কংগ্রেস নেতাদের মনোভাব তাকে বুঝতে বাধ্য করে যে, হিন্দু মহাসভার অধীনে ভারতের মুসলমানদের অধিকার নিরাপদ নয়। ১৯২৩ সালের শুরুতে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ তাঁর বিখ্যাত দ্বিজাতি তত্ত্ব ঘোষণা করেন এবং বলেন, ধর্ম, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও দৈনন্দিন জীবনে মুসলমানরা হিন্দুদের থেকে আলাদা। এই তত্ত্ব ভারতের মুসলিম জনগণের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
১৯৩৭ সালের নির্বাচনের পর কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন প্রথম ভারতীয় সরকার গঠিত হয়, যা জিন্নাহকে স্পষ্ট করে দেয় যে, মুসলমানদের জন্য পৃথক মাতৃভূমির কথা ভাবা ছাড়া উপায় নেই। ফলে ১৯৪০ সালে শেরে বাংলা একে ফজলুল হক ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন, যেখানে মুসলিম রাষ্ট্রের দাবি তোলা হয়। এটিও ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়।
পাকিস্তানের জন্মকে ভারতীয় মুসলমানদের প্রায় দুই শত বছরের সংগ্রামের ফলাফল হিসেবে দেখা হয় এবং ১৯৪৭ সালকে দক্ষিণ এশিয়ার মুসলমানদের ইতিহাসে একটি মোড়ঘোরানো বছর হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু পাকিস্তান শুরুর থেকেই অভ্যন্তরীণ ও বহিঃশত্রুতার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়। ভারত প্রথম থেকেই পাকিস্তানের বিরোধী হয়ে ওঠে এবং তা ভাঙার জন্য বদ্ধপরিকর ছিল।
ইয়াহিয়া খানের সামরিক সরকার পূর্ব পাকিস্তানে সাধারণ মানুষের ওপর সেনা অভিযান চালিয়ে ভারতের জন্য এক ‘সুবর্ণ সুযোগ’ তৈরি করে এবং ভারত এই সুযোগকে পুরোপুরি কাজে লাগায়, যার জন্য তারা বহুদিন অপেক্ষায় ছিল। বাংলাদেশের জন্ম ঘটে ভারতের সামরিক সহায়তা ও কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে। আওয়ামী লীগের নেতারা নিজেদের স্বার্থে ভারতের সাথে একটি সাত দফা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, যা বাংলাদেশের জন্মকে ত্বরান্বিত করে কিন্তু তাকে চিরস্থায়ী দাসত্বের দিকে ঠেলে দেয়। এভাবেই ১৯৭১ সাল বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি মোড়ঘোরানো বছর হয়ে ওঠে।
জনগণ দ্রুতই বুঝে যায় যে তারা নিজেদের নেতাদের এবং ভারতের আধিপত্যবাদী রাজনীতির দ্বারা প্রতারিত হয়েছে। যে নেতা গণতন্ত্রের জন্য লড়েছিলেন, তিনিই নিজের হাতে তা ধ্বংস করেন এবং এর জন্য চরম মূল্যও দেন। ভারতের আধিপত্যবাদী রাজনীতির গতি স্তব্ধ হয় ১৯৭৫ সালের আগস্টে শেখ মুজিবের পতনের মাধ্যমে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়।
নভেম্বর ১৯৭৫-এ সিপাহী-জনতার নেতৃত্বে একটি বিপ্লবের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের উত্থান ঘটে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত হয় এবং নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ জিয়াউর রহমানের আনা পরিবর্তনে সন্তুষ্ট হন। কিন্তু তার মর্মান্তিক মৃত্যু আবারো ভারতকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে হস্তক্ষেপের সুযোগ এনে দেয়।
১৯৯০ সালের ডিসেম্বর মাসে এরশাদের পতন রোধ করা যায়নি এবং খালেদা জিয়ার ক্ষমতায় আরোহন ঘটে। এসময় ভারত সাময়িকভাবে ব্যাহত হলেও ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত শেখ হাসিনার প্রথম সরকারে আবারও সাফল্য পায়।
মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমেরিকার সহযোগিতায় ভারতকে আবারো বাংলাদেশে প্রকাশ্য রাজনৈতিক খেলা খেলার সুযোগ দেয়। আমরা বাঙালি মুসলমানরা পুনরায় শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসন এবং ভারতের রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার হই। ভারত বাংলাদেশকে নিজের উপনিবেশ মনে করতে শুরু করে।
কয়েক শত প্রাণের ত্যাগ ও কয়েক হাজার মানুষের অজানা দুঃখ-কষ্ট জুলাই বিপ্লব ২০২৪-এর মাধ্যমে একটি ঐতিহাসিক পরিবর্তন এনে দেয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের এই পরিবর্তনের সুযোগ দিয়েছেন, এবং তা পুরোপুরি নির্ভর করছে আমাদের আন্তরিকতার উপর। আমরা যদি এই ট্রেন মিস করি, তবে তা চিরতরে হারিয়ে যাবে। জুলাই বিপ্লব ২০২৪ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি মোড়ঘোরানো মুহূর্ত হিসেবে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।
জনগণ, রাজনৈতিক দল এবং সরকারকে এটি উপলব্ধি করতে হবে এবং জুলাই বিপ্লবকে জাতির সর্বশেষ রাজনৈতিক মোড়ঘোরানো ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। জাতিকে দলীয় ও ব্যক্তিস্বার্থ ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং সরকারের উদ্যোগকে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে।