a
ফাইল ছবি
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, জবাবদিহির আওতায় না আনা পর্যন্ত র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ ও জার্মান থিংক ট্যাঙ্ক ফ্রেডরিখ এবার্ট স্টিফটাং আয়োজিত 'মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর' অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
পিটার হাস বলেন, নিষেধাজ্ঞাগুলো শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে নয় বরং আচরণ পরিবর্তন ও তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার জন্য। গত বছরের ডিসেম্বরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এটা খুব ভালো সংকেত। আমরা আশা করছি, র্যাবের আচরণ পরিবর্তন হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে পিটার হাস বলেন, ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল- আইপিএসে বাংলাদেশের যোগ দেওয়া না দেওয়াটা কোনো বিষয় নয়। এটা একটি নীতি। এটা বাংলাদেশ কীভাবে নেয়, সেটাই দেখার বিষয়।
তিনি বলেন, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ- বিআরআইয়ে যোগ দেওয়াটা বাংলাদেশের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশ কোন জোটে যোগ দেবে, সেটা তাদের বিষয়।
অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দলের নেতা, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও সাবেক কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন। সূত্র: সমকাল
ফাইল ছবি
পরমাণু সমঝোতা নিয়ে যৌথ কমিশনের ভার্চুুয়াল বৈঠকে যোগ দেন ইরানের অন্যতম আলোচক সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি। ইরান ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, আমেরিকা যেমন কোনও রকমের আলোচনা ছাড়াই ২০১৮ সালে তেহরানের বিরুদ্ধে অবৈধ ও একতরফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, তেমনি আলোচনা ছাড়াই তা প্রত্যাহার করতে হবে। নিষেধাজ্ঞা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার ছাড়া আমেরিকার সঙ্গে ইরানের কোনও আলোচনা হবে না।
পরমাণু সমঝোতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র ইরানের স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল প্রেস টিভিকে শুক্রবার এসব তথ্য জানিয়েছে। ওই সূত্র জানায়, পরমাণু সমঝোতা থেকে বের হয়ে আমেরিকা ইরানের বিরুদ্ধে যতগুলো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তার সবগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। এর ব্যতিক্রম হলে ইরান আমেরিকার সঙ্গে কোনও আলোচনায় বসবে না।
ওই সূত্র প্রেস টিভিকে আরও জানায়, ইরানের ওপর থেকে সমস্ত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর ইরানি কর্মকর্তারা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার পরই শুধুমাত্র তেহরান পরমাণু সমঝোতার সমস্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন শুরু করবে। যা গত ৮ জানুয়ারি সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী দিক-নির্দেশনা দিয়েছিলেন তার আলোকেই সবকিছু হতে হবে।
সূত্র আরও জানায়, পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়ন বিষয়ক যৌথ কমিশন ধাপে ধাপে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের যে ধারণা দিয়েছে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। বরং সর্বোচ্চ নেতার দিক-নির্দেশনা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।
ছবি: মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
সাইফুল আলম, ঢাকা: সম্প্রতি ঘোষিত 'ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি' সংক্রান্ত প্রস্তাব ও নীতিগত সিদ্ধান্তের কারনে ইডেন কলেজের সক্ষমতা সংকোচন ও স্বাতন্ত্র্য বিনষ্ট হওয়ার আশংকা প্রবল হয়েছে। ইডেন মহিলা কলেজ প্রাক্তন শিক্ষার্থীবৃন্দের পক্ষ থেকে হেলেন জেরিন খান, প্রফেসর নিশরাত বেগম, সুলতানা রাজিয়া, খন্দকার ফারহানা ইয়াসমীন আতিকা, ডক্টর নাহিদ মনসুর, প্রফেসর শামীমা, প্রফেসর রহিমা সুলতানাসহ অন্যান্যদের নেতৃত্বে আজ তাদের স্পষ্ট অবস্থান প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন।
ইডেন মহিলা কলেজ প্রাক্তন ছাত্রীবৃন্দ আজ ১৮ অক্টোবর, ২০২৫ইং দুপুরে রাজধানী ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন। এখানে লিখিত মূল বক্তব্য পাঠ করেন হেলেন জেরিন খান। তারা বলেন, ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাতটি সরকারী কলেজকে ঘিরে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠন ও প্রশাসনিক কাঠামো পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও নাগরিক সমাজে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। ১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ইডেন মহিলা কলেজ উপমাহাদেশের প্রথম নারী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে প্রায় ২২,০০০ শিক্ষার্থী এ প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত। অসংখ্য প্রাক্তন শিক্ষার্থী দেশ-বিদেশে সুনাম ও কৃতিত্বের সাথে জাতির অগ্রযাত্রায় অবদান রাখছেন ।
আমাদের পর্যবেক্ষন
১। ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা কলেজ দীর্ঘকাল ধরে নারী শিক্ষার অগ্রযাত্রায় অবিস্মরনীয় ভুমিকা পালন করে আসছে। বিশেষত ধর্মপ্রাণ ও নিম্ন-আয়ের পরিবারের নারী শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলো নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও মর্যাদাপূর্ন শিক্ষাকেন্দ্র। কিন্তু খসড়া অধ্যাদেশের ৬(১)(খ) ধারা অনুযায়ী ইডেন ও বদরুন্নেসা কলেজে সহশিক্ষা চালুর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে যা নারীশিক্ষার নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার পরিপন্থী । এটি নারী শিক্ষার্থীদের পছন্দের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন করবে এবং শতবর্ষব্যপী নারী শিক্ষার ঐতিহ্য নষ্ট করবে। প্রস্তাবিত সংকোচন কার্যকর হলে রাজধানীতে নারীদের উচ্চশিক্ষা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে, তাদের প্রবেশাধিকার সংকীর্ন হবে এবং সংবিধান প্রদত্ত সমান সুযোগের নিশ্চয়তা লঙ্ঘিত হবে। সংবিধানে ২৮(১) ও (২) অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং ২৮ (8) অনুচ্ছেদে নারীর জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদানের অনুমোদন রয়েছে। একই সাথে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (SDG ৪.৩ ও ৪.৪) নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য সমানভাবে উচ্চশিক্ষা সম্প্রসারনের আহ্বান জানিয়েছেন । সুতারং প্রস্তাবিত সংকোচন কেবল সাংবিধানিক দায়িত্বের পরিপন্থী নয় বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।
২। প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ সেশনে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করার সময় আসন সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস করা হয়েছে। ফলে দেশের বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা হতে বঞ্চিত হবে এবং তুলনামূলক সামর্থবান অনেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে ঝুঁকবে, যা শিক্ষার বানিজ্যিকীকরণ বাড়াবে।
৩ । বিসিএস সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি পেশায় ইডেন মহিলা কলেজ ও বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা সফলতার সাথে কর্মরত রয়েছেন । উল্লেখ্য ইডেন মহিলা কলেজের ৫১ জন প্রাক্তন শিক্ষার্থী, বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে নিজ কলেজেই কর্মরত আছেন, আর সারাদেশে এ সংখ্যা আরও বেশি। আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় হলে স্বাভাবিকভাবেই তাদের পদ সেখানে সংকুচিত হয়ে যাবে। ইতোপূর্বে জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তরের ফলে সেখানকার ৪০০+ পদ বিলুপ্ত হয়েছিল। উল্লেখযোগ্য যে, গত ১০ বছরে এই ক্যাডারে কোনো নতুন পদ সৃষ্টি হয়নি। বর্তমানে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হলে সাত কলেজের ১৪০০+ পদ বিলুপ্ত হলে তা ভবিষ্যত বিসিএস সাধারন শিক্ষা ক্যাডার পদপ্রার্থীদের বিশাল সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবে।
৪। ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ প্রস্তাবিত কাঠামোর প্রতি অনাগ্রাহ প্রকাশ করে আন্দোলনে নেমেছে। ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা মানব বন্ধন, সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তাই সকল অংশীজনের মতামত ও পরামর্শ বিবেচনা না করলে ব্যাপক শিক্ষার্থী অস্থিরতা ও নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি তৈরি হবে।
আমাদের সুপারিশ:
১। জাতীয় ইতিহাস ও সামাজিক বাস্তবতায় ইডেন মহিলা কলেজকে বিলুপ্ত বা একীভূত করার উদ্যোগ
অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত হবে ।
২। কলেজগুলোর বিদ্যমান অবকাঠামো, সক্ষমতা ও ভৌগলিক অবস্থান বিবেচনা করে ৭ কলেজকে কলেজিয়েট বা অধিভুক্তিমূলক কাঠামোর আওতায় রাখা ।
৩ । শিক্ষকদের পদ সংখ্যা বৃদ্ধি, গবেষণা বাজেট, আধুনিক ল্যাব, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, আবাসন ও বৃত্তি সুবিধা সম্প্রসারনের মাধ্যমে মানসম্মত উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করা।
৪। শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত যৌক্তিকীকরণ করা। পাশাপাশি পাঠদানকৃত বিষয়সমূহ ও সিলেবাস পুনর্বিবেচনা করে যুগোপোযুগী করে তোলা ।
৫ । শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের স্বার্থ সুরক্ষা করে শিক্ষা পরিবেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ।
৬ । সকল অংশীজনের জানার অধিকার ও তথ্যের স্বচ্ছতা বজায় রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা ৷
৭। প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটিকে অন্য কোন পৃথক ক্যাম্পাসে স্থাপন করে ঢাকার সাতটি কলেজসহ বিভাগীয় অন্য আরও শতবর্ষী কলেজকে অন্তর্ভূক্ত করা।
আমরা শান্তি চাই, স্থিতি চাই। ইডেন কলেজসহ সাত কলেজের ঐতিহ্য ও স্বতন্ত্র মর্যাদা যেন বলি না হয়, ইডেন মহিলা কলেজ ও বদরুন্নেসা মহিলা কলেজে যেন সহশিক্ষা চালু না হয়, শিক্ষার বানিজ্যিকীকরণ যেন না হয় - এটাই আমাদের কাম্য।