a
ছবি সংগৃহীত
সৌদি আরবে ২০ হাজারের বেশি অবৈধ বাসিন্দাকে গ্রেফতার করেছে। তাদের বাসস্থান, শ্রম এবং সীমান্ত নিরাপত্তা আইন মেনে চলা নিশ্চিত করতে সৌদিব্যাপী এক অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। খবর আরব নিউজের।
জানা গেছে, গত ১২-১৮ ডিসেম্বর সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার সহযোগিতায় নিরাপত্তা বাহিনী পরিচালিত যৌথ অভিযানের সময় ২০ হাজার ১৫৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১১ হাজার ৩০২ জনকে আবাসিক আইন লঙ্ঘনের জন্য, পাঁচ হাজার ৬৫২ জনকে সীমান্ত নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের জন্য এবং তিন হাজার ২০৫ জনকে শ্রম আইন লঙ্ঘনের জন্য গ্রেফতার করা হয়।
এছাড়া সৌদির সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টাকালে এক হাজার ৮৬১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যাদের মধ্যে ৩৩ শতাংশ ইয়েমেনি নাগরিক, ৬৫ শতাংশ ইথিওপিয়ান নাগরিক এবং দুই শতাংশ অন্যান্য জাতীয়তার অন্তর্ভুক্ত। পাশাপাশি অবৈধভাবে রাজ্য ত্যাগের চেষ্টা করার সময় মোট ১১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে আইন লঙ্ঘনকারীদের পরিবহন, আশ্রয় এবং নিয়োগের সাথে জড়িত ১৭ জনকেও গ্রেফতার করেছে দেশটি। এছাড়া সৌদি আরবে বর্তমানে ২৬ হাজার ৪১১ জন পুরুষ এবং দুই হাজার ৬১৯ জন নারীসহ মোট ২৯ হাজার ৫৪০ জন প্রবাসীকে বর্তমানে আইনি প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপের মধ্যে রয়েছেন। সূত্র: বিডি প্রতিদিন
ফাইল ছবি
বিগত সত্তর দশক ধরে ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর সমন্বয় চলে আসছে, সে মোতাবেক দুই দেশ একজোট হয়ে ভবিষ্যতে এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুল্লিভান।
সম্প্রতি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে ফোনালাপে করোনা পরিস্থিতিতে সমবেদনা জানিয়ে তিনি টিকা তৈরির কাঁচামাল এবং ভেন্টিলেটর পাঠানোর আশ্বাস দেন।
যদিও গত ২দিন আগের খবর যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারত আবেদন করেছিল যাতে করোনা টিকা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালের রফতানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে। সেখানে ভারতের আবেদন গ্রহণ না করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রশাসন নিষেধাজ্ঞার পক্ষেই যুক্তি দিয়েছিলেন।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, কভিশিল্ড তৈরিতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল যত দ্রুত সম্ভব ভারতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সাহায্য পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জো বাইডেন নিজেই। গতকাল রবিবার এক টুইটবার্তায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘মহামারীর শুরুতে যখন যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালের ওপর চাপ পড়েছিল, তখন ভারত যেমন আমাদের সাহায্য পাঠিয়েছিল, তেমনই প্রয়োজনের সময় আমরা ভারতকে সাহায্য করতে বদ্ধপরিকর।’
এদিকে, প্রেসিডেন্টের কিছুক্ষণ পরই টুইট করেন ডেপুটি কমলা হ্যারিস। তিনি বলেন, ‘উদ্বেগজনক কভিড-১৯ মহামারীর মোকাবিলায় বাড়তি সাহায্য এবং সরঞ্জাম প্রদানের জন্য ভারত সরকারের সঙ্গে কাজ করছে আমেরিকা। সাহায্য প্রদানের পাশাপাশি সাহসী স্বাস্থ্যকর্মীসহ ভারতীয়দের জন্য প্রার্থনা করছি।’
অক্সিজেন-চিকিৎসার অভাবে ভারত যখন মৃত্যুপুরী পরিণত হয়েছে, তখন অসহায় দেশটির পাশে দাঁড়াচ্ছে একে একে বিশ্বের সকল দেশ।
ইতিমধ্যে ভারতের এমন মহাবির্যয়ে পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য, জার্মান ও ফ্রান্সসহ পশ্চিমা দেশগুলো। এরই মধ্যে অক্সিজেনসহ বিভিন্ন চিকিৎসাসামগ্রী পাঠিয়েছে ব্রিটিশ সরকার।
ভারতের এই চরম বিপর্যয়ে পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বের প্রায় সব দেশ। করোনা সংকট মোকাবেলায় দেশটিকে সব ধরনের সহায়তার কথা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানি ও ফ্রান্স।
ছবি সংগৃহীত
সংকট জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এটি ব্যক্তিগত ও জাতীয় জীবনে সমান গুরুত্বপূর্ণ। সংকট সমাধানের জন্য তার মূলসূত্র জানা অপরিহার্য। যদি সংকটের প্রকৃত কারণ বোঝা না যায়, তাহলে ব্যক্তিগত বা জাতীয়—কোনো ক্ষেত্রেই কার্যকর সমাধান সম্ভব নয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকেই নানা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে ভুগছে।
আমাদের জাতীয় সংকটের শেকড় মূলত রাজনৈতিক নেতৃত্বের দুর্বলতায় নিহিত। দেশভাগের আগের সময়টিতে আমাদের ভাগ্য ভালো ছিল যে কিছু উজ্জ্বল মুসলিম নেতা পেয়েছিলাম, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দেশভাগের পর সঠিক নেতৃত্বের অভাব দেখা দেয়।
পাকিস্তান শুরু থেকেই তীব্র নেতৃত্ব সংকটে পড়েছিল। প্রথমত, প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুর পর দেশটি গভীর সংকটে পড়ে। এরপর লিয়াকত আলী খানের হত্যার মাধ্যমে পাকিস্তান নেতৃত্বহীন হয়ে পড়ে। পাকিস্তানের সেই দুর্বল অবস্থার সুযোগ নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান থেকে খাজা নাজিমুদ্দিন নেতৃত্বে এলেও তার মৃত্যুর পর সংকট আরও গভীর হয়। চৌধুরী মোহাম্মদ আলী (বগুড়া) এবং পরে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন, কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি হয়, যা ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের পতনের মাধ্যমে শেষ হয়।
পূর্ব পাকিস্তান থেকে তিনজন প্রধানমন্ত্রী আসলেও আমাদের জনগণ তখনো রাজনৈতিক বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছিল। যদিও পাকিস্তান তখন 'উন্নয়নের দশক' পার করছিল, কিন্তু একইসঙ্গে গণতান্ত্রিক চর্চা ধ্বংস হয়েছিল, যা জাতীয় ঐক্যের ব্যর্থতার মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
দুর্বল নেতৃত্ব ও সামরিক শাসনের সুযোগ নিয়ে ভারত তার পূর্ব পাকিস্তানি এজেন্টদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ছিল ভারতীয় রাজনৈতিক সংযোগের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ, যা স্বাধীনতার পর শেখ মুজিব নিজেই স্বীকার করেছিলেন।
নিঃসন্দেহে, বাংলাদেশের জন্ম ভারতীয় কৌশলগত রাজনীতির ফল। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ভারত পূর্ব পাকিস্তানে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা শুরু করেছিল। যদিও আমরা একাত্তরে স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারতীয় রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েছি। এখন ভারত ১৯৭১ সালের বিজয়কে তার নিজের জয় হিসেবে তুলে ধরতে চায়।
ভারত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে শুরু থেকেই নিজের উপর নির্ভরশীল করার চেষ্টা করেছে। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশকে ভারতের উপনিবেশে পরিণত করা এবং আমাদের নেতৃত্ব তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলো—বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দুর্বল করা। ভারত এতে সফল হয়েছে, আমাদের নেতৃত্বকে কার্যত শূন্যের কোঠায় নামিয়ে এনেছে।
আমাদের দুর্ভাগ্য যে, দূরদর্শী ও যোগ্য নেতৃত্ব এখনো আমরা পাইনি, ব্যতিক্রম শুধু জিয়াউর রহমান। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি ভারতের আধিপত্যবাদী রাজনীতি বুঝতে পেরেছিলেন এবং একটি টেকসই রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তার হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-কেন্দ্রিক জাতীয় রাজনীতির অবসান ঘটে।
১৯৮১ সালের মে মাসে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর থেকে আমরা নেতৃত্ব সংকটে ভুগছি। গত চার দশকে সমাজের জন্য যোগ্য নেতাদের তৈরি করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি, এমনকি বিএনপিও তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি।
বর্তমানে আমাদের জাতীয় জীবন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে প্রকৃত পেশাদার নেতৃত্বের অভাব সর্বস্তরে দৃশ্যমান। গত সরকার কৌশলে সমাজের সব স্তর থেকে নেতৃত্ব বিকাশের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগকে দিয়ে একটি পারিবারিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, যা শেখ হাসিনা অত্যন্ত সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছেন জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে।
২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের পর নতুন পরিবেশে আমরা নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি। প্রথমত, এই বিপ্লবের কিছু অংশগ্রহণকারী বিপ্লবের চেতনাকে অগ্রাহ্য করছে। বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন এবং নবগঠিত এনসিপি (NCP) গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় বিষয়গুলোর—বিশেষ করে নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্যে আসতে পারছে না।
তারা জাতীয় স্বার্থের পরিবর্তে দলীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, যা জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে যাচ্ছে। অথচ জুলাই বিপ্লবে ছাত্ররা অসাধারণ ভূমিকা রেখেছে, যা ইতিহাস কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে।
তবে নেতৃত্বের জন্য শুধু আবেগ নয়, অভিজ্ঞতাও জরুরি। অল্পবয়সী ছাত্ররা এখনো রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যথেষ্ট পরিপক্ব নয়। তাদের ধাপে ধাপে রাজনীতি, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। আমরা তাদের হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারি না, কারণ এটি কোনো পরীক্ষার বিষয় নয়। তাদের ধৈর্য ধরতে হবে এবং প্রকৃত নেতা হয়ে উঠতে হবে।
আমাদের সমাজের নেতৃত্ব সংকট দূর করতে হলে সুপরিকল্পিত নেতৃত্ব তৈরির কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু শেখ হাসিনা তার ভারতীয় প্রভুদের সহায়তায় ইচ্ছাকৃতভাবে এই প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করেছেন।
জনপ্রশাসনের কোনো খাতই তিনি অক্ষত রাখেননি। যদি নেতৃত্ব বিকাশের জন্য জরুরি সংস্কার না করা হয়, তাহলে বাংলাদেশ তার সার্বভৌমত্ব ধরে রাখতে পারবে না। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে, যা তাদের স্থানীয় দোসরদের সহায়তায় ভারত অত্যন্ত সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে।
যোগ্য ও মেধাবী মানুষ ছাড়া আমাদের পক্ষে এই বিশাল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে টিকে থাকা অসম্ভব। ভারতের সমাজে মেধাবী ও দক্ষ মানুষের অভাব নেই। শুধু আবেগ ও বড় বড় কথা বলে এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।
আমরা এখনো দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নিতে পারিনি, অথচ নেতৃত্ব সংকট এখন সবচেয়ে জরুরি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের হাতে সময় খুবই কম। এখনই যদি নেতৃত্ব গঠনের ওপর গুরুত্ব না দিই, তাহলে জাতির ভবিষ্যৎ সংকটে পড়বে।
লেখক: ড. শেখ আকরাম আলী
কলাম লেখক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক, মুক্তসংবাদ প্রতিদিন