a
ফাইল ছবি
ফকির আলমগীরের ছেলে মাশুক আলমগীর রাজীব গণমাধ্যমকে জানান, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কোভিড ইউনিটে ভেন্টিলেশনে থাকা অবস্থায় ফকির আলমগীর হৃদরোগে আক্রান্ত হন। রাত ১০টা ৫৬ মিনিটে তার মৃত্যু ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
কয়েক দিন ধরে ফকির আলমগীর জ্বর ও খুসখুসে কাশিতে ভুগছিলেন। পরে তিনি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। চিকিৎসকের পরামর্শমতো কোভিড-১৯ পরীক্ষা করানোর পর তার করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। তখন থেকেই তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এরপর তাকে গ্রিন রোডের একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। ওই সময় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) প্রয়োজন পড়লে সেখান থেকে তাকে গুলশানের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ফকির আলমগীরের ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা ছিল। যে কারণে জটিলতা বাড়তে থাকে। হাসপাতালে ভর্তির পর দুই ব্যাগ প্লাজমা দেয়া হয় তাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত করোনা থেকে সুস্থ হয়ে আর বাড়ি ফেরা হলো না জনপ্রিয় এই সংগীতশিল্পীর।
তার ছেলে মাশুক আলমগীর জানান, রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তার বাবার অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৪৫-এ নেমে আসে। ওই দিন থেকে চিকিৎসকেরা তাকে ভেন্টিলেশনে নেয়ার পরামর্শ দেন। ভেন্টিলেশনে নেয়ার পর থেকে তার বাবার অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০ পর্যন্ত উন্নীত হয়। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। এক সময় রক্তে ও ফুসফুসে ইনফেকশন পাওয়া যায়। রক্তচাপ খুবই নেমে যায়। রক্তে ইনফেকশনের জন্য প্রায় প্রতিদিনই সকালে জ্বর আসতো। শুক্রবার নতুন অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া শুরু করেন চিকিৎসকরা। একপর্যায়ে রাতে আবারো অবস্থার অবনতি হয়। এরপর গণসংগীতের এই শিল্পীকে মৃত্যু ঘোষণা দেয়া হয়।
ফকির আলমগীর ১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার কালামৃধা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মো: হাচেন উদ্দিন ফকির, মা বেগম হাবিবুন্নেসা। শিল্পী কালামৃধা গোবিন্দ হাইস্কুল থেকে ১৯৬৬ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে স্নাতক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
ফকির আলমগীর ষাটের দশক থেকে সংগীতচর্চা করেছেন। গান গাওয়ার পাশাপাশি বাঁশীবাদক হিসেবে তার খ্যাতি রয়েছে। বাংলাদেশের সব ঐতিহাসিক আন্দোলনে তিনি তার গান দিয়ে মানুষকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছেন। ১৯৬৬ সালে ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিয় সদস্য ছিলেন ফকির আলমগীর। এরই ধারাবাহিকতায় ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী ও গণশিল্পীগোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে ষাটের দশকে বিভিন্ন আন্দোলন–সংগ্রামে ও ’৬৯-এর গণ–অভ্যুত্থানে গণসংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। গণ–অভ্যুত্থান, ’৭১–এর মুক্তিযুদ্ধ ও ৯০–এর সামরিক শাসনবিরোধী গণ–আন্দোলনে তিনি শামিল হয়েছিলেন তার গান দিয়ে।
জনপ্রিয় গান:
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তার কণ্ঠের বেশ কয়েকটি গান দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। এর মধ্যে ‘ও সখিনা’ গানটি এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ১৯৮২ সালের বিটিভির ‘আনন্দমেলা’ অনুষ্ঠানে গানটি প্রচারের পর দর্শকের মধ্যে সাড়া ফেলে। কণ্ঠ দেয়ার পাশাপাশি গানটির সুরও করেছেন ফকির আলমগীর।
ফকির আলমগীর গানের পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখিও করেছেন। ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও বিজয়ের গান’, ‘গণসংগীতের অতীত ও বর্তমান’, ‘আমার কথা’, ‘যারা আছেন হৃদয়পটে’সহ বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে তার।
সম্মাননা ও পদক:
সংগীতের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য এ পর্যন্ত পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় ‘একুশে পদক’, ‘শেরেবাংলা পদক’, ‘ভাসানী পদক’, ‘সিকোয়েন্স অ্যাওয়ার্ড অব অনার’, ‘তর্কবাগীশ স্বর্ণপদক’, ‘জসীমউদ্দীন স্বর্ণপদক’, ‘কান্তকবি পদক’, ‘গণনাট্য পুরস্কার’, ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক মহাসম্মাননা’, ‘ত্রিপুরা সংস্কৃতি সমন্বয় পুরস্কার’, ‘ঢালিউড অ্যাওয়ার্ড যুক্তরাষ্ট্র’, ‘জনসংযোগ সমিতি বিশেষ সম্মাননা’, ‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড বিশেষ সম্মাননা’ ও ‘বাংলা একাডেমি সম্মানসূচক ফেলোশিপ’।
শোক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বরেণ্য শিল্পীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বলে রাতে সরকারি সংবাদ সংস্থা- বাসসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর গুলিস্তান ফুলবাড়িয়ারন এক ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে দুই শতাধিক। মঙ্গলবার (৭ মার্চ) বিকেলে গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়ার এক পাঁচ তলা ভবনে বিস্ফোরণের এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই ভবনের দেয়াল ও জানালার গ্লাস রাস্তায় ভেঙে পড়লে অনেকে আহত হন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে কমপক্ষে ১৮ জনের লাশ রাখা হয়েছে। আর ২০০ জনের বেশি মানুষ চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে ১০০ জনের বেশি মানুষকে হাসপাতালে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
নিহতদের তালিকা:
১. মো. সুমন (২১), ১ নং সুরি টোলা, বংশাল ঢাকা, গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মেঘনা থানা।
২. মো. ইসহাক মৃধা (৩৫), কাজির হাট, বরিশাল। ইসলামপুরে কাপড়ের ব্যবসা করতেন।
৩. মো. মুনসুর হোসেন (৪০), পশ্চিমপাড়া যাত্রাবাড়ী।
৪. মো. ইসমাইল (৪২), ৯৭ লুৎফর রহমান লেন, আলু বাজার।
৫. মো. আল আমিন (২৩), পশ্চিম লালপুর, মতলব, চাঁদপুর। আলামিন বিবিএ শিক্ষার্থী বলে তার ভাই হাবিবুর রহমান জানান।
৬. মো. রাহাত হোসেন (১৮), মাস্টার বাড়ি, দক্ষিণ চুনকুটিয়া, কেরানীগঞ্জ।
৭. মমিনুল ইসলাম (৩৮), ১১৫/৭/৫ ইসলামবাগ, চকবাজার।
৮. নদী বেগম (৩৬), ১১৫/৭/৫ ইসলামবাগ, চকবাজার থানা।
৯. মো. মাঈন উদ্দিন (৫০), গ্রাম-সৈয়দপুর, মুন্সিগঞ্জ সদর।
১০. নাজমুল হোসেন (২৫), ৪৭ নং কে পি ঘোষ স্ট্রিট, বংশাল।
১১. ওবায়দুল হাসান বাবুল (৫৫), চর বেউথা গ্রাম, মানিকগঞ্জ সদর।
১২. আবু জাফর সিদ্দিক (৩৪), মুন্সিগঞ্জ, গজারিয়া, বালুয়া কান্দি।
১৩. আকুতি বেগম (৭০), ১৮/১ আগামাসি লেন, বংশাল।
১৪. মো. ইদ্রিস মির (৬০), মীর হাজারীবাগ যাত্রাবাড়ী,
১৫. নুরুল ইসলাম ভূইয়া (৫৫), মাতুয়াইল, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।
১৬. মো. হৃদয় (২০), সিদ্দিক বাজার জাবেদ গলি, বংশাল।
১৭. মো. সম্রাট (২২)
১৮ মোহাম্মদ সিয়াম (২০)
ঢাকা মেডিক্যালে থাকা এক প্রতক্ষদর্শী জানান, মঙ্গলবার বিকেল থেকে আহত রোগীদের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। আহতদের চিকিৎসার জন্য ২৫ জনের বেশি চিকিৎসক বাড়িয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা আহতদের রক্ত দেওয়া সহ চিকিৎসা কাজে নানা ধরনের সহযোগিতা করছেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক গণমাধ্যমকে জানান, ‘ভবনে বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ১৬ জন হয়েছে। আর আহত ২০০ জনের বেশি হবে। বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে সিদ্দিক বাজারে বিআরটিসি বাস কাউন্টারের পাশে একটি ভবনে খুব ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। আমরা আহতদের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।’ সূত্র: ইত্তেফাক
ফাইল ছবি
তালেবান যোদ্ধারা আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখলের পর সেখানকার কারাগার থেকে বের হয়ে গেছেন তিন বাংলাদেশি কারাবন্দী। কারাগার থেকে বের হওয়া তিনজন হলেন- খুলনার মঈন আল মেজবাহ, রাজধানীর মিরপুরের কাওসার সুলতানা ও ফেনীর উবাইদুল্লাহ হারুন।
কাবুলে প্রবেশের পর তালেবান যোদ্ধারা সেখানকার কারাগারের প্রধান দরজা খুলে দেয়। যার ফলে এই তিন বাংলাদেশি বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ পান। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে উজবেকিস্তানে বাংলাদেশি দূতাবাস।
উজবেকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জাহাঙ্গীর আলম সমদূরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে আফগানিস্তানের দায়িত্বও পালন করছেন। তিনি বলেন, দেশটিতে বাংলাদেশের মিশন না থাকায় পুরো দেশের তথ্য সম্পর্কে আমরা অবগত নই। আপাতত কাবুলে থাকা বাংলাদেশিদের খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া বাংলাদেশের কোনো নাগরিক দেশটির অন্য কোথাও আছেন কি না, তা জানাতে আফগানিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।
আফগানিস্তানে কোনো বাংলাদেশি যদি থেকে থাকেন, তাদের সহায়তার জন্য দুটি হটলাইন (+৯৯৮৯৭৪৪০২২০১ ও +৯৯৮৯০৩২৭৫১৫২) খোলা হয়েছে।
দূতাবাস সূত্রে জানা যায়, আফগান কারাগার থেকে বেরিয়ে যাওয়া তিন বাংলাদেশি হলেন খুলনার দৌলতপুর উপজেলার মঈন আল মেজবাহ, রাজধানীর মিরপুরের (ভাষানটেক) কাওসার সুলতানা ও ফেনীর ফুলগাজীর উবাইদুল্লাহ হারুন।
বেরিয়ে যাওয়া তিন বাংলাদেশি কারাবন্দীর অপরাধ সম্পর্কে একাধিক তথ্য পাওয়া যায়। কেউ বলছেন, তারা অবৈধ ভিওআইপি (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল) ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আবার কেউ বলছেন, ওই তিনজনসহ মোট চার বাংলাদেশিকে তালেবানকে সহায়তার অভিযোগে কয়েক বছর আগে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।
রাষ্ট্রদূত মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কারাগার থেকে বেরিয়ে যাওয়া মঈন আল মেজবাহ দূতাবাসে যোগাযোগ করলে তাকে নিরাপদে থাকতে বলা হয়। দূতাবাস তাকে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করবে বলেও জানিয়ে দিয়েছে।